২.১০ কামানের মুখে
স্তব্ধ কালো রাত; আর তারই মধ্যে সেই ভীষণ কামানটা একটা প্রকাণ্ড কালো দৈত্যের মতো মানরোর দিকে যেন তর্জনী নির্দেশ করে রয়েছে। মানরো পড়ে আছেন কামানের নলটার ঠিক সামনে, আষ্টেপৃষ্ঠে দড়ি দিয়ে বাঁধা। কাছেই একটি ভারতীয় দাঁড়িয়ে আছে। বন্দুক হাতে পাহারায়। কেবল মাঝে-মাঝে রাতের স্তব্ধতাকে আরো-প্রকট করে কেল্লার ভিতর থেকে তুমুল হৈ-হল্লার আওয়াজ আসছে-বোধহয় মানরোকে হাতে পেয়ে এই ক্ষুব্ধ মানুষগুলো এখন সোল্লাসে পানভোজনে মত্ত।
কেল্লার পাশেই একটা গভীর খাত। পাহারাওলাটি একবার খাতের কাছে গিয়ে গভীর মনোযোগের সঙ্গে অন্ধকারে কী যেন তাকিয়ে দেখলো, তারপর আবার এসে দাঁড়ালে কামানের কাছে। হাই তুললো সে একবার-বোঝা গেলো ঘুমে তার চোখ দুটো জড়িয়ে আসছে। তারপর আস্তে-আস্তে একসময় বন্দুকটা ধরে কামানের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সে ঢুলতে লাগলো।
ছমছমে রাতটা আরো-কালো ও ঘুটঘুট্টে হয়ে এলো যেন। ভারি মেঘ ঝুলে আছে নিশ্চল। আবহাওয়ায় কেমন যেন একটা চাপা অস্বস্তির ভাব।
মানরো পড়ে-পড়ে সাত-পাঁচ ভাবছেন। কানপুরে যখন আগুন লাগলো, তখন সেই রক্তারক্তির মধ্যে কোথায় হারিয়ে গিয়েছেন তার স্ত্রী-কেউ আর তার খোঁজ পায়নি —সবাই একরকম ধরেই নিয়েছে যে তিনি মারা গেছেন। আজ দশ বছর সারাক্ষণ ১৮৫৭-র সেই জ্বলন্ত দিনগুলি তাকে অবিশ্রাম যন্ত্রণা দিয়েছে-কাল ভোরে সবকিছুর অবসান!
একটা শেষ চেষ্টা করলেন মানরো বাঁধন খোলার—কিন্তু চেষ্টার ফলে দড়িগুলো যেন গায়ে আরো কেটে-কেটে বসে গেলো। অসহায় ও অক্ষম ক্ষোভে চাপা গর্জন করে উঠলেন মানরো। আর সেই পাহারাওলাটি ধড়মড় করে জেগে উঠলো। একবার কাছে এসে সে দেখে গেলো বন্দীকে, জড়ানো গলায় বললে : কাল ভোরবেলায় বুঝলেগুড়ুম গুম! ফর্দাফাই চিচিংকার!
