মুনি বলে, অনন্তর শুনহ রাজন।
প্রভাতে আইল সবে হয়ে একমন।।
সংসপ্তকে চলি যান কৃষ্ণ ধনঞ্জয়।
দুই সৈন্যে কোলাহল হইল প্রলয়।।
মহাকোপে যোদ্ধাগণ করয়ে সমর।
বাণ বৃষ্টি করে যেন বর্ষে জলধর।।
ভীম দুর্য্যোধনে যুদ্ধ হয় ঘোরতর।
সাত্যকি সহিত কর্ণ করয়ে সমর।।
দ্রোণের সহিত যুঝে পাঞ্চাল-নন্দন।
বিরাট সহিত সোমদত্ত করে রণ।।
সহদেব শকুনি করয়ে ঘোর রণ।
নকুলের সহ যুদ্ধ করে দুঃশাসন।।
ভগদত্ত সহ যুঝে পাঞ্চাল রাজন।
যুধিষ্ঠির সহ মদ্রপতি করে রণ।।
শিখণ্ডী সহিত যুঝে দ্রোণের নন্দন।
সমানে সমানে হয় ঘোর মহারণ।।
প্রলয়কালেতে যেন মেঘের গর্জ্জন।
সেই মত যোদ্ধাগণ করয়ে তর্জ্জন।।
কৃপাচার্য্য সহ জরাসন্ধের তনয়।
কৃতবর্ম্মা চেকিতানে মহাযুদ্ধ হয়।।
কাশীরাজ সহ যুঝে সুমন্ত নৃপতি।
শতানীক করে যুদ্ধ পৌরব সংহতি।।
হেনমতে যুদ্ধ করে সব যোদ্ধাগণ।
মহাকোপে করে সবে অস্ত্র বরিষণ।।
ভীম সনে গদা যুদ্ধ করে দুর্য্যোধন।
অদ্ভূত দেখিয়া সবে চমকিত মন।।
মহাবলবান দোঁহে করয়ে সমর।
তালবৃক্ষ সম গদা অতি ভয়ঙ্কর।।
ভীমের সদৃম দুর্য্যোধন নহে বাণে।
গদাযুদ্ধে দুর্য্যোধন সমান দুজনে।।
দোঁহে দোঁহাকারে গদা করয়ে প্রহার।
গদার প্রহার শুনি লাগে চমাৎকার।।
চারিভিতে ফিরে দোঁহে করিয়া মণ্ডলী।
ঘন হুহুঙ্কার ছাড়ে, দোঁহে মহাবলী।।
তবে ক্রোধে বৃকোদর পবন-কোঙর।
গদা প্রহারিল দুর্য্যোধনের উপর।।
গদাঘাতে দুর্য্যোধন হৈল কম্পমান।
মর্ম্মে ব্যথা পেয়ে বীর হইল অজ্ঞান।।
পুনশ্চ চেতন পায় রাজা দুর্য্যোধন।
ভীমের উপরে গদা করিল ক্ষেপণ।।
মহাবলী বৃকোদর পবন-নন্দন।
লাফ দিয়া গদা বীর করিল হেলন।।
পুনঃ দুর্য্যোধন রাজা গদা লয়ে হাতে।
দোহাতিয়া বাড়ি মারে ভীমের মাথাতে।।
গদার প্রহারে ভীম হইল জর্জ্জর।
দেখি দুর্য্যোধন বীর হরিষ অন্তর।।
ক্রোধে বৃকোদর বীর অনল-সমান।
দুর্য্যোধনে মারে গদা বজ্র-অধিষ্ঠান।।
গদাঘাতে দুর্য্যোধন হইয়া কাতর।
বেগে পলাইয়া গেল সৈন্যের ভিতর।।
দুর্য্যোধনে ভঙ্গ দেখি যত যোদ্ধাগণ।
ভীমের উপরে করে বাণ বরিষণ।।
তবে ক্রোধে বৃকোদর পবন-নন্দন।
গদাহাতে করি বীর করে মহারণ।।
শত শত হস্তী মারে, অশ্ব লক্ষ লক্ষ।
দেখি যত যোদ্ধাগণ মানিল অশক্য।।
সাত্যকি সহিত কর্ণ করে মহারণ।
দোঁহাকারে দোঁহে বিন্ধে অতি বিচক্ষণ।।
প্রাণপণে কর্ণ বীর এড়ে নানা বাণ।
কাটি পাড়ে সাত্যকি সে করি খান খান।।
বাণ ব্যর্থ দেখি তবে রবির নন্দন।
