দ্বিতীয় পর্ব
২.০১ সূত্র সন্ধান
যে-দিনের কথা বলছিলাম।
সেই দিনই দ্বিপ্রহরের দিকেও আবার সুব্রত ও কিরীটীর মধ্যে সকালের আলোচনারই জের চলছিল। কিরীটী বলছিল, তোদের হারাধন–জগন্নাথের দাদু মনে হল লোকটা অনেক কিছু জানে, কিন্তু শোকেতাপে জর্জরিত হয়ে সে একেবারে নিজেকে এখন গুটিয়ে ফেলেছে। মাথায় হয়ত তার এখন সামান্য বিকৃতিও ঘটেছে, কিন্তু সেটা কিছুই নয়। এককালে লোকটা এদিকটায় নামকরা একজন আইনজীবী ছিল। তুই জানিস না এবং তোকে বলাও হয়নি, হারাধনের সঙ্গে ইতিমধ্যেই আমার বেশ পরিচয়ও হয়েছে। এখানে আসবার পর দিন-দুই গোপনে হারাধনের ওখানেই ছিলাম, সে কথা তো আগেই বলেছি। যাক, প্রথমটায় সে ধরা দিতে চায় না, কিন্তু যে মুহূর্তে তার দুর্বলতায় আঘাত করেছি, সে নিজেকে একেবারে সম্পূর্ণভাবে আমার কাছে মেলে ধরেছে। তার সব চাইতে বড় দুর্বলতাটা টের পেতে আমার খুব বেশী সময় লাগেনি, মাত্র ঘণ্টা চার পাঁচ লেগেছিল। কিরীটী বলতে থাকে, শ্ৰীকণ্ঠ মল্লিকের পিতা ও হারাধন মল্লিকের পিতা ছিলেন সহোদর ভাই। কিন্তু হারাধনের পিতা পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। হারাধন সে কথাটা আজও ভুলতে পারেনি। একটা অদৃশ্য ক্ষতের মত এখনও তার মনের মধ্যে সেটা মাঝে মাঝে রক্তক্ষরণ করে আর বুকের ভিতরটা টনটন করে ওঠে। কথাপ্রসঙ্গে বুঝতে পেরে তার সেই ব্যথার জায়গাতেই আঘাত দিয়েছিলাম, সঙ্গে সঙ্গে সে যা বলবার বলতে শুরু করে। টাকাপয়সার প্রয়োজন বা অভাব আজ তার নেই বটে, কিন্তু একদা যে অর্থ সহসা কোন অজ্ঞাত কারণে হাত পিছলিয়ে নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল তার শোকটা আজও মন থেকে মুছে যায়নি। হারাধনের যতটা নয়, তার চাইতেও ঢের বেশী আর একজন অসম্ভব জেনেও, সেই অর্থের আশা আজ পর্যন্ত ত্যাগ করে উঠতে পারল না।
কার কথা বলছিস?
কিরীটী অল্প একটু থেমে, সুব্রতর প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে বলতে লাগল, তারপর শ্ৰীকণ্ঠ মল্লিকের সেই উইল, যার আভাস সুধীনের মা সুহাসিনীর কাছ থেকে সর্বপ্রথম আমরা জানতে পারি, ভেবেছিলাম এবং সুহাসিনীও বলেছিলেন, যার অস্তিত্ব নাকি একমাত্র তাঁর শ্বশুর, এঁদের স্টেটের নায়েবজী শ্রীনিবাস মজুমদার ছাড়া আর দ্বিতীয় ব্যক্তি জানতেন না, কথাটা ভুল। আরও একজন জানতেন—ঐ হারাধন, সেই উইলের কথা জানতেন। কারণ সে উইল যখন লেখা হয়, আইনজ্ঞ হিসাবে ও অন্যতম সাক্ষী হিসাবে শ্ৰীকণ্ঠ মল্লিক মশাই হারাধনের সাহায্য নিয়েছিলেন। অথচ এ কথা স্বয়ং শ্রীনিবাস মজুমদার মশায়ও জানতেন না, যদিচ তিনি উক্ত উইলের অন্যতম সাক্ষী ছিলেন।
সে উইলে কি লেখা ছিল জানতে পেরেছিস কিছু?
