ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
০১.
মিঃ অ্যান্টহুইসলকে মড স্টেশনে অভ্যর্থনা জানাল। স্টেশনের বাইরের দিকে যেতে বলল, টিমোথি রিচার্ডের মৃত্যুতে খুব আঘাত পেয়েছে। ও বংশের শেষ প্রতিনিধি বলে মৃত্যু ভয় ওকে পেয়ে বসেছে।
অন্ত্যেষ্টির পর ফেরার পথে গাড়ীটা খারাপ হয়ে যায়। টিমোথিকে ফোন করে জানিয়ে দিলাম পরের সকালের আগে আমি বাড়ি পৌঁছতে পারবো না। কখন যে কি ঘটে যায়। কোরার খুনটা যেমন হল। টিমোথিকে সামলোনো দায়।
মড বলছিলো, আমি বিয়ের পর থেকে কোরাকে দেখেছিলাম না। বেচারা মনে হল। আচ্ছা ওর কাছে ছোট্ট কেউ আশ্রিত ছিল?
কি বলতে চাইছ বলত?
আমি বললাম, এমন কাউকে রেখেছিল যে ওকে খুন করে টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে গেছে। বাইরের লোক হলে রাত্রে ঢুকত। কিন্তু এই দুপুর বেলায় বাইরের লোকের পক্ষে জানলা ভেঙে ঢোকা অস্বাভাবিক।
ওখানে দুজন ভদ্রমহিলা ছিলেন।
কিন্তু কোরার টাকা পয়সায় যদি কারুর লোভ থাকত তবে দুজনেই যখন বেরিয়ে যেত তখন নিশ্চিন্তে চুরি করতে পারত।
তাহলে তুমি ভাবছ, কোরাকে খুন করার প্রয়োজন ছিল না।
ব্যাপারটা অসম্ভব মনে হয়।
মনে মনে ভাবতে লাগলো মিঃ অ্যান্টহুইসল পৃথিবীতে অনেক অকারণ খুনের রেকর্ড আছে। তার নিজের ধারণায় খুন অনেক রকম হতে পারে, কেউ হিংসা থেকে, আত্ম গর্ব থেকে, ক্ষমতার লোভে, কেউ নারীর প্রতি মোহে খুন করে। কারুর খুনের নেশাও থাকতে পারে।
মড বলল, আচ্ছা টিমোথিকে তদন্তের সময় উপস্থিত থাকতেই হবে? ডাক্তারের সার্টিফিকেট দেখালে চলবে না?
ও নিয়ে চিন্তা কোর না। তারা এবার একটা সুন্দর জর্জিয়ান বাড়ির সামনে এল।
কোনো চাকর নেই মড বলল, একটা ছিল, সে একমাস আগে চলে গেছে। ওর কাছে ফোনটা রেখে যাই, যাতে দরকার হলে ডাক্তার ডাকতে পারে।
মড বসার ঘরে ঢুকে মিঃ অ্যান্টহুইসলকে রেখে চলে গেল বাড়িতে। কয়েক মিনিট পরে ফিরে এল।
অ্যান্টহুইসল জিজ্ঞেস করলো, টিমোথির কি হল?
ও চা খেয়ে বিশ্রাম করছে, ওকে বেশি উত্তেজিত করবেন না।
.
০২.
অ্যান্টহুইসল তুমি এসে ভালো করেছ। আমি বেশি কথা বলতে পারব না, ডাক্তার বারণ করেছে। চিন্তা করতে বারণ করেছে। রিচার্ড মারা গেল, ঐরকম একটা উইল করে গেল। তারপর কোরা মরল, উঃ কি ভীষণ! কুড়ুল নিয়ে যুদ্ধের পর কিছু বদমাস লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে আর অসহায় মেয়েদের খুন করছে, কেউ ওদের দমন করার কথাও ভাববে না।
মড ঘর থেকে চলে গেল।
চেয়ারে শুয়ে টিমোথি বলল, মহিলা গেছে ভালো হয়েছে, এবারে আমরা ঠিকমত কথাবার্তা বলতে পারব।
কোরার সম্পত্তি পাঁচজনের মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে। বিরক্তি দেখা গেল টিমোথির মুখে।
কিন্তু আমিই তো এই বংশের শেষ বংশধর।
তাকে উইলের শর্তগুলো বুঝিয়ে দিলেন মিঃ অ্যান্টহুইসল। আমি তোমাকে উইলের এক কপি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
সবচেয়ে আমাকে বেশি আঘাত করেছে রিচার্ডের উইলের শর্তগুলো।
হা, তোমার আমার মত হয়নি।
স্বাভাবিক মার্টিমারের মৃত্যুর পর আমিই সম্পত্তি পাব আশা করেছিলাম।
রিচার্ড কোনোদিন তা বলেছিল?
তেমন কোনো কথা বলেনি। তবে সম্পত্তির ব্যাপারে আমার সাথে আলোচনা করত। তবে শেষ এবারেনথীর বংশধর হিসাবে সম্পত্তির দেখাশোনার দায়িত্ব আমিই পাব আশা করেছিলাম।
অ্যান্টহুইসল বুঝতে পারলো টিমোথি আশা করেছিল রিচার্ডের পরে সেই সমস্ত সম্পত্তির মালিক হবে।
তাকে রিচার্ড তা করে যায়নি। কি এরকম কথা রিচার্ড প্রথমে ভেবেছিল তারপরে মত পরিবর্তন করেছিল?