সন্ধান পূরিয়া এড়ে ননা অস্ত্রগণ।।
এড়িল বিংশতি বাণ কর্ণ মহাবীর।
বাণাঘাতে সত্যক-পুত্র হৈল অস্থির।।
পুনশ্চ সাত্যকি বীর হৈল সচেতন।
কর্ণের উপওরে করে বাণ বরিষণ।।
সন্ধান পূরিয়া এড়ে তীক্ষ্ণ দশ বাণ।
সাত্যকির অঙ্গে ফুটে বজ্রের সমান।।
অঙ্গেতে ফুটিয়া বাণ কহিছে রুধির।
অজ্ঞান হইয়া পড়ে রথে মহাবীর।।
অচেতন দেখি রথ ফিরায় সারথি।
সাত্যকি লইয়া পলাইল শীঘ্রগতি।।
ধৃষ্টদ্যুম্ন সহ দ্রোণ করয়ে সমর।
বিস্ময় মানিয়া চাহে যতেক অমর।।
বাণবৃষ্টি করে দোঁহে, নাহি লেখাজোখা।
প্রাণপণে যুদ্ধ করে নাহিক উপেক্ষা।।
মহাকোপে দ্রোণ ভরদ্বাজের নন্দন।
গগন ছাইয়া করে বাণ বরিষণ।।
শত শত বাণ এড়ে পূরিয়া সন্ধান।
ধৃষ্টদ্যুম্ন বীর তাহা করে খান খান।।
বাণ ব্যর্থ দেখি বীর কুপিত হইল।
ধনুর্গুণ টঙ্কারিয়া সন্ধান পূরিল।।
দশ গোটা বাণ গুরু রোষে প্রহারিল।
কবচ ভেদিয়া তার অঙ্গে প্রবেশিল।।
বাণাঘাতে ধৃষ্টদ্যুম্ন হৈল কম্পমান।
খসিয়া পড়িল হাত হৈতে ধনুর্ব্বাণ।।
অচেতন হয়ে বীর রথেতে পড়িল।
দেখি কুরু-যোদ্ধাগণ সানন্দ হইল।।
পুনরপি ধৃষ্টদ্যুম্ন হৈল সচেতন।
ধনুর্গুণ টঙ্কারিয়া করে মহারণ।।
সন্ধান পূরিয়া ধৃষ্টদ্যুম্ন অস্ত্র এড়ে।
খণ্ড খণ্ড করি দ্রোণ বাণে কাটি পাড়ে।।
বাণ ব্যর্থ করি দ্রোণ পূরিল সন্ধান।
পুনরপি প্রহারিল তীক্ষ্ণ পঞ্চ বাণ।।
নিবারিতে না পারিল পাঞ্চাল-নন্দন।
বাণাঘাতে ধৃষ্টদ্যুম্ন হৈল অচেতন।।
রথেতে পড়িল বীর নাহিক সম্বিত।
রথ লয়ে সারথি হইল একত্রিত।।
ধৃষ্টদ্যুম্ন পলাইল দেখি দ্রোণ বীর।
বাণবৃষ্টি করে বীর নির্ভয় শরীর।।
শকুনি সহিত যুঝে সহদেব বীর।
কন্দর্প সমান রূপ, কোমল শরীর।।
শকুনি যতেক এড়ে তীক্ষ্ণ অস্ত্রগণ।
নিবারয়ে সহদেব মাদ্রীর নন্দন।।
তবে কোপে সহদেব পূরিল সন্ধান।
শকুনির ধনু কাটি কৈল খান খান।।
আর ধনু ধরি বীর গান্ধার-নন্দন।
সন্ধান পূরিয়া বিন্ধে তীক্ষ্ণ অস্ত্রগণ।।
পুনরপি সহদেব পূরিয়া সন্ধান।
শকুনিরে প্রহারিল পঞ্চদশ বাণ।।
দুই বাণে ধ্বজ কাটি কৈল খণ্ড খণ্ড।
আর দুই বাণে কাটে সারথির মুণ্ড।।
চারি বাণে চারি অশ্বে করিলেক ক্ষয়।
সপ্তবাণে বিন্ধিলেক শকুনি-হৃদয়।।
অচেতন হয়ে পড়ে গান্ধার-নন্দন।
দেখিয়া ধাইল তবে সব যোদ্ধাগণ।।
শকুনি অপর রথে করি আরোহণ।
পলাইয়া গেল শীঘ্র লইয়া জীবন।।
নকুলেতে দুঃশাসনে হয় মহারণ।
কোপে দোঁহে করে নানা অস্ত্র বরিষণ।।
সন্ধান পূরিয়া বীর মদ্রসুতা-সুত।
