২. হাত চোখ বেঁধে

০২.

হাত চোখ বেঁধে মিস ব্লানডিসকে একটা জোরাল আলোর মধ্যে ঠেলে দিল। এডি পিছনে তার বাহু দুটি শক্ত করে ধরে। স্লিম অনেকগুলো খুন করার পর বিশ্রাম নিচ্ছে।

মা প্রিসন মেদ বহুল ঝোলা মাংস নিয়ে চেয়ারে উপবিষ্ট। নাসিকা তীক্ষ্ণ, চোখ দুটি উজ্জ্বল ও ধূর্ত। গলায় সস্তা গয়না পরেছে। ক্রিম রঙের শাড়ি পরে হাত দুটি হাঁটু চেপে ধরে আছে।

এডি হাত খুলে দিতেই মিস ব্লানডিস মা প্রিসনকে দেখে ভয়ে পিছিয়ে গেল।

মিস ব্লানডিসকে পরিচয় করিয়ে দিল-ইনি মা প্রিসন।

 বৃদ্ধার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মিস ব্লানডিস ভয়ে এডির হাত ধরে বসে পড়ল।

মা প্রিসন বেশী কথা বলেননা ও শোনেননা। কিন্তু এখন অনেকগুলো কথা বললেন।

তোমার বাবা না আসা পর্যন্ত তোমায় এখানে থাকতে হবে। সমস্তই তোমার বাবার উপর নির্ভর করছে। তার আগে তোমাকে আমার ছেলেদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। তুমি কোনরকম ঝামেলা করবে না। বুঝেছ তো?

মিস ব্লানডিস উদ্ধত ভঙ্গিতে মায়ের দিকে তাকাল।

 মা প্ৰিসন চেয়ার থেকে উঠে বললেন একে ধরে দাঁড় করাও।

এডি মিস ব্লানডিসকে ধরে দাঁড় করালো। মা প্ৰিসন সজোরে গালে চড় মেরে বললেন, কোনরকম চালাকি করবে না। যাও ওপরে নিয়ে যাও।

এডি মিস ব্লানডিসকে ওপরে নিয়ে গেল। ফিরে এসে এডি দেখল সবাই তার জন্যে অপেক্ষা করছে। মা প্রিসন অস্থির ভাবে পায়চারি করছেন।

মা প্ৰিসন বললেন, শোন, মেয়েটাকে একটু একা থাকতে দাও। ওকে খেপান উচিত হবে না। সময় অনেক গড়িয়ে গেছে। ইতিমধ্যে বুড়ো ব্লানডিস ফেডারাল এজেন্টের সঙ্গে দেখা করেছে। এবং ম্যাকগনের মৃতদেহ খুঁজে বার করেছে বলে মনে হয়। টাকা আদায় করে ঝামেলা চুকিয়ে ফেলতে হবে।

এডি একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল কি করতে হবে আমাদের বুঝিয়ে দিন।

শহরে গিয়ে ফোন করে বুড়োকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিষেধ করবে। জানাবে আগামীকাল বলা হবে কি করতে হবে। আর বুড়োকে বলবে বাঁকা পথ ধরলে মেয়েটারই ভাগ্য খারাপ হবে। আসল কথা ওকে ভয় দেখাবে।

এডি বলল, বেশ তাই, ওকে সব ঠিকমত জানাব।

 মা ক্লিনের দিকে তাকিয়ে বললেন, বলত কারা কারা আমরা এরমধ্যে জড়িয়ে আছি।

ক্লিন বলল, জনিও স্বচক্ষে সব দেখেছে…তাবে জনি লোক ভাল। মৃতদেহ তিনটি পুঁতে ফেলতে হবে আর গাড়িটার ব্যবস্থা করতে বলে এসেছি। আর আছে পেট্রল পাম্পের সেই ছোকরা। তখনই সে ভয়ে-অর্ধমৃত অবস্থা তবুও এডিকে চিনতে পারবে।

মা বললেন–সুযোগ না দিয়ে তুমি ছোকরাটাকে সরিয়ে দাও। আমরা নিশ্চিন্ত হতে চাই। ফেডারেল এজেন্ট রিলিও তার সঙ্গীদের খুঁজে না পেলেও সেই ছোকরাটাকে খুঁজে পাবে। ক্লিন তুমি গিয়ে কাজ সেরে ফেল।

মা বললেন, ডক তুমি বুড়ো ব্লানডিসকে চিঠি লেখ। ওকে বল পাঁচ আর বিশ ডলারের নোটে পাঁচ হাজার ডলার দিতে। একটা হালকা রঙের ব্যাগে ভরে নিয়ে আসতে যাতে বয়ে আনা যায়। টাকা যোগাড় হলেই ট্রিবিউন পত্রিকায় ছোট পিপেতে সাদা রঙ বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতে। তারপর আমাদের নির্দেশ পাবে। যদি পুলিশে খবর দেয় তাহলে ওর মেয়ের উপর আমরা নির্দয় হব। ঠিক আছে?

ডক এমন কাজ আগেও করেছে। সে চিঠি লেখার জন্যে পাশের ঘরে চলে গেল। মা প্রিসন সিগারেট ধরিয়ে ছেলেকে বললেন, তুমি কিছু বলছ না।

সে বলল, মেয়েটার মুক্তোর হারটা বিক্রি করতে হবে। হারটা পকেট থেকে বের করে বলল, এটা তোমার আর মেয়েটা আমার।

এটাতো এমনিতেই আমার কাছে আসতো দর কষাকষির দরকার ছিল না। তুমি পাগল হয়ে গেলে নাকি।

তুমি দলের মেয়েদের সম্পর্কে বেশ কঠিন বলে জানি।–নিচু গলায় স্লিম বলল, মা, অনেকদিন মেয়েদের সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করিনি। তুমি আমাদের মেয়েদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখ। এই সুন্দরীকে বশ মানাতে চাই। তুমি ওর ভার আমাকে দাও। রাজী হলে মুক্তোর হারটা

মা ছেলের্কে ভালই চেনেন। আজেবাজে না বকে হারটা আমায় দাও।

শোন মা, এই মেয়েছেলেটাকে আমার চাই-ই, বশ তাকে মানাবোই।

 চেষ্টা করে দেখ, বাধা দেব না।

স্লিম বলল, মা আমার সঙ্গে উপরে এসো মেয়েটাকে বোঝাই যাতে কোন ঝামেলা না করে।

মা ছেলেকে বললেন, চাইছ পাবে। তবে এই মুহূর্তে নয়। বলেই ছেলের হাত থেকে মুক্তোর হারটা নিলেন।

এডি শহরে পৌঁছে একটা খবরের কাগজ কিনল। খবরের কাগজে ছাপা হয়েছে মিসক্লানডিসের হরণ করার খবর। তার সঙ্গে মিস ব্লানডিস ও ম্যাকগনের ছবি। কিন্তু পুলিশের কোন মন্তব্য ছাপা হয়নি। কোণের দিকে সিগারেটের দোকানে ঢুকে পিছনের দরজা দিয়ে জুয়ার আড্ডায় ঢুকে গেল। উপস্থিত নরনারীরা মদ্যপান করছে আর বিলিয়ার্ড খেলছে। এডি ঘরের চারিদিকে তাকিয়ে ওপিকে দেখতে পেল। ওপিকে শহরে থাকতে বলা হয়েছে আড়িপাতার জন্য।

ওপির দেওয়া মদের গ্লাস নিয়ে বলল, নতুন কিছু খবর আছে?

