৩৪৪তম অধ্যায়
বদরিকাশ্রমে নারদনারায়ণ কথোপকথন
শৌনক কহিলেন, হে সৌতে! মহর্ষিগণ তোমার মুখে এই অপূৰ্ব্ব উপাখ্যান শ্রবণ করিয়া সাতিশয় বিস্ময়াপন্ন হইয়াছেন। নারায়ণ কথা শ্রবণ করিলে যেরূপ ফললাভ হয়, সমুদয় আশ্রমে গমন ও সমুদয় তীর্থে অবগাহন করিলেও তদ্রূপ ফললাভ হয় না। এই সৰ্ব্বপাপবিনাশক পরমপবিত্র নারায়ণ-কথা আনুপূর্ব্বিক শ্রবণ, করিয়া আমাদিগের সর্ব্বাঙ্গ পবিত্র হইয়াছে। সৰ্ব্বলোকনমস্কৃত ভগবান্ নারায়ণ ব্রহ্মাদি দেবতা ও মহর্ষিগণের অদৃশ্য। দেবর্ষি নারদ কেবল তাঁহার অনুগ্রহবশতঃই তাঁহাকে দর্শন করিয়াছিলেন। যাহা হউক, দেবর্ষি নারদ অনিরুদ্ধদেহে অবস্থিত ভগবান নারায়ণকে দর্শন করিয়াও কি কারণে পুনৰ্ব্বার নরনারায়ণকে দর্শন করিবার নিমিত্ত ধাবমান হইলেন, তাহা আমাদিগের নিকট কীৰ্ত্তন করুন।
সৌতি কহিলেন, মহর্ষে! সর্পসত্রের [সর্পযজ্ঞের] অবসানে অন্যান্য কার্য্যসমুদয় আরব্ধ হইলে মহারাজ জনমেজয় বেদনিদান ভগবান্ ব্যাসদেবের তুল্য মহর্ষি বৈশম্পায়নকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, ‘ভগবন্! দেবর্ষি নারদ ভগবান্ নারায়ণের বাক্য চিন্তা করিতে করিতে শ্বেতদ্বীপ হইতে প্রতিনিবৃত্ত হইয়া বদরিকাশ্রমে নর ও নারায়ণের সহিত কত কাল বাস করিলেন এবং তাহাদিগকে কি কি জিজ্ঞাসা করিলেন, তাহা শ্রবণ করিবার নিমিত্ত অভিলাষ হইতেছে। যেমন দধি হইতে নবনীত ও মলয় হইতে চন্দন সমুদ্ভূত হয়; তদ্রূপ আপনি অসংখ্য উপাখ্যান-পরিপুরিত মহাভারত হইতে এই অমৃতস্বরূপ নারায়ণ-কথা সমুদ্ধৃত করিয়া আমার নিকট কীৰ্ত্তন করিয়াছেন। ভগবান্ নারায়ণ সৰ্ব্বভূতের আত্মস্বরূপ। আমি তাঁহার দুর্দ্ধর্ষ তেজের বিষয় শ্রবণ করিয়া অতিশয় চমৎকৃত হইয়াছি। যখন কল্পান্তে ব্রহ্মাদি দেবতা, মহর্ষি, গন্ধৰ্ব্ব ও অন্যান্য প্রাণীগণ সেই একমাত্র নারায়ণে প্রবিষ্ট হয়, তখন তাঁহার তেজ যে সৰ্ব্বাপেক্ষা দুর্দ্ধর্ষ, তাহাতে আর সন্দেহ নাই। ইহলোক ও পরলোকে তাঁহার তুল্য পবিত্র আর কেহ নাই। পূৰ্ব্বপিতামহ মহাত্মা অৰ্জ্জুন যে যুদ্ধে জয়লাভ করিয়াছিলেন, তাহা আশ্চর্য্যের বিষয় নহে। ত্রৈলোক্যনাথ ভগবান্ বাসুদেব যাঁহার প্রিয়সখা, বোধ হয়, ত্রিলোকমধ্যে তাঁহার কিছুই অপ্রাপ্য নাই। তপোবল না থাকিলে যাঁহাকে দর্শন করা যায় না, সেই লোকপূজিত শ্রীবৎসলাঞ্ছন ভগবান্ নারায়ণ যখন আমার পূর্ব্বপুরুষদিগের হিতসাধনে যত্নবান ও তাঁহাদিগের দৃষ্টিপথে নিপতিত হইয়াছিলেন, তখন নিশ্চয়ই তাঁহাদিগকে ধন্যবাদ প্রদান করিতে হইবে; অতুলতেজঃসম্পন্ন দেবর্ষি নারদ আবার তাঁহাদের অপেক্ষা ধন্য। কারণ, তিনি ভগবান্ নারায়ণের অনুগ্রহপ্রভাবে শ্বেতদ্বীপে তাঁহার আদিমূৰ্ত্তি দর্শন করিয়াছেন। যাহা হউক, দেবর্ষি অনিরুদ্ধদেহে উপস্থিত ভগবান্ নারায়ণের রূপদর্শন করিয়াও নরনারায়ণকে দর্শন করিবার নিমিত্ত পুনরায় কি নিমিত্ত বদরিকাশ্রমে উপস্থিত হইলেন এবং বদরিকাশ্রমে গমন করিয়াই বা তাঁহাদিগের সহিত কিরূপ কথোপকথন ও তথায় কত দিন অবস্থান করিলেন, তৎসমুদয় সবিস্তরে আমার নিকট কীৰ্ত্তন করুন।
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! আমি অমিততেজাঃ ভগবান বেদব্যাসকে নমস্কার করিয়া তাঁহার প্রসাদে আপনার প্রশ্নের উত্তর প্রদান করিতেছি, শ্রবণ করুন। দেবর্ষি নারদ শ্বেতদ্বীপে অনাদিনিধন নারায়ণকে দর্শন করিয়া তৎকথিত বিষয়সমুদয় চিন্তা করিতে করিতে সুমেরুপৰ্ব্বতে প্রত্যাগমন করিলেন এবং তথায় সমুপস্থিত হইয়া “আমি এতাদৃশ দূরপথে গমনপূৰ্ব্বক কার্য্যসিদ্ধি করিয়া নির্ব্বিঘ্নে প্রত্যাগমন করিলাম” এই চিন্তা করিয়া বিস্ময়সাগরে নিমগ্ন হইলেন।
অনন্তর তিনি সেই সুমেরুপৰ্ব্বত হইতে আকাশপথে গন্ধমাদনাভিমুখে প্রস্থান করিলেন এবং অনতিবিলম্বে অতি সুবিস্তীর্ণ বদরিকাশ্রমে অবতীর্ণ হইয়া দেখিলেন, তপশ্চরণনিরত ব্রতধারী আত্মনিষ্ঠ পুরাতন ঋষিদ্বয় তথায় উপবিষ্ট রহিয়াছেন। তাঁহাদিগের তেজঃপ্রভা সৰ্ব্বলোকপ্রকাশক সূর্য্য হইতেও সমধিক উজ্জ্বল। বক্ষঃস্থলে শ্রীবৎসচিহ্ন, মস্তকে জটাভার, চরণতলে চক্রচিহ্ন, বাহু আজানুলম্বিত এবং বক্ষঃস্থল অতি সুবিস্তীর্ণ। তাঁহারা উভয়েই মুষ্কচতুষ্টয়সম্পন্ন এবং ষষ্ঠিসংখ্যক ক্ষুদ্র আটটি বৃহদ্দস্তযুক্ত। তাঁহাদিগের কণ্ঠস্বর মেঘধ্বনির ন্যায় অতি গভীর, মুখমণ্ডল অতিরমণীয়, ললাটদেশ অতি প্রশস্ত, মস্তক আতপত্রের ন্যায় বিস্তীর্ণ এবং ভ্রূযুগল, হনু [চোয়াল।] ও নাসিকা অতি মনোহর।