বলে আবার সে ফিরে গিয়ে ফের কামানের গায়ে হেলান দিয়ে ঢুলতে লাগলো, আর মানরোর জাগ্রত চোখের উপর ছবির মতো ভেসে গেলো সিপাহী বিদ্রোহের অসংখ্য দৃশ্য। নৃশংসতার, বর্বরতার রক্তাক্ত সব ছবি। নিচু মেঘগুলো তাকিয়ে আছে তার দিকে কালো আকাশ থেকে। রাত কত হবে কে জানে।
হঠাৎ চটকা ভেঙে গেলো তার, দূরে তাকিয়ে দেখলেন মশালের ক্ষীণ আলো। কে যেন এগিয়ে আসছে এই দিকে, আস্তে, পা টিপে টিপে, চুপি-চুপি, সন্তর্পণে; সেপাইদের ব্যারাক পেরিয়ে, কেল্লার পাশ দিয়ে এগিয়ে আসছে এই কামানেরই দিকে।
কে আসছে? গৌমি? ব্যাঙ্কস, হড, ও মোক্লের? না কি অন্য কেউ নানাসাহেবেরই কোনো অনুচর? আশা আছে তার উদ্ধারের, না কি অবশেষে এখানেই কামানের মুখে উড়ে যাবে তাঁর ছিন্ন দেহ? যেমনভাবে নেটিভদের উড়িয়ে দিয়ে মজা পেতেন হেকটর মানরো।
ছায়ামূর্তি এগিয়ে আসছে মশাল হাতে।কে, বোঝা যাচ্ছে না—শুধু দেখা যাচ্ছে। ঢিলে কাপড়ে আপাদমস্তক ঢাকা তার-হাতে মশাল, জ্বলন্ত, দাউদাউ।
মানরো নড়তে পারছিলেন না; এমনকী নিশ্বেস নিতে যেন কষ্ট হচ্ছে-যদি ছায়ামূর্তি মিলিয়ে যায় অন্ধকারে-মশাল নিভে যায় দপ করে আলেয়ার মতো! পড়ে রইলেন ভারি কোনো ধাতুর মূর্তির মতো, রুদ্ধশ্বাস ও নিস্পন্দ! পাহারাওলাটা যদি জেগে যায়, সাবধান, চেঁচিয়ে বলে দিতে চাইলেন তিনি সেই ছায়ামূর্তিকে, হুঁশিয়ার! আর সেই ছায়ামূর্তি যেন ভেসে আসতে লাগলো হাওয়ায়—আস্তে, চুপি-চুপি, নিঃশব্দে, এই কামানের দিকে।
যদি সে ওই পাহাৱাওলার গায়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়! মানরেরার বুক ধ্বক করে লাফিয়ে উঠলো …না, তার সম্ভাবনা নেই। কারণ লোকটা কামানের বাঁ-পাশে হেলান দিয়ে ঢুলছে আর সেই অদ্ভুত ছায়ামূর্তি এগিয়ে আসছে ডানদিক দিয়ে—মাঝেমাঝে থেমে পড়ছে, মশালের আলোয় দেখছে চারপাশ, কিন্তু তারপরেই আবার এগিয়ে আসছে, ধীরে-ধীরে।
শেষকালে সে মানরোর এতই কাছে এসে পড়লো যে তিনি তাকে স্পষ্ট দেখতে পেলেন। দেখলেন এক মাঝারি উচ্চতার মানুষ, আপাদমস্তক একটা ঢোলা কাপড়ে মোড়া। একটাই হাত দেখা যাচ্ছে তার, সেই হাতে একটা জ্বলন্ত মশাল।
পাগল? মানরো হঠাৎ যেন প্রচণ্ড এক হতাশায় ভরে গেলেন।পাগলটা কেল্লার আশপাশে বারেবারে ঘুরে বেড়ায় বলেই তারা আর এর দিকে কোনো নজর দেয়নি। ঈশ, পাগলটার হাতে যদি মশালের বদলে কোনো ছোরা থাকতো তাহলে হয়তো আমি কোনোরকমে ভুলিয়ে-ভালিয়ে এই দড়িগুলো কেটে ফেলার ব্যবস্থা করতে পারতুম।
ছায়ামূর্তি মোটেই পাগল নয়, তবে মানরো অনেকটা ঠিকই ধরেছেন।
এ হলো নর্মদাতীরের সেই উন্মাদিনী, সেই অর্ধচেতন প্রাণী—গত চার মাস ধরে বিন্ধ্যপর্বতে যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এলোমেলো, আর সে স্বাভাবিক নয় বলেই গোরা তাকে মাঝে-মাঝে খেতে দিয়েছে, সসম্রমে তার পথ ছেড়ে দিয়েছে সর্বত্র। নানাসাহেব কিংবা তার অনুচরেরা মোটেই জানেন না কেমন করে বহ্নিশিখা সাতপুরা পাহাড়ে নিজের অজ্ঞাতসারে গোরা সেপাইদের পথ দেখিয়ে এনেছিলো। জানতেন না বলেই বহ্নিশিখার উপস্থিতি কোনোদিনই তাদের মধ্যে কোনো আশঙ্কা বা সন্দেহের উদ্রেক করেনি। কতবার সে আপনমনে ঘুরতে-ঘুরতে রায়পুরের কেল্লায় এসে পড়েছে-কিন্তু কেউ তাকে কস্মিনকালেও তাড়িয়ে দেবার কথা ভাবেনি। সম্ভবত দৈবই আজ তার এই উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যহীন লক্ষ্যহীন নৈশভ্রমণকে এখানে এনে শেষ করে দিলো।
