দ্বিতীয় পর্ব
আনোয়ারা বলল, সোজা হয়ে দাঁড়া দুষ্ট ছেলে। নড়বি না।
বুলবুল সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল। সে তার দুই হাত তুলে দুই দিকে ছড়িয়ে রেখেছে, আনোয়ারা পুরানো কাপড় দিয়ে তার শরীরটাকে পেঁচিয়ে দিচ্ছে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আনোয়ারা পুরানো কাপড় দিয়ে তার শরীরটা পেঁচিয়ে দেয়। বুলবুলের পিঠে পাখাগুলো বড় হয়ে। উঠছে, সেটা যেন কেউ বুঝতে না পারে সে জন্যে কাপড় দিয়ে সেটা তার শরীরের সাথে পেঁচিয়ে রাখা হয়। কাপড় দিয়ে পাখাগুলো শরীরের সাথে পেঁচানোর পরও পিঠের দিকে খানিকটা উঁচু হয়ে থাকে দেখে মনে হয় একটা কুঁজ ঠেলে উঠেছে। আনোয়ারা বুলবুলকে একটা শার্ট পরিয়ে দিয়ে বলে, মনে আছে তো সবকিছু?
আছে খালা। বুলবুল অধৈর্য হয়ে বলল, মনে থাকবে না কেন?
আনোয়ারা বলল, আমি জানি তোর মনে আছে। তারপরেও তোকে মনে করিয়ে দিই। কারো সাথে ঝগড়া করবি না, মারামারি করবি না। পানিতে নামবি না। গা থেকে শার্ট খুলবি না।
হ্যাঁ খালা, মনে আছে। ঝগড়া করবি না, মারামারি করবি না, পানিতে নামবি না, শার্ট খুলবি না!
আনোয়ারা বলল, তোর যে পাখা আছে সেইটা কেউ জানে না। জানলে বিপদ হবে।
বুলবুলকে হঠাৎ একটু বিভ্রান্ত দেখায়। সেই ছোটবেলা থেকে বুলবুল জানে সে অন্য রকম। তার পাখা আছে—কিন্তু সেটা কাউকে বলা যাবে না। সেটা লুকিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু কেন সেটা কাউকে বলা যাবে না, কেন সেটা লুকিয়ে রাখতে হবে সে জানে না। কখনো কাউকে জিজ্ঞেস করেনি। আজকে জিজ্ঞেস করল, কেন খালা? আমার পিঠে পাখা আছে, সেটা কেন কাউকে বলা যাবে না?
আনোয়ারা কী উত্তর দেবে বুঝতে পারে না। ইতস্তত করে বলল, তুই কি আর কোনো মানুষের পিঠে পাখা দেখেছিস?
না। দেখি নাই।
তাহলে? যারাই দেখবে তোর পাখা আছে তারা অবাক হবে তোকে নিয়ে টানাটানি করবে।
কেন টানাটানি করবে।
এইটা মানুষের নিয়ম। যেটা অন্য রকম সেইটা নিয়ে মানুষ টানাটানি করে।
বুলবুল বলল, ও। ব্যাপারটা সে পরিষ্কার বুঝতে পারল না কিন্তু সেটা নিয়ে আর মাথা ঘামাতে চাইল না। বলল, খালা। আমার খুব রাগ লাগে যখন সবাই আমাকে কুঁজা ডাকে।
ডাকুক। আনোয়ারা বুলবুলির থুতনি ধরে আদর করে বলল, আসলে কি তুই কুঁজা?
না।
তাহলে ডাকলে ডাকুক। তুই তাদের সাথে তর্ক করবি না।
বুলবুল কোনো কথা না বলে চুপ করে রইল। আনোয়ারা আবার মনে করিয়ে দিল, মনে থাকবে তো?
