একটা আশি-নব্বই বছরের অট্টালিকা ইওরোপের মানদণ্ডে এই তো সেদিনকার, আর মার্কিন দেশের বিচারে রীতিমতন প্রাচীন। অনেক হাইওয়ের পাশে-পাশে নির্দেশ থাকে, কাছেই একটা ঐতিহাসিক দ্রষ্টব্য স্থান, দেখবার জন্য এখানে থামুন। কয়েকবার থেমে বেশ ঠকেছি। এইখানে সত্তর বছর আগে প্রথম ঘোড়ার গাড়ি ও মোটর গাড়ির রেস হয়েছিল, কিংবা ‘নব্বই বছর আগে এইখানে অমুক চন্দ্র অমুক প্রথম ঘুড়িতে চেপে শূন্যে উঠেছিল’, এইরকম। আমরা পাঁচ-সাতশো বছরের কম কিছু হলে তাকে ঠিক ইতিহাস বলে মানতে চাই না। কিন্তু অত বছর আগে আমেরিকান নামে কোনও জাতই ছিল না পৃথিবীতে।
এ দেশের তুলনায় বস্টন বেশ বনেদি শহর। এখানেই রয়েছে এ দেশের শ্রেষ্ঠ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হার্ভার্ড এবং এম আই টি। দু-একটি পাড়া দেখলে চমকে উঠতে হয়। মনে হয় মার্কিন দেশ তো নয়, হঠাৎ যেন লন্ডনে চলে এসেছি। বাড়িগুলির শ্রী-ছাদ একেবারে ব্রিটিশ ধরনের। আমেরিকার নতুন শহর মানেই অতি ঝকঝকে চকচকে ঢাউস-ঢাউস সড়কে ভরতি। কিন্তু বস্টনে এখনও কিছু সরু-সরু রাস্তা আছে, কলেজ-পাড়ায় সেরকম কোনও রাস্তায় গেলে আমাদের মনে পড়তে পারে কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের কথা। মানুষের অভ্যেসই হল নতুন অভিজ্ঞতার সঙ্গে পুরোনোকে মিলিয়ে দেখা। এক-একজন মহিলা থাকেন যাঁরা কোনও নতুন লোক দেখলেই বলেন, একে ঠিক ছোট বউদির ভাইয়ের মতন দেখতে না? কিংবা, আমাদের পাড়ার দর্জির মতন, কিংবা সঞ্জয় গান্ধির মতন, কিংবা উত্তমকুমারের ছোট ভাইয়ের মতন।
হয়তো বস্টনের কলেজ পাড়ার সেই রাস্তার সঙ্গে কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের কোনও মিল অ কলকাতাবাসী কারুর চোখে পড়বে না। কিন্তু আমরা মিল খুঁজে পাই। মনে হয় যেন ছাত্র ছাত্রীদের স্বভাবও একইরকম।
বাস স্টেশন থেকে কামাল নিয়ে এল তার বাড়িতে। সেখানে এসে পেয়ে গেলুম চমৎকার এক আড্ডার পরিবেশ। ব্যবসায়ী কথাটার সঙ্গে বোহেমিয়ান চরিত্রটি কিছুতেই মেলানো যায় না। কিন্তু কামালকে বলা যায় সত্যিকারের বোহেমিয়ান ব্যবসায়ী। তার পায়ের তলায় সর্ষে, সে প্রায়ই সারা দুনিয়া টোটো করে ঘুরে বেড়ায়, তার মুখে সব সময় নানারকম ব্যবসার পরিকল্পনা, কিন্তু আসলে সে রয়েছে একটা স্বপ্নের জগতে।
কামালের সঙ্গে থাকে তার ভাগ্নে খুসনুদ। এই খুসনুদ কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্সের ছাত্র, এখন এখানে পড়াশুনো করতে এসেছে, তার মুখে এখনও লেগে আছে কৈশোরের শ্রী। এক একটা মুখ থাকে, যা প্রথম দেখলেই খুব ভালো লেগে যায়। খুসনুদের মুখখানা সেই ধরনের। সবসময় একটা দুষ্টু-দুষ্টু হাসি লেগে আছে ঠোঁটে। পড়াশুনোতে সে খুবই ভালো, আবার হাসিমুখে সে যে কত রকম কাজ করতে পারে তার ঠিক নেই। এই চা বানাচ্ছে সকলের জন্য, কিংবা ডিম সেদ্ধ করে ফেলল ডজনখানেক, আবার ধাঁ-করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে মাখন কিংবা চাল কিনে আনতে।