হ্যাঁ, সামান্য। হারাধন বিশদভাবে খুলে আমাকে সব কিছু বলেননি বটে, তবু যতটুকু জেনেছি সেও আমার অনুমান মাত্র। হারাধনকে বিশেষভাবে অনুরোধ করায় কেবলমাত্র বলেছিলেন, যা চুকেবুকে গেছে অনেকদিন এবং যার অস্তিত্বই এ জগতে কোনদিন প্রকাশ
প্রকাশ পেল না, আজ আবার সেই ভুলে যাওয়া পুরনো কাহিনীর জের টেনে এনে নতুন করে অমঙ্গলের বীজ বপন করতে চাই না রায় মশাই। সে উইল কোন দিন আত্মপ্রকাশ করে, এ বিধাতারই বোধ হয় অভিপ্রায় ছিল না, নচেৎ সব হয়েও এমনি করে ভণ্ডুলই বা সেটা হয়ে গেল কেন? তাছাড়া নিয়তি যেখানে বাদ সেধেছে, মানুষের পুরুষকার সেখানে ব্যর্থ হবেই, ইত্যাদি। এরপর আমিও দ্বিতীয় অনুরোধ তাকে করিনি। কেননা শুধুমাত্র সুহাসিনীর কথা আদালত মেনে নিতে চাইত না, বিশেষ করে তিনি যখন আবার আসামীর মা। সেক্ষেত্রে হারাধনের সাক্ষীর একটা মূল্য আছে। বর্তমান রহস্য উদঘাটনের ব্যাপারে সেই মূল্যটুকুই আমাদের কাছে যথেষ্ট। তার বেশী হারাধনের কাছে আমি আশাও রাখি না। এইসব কারণেই তোকে বলেছিলাম চিঠিতে হারাধনের প্রতি নজর রাখতে।
কিরীটীকে যেন আজ বলার নেশায় পেয়েছে, সে আবার বলে চলে, সতীনাথ লাহিড়ীর মৃত্যু—এটাও খুব আশ্চর্যের কিছু নয়। কারণ সুহাসের মৃত্যু ঘটানোর ব্যাপারে সতীনাথ ছিল খুনীর দক্ষিণ হস্ত এবং সমস্ত ব্যাপারটাই সুপরিকল্পিত চমৎকার একটা ষড়যন্ত্র। কোথাও তার এতটুকু গলদও খুনী বা চক্রান্তকারীরা রাখতে চায়নি। অবিশ্যি তোকে আগেও বলেছি, এখনও বলছি, সুহাসের নৃশংস হত্যার ব্যাপারের আসল মেঘনাদ বা পরিকল্পনাকারী, সেবার যেমন প্রমাণের অভাবে ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে গিয়েছিল, এবারও প্রমাণ যোগালেও তেমনিই হয়ত থেকে যাবে। কারণ সে কেবল যুগিয়েছে পরিকল্পনাটুকু। অর্থাৎ কেমন করে কি উপায়ে সুহাসকে এ পৃথিবী থেকে সকলের সন্দেহ বাঁচিয়ে সরিয়ে ফেলতে পারা যাবে! চতুর-চূড়ামণি সে। কিন্তু এত করেও সে ফাঁকি দিতে পারে নি দুজনের চোখকে—আমার ও আর একজনের। অথচ দুভাগ্য এমন, সেই দ্বিতীয়জন পারলেও আমি পারব না তাঁকে ফাঁসাতে এই তদন্তের ব্যাপারে, সেইটাই আমার সব চাইতে বড় দুঃখ থেকে যাবে হয়ত চিরদিন।
তবে সেই দ্বিতীয় ব্যক্তির সাহায্য নিলেই তো হয়! সুব্রত উৎসুক কণ্ঠে বলে।
তা আজ আর সম্ভব নয়। সেইখানেই তো সব চাইতে বড় মুশকিল।
সম্ভব ময় কেন?
