৩৪তম অধ্যায়
বিরাটনগরে যুদ্ধজয় ঘোষণা
বৈশম্পায়ন কহিলেন, সুশৰ্মা যুধিষ্ঠিরের বাক্যানুসারে মুক্তি লাভ করিয়া লজ্জানম্র-মুখে বিরাটরাজকে অভিবাদনপূর্ব্বক প্রস্থান করিলেন, বিরাটরাজ ও পাণ্ডবগণ সুশর্ম্মাকে বিসর্জন করিয়া সেই রাত্রি সমরক্ষেত্রেই বাস করিতে লাগিলেন।
মৎস্যরাজ অমানুষিক বিক্রমশালী পাণ্ডবগণকে প্রভুত ধন প্ৰদান ও সম্মান করিয়া কহিলেন, “অদ্য আমি আপনাদিগের বিক্রমেই মুক্তি ও কল্যাণ লাভ করিলাম; অতএব আপনারাই এই মৎস্যরাজ্যের অধীশ্বর। আমার ন্যায় আপনারাও আমার রত্নজাত স্বচ্ছন্দে উপভোগ করুন। আমি স্বেচ্ছানুসারে আপনাদিগকে অলঙ্কৃত কন্যা ও বিবিধ ধন প্ৰদান করিব।”
তখন পাণ্ডবগণ পৃথক পৃথক কৃতাঞ্জলিপুটে মৎস্যরাজকে কহিলেন, “মহারাজা! আমরা আপনার সমুদয় বাক্যে অভিনন্দন করিতেছি। আপনি যে শক্ৰহস্ত হইতে মুক্ত হইয়াছেন, ইহাতেই আমাদের যৎপরোনাস্তি সন্তোষলাভ হইয়াছে।”
রাজসত্তম বিরাট পাণ্ডবগণের এই বাক্য শ্রবণ করিয়া অধিকতর প্রীতিসম্পন্ন হইয়া পুনরায় যুধিষ্ঠিরকে কহিলেন, “মহাশয়! আসুন, আপনাকে মৎস্যরাজ্যে অভিষেক করি; আপনিই আমাদিগের অধিপতি। আমি আপনাকে মনোহর রত্ন, গো, সুবর্ণ ও মণি-মুক্তা প্রভৃতি বিবিধ মহামূল্য-দ্ৰব্যজাত প্রদান করিব। আপনি আমাদের সমস্ত দ্রব্যেরই অধিকারী। হে বিপ্রেন্দ্ৰ! আপনাকে নমস্কার; আদ্য আপনার প্রসাদেই রাজ্যলাভ ও সন্তানগণের মুখাবলোকন করিলাম। হে মহাবীর! আপনি আমাকে অরাতির হস্ত হইতে উদ্ধার করিয়াছেন।”
যুধিষ্ঠির পুনরায় উত্তর করিলেন—“মৎস্যরাজ! আমি আপনার বাক্যে অভিনন্দন করিতেছি; অভিলাষ করি, আপনি অনুকম্পপরতন্ত্র হইয়া অবিচ্ছিন্ন সুখপরম্পরা পরিসম্ভোগ করুন। এক্ষণে দূতগণ নগরে গমন করিয়া সুহৃদগণকে প্রিয়সংবাদ প্ৰদান ও আপনার বিজয়-ঘোষণা করুক।”
বিরাটরাজ যুধিষ্ঠিরের বাক্যানুসারে দূতগণকে আদেশ করিলেন, “তোমরা নগরে গমন করিয়া আমার রণজয় ঘোষণা কর। কুমারীগণ, গণিকা-সমুদয় ও বাদ্যকর সকল নগর হইতে এখানে আসিয়া আমার প্রত্যুদগমন করুক।”
দূতগণ মৎস্যরাজের আজ্ঞা শিরোধাৰ্য্য করিয়া হৰ্ষোৎফুল্লচিত্তে সেই রাত্ৰিতেই প্রস্থান করিল এবং পরদিন সূৰ্য্যোদয়কালে নগরোপকণ্ঠে উপনীত হইয়া বিরাটরাজের জয়-ঘোষণা করিতে লাগিল।