৩৩তম অধ্যায়
চরম মুক্তির উপায়
“ব্রাহ্মণ কহিলেন, “শোভনে! তুমি স্বীয় বুদ্ধি অনুসারে আমাকে দেহাভিমানী সামান্য ব্যক্তির ন্যায় বিবেচনা করিতেছ; কিন্তু আমি সেরূপ নহি। তুমি আমাকে ব্রাহ্মণ, জীবন্মুক্ত, সন্ন্যাসী, গৃহস্থ বা ব্রতচারী যাহা ইচ্ছা বলিয়া উল্লেখ করিতে পার। আমি সামান্য ব্যক্তির ন্যায় পুণ্যপাপে আসক্ত নহি। এই জগতে যেসমুদয় পদার্থ অবলোকন করিতেছ, আমি তৎসমুদয়েই বিদ্যমান রহিয়াছি। অগ্নি যেমন কাষ্ঠের নাশক, তদ্রূপ আমি এই জগতের স্থাবরজঙ্গমাত্মক সমুদয় পদার্থেরই সংহারকর্ত্তা। আমার বুদ্ধি কি স্বর্গ, কি মৰ্ত্ত সৰ্ব্বত্রই আমার রাজ্য বলিয়া স্থির করিয়াছে। ফলতঃ বুদ্ধিই আমার ধনস্বরূপ।
‘ব্রহ্মজ্ঞানীদিগের মধ্যে কি গৃহস্থ, কি বানপ্রস্থ, কি সন্ন্যাসী, কি ভিক্ষু যিনি যে আশ্রমে অবস্থান করুন না কেন, সকলেরই ব্ৰহ্মপ্রাপ্তির পথ একপ্রকার । উহারা ভিন্ন ভিন্ন প্রকার লিঙ্গ ধারণ করিয়া একমাত্র বুদ্ধিরই উপাসনা করিয়া থাকেন। উহাদের সকলেরই বুদ্ধি শান্তিগুণযুক্ত। পৃথিবীস্থ নদীসমুদয় যেমন ভিন্ন ভিন্ন দিকে গমন করিয়াও একমাত্র সাগরে নিপতিত হয়, তদ্রূপ ব্ৰহ্মবেত্তাদিগের মধ্যে যিনি যে প্রকার আচরণ করুন না কেন, চরমে সকলেই একমাত্র জ্ঞানপথে সমুপস্থিত হইয়া থাকেন। একমাত্র বুদ্ধিই মনুষ্যদিগকে ঐ পথে সমানীত করিয়া থাকে। শরীরদ্বারা কখনই ঐ পথে গমন করা যায় না। শরীর উৎপত্তি ও ক্ষয়শীল কৰ্ম্মপ্রভাবেই উৎপন্ন হইয়া থাকে। এক্ষণে আমার এই সমুদয় উপদেশবাক্য হৃদয়ে ধারণ করিলে তোমাকে কখনই পরলোকের নিমিত্ত ভীত হইতে হইবে না। তুমি অনায়াসেই চরমে আমার আত্মাতে লীন হইয়া মুক্তিলাভ করিবে।’ ”