দেবর্ষি নারদ এইরূপ লক্ষণাক্রান্ত সেই মহাপুরুষদ্বয়কে অবলোকনপূৰ্ব্বক হৃষ্টচিত্তে তাঁহাদিগকে প্রণাম করিলে তাঁহারাও তাঁহাকে প্রতিপ্রণাম ও স্বাগতপ্রশ্ন করিয়া কুশল জিজ্ঞাসা করিলেন। ঐ সময়ে দেবর্ষি নারদ সেই মহাপুরুষদ্বয়কে অবলোকনপূৰ্ব্বক “আমি শ্বেতদ্বীপে সৰ্ব্বভূতনমস্কৃত যেরূপ ব্যক্তিদিগকে নিরীক্ষণ করিয়াছি, এই মহাপুরুষদ্বয়ও সেইরূপ” এই চিন্তা করিয়া তাঁহাদিগকে প্রদক্ষিণপূর্ব্বক কুশময় আসনে উপবিষ্ট হইলেন। অনন্তর তপস্যা, যশ ও তেজের আধারস্বরূপ, শমদমাদিগুণসম্পন্ন, নরনারায়ণ, পূৰ্ব্বাহ্ণকৃত্য সম্পাদনপূৰ্ব্বক পাদ্য ও অর্ঘ্যপ্রদানদ্বারা দেবর্ষি নারদকে পূজা করিয়া কুশাসনে উপবেশন করিলেন। এইরূপে তাঁহারা তিনজন একত্র উপবিষ্ট হইলে, তাঁহাদিগের তেজঃপ্রভাবে হুতহুতাশনের প্রদীপ্তশিখাদ্বারা যজ্ঞভূমি যেমন সুশোভিত হয়, তদ্রূপ ঐ আশ্রমপ্রদেশ সমধিক শোভমান হইল।
অনন্তর নরনারায়ণ সুখোপবিষ্ট গতক্লম [বিগতশ্রম] দেবর্ষি নারদকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “দেবর্ষে! তুমি শ্বেতদ্বীপে আমাদিগের আদিমূৰ্ত্তি সনাতন ভগবান্ পরমাত্মার সহিত সাক্ষাৎকারলাভে কৃতকার্য্য হইয়াছ কি না, তাহা কীৰ্ত্তন কর।”
নারদকর্ত্তৃক নরনারায়ণের স্তব
নারদ কহিলেন, “শ্বেতদ্বীপে বিশ্বরূপী সনাতন মহাপুরুষের সহিত সাক্ষাৎকার লাভ করিয়াছি। দেবতা ও ঋষিগণসমবেত সমুদয় লোক তাঁহার শরীরমধ্যে অবস্থান করিতেছে। এক্ষণে আপনাদিগের উভয়কে, সন্দর্শন করিয়া আমার বোধ হইতেছে যেন, আমি এখনও সেই মহাপুরুষকে নিরীক্ষণ করিতেছি। আমি শ্বেতদ্বীপে অব্যক্তরূপী নারায়ণকে যেরূপ লক্ষণাক্রান্ত অবলোকন করিয়াছি, এখানে ব্যক্তরূপী আপনাদিগকেও সেই সমুদয় লক্ষণসম্পন্ন দেখিতেছি। আমি তথায় নারায়ণের উভয় পার্শ্বে আপনাদিগকে সন্দর্শন করিয়াছিলাম; আবার অদ্য এ স্থলে আগমন করিয়াও আপনাদিগকে দর্শন করিতেছি। আপনারা ভিন্ন এই ত্রিলোকমধ্যে আর কেহই তাঁহার সদৃশ, শ্রীমান্, তেজস্বী ও যশস্বী নহেন। তিনি তত্ত্বজ্ঞানযুক্ত সমুদয় ধর্ম্ম এবং স্বয়ং যে-যে রূপে অবনীতলে অবতীর্ণ হইবেন, তৎসমুদয় আমার নিকট কীৰ্ত্তন করিয়াছেন। সেই শ্বেতদ্বীপে যেসমুদয় বাহ্যেন্দ্রিয়শূন্য শ্বেতবর্ণ পুরুষ অবস্থান করেন, সকলেই তত্ত্বজ্ঞ ও নারায়ণভক্ত এবং সকলেই সৰ্ব্বদা নারায়ণের পূজা ও তাঁহার সহিত ক্রীড়া করিয়া থাকেন। ভগবান নারায়ণ নিতান্ত ভক্তবৎসল, ব্রাহ্মণপ্রিয়, বিশ্বসংসারকৰ্ত্তা, সৰ্ব্বগামী, কৰ্ত্তা, কারণ ও কার্য্য। তাঁহার তুল্য বল ও দ্যুতি আর কাহারও নাই। তিনি স্বয়ং তপশ্চরণপূৰ্ব্বক