প্রচুর।–পুলিশ রিলি আর তার সঙ্গীদের খুঁজছে। পুলিশ জেনেছে, বেইলীর নজর মুক্তোর। হারের উপর ছিল। ওরা তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। ফেডারেল এজেন্ট যে কোন সময় শহরে তল্লাশি চালাতে আসবে। তোমাকে যেন বন্দুক সমেত ধরার সুযোগ না পায়।

এডি হেসে বলল, আমি এসেছি বুড়ো ব্লানডিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। কাজ সেরে ফিরে চল। আস্তানাটা নিরাপদ নয়।

ওপি মদের গ্লাসে চুমুক দিলে, বেশ আমি তোমার জন্যে অপেক্ষা করবো।

এডি পথে বেরিয়ে ফোনের জন্য এদিক ওদিক-তাকাচ্ছে, সেই সময় একটি সুন্দরী মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। মেয়েটি বেপরোয়া হলেও বাজে মেয়েছেলে বলে মনে হয় না।

শেষে একটা ওষুধের দোকানে ফোনের বুথ খুঁজে পেল। রিসিভারের মুখে রুমাল চাপা দিয়ে নাম্বারে যোগাযোগ করতেই অপর প্রান্তে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।

আপনি কে? ব্লানডিস কথা বলছেন, আমার কথাগুলো মন দিয়ে শুনুন। আপনার মেয়েকে পাওয়ার জন্যে কিছু নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন না। আমাদের নির্দেশমত চললে আপনার মেয়ের কোন ক্ষতি হবেনা। আপনার মেয়ে ভালই আছে। তবে পুলিশে খবর দিলে ভাল থাকবে না। দলের অনেক পুরুষই.ওকে নিয়ে খেলতে চাইছে। আপনি চালাকি করলে শেষে ওদের কথাই মেনে নিতে হবে। ব্লানডিসকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই এডি রিসিভার নামিয়ে হাসিমুখে বেরিয়ে এলো।

 এডি লক্ষ্য করল মেয়েটি কাছেই একটি দোকানের শোকেসের সামনে দাঁড়িয়ে। মেয়েটি তার পাশ দিয়ে যাবার সময় একটি সাদা কার্ড ফেলে দিল। তাতে ছাপা আছে ২৪৩ প্যালেস, ওয়েস্ট। হেসে কার্ডটা পকেটে রেখে দিল।

ওপিকে গাড়িতে তুলে নিতে গিয়ে এডি লক্ষ্য করল, একটা গাড়ি তাদের পেছনে আসছে তাতে দুজন লোক আছে।

ওপি নিম্ন কণ্ঠে বলল, ফেডারাল অফিসার।

ফেডারাল অফিসার দুজন তেমন কোন আগ্রহ না দেখিয়ে এয়ারফ্লো গিয়ে প্রবল গতিতে শহরের বাইরে চলে গেল।

ওপি বলল, এখন থেকে তীক্ষ্ণ নজর রাখবে।

ভয় নেই, ব্লানডিস পুলিশে খবর দেবে না।

মা প্রিসনের বাড়িটা গাছ আর ঝোপে ঘেরা একখণ্ড জমির উপর। সহজে মানুষের নজরে পড়ে না। মা প্রিসন অনেক কষ্টে এই বাড়িটার খোঁজ পেয়েছেন। তবে বাইরে থেকে কে ঢুকছে তা ভাল করেই ভেতর থেকে লক্ষ্য করা যায়।

লৌহদুর্গ করে বাড়িটা তৈরী। মা যখন বুঝলেন বোমা আর গুলির আঘাতে বাড়িটাকে কিছু করা যাবে না তখন তিনি দলবল সমেত এখানে উঠে এলেন।

সদর দরজায় এয়ারফ্লো এসে থামল। এডি গাড়ি থেকে নামল। ওপি এয়ারফ্লো গ্যারেজে রেখে ডজ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। কয়েক মুহূর্ত পর স্লিমকে নিয়ে এসে একটি গাড়ি থামল।

মা প্রিসন, অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি ক্লিনকে বললেন, প্রথমে তুমি বল।

অনায়াসে কাজ সেরেছি। ছোকরা আমার গাড়িতে তেল ভরতে এলে আমি তার মাথায় গুলি চালালাম।

মা প্রিসন ক্লিনকে ঘুমোতে বললেন। এডি মায়ের কাছে গিয়ে বসল।

ব্লানডিস ভয় পেয়ে মেয়েকে নেবার চেষ্টা করবে। ফেডারাল অফিসাররা নাক গলিয়েছে। দুজনকে গাড়িতে আসতে দেখেছি।

শেষ পর্যন্ত বাপের মেয়েকে ফিরে পাওয়া হবে না।

আপনি কি ওকে মেরে ফেলবেন?

স্লিম ওকে চায়। কিন্তু মেয়েটা ওকে সহ্য করতে পারে না।

 মেয়েটা সম্ভ্রান্ত-অসহায়, স্লিম ওকে নির্দয় ভাবে ভোগ করবে।-এডি রেডিও চালু করল।

মা বললেন–তাতে তোমার কি?

আমার কাছে এটা অন্যায়।

রেডিওতে ঘোষণা শুরু হল। সমস্ত গাড়ির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে ব্লানডিস হরণ সম্পর্কে–যে লোকগুলোকে খোঁজা হচ্ছে-ফ্রাঙ্ক রিলি, চেহারার বর্ণনা পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি–একশো চব্বিশ পাউন্ড বয়স সাঁইত্রিশ।চুল কালোগায়ের রং শ্যামবর্ণ–পরণে কালচে বাদামি স্যুট আর হালকা টুপী। আর তৃতীয় ব্যক্তি শ্যাম ম্যাকটন। পাঁচ ফুট সাতছত্রিশ –একশো পাউন্ড–ধূসর চুল ও গোঁফওরা শহরের আশেপাশে লুকিয়ে আছে এবং ওরা বিপজ্জনক ব্যক্তি–এই পর্যন্তই। ম্যাডিস্টোন।

মা বলেন, আমরা নিশ্চিন্ত ফেডারাল অফিসাররা ওদের খুঁজছে।

এক গ্লাস মদ খেয়ে এডি গা এলিয়ে দিল। সে জিজ্ঞাসা করল, স্লিম কোথায়?

শুয়েছে।

 একা?

 একা নিশ্চয়ই। তুমি কি ভেবেছিলে?