এই খুসনুদের মাকে আমি কলকাতায় দেখেছি। কোনও-কোনও মানুষকে সময় স্পর্শ করতে ভয় পায়। ওর রয়েছে সেই রকম স্থির লাবণ্য।
বসবার ঘরে বসে আছেন সলিল চৌধুরী। নিউ ইয়র্কের বাঙালিদের অনুষ্ঠানে তাঁকে ক্ষণেকের তরে দেখেছিলুম। এখানে তাঁকে খুব কাছাকাছি দেখার সৌভাগ্য অর্জন করলুম। একটি দক্ষিণ ভারতীয় তরুণীও রয়েছে সেখানে, সে সেতার বাজায়। আধুনিক সঙ্গীত জগতে সলিল চৌধুরী যে কত বড় প্রতিভা এ মেয়েটি বোধহয় তা ঠিক জানে না, তাই সে অকুতোভয়ে ওঁর সঙ্গে তর্কে মেতে উঠেছে। তরুণীটি শুধু বিশুদ্ধ রাগ সঙ্গীতের অনুরাগিনী। তর্কের বিষয়বস্তু হল, সঙ্গীতের জনপ্রিয়তা। তরুণীটির বক্তব্য, বিশুদ্ধ উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত সকলের জন্য নয়, ইনিসিয়েটেড বা অনুপ্রাণিতদের জন্য। প্রকৃত সমঝদার ছাড়া এই সঙ্গীতের বিশুদ্ধতা রক্ষা পাবে না। আর সলিল চৌধুরী বলতে লাগলেন, সমস্ত মানুষ, সাধারণ গরিব-দুঃখী মানুষের কাছেও সঙ্গীতকে পৌঁছতে হবে। অন্তত পৌঁছবার চেষ্টা করতে হবে।
এ তর্কের কোনও মীমাংসা নেই, তাই আমি চুপ করে বসে-বসে শুনতে লাগলুম। অবশ্য তর্কযুদ্ধ তো নয়, নিজের নিজের মত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা, তাই ওঁদের দুজনেরই যুক্তিগুলো শুনতে বেশ লাগছিল।
প্রথম দিনের আড্ডা শেষ হল প্রায় রাত দুটোয়। পরের দিন দুপুর থেকেই একটা পিকনিকের আবহাওয়া শুরু হয়ে গেল। বাইরে অবিশ্রান্ত বরফ পড়ছে। ঠিক আমাদের বর্ষার মতন, এইরকম দিনে খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজা খুব জমে। তারই কাছাকাছি কিছু একটা বিকল্প রান্না হবে, এক-এক জন এক-একটা পদ রান্না করবে। অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্টের ইংরেজি প্রবাদ হল। অধিক পাচকে তরকারি নষ্ট। সুতরাং আমি রান্না টান্নার ব্যাপার থেকে দূরে রইলুম।
আস্তে-আস্তে চড়ুইভাতির দলটাও বেশ বড় হল। খুসনুদ ডেকে আনল তার বন্ধুদের। এসেছে। সলিল চৌধুরীর ছেলে বাবুন। এই সপ্রতিভ যুবকটি নিউইয়র্কে সাউন্ড রেকর্ডিং-এর ব্যাপারে পড়াশুনো করছে, এখন বোস্টনে এসেছে বেড়াতে। ডেকে আনা হল শর্মিলা বসুকে। নেতাজি পরিবারের মেয়ে শর্মিলা শরৎ বোসের পৌঁত্রী, যেমন রূপসি, তেমন বিদুষী আবার তেমনই ভালো রবীন্দ্র সঙ্গীত গায়। খুব ঠান্ডা স্বরে আস্তে-আস্তে কথা বলে শর্মিলা, কিন্তু কুটুস-কুটুস করে মাঝে-মাঝে বেশ মজার মন্তব্যও করে।