দুঃশাসন অঙ্গে বাণ মারিল বহুত।।
কবচ ভেদিয়া অঙ্গে করিল প্রবেশ।
শোণিত পড়য়ে অঙ্গে, প্রাণমাত্র শেষ।।
অজ্ঞান হইল বীর রথের উপর।
খসিয়া পড়িল হাত হৈতে ধনুঃশর।।
তবে কতক্ষণে বীর পাইল চেতন।
ধনু ধরি দুঃশাসন এড়ে অস্ত্রগণ।।
দুইজনে বাণ এড়ে দোঁহে ধনুর্দ্ধর।
দোঁহাকার বাণে দোঁহে হইল জর্জ্জর।।
নকুল এড়িল তবে কোপে দুই বাণ।
রথধ্বজ কাটি তার কৈল খান খান।।
আর দুই বাণ বীর এড়ে আচম্বিতে।
সারথর মাথা কাটি পাড়িল ভূমিতে।।
সারথি পড়িল, রথ হইল অচল।
দেখি দুঃশাসন ভয়ে হইল বিকল।।
রথ ছাড়ি দুঃশাসন বেগে পলাইল।
দেখি যত যোদ্ধাগণ হাসিতে লাগিল।।
ভগদত্ত সহ যুঝে পাঞ্চাল-ঈশ্বর।
বাণবৃষ্টি করে দোঁহে দোঁহার উপর।।
পর্ব্বত আকার হস্তী করি আরোহণ।
দ্রুপদ সহিত যুঝে নরক-নন্দন।।
প্রাণপণে দিব্য অস্ত্র এড়িল দ্রুপদ।
কাটি পাড়ে ভগদত্ত যেন তৃণবৎ।।
বাণ ব্যর্থ দেখি তবে পাঞ্চাল-ঈশ্বর।
ভগদত্তে প্রহারিল তীক্ষ্ণ পঞ্চ শর।।
কবচ ভেদিয়া বাণ অঙ্গে প্রবেশিল।
ভগদত্ত-অঙ্গ হৈতে শোণিত বহিল।।
স্থির হয়ে ভগদত্ত পূরিল সন্ধান।
দ্রুপদের ধনুকাটি কৈল খান খান।।
শীঘ্রগতি ভগদত্ত এড়ে অস্ত্রগণ।
সারথি তুরঙ্গ কাটি পাড়ে ততক্ষণ।।
অর্দ্ধচন্দ্র বাণ ত্বরা ভগদত্ত এড়ে।
দুইখান করি কাটে পাঞ্চাল-ঈশ্বরে।।
দ্রুপদ পড়িল দেখি রাজা যুধিষ্ঠির।
মহাশোকে হইলেন নিতান্ত অস্থির।।
হাহাকার শব্দ করে যত সেনাগণ।
পিতৃশোকে ধৃষ্টদ্যুম্ন হৈল অচেতন।।
আনন্দিত কুরুসৈন্য ছাড়ে সিংহনাদ।
পাণ্ডবের দলে বড় হইলে বিষাদ।।
শিখণ্ডী সহিত যুঝে অশ্বত্থামা বীর।
বাপের সদৃশ শিক্ষা সুন্দর শরীর।।
শিখণ্ডী এড়য়ে বাণ পূরিয়া সন্ধান।
বাণে কাটি অশ্বত্থামা করে খান খান।।
বাণ ব্যর্থ দেখি বীর কুপিত অন্তর।
পঞ্চ বাণ এড়ে অশ্বত্থামার উপর।।
বক্ষঃস্থলে প্রহারিল তীক্ষ দশ বাণ।
রথে পড়ে অশ্বত্থামা হইয়া অজ্ঞান।।
উত্তরের সহ যুঝে কর্ণের সন্ধান।।
তবে কোপে বৃষকেতু কর্ণের নন্দন।
দুইজনে এড়ে বাণ পূরিয়া সন্ধান।।
তবে কোপে বৃষকেতু কর্ণের নন্দন।
চারি বাণে চারি অশ্ব কাটে ততক্ষণ।।
দুই বাণে সারথিরে করিলেক ক্ষয়।
দেখিয়া উত্তরে কোপ হৈল অতিশয়।।
অসি চর্ম্ম ধরি বীর ধাইল সত্বর।
ক্রোধে বাণ এড়ে বৃষকেতু ধনুর্দ্ধর।।
দুই বাণে অসিচর্ম্ম খণ্ড খণ্ড কৈল।
অর্দ্ধচন্দ্র বাণে তার মস্তক কাটিল।।
দেখিয়া বিরাট তবে পুত্রের নিধন।
হাহাকার করি রাজা করয়ে ক্রন্দন।।
