৩০১. প্ৰাণাপেক্ষা দানের গৌরববোধে সূৰ্য্যপ্রস্তাবে কর্ণের অসম্মতি

৩০১তম অধ্যায়

প্ৰাণাপেক্ষা দানের গৌরববোধে সূৰ্য্যপ্রস্তাবে কর্ণের অসম্মতি

কৰ্ণ কহিলেন, “ভগবন! আমি আপনার পরমভক্ত, আপনি তাহা সম্যক বিদিত আছেন। আপনাকে অদেয় আমার কিছুই নাই। আমি আপনার প্রতি যেরূপ অনুরক্ত, পুত্র, কলাত্ৰ, আত্মা ও অভিলষিত মিত্রের প্রতিও তদ্রূপ নহি। মহাত্মারা যে অভীষ্ট ভক্তের উপর সততই অনুরক্ত থাকেন, আপনি তাহা বিলক্ষণ জ্ঞাত আছেন। ‘কৰ্ণ আমার নিতান্ত ভক্ত, তাহার অন্য উপাস্য দেবতা নাই’ এই বিবেচনা করিয়াই আপনি আমাকে হিতোপদেশ প্ৰদান করিতেছেন; কিন্তু আমি বারংবার প্রণিপাতদ্বারা আপনাকে প্ৰসন্ন করিয়া প্রার্থনা করিতেছি যে, এক্ষণে আমাকে ক্ষমা করুন। “আমি মৃত্যু অপেক্ষা মিথ্যা হইতে সমধিক ভীত হইয়া থাকি, বিশেষতঃ সাধু ব্ৰাহ্মণগণের নিকট অনৃতাচারে [মিথ্যা ব্যবহারে] সাতিশয় শঙ্কিত হই। কেহ আমার প্রাণ প্রার্থনা করিলেও কিছুমাত্র বিচার না করিয়া তৎক্ষণাৎ উহা প্ৰদান করিতে পারি। আপনি অর্জ্জুনের কথা উল্লেখ করিয়া আমাকে যেরূপ কহিলেন, সেই চিন্তা ও তন্নিবন্ধন সন্তাপ পরিত্যাগ করুন, আমি নিশ্চয়ই রণস্থলে অর্জ্জুনকে পরাজয় করিব। আমি মহাত্মা জামদগ্ন্য ও দ্রোণ হইতে যে সমস্ত অস্ত্ৰ প্ৰাপ্ত হইয়াছি, আপনি তাহার প্রভাব সম্পূর্ণ অবগত আছেন। এক্ষণে হে সুরশ্রেষ্ঠ! ত্ৰিদশাধিপতি ইন্দ্ৰ আমার জীবন প্রার্থনা করিলেও আমি তাঁহাকে তাহা প্ৰদান করিব। আপনি আমার এই ব্রতসাধনবিষয়ে অনুমতি প্ৰদান করুন।”

সূৰ্য্য কহিলেন, “বৎস! তুমি এই কুণ্ডলদ্বয়ের প্রভাবে সর্ব্বভূতের অবধ্য হইয়াছ। দেবরাজ অর্জ্জুনদ্বারা তোমার বধ সাধন করিবার নিমিত্ত কুণ্ডল প্রার্থনা করিবেন। অতএব যদি তুমি নিতান্তই আখণ্ডলকে কুণ্ডল প্ৰদান কর, তাহা হইলে অগ্ৰে অর্জ্জুনবিজয়-মানসে প্রিয়োক্তি প্রয়োগপূর্ব্বক তাহার নিকট প্রার্থনা করিবে, “হে সুররাজ! আমি আপনাকে কুণ্ডল প্ৰদান করিতেছি, কিন্তু একটি নিয়ম সংস্থাপন করিতে হইবে। আপনি অগ্ৰে আমাকে একশত্রুঘাতিনী অমোঘ শক্তি প্ৰদান করুন, পশ্চাৎ আমি আপনাকে বর্ম্ম ও কুণ্ডল দান করিব।” তুমি দেবরাজকে এইরূপ নিয়মবদ্ধ করিয়া কুণ্ডলযুগল প্ৰদান করিবে, তাহা হইলে সেই শক্তি দ্বারা অনায়াসে সমরে শত্রুসংহার করিতে সমর্থ হইবে, সন্দেহ নাই। ইন্দ্রের সেই শক্তি শতসহস্ৰ শত্রু বিনাশ না করিয়া পুনরায় প্রত্যাগমন করে না।” এই বলিয়া সূৰ্য্যদেব তথায় অন্তর্দ্ধান করিলেন।

অনন্তর মহাবীর কর্ণ নিশাবসানে সূৰ্য্যসন্নিধানে স্বপ্নের কথা উল্লেখ করিয়া যেরূপ দৰ্শন ও উভয়ে যেরূপ কথোপকথন করিয়াছিলেন তাহা আদ্যোপান্ত সমস্ত বৰ্ণনা করিলেন। তখন ভগবান ভানু এই কথা শুনিয়া হাস্যমুখে স্বপ্নের বিষয় সমস্ত স্বীকার করিলেন। পরে কর্ণ আপনার স্বপ্নের যথার্থ্য জানিয়া শক্তিলাভালালসায় বাসবের অপেক্ষা করিতে লাগিলেন।