বেড়ালের মারামারির একটা শব্দ হল বাইরে। উত্তেজিত টিমোথি জানলায় উঠে গিয়ে একটা বই নিয়ে ছুঁড়ে মারল।
যত সব ফুলের কেয়ারী নষ্ট করে দিচ্ছে।
বসে আবার বদল : অ্যান্টহুইসল একটু মদ খাও।
না-না, আমি এইমাত্র চা খেলাম।
আমি শুনলাম, অন্ত্যেষ্টি থেকে ফেরার পথে ওর গাড়ী নাকি ব্রেকডাউন হয়ে গেছিল।
হা হয়েছিল। এসে টেবিলে একটা কাগজ দেখলাম, ঠিক মেয়েটা লিখে গেছে ম্যাডাম রাত্রে ফিরবেন না।
টিমোথি ভাবতে লাগল দুঃখিতভাবে।
কোরা অন্ত্যেষ্টির দিন একটা কাণ্ড করে গেছে। সে বলেছে রিচার্ডকে খুন করা হয়েছে, তাই না। বোধহয় মড তোমাকে বলেছে। অ্যান্টহুইসল বললেন।
হ্যাঁ, আমি শুনেছি। ও বাচ্চা অবস্থায় কি রকম কথাবার্তা বলত তুমি জান তো? আমাকে ফোন করে আমার খবর নিল, আর উইলের কথাটা জানাল। আমি খুব আঘাত পেয়েছিলাম, জানো। এটা রিচার্ডের আমার প্রতি ঘৃণার ফল। যদিও মৃত সম্বন্ধে কিছু বলা ঠিক নয়।
তারপর ফিরে এসে মড বলল, ডিয়ার, অ্যান্টহুইসল অনেকক্ষণ কথা বলেছেন। এবার তোমার বিশ্রাম দরকার।
হা হয়ে গেছে। যদিও পুলিশের উপর আমার বিশেষ বিশ্বাস নেই। আমাকে নিয়ে যেন টানাটানি না করে। কোরার সমাধির বন্দোবস্ত কর।
আচ্ছা তা আমি দেখব।
অ্যান্টহুইসল পরদিন সকালের ট্রেনে লণ্ডনে ফিরে এলো।
বাড়িতে এসে তিনি তার এক বন্ধুকে ফোন করলেন।
.
সপ্তম পরিচ্ছেদ
০১.
আমি তোমার নিমন্ত্রণ পেয়ে খুব খুশী হয়েছি। বন্ধুর হাতে চাপ দিলেন অ্যান্টহুইসল।
আমি আজ গ্রাম থেকে ফিরলাম, চেয়ারে বসে অ্যান্টহুইসল বললেন।
তোমার কথা ডিনার খাওয়ার পর শুনব।
খাবার নিয়ে এল জর্জের।
মিঃ অ্যান্টহুইসল সামান্য চিন্তা করে আরম্ভ করলেন। জানি না ব্যাপারটা কিরকম দাঁড়াবে। তবে আমি একটা সমাধান চাই। আমি তোমার কাছে সব বলছি? তারপরে তুমি তোমার মতামত জানিও।
বলা শেষ হলে এরকুল বলল : খুব পরিষ্কার মনে হচ্ছে, তুমি বলছ রিচার্ড খুন হয়েছে। এটার ভিত্তি হচ্ছে কোরার কথাটা। অন্ত্যেষ্টির পরের দিনই কোরার মৃত্যু অস্বাভাবিক নাও হতে পারে। রিচার্ড হঠাৎ মারা গেছেন ঠিক। তবে বড় একটা ফ্যামিলি ডাক্তার ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছে। রিচার্ডকে পোড়ানো হয়েছে না সমাধি দেওয়া হয়েছে?
পোড়ানো হয়েছে।
আর এখানে প্রধান ব্যাপার হল, তুমি বিশ্বাস করেছ কোরা সত্যি কথা বলেছে।
হ্যাঁ, আমি করেছি।
কেন?
কেন? অ্যান্টহুইসল যেন একটু হতভম্ব হলো। কারণ হচ্ছে তুমি রিচার্ডের মৃত্যুর ধরনে একটু সন্দেহ করেছিলে।
না না, বিন্দুমাত্র না।
তাহলে কোরার কথায়?
হা কোরা সব সময় অস্বস্তিকর সত্যি কথা বলত। যা সাধারণত কেউ বলতে চায় না।
মিঃ অ্যান্টহুইসল কেঁপে উঠলেন।
এখন বল কোরা যখন কথাটা বলল তখন সবাই কি প্রতিবাদ করেছিল?
হা করেছিল।
তখন একটু ঘাবড়ে গিয়ে মেয়েটা বলল, না না, আমি ঠিক বলিনি। তবে ও যা বলেছিল সে থেকে ধারণা হয়েছিল।
আচ্ছা তুমি কারুর মুখে অস্বাভাবিক কিছু দেখেছিলে?
না। পরদিন কোরা আবার খুন হল, বল দেখি এটা কি কার্য কারণ সম্পর্ক?
আবার অ্যান্টহুইসল শিহরিত হলেন।
তাহলে তুমি মনে করছ এটা একটা খুন।
গম্ভীরভাবে পোয়ারো বলল : হ্যাঁ এটা তদন্তের ব্যাপার, তুমি কিছু করেছ? পুলিশকে জানিয়েছ?
না, যদি রিচার্ডকে খুন করা হয়ে থাকে, তবে আমি সংসারের প্রতিনিধি হিসাবে এগোতে পারি।
ওর মৃত্যুর সময় এখানে কে ছিলো?
একজন পুরোন বৃদ্ধ বাটলার, একজন রাধুনী, আর একটা কাজের মেয়ে।
আবার পোয়ারো বলে চলল, বিষ দিয়ে যদি হয় তাহলে অনেক ধরনের বিষ হতে পারে। বোধহয় নার্কোটিকই হবে। সে যাতে ঘুমের মধ্যেই মারা যায় এবং কারুর সন্দেহ না হয়।
যাই হোক না কেন তা প্রমাণ করা মুশকিল।
হা রিচার্ডের ক্ষেত্রে অসম্ভব হলেও, কোরার ক্ষেত্রে অসম্ভব নয়। কোরার হত্যাকারীকে জানতে পারলে অনেক প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। তারপর অ্যান্টহুইসল কে বলল, তুমি ইতিমধ্যেই কিছুটা এগিয়েছ মনে হয়?
