ভীষ্মদেব বলিলেন শুন নরপতি।
কতদিনে যুবতী হইল চন্দ্রাবতী।।
ভুবনে বিখ্যাত নীলধ্বজ নরবর।
কন্যার যৌবন দেখি দিল স্বরন্বর।।
পৃথিবীর রাজগণে ধরিয়া আনিল।
ইন্দ্রের সমান সভা শোভিত হইল।।
একে একে কন্যা নিরখিল রাজগণে।
চন্দ্রকেতু ভূপে দেখি পীড়িত মদনে।।
গলে মাল্য দিয়া তারে করিল বরণ।
কন্যা লয়ে গেল রাজা আপন ভবন।।
গুণে মহাগুণী রাজা প্রতাপে তপন।
শীলতায় চন্দ্র যেন তেজে বৈশ্রবণ।।
এক ভার্য্যা বিনে রাজা অন্য নাহি জানে।
উর্ব্বশী সহিত যেন বুধের নন্দনে।।
চান্দ্রায়ণ মহাব্রত আচরে নৃপতি।
নিরাহারে একমাস ভার্য্যার সংহতি।।
যেই দিন হৈতে ব্রত সাঙ্গ সমাধান।
সেই দিনে চন্দ্রাবতী করে ঋতুস্নান।।
চন্দ্রাবতী রূপে দীপ্তি মোহে ত্রিভুবন।
দেখিয়া নৃপতি মন পীড়িল মদন।।
ব্রত ভঙ্গ করি রাজা করিল রমণ।
বহুমতে চন্দ্রাবতী করিল বারণ।।
কামে বশ হয়ে রাজা না শুনিল বাণী।
সেই পাপে পঞ্চত্ব পাইল নৃপমণি।।
স্বামীর মরণে কন্যা কান্দিল অপার।
ধর্ম্মকেতু নামে তার হইল কুমার।।
পাত্র মিত্রগণ কত করিয়া যুকতি।
রাজদণ্ড দিয়া তারে করিল নৃপতি।।
ভীষ্ম বলিলেন শুন ধর্ম্মের নন্দন।
চন্দ্রকেতু রাজা যদি ত্যজিল জীবন।।
দুই যমদূত আসি করিল বন্ধন।
চন্দ্রকেতু নৃপে নিল যমের ভবন।।
কপট করিয়া যম জিজ্ঞাসিল তারে।
তোমা সম নাহি কেহ ধার্ম্মিক সংসারে।।
কিছুমাত্র অল্প পাপ আছয়ে তোমার।
ব্রতসাঙ্গ দিনে তুমি করিলে শৃঙ্গার।।
এত শুনি বলে রাজা ভাবি নিজ চিত্তে।
অল্প পাপ থাকে যদি ভূঞ্জিব অগ্রেতে।।
ধর্ম্মরাজ বলে জন্ম গৃধ্রের যোনিতে।
হীনপক্ষী হয়ে থাক কৌণ্ডিণ্য পুরেতে।।
গৃধ্র পক্ষী হয়ে জন্ম লইল রাজন।
চন্দ্রাবতী শুনিলেক এ সব কথন।।
পিতার বাড়ীতে কন্যা গেল দুঃখী মন।
জনকেরে কহিল এ সব বিবরণ।।
শুনি নীলধ্বজ রাজা হৈল সচিন্তিত।
যুক্তি কৈল রাজ পুরোহিতের সহিত।।
যুক্তি করি চাহি তবে বলিল কন্যারে।
স্বরম্বর করি পুনঃ বর অন্য বরে।।
কন্যা বলে হেন বাক্য না বলিহ আর।
আপনার দেহ আমি করিব সংহার।।
কৌণ্ডিন্য নগরে যদি না পাঠাও মোরে।
নারীহত্যা দিব তবে তোমার উপরে।।
শুনি রাজা ভৃত্যগণ দিলেন সংহতি।
কৌণ্ডিন্য নগরে পুনঃ গেল চন্দ্রাবতী।।
শকুনির রূপ কন্যা দেখিয়া স্বামীরে।
বিলাপ করিয়া কাঁদে অনেক প্রকারে।।
ক্রন্দন নিবর্ত্তি তবে বলয়ে বচন।
কি কারণে ব্রত ভঙ্গ করিলে রাজন।।
তার ফল ভুঞ্জ তুমি না হয় এড়ান।
কেমনে তোমারে আমি পাব মতিমান।।
ধর্ম্মরাজ করিলেন হেন তব গতি।
আজি আমি শাপ দিব ধর্ম্মরাজ প্রতি।।
এতেক বলিয়া জল লইলেক হাতে।
শাপভয়ে ধর্ম্ম তথা আসিল সাক্ষাতে।।
করযোড়ে কন্যা প্রতি বলয়ে বচন।
আমারে শাপিতে মাতা চাহ কি কারণ।।
তব স্বামী চন্দ্রকেতু হেন হৈল মন।
ব্রত সাঙ্গ দিনে তোমা করিল রমণ।।
সে কারণে হইল কলুষ অতিশয়।
যাহা করি তাহা ভূঞ্জি নাহিক সংশয়।।
আমার বচনে কোপ কর নিবারণ।
পাপে মুক্ত তব স্বামী হইবে এখন।।
গৃধ্রমুর্ত্তি ত্যজি পুনঃ দিব্যমূর্ত্তি হবে।
নাহিক সংশয় আজি স্বামীকে পাইবে।।
এতেক বলিতে স্বর্গে দুন্দুতি বাজিল।
শকুনির রূপ ত্যজি দিব্যমূর্ত্তি হৈল।।
দেবীর আকৃতি হৈল কন্যা চন্দ্রাবতী।
দেবরথ পাঠাইল দেব শচীপতি।।
রথে চড়ি স্বর্গে দোঁহে করিল গমন।
কহিনু পুরাণ কথা ধর্ম্মের নন্দন।।
চন্দ্রকেতু উপাখ্যান শুনে যেই জন।
সর্ব্বপাপে মুক্ত হয় ব্যাসের বচন।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।