ভেবেছিলে মেয়েটার সঙ্গে শোবার অনুমতি দিয়েছি। টাকা পাওয়ার আগে নয়।

আপাততঃ এডি নিশ্চিত হল। ভাবতেও খারাপ লাগে মিস ব্লানডিসকে স্লিম ভোগ করবে। আমি ঘুমোতে চললাম।

এডি পকেট থেকে রূপোর ঘড়িটা বের করতেই সাদা কার্ডটা পড়ে গেল। মার দৃষ্টি পড়তেই এডি হেসে তুলে নিল।

মাকে বলল, একজন বেশ্যা রাস্তায় আমার পেছনে ঘুর ঘুর করছিল।কার্ডটা উল্টাতেই নজরে পড়ল ঠিকানাটা।

রাত দুটোর সময় প্যালেস হোটেলে এয়ারফ্লো এসে দাঁড়াল। ক্লিন এডির দিকে তাকাল।

সে বলল, এখানে তো পৌঁছলাম, তারপর।

এডি বলল, হোটেলের ভেতরে যাচ্ছি তুমি অপেক্ষা কর। স্লিম আমার সঙ্গে যাবে।

 ভিতরে ঢুকে দারোয়ানের ডেস্কের সামনে ঘুমে ঝিমানোলোকটির সামনে এসে দাঁড়াল।

এডি নিচু স্বরে ২৪৩ নং ঘরে কে থাকে?

 দারোয়ান বলল, এ খবর আপনাকে জানানো যাবে না। কাল অফিসে এসে জানবেন।

চালাক ছোকরা তাই না? স্লিম বন্দুক দেখিয়ে বলল, খাতা খুলে বল, ২৪৩ নং ঘরে কে থাকে?

দারোয়ান বন্দুকটা দেখে রেজিস্টারটা এগিয়ে দিল। এডি খাতার পাতা উল্টিয়ে দেখল।

অ্যানা বোর্গ। একটা পাতায় এসে বলল, মেয়েটা কে?

এডি দেখল ২৪৩ নং পাশের ঘর দুটি ফাঁকা, বন্দুকের উল্টো দিক দিয়ে দারোয়ানের মাথায় আঘাত করতেই সে মাথা লুটিয়ে ডেস্কের উপর পড়ল। এডি তার মাথা তুলে দেখল।

সে বলল, এর স্ত্রী ছেলেপুলে থাকতে পারে। এত জোরে মারাটা ঠিক হয়নি।

স্লিমকে কঠিন দেখাচ্ছে। সে বলল, উপরে গিয়ে মেয়েটার খোঁজ করি।

 তারা লিফটে চারতলায় উঠল। তারা এই তলায় দুশো নম্বর ঘরের খোঁজ পেল।

এডি বলল–কোন ঝামেলা না দেখলে এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে।

এমন একটা অন্ধকার জায়গায় স্লিম দাঁড়ালো যেখান থেকে করিডোরের শেষ পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যায়। ২৪৩নং ঘর শেষ মাথায়। হাতল ঘোরাতেই দরজা খুলে গেল। অন্ধকারে ঘরে ঢুকেই আগে দরজা বন্ধ করল। টর্চের সাহায্যে বৈদ্যুতিক আলোটা জ্বালাল।

ঘরে কাউকেই পেলনা। পোশাক পাল্টে চলে গেছে মনে হচ্ছে। জানালা দিয়ে নিচে তাকাতেই এয়ারফ্লো গাড়িটাকে দেখতে পেল না।

ক্লিন তার সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে না কি। ঘরের আলো নিভিয়ে এডি বেরিয়ে আসতেই স্লিম এডির হাত চেপে ধরল।

ক্লিন চলে গেছে। মেয়েলোকটা মনে হয় কারো সঙ্গে দেখা করতে গেছে।

নিচে কারা যেন কথা বলছে তারা শুনতে পেল। স্লিম নিচে তাকিয়ে বলল ফেডারাল অফিসার। ক্লিন তাই পালিয়েছে এসো আমরা পালাই।

এডি বলল, ব্যস্ত হয়ো না। নিচে কোন গোলমাল হয়েছে।

 কি বাজে কথা বলছ?

এই বোর্গ মেয়েছেলেটা কে? রিলির সঙ্গে ওর সম্পর্কটাই বা কি? আমাকে ঠিকানা দিল আসার জন্য অথচ ফেডারাল এসে পড়ল।

এখন চিন্তা না করে পালাই চল। এখান থেকেই আমি সবকিছু দেখতে চাই।

 চল পাশের ঘরে ঢুকে পড়ি। ২৪৩ নং ঘর সম্পর্কে আগ্রহী হতে পারে।

তারা পাশের শূন্য ঘরে ঢুকল। একজন ফেডারাল এজেন্ট উপরে এসে তাদের ঘরের সামনে দাঁড়াল। এদিক-ওদিক দেখে আবার নিচে নেমে গেল। এডি বাইরে যেতে উদ্যত হতেই স্লিম তাকে বাধা দিল। ২৪৩ নং ঘরের দরজা খুলে একজন মহিলা উঁকি দিচ্ছে। এডি তাকে চিনতে পারল। মহিলাটি প্যাসেজ দিয়ে চলল।

এডি বলল, কি বুঝছ বলতো।

 স্লিম জিজ্ঞাসা করল–এই মেয়েটাই কার্ড ফেলেছিল?

এডি ঘাড় নাড়ল।

মেয়েটা এখানে কি করছে?

তাইতো জানতে চাই। এডি প্যাসেজ দিয়ে বেরিয়ে মেয়েটার ঘরে ঢুকবে ওর সঙ্গে কথা বলবে বলে। তুমি পুলিশগুলোর দিকে নজর রেখ, কেমন?

স্লিম রাজি হল। এডি সেই ঘরটাতে ঢুকল। আলো জ্বলছে। দেখল একটি মৃতদেহ মেঝেতে পড়ে রয়েছে।

.

মা প্ৰিসন বিপদের আশঙ্কায় অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছেন। তিনি মিস ব্লানডিসের ঘরে আসতেই মিস ব্লানডিস বিছানায় উঠে বসল।

তোমায় কেউ কি কখনো এরকম জিনিস দিয়ে মেরেছে? মিস ব্লানডিস ঘাড় নাড়ল। দুঃস্বপ্ন দেখেই ঘুম ভেঙে গেছে।

খুব লাগে।–বলেই তার হাঁটুর উপরে সজোরে আঘাত করলেন।

 মা হাসলেন। তোমার খুব তেজ তাই না। তারপর রবারের নল দিয়ে পিটোতে লাগলেন।

ওপি বাগান থেকে ফিরে ডককে জিজ্ঞাসা করল, এডি এখনও ফেরেনি?

ডক মাথা নাড়ল। দুজনে বসবার ঘরে এলো। ওপি দুটো গ্লাসে মদ ঢালল।

ওপি গ্লাসে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞাসা করল–মা কোথায়?

 উপর তলায়। মনে হচ্ছে মেয়েটাকে বশ মানাচ্ছে।

বুড়ি নেকড়েটা চুপচাপ বসেছিল হঠাৎ রবারের নল নিয়ে উপরে উঠে গেল।

চিৎকার শুনে ওপি বলল–কে চিৎকার করছে?

ডক রেডিও চালাতেই বাজনার আওয়াজে ঘর ভরে গেল।

 ডক বলল–এভাবে মেয়েটাকে কষ্ট দেওয়া ঠিক হচ্ছে না।

বিছানায় বসে মা হাঁপাচ্ছেন। মিস ব্লানডিস বিছানায় বসে খামচে চাদরটা ধরে আছে। রবারের নলটা মেঝেতে পড়ে আছে। আর তার চোখ দিয়ে জল পড়ছে।

মা প্রিসন বললেন, এখন আমরা কথা বলতে পারি কি বল?