হা খুব সামান্য, আমি আমার সন্দেহের গণ্ডীটা কমিয়ে আনতে চেষ্টা করেছিলাম। আমি অনুসন্ধান করেছিলাম কোরার মৃত্যুর দিন বিকেলে এবারেনথী আত্মীয়দের মধ্যে বাড়িতে কেউ ছিল না।
কি করছিল?
জর্জ ক্রসফিল্ড হাপার্কের রেসে গেছিল। রোজামণ্ড গেছিল বাজার করতে। সুসান আর গ্রেগরী সারাদিন তাদের বাড়িতে ছিল। টিমোথি পঙ্গু, সে তার ইয়র্ক শায়ারের বাড়িতে ছিল। তার স্ত্রী মড এণ্ডারবি থেকে গাড়ী করে ফিরছিল।
ওদের কথাগুলো সত্যি?
কথাগুলো সত্যি কিনা তা আমি তলিয়ে বুঝিনি। তবে আমার ধারণা হল, জর্জ বোধহয় সেদিন রেস খেলতে যায়নি। আমি জানি, অনেক অপরাধী বেশি কথা বলে তাদের অবস্থা খারাপ করে ফেলে।
আচ্ছা ওর মামার মৃত্যুর সময় জর্জের কি টাকার জরুরী ছিল?
আমার ধারণা ওর টাকার জরুরী দরকার ছিল। যদিও কোনো প্রমাণ নেই। তবে বেশ সন্দেহ হয় যে ও তার মক্কেলের টাকা খরচ করে ফেলেছিল এবং কাঠগোড়ায় যাওয়ার অবস্থায় পৌঁছে গেছিল, আমার ধারণা রিচার্ড খুব ভালো মনুষ্য চরিত্র বুঝত এবং সে জর্জের উপর আস্থা রাখতে পারেনি।
তার মা ল ইয়ার বলতে লাগলেন, একজন সন্দেহজনক চরিত্রের লোককে বিয়ে করেছিল।
সে থামল, আবার আরম্ভ করল।
রোজমণ্ড মেয়েটা ভালো, যে কুড়ুল দিয়ে কাউকে খুন করতে পারে না। তার রহস্যজনক উচ্চাকাঙ্খী, কম কথা বলে। ওর সম্বন্ধে খুব কম কথা বলে, যদিও সন্দেহ করা যায় না।
ওর স্ত্রী সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই। না না, ও কুড়ুল দিয়ে খুন করতে পারে না।
অন্য মেয়েটা?
সুসান? সুসান একেবারে প্রথম মেয়ে। আমি ওকে বিরাট ক্ষমতাশালী বলব।
স্বামী কেমন?
স্বামীর ব্যক্তিত্ব খুব মধুর নয়। আর সুসান
হ্যাঁ বল।
সুসান তার মামার মতই, বুদ্ধিমান তৎপর ও চটপটে। তবে তার মামার মত হৃদয়গুণ নেই মনে হয়।
ও তার স্বামীকে ভালোবাসে?
খুব ভালোবাসে, তবেপোয়ারে আমার যেন মনে হয় না সুসান
তুমি জর্জকে প্রেসার কর, পোয়ারো বলল।
মিসেস এবারেনথী একজন ভালো মেকানিক। আর মিঃ টিমোথি ঠিক চালু নন। তিনি চলাফেরা করতে পারেন এবং তাড়াতাড়ি গায়ের জোর দিয়ে কোনো কাজও করতে পারেন। সে তার ভাইয়ের সাফল্যে একটু হিংসা করত।
হ্যাঁ, তবে অন্ত্যেষ্টির পরে কোরার কথাটা নিয়ে ঠাট্টাও করেছে। ষষ্ঠ জন সম্বন্ধে বল।
হেলেন? মিসেস লিও? আমি তাকে সন্দেহ করি না। সে এণ্ডারবিতে তিন চাকরের সাথে ছিল।
পোয়ারো বলল, আমাকে কি করতে বলছ?
পোয়ারো আমি সত্যটা জানতে চাই।
পোয়ারো হাসল।
ঠিক আছে ব্যাপারটা আমাকেও উৎসাহিত করেছে।
তুমি রিচার্ডের ডাক্তারের সাথে দেখা কর, ওকে চেন?
কম চিনি।
কেমন লোক?
মধ্যবয়সী দক্ষ। বেশ ভালো লোক।
তাহলে ওর সাথে দেখা কর। জিজ্ঞেস করবে রিচার্ড মৃত্যুর সময়ের আগে কি ওষুধ খাচ্ছিল। আর গিলফ্রিস্ট বিয়ের ব্যাপারটা ঠিক শুনেছে তো? আচ্ছা এটা কি তোমার মনে হয় মিস্ গিলফ্রিস্টের জীবনের উপর কোনো ভয় আছে?
না তা বোধহয় নেই।
শোন, গিলফ্রিস্টের একা ঐ কটেজে থাকা আমি ঠিক নিরাপদ মনে করছি না।
সুসান ওখানে যাচ্ছে মনে হয়।
তাহলে মিসেস্ ব্যাঙ্ক যাচ্ছেন?
হা, সে কোরার জিনিপত্রগুলো দেখতে চায়।
ঠিক আছে। তোমাকে যা বললাম করবে। এখন থেকে কেসটার ভার আমি নিলাম।
.
অষ্টম পরিচ্ছেদ
০১.