মানরো এই উম্মাদিনীর কথা কিছুই জানতেন না। বহ্নিশিখার নাম তিনি কোনো দিনই শোনেননি। অথচ তবু যেই সে মশাল হাতে এদিকে এগিয়ে এলো তার হৃৎপিণ্ড যেন কেমন অস্বস্তিভরে লাফিয়ে-লাফিয়ে উঠতে লাগলো।
অতি ধীরে, একটু-একটু করে, সেই উম্মাদিনী এগিয়ে এলো কামানের কাছে। তার মশাল নিভু নিভু; ক্ষীণ শিখা থেকে কালো ধোঁয়া উঠছে কুণ্ডলী পাকিয়ে, বন্দীর মুখোমুখি পড়েও সে যেন তাকে দেখতে পাচ্ছে না, যেন তার চোখ দুটো তাকিয়ে আছে কোনো অদৃশ্য-কিছুর দিকে, পার্থিব কোনোকিছুই আর তার চোখে পড়বে না যেন কোনোদিনও।
সার এডওয়ার্ড পড়ে রইলেন স্তব্ধ ও অনড়। এই উম্মাদিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার কোনো চেষ্টাই তিনি করলেন না। অবশেষে সে ফিরে দাঁড়ালে, তাকিয়ে দেখলে সেই প্রকাণ্ড কামনটাকে—কালো লোহার সেই কামানে মশালের কাপা-কাপ শিখা পড়ে কেমন যেন ভুতুড়ে হয়ে উঠলো।
জানে কি এই উম্মাদিনী কামান কেমন করে ছেড়ে—যা এখন প্রকাণ্ড দৈত্যের মতো পড়ে আছে এখানে, যার মুখে পড়ে আছে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা একজন দুর্ভাগা মানুষ–সকালের আলো ফুটলেই যার কালো নলটা আগুন আর বারুদ উগরে দেবে, সেই কামান কাকে বলে তা কি সে জানে?
না বোধহয়। বহ্নিশিখা দাঁড়িয়ে আছে সেখানে–নেহাৎই যেন দৈবচালিত; ঠিক এইখানেই না-দাঁড়িয়ে থেকে সে বিন্ধ্যপর্বতের যে-কোনোখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতো এখন। হয়তো সে এরপর আবার পাকদণ্ডী বেয়ে ঘুরে-ঘুরে নেমে চলে যাবে–যেদিকে তার দু-চোখ যায়। মানরো তাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলেন। দেখলেন সে কামানটার পাশ দিয়ে এগিয়ে গেলো পাহারাওলার দিকে। যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি তাকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেদিকে, কিন্তু কাছে গিয়েই সে আবার ফিরে দাঁড়ালে-এবার এগিয়ে এলো বন্দীর দিকে—কাছে এসে দাঁড়ালে, নিশ্চল ও নির্বাক। মানরোর বুকের ভিতরটা এমন ভাবে লাফাচ্ছে যে মনে হচ্ছে এখুনি বুঝি কোনো বিস্ফোরণ ঘটে যাবে।
আরো-কাছে চলে এলো বহ্নিশিখা-মশাল নামিয়ে তাকিয়ে দেখলো বন্দীর মুখ। তার নিজের মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা, কেবল চোখ দুটো জ্বলছে তীব্রভাবে, জ্বরাতুর ও ঘোলাটে। মানরো মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে রইলেন।
হঠাৎ হাওয়া এলো দমকা। সরে গেলো বহ্নিশিখার মুখের গুণ্ঠন, দপ করে উজ্জ্বলভাবে জ্বলে উঠলো মশাল, ক্ষণিকের জন্যে।
চাপা, অস্ফুট একটা কাতর ডাক বেরিয়ে এলো বন্দীর মুখ দিয়ে : লরা!