মা প্রিসন প্রস্তাব রাখতেই তার মুখ দিয়ে প্রতি কথায় মা বেরিয়ে এলো।

শেষ পর্যন্ত ধৈর্য হারিয়ে মা বললেন, বুদ্ধ মেয়ে তুমি কোনদিনই আমাদের হাত থেকে রেহাই পাবে না। তোমার বাবা টাকা দিলেও তোমার সুন্দর মুখ আর কোনদিনই দেখতে পাবে না। তুমি কি স্লিমকে মেনে নেবে।

মিস ব্লানডিস বলল–না। তোমাদের কথায় আমাকে রাজি করাতে পারবে না।

স্লিম যা চায় তাই আদায় করে। আমার কথা না শুনলে ওষুধ খাইয়ে তোমার মন পাল্টে দেবো।

 দরজায় দাঁড়িয়ে বললেন, আবার দেখা হবে।

এডি হাওয়া খাওয়ার জন্য মানুষটির পাশে বসল। মৃত মানুষ হেলী তা বুঝতে পারল। খবর সরবরাহ করাই তার কাজ। সেই বেইলীর নাম ফেডারাল অফিসারকে বলেছে।

দরজা খুলতেই সে দেখল স্লিম সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে, বাইরে এসে রুমাল দিয়ে দরজার হাতলটা মুছল।

রাস্তা থেকে পুলিশের সাইরেন ভেসে এলো। এডিকে হাত নেড়ে সিঁড়ির কাছে ডাকল। ২৪৩ নং ঘরের মেয়েটা চিৎকার করতে লাগল। চিৎকার শুনে এডি ঘাবড়ে গেল।

ওই ছুড়িটা আমাদের ডোবাবে–চল এখান থেকে পালাই।

উপর তলায় আসতেই ঘরের দরজাগুলো খুলে গেল। পায়ের শব্দ শোনা গেল। নারী পুরুষের মিলিত চিৎকার ভেসে আসে।

হাঁপাতে হাঁপাতে এডি বলল–ছাদে চল। কেন যে টমিগানটা রেখে এলাম।

দুজনে সিঁড়ির দরজায় এসে দেখল তালা বন্ধ। স্লিম দুবার গুলি মেরে তালা ভেঙে ছাদে উঠে গেলো। ছাদের কিনারায় গিয়ে কুড়ি ফুট নীচে পাশের বাড়ির ছাদে এসে পড়ল। তারা নিজেদের আড়াল করল। ছেড়ে আসা ছাদে টুপী পরা দুজন মানুষকে দেখা গেল, স্লিম বন্দুক চালাল। একজন পুলিশকে দেখা গেল না আর একজন আহত হলো।

আমাদের আলাদা হতে হবে। এডি বলল, তুমি এখান থেকে বের হতে পার তাহলে কসমস এ আমার সঙ্গে দেখা করো।

 স্লিম বলল, আমি ঠিক বেরিয়ে যাব। আমাকে বাধা দেওয়া কোন পুলিশের কর্ম নয়।

এডি হামাগুড়ি দিয়ে পাশের ছাদে পড়ে অন্ধকারে আত্মগোপন করল। ছাদ থেকে নামবার কোন উপায় নেই। স্লিম ক্রমাগত গুলি ছুঁড়ে চলেছে। স্কাই লাইটটা এডির নজরে পড়তেই দৌড়ে গিয়ে ঢাকনা খুলে দেখল একটা শূন্য ঘর। সে নিচে নেমে স্কাইলাইটের ঢাকা যথাস্থানে বসিয়ে দিল।

এডি দরজা খুলে প্যাসেজে এলো। সিঁড়ি দিয়ে তিন তলায় নামতেই দেখল দুজন পুলিশ উপরে উঠে আসছে।

এডি অপেক্ষা না করে পাশের ঘরে ঢুকে পড়ল। প্রথমে মনে হল ঘরটা জনশূন্য, তারপর দেখল একজন মহিলা জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে। এডি মহিলাটির শরীরে বন্দুকটা চেপে ধরল।

শোন, এডি বলল। তোমাকে একটু সাহায্য করতে হবে। পুলিশ তোমার খোঁজে আসছে আমি একটু পরেই চলে যাব।

মেয়েটির চোখ দুটি নীল, সোনালী চুল। পরণে কালো পাজামা তাকে ভালই মানিয়েছে।

এডি বলল, বিছানায় শুয়ে পড়।

শরীরে চাদর ঢেকে ভয়ার্ত মেয়েটি শুয়ে পড়ল। অন্ধকারে শুয়ে নরনারীর চিৎকার শুনতে পেল। কারণ, পুলিশ ঘরে ঘরে তল্লাসি চালাচ্ছে।

এডি মাথা তুলে দেখল মেয়েটা ঠিকমত শুয়েছে কিনা। সে বলল, পোশাক খুলবার দরকার নেই। ভয় নেই, আমি তোমার বিছানায় নেই।

এডি চাদরের তলায় হাত ঢুকিয়ে মেয়েটার একখানা হাত চেপে ধরল। সে হাসল, পুলিশ না যাওয়া পর্যন্ত ধরে থাকব। মেয়েটি মরার মত পড়ে রইল। ।

সহসা শব্দ হতেই এবং আলোর রশ্মি মেয়েটার মুখে পড়তেই সে হাই তুলল এডি চুপচাপ শুয়ে রইল। মেয়েটা বলল–কে?

ঠিক আছে মিস। পুলিশ বলল, আমি তোমাকে বিরক্ত করিনি।

কি ব্যাপার বলুন তো?

আমরা একজোড়া বদমায়েশের খোঁজ করছি। আপনি যখন কিছুই জানেন না, তখন আপনার ঘুম ভাঙাবার জন্য দুঃখিত।

এডি অবজ্ঞার ভাব দেখাল।

 মেয়েটি বলল–আপনি দয়া করে চলে যান।

নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই। পুলিশটা চলে গেলে এডি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। পুলিশটা আবার উঁকি মেরে বলল, নিদ্রা সুখের হোক।

এডি বলল, তুমি চমৎকার অভিনয় করেছ।

মেয়েটি কিছু না বলে এডির একখানা হাত চেপে ধরেছে। এডি শুয়ে রইল। রাস্তায় জনতার চিৎকার কানে আসতেই চিন্তা করল, স্লিম ধরা পড়েছে। নিজেকে নিরাপদ মনে হল।

এডি উঠে মেয়েটিকে বলল, সাহসিকতার জন্য ধন্যবাদ।

মেয়েটি বলল, তুমি চলে যাও।

 হ্যাঁ।

এখনও তুমি আমার আসল সাহস দেখনি। এডি হকচকিয়ে গেল। সে হেসে বলল, বেশ ভালবাসার স্মরণার্থে না হয়

সে রাত্রিটা থেকে গেল।

ট্রিবিউন পত্রিকায় দুদিন পরে কয়েকটা টিন বিক্রির একটা বিজ্ঞাপন ছাপা হলো। মা প্রিসন কাজটা ডককে দিল।