শর্মিলা আলাদা অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে থাকে, সে জন্য প্রায়ই তাকে নিজের রান্না করতে হয়। সেই জন্য সেও পিকনিকের রান্নার ঝামেলায় গেল না। সে আলাদা বসে টিভি খুলে একটা মহাজাগতিক বিষয়ের অনুষ্ঠান দেখতে লাগল খুব মন দিয়ে। একটু বাদেই সে নিজেও নিমগ্ন হয়ে গেল মহাকাশে।
কামালের বাড়িতে ঘরের সংখ্যা অনেক, কিন্তু একটিমাত্র ঘরেই তিনখানা টিভি। এর কারণ শুধু কামালই জানে।
আর একটি মেয়ের নাম মহুয়া মুখার্জি। এর মুখে বাংলা শুনলে যেন কেমন-কেমন লাগে। মনে হয় যেন লক্ষ্ণৌ কিংবা দেরাদুনের প্রবাসী বাঙালি পরিবারের মেয়ে। তা কিন্তু নয়। মহুয়া প্রায় জন্ম থেকেই আছে ভারতবর্ষের বাইরে, বাবা-মায়ের সঙ্গে কাটিয়েছে, বিভিন্ন দেশের ভারতীয় দূতাবাসে, এখনও ওর বাবা-মা রয়েছেন ভিয়েনায়, ইন্দ্রাণী এখানে এসেছে পড়াশুনো সমাপ্ত করতে।
অনেক দেশ ঘোরার জন্য অনেকগুলো ভাষা শিখেছে মহুয়া। কলকাতার সঙ্গে তার যোগাযোগ ক্ষীণ হওয়া সত্বেও সে বাংলা শিখেছে নিজের চেষ্টায়। সে একটু সচেতন উচ্চারণে পরিষ্কার বাংলা বলে। আমি তাকে জিগ্যেস করলুম। তুমি কেন বাংলা শিখলে, মহুয়া?
সে অবাক হয়ে উত্তর দিল, বাঃ, বাংলা না শিখলে এরকম একটা সুন্দর ভাষা থেকে বঞ্চিত থাকতুম যে!
সত্যি কথা বলতে কী, মহুয়ার মতন একটি সরল, তেজস্বিনী মেয়ের সঙ্গে আগাগোড়া ইংরেজিতে কথা বলতে হলে আমি বেশ দুঃখিতই হতুম!
আরও এলেন একটি বাঙালি দম্পতি এবং আর কয়েকজন, কিন্তু সকলের সঙ্গে আর সেরকম আলাপ পরিচয়ের সুযোগ হল না।
সদা ব্যস্ত কামালকে মাঝে-মাঝে দেখতে পাচ্ছি, আবার হঠাৎ-হঠাৎ সে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। তার কত কাজ। এরই মধ্যে অন্তত পঞ্চাশ জায়গায় তাকে দেখা করতে যেতে হবে, এবং প্রত্যেক জায়গাতেই সে ঠিক সময়ে ঘুরে আসে। দক্ষিণ ভারতীয় মেয়েটি আজই চলে যাবে। তাকে পৌঁছে দিয়ে আসে এয়ারপোর্টে, আবার আমাদের আড্ডাতেও তাকে দু-পাঁচ মিনিটের জন্য বসতে হবে কিংবা রান্নায় সাহায্যের জন্য কুচিয়ে দিতে হবে পেঁয়াজ। আবার আমাদের নিয়ে সে শহরটা দেখিয়ে আনতে চায়। রাস্তার ধারের কোনও দোকানে বসে কফি খাওয়াও দরকার। এত সব কাজকর্ম নিয়ে কামাল যেন প্রত্যেক দিনের চব্বিশ ঘন্টাকে টেনে আটচল্লিশ ঘন্টা লম্বা করে ফেলে।
মামা ভাগ্নের সংসারটি খুসনুদই চালায় বোঝা গেল। স্বপ্ন-পাগল মামাটিকে খানিকটা সামলে রাখার দায়িত্বও তার। এদের সংসারটি খুব মজার। ব্রেকফাস্ট খেতে বসে মনে পড়ে নুন নেই, তখুনি একজন গাড়ি নিয়ে ছুটে যায় নুন কিনতে। মাছ ভাজার জন্য উনুনে প্যান চাপাবার পর দেখা যায় তেলের শিশি শূন্য। আবার একজন ছুটল দোকানে। কিন্তু বাড়ির যত লোকই আসুক, সকলেই সুস্বাগতম, সকলকেই বলা হবে, আরে, বসো-বসো। এখানে খেয়ে যাও আজ!