থাকবে।
বুলবুলের অনেক কিছুই মনে রাখতে হয়। সে অন্য রকম সেটা সে কখনো ভুলতে পারে না। যতই দিন যাচ্ছে তার পাখাগুলো ততই বড় হয়ে উঠছে, কাপড় দিয়ে যখন পেঁচিয়ে রাখা হয় তখন তার কষ্ট হয়। কিন্তু সে অন্য রকম, তাই কষ্ট হলেও তাকে সেই কষ্ট সহ্য করতে হয়। মাঝে মাঝে বুলবুল ভাবে, সবাই এক রকম, সে অন্য রকম কেন? এই প্রশ্নটাও সে কাউকে করতে পারে না।
সকাল বেলা নাশতা করে বুলবুল তার বই-খাতা আর স্লেট নিয়ে স্কুলে রওনা হলো। এই চরে মানুষজন খুব বেশি না, কাজেই এখানে কোনো স্কুল নাই। কিছুদিন আগে শহর থেকে কিছু লোকজন এসে সবাইকে ডেকে লেখাপড়া নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলে একটা স্কুল তৈরি করে দিয়ে গেছে। সেটা অবশ্যি সত্যিকারের স্কুল না, এই স্কুলে চেয়ার টেবিল বেঞ্চ নাই, একটা মাটির ঘরে হোগলা পেতে সব বাচ্চারা বসে। মালবিকা নামে নাদুসনুদুস একটা মহিলা তাদের পড়তে শেখায়, যোগ-বিয়োগ করতে শেখায়। বাচ্চারা এই স্কুলে যেতে চায় না কিন্তু বুলবুল খুব আগ্রহ নিয়ে যায়। লেখাপড়া জিনিসটা কী সে খুব ভালো করে জানে না কিন্তু সেটা শিখতে তার খুব আগ্রহ।
বুলবুল তার বই-খাতা আর স্লেট নিয়ে স্কুলে রওনা হলো। মাঠের ভেতর দিয়ে হেঁটে গেলে অনেক তাড়াতাড়ি যাওয়া যায় কিন্তু বুলবুল সব সময় নদীর তীর দিয়ে হেঁটে যায়। একা একা হাঁটার সময় সে নিজের মনে কথা বলে, ভারী ভালো লাগে তখন।
নদীর ধারে কমবয়সী কিছু ছেলেমেয়ে নদীর ঘোলা পানিতে ঝাপাঝাপি করছিল, বুলবুলকে দেখে তারা চেঁচামেচি শুরু করল, দু-একজন গলা ফাটিয়ে ডাকল, বুলবুল! এই বুলবুল!
বুলবুল নদীর তীরে দাঁড়িয়ে বলল, কী?
আয়, পানিতে আয়।
বুলবুল মাথা নাড়ল, বলল, নাহ্।
কেন না?
স্কুলে যাই!
তুই স্কুলে গিয়ে কী করবি? জজ ব্যারিস্টার হবি?
বুলবুল কোনো কথা বলল না। পানিতে দাপাদাপি করতে করতে একজন বলল, কুঁজা জজ। কুঁজা ব্যারিস্টার। কুঁজা বুলবুল!
তখন সবগুলো বাচ্চা হি হি করে হাসতে হাসতে পানিতে দাপাদাপি করতে থাকে।
বুলবুল কিছুক্ষণ নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকে, তারপর আবার হাঁটতে শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে শুনতে পায় বাচ্চাগুলো তাকে নিয়ে টিটকারি করছে। কুঁজা কুঁজা বলে চিল্কার করছে। বুলবুল বিড়বিড় করে নিজেকে বলল, আমি কুঁজা না! আমি একদিন আমার এই পাখা দিয়ে আকাশে উড়ে যাব—কেউ তখন আমাকে খুঁজে পাবে না।
স্কুলে গিয়ে দেখে তখনো সবাই আসেনি। স্কুলের সামনে খোলা জায়গাটাতে সবাই হা-ড়ু-ড়ু খেলছে। একজন বুলবুলকে ডাকল, এই কুঁজা বুলবুল! আয় হা-ড়ু-ড়ু খেলবি।
বুলবুল রাজি হলো না। তার শরীর পাখির পালকের মতো হালকা, সে কাউকে ধরে রাখতে পারে না। কাউকে জাপটে ধরলে তাকেসহ টেনে নিয়ে যায়। তা ছাড়া খালা তাকে বলেছে সে যেন কখনো কারো সাথে ধাক্কাধাক্কি করে। তার যে রকম পাখা আছে সেটা কাউকে জানতে দেয়া যাবে না, ঠিক সে রকম তার শরীর যে পাখির পালকের মতো হালকা সেইটাও কাউকে জানতে দেয়া যাবে না।
বুলবুল স্কুলের সামনে পা ছড়িয়ে বসে খেলা দেখতে লাগল, তখন লিপি তার ছোট ভাইটাকে কোলে নিয়ে হাজির হলো। বুলবুলের মতো লিপিরও খুব লেখাপড়া করার ইচ্ছা। তার ছোট ভাইকে দেখেশুনে রাখতে হয়, তারপরেও সে স্কুলে চলে আসে। লিপি বুলবুলের পাশে পা ছড়িয়ে বসে ছোট ভাইটাকে ছেড়ে দিল। ছোট ভাইটা ধুলোর মাঝে হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে ছোট ছোট পিঁপড়া খুঁজে বের করতে থাকে।
লিপি জিজ্ঞেস করল, বুলবুল, তুই অঙ্কগুলো করেছিস?