তিনি বললেন, লোকটা টাকার যোগাড় করেছে এখন নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

 ডক বিজ্ঞাপনটা দেখে হাসল।

মা বললেন, মেয়ের জন্য চিন্তাগ্রস্ত বাপের কাজটা সহজ হবে। ফেডারেল অফিসাররা কাছাকাছিই থাকবে। তবে তারা মেয়েকে হাতে নাতে না পাওয়া পর্যন্ত বাড়াবাড়ি করতে সাহস পাবে না। তুমি চিঠিতে জানিয়ে দাও কিভাবে টাকা আমাদের হাতে পৌঁছাবে। ম্যাকওয়েল পেট্রোলপাম্প থেকে গাড়ি ছুটিয়ে মাইল খানেক এসে একটা আলো দেখতে পাবে, আলোটা দেখতে পেলেই ব্যাগটা রাস্তায় ফেলে দেবে। দ্রুত গাড়ি চালিয়ে একা আসবে। আর জানাবে চালাকি করলে মেয়ের জীবনের ক্ষতি হবে।

মা ক্লিনিকের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি একটা টর্চ নিয়ে যে রাস্তায় ম্যাকওয়েল পেট্রোল পাম্প আছে সেই রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াবে। বুড়ো ব্লানডিসকে আসতে দেখলে তুমি আলোর সংকেত দেখাবে। তোমার কোন অসুবিধা হবেনা, তবে পুলিশ অনুসরণ করতে পারে। মাইলখানেক রাস্তাটা একেবারে সিধে। সুতরাং কেউ অনুসরণ করলে তোমার চোখে পড়বেই। যদি কেউ তোমায় অনুসরণ করে তাহলে তুমি টাকা রাস্তায় ছড়িয়ে দেবে। রাস্তায় টাকা ফেললে তোমায় আর তারা অনুসরণ করবে না। কারণ, তারা বুঝতে পারবে তাদের মেয়ের কি অবস্থা হবে। গোলমাল করে ফেল না।

ক্লিন মাথা নেড়ে বলল, কাল রাতে।

হ্যাঁ।

ক্লিন আর ডক বিদায় নিয়ে এডির ঘরে গিয়ে ঢুকল। ক্লিন বলল–টাকাটা প্রস্তুত কাল রাতে নিতে যাচ্ছি।

অস্থিরভাবে ডক এডিকে জিজ্ঞাসা করল, তোমার কাছে মদ আছে?

নিশ্চয়ই, আলমারিতে পাবে…আমাকেও দিও।

তিনটে গ্লাসে ডক মদ ঢালল। দুজনকে পরিবেশন করে নিজেও খেল। সে বলল, গতরাতের ভীতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারনি নাকি?

ক্লিন বলল, তুমি ভাগ্যবান এডি। যুদ্ধ যখন চলছে, তখন তুমি এক সুন্দরীকে পেয়ে বিছানায় সুখ ভোগ করলে?

এডি হেসে বলল,তা না হলে পুলিশকে ধোঁকা দেওয়া যেত না।

একসঙ্গে তিনজনে হেসে উঠল।

ডক বলল–যাই বল এডি, স্লিম ফেডারাল অফিসারদের ভালই শিক্ষা দিয়েছে।তিনজন খতম আর চারজন আহত হয়েছিল। স্লিমের টিকিটিও ওরা ছুঁতে পারেনি। তবে তারাও ছেড়ে কথা বলবে না।

ক্লিন বলল-স্লিম ভয় পায়নি?

ডক মুখভঙ্গি করে বলল-মেয়েটাকে পাবার জন্য নিজেকে শানাচ্ছে।

 এডি বলল, মেয়েটাকে নিয়ে কি করা হচ্ছে বলতো। কাজের চাপে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।

ডক বলল, পরিকল্পনাটা মন্দ নয়। মেয়েটা বুঝতে পারবেনা–ওর ওপর কি করা হচ্ছে আর হচ্ছে না।

এডি হেসে বলল, উপরে গিয়ে মেয়েটাকে দেখে আসব। অনেকদিন ওকে দেখিনি। দেখতে চাই ওর ওপর কি করা হচ্ছে।

ডক আর ক্লিন পরস্পরের দিকে তাকাল।

ডক বলল, মা চায়না মেয়েটাকে নিয়ে কেউ মাথা ঘামাক।

এডি বলল, মা কি চায় তা জানতে চাই না। আমি দেখব মেয়েটার উপর কি অত্যাচার করা হচ্ছে।

ডক বলল, বেশ যাও, এলে জানাব। ক্লিন আর স্লিমের উপর নজর রেখ।

এডি মিস ব্লনডিসের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মেয়েটা বেশ রোগা হয়ে গেছে।

এডি বলল, ভয় পেয়ো না। তোমাকে একবার দেখতে আর কথা বলতে এলাম।

 ব্লানডিস বলল–এখান থেকে চলে যাও।

এডি বলল–তোমাকে সাহায্য করতে চাই। আমার ইচ্ছা তুমি এখান থেকে মুক্তি পাও। তাই কিছু বলতে চাই।

মিস ব্লানডিস কাঁধ ঝাঁকাল, এডি ঘরে গিয়ে মদ নিয়ে পান করতে বসল।

মেয়েটি হাত থেকে মদের গ্লাসটি নিল। এডি দেখল মেয়েটির হাত কাঁপছে। মুখে ঢালতে গিয়ে খানিকটা বাইরে পড়ে গেল।

এডি জিজ্ঞাসা করল, তোমার সঙ্গে ওরা কি করছে?

 মেয়েটি চুপ। এডি বলল, আমি তোমার জন্য কিছু করতে চাই।

ক্ষীণকণ্ঠে মেয়েটি বলল, একটা লম্বা কালো লোক আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বিশ্রী শব্দ করে। গতরাতে ঘুম ভাঙতেই দেখি সে আমার পাশে শুয়ে আছে।

এডি বলল, ও কিছু করেছিল।

সভয়ে মেয়েটি মাথা নাড়ল যেন এখনও তার পাশে শুয়ে আছে। সে বলল, তুমি কি কখনও স্বপ্ন দেখেছ? এমন সব ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখি যা ঘুম ভাঙলেও মনে হয় আমি এখনও স্বপ্ন দেখছি। গত রাতে আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম।

স্বপ্ন আমিও দেখেছি কিন্তু তাতে কোন ক্ষতি হয়নি।

গতরাতের স্বপ্নটা ছিল আরও খারাপ। ঘুম ভাঙতেই আরও খারাপ লাগল। দেখি লোকটা আমার গা ঘেষে শুয়ে আর বুড়িটা আমাকে নগ্ন করে রেখেছে।মিসক্লনডিসকান্নায় ভেঙে পড়ল।

এডি একটা সিগারেট ধরাল।

মেয়েটি বলল–আমাকে কেউ স্পর্শ করলে ঘেন্না করে। মরা মানুষের মত পড়ে থাকলেও লোকটার হাত আমার সারা শরীরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এডি বলল, এবার থেকে আমি নজর রাখব তোমার উপর।