বাঙালির আড্ডা মানে জায়গা ছেড়ে নড়া নেই। রান্না ঘরেই আমরা যে-যার এক-একটি চেয়ার নিয়ে বসে গেছি। কামালই এক সময় আমাদের জোর করে তুলল। শহরটা এক চক্কর ঘুরিয়ে দেখাবে।
তার স্টেশন ওয়াগানটিই তার দ্বিতীয় সংসার। এতে থাকে তার জামাকাপড়, সংক্ষিপ্ত বিছানা, কাগজ-টাগজ আর ব্যাবসার জিনিসপত্র। এটা নিয়ে সে প্রায় অর্ধেক আমেরিকা চষে বেড়ায়। সেই সব জিনিস টিনিস টেনে নামিয়ে সে আমাদের জন্য জায়গা করে দিল। তারপর হুস করে ছেড়ে দিল গাড়ি।
কামালকে গাইড হিসেবে নিলে দুমিনিটে তাজমহল দেখা হয়ে যায়, এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং দেখতে লাগবে এক মিনিট, গ্র্যান্ড কেনিয়ান দেখা হয়ে যাবে তিন মিনিটে আর মাউন্ট এভারেস্ট ঘুরে আসতে বড়জোর পাঁচ মিনিট লাগতে পারে।
চলন্ত গাড়ি থেকেই সে বলতে লাগল, ওই দ্যাখো এম আই টি, ওই যে হার্ভার্ড, আর এটা কী যেন, খুব বিখ্যাত জায়গা এখন নাম মনে পড়ছে না, আর ওইটা হল–।
সলিল চৌধুরীই এক সময় বললেন, ওহে মুস্তাফা, এবারে একটু থামাও তো। কোথাও একটু চুপ করে দাঁড়াই।
গাড়ি চলছিল একটা পার্কের পাশ দিয়ে, সেখানেই ব্রেক কষে কামাল বলল, এই পার্কে যাবেন?
নামা হল সেখানেই। প্রায় সন্ধে হয়ে এসেছে, বরফ পড়া বন্ধ হয়ে দারুণ ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে। সেই জন্য পার্কটি এখন জনবিরল।
সেই পার্কে পা দিয়েই আমার মনে পড়ল ভেলেনের কবিতা : ‘শীতের নির্জন পার্ক, চতুর্দিকে ছড়ানো তুষার/দুটি ছায়ামূর্তি এইমাত্র হল পার।’ সত্যিই বরফ ছড়িয়ে আছে এখানে-সেখানে। পার্কের মাঝখানের হ্রদটির জলও প্রায় অর্ধেকটা জমে শক্ত হয়ে গেছে। শনশনে হাওয়া লেগে কাঁদছে উইলো গাছগুলো। নিষ্পত্র চেরিগাছগুলোর ডালে এমন থোকা-থোকা বরফ জমে আছে যে ঠিক মনে হয় ফুল।
হঠাৎ আমার খেয়াল হল, আমরা সবাই গরম জামাকাপড় পরে এসেছি। কিন্তু কামালের গায়ে শুধু একটা জামা। আমি ওভারকোট আনতে ভুলে গেছি। পরে আছি অন্য একটা জ্যাকেট, তাতেই আমার শীত লাগছে। আস্তে-আস্তে কাঁপুনি দিচ্ছে শরীরে। আর কামাল শুধু একটা জামা পরে দাঁড়িয়ে আছে কী করে?
আমি জিগ্যেস করলুম, কী ব্যাপার, তুমি কোট-ফোট আনননি?