এমন সময়ে ঘরের বাইরে বিকাশের কণ্ঠস্বর শোনা গেল, কল্যাণবাবু আছেন নাকি?
কে, বিকাশবাবু নাকি! আসুন, আসুন!
বিকাশ এসে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল।
দিনের আলো একটু একটু করে নিভে আসছিল, দিনশেষের ঘনায়মান ম্লান স্বল্পালোকে ঘরখানিও আবছা হয়ে আসছে।
থাকোহরি, একটা বাতি দিয়ে যা! সুব্রত চিৎকার করে বলে।
যাই বাবু, পাশের ঘর থেকে থাকোহরির কণ্ঠস্বর শোনা গেল।
বসুন বিকাশবাবু, সুব্রত আহ্বান জানালে।
বিকাশবাবু ঘরের আবছা অন্ধকারে কিরীটীর দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিল।
আমার বন্ধু কিরীটী রায়, আর ইনি এখানকার থানা-ইনচার্জ বিকাশ সান্যাল। সুব্রত পরিচয় করিয়ে দেয়।
কে, কিরীটীবাবু? নমস্কার নমস্কার। কবে এলেন? আজই বোধহয়! আনন্দ ও শ্রদ্ধা যেন বিকাশের কণ্ঠে মূর্ত হয়ে ওঠে একসঙ্গে।
কিরীটী মৃদুস্বরে জবাব দেয়, হ্যাঁ,নমস্কার মিঃ সান্যাল।
থাকোহরি একটা লণ্ঠন নিয়ে এসে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল। ঘরের অন্ধকার দূরীভূত হল।
কিরীটীবাবু, আপনার কথা আমি অনেক শুনেছি, সাক্ষাৎ-আলাপের সৌভাগ্য আজও পর্যন্ত আমার হয়নি যদিও।
কিরীটী প্রতুত্তরে মৃদু হাসল মাত্র।
যা হোক, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে ওদের কথাবার্তা আবার জমে ওঠে।
কিরীটী অবার একসময় বলতে থাকে, সুব্রত, তুই এখানে আসবার পর আমাকে আরও দু-একবার একাই জাস্টিস্ মৈত্রের বাড়ি যেতে হয়। এবং এ-কথা হয়ত তোর নিশ্চয়ই মনে আছে, মামলার সময় একদিন মামলার জেরায় প্রকাশ পায়, সুহাস সেদিন ৩১ শে ডিসেম্বর রায়পুরে রওনা হয়, সেদিন নাকি সুধীন সুহাসকে একটা অ্যানটিটিটেনাস ইজেকশন দিয়েছিল। জবানবন্দিতে সুধীন বলেছিল, আগের দিন নাকি কলেজে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে ব্যাটের আঘাত লেগে সুহাসের ডান পায়ে হাঁটুর কাছে অনেকটা কেটে যায়। তাছাড়া একবার সুহাস টিটেনাস রোগে ভুগেছিল। তাই সাবধানের জন্যও, টিটেনাস রোগের প্রতিষেধক হিসাবে, সুধীন সুহাসকে একটা অ্যানটিটিটেনাস ইনজেকশন দেওয়ার সময় নাকি হঠাৎ মালতী দেবী ও সুবিনয় মল্লিক এসে ঘরে প্রবেশ করেন। মালতী দেবীই প্রশ্ন করেন, ও কিসের ইজেকশন আবার নিচ্ছিস! তাতে সুহাস কোনো জবাব দেয় না। পরে মামলার সময় আদালতে ঐ কথা উঠলে, সুধীনকে জিজ্ঞাসা করায় সুধীন জবাব দেয়, হ্যাঁ, তাকে সে একটা অ্যানটিটিটেনাস ইজেকশন দিয়েছিল বটে ৩১শে ডিসেম্বর। কিন্তু পরে এমন কোনো কথাই প্রমাণ হয়নি যে সুহাস তার