কৃপাচার্য্য সহ যুঝে সহদেব রাজা।
জরাসন্ধ-পুত্র সেই বলে মহাতেজা।।
অনুপম যুদ্ধ করে সংগ্রাম ভিতর।
ধন্য ধন্য করি সবে বাখানে বিস্তর।।
মহাকোপে কৃপাচার্য্য যত বাণ এড়ে।
তত অস্ত্র সহদেব বাণে কাটি পাড়ে।।
বাণ ব্যর্থ করি বীর পূরিল সন্ধান।
কৃপাচার্য্য হৃদয়ে মারেন পঞ্চ বাণ।।
কবচ ভেদিয়া অঙ্গ করিল ছেদন।
শোণিত পড়য়ে ধারে, হরিল চেতন।।
মূর্চ্ছিত হইয়া রথে পড়ে বীরবর।
সারথি পলায় রথ লয়ে শীঘ্রতর।।
কৃপাচার্য্য ভঙ্গ দেখি রবির নন্দন।
সহদেব সহ তবে করে মহারণ।।
কৃতবর্ম্মা চেকিতানে মহাযুদ্ধ করে।
বাণবৃষ্টি কনে দোঁহে দোঁহার উপরে।।
দুই জনে বাণ এড়ে যত শিক্ষা জানে।
দুই জনে বিন্ধে দোঁহে চোখ চোখ বাণে।।
তবে কৃতবর্ম্মা বীর পূরিয়া সন্ধান।
রথধ্বজ কাটি তার করে খান খান।।
দুই বাণে ধনু কাটি পাড়ে সেইক্ষণ।
চারি বাণে চারি অশ্ব করিল ছেদন।।
দুই বাণ কৃতবর্ম্মা এড়ে আচম্বিতে।
চেকিতান-মাথা কাটি পাড়িল ভূমিতে।।
চেকিতান পড়ে দেখি পাণ্ডু-সৈন্যে ভয়।
দেখিয়া ধর্ম্মের পুত্র ব্যথিত হৃদয়।।
কাশীরাজ সহ যুঝে যুযুৎসু ভূপতি।
বাণবৃষ্টি করে দোঁহে যতেক শকতি।।
যুযুৎসু নৃপতি এড়ে চোখ চোখ বাণ।
কাশীরাজ ধনু কাটি কৈল খান খান।।
আর ধনু লয়ে কাশীরাজ এড়ে বাণ।
সেই ধনু যুযুৎসু করিল খান খান।।
তবে কোপে কাশীরাজ কম্পমান হয়ে।
রথ এড়ি ধায় বীর হাতে খড়্গ লয়ে।।
খড়্গের প্রহারে মারিলেক চারি হয়।
সারথির মাথা কাটি দিল যমালয়।।
এক লাফে রথে চড়ে কাশীর ঈশ্বর।
এক চোটে যুযুৎযুরে দিল যমঘর।।
যুযুৎসুরে মারি তবে কাশীরাজ গেল।
দেখিয়া পাণ্ডব-দল সশঙ্ক হইল।।
দেখি রাজা যুধিষ্ঠির শোকাকুল মন।
রথে চড়ি চলিলেন করিবারে রণ।।
হেনকালে রথে চড়ি আসে শল্যরাজা।
সম্মুখ হইল দোঁহে বলে মহাতেজা।।
কোপে রাজা যুধিষ্ঠির পূরিয়া সন্ধান।
দুই বাণে কাটিলেন তার ধনুখান।।
আর ধনু লয়ে শল্য গুণ দিয়া টানে।
যুধিষ্ঠির তাহা কাটিলেন সেইক্ষণে।।
পুনঃ পুনঃ শল্যরাজা যত ধনু লয়।
খণ্ড খণ্ড করি কাটে ধর্ম্মের তনয়।।
দেখিয়া হইল শল্য কোপাবিষ্ট মন।
হাতে গদা লয়ে তবে ধায় সেইক্ষণ।।
ত্রস্ত হয়ে যুধিষ্ঠির যুড়ি অস্ত্রগণ।
কবচ কাটিয়া অঙ্গে করেন ঘাতন।।
বাণাঘাতে শল্যরাজা ব্যথিত অন্তর।
দোহাতিয়া গদা মারে রথের উপর।।
গদার প্রহারে রথ গেল চূর্ণ হয়ে।
ভূমিতে পড়েন যুধিষ্ঠির লাফ দিয়ে।।
ভয়ে পলাইয়া যান পাণ্ডবের নাথ।
প্রাণপণে যান রাজা, না চান পশ্চাৎ।।
দেখি শল্যরাজা তবে কহিল হাসিয়ে।
ওহে মহারাজ কেন যেতেছ পলায়ে।।
স্থির হয়ে যুদ্ধ আসি কর মহাশয়।
ক্ষত্র হয়ে কেন কর মরণের ভয়।।
এতেক বলিয়া শল্য গেল নিজ রথে।
গদা এড়ি পুনরপি ধনু নিল হাতে।।
তবে শতানিক সহ পৌরব রাজন।
করয়ে অতুল যুদ্ধ বাণ বরিষণ।।
দোঁহাকারে দোঁহে তবে অস্ত্র প্রহারিল।
বাণবৃষ্টি করি দোঁহে সূর্য্য আচ্ছাদিল।।
তবে শতানীক বীর এড়ি দিব্য বাণ।
পৌরবের ধনু কাটি কৈল খান খান।।
চারি বাণে চারি অশ্ব কাটিল তাহার।
দুই বাণে সারথিরে করিল সংহার।।
দেখিয়া পৌরব বড় হইল ফাঁফর।
রথ এড়ি পলাইল হইয়া কাতর।।
তবে বৃকোদর বীর গদা লয়ে কারে।
মহাকোপে প্রবেশিল সৈন্যের ভিতর।।
পদ্মবন ভাঙ্গে যেন মত্ত যূথপতি।
সেইমত সৈন্য মারে পবন-সন্ততি।।
শত শত রথ ভাঙ্গে গদার প্রহারে।
লক্ষ লক্ষ সৈন্য বীর নিমিষে সংহারে।।
দেখি ভগদত্ত বীর কুপিত অন্তরে।
হাতী চালাইয়া দিল ভীমের উপরে।।
বাণবৃষ্টি করে যেন মেঘে ফেলে জল।
মহাকোপে ধায় তবে ভীম মহাবল।।
গদা ফিরাইয়া যায় যমের সমান।
দেখি ভগদত্ত বীর এড়ে দিব্য বাণ।।
দশ বাণে গদা কাটি কৈল খান খান।
ক্রোধে ধায় বৃকোদর অনল-সমান।।
যোজনেক পদ হস্তী মহাভয়ঙ্কর।
ঈষা সম দন্তগুলা দেখি লাগে ডর।।
ভীমেরে ধরিতে যায় শুভু প্রসারিয়া।
বেগে যায় হস্তীগোটা তর্জ্জন করিয়া।।
তবে কোপে বৃকোদর ধরে দুই পায়।
অচল সমান করি স্থাবরের প্রায়।।
মহাকোপে ধরি টানে বীর বৃকোদর।
তুলিতে নারিল হস্তী যেন গিরিবর।।
মহাকোপে হস্তী যদি টানে বৃকোদরে।
তুলিতে নারিল হস্তী যেন গিরিবর।।
মহাকোপে হস্তী যদি টানে বৃকোদরে।
অঙ্গুলি পর্য্যন্ত তার নাড়িতে না পারে।।
এড়িলে এড়ান নাহি, তুলি দেয় পদ।
বিপাকে ঠেকিয়া ভীম হৈল বুঝি বধ।।
সঙ্কটে পড়িয়া ভীম না পায় এড়ান।
হারিয়া গজের ঠাঁই মৃতের সমান।।
ভীমের সঙ্কট দেখি ধর্ম্মের নন্দন।
হাহাকার করি ধায় সহ যোদ্ধাগণ।।
তবে কতক্ষণে বৃকোদর মহাবলে।
মুষ্টির প্রহার কৈল করি কুম্ভস্থলে।।
দারুণ প্রহারে করি বিকল অন্তর।
পলাইয়া গেল ছাড়ি বীর বৃকোদর।।
তবে বৃকোদর বীর চড়ি নিজ রথে।
করয়ে দারুণ যুদ্ধ ধনু লয়ে হাতে।।
অতিক্রোধে ভগদত্ত করয়ে সংগ্রাম।
লিখনে না যায় তার যুদ্ধ অনুপাম।।
লক্ষ লক্ষ সেনা মারে চক্ষের নিমিষে।
ভগদত্ত-যুদ্ধ দেখি দুর্য্যোধন হাসে।।
পাণ্ডবের সেনাগণ হইল অস্থির।
দেখি মহাভয় পান রাজা যুধিষ্ঠির।।