তেজঃপ্রভাবে আপনাকে শ্বেতদ্বীপ অপেক্ষা উদ্ভাসিত এবং ত্রিলোকমধ্যে শান্তি স্থাপিত করিয়াছেন। তিনি যে স্থানে তপস্যা করিতেছেন, তথায় সূর্য্য প্রকাশিত, চন্দ্র সমুদিত ও বায়ু প্রবাহিত হইতে পারে না। তিনি অবনীতলে অষ্টাঙ্গুলপ্রমাণ বেদি নির্ম্মাণপূৰ্ব্বক ঊর্দ্ধবাহু হইয়া একপদে অবলম্বন ও সাঙ্গবেদাধ্যয়ন করিয়া অতিকঠোর তপানুষ্ঠান করিয়া থাকেন। ব্রহ্মা, পশুপতি এবং অন্যান্য দেবতা, ঋষি, দৈত্য, দানব, রাক্ষস, গন্ধৰ্ব্ব, নাগ, সিদ্ধ ও রাজর্ষিগণ প্রভৃতি মহাত্মারা যেসমুদয় হব্যকব্য প্রদান করেন, তৎসমুদয় সেই পরমপুরুষের চরণে নিপতিত হয়। আর একান্ত অনুরক্ত ব্যক্তিরা তাঁহাকে যাহা যাহা সমর্পণ করেন, তৎসমুদয় তিনি শিরোধার্য্য করেন; সুতরাং ত্রিলোকমধ্যে তত্ত্বজ্ঞানসম্পন্ন একান্ত অনুরক্ত ব্যক্তি অপেক্ষা আর কেহই তাঁহার প্রিয়তর নাই। ইহা বিবেচনা করিয়া আমিও তাঁহার প্রতি একান্ত অনুরক্ত হইয়াছি। তিনি স্বয়ং আমার নিকট কহিয়াছেন যে, ‘একান্ত অনুরক্ত ব্যক্তিরাই আমার সর্ব্বাপেক্ষা প্রিয়তর। আমি এইরূপে শ্বেতদ্বীপে নারায়ণের মূৰ্ত্তি অবলোকন ও তাঁহার উপদেশ গ্রহণপূৰ্ব্বক এ স্থলে আগমন করিয়াছি। অতঃপর আপনাদিগের সহিত এই আশ্রমে অবস্থান করিব।”
৩৪৫তম অধ্যায়
নারায়ণকর্ত্তৃক স্বীয় তপশ্চরণকারণ-কথন
বৈশম্পায়ন বলিলেন, মহাত্মা নারদ এই কথা কহিলে, নারায়ণ তাঁহাকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক কহিলেন, “দেবর্ষে! তুমি যখন শ্বেতদ্বীপে অনিরুদ্ধমূর্ত্তিতে অবস্থিত সাক্ষাৎ ভগবান্ নারায়ণকে সন্দর্শন করিয়াছ, অতএব তুমি ধন্য ও ভগবানের অনুগৃহীত। অন্যের কথা দূরে থাকুক, প্রজাপতি ব্রহ্মাও তাহার সাক্ষাৎকারলাভে সমর্থ নহেন। সেই অব্যক্তপ্রভাব ভগবান্ নারায়ণের সন্দর্শন লাভ করা নিতান্ত দুষ্কর। ভক্ত অপেক্ষা তাঁহার প্রিয়তর আর কেহই নাই। তুমি তাঁহার নিতান্ত ভক্ত, এই নিমিত্ত তিনি স্বয়ং তোমাকে আপনার মূৰ্ত্তি প্রদর্শন করিয়া থাকেন।
