ছোটোগল্প
উপন্যাস
অন্যান্য

২. রহস্যময়ী শ্রীময়ী

০২. রহস্যময়ী শ্রীময়ী

আপনি দয়া করে আমার সোয়েটারটা একটা কাগজে মুড়ে দেবেন? অঞ্জন সীমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, বুঝতেই পারছেন রক্তমাখা সোয়েটার নিয়ে রাস্তায়

হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন, সোয়েটার নিয়ে পাশের ঘরের দিকে পা বাড়াল সীমা, আর একটু চা খেয়েও যাবেন।

অঞ্জন উত্তর দিল না। তার স্থির দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে দেওয়ালের উপর একটা বাঁধানো ফটোগ্রাফের দিকে। সে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল, খুব কাছে থেকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগল আলোকচিত্রের মানুষটিকে হাসিখুশি এক যুবক; প্রসন্ন দৃষ্টি, সুপুরুষ।

সীমার মা মৃদুস্বরে বললেন, সীমার বাবা।

-মহাদেব চৌধুরীর অল্প বয়সের ছবি?

–নিতান্ত অল্প বয়সের নয়। ওঁকে দেখলে বয়স বোঝা যেত না।

একটা ছোটো পাত্রের উপর চায়ের কাপ আর ডিমভাজা নিয়ে প্রবেশ করল সীমা, বিশেষ কিছু করতে পারিনি, শুধু ওমলেট আর চা।

ওমলেটের প্লেট টেনে নিয়ে অঞ্জন বলল, শুধু চা হলেই চলত, আর কিছু দরকার ছিল না। আপনি বরং সোয়েটারটা চটপট কাগজে মুড়ে নিয়ে আসুন।

এখনই আনছি, বলে সীমা আবার অন্তঃপুরে অদৃশ্য হল।

ওমলেট শেষ করে সামনের ছোটো টেবিলটার উপর থেকে চায়ের পেয়ালা তুলে নিল অঞ্জন। সীমার মায়ের দিকে চোখ না তুলেও সে অনুভব করেছিল তার দুই চোখের দৃষ্টি তার উপর স্থির হয়ে আছে…

অবশেষে এই অস্বস্তিকর স্তব্ধতা ভঙ্গ করার জন্যই অঞ্জন বলে উঠল, বাড়িটায় শুধু আপনারা দুজন মহিলা থাকেন, ভয় করে না?

প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাকেই হঠাৎ প্রশ্ন করলেন উদ্দিষ্ট মহিলা, তোমার বাবার নাম কী?

অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন! এবং অপ্রাসঙ্গিক! অঞ্জন চমকে বিষম খেল। পেয়ালা থেকে চা ছিটকে পড়ল। সীমা যখন ঘরে ঢুকল অঞ্জন তখন বিষম কাশছে।

হাতের প্যাকেট টেবিলের উপর রেখে সীমা বলল, এই রইল আপনার সোয়েটার। কিন্তু এমন কাশছেন কেন? বিষম লেগেছে মনে হচ্ছে?

কোনো রকমে কাশির ধাক্কা সামলে অঞ্জন বলল, হ্যাঁ, হঠাৎ বিষম খেয়েছি।

তারপরই কবজি ঘুরিয়ে হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল, ওঃ! দশটা বাজে।

টেবিলের উপর থেকে সোয়েটারের প্যাকেটটা তুলে নিয়ে অঞ্জন বলল, এবার আমি চলি।

উদবিগ্ন স্বরে সীমা বলল, হ্যাঁ, বেশি রাত করা উচিত হবে না। শয়তানগুলোর খপ্পরে পড়তে পারেন। যে রাস্তা দিয়ে এসেছেন, ওই পথে ফিরবেন না। আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেই

জানি, ডানদিকে বড়ো রাস্তা পাব,অঞ্জন বলল, তলে গুণ্ডাদের ভয় করি না। আজ রাতে অন্তত ওরা আমার সামনে আসতে সাহস পাবে না।

–তবু সাবধানের মার নেই।

মারেরও সাবধান নেই। যাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রায় প্রতি রাত্রেই আমাকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষতে হয়, তাদের তুলনায় এই গুণ্ডারা নিতান্তই শিশু, বলতে বলতেই অঞ্জনের মুখে এক অদ্ভুত হাসির রেখা ফুটল, লোকদুটোর অবস্থা কি হয়েছে জানেন? একজনের নাকের হাড় টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, কোনো ডাক্তার ওই হাড় জোড়া লাগাতে পারবে না। আর একজন সারা জীবন বুকের ব্যথায় কষ্ট পাবে। কোনো ডাক্তারই ওই ব্যথা সারিয়ে দিতে পারবে না। হয়তো

একটু হেসে অঞ্জন আবার বলল, হয়তো ওই বুকের ব্যথা তার আয়ুকেও কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। সেজন্য আমার দুঃখ নেই। দুনিয়া থেকে একটা পাপ তাড়াতাড়ি বিদায় নিলে সমাজের ভালো ছাড়া মন্দ হবে না।

আপনি সাংঘাতিক মানুষ তো সীমা বলে উঠল, আপনাকে দেখলে কিন্তু বোঝাই যায় না যে, আপনি এমন ভীষণভাবে মারামারি করতে পারেন! কিন্তু প্রতিরাত্রে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষতে হয় বললেন কেন? আপনার এই কথার অর্থও কিছু বুঝতে পারলাম না। কি করেন আপনি?

সব কথা কি চটপট বোঝা যায়? হাসতে হাসতে অঞ্জন বলল, আপনার মাকে দেখলে কি বোঝা যায় যে, আপনার মতো একটি মেয়ের উনি মা হয়েছেন? অপরিচিত মানুষ আপনাদের দেখলে ওঁকে আপনার দিদি