সাগর বান্ধয়ে নল, হনুমান মহাবল,
আনি দেয় শিলা বৃক্ষগণ।
জাঙ্গালের দুই ভিতে সুন্দর পাথর গাঁথে,
আনন্দে নাচয়ে কপিগণ।।
জাঙ্গালের মাঝে মাঝে, রজত পাথর সাজে,
নল করে বিচিত্র নির্ম্মাণ।
গঠিছে সুন্দর ঘর, থাকিবেন রঘুবর,
হেন মতে গঠে স্থানে স্থান।।
মাথায় পর্ব্বত লয়ে, হনুমান দেয় বয়ে,
বাম হাতে ধরে বীর নল।
মহাক্রোধে হনুমান, পর্ব্বত আনিতে যান,
বুঝি বেটা কত ধরে বল।।
ধায় বীর মনোদুঃখে, চলিল উত্তর মুখে,
যথা গিরি সে গন্ধমাদন।
দেখি পর্ব্বতের চূড়া, লাথি মারি করে গুঁড়া,
লোমে লোমে করয়ে বন্ধন।।
দুই হাতে দুই গিরি, লইয়া মস্তকোপরি,
অমনি পবনবেগে ধায়।
ধায় বীর মহাতেজে, এক গিরি বান্ধি, লেজে,
শূন্যের উপরি চলি যায়।।
রবির কিরণ নাই, অন্ধকার সর্ব্ব ঠাঁই,
চমকিয়া চাহে বীর নল।
ক্রোধে আসে হনুমান, নলের উড়িল প্রাণ,
উঠিয়া পলায় মহাবল।।
শ্রীরামের কাছে গিয়া, ভূমি লুটি প্রণমিয়া,
বন্দিয়া কহেন যোড়হাত।
হনুমান আনে গিরি, ভূমি লুটি প্রণমিয়া,
বন্দিয়া কহেন যোড়হাত।
হনুমান আনে গিরি, বামহাতে আমি ধরি,
কর্ম্মীর স্বভাব রঘুনাথ।।
ক্রোধ করি মোর তরে, আইসে পবনভরে,
পর্ব্বত লইয়া বহুতর।
কুপিয়াছে হনুমান, লইবে আমার প্রাণ,
উদ্ধার করহ রঘুবর।।
নলের ক্রন্দন শুনি, দুঃখী হৈলা রঘুমণি,
পথমাঝে দাণ্ডাইল গিয়া।
রামের উপর দিয়া, যাইবারে না পারিয়া,
চলে বীর ভূমিতে নামিয়া।।
কহিছেন প্রভু রাম, শুন বীর হনুমান,
নলে ক্রোধ কর কি কারণ।
হনুমান কহে বাণী, যোড় করি দুই পাণি,
শুন প্রভু কমল-লোচন।।
আমি করি প্রাণপণ, আনিতে পর্ব্বতগণ,
বামহাতে নল তাহা ধরে।
এই হেতু ক্রোধ করি, আনিনু অনেক গিরি,
চাপা দিব এ নল বানরে।।
এত শুনি কহে রাম, ত্যজ বাপু অভিমান,
কর্ম্মীর স্বভাব এই কাজ।
বামহাত আগে চলে, ক্রোধ না করিহ নলে,
তোমার নাহিক ইথে লাজ।।
শুন বাছা হনুমান, মোর কার্য্যে দেহ মন,
নল বীরে কর প্রীত মনে।
নলের ধরিয়া হাত, কহিছেন রঘুনাথ,
সমর্পিয়া দিনু হনুমানে।।
কোলাকুলি দুই জন, হয়ে হরষিত মন,
জাঙ্গালে উঠিল গিয়া নল।
কৃত্তিবাস কহে রাম, জপিব তোমার নাম,
এই ভক্তি হউক অচল।।