মিঃ অ্যান্টহুইসল ডঃ ল্যারবির দিকে তাকিয়েছিলেন।
যাইহোক মিঃ অ্যান্টহুইসল আরম্ভ করলো : আমরা একটা গোলমেলে ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করব। প্রশ্নটা হল রিচার্ডের কি স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে?
ডঃ ল্যারবি বলল, হ্যাঁ কেন? আমি তো সার্টিফিকেট দিয়েছি।
এবারেনথী খুব অসুস্থ ছিলেন, আমি বলেছিলাম তিনি আরও দুবছর বাঁচবেন, ও হঠাৎই মারা গেছে নিশ্চয়ই। কিন্তু সেটা তো অস্বাভাবিক নয়।
তা তো আমি মানছি। একজন মানুষ তার দিন শেষ হয়ে গেছে ভেবে তার মৃত্যুকে কি এগিয়ে আনতে পারে, অথবা অন্য কেউ তার হয়ে তার মৃত্যুকে এগিয়ে দিতে পারে?
আত্মহত্যা, রিচার্ড আত্মহত্যা করার মত লোক ছিল না।
তাহলে তুমি আমাকে বলছ এরকম ব্যাপার অসম্ভব।
রিচার্ড অনেকের মতে ঘুমের মধ্যে মারা গেছিল। আত্মহত্যা সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই। কেউ যদি অটোন্সি করাতে চায়–
ডাক্তারের মুখ আস্তে আস্তে লাল হয়ে যাচ্ছিল। অ্যান্টহুইসল বললেন : নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, তবে এমন কোনো প্রমাণ থাকতে পারে, ধর তিনি এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলেছেন
আত্মহত্যার কথা বলেছেন? এরকম কথা আমাকে অবাক করবে।
যদি তাই হয়, তবে তুমি কি এটাকে অসম্ভব বলতে পারবে?
না না, অসম্ভব বলতে পারি না, তবে আবার বলছি তাহলে আশ্চর্য হব।
আচ্ছা তার মৃত্যুটা যদি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে কি ধরনের ওষুধ ওর মৃত্যু ঘটাতে পারে?
অনেক ওষুধ হতে পারে, যেমন–নার্কোটিক।
ওর কাছে স্লিপিং পিল বা এই ধরনের কিছু ছিল?
হ্যাঁ, আমি ওকে স্লমবারি প্রেসক্রাইব করেছিলাম। সব সময় ও খেতো না। মাত্রার তিন চারগুণ খেলেও মৃত্যুর সম্ভবনা ছিল না।
আর কিছু প্রেসক্রাইব করেছিলে?
অনেক কিছু, যন্ত্রণার জন্য কিছু ভিটামিন ক্যাপসুল আর একটা হজমের মিক্সচার।
আচ্ছা ঐ ক্যাপসুলে আর কিছু ঢোকানো যেতে পারে?
কি বলতে চাইছ খুন?
জানি না, আমি জানতে চাই সম্ভব কিনা?
তোমার কি প্রমাণ আছে? কেন নেই, যে কথাটা বলেছিলে এবং যে শুনেছিল দুজনেই মারা গেছে, আমি শুধু জানতে চাই ওকে বিষ দিয়ে মারা সম্ভব কিনা?
ল্যারবি উঠে পায়চারি করতে লাগল।
আমি অস্বীকার করছি না। কেউ ক্যাপসুল থেকে ওষুধ বার করে নিয়ে নিকোটিন ঢুকিয়ে দিতে পারে।
আচ্ছা রিচার্ড কোনোদিন তোমাকে বলেছে তার কোনো আত্মীয় তার মৃত্যু চায়।
না, কিছু বলেনি।
এবার কোরার কথা বললেন অ্যান্টহুইসল। ল্যারবির মুখ আলোকিত হল।
তাই বল, এই মহিলার মনের কোনো ভারসাম্য নেই, সবকিছু বলতে পারে।
হতে পারে, তবে দুর্ভাগ্যবশতঃ ওকে আর পাওয়া যাচ্ছে না, ও খুন হয়েছে।
কি বললেন খুন হয়েছে?
তুমি কাগজে পড়নি?
পড়েছি তবে ও যে রিচার্ডের আত্মীয় হতে পারে তা মনে হয়নি।
.
০২.
অ্যান্টহুইসল এণ্ডারবিতে এসে ল্যান্সকম্বের সাথে কথা বলতে চাইলেন।
বৃদ্ধ বাটলারের পরিকল্পনা তিনি জিজ্ঞেস করলেন।
মিসেস লিও বাড়িটা বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত আমাকে এখানে থাকতে বলেছেন। ল্যান্সকম্ব নিশ্বাস ফেলল, ওর কতদিনের বাড়িটা বিক্রি হয়ে যাবে।
ল্যান্সকম্ব এস্টেটও বিক্রি করে দিতে হবে, কিন্তু তোমার লিগাসি?
না না আমি অভিযোগ করছি না, তবে আজকাল একটা বাড়ি পাওয়ার যা অসুবিধে। অবশ্য আমার এক ভাইঝি ওর কাছে থাকতে বলেছে।
হাঁ, আমাদের মত বৃদ্ধদের পক্ষে এই পৃথিবীটা বড় কষ্টকর। পুরোন বন্ধুদের দেখতে ইচ্ছে করে। আচ্ছা মরার আগে তাকে আর তাঁর মত দেখতে ছিল না।
হা অসুখ হলে এরকম হয়। সম্ভবত রিচার্ডও এমন কারুর কথা বলত যে তার ক্ষতি করতে পারে? অথবা ভাবত তার খাবারে বিষ মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে?
বিস্মিত হলেন ল্যান্সকম্ব।
না, আমি এ ধরনের কোনো কথা শুনিনি।
প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলেন অ্যান্টহুইসল। রিচার্ড মৃত্যুর আগে কিছু আত্মীয়দের এখানে এনে রেখেছিলেন। তাই না?