মানরোর মনে হলো মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তিনি নিজেই বুঝি পাগল হয়ে যাচ্ছেন। মুহূর্তের জন্যে চোখ বুঝলেন তিনি, তারপর আবার চোখ খুলে তাকালেন সেই উন্মাদিনীর দিকে। লরা! লেডি মানরো! তাঁর স্ত্রী–এখানে মশাল হাতে দাঁড়িয়ে! লরা!–তুমি! সত্যি তুমি?
লেডি মানরো কোনো কথাই বললেন না। মানরোকে তিনি চিনতেই পারেননি। এমনও মনে হলো না যে তার কোনো কথা কানে গেছে।
লরা! তুমি পাগল হয়ে গেছো? পাগল?-কিন্তু বেঁচে তো আছো।
চিনতে মোটেই ভুল হয়নি সার এডওয়ার্ডের। সত্যি, লেডি মানরোই। লরাকে চিনতে তার কোনোদিনই ভুল হবে না।
কানপুরের সেই বীভৎস রক্তারক্তি দেখে লরার সংবেদনশীল স্পর্শাতুর মন এমনএকটা বিষম ধাক্কা খায় যে কেবল স্মৃতিই যে হারিয়ে যায় তা নয়, মাথায় চোট লেগে কেমন-একটা অপার্থিব ঘোরের মধ্যে যেন পড়ে যান তিনি। তারপর থেকেই লোকে দেখতে পাচ্ছে এই উম্মাদিনীকে, তারা যার নাম দিয়েছে বহ্নিশিখা, যে চুপচাপ উদ্দেশ্যহীন লক্ষ্যহীন গন্তব্যহারা ঘুরে বেড়ায় বিন্ধ্যপর্বতের কোলে, নর্মদার তীরে, লোকালয়ের বাইরে কি ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামগুলোয়।
মানরো আবার তাকে নাম ধরে ডাকলেন, লরা! আর যখন দেখলেন লেডি মানরোর চোখ তেমনি ভাবভাষাহীন শিখার মতো জ্বলছে অন্ধকারে, কী-রকম একটা প্রচণ্ড কষ্টে ভরে গেলেন, দুমড়ে গেলেন। নানাসাহেব কিছুতেই কল্পনাও করতে পারবেন না কোন প্রচণ্ড কষ্টে এখন তাঁর বুক ভেঙে যাচ্ছে, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
যদি জাগে তো জাগুক এই পাহারাওলা। যদি শোনে তো শুনুক সমস্ত কেল্লা। লরা! লরা! গলার স্বর আরেক পর্দা চড়িয়ে মানরো ডাকলেন।
লরা তখন তেমনি জ্বরাতুর অপলক চোখে তাকিয়ে আছেন মানোর দিকে। একবার মাথা নাড়লেন তিনি ডাক শুনে যেন উত্তর দিতে চান না, এমনি ভঙ্গি। আবার গুণ্ঠনে ঢেকে গিয়েছে তার মুখ, মশালও আবার কেঁপে কেঁপে ক্ষীণ শিখায় জ্বলছে। লরা দু-এক পা পেছিয়েও গেলেন। চলে যাচ্ছেন?
