৩১২তম অধ্যায়
সৃষ্টিপ্রসঙ্গ—কালসংখ্যা নিরূপণ
“যাজ্ঞবল্ক্য কহিলেন, দশ সহস্র কল্পে ভগবান্ নারায়ণের একদিন এবং ঐ পরিমাণে তাহার একরাত্রি হয়। তিনি রাত্রি অবসানে জাগরিত হইয়া প্রথমতঃ জীবগণের জীবনোপায় ধান্যাদির সৃষ্টি করিয়া পরে হিরণ্য ডিম্বমধ্যে ব্রহ্মার সৃষ্টি করেন। ঐ ব্রহ্মা সমুদয় ভূতের মূর্তিস্বরূপ। তিনি এক বৎসরকাল অণ্ডমধ্যে অবস্থানপূর্ব্বক পরিশেষে তাহা হইতে নির্গত হইয়া সমুদয় পৃথিবী, স্বর্গ ও দ্যাবাভূমির [পৃথিবী ও অন্তরীক্ষের] মধ্যবর্ত্তী আকাশের সৃষ্টি করিয়া থাকেন। সার্দ্ধসপ্তসহস্র কল্পে উহার একদিন এবং ঐ পরিমাণে উহার একরাত্রি হয়। ঐ মহাত্মা সৰ্ব্বপ্রথমে অহঙ্কার ও তৎপরে মন, বুদ্ধি ও চিত্তের সৃষ্টি করেন। অহঙ্কারাদি হইতে পৃথিবী, জল, বায়ু, আকাশ ও জ্যোতি এই পাঁচমহাভূতের এবং ঐ পাঁচমহাভূত হইতে ইন্দ্রিয়সমুদয়ের উৎপত্তি হয়। ঐ ইন্দ্রিয়সমুদয় এই চরাচর বিশ্ব সমাচ্ছন্ন করিয়া রহিয়াছে। পঞ্চসহস্র কল্পে অহঙ্কারের একদিন এবং ঐ পরিমাণে উহার একরাত্রি হয়। শব্দ, রূপ, রস, গন্ধ ও স্পর্শ এই পাঁচটির নাম বিশেষ। ইহারা পঞ্চমহাভূতে সন্নিবিষ্ট রহিয়াছে। ইহাদিগের প্রভাবেই প্রাণীসমুদয় পরস্পর পরস্পরের হিতসাধনে তৎপর হইয়া সৰ্ব্বদাই পরস্পরকে স্পৃহা এবং পরস্পর স্পর্দ্ধাবান হইয়া পরস্পরকে অতিক্রম ও বধ করিয়া থাকে। এই সমুদয় কার্য্যনিবন্ধনই মনুষ্যগণকে দেহত্যাগের পর তিৰ্য্যগ্যোনিমধ্যে প্রবেশপূর্ব্বক ইহলোকেই পরিভ্রমণ করিতে হয়। তিন সহস্র কল্পে পঞ্চমহাভূতসমুদয়ের একদিন এবং ঐ পরিমাণে উহাদিগের একরাত্রি হইয়া থাকে।
‘সমুদয় ইন্দ্রিয়মধ্যে মন সৰ্ব্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। মন ব্যতীত কোন ইন্দ্রিয়েরই কাৰ্য্য করিবার ক্ষমতা থাকে না। মনের সাহায্য ভিন্ন চক্ষু কখনই রূপসন্দর্শনে সমর্থ হয় না। মন ব্যাকুল হইলে চক্ষু অতি নিকটস্থ বস্তুও দর্শন করিতে সমর্থ হয় না। লোকে কহিয়া থাকে, ইন্দ্রিয়েরই দর্শনাদি জ্ঞান হইয়া থাকে; কিন্তু বস্তুতঃ তাহা নহে। মনই সমুদয় জ্ঞানের মূলকারণ। মন বিষয়বোধে উপরত হইলে ইন্দ্রিয়গণও উপরত হইয়া থাকে। মন সমুদয় ইন্দ্রিয়ের ঈশ্বরস্বরূপ। উহা সৰ্ব্বভূতেই প্রবেশ করিয়া থাকে।”