বুলবুল মাথা নাড়ল। স্কুলের সবাই তাকে কখনো না কখনো কুঁজা বুলবুল ডেকেছে—লিপি ছাড়া। লিপি তাকে কখনো কুঁজা বুলবুল ডাকেনি। সে জন্যে বুলবুল লিপিকে একটু পছন্দই করে।
লিপি বলল, আমাকে অঙ্কগুলো দেখাবি?
বুলবুল তার খাতা বের করে লিপিকে দেখাল। লিপি সেগুলো দেখে দেখে নিজের অঙ্কগুলো মিলিয়ে নেয়।
কিছুক্ষণের মাঝেই তাদের স্কুলের মালবিকা আপা এসে ঘরের তালা খুলে দিল। বুলবুল আর লিপি ভেতরে ঢুকে স্কুলঘরের জানালাটা খুলে দেয়। হোগলাপাতার মাদুরটা বিছিয়ে তাকের ওপর রাখা বইগুলো নামিয়ে আনতে খাকে। ততক্ষণে মাঠে খেলতে থাকা ছেলেগুলোও ক্লাসের ভেতরে এসে যার যার জায়গায় বসে গেছে। রোদে ছোটাছুটি করার কারণে একেকজন দরদর করে ঘামছে!
মালবিকা আপা ঘরের এক কোনায় দাঁড়িয়ে বলল, সবাই এখন শান্ত হয়ে বস। আমরা আমাদের ক্লাস শুরু করি।
বাচ্চাগুলো শান্ত হওয়ার খুব একটা লক্ষণ দেখাল না। আপা খালি জায়গাগুলো দেখিয়ে বলল, জলিল, মাহতাব আর কামরুল কই?
একজন বলল, কামরুল বাবার সাথে মাঠে কাম করে।
আরেকজন বলল, জলিলের জ্বর।
বুলবুলের ভাসা ভাসাভাবে মনে পড়ল সে মাহতাবকে নদীর পানিতে দাপাদাপি করতে দেখেছে, কিন্তু সেটা নিয়ে সে নালিশ করল না।
আপা জিজ্ঞেস করল, জলি আর আমিনা?