লরা! কাতরভাবে ডেকে উঠলেন মানরো, যেন এই কাতর কণ্ঠস্বরে তিনি বিদায়ের সমস্ত বেদনাকে ভরে দিতে চাচ্ছেন।
হঠাৎ কামানটার দিকে চোখ পড়লো লরার। কেমন যেন টান দিলো তাকে এই প্রকাণ্ড জিনিশটা। হয়তো মনে পড়ে গেলো কানপুরের সেই আগুন-ওগরানো কামানগুলো, হয়তো তার কানে গর্জন করে উঠেছে সেই আগুনজ্বলা অতীত। মশালের আলো পড়লো সেই বিকট ইস্পাতের খোলে। এখন যদি একটুকরো আগুনের ফুলকি পড়ে কামানের গায়ে তাহলেই প্রচণ্ড নিনাদের সঙ্গে-সঙ্গে মানরোর ছিন্ন দেহ উড়ে যাবে তিন শূন্যে। তাহলে জগতে যিনি মানবোর সবচেয়ে প্রিয়, তাঁরই হাতে তার মৃত্যু লেখা? এর চেয়ে নানাসাহেব এসে কেন তাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তিনি কি তাহলে চীৎকার করে কেল্লার সেই জল্লাদগুলোকে এই বধ্যভূমিতে আহ্বান করবেন?
হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন মানরোর হাত চেপে ধরলো। না, স্বপ্ন নয়, সত্যি। কার যেন বন্ধু-হাত দড়ি কেটে দিচ্ছে। কোন দেবতার দয়ায় কে-একজন এখানে এসে পড়েছে তাকে মুক্তি দিতে।
দড়িগুলো পড়ে গেলো। শিরার মধ্যে রক্ত যেন ফেনিয়ে ঘুরে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে আত্মসংবরণ করলেন মানরো—আরেকটু হলেই মুক্তির আনন্দে তিনি চেঁচিয়ে উঠতেন।
পাশে তাকিয়ে দেখলেন গৌমি দাঁড়িয়ে আছে ছুরি হাতে। ছায়ার মতো।
কালোেগনি যখন অন্ধকারে তার দলবলের সঙ্গে মিশে যায়, তখনই সে পুরো ব্যাপারটা চট করে বুঝে নিয়ে অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়েছিলো। আড়ি পেতে শুনেছিলো যে মানরোকে ধরে তারা রায়পুরের কেল্লায় নিয়ে আসবে—যেখানে নানাসাহেব নিজের মুখে উচ্চারণ করবেন তার মৃত্যুদণ্ড, স্বাক্ষর করবেন তার মৃত্যুর পরোয়ানায়। কোনো দ্বিধা না-করে তক্ষুনি গৌমি রায়পুরের কেল্লার কাছে এসে লুকিয়ে থাকে। তারপর নিঝুম রাত্রে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে সে বেরিয়ে এসেছে লুকোনো জায়গা ছেড়ে, প্রভুকে মুক্তি দিতে।
ফিশফিশ করে গৌমি বললে, সকাল হয়ে আসছে, আমাদের এক্ষুনি পালাতে হবে–আর একটুও সময় নেই।
আর লেডি মানরো? কামানের পাশে দাঁড়িয়ে-থাকা সেই অদ্ভুত গুণ্ঠনবতী মূর্তিটার দিকে আঙুল দেখিয়ে জিগেস করলেন মানরো।
উনিও আমাদের সঙ্গে যাবেন! গৌমি কোনো ব্যাখ্যা চাইলো না।
কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। তাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বলে, গৌমি আর কর্নেল যেই লরার দিকে এগিয়ে গেলেন লরা পালাতে চাইলেন তাদের হাত এড়িয়ে। তাঁর হাত থেকে মশালটা পড়ে গেলো কামানে। পরক্ষণেই বিন্ধ্যপর্বতের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত থরোথরো কাঁপিয়ে দিয়ে গর্জন করে উঠলো কামান!