৩৬৩তম অধ্যায়
দ্বিজজিজ্ঞাসায় নাগকর্ত্তৃক—সূর্য্যলোকবর্ণন
“ব্রাহ্মণ কহিলেন, ‘নাগরাজ! আপনি পর্য্যায়ক্রমে সূর্য্যের একচক্র রথ বহন করিয়া থাকেন। যদি তথায় কোন অদ্ভুত বস্তু আপনার দৃষ্টিপথে নিপতিত হইয়া থাকে, তাহা কীৰ্ত্তন করুন।’
“নাগ কহিলেন, ‘ব্ৰহ্মন্! ভগবান্ ভাস্কর বিবিধ অদ্ভুত পদার্থের আস্পদ। তাহা হইতে ভূতসমুদয় নির্গত হইয়াছে। তাহা হইতে সমীরণ নিঃসৃত হইয়াছে। তাঁহারাই রশ্মি নভোমণ্ডলে সঞ্চরণ করিতেছে। সূর্য্যদেব সেই সমীরণকে পুরোবাতাদিরূপে পরিণত করিয়া প্রজাগণের হিতসাধনের নিমিত্ত বর্ষাকালে জলের সৃষ্টি করিয়া থাকেন। বিহঙ্গগণ যেমন বৃক্ষের শাখা আশ্রয় করি।। বাস করে, সেইরূপ উহার রশ্মিজালে দেবগণ ও সিদ্ধ মহর্ষিগণ বাস করিতেছেন। পরমাত্মা উঁহার মণ্ডলমধ্যে তেজঃপুঞ্জে প্রদীপ্ত হইয়া লোকসকলকে প্রত্যক্ষ করিয়া থাকেন। উঁহার নামে কৃষ্ণবর্ণ একটি রশ্মি আছে। ঐ রশ্মি জলদরূপে নভোমণ্ডলে প্রাদুর্ভূত হইয়া বর্ষাকালে বারিবর্ষণ করিয়া থাকে।
‘দিবাকর বর্ষাকালে পৃথিবীতে যে জল বর্ষণ করেন, আটমাস কিরণজালদ্বারা পুনরায় তাহা গ্রহণ করিয়া থাকেন। তিনি বীজ উৎপাদন ও পৃথিবী প্রতিপালন করিতেছেন। অনাদিনিধন” স্বয়ং নারায়ণ হাতে বাস করিতেছেন। আমি নিৰ্ম্মল নভোমণ্ডলে সূর্য্যের সন্নিহিত থাকিয়া এই সমুদয় অপেক্ষা আর একটি যে অদ্ভুত ব্যাপার প্রত্যক্ষ করিয়াছি, তাহাও শ্রবণ করুন।
‘একদা মধ্যাহ্নকালে দিবাকর কিরণজাল বিস্তারপূর্ব্বক লোকসকলকে সন্তপ্ত করিতেছেন, এমন সময় আদিত্যের ন্যায় এক তেজঃপুঞ্জকলেবর পুরুষ আমাদের দৃষ্টিপথে নিপতিত হইলেন। ঐ পুরুষ স্বীয় তেজঃপ্রভাবে লোকসকলকে উদ্ভাসনপূর্ব্বক গগনতল বিদীর্ণ করিয়াই যেন সূৰ্য্যাভিমুখে আগমন করিতে লাগিলেন। অনন্তর সেই পুরুষ উপস্থিত হইবামাত্র সূর্য্য তাঁহাকে অভ্যর্থনা করিবার নিমিত্ত হস্তদ্বয় প্রসারিত করিলে তিনিও দিনকরের সম্মানরক্ষাৰ্থ স্বীয় দক্ষিণ হস্ত প্রসারিত করিলেন। তৎপরে তিনি গগনতল ভেদ করিয়া সূর্য্যের রশ্মিমণ্ডলে প্রবিষ্ট হইলেন। তখন সূর্য্যের সহিত তাহার আর কিছুমাত্র বিভিন্নতা লক্ষিত হইল না। ঐ সময় ঐ উভয়ের মধ্যে কে সূর্য্য, তদ্বিষয়ে আমাদিগের বিলক্ষণ সন্দেহ উপস্থিত হইল। অনন্তর আমরা সূর্য্যকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক কহিলাম, ভগবন! এই যে পুরুষ নভোমণ্ডলে আগমন করিয়া দ্বিতীয় সূর্য্যের ন্যায় লক্ষিত হইতেছেন, ইনি কে?’ ”