হা।
ওদের প্রতি রিচার্ড সন্তুষ্ট ছিলো তো?
আমি বলতে পারছি না স্যার।
কিছুক্ষণ ভেবে ল্যান্সকম্ব বলল : স্যার কিছু হয়েছে কি?
আমি কিছু জানি না, আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি, তুমি কি মনে কর কিছু গোলমাল আছে?
অন্ত্যেষ্টির পর থেকে কেমন যেন সব অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। মিসেস টিমোথি বা মিসেস্ লিও সেই আগের মত নেই।
হা স্যার উইলটা ভালো হয়েছে।
আচ্ছা তোমাকে যা জিজ্ঞেস করলাম তার উত্তর দেবে কি?
প্রভু জর্জের ব্যবহারে হতাশ হয়েছিলেন, তারপরে স্বামীদের সাথে মেয়েরা এলেন। সুসান ওদের মধ্যে বেশ বুদ্ধিমান। তবে আমার মতে তিনি সুসানের স্বামীকে ঠিক পছন্দ করতেন না।
খুব বেশি বলতে পারছি না, ওরা দুজনেই বেশ সুন্দর আর হাসিখুশী, প্রভু ওদের নিয়ে আনন্দও পেয়েছিলেন, তবে। ইতস্তত করল বৃদ্ধ।
বল ল্যান্সকম্ব?
প্রভু নাটকের ছেলেমেয়েদের পছন্দ করতেন না।
তারপরে রিচার্ড কি করল?
সে সম্বন্ধে আমি বিশেষ কিছু জানি না। তিনি বলেছিলেন টিমোথির কাছে থেকে ঘুরে এসে সেন্ট মেরীতে যাবেন।
ওখান থেকে ফিরে এসে কিছু বলেছিলেন?
খুব বেশি কিছু না, ফিরে এসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।
ওদের সম্বন্ধে কিছু বলেননি?
তিনি আমায় সোজাসুজি কিছু বলতেন না। আমাকে বলার চেয়ে তিনি নিজের সাথে বেশি কথা বলতেন।
তোমাকে বিশ্বাস করতেন, বলে যাও।
আমার বিশেষ মনে নেই, টিমোথি টাকা নিয়ে কি করল, এই ধরনের একটা কথা। তারপর বললেন, মেয়েরা নিরানব্বই রকমভাবে বোকা হতে পারে আবার একশ রকম ভাবে চালাক হতে পারে। আরও বলেছিলেন, কারুর জন্য ফাঁদ পাতা ঠিক না, আর কিছু করার মত রাস্তাও দেখছি না। বোধ হয় তিনি বাগানের দুনম্বর মালীর কথা বলেছিলেন।
.
০৩.
অ্যান্টহুইসল ভাবলেন তিনি কথাটা হেলেনকে বলবেন। তারপর ওকে পুরোপুরি বিশ্বাস করবেন ঠিক করলেন।
তিনি প্রথমে বাড়ির জিনিসপত্র গুছিয়ে ঠিক করে রাখার জন্য ওকে ধন্যবাদ জানালেন। বাড়িটা বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। এইবার খদ্দের আসতে আরম্ভ করবে।
ব্যক্তিগত খদ্দের।
না, ওয়াই, ডব্লিউ-সি-এ, তরুণদের ক্লাব এবং জেয়ারসন ট্রাস্ট, এরাই খদ্দের।
বাড়িটা বিক্রি হওয়া পর্যন্ত তোমার এ বাড়িতে থাকতে কি অসুবিধে হবে?
না, অসুবিধে হবে না। লিওর স্মৃতি এ বাড়ির গায়ে লেগে আছে।
আর একটা ব্যাপার এরকুল পোয়ারো নামে আমার এক বন্ধু
ব্যগ্রভাবে হেলেন বলল, এরকুল পোয়ারো? তাহলে আপনি ভাবছেন?
ওকে চেন?
হা, তবে আমি জানতাম উনি মারা গেছেন।
ও খুব ভালো ভাবেই বেঁচে আছে।
তাহলে আপনি ভাবছেন, কোরা ঠিক কথা বলেছে?
রিচার্ড খুন হয়েছে।
মিঃ অ্যান্টহুইসল ভারমুক্ত হলেন তার মন খোলসা করে।
হেলেন বলল : ওঃ অবিশ্বাস্য, কোরার ঐ কথাটা বলার পর আমিও একটু অস্বস্তিতে ভুগছিলাম। কোরার মৃত্যুর পর একটু সন্দেহ হলেও এরকম ভয়ঙ্কর কিছু ভাবিনি। সমস্যাটা নিশ্চয়ই জটিল?
হ্যাঁ জটিল, তবে এরকুলের এই ব্যাপারে একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে।
কোরার কথা ছাড়া আমি সেদিন আরও একটা ব্যাপারে অস্বস্তি বোধ করেছিলাম। তবে কেন বা কি জন্যে তা জানি না–অবাস্তব ব্যাপার।
না, না, আদৌ না, তুমি বোকা নও হেলেন। তুমি তাৎপর্যপূর্ণ কিছু হয়ত লক্ষ্য করেছ।
.
নবম পরিচ্ছেদ
০১.
সামনের দিকে টুপিটা টেনে নিয়ে মিস গিলক্রিস্ট সাদা চুলের গুচ্ছটা ঢেকে দিল। এখনো দেরী আছে তদন্তের। মিস্ গিলফ্রিস্ট দেয়ালে ছবিগুলো দেখতে লাগলেন।
এমন সময় দরজায় বেলের শব্দ হল।
গিলফ্রিস্ট বলল, এখন আবার কে?