মিস ব্লানডিস বলল, লোকটা আবার আসবে এখন আমি কি করব। আমি বাড়ি যেতে চাই।

এডি বলল, আমি চেষ্টা করব। হতাশ হয়ো না। এডি বেরিয়ে আসতেই সিঁড়ির মাথায় ডকের সঙ্গে দেখা। ক্লিন অলসভাবে স্লিমের ঘরের সামনে পায়চারী করছিল। এডি তাদের অনুসরণ করে ঘরে এলো।

রাগত স্বরে এডিবলল, কুত্তির বাচ্চাটা মেয়েটাকে উন্মাদ করে ছাড়বে। যা অবস্থা তাতে মরতে পারলে ও খুশী হবে।

ক্লিন বলল, মেয়েটার মরাই ভাল।

প্যালেসের হত্যাকাণ্ডের জন্য রিলি ও তার দলবল দ্বারা হত মানুষটির শনাক্তকরণ সম্ভব হয়েছে, আজ ব্লানডিস প্রচুর টাকা মুক্তিপণ দিচ্ছেন।

 খবরে প্রকাশ প্যালেস হোটেলের নিহত লোকটির পরিচয় হল হেলী নামে। একজন গল্প লেখক। হেলী রিলির দলবলকে জানিয়ে ছিল ব্লানডিস কন্যার গতিবিধি। জানা গেছে যে পাঁচশশা ডলার দেওয়া হবে। জন ব্লানডিস মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবেই স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে নাক গলাতে দিচ্ছে না। যদিও আইন দপ্তর এ ব্যাপারে তৎপর হতে চান। অপহৃত মেয়েটি ভালই আছে।

হেলীকে রিলির দলবলেরাই খুন করেছে পুলিশের বিশ্বাস। যে দুজন খণ্ড যুদ্ধের সময় হোটেলের ছাদ থেকে পালিয়েছে পুলিশের হেফাজতে ফটো দেখে হোটেলের দারোয়ান তাদের সনাক্ত করেছে।

খবরটি মা প্রিসন পড়ে শোনালেন।

রিলি কাজটা শুরু করে ভালই করেছিল। স্লিম বলল, সব দোষ ওর ঘাড়েই চাপছে।

এডি বলল, আপাততঃ সব ঠিক আছে কিন্তু হেলীকে কে খুন করল! আমরা জানি রিলি এবং আমরা করিনি। চিন্তার বিষয় বোর্গ মেয়েছেলেটাকে কাজে লাগিয়েছে? হয়তো হেলীকে ওই খুন করেছে কিন্তু কেন করল। ও তো সবই জানে, ব্যাপারটা ভাল ঠেকছে না।

মা বলেন এডি ঠিক ধরেছে। টাকাটা নেওয়ার আগে ওই বোর্গ মেয়েছেলেটার সম্বন্ধে জানা দরকার।

তুমি শহরে গিয়ে দেখ ওর সম্বন্ধে কোন খবর জোগাড় করতে পার কিনা।

বেশ মা–আমার সঙ্গে কেউ যাবে?–এডির দৃষ্টি স্লিমের দিকে পড়তেই সে মাথা নাড়ল।

মা বললেন, একা যাওয়াই ঠিক হবে। কাজটা কিভাবে করবে নিজেই ঠিক করো। তোমার ভাগ্য ভাল দারোয়ান তোমায় চিনতে পারে নি।

এডি মাকে অনুসরণ করে এল।

এডি বলল, স্লিমকে আপনি বলতে পারেন না, মেয়েটাকে বিরক্ত না করতে।

মা বললেন, তুমি এ ব্যাপারে মাথা ঘামাবে না, বুঝেছ। মানুষ হিসাবে তুমি ভালই কিন্তু এ ব্যাপারে নাক গলাবে না।

একজন সম্ভ্রান্ত মহিলা কোনদিন একজন সমাজবিরোধীর কাছে ধরা দিতে চায় না। মেয়েটাকে কেন একা থাকতে দিচ্ছেন না?

মা রেগে বললেন, শোন এডি, স্লিম মেয়েটাকে পেতে চায়–চাইলে পাবেও।

স্লিম যাতে পায় মেয়েটাকে সেই চেষ্টাই আপনি করছেন। ওকি এতই দুর্বল যে মেয়েটাকে ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে কজা করতে হবে?

মা এডির মুখে এক চড় মারলেন। এডি বললেন, ক্ষমা করবেন।

এডি বেরিয়ে একটু ভেবে ডজ গাড়িটা নেবে মনস্থ করল।

এখন কসমস ক্লাবের ঘড়িতে একটা বেজে বারো মিনিট। এডি ক্লাবে ঢুকল। পরের দিনের জন্য ক্লাব-ধোয়া মোছা হচ্ছে। মেয়েরা নাচে অনুশীলনরত। তারা এডিকে দেখে হাসল। সে অফিসে এলো।

পিট ডেস্কের উপর পা তুলে ঝিমোচ্ছে। এডিকে দেখে অবাক।

এডি বলল, এই যে পিট, কেমন চলছে?

ব্যবসা বড় মন্দাবন্দুক যুদ্ধ সবাইকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে।

 হ্যাঁ, কাগজে পড়েছি। রিলির আজকাল খুব নামডাক শোনা যাচ্ছে।

সমস্ত ব্যাপারটাই রহস্যজনক। রিলি কখনো এ ধরনের ভয়ঙ্কর কাজ করেনি। তবে যদি স্লিম হতো–

স্লিম এক সপ্তাহ হলো এ শহরের বাইরে। ওর সঙ্গে আমরাও ছিলাম।

ঠিক ঠিক, তুমি বাইরে ছিলে। তবে তোমাকে আশেপাশে দেখা গেছে। তবু বলব, ব্লানডিস মেয়েটাকে হরণ করলে আমি অনেক সাবধানে থাকতাম। পুলিশ ওৎ পেতে আছে। তারা টাকা দিয়ে মেয়েটাকে ফেরৎ পাওয়ার অপেক্ষা করছে। পেলেই যুদ্ধ শুরু হবে।

রিলির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে।

তা যা বলেছ।

আচ্ছা পিট অ্যানা বোর্গ নামে কোন মেয়েকে চেন? এডি কথায় কথায় বলল।

হ্যাঁ চিনি, কেন কি হয়েছে?

 ওর সম্পর্কে কিছু জানতে চাই। মেয়েটা কে?

ধর না একজন সম্ভ্রান্ত মহিলা

 চুপ কর। ওর চেহারা আমি দেখেছি।

সত্যিই তুমি জানতে আগ্রহী?

 সত্যি, ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যানা রিলির নিরাপত্তার জন্য সঙ্গে বন্দুক নিয়ে ঘোরে।

কার নিরাপত্তার জন্য বললে?

রিলির।

এডি চমকে ওঠে, হে ঈশ্বর

জানতাম তুমি অবাক হবে।

অ্যানা রিলির সঙ্গে থাকে না কেন?

 ব্লনডিসের মেয়েটাকে নিয়ে রিলি অ্যানার ফ্ল্যাট ছেড়েছে।

 মেয়েটা লক্ষ্য করছে, জলটা কোথায় গড়ায়।

 যা খুশি হোক গে, তবে অ্যানাকে কষ্ট পেতে হবে।

ও এখন প্যালেস হোটেলেই আছে।

তোমার এত আগ্রহ অ্যানার সম্বন্ধে, ব্যাপার, কি বলতো?