বুকের ওপর দুহাত আড়াআড়ি রেখে কামাল বলল, ঠিক আছে। আমার অত শীত লাগে না।
আমার এরকম অবস্থা হলে আমি দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠতুম। কারণ গাড়ির ভেতরটা গরম। কিন্তু কামাল সত্যি দাঁড়িয়ে রইল। ক্যামেরা বার করে ছবি তুলতে লাগল অনেকে, তখনও কামাল শীতে কাঁপছে না।
আমাদেরই গরজে আমরা ফিরে এলুম গাড়ির উষ্ণতায়। এবার প্রস্তাব উঠল, গরম কফি খাওয়ার।
সলিল চৌধুরী বললেন, তার সঙ্গে যদি গরম-গরম পেঁয়াজি কিংবা ফুলুরি পাওয়া যেত, তা হলে আরও ভালো হত।
কামাল বলল, চলুন, সেরকম জিনিসই খাওয়াব।
শহর ছাড়িয়ে বেশ খানিকটা দূরে একটা নিরিবিলি দোকানের সামনে গাড়ি থামাল কামাল। পরিষ্কার, ঝকঝকে বেশ বড় দোকান, কিন্তু এখন প্রায় ফাঁকা। কাউন্টারে একজন মহিলা। খাদ্যতালিকা দেখে কোনটা যে কী তা আমরা ঠিক বুঝতে পারি না, কিন্তু খুসনুদ সব জানে। সে অর্ডার দিয়ে দিল চটপট। কামাল গাড়ি পার্ক করে এল একটু পরে। তার মধ্যেই অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে দেখে সে নিজে আবার একটা কিছু যোগ করে দিল।
ছোট্ট-ছোট্ট বেতের ঝুড়িতে এল পকৌড়ার মতন একটা কিছু। বেশ সুস্বাদু। তারপর চিংড়ি মাছ ভাজা। কফির স্বাদও উত্তম। গল্প জমে গেল আমাদের।
এক সময় দেখি টেবিলের ওপরে কতকগুলো ছাপানো কাগজ পড়ে আছে। এই দোকানের পরিচারিকাদের ব্যবহারের কিংবা খাদ্যের গুণাগুণ কিংবা অন্য কোন বিষয়ে যদি খদ্দেরদের কোনও অভিযোগ থাকে, তবে তা জানাবার জন্যই এই ফর্ম। খাদ্য বিষয়ে আমাদের কোনও অভিযোগ নেই, কিন্তু আমরা সকলেই একমত হলুম যে এই দোকানটির বাইরের চাকচিক্যের তুলনায় বাথরুমটি বেশ নোংরা। আমেরিকানদের পরিচ্ছন্নতার বাতিক আছে তারা বাথরুম সজাগ এবং জলের ব্যবহারে অকৃপণ। সুতরাং এরকম অপরিচ্ছন্ন বাথরুম সত্যিই ব্যতিক্রম। অভিযোগ জানাবার সুযোগ পেলেই কিছুটা লিখে দিতে ইচ্ছে করে। তাই সেই ছাপানো ফর্মে আমরা বাথরুম বিষয়ে খুব কড়া করে লিখলুম।
তারপর সবাই মিলে উঠে যখন বেরিয়ে যাচ্ছি তখন কাউন্টারের মহিলাটি এমন মিষ্টি করে হাসল যে আমার মাথা ঘুরে গেল। বিনা পয়সায় এমন মিষ্টি হাসি কজন দেয়? অন্যরা বেরিয়ে যাচ্ছে, আমি থমকে দাঁড়িয়ে বললুম, আমি আসছি।
টেবিলের কাছে ফিরে গিয়ে সেই অভিযোগ পত্রটি তুলে নিয়ে ছিঁড়ে ফেললুম। জীবনে আর কোনও দিন আমি এই রেস্তোরাঁয় হয়তো আসব না; শুধু-শুধু এরকম একটা বাজে অভিযোগ লিখে যাওয়ার কোনও মানে হয় না।
বেরুবার সময় মেয়েটি আর একবার সেই রকম হাসি দিয়ে ধন্য করে দিল আমাকে। ইস্ট কোস্টের মেয়েদের হাসির খ্যাতি আমি ওয়েস্ট কোস্টেই শুনে এসেছিলুম, এই প্রথম তার চাক্ষুষ প্রমাণ পেলুম।