দরজা খুলে দেখল কালো পোশাক পরা এক ভদ্রমহিলা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে। মহিলা বললেন, মিস্ গিলফ্রিস্ট, আমি ল্যান্স কোয়েনেটের বোন-ঝি সুসান ব্যাঙ্ক।
ও এসো এসো, আমি তোমায় চিনতাম না তো? এসো ভেতরে এসো, তুমি আসবে জানাওনি তো। বস কি খাবে বল চা না কফি?
না কিছু করতে হবে না, আপনাকে চমকে দিইনি তো?
একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম, আজ তদন্ত হবে তাই আমি মনে মনে একটু অস্থির হয়ে আছি। আধ ঘন্টা।
আগে আর একবার বেল বেজেছিল, আমি দরজা খুলতে ভয় পেয়েছিলাম। কেমন বোকা না আমি? খুনী কেন আবার ফিরে আসবে? একজন লন এসেছিলেন, আমি ওকে দেখে খুশী হয়েছিলাম, মিসেস।
ব্যাঙ্কস।
হা ব্যাঙ্কস, ট্রেনে এলে?
না গাড়ীতে এলাম।
তারপর ঘরের চারদিকটা দেখে বলল : বেচারা অ্যান্ট কোরা আমার জন্য ওর সব জিনিসপত্র রেখে গেছে।
হ্যাঁ, মিঃ অ্যান্টহুইসল আমাকে বলেছেন। ভালোই হয়েছে নতুন বিয়ে করে আসবাবপত্র পেয়ে গেলে।
না না, এগুলোতে আমার দরকার নেই। এগুলো আমি বিক্রি করে দেব।
বিশ্রী সবুজ টেবিলটা দেখে সুসান কেঁপে উঠল এবং তাড়াতাড়ি ওটা দান করে যেন মুক্ত হল।
অনেক ধন্যবাদ। আমি ইতিমধ্যেই কোরার সুন্দর ছবিগুলো এবং এমেথির ব্রোচ পেয়েছি। মনে হয় ওগুলো তোমাকে দিয়ে দেওয়া উচিত।
না না।
তুমি ওর জিনিসপত্র দেখবে না? তদন্তের পরে দেখবে?
ঠিক করেছি এখানে কয়েকদিন থেকে এইসব জিনিসপত্র বিক্রি করে যাব।
এখানে রাত্রে থাকবে?
হ্যাঁ।
আন্ট কোরার একটা ঘর ছিল না? ওখানে ঘুমোব।
তোমার কিছু মনে হবে না?
কেন? উনি ওঘরে খুন হয়েছেন বলে, না না। তাতে আমার কিছু হবে না। সব ঠিক করা হয়েছে?
হা কম্বল ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমি ও পেন্টার ঘরটাকে ঘসে ঘসে সব দাগ মুছে দিয়েছি। ঘরে আরও কম্বল আছে। তুমি চল উপরে নিজে গিয়ে দেখবে।
সুসান উপরে গেল, এখন কোরার ঘরটা ঝকঝকে তকতকে। এ ঘরেও নানারকম ছবি ভোলোনো। ছবিগুলো মিসেস ল্যান্স কোয়েনেটের স্বামীর আঁকা, গিলক্রিস্ট বলল।
আন্ট কোরার আঁকা ছবি কোথায়?
আমার ঘরে। তুমি দেখবে?
গর্বের সাথে মিস গিলক্রিস্ট তার সম্পত্তি দেখালো।
ছবিগুলো দেখে সুসানের মনে হচ্ছিল কোনো ছবির পোষ্টকার্ড থেকে আঁকা।
ঘড়ি দেখে সুসান বলল : তদন্তের সময় হয়েছে, গাড়ী আনবো নাকি?
না, হাঁটা পথে মাত্র পাঁচ মিনিট।
ওরা একসাথে বেরোল, রাস্তায় মিঃ অ্যান্টহুইসলের সাথে দেখা হয়ে গেল, সবাই মিলে ভিলেজ হলে ঢুকল।
শুরু হল তদন্ত। নানারকম খুঁটিনাটি ব্যাপার সম্বন্ধে আলোচনা করা হোল। শেষে জুরি বললেন, এটা কারুর দ্বারা খুন।
ওরা তদন্তের শেষে বেরিয়ে এলেন, হাফ ডজন ক্যামেরা ক্লিক করল। তারপর ওরা কিংস আর্মে লাঞ্চ খেতে ঢুকল।
অ্যান্টহুইসল খেতে বসে বললেন : সুসান তুমি আজ আসছ বললে না তো? তাহলে আমরা একসাথে আসতে পারতাম।
আমি হঠাৎ চলে এলাম।
তোমার স্বামী এল না?
গ্রেগ ব্যস্ত তার ঐ বাজে দোকান নিয়ে। সুসান বলল, আমার স্বামী কেমিস্টের দোকানে কাজ করেন।
ও কীটসের মত?
আমার স্বামী কিন্তু কবি নন।
সুসান তারপরে বলল : আমরা একটা প্ল্যান করেছি, একদিকে থাকবে ল্যাবরেটরি আর একদিকে প্রসাধন ও বিউটি পার্লার।
খুব ভালো হবে, গিলফ্রিস্ট বললেন, এলিজাবেথ আর্ডেনের মত। আবার বলল, ফার্মেসী সাধারণ দোকানের মত নয়।
আপনার একটা চায়ের দোকান ছিল না?
হ্যাঁ, উইলো টি। গিলফ্রিস্টের মুখ উজ্জ্বল।
সুসানকে সে দোকানের কথা বলতে লাগল। অ্যান্টহুইসল টিমোথির সম্বন্ধে চিন্তা করছিলেন।
সুসান বলল, আঙ্কল টিমোথি? উনি তো পঙ্গু। এ ব্যাপারের সাথে কোনো যোগাযোগ থাকতে পারে নাকি?