মা জানতে চেয়েছেন।

 পিট বলল, মাও এর মধ্যে আছেন। ও হ্যাঁ মেয়েটা ওখানেই আছে? আজকাল দুজন লোক ওর ঘর পাহারা দেয়। খবরের কাগজের লোক না জানলেও পুলিশ জানে। হেলী যখন খুন হয় ও তখন হোটেলের ভিতরেই ছিল।

তাহলে মেয়েটাকে ওরা ধরছে না কেন?

আসলে গোয়েন্দাদের ধারণা রিলি এসেছিল অ্যানার কাছে হেলী পুলিশকে বলে দিতেই ওরা তাকে খুন করেছে। তাই অ্যানার উপর নজর রাখছে যাতে রিলিকে ধরা যায়।

শোন পিট, আমি এই মেয়েছেলেটার সঙ্গে দেখা করতে চাই…তুমি আমাকে সাহায্য কর। আমি চাই না পুলিশের সন্দেহে পড়ি। তাই ফোন করে তুমি ওকে এখানে আসতে বল।

পিট আপত্তি করতেই এড়িবাধা দিয়ে বলল,কাজটা করতে বলেছেন, ফোনের খরচ দেবো।

পিট ইতস্ততঃকরে ফোনে প্যালেস হোটেলে যোগাযোগ করে মিস বোর্গকে চাই–কে অ্যানা কথা বলছ। কসমস থেকে পিট বলছি। জরুরী দরকার তুমি এখানে চলে এসো। সে বলল, দশ মিনিটের মধ্যে আসছে।

ওরা তোমার কথা বেশ শোনে, তাই না পিট?

ওর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে। মা সাহায্য করতে বলেছেন বলেই করলাম।

ভয় নেই, আমি বাড়াবাড়ি করব না–এখন তুমি কেটে পড় দেখি।

পিট চলে যেতেই এডি চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিল।

দরজা ঠেলে অনেকক্ষণ পর আনা বোর্গ ভিতরে ঢুকল। ঘাবড়েছে বলে মনে হল না। সঙ্গে ব্যাগে বন্দুক আছে।

হ্যালো! এডি বলল ব্যস্ত হয়ো না। শুধু তোমার ব্যাগটা ডেস্কের উপর–আপত্তি নেই তো। তুমি তো সবসময় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা কর তাই না?

অ্যানা ব্যাগটা ডেস্কের উপর রেখে চেয়ারে বসল।

এডিব্যাগটা পরীক্ষা করে ড্রয়ারে ঢুকিয়ে জিজ্ঞাসা করল–আমায় তুমি চেনো?তুমি ভিজিটিং কার্ড রাস্তায় ফেলেছিলে–জানতে চাইছি রিলি কোথায়?

সে বলল, কি দরকার তার খবরে? ওরা কোথায় গা ঢাকা দিয়েছে–আপনি ডেকেছেন তাই এসেছি।

যদি আমায় বন্ধুভাবে নাও তাহলে একটু ভালভাবে কথা বলতে পারি।

 অ্যানা বলল–রিলি কোথায়?

কি করে জানলে রিলি কোথায় আছে আমি জানি? রিলি যে রাতে ব্লানডিসকে হরণ করেছিল সে রাতে ওর সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছিল?

জানলে কি করে?

আপনি দেখছি বেশ চালাক। আগে যা ঘটেছে আগে আমি বলব তারপর আপনি বলবেন। জনির ডেরা থেকে রিলি আমায় ফোন করেছিল। পরে জানতে পারি রিলি ও মেয়েটা সেই রাতটা ওখানেই ছিল। তারপর কোথায় গেছে বলতে পারল না।

তাতে হয়েছে কি?

রিলি বেপাত্তা। আমাকে কষ্টের মধ্যে ফেলে রিলি কোথায় আছে তাই আর কি!

আমার ধারণা পুলিশও তাই জানতে চাইছে। মেয়েটাকে পেয়ে ওর ভাগ্য খুলে গেছে।

অ্যানা দাঁড়িয়ে বলল–কি জানতে চান তাই বলুন। বকবক বন্ধ করুন।

 ব্যস্ত হয়ো না।

শুধু জানি তুমি রিলির পোষা মেয়ে। তোমাকে অসহায় অবস্থায় ফেলে পালিয়েছে।

 রিলি মানুষ খারাপ নয়, আমাকে ছেড়ে পালাতে পারে না।

এডি বলল, সেতুমি ভালই জান।ব্লানডিসকেওর সঙ্গে দেখেছিলাম।রিলি ওর শুশ্রূষা করছিল। মেয়েটার সারা গায়ে ওর হাত ঘুরে বেড়াচ্ছিল।

অ্যানা এডির গালে চড় কষাল। এডি হেসে গালে হাত বুলাল।

অ্যানা ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলল, রিলি অমন নয়। অনেকদিন ওর কোন খবর পাইনি। যদি দেখি সত্যি ও আমায় ত্যাগ করেছে তাহলে আমি কি করব? আমার হাতে টাকা পয়সা নেই।

ভেব না। অর্থই জীবনের সব নয়–তোমাকে আমি সাহায্য করব।

এ অবিশ্বাস্য। আপনি মিথ্যা বলছেন।

এডি বুঝল কাজ হয়ে গেছে। ব্যাগের মধ্যে কিছু নোট দিয়ে অ্যানাকে ব্যাগটা ফেরত দিল। দরজা পর্যন্ত এগিয়ে বলল, বিদায়। কিছু মনে কর না। যা বললাম মিথ্যাও হতে পারে। রিলির প্রতীক্ষায় থাক। যখন ক্লান্তি বোধ করবে তখন পিটের মারফত আমায় খবর দেবে।

ক্লিন এয়ারফ্লোতে বসে। বন্দুকটা তার পাশে আর টর্চটা তার কোলের উপর। মনে করেছিল কাজটা চটপট হয়ে যাবে। মা সেইরকমই বুঝিয়েছিল। অন্ধকারে একটা গাছের তলায় এয়ারফ্লো। রেখেছে। এখানে বসে সে জন ব্লনডিসের অর্থের অপেক্ষা করছিল। ঘণ্টা কয়েক আগে ডক ব্লানডিসকে ফোন করে জানিয়েছে। কাজটা ভালভাবে করলে মা তাকে অতিরিক্ত পাঁচশো ডলার দেবেন বলেছেন। সে বারবার ঘড়ি দেখতে লাগল।

সহসা দূরে একটা গাড়ির হেডলাইট দেখা গেল। গাড়িটা প্রচণ্ড বেগে আসছে। ক্লিন টর্চটা জ্বালাতে আর নেবাতে লাগল। গাড়িটা নিকটে এসেই গতিবেগ কমিয়ে জানলা দিয়ে মোটা চামড়ার ব্যাগটা ফেলে দিলেন। জন ব্লানডিস আদেশ পালন করেছেন।

রাস্তার এপাশে-ওপাশে তাকিয়ে ক্লিন কোন গাড়ির অস্তিত্ব দেখতে পেল না। ব্যাগটা তুলে এয়ারফ্লোতে উঠে গাড়ি গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে ছুটল।

তার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। ক্লিন ঘরে ঢুকে টেবিলের উপরে ব্যাগটা রাখল। তিনি ব্যাগটা খুলে নোটের তাড়াগুলো বের করলেন। স্লিম লোভী দৃষ্টিতে টাকাগুলো দেখল।

মা বললেন, টাকা আমাদের হাতে এসে গেছে। কিন্তু এ টাকা আমরা খরচ করতে পারব না। অর্ধেক মূল্যে এ টাকা কাউকে বিক্রি করে দিতে হবে। আমরা বিনিময়ে দুশো পঞ্চাশ হাজার ডলার আসল টাকা পাবো।

এডি বলল, কে এত ঝুঁকি নিয়ে অর্ধেক টাকা দেবে?

