যেই বেগে হৈল আগে দ্রোণের তনয়।
ধ্বজ কাটি ফেলিলেন বীর ধনঞ্জয়।।
অশ্বত্থামা আগে পড়ে কাটা রথচূড়া।
না করিতে রণ আগে রথ হৈল মুড়া।।
লজ্জিত হইয়া ক্রোধে দ্রোণের নন্দন।
অর্জ্জুন উপরে করে বাণ বরিষণ।।
প্রলয়ের মেঘ যেন মুষলের ধারে।
সেইমত অস্ত্রবৃষ্টি করে পার্থোপরে।।
দিবানিশি নাহি জ্ঞান, অস্ত্রে আচ্ছাদিল।
থাকুক অন্যের কাজ, পবন রুধিল।।
অশ্বত্থামা অর্জ্জুনের যুদ্ধ অনুপাম।
যেন ইন্দ্র বৃত্রাসুর, রাবণ শ্রীরাম।।
পূর্ব্বে যথা যুদ্ধ হৈল দেবতা অসুর।
দোঁহার ধনুক-ঘোষে কম্পে তিন পুর।।
ঝাঁকে ঝাঁকে অস্ত্রবৃষ্টি, নাহি লেখাজোখা।
অস্ত্র বিনা রণমধ্যে অন্য নাহি দেখা।।
চট্ চট্ শব্দ উঠে, কর্ণে লাগে তালি।
দোঁহা অস্ত্র দোঁহে কাটে, দোঁহে মহাবলী।।
বিচিত্র চালায় রথ উত্তর সারথি।
চক্রবৎ ক্রমে যেন বায়ু সম গতি।।
অর্জ্জুনের ছিদ্র দ্রৌণি চিন্তিয়া অন্তরে।
গাণ্ডীব ধনুক চাহে কাটিবার তরে।
অচ্ছেদ্য অভেদ্য ধনু দেবের নির্ম্মাণ।।
কি করিতে পারে তাহে মনুষ্য-পরাণ।
মহাক্রোধে অশ্বত্থামা হইয়া ক্রোধিত।।
সপ্তচত্বারিংশ শর মারিল ত্বরিত।
ধনুকে বিংশতি, ধনুর্গুণে সপ্ত শর।
কপিধ্বজে দশ, দশ উত্তর উপর।।
ক্রোধে ধনঞ্জয় করিলেন শরবৃষ্টি।
প্রলয়ের কালে যেন সংহারিতে সৃষ্টি।।
কভু বা দক্ষিণ হস্তে বিন্ধে কভু বামে।
এইমত শরবৃষ্টি করিলেন ক্রমে।।
অক্ষয় পার্থের তূণ, পূর্ণ অস্ত্রচয়।
যত ব্যয় তত হয়, নাহি তার ক্ষয়।।
সেইমত দ্রোণ পুত্র অস্ত্রবৃষ্টি কৈল।
দোঁহাকার শরজালে পৃথিবী ঢাকিল।।
সহস্র সহস্র অস্ত্র মারে পুনঃ পুনঃ।
দ্রৌণির হইল ক্রমে শরশূন্য তূণ।।