না না, আমি ভাবছি মিসেস টিমোথির কথা, সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে পা মচকেছে।
অ্যান্টহুইসল কিংস আর্ম থেকে বেরিয়ে দুই মহিলাকে বিদায় জানিয়ে আবার কিংস আর্মে ঢুকলেন, এখনেই তিনি একটা ঘর নিয়েছেন, কালকে অন্ত্যেষ্টি অনুষ্ঠান হবে।
আমার গাড়ীটা কেয়ারীতে আছে, সুসান বলল। আমি সেটার কথা ভুলে গেছিলাম, আমি পরে ওটাকে গ্রামের মধ্যে নিয়ে আসবো।
মিস্ গিলক্রিস্ট বললেন : দেরী করো না। অন্ধকারের পর বাইরে বেরিয়ো না।
ওর দিকে তাকিয়ে সুসান বলল : আপনি কি ভাবছেন খুনী এখনো এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে?
না না, তা নয়? গিলফ্রিস্টের অস্বস্তি হয়।
কিচেনের দিকে যেতে যেতে মিস্ গিলফ্রিস্ট বললেন, তোমার আধঘন্টার মধ্যে চা দরকার মনে হয়?
কেউ সাড়ে তিনটের সময় চা খায়। তবুও মিস গিলক্রিস্টকে খুশী রাখা দরকার ভেবে সুসান উত্তর দিল।
যখন ইচ্ছে, মিস্ গিলফ্রিস্ট।
দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল কয়েক মিনিট পরেই এবং একটা র্যাট-ট্যাট-ট্যাট শব্দ হল।
উঠে দাঁড়াল সুসান। বেল শুনে গিলক্রিস্ট চলে এসেছিলেন এ্যাপ্রন পরা অবস্থায়
ডাকছে কে বলতো?
সাংবাদিক মনে হয়, সুসান উত্তর দিল।
উঃ, তোমায় জ্বালাল।
না ঠিক আছে, আমি কথা বলছি।
সুসান দরজা খোলার পর একজন বৃদ্ধ ভদ্রলোক বললেন : মিসেস ব্যাঙ্ক, আমার মনে হয়।
হা।
আমার নাম আলেকজান্ডার গাথরী। আমি মিসেস ল্যান্স কোয়েনেটের পুরোন এক বন্ধু। তুমি এবারেনথী বংশের মেয়ে তো?
হ্যাঁ।
গাথরী বসার ঘরের দিকে যেতে যেতে বলছিলেন, খুব দুঃখের দিন, ল্যান্স কোয়েনেটের বিয়ের সময় থেকে আমি এদের সাথে পরিচিত ছিলাম। বেচারা কোরা খুব ভালো মেয়ে ছিল। কোরাও বেশ সমঝদার ছিল।
সবাই সেই কথা বলে। সুসান বলল।
হ্যাঁ, মেয়েটা একটু অদ্ভুত ছিল। কখন যে কি কথা বলবে তার কোনো ঠিক ছিল না। ওর স্বভাব চাল-চলন এখন পর্যন্ত বাচ্চাদের মত ছিল।
বলে চললেন তিনিঃ আমি এখন একটু বিবেকের পীড়নে ভুগছি, কয়েক সপ্তাহ আগে কোরা আমায় আসতে বলেছিল। আমি এসে ওর সাথে দেখা করতে পারিনি। কোরা কিছুদিন হল সেলে ছবি কিনত, আমায় দেখাত। শেষ চিঠিতে আমায় লিখেছিল ও আদিম ইটালীয়ান মানুষের একটা দারুণ ছবি কিনেছে।
ঐ ছবিটা বোধ হয়, সুসান দেওয়ালে ঝোলানো ছবিটার দিকে ইঙ্গিত করল।
গাথরী ছবিটা দেখে বললেন : ভালোই হয়েছে, কোরাকে হতাশ করতে হল না।
সুসান চায়ের ট্রে নিয়ে এল। গাথরীকে অভিনন্দন জানিয়ে বসলেন গিলফ্রিস্ট।
গাথরী বললেন, সত্যিই কষ্টদায়ক।
হঠাৎ প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলেন গাথরী : কোরাকে কোনো চোর ডাকাত মারেনি, আমার যা মনে হয়
সুসান বলল, বলুন।
কোরা কোনো কথা চেপে রাখতে পারত না। ও যদি না বলার প্রতিজ্ঞা করত তবুও বলে ফেলত। বোধহয় কোরা কোনো গোপন কথা জানতে পেরেছিল। তবে এইরকম বীভৎস মৃত্যু অপ্রত্যাশিত, কোনো চোর ডাকাত এইসব জিনিস নেওয়ার জন্য কাউকে খুন করবে না। সে বাড়িতে কত টাকা রাখতো?
খুব সামান্য, গিলফ্রিস্ট বলল।
ভদ্রভাবে মিঃ গাথরী বিদায় নিলেন, জানালা দিয়ে অপসৃয়মান মূর্তি দেখা যাচ্ছিল। গিলফ্রিস্ট বাইরে থেকে একটা পার্শেল নিয়ে ফিরলো, কি হতে পারে বলতো? ওয়েডিং কেক?
গিলফ্রিস্ট প্যাকেটটা খুললেন, ভেতরে একটা সাদা বাক্স, সিলভার রিবন দিয়ে বাঁধা।
রিবনটা খুলে ফেললেন মিস গিলফ্রিস্ট। বাক্সের ভেতরে সুন্দর একটা কেক। কে পাঠাল, তিনি কার্ডটা পড়লেন। জন এবং মেরী লেখা, এরা আবার কারা। পদবী লেখে না কেন?
.
দশম পরিচ্ছেদ
০১.