ওপি এতক্ষণ মায়ের বক্তব্য শুনছিল। উত্তেজনায় সে বলল, সব টাকা ভাগ করবেন না? অর্ধেক টাকা এমন কি বেশি?

ডক আর ক্লিন মাথা নেড়ে সায় দেয়। স্লিম কিছু বলল না। সে ভাবছে বন্দি মিস ব্লানডিসের কথা, তার শরীরের রক্ত উত্তাল হয়ে উঠছে।

মা সকলের দিকে তাকালেন–এক মিনিট। টাকাটা তোমরা ভাগ করে নিতে চাইছ তাই না? কিন্তু তোমরা বাধ্য হয়ে নেবে। বুঝতে পারছ না কত বড় বিপদ তোমাদের, আমি বুঝতে পারছি।

দুশ পঞ্চাশ ডলারের জন্য ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। সানবামের সঙ্গে টাকা বদলে নেব ঠিক করেছি। ফেরার পথে সে এখানেই আছে তার অনেক পথ জানা আছে সে এই টাকা খরচ করতে পারবে। কিন্তু আমরা পারব না।

সকলে সকলের দিকে তাকাল। এডি বলল ঠিক আছে মা আর কিছু বলবেন?

ক্লিন বলল টাকা আমাদের হাতে এখন ওগুলো নিয়ে কি করবেন?

তোমাদের মধ্যে ভাগ করে দেবো। একশো ডলার নিজেদের মধ্যে ভাগ করবো। বাকী টাকা নিয়ে ব্যবসা করবো। ব্যবসায় তোমরা আমাকে সাহায্য করবে। চারিদিক স্বাভাবিক হলে সবকিছু গুটিয়ে এ শহর ছেড়ে চলে যাবো।

একটা ক্লাব খুলব সেখানে। ক্লাবে মেয়েরা থাকবে। জুয়ার আড্ডা থাকবে…আমার কথাটা তোমরা সবাই ভাল করে চিন্তা করো। সামনে একটা বিরাট সুযোগ সানবাম টাকা নিয়ে পৌঁছলেই তোমরা হাতে পাবে।–ভেবে নাও কিভাবে খরচ করবে।

এডি জিজ্ঞাসা করল–রানডিসের মেয়েকে আমরা কিভাবে ফেরৎ পাঠাবো?

ঘরে নিস্তব্ধতা, মা তার দিকে তাকালেন। স্লিম শক্ত হয়ে বসে রইল। বাকী সকলে অস্বক্তিবোধ করল। মা ধীর কণ্ঠে বললেন–তোমাকে বলেছিলাম না এ ব্যাপারে নাক গলিও না?

টাকা পেয়ে গেছেন, মেয়েটাকে এবার ছেড়ে দেওয়া উচিত।

মা জানতে চাইলেন। একথা কে বলল? এডি ইতস্ততঃ করে এসব কি হচ্ছে? আপনি এভাবে টাকা নষ্ট করতে পারেন না। শুনুন মা, আপনি কি বুঝতে পারছেন না, ব্যবসার কি ক্ষতি করছেন?

মেয়েটাকে ছেড়ে দিলে বিপদ আসবে। কেউ আর আমাদের বিশ্বাস করে টাকা দেবে না। ব্যবসার বারোটা বেজে যাবে। মেয়েটাকে ছেড়ে দিলে সব ফাস হয়ে যাবে। ফেডারাল এজেন্ট আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। নিজের সর্বনাশ তুমি ডেকে আনতে পারো–আমি পারি না, তাই বলব চুপ করে থাকো।

এডি চুপ রইল। স্লিম উত্তেজনায় চিৎকার করে বলল মেয়েটাকে এবার আমার হাতে ছেড়ে দাও মা।

মা বললেন, চুপ করো। মেয়েটা বশে এসেছে–তাই চুপ করে থাক।

লাথি মেরে টেবিল সরিয়ে পকেট থেকে বন্দুক বার করে স্লিম মাকে বলল, মেয়েটা আমার। ওকে নিয়ে আর ব্যবসা করতে পারবে না বুঝেছ।

নিশ্চয়ই বুঝেছি।

কেউ বাধা দেবার চেষ্টা করবে না।

স্লিম এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিল। তার পা কাঁপছিল। সে সিঁড়ি দিয়ে উঠে মিস ব্লানডিসের ঘরের দরজা খুলল।

মিস ব্লানডিস পায়চারি করছিল। পরণে ড্রেসিং গাউন। দুজনে দুজনের দিকে তাকাল। কোনরকম ব্যস্ততা না করে ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করল।

মিস ব্লানডিস বলল, আমার কিছু পানীয় চাই। আমি পান না করা অবধি আমার কাছে আসবে না। মদ না খাওয়া পর্যন্ত আমি এসব সহ্য করতে পারি না।

কিছু না বলে স্লিম ফ্লাস্কটা বিছানায় ছুঁড়ে দিল। মদ খেয়ে ব্লানডিস স্লিমের দিকে তাকাল।

সে টলতে টলতে বলল ভীতু কোথাকার?–ভীতু ভীতু। কিছুনা করে ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? আলোটা নিভিয়ে দাও আমি তোমাকে দেখতে চাই না। তুমি এগিয়ে আসছ দেখে আমার ইচ্ছে হয় পুরুষ হতে। মেঝের উপর ফ্লাস্কটা ছুঁড়তেই হুইস্কিটা গড়িয়ে পড়ল। বিছানায় শুয়ে কাঁদতে লাগল। আমাকে একা থাকতে দিতে পার না?–আরো কিছুক্ষণ একা, ছুঁয়ো না-দয়া করে।

ঝুলন্ত আলোটা নিভে যেতেই মিস ব্লানডিস ঢাকা পড়ে গেল। অনুভব করল স্লিম তাকে চিৎ করতে চাইছে। তার মাথাটা খাটের পাশে ঝুলছে। অন্ধকারে তার চোখে জল পড়তে লাগল। হঠাৎ তপ্ত বাতাস তার শরীরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। হিংস্র আর অসম্ভব ভারী কিছু তাকে বিছানায় চেপে ধরল। সে শক্তি হারিয়ে বিছানায় যেন তলিয়ে যেতে লাগল। সে স্লিমকে বলল, তুমি আমায় ব্যথা দিচ্ছবুঝতে পারছ নাব্যথা দিচ্ছ।