লিপি বলল, মনে হয় তারা লেখাপড়া করতে চায় না।
আপা একটা নিঃশ্বাস ফেলে সবাইকে বই খুলতে বলল। বাচ্চাগুলো। বই খুলতে থাকে, প্রথমে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার উপকারিতা নিয়ে একটা গল্প। তারপর লালপরী নীলপরী নিয়ে একটা কবিতা। কবিতার প্রথম চার লাইন মুখস্থ করতে দিয়ে আপা সবার অঙ্ক খাতাগুলো দেখতে শুরু করে দিল।
বুলবুল কবিতা মুখস্থ করতে করতে লালপরী নীলপরীর ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে। ফুটফুটে দুটি মেয়ে আকাশে উড়ছে, তাদের পেছনে প্রজাপতির পাখার মতো পাখা।
অঙ্ক খাতাগুলো বাচ্চাদের ফিরিয়ে দিয়ে আপা তাদের পড়া ধরতে শুরু করল। নখ কেন কাটতে হয়, খাবার আগে কেন হাত ধুতে হয়—এসব শেষ। করে সবাইকে লালপরী নীলপরী কবিতার প্রথম চার লাইন জিজ্ঞেস করতে লাগল। সবারই মোটামুটি মুখস্থ হয়েছে তারপরেও একটা-দুইটা শব্দ তাদের বলে দিতে হলো। শুধু বুলবুলকে কিছু বলে দিতে হলো না, সে এক নিঃশ্বাসে পুরো চার লাইন কবিতা মুখস্থ বলে গেল।
আপা খুশি হয়ে বলল, ভেরি গুড বুলবুল।
দুষ্টু একটা মেয়ে ফিসফিস করে বলল, কুঁজা মিয়া গুডি গুড।
বুলবুল কথাটা শুনেও না শোনার ভান করে, লিপি তখন হাত তুলে জিজ্ঞেস করল, আপা।
বল লিপি।
পরী কি আসলেই আছে?
আপা উত্তর দেয়ার আগেই সব ছেলেমেয়ে চিৎকার করে বলল, আছে! আছে!
আপা হাসি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করল, তোমরা কেমন করে জান পরী আছে?
একজন বলল, তার মা একদিন জোছনা রাতে বের হয়েছিল, তখন দেখেছে একটা গাছের ওপর থেকে পরী উড়ে উড়ে নেমে এসেছে। আরেকজন সেই গল্পটা সমর্থন করে বলল, পূর্ণিমার রাতে একটা বড় দিঘিতে সব পরী গোসল করতে আসে। কাপড়গুলো দিঘির ঘাটে খুলে রেখে তারা ন্যাংটা হয়ে দিঘিতে গোসল করে। এই সময় দুষ্ট কয়েকটা ছেলে একজন আরেকজনের দিকে অর্থপূর্ণ ভঙ্গিতে তাকিয়ে হি হি করে হাসতে থাকে। মালবিকা আপা দেখেও না দেখার ভান করল।
লিপি জিজ্ঞেস করল, পরীরা শুধু জোছনা রাতে আসে কেন?
এর কোনো সদুত্তর ছিল না, একজন বলল, আসলে পরীদের যখন খিদে লাগে তখন তারা জোছনার আলো খায়।।
বুলবুল এইবারে একটু আপত্তি করল। বলল, জোছনা আবার কেমন করে খায়?
যে বলেছে পরীরা জোছনার আলো খেয়ে বেঁচে থাকে সে গলা উঁচিয়ে বলল, তার নানি নিজের চোখে দেখেছে যে একদিন জোছনা রাতে অনেকগুলো পরী উঠানে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে কপকপ করে জোছনা খাচ্ছে। এ রকম অকাট্য প্রমাণ দেয়ার পর সেটা অবিশ্বাস করবে কেমন করে?। সবাই তখন মাথা নেড়ে সেটা মেনে নিল।
আরেকজন বলল, পরীদের চামড়া হয় খুব নরম, সূর্যের আলো লাগলে চামড়া পুড়ে যায় তাই তারা কখনো দিনের বেলা বের হয় না।
বুলবুল তখন মুখ শক্ত করে বলল, তাহলে দিনের বেলা পরীরা কোথায় থাকে?
পরীদের দেশে।
সেইটা কোথায়?
আকাশের উপরে। অনেক দূরে।
লিপি তখন হাত তুলে আবার জিজ্ঞেস করল, আপা।
বল।
ছেলে পরী কি আছে?