আগের দিন ক্রিকেট খেলতে গিয়ে আহত হয়েছে। ঐদিন সুহাসের সঙ্গে খেলার মাঠে যারা ছিল, তারাও কেউ জানে না সুহাস কোনোরকম আঘাত পেয়েছিল কিনা। এমন কি স্বয়ং মালতী দেবী পর্যন্ত সে সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি। বিপক্ষের উকিলের মতে, সত্যই যদি সুহাসকে প্লেগের বীজাণু ইজেক্ট করে মারা হয়ে থাকে, তাহলে সুধীনই নাকি ঐ সময় সেটা সুহাসের শরীরে অ্যানটিটিটেনাসের সঙ্গে ইনজেক্ট করেছিল।
সর্বনাশ, এ তো আমি জানতাম না। বিকাশ বলে।
কেন, ঐটাই তো সুধীনের বিপক্ষে সর্বাপেক্ষা বড় প্রমাণ। সুব্রত বললে।
এবং ঐ ব্যপারটাই ভাল করে যাচাই করবার জন্যই আমি জাস্টিস্ মৈত্রের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সুধীন তার জবানবন্দিতে যা বলেছে, সেটাও তার বিরুদ্ধেই গেছে। সে বলেছে, সেদিনই সন্ধ্যায় সুহাসের কাছে ও জেনেছিল, সুহাস ক্রিকেট খেলতে গিয়ে নাকি আহত হয়েছে এবং তখুনি সে তাকে অ্যানটিটিটেনাস ইনজেকশন দিতে চায়। তাতে নাকি সুহাস আপত্তি করে। কিন্তু পরের দিন স্বেচ্ছায় সুধীন একটা অ্যানটিটিটেনাস সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে তাকে অনেকটা জোর করে ইজেকশন দেয়। আগের দিন সন্ধ্যায় খেলার মাঠ হতে ফেরবার পথেই নাকি সুহাস হসপিটালে গিয়েছিল গাড়ি করে। অথচ ড্রাইভার সেকথা অস্বীকার করে, সে বলে, সুহাস সোজা নাকি বাড়িতেই চলে আসে। কথায় বলে, দশচক্রে ভগবান ভূত-এর বেলাতেও হয়ত তাই হয়েছে কিন্তু আমার বিশ্বাস এবং জাস্টিস্ মৈত্রেরও বিশ্বাস, ড্রাইভার এক্ষেত্রে মিথ্যা কথা বলেছে। প্রমাণ করতে হলে অবিশ্যি আমাদের প্রমাণ করতে হবে, সত্যিই সে ৩১শে ডিসেম্বর সুহাসকে অ্যানটিটিটেনাস ছাড়া অন্য কিছু ইনজেকশন দেয়নি! আমার নিজের এখানে আসবার অন্যতম কারণও তাই। জেরা করবার সময় আদালত একজনকে কয়েকটি অতি আবশ্যকীয় প্রশ্ন করতে ভুলে গেছে, সেটা আমি এখন জিজ্ঞাসা করতে চাই। আসলে মৃত পাবলিক প্রসিকিউটার রায়বাহাদুর গগন মুখার্জীর মৃত্যুতে মামলাটা সব আদ্যপান্ত ওলটপালট হয়ে গেছে। সাজানো দাবার ছক উলটে দিয়ে আবার নতুন করে ছক সাজানো হয়েছিল। ফলে নিদোষীর হল সাজা, আর দোষী পেল মুক্তি।
কিন্তু সেটা কি এখন আবার সম্ভব হবে? বিকাশ প্রশ্ন করে।
কেন হবে না? বর্তমানে এই রাজবাড়ির হত্যা-রহস্যের তদন্ত-ব্যাপারকে কেন্দ্র করে আবার নতুন করে সেই শুরু হতে জবানবন্দি শুরু করে ধীরে ধীরে আমাদের ফিরে যেতে হবে বর্তমান রহস্যের মূলে—সেই ভুলে যাওয়া পুরনো কাহিনীতে এবং সেটাই আমার বর্তমানের উদ্দেশ্য।