“সেই পরমাত্মা যে স্থানে তপানুষ্ঠান করিতেছেন, তথায় আমরা দুইজন ব্যতিরেকে কেহই গমন করিতে সমর্থ হয় না। তিনি স্বয়ং যে স্থানে বিরাজিত রহিয়াছেন, ঐ স্থানের প্রভা সহস্র সূৰ্য্যের ন্যায় সমুজ্জ্বল। সেই বিশ্বপতি হইতে ক্ষমাগুণ উৎপন্ন হইয়াছিল, ঐ ক্ষমাগুণদ্বারা পৃথিবী ভূষিত হইয়াছে। রস সেই সৰ্ব্বলোকহিতকর দেবতা হইতে উৎপন্ন হইয়া সলিলকে আশ্রয় করিয়াছে। রূপাত্মক তেজ তাহা হইতে প্রাদুর্ভূত হইয়াছে। সূর্য্যদেব সেই তেজ লাভ করিয়া প্রভাজালবিস্তার করিতেছেন। সমীরণ সেই পুরুষোত্তম হইতে সমুৎপন্ন স্পর্শগুণ লাভ করিয়া সঞ্চরণ করিতেছে। শব্দ তাহা হইতে উদ্ভূত হইয়া আকাশকে আশ্রয় করাতে আকাশ অন্য বস্তুদ্বারা অনাবৃত হইয়া রহিয়াছে। সৰ্ব্বভূতগত মন তাহা হইতে সমুৎপন্ন হইয়া চন্দ্রকে আশ্রয় করিয়া উঁহাকে প্রকাশশালী করিয়াছে। বেদে নির্দ্দিষ্ট আছে, হব্যকব্যভোজী ভগবান্ নারায়ণ বিদ্যার সহিত যে স্থানে বাস করিতেছেন, ঐ স্থানের নাম সদ্ভূতাৎপাদক। এক্ষণে যাঁহারা পাপপুণ্যবিবর্জ্জিত, তুমি তাঁহাদিগের শ্রেয়স্কর পথ অবলম্বন কর।
“তমোনাশক দিবাকর সকল লোকের দ্বারস্বরূপ। মুমুক্ষু ব্যক্তিরা সর্ব্বাগ্রে সেই সূর্য্যমণ্ডলে প্রবেশ করিয়া তৎপরে আদিত্য হইতে দগ্ধদেহ ও পরমাণুস্বরূপ হইয়া সেই সূর্য্যমণ্ডলের মধ্যবর্ত্তী নারায়ণে, নারায়ণ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া অনিরুদ্ধে, তৎপরে মনঃস্বরূপ হইয়া প্রদ্যুম্ন হইতে নির্গত হইয়া জীবসংজ্ঞক সঙ্কর্ষণে এবং পরিশেষে সঙ্কৰ্ষণ হইতে ত্রিগুণহীন হইয়া নির্গুণাত্মক সকলের অধিষ্ঠানভূত ক্ষেত্রজ্ঞ বাসুদেবে প্রবেশ করিয়া থাকে।
“হে তপোধন! এক্ষণে আমরা ধর্ম্মের আলয়ে প্রাদুর্ভূত হইয়া সেই দেবদেব নারায়ণের যেসমস্ত মূর্ত্তি ত্রিলোকমধ্যে আবির্ভূত হইবে, তৎসমুদয়ের মঙ্গলবিধানের নিমিত্ত এই রমণীয় বদরিকাশ্রমে অতিকঠোর তপানুষ্ঠান করিতেছি। আমরা অসাধারণ বিধি অবলম্বনপূর্ব্বক কৃচ্ছসাধ্য ব্রতসমুদয় সংসাধন করিয়াছি। আমরা তোমাকে শ্বেতদ্বীপে দর্শন করিয়াছি এবং তুমি ভগবান নারায়ণের সহিত সমাগত হইয়া যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছ, তাহাও অবগত আছি। সেই দেবাদিদেব এই বিশ্বমধ্যে যেসমস্ত শুভাশুভ উৎপন্ন হইয়াছে, তোমার নিকট তৎসমুদয়ই কীৰ্ত্তন করিয়াছেন।”
মহাত্মা নারায়ণ এই কথা কহিলে, দেবর্ষি নারদ তাঁহাদের বাক্যানুসারে সেই স্থানে অবস্থানপূৰ্ব্বক পরমপুরুষের প্রতি একান্ত ভক্তিপরায়ণ, নারায়ণনিষ্ঠ, বিবিধ মন্ত্রজপে একান্ত অনুরক্ত ও সেই নারায়ণের পূজায় নিতান্ত নিরত হইয়া তপানুষ্ঠানপূর্ব্বক দিব্য সহস্র বৎসর অতিবাহিত করিলেন।