সংগ্রাম জিনিয়া রঙ্গে, নিজ সৈন্য লয়ে সঙ্গে,
তাম্রধ্বজ গেল নিকতনে।
বসন ধরিয়া গলে, জনকের পদতলে,
প্রণমিল আনন্দিত মনে।।
তাম্রধ্বজ যোড়হাতে, নিবেদন করে তাতে,
শুন পিতা মম নিবেদন।
নর্ম্মদা নদীর কূলে, অশ্ব রাখি কুতূহলে,
সঙ্গে লয়ে নিজ সৈন্যগণ।।
এক অশ্ব হেনকালে, উপনীত নদীকূলে,
অনুচরে তাহাকে ধরিল।
যুধিষ্ঠির যজ্ঞ-হয়, সঙ্গে এল ধনঞ্জয়,
পত্র পড়ি সব জানা গেল।।
নিয়োজিয়া অনুচরে, অশ্ব পাঠাইনু ঘরে,
যুদ্ধ আশে রহিলাম আমি।
হয় গজ চারু রথে, নানা অস্ত্র লয়ে হাতে,
সৈন্য এল, লেখা নাহি জানি।।
ডাক দিয়া উচ্চৈঃস্বরে, বলে মোরে কটূত্তরে,
বৃষকেতু কর্ণের নন্দন।
এ তিন ভুবন মাঝে, কেবা হেন বীর আছে,
অর্জ্জুন সহিত করে রণ।।
পাঁচনি লইয়া হাতে, কৃষ্ণচন্দ্র যাঁর রথে,
রথ-অশ্ব চালান সারথি।
আর যত আছে বীর, সংগ্রামেতে অতি ধীর,
জিনিতে না পার সুরপতি।।
শুনি তার বাক্যজাল, হৃদয়ে বাজিল শাল,
উদয় হইল বীররস।
বাণে বাণে যুদ্ধ হয়, স্বর্গে দেব স্থির নয়,
তপোবনে কম্পিত তাপস।।
খাইয়া আমার বাণ, বৃষকেতু হতজ্ঞান,
পড়িয়া লোটায় ভূমিতলে।
আরোহিয়া মত্ত হাতি, অনুশাল্ব দৈত্যপতি,
সংগ্রামে আইল হেনকালে।।
নানা অস্ত্র লয়ে হাতে, যুঝিল আমার সাথে,
নানা মায়া করিল বিস্তর।
বাণাঘাতে জরজর, কৈনু তার কলেবর,
ভঙ্গ দিল দৈত্যের ঈশ্বর।।
তবে রাজা যুবনাশ্ব, হাতে লয়ে মহাপাশ,
পুত্রসহ প্রবেশিল রণে।
খাইয়া আমার বাণ, পিতা পুত্রে হতজ্ঞান,
ভূমিতে পড়িল অচেতনে।।
হংসধ্বজ নরপতি, সাহস করিয়া অতি,
সংগ্রাম করিল বহুতর।
তূণ-গুণ ধনুর্ব্বাণ, কাটি করি খান খান,
অচেতন হৈল নরবর।।
নীলধ্বজ রাজা এল, তাহার পতন হৈল,
ভূমিতে পড়িল অচেতন।
আরোহিয়া দিব্য রথে, ধনুর্ব্বাণ হয়ে হাতে,
রণে এল শ্রীবভ্রুবাহন।।
বড় বলবান রাজা, অনল সমান তেজা,
সংগ্রাম করিল নানামত।
দুই জনে সুসন্ধান, করিলাম নানা বাণ,
সে কথা কহিতে পারি কত।।
অচেতন হয়ে রণে, পড়িল আমার বাণে,
ভীম এল করিতে সংগ্রাম।
সাত্যকি তাহার সাথে, নানা অস্ত্র লয়ে হাতে,
দুই জনে মহাবলবান।।
অনেক যুঝিল ভীম, প্রতাপেতে সে অসীম,
আগে ভয় জন্মিল অন্তরে।
শেষে ভঙ্গ দিয়া বীর, পলাইল দিগন্তরে,
কহিলাম তোমার গোচরে।।
তবে এল কৃষ্ণসুত, মনে বড় হরষিত,
কামদেব মহাবলবান।
যুঝিল আমার সাথে, ধনুর্ব্বাণ লয়ে হাতে,
কি কহিব সে সব বাখান।।
অবধান কর তাত, পরাজিনু রতিনাথ,
অচেতনে লোটায় ধরণী।
গাণ্ডীব লইয়া হাতে, অর্জ্জুন আইল রথে,
সারথি তাহাতে চক্রপাণি।।
যুঝিনু তাহার সনে, ভয় না করিনু মনে,
পরাভব পাইল কিরীটি।
পার্থ হৈল অচেতন, আশ্বাসেন নারায়ণ,
পদাতিক পড়ে কোটি কোটি।।
এই যুদ্ধ-বিবরণ, করিলাম নিবেদন,
অশ্ব আনি দেখায় পিতারে।
শিখিধ্বজ হরষিত, মনেতে পাইয়া প্রীত,
আলিঙ্গনে তুষিল পুত্রেরে।।
মহাভারতের কথা, শুনিলে ঘুচয়ে ব্যথা,
কলির কলুষ বিনাশন।
কমলাকান্তের সুত, হেতু সুজনের প্রীত,
কাশীরাম দাস বিরচন।।