কেয়ারী থেকে গাড়ীটাকে বের করে সুসান আর্মে নিয়ে এল। ভেতরে বসে আছেন একজন বিদেশী ভদ্রলোক।
আনন্দিত হয়ে মিস্ গিলক্রিস্ট বললেন, ওঃ তুমি ফিরে এসেছ, চিন্তা দূর করলে। তারপরে বলল, তুমি স্পগেটী খেতে পারবে তো? আমি ভেবেছি আজ রাতে–ঠিক আছে, যা ইচ্ছে করবেন। গিলক্রিস্ট কিছুক্ষণ পরে কফি নিয়ে এলেন, সুসানকে ওয়েডিং কেকের এক টুকরো দিল। সুসান কেক খেল না।
কেকটা খুব ভালো, কেকটা খেতে খেতে গিলফ্রিস্ট বলল।
সুসান জিজ্ঞাসা করল : আঙ্কল রিচার্ড মৃত্যুর আগে এখানে এসেছিলেন তাই না?
হা এসেছিলেন।
ঠিক কখন এসেছিলেন?
ওর মৃত্যুর তিন সপ্তাহ আগে।
ওকে কি অসুস্থ দেখাচ্ছিল?
না তো, ওকে বেশ সুস্থ সবল ও হাসিখুসি মনে হয়েছিল।
একটু থেমে সুসান বলল : যখন উনি মারা গেলেন আন্ট কোরা কি অবাক হয়েছিলেন?
হা মৃত্যুটা বড় আকস্মিক ছিল তো?
আঙ্কল রিচার্ড কি আন্টকে এমন কোনো কথা বলেছিলেন যাতে বোঝায় তিনি দুর্বল ও বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
হা মিসেস ল্যান্স কোয়েনেট বলেছিলেন উনি খুব বৃদ্ধ হয়ে গেছেন এবং অথর্ব হয়ে পড়েছেন।
সুসান বলল, আপনি ওদের কথাবার্তা শুনেছিলেন?
না মিসেস ব্যাঙ্কস, দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কথা শোনা আমার অভ্যেস নয়।
হা ঐ চাকরদের তিনি সন্দেহ করতেন, মানে ওরাই ওকে বিষ দিয়ে দিচ্ছে–
সুসান বলল, চাকর না হলে কোনো একজন লোক?
আমি জানি না মিসেস ব্যাঙ্ক, আমি সত্যি জানি না। ওর চোখের দিকে লক্ষ্য করে সুসান বুঝতে পারল মিস গিলফ্রিস্ট ওর চেয়ে বেশি জানেন।
সুসান একটু সহজ হয়ে বলল : আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
আমি অ্যান্টহুইসলকে বলেছি সবকিছু বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানে থাকবো।
সুসান বলল, একটা কথা বলছি, আপনাকে তিন মাসের বেতন নিতে হবে।
আপনার খুব দয়া, আপনাকে একটা প্রশংসা দিতে হবে যে আমি আপনার এক আত্মীয়ের কাছে সন্তোষজনক ভাবে কাজ করেছি।
আমি বুঝতে পারছি না।
কাগজে এই খুনের কথাটা বেরিয়েছিল। সবাই সেটা পড়েছে। লোকে ভাববে আমি মৃত মেয়ের সাথে ছিলাম। আমিই বোধহয় খুনী। তাতে আমাকে কেউ কাজ দেবে না। আমি এ ব্যাপারে খুব চিন্তিত। রাতে আমার ঘুম হয় না। মনে হয় আমি আর কোনোদিন কাজ পাব না।
সুসান বলল, যদি ওরা খুনী ধরতে পারে, তাহলে কোনো সমস্যা থাকে না।
হঠাৎ টেলিফোন বেজে উঠল।
ফোন ধরল সুসান।
হা হা আমি সুসান বলছি।
হ্যালো ডার্লিং…..হা ঠিক আছে….অচেনা কারুর দ্বারা হয়েছে….স্বাভাবিক ব্যাপার…শুধু অ্যান্টহুইসল। কি? বলা কঠিন তবে আমার সে রকমই হয়..হ্যাঁ যেমন আমরা ভেবেছিলাম …হ্যাঁ একেবারে প্ল্যানমত…আমি স্টাফের সাথে দেখা করব….আমাদের দরকারে কিছুই নেই। গুড নাইট ডার্লিং।
হঠাৎ সুসানের মাথায় একটা চিন্তা এল। নিশ্চয়ই, বিড়বিড় করে বলল, সেই জিনিসটাই। ফোন তুলে সে ট্রাঙ্ক এনকোয়ারী চাইল। পনের মিনিট পরে এক্সচেঞ্জ থেকে একটা অবসন্ন গলা বলল
কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
ওদের রিং করে যান।
দূরের একটা রিং শুনতে পেল সুসান, তারপর শব্দটা হঠাৎ থেমে গিয়ে একটা বিরক্ত পুরুষ কণ্ঠ শোনা গেল।
কে বলছেন?
আমি সুসান বলছি।
ওহ সুসান তুমি, কি হয়েছে? এত রাতে ফোন করছ কেন?
মড আন্টি কেমন আছে?
এই জন্য ফোন করলে? মড খুব কষ্ট পাচ্ছে। আমরা বড় বিপদে পড়েছি।
সেই জন্যই ফোন করলাম, তুমি কি মিস গিলফ্রিস্টকে রাখবে?
কে সে?
আন্ট কোরার সঙ্গী, খুব ভালো মহিলা।
ভালো কথা, কিন্তু সে কখন আসবে?
ধন্যবাদ, সুসান।
ফোন রেখে সুসান রান্না ঘরে গেল।
তুমি কি ইয়র্কশায়ারে আমার আন্টকে দেখাশোনা করতে পারবে। আন্ট পা ভেঙে ফেলেছেন। আঙ্কেল পঙ্গু। তুমি একটু রান্না-বান্না করতে সাহায্য করবে?
ওহ মিসেস্ ব্যাঙ্ক আপনি খুব ভালো। আপনাকে ধন্যবাদ।