অর্জ্জুনের বাক্য শুনি বিরাট নন্দন।
বায়ু বেগে নিল রথ কৃপের সদন।।
প্রদক্ষিণ করি ক্রমে সব সৈন্যগণ।
মৎস্য যেন জালমধ্যে করিল বন্ধন।।
কৃপের সম্মুকে রথ লইল বৈরাটী।
দেবদত্ত শঙ্খনাদ করেন কিরীটী।।
গজ যেন রোষে শুনি গজের গর্জ্জন।
কুপিল গৌতমী শুনি শঙ্খের নিঃস্বন।।
আগু হয়ে আপনার শঙ্খ বাজাইল।
দুই শঙ্খ-নিনাদেতে ত্রিলোক কাঁপিল।।
ক্রোধে কৃপাচার্য্য যেন জ্বলিয়া উঠিল।
আকর্ণ পূরিয়া ধনুর্গুণ টঙ্কারিল।।
দশ বাণ প্রহারিল অর্জ্জুন উপর।
কাটিয়া ফেলিল তাহা পার্থ ধনুর্দ্ধর।।
দশ বাণ কাটি বীর করে কুড়ি খান।
তবে দিব্য অস্ত্র পার্থ করেন সন্ধান।।
জলদগ্নি সম অস্ত্র দেখি লাগে ভয়।
বাণাঘাতে আচার্য্যের কম্পিত হৃদয়।।
বিচলিতাসন কৃপাচার্য্যে দেখি ব্যস্ত।
গৌরব করিয়া পার্থ না মারেন অস্ত্র।।
ক্ষণেক সম্বরি কৃপ নিল ধনুর্ব্বাণ।
অর্জ্জুন উপরে অস্ত্র করিল সন্ধান।।
না মারিতে অস্ত্র পার্থ এড়িলেন বাণ।
কৃপের ধনুক করিলেন খান খান।।
আর অস্ত্রে কাটিলেন অঙ্গের কবচ।
অঙ্গ হৈতে খসে যেন সর্প-জীর্ণ-ত্বচ।।
পুনঃ অন্য ধনু কৃপ লইলেন হাতে।
সেইক্ষণে দিল গুণ চক্ষু পালটিতে।।
গুণ দিয়া বাণ বীর করিল সন্ধান।
সেই ধনু কাটি করিলেন খান খান।।
পুনঃ অন্য ধনু কৃপ লইলেন হাতে।
সেইক্ষণে দিল গুণ চক্ষু পালটিতে।।
গুণ দিয়া বাণ বীর করিল সন্ধান।
সেই ধনু কাটি করিলেন খান খান।।
পুনঃ কৃপ দিব্য ধনু লইলেন হাতে।
সে ধনু কাটেন পার্থ গুণ নাহি দিতে।।
দেখিয়া গৌতমী যেন অগ্নি হেন জ্বলে।
কাটা ধনু ফেলাইয়া দিল ভূমিতলে।।
শক্তি এক তুলি নিল ভীষণ দর্শন।
নানা রত্ন ভূষা যেন দীপ্ত হুতাশন।।
ছাড়িলেন শক্তি, আসে হয়ে শব্দবান।
অর্দ্ধপথে পার্থ তাহা করেন দুখান।।
দিব্যাস্ত্র সন্ধান করি তবে ধনঞ্জয়।
কাটিলেন কৃপের রথের চারি হয়।।
ছয় বাণে কাটি তবে ফেলে শর তূণ।
সারথির মাথা কাটি ফেলেন অর্জ্জুন।।
সারথি মুকুট হয় রথ হৈল ছন্ন।
চতুর্দ্দিকে কুরুগণ হৈল ছিন্নভিন্ন।।
চাহিয়া দেখিল কৃপ কিছু নাহি পাশে।
হাতে গদা লয়ে তবে আসে ক্রোধবশে।।
হাসিয়া অর্জ্জুন বীর করেন সন্ধান।
হাতের গদাতে মারিলেন দশ বাণ।।
খণ্ড খণ্ড করি ফেলিলেন গদা কাটি।
সব গদা গেল, শুধু রহে বজ্রমুষ্টি।।
নিরস্ত্র হইল কৃপ সর্ব্বাঙ্গ বিকল।
পরিধান ধুতি আর উত্তরী কেবল।।
করযোড়ে বলিলেন কুন্তীর নন্দন।
এ বেশে আচার্য্য কোথা করিছ গমন।।
অম্বরে অমরবৃন্দ দেখেন কৌতুক।
লাজে শরদ্বান-পুত্র হন অধোমুখ।।
চতুর্দ্দিক হৈতে তবে আসি যোদ্ধাগণ।
রথে চড়াইয়া কৃপে করিল গমন।।