কিরীটী আবার একটু থেমে বলে, পৃথিবীতে যত প্রকার অন্যায় ও পাপানুষ্ঠান দেখা যায়, সেগুলোর মূলে অনুসন্ধান করলে দেখা যায় সবই প্রায় মানুষের কোন-না-কোন বিকৃত কল্পনার দ্বারা গড়ে ওঠে। মানুষের কল্পনা থেকেই যেমন জন্ম নেয় শ্রেষ্ঠ কাব্য কবিতা ও সাহিত্য, তেমনি কল্পনা থেকেই আবার জন্ম নেয় যত প্রকার ভয়ঙ্কর পাপ ও অন্যায়। কেউ পাপ করে অর্থের লোভে, কেউ প্রতিহিংসায়, কেউ বা অবার বিকৃত আনন্দানুভূতির জন্য। শেষোক্ত ধরনকেই আমরা বলি অ্যাবনরমা্যাল। রায়পুরের হত্যারহস্যকে বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই তার মূলে ১নং হচ্ছে অর্থের লোভ, ২নং খুনের নেশা। এবং যে বা যারা খুন করেছে, সেই খুনীর পক্ষে সেই নেশা এমন ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, খুনী এখন তার নিজের যুক্তির বাইরে। ৩নং এ পৃথিবীতে অনেক সময় দেখা গেছে, আমরা আমাদের কোনো বিশেষ কাজের দ্বারা কারও ভাল করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তার মন্দ বা খারাপটাই করি। এবং সেটা যে সময় সময় মানুষের জীবনে কত বড় বিয়োগান্ত ব্যাপার হয়ে দেখা দেয়, তা ভাবলেও হতবুদ্ধি হয়ে যেতে হয়। তাছাড়া এক্ষেত্রে কি হয়েছে জানিস, ঐ যে কথায় বলে না, খাচ্ছিল তাঁতী তাঁত বুনে,কাল হল তার হেলে গরু কিনে—এও হয়েছে কতকটা তাই!
সব্রত অবাক বিস্ময়েই কিরীটীর আজকের কথাগুলো শুনছিল। এ কথা অবিশ্যি ও ভাল ভাবেই জানে, মাঝে মাঝে কিরীটী এমন ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই চলে যায়। সেই সময় সামান্য একটু বিশদভাবে বুঝিয়ে বললেই হয়ত সব বোঝা যায়, কিন্তু নিজেকে কেমন যেন একটা রহস্যের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন করে অস্পষ্ট করে তুলতে সে যেন একটা অপূর্ব আনন্দ উপভোগ করে। এবং সে ক্রমে এমন অস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে শেষটায় মনে হয়, সে বুঝিবা যা খুশি আবোলতাবোল বকে যাচ্ছে। সুব্রত দু-একবার ইতিপূর্বে কিরীটীকে সেকথা বলেছেও, কিরীটী তার স্বভাবসুলভ মৃদু হাস্যের সঙ্গে বলেছে, যখন কোনো রহস্য নিয়ে কারবার করছ, তখন নিজেও রহস্যময় হয়ে ওঠা চাই এবং তা যদি হতে পার, তাহলেই সেই রহস্যটাকে উপভোগ করতে পারবে। কখনও ভুলে যেও না যে তুমি একজন রহস্যভেদী। তুমি বুদ্ধিমান, বুদ্ধির খেলায় অবতীর্ণ হয়েছ—সাধারণের চাইতে তুমি অনেক ওপরে। এ শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, এ বুদ্ধির প্রতিযোগিতা।