কেউ কিছু বলার আগেই বুলবুল বলল, আছে।
বুলবুলের কাছে বসে থাকা একজন মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ আছে। ছেলে পরীদের বলে জিন। আগুন দিয়ে তৈরি, পায়ের পাতা থাকে উল্টা দিকে। সামনের দিকে হাঁটলে তারা পেছনের দিকে চলে যায়।
বুলবুল বলল, মোটেই না। ছেলে পরী ঠিক মেয়ে পরীর মতো। পিঠে পাখা থাকে। আর
আর কী।
খুব হালকা।
কয়েকজন মাথা নেড়ে আপত্তি করল, বলল, মেয়ে পরীরা হয় খুব সুন্দর কিন্তু ছেলে পরীরা হয় ভয়ঙ্কর। রাক্ষসের মতো চেহারা আর তারা আগুন দিয়ে তৈরি। মুখে পচা মাংসের গন্ধ।
কে কখন কাকে জিনে ধরতে দেখেছে সেটা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়, তখন মালবিকা হাত তুলে তাদের থামাল। বলল, আসলে এগুলো হচ্ছে কল্পনা। পরী থাকুক আর নাই থাকুক তাতে কিছু আসে-যায় না। কল্পনা করলেই আছে। কল্পনায় সব কিছু থাকে
বুলবুল ভুরু কুঁচকে বলল, আসলে পরী নাই?
না, বুলবুল। এগুলো সব কল্পনা। মেয়ে পরী ছেলে পরী কিছুই নাই।
কিছুই নাই?
না।
বুলবুল মুখ শক্ত করে বলল, আছে।
আছে? হ্যাঁ আছে।
মালবিকা বুলবুলের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ঠিক আছে তুমি যদি বল আছে, তাহলে আছে। মালবিকা এবারে গণিতের বইটা তুলে বলল, পরীর গল্প শেষ হয়েছে, এখন চল সবাই মিলে আমরা নামতা শিখি। তিন-এর নামতা। আমার সাথে সাথে বল, তিন এক্কে তিন!
সবাই সুর করে বলল, তিন এক্কে তিন।
তিন দু গুণে হয়।
তিন দু গুণে ছয়।
স্কুলের শেষে বাচ্চাগুলো বাসার দিকে রওনা দেয়। লিপির ছোট ভাইটার খিদে লেগে গিয়েছে, তাই সে ঘ্যানঘ্যান করে কাঁদতে শুরু করেছে। লিপি বাচ্চাটাকে কোল বদল করতে করতে তাড়াতাড়ি করে হাঁটার চেষ্টা করে। দুরন্ত ছেলেগুলো নদীর তীরে এসে ছুটতে ছুটতে কাপড় খুলতে খুলতে নদীর পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বুলবুল তাদের দিকে এক ধরনের হিংসা নিয়ে তাকিয়ে থেকে একটা নিঃশ্বাস ফেলল। লিপি জিজ্ঞেস করল, তুই যাবি না?
নাহ! তারপর হঠাৎ একেবারে অপ্রাসঙ্গিকভাবে জিজ্ঞেস করল, লিপি তুই কি কোনো দিন পরী দেখেছিস?
না। তুই দেখেছিস?
আমি? বুলবুল ইতস্তত করে বলল, আমি—মানে ইয়ে–? হঠাৎ করে থেমে গিয়ে লিপির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তুই পরী দেখতে চাস?
পরী? লিপির মুখে বিস্ময়ের চিহ্ন পড়ে, আমি?
হ্যাঁ।
না বাবা রাত্রি বেলা আমার ভয় করে।
দিনের বেলা?
লিপি অবাক হয়ে বলল, দিনের বেলা? দিনের বেলা পরী দেখা যায়?
যায়। বুলবুল গম্ভীর হয়ে বলল, দেখা যায়।
লিপি কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, দেখব।
তুই যদি কাউকে না বলিস তাহলে তোকে দেখাব।
লিপি বুলবুলের দিকে তাকিয়ে বলল, তুই দেখাবি? তারপর সে ফিক করে হেসে দিল।
বুলবুল কঠিন মুখ করে লিপির দিকে তাকালো, লিপি সেটা ভালো করে লক্ষ করল না। কোলে ছোট ভাইটা ঘ্যানঘ্যান করে কাঁদছে, তাকে নিয়ে সে বাড়ির দিকে ছুটতে থাকে।