উত্তর বলিল, দেব কহিবে আমারে।
কোন্ কোন্ যোদ্ধা এই আসিল সমরে।।
পার্থ কহিলেন, দেখ বিরাট-কুমার।
সুবর্ণের বেদী শোভে রথধ্বজে যাঁর।।
রক্তবর্ণ চারি অশ্ব বহে রথখান।
দ্রোণগুরু কুরুকুলে আচার্য্য প্রধান।।
যম সম শত্রু হৈলে দৃষ্টে করে ভেদ।
অনুপম রণে, এই যেন ধনুর্ব্বেদ।।
নহিলে নহিবে হেন বীর অন্য জনে।
সশস্ত্র থাকিলে জিনি অজেয় ভুবনে।।
ভরদ্বাজ মহামুনি ঘৃতাচী দেখিয়া।
গঙ্গাজলে বীর্য্য তাঁর পড়িল খসিয়া।।
দ্রৌণীমধ্যে সযতনে রাখে তপোধন।
দ্রৌণীতে জন্মিল তেঁই নাম হৈল দ্রোণ।।
পরশুরামের যত দিব্য বিদ্যা ছিল।
অস্ত্র ধনু সহ বিদ্যা ইহারে যে দিল।।
তাঁহার দক্ষিণে দেখ তাঁহার অঙ্গজে।
সিংহের লাঙ্গুল শোভে যাঁর রথধ্বজে।।
কৃপীগর্ভে জন্ম হৈল কৃপের ভাগিনা।
মৃত্যুপতি ভয় করে, অন্য কোন্ জনা।।
কাঞ্চনের দণ্ড ধরে কৃপ মহামতি।
শরদ্বান ঋষিপুত্র গৌতমের নাতি।।
শরবনে ভ্রাতা ভগ্নী দোঁহে জন্মেছিল।
আমার প্রপিতামহ শান্তনু পালিল।।
কৃপ কৃপী নাম দিল শরদ্বান তাত।
আমার বংশেতে গুরু আচার্য্য বিখ্যাত।।
ওই যে দেখহ উচ্চতর রথধ্বজ।
বিচিত্র কলসধ্বজ শোভে রত্নগজ।।
সেই রথে বৈকর্ত্তন কর্ণ যার নাম।
সুরাসুরে জানে যার বল অনুপাম।।
জামদগ্ন্য রামের এ শিষ্য প্রিয়তর।
আমার সহিত সদা বাঞ্ছয়ে সমর।।
করিব মানস তার আজি আমি পূর্ণ।
মম সহ যুদ্ধে আজি গর্ব্ব হবে চূর্ণ।।
চতুর্দ্দিকে সুবেষ্টিত শ্বেতচ্ছত্রগণ।
ওই দেখ মহামনী রাজা দুর্য্যোধন।।
বৈদুর্য্য মুকুতা মণি ধ্বজ মনোহর।
যেই রথধ্বজে চিত্র ধবল কুঞ্জর।।
তাহার রক্ষার্থে তার নিকটে দেখহ।
ভারত-বংশের শ্রেষ্ঠ মম পিতামহ।।
পঞ্চ গোটা কনকের তাল যাঁর ধ্বজে।
মহাযোদ্ধা শীঘ্রহস্ত সর্ব্বলোকে পূজে।।
শান্তপুর পুত্র জন্মে গঙ্গার উদরে।
সত্যবতী কন্যা আনি দিলেন বাপেরে।।
রাজ্য দারা ত্যাগ কৈল বাপের কারণ।
তুষ্ট হয়ে তারে বর দিল সেইক্ষণ।।
ইচ্ছামৃত্যু হও তুমি সংসার ভিতরে।
নাহিক মরণ, নিজ ইচ্ছা হৈলে মরে।।
ভীষ্ম বলি নাম তাঁর ঘোষে ভূমণ্ডলে।
ক্ষত্র-কুলান্তক রামে জিনিলেক বলে।।
মহাভারতের কথা অমৃতলহরী।
কাশীরাম কহে, পাপ তাপ ব্যথাহারী।।