৩৬২তম অধ্যায়
দ্বিজনাগসাক্ষাৎকার—কথোপকথন
ভীষ্ম কহিলেন, “অনন্তর ভুজঙ্গরাজ ‘ব্রাহ্মণ কোন্ কার্য্য অনুরোধে আগমন করিয়াছিলেন’ মনে মনে ইহাই আন্দোলন করিতে করিতে সেই ব্রাহ্মণের অনুসন্ধানার্থ গোমতীতীরে যাত্রা করিলেন এবং অনতিকালমধ্যে তথায় সমুপস্থিত হইয়া ব্রাহ্মণের নিকট গমনপূৰ্ব্বক মধুরবাক্যে কহিলেন, তপোধন! আপনি ক্রোধ সংবরণপূৰ্ব্বক আপনার এ স্থানে আগমন করিবার অভিপ্রায় ব্যক্ত করুন। আপনি এই নির্জ্জন গোমতীতীরে কাহার উপাসনা করিতেছেন?
“ব্রাহ্মণ কহিলেন, ‘মহাত্মন্! আমার নাম ধৰ্ম্মারণ্য। আমি কোন কার্য্যানুরোধে নাগরাজ পদ্মনাভের সহিত সাক্ষাৎ করিবার মানসে এই স্থানে উপস্থিত হইয়াছি। আমি তাঁহার আলয়ে শুনিলাম, তিনি সুৰ্য্যের নিকট গমন করিয়াছেন। এক্ষণে কৃষক যেমন মেঘের প্রতীক্ষা করে, সেইরূপ আমি তাঁহার অপেক্ষা করিয়া এবং যোগ অবলম্বনপূর্ব্বক তাহারই ক্লেশ ও অমঙ্গল রিণের নিমিত্ত বেদপাঠে প্রবৃত্ত হইয়াছি।
“তখন নাগরাজ কহিলেন, “ব্রহ্মন্! আপনি সচ্চরিত্র ও সজ্জনবৎসল। সেই নাগের প্রতি যথার্থই আপনার যথেষ্ট স্নেহ আছে। এক্ষণে আপনি যাহার অনুসন্ধান করিতেছেন, আমিই সেই নাগ। অতএব আপনি ইচ্ছানুরূপ আজ্ঞা করুন, আমি আপনার কি প্রিয়ানুষ্ঠান করিব? আমি পরিবারবর্গের মুখে আপনার গোমতীতীরে আগমন বৃত্তান্ত শ্রবণ করিয়া স্বয়ং আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিবার নিমিত্ত এই স্থানে আগমন করিয়াছি। এক্ষণে আপনি বিশ্বস্তমনে আমাকে যে-কোন কার্য্যে নিযুক্ত করুন, আমি অবশ্যই তাহা সংসাধন করিব। আপনি যখন আপনার হিত পরিত্যাগ করিয়া আমার মঙ্গলের জন্য স্বস্ত্যয়ন করিতেছেন, তখন আমি নিশ্চয়ই আপনার গুণগ্রামে প্রীত হইলাম।
‘ব্রাহ্মণ কহিলেন, নাগরাজ! আমি আপনাকে কোন বিষয় জিজ্ঞাসা করিবার নিমিত্ত এই স্থানে আগমন করিয়া আপনার দর্শনলাভপ্রত্যাশায় অবস্থান করিতেছি। এক্ষণে আমি পরমাত্মাকে জ্ঞাত হইতে একান্ত সমুৎসুক হইয়াছি; সংসারে আমার দৃশ অনুরাগ বা বিরাগ নাই। আপনি শশাঙ্ককরসঙ্কাশ আত্মপ্রকাশিত যশসমূহদ্বারা আপনাকে প্রখ্যাত করিয়াছেন। এক্ষণে ক্যাপনার সূর্য্যলোকগমনবৃত্তান্ত শ্রবণ করিয়া আপনাকে একটি বিষয় জিজ্ঞাসা করিতে আমার বাসনা হইয়াছে। আপনি অগ্রে সেই বিষয়ের উত্তর প্রদান করিলে পশ্চাৎ আমি যে নিমিত্ত এখানে আসিয়াছি, তাহা ব্যক্ত করিব।”