৩৬০তম অধ্যায়
নাগনিকটে পত্নীকর্ত্তৃক দ্বিজবার্ত্তানিবেদন
ভীষ্ম কহিলেন, “অনন্তর নিয়মিত কাল পরিপূর্ণ হইলো, পন্নগরাজ কৃতকার্য্য ও সূর্য্যকর্ত্তৃক সমনুজ্ঞাত হইয়া গৃহে প্রত্যাগমন করিলেন। তাঁহার পত্নী তৎক্ষণাৎ তাঁহার পদপ্রক্ষালনাদির নিমিত্ত তথায় সমুপস্থিত হইলেন। নাগরাজ পতিব্রতা পত্নীকে সমীপে সমুপস্থিত দেখিয়া সম্বোধনপূৰ্ব্বক কহিলেন, ‘প্রিয়ে! আমি পূৰ্ব্বে যেরূপ নিয়মে দেবতা ও অতিথিদিগের পূজা করিতে আদেশ করিয়াছি, তুমি স্ত্রীবুদ্ধিনিবন্ধন কাতর হইয়া ধৰ্ম্মপ্রতিপালনে শৈথিল্য প্রকাশপূৰ্ব্বক ধৰ্ম্ম হইতেই পরিভ্রষ্ট হও নাই ত’?
“তখন নাগভাৰ্য্যা কহিলেন, ‘নাথ! গুরুশুশ্রূষা শিষ্যগণের, বেদাভ্যাস ব্রাহ্মণের, প্রভুবাক্য প্রতিপালন ভৃত্যের, প্রজাশাসন নরপতির, বিপন্ন ব্যক্তির পরিত্রাণ ক্ষত্রিয়ের, যজ্ঞাদিকার্য্যের অনুষ্ঠান ও অতিথিসেবা বৈশ্যের, ত্রিবর্ণওযা শূদ্রের, সৰ্ব্বভূতহিতৈষিতা [সকল প্রাণীর হিতসাধনের ইচ্ছা] গৃহস্থের; পরিমিতাহার, যথানিয়মে ব্রতানুষ্ঠান ও ইন্দ্রিয়সংযম সমুদয় বর্ণের; “আমি কাহার, কোথা হইতেই বা উদ্ভূত হইলাম, আমার সহিতই বা কাহার সম্বন্ধ আছে” এইরূপ চিন্তা করা মোক্ষাশ্রমীর এবং পাতিব্ৰত্য স্ত্রীলোকের প্রধান ধর্ম্ম বলিয়া নির্দ্দিষ্ট হইয়াছে। হে নাগেন্দ্র! আপনি স্বধৰ্ম্মে অবস্থান করিয়া আমাকে যেরূপ ধৰ্ম্মোপদেশ প্রদান করিয়াছেন, আমি তাহাই যথার্থ বলিয়া অবগত হইয়াছি; অতএব কি নিমিত্ত আমি সৎপথ পরিত্যাগ করিয়া কুপথে পদার্পণ করিব? আমি আলস্য পরিত্যাগ করিয়া প্রতিনিয়ত দেবতাদিগের পূজা ও অতিথিসেবায় নিযুক্ত রহিয়াছি। অদ্য পঞ্চদশ দিবস হইল, এক ব্রাহ্মণ কোন কার্য্য উপলক্ষে এ স্থানে আগমন করিয়াছেন। তিনি কোনরূপেই আমার নিকট স্বীয় অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন নাই। আপনার সহিত সাক্ষাৎ করাই তাঁহার উদ্দেশ্য। তিনি আপনার প্রত্যাগমন প্রতীক্ষায় গোমতীতীরে কালপ্রতীক্ষা করিতেছেন। ঐ মহাত্মা গমনকালে আপনি গৃহে উপস্থিত হইবামাত্র আপনাকে তাঁহার নিকট প্রেরণ করিতে কহিয়া গিয়াছেন। আমিও তাঁহার বাক্যে স্বীকার করিয়াছি; অতএব এক্ষণে অবিলম্বে গোমতীতীরে গমন করিয়া তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করা আপনার অবশ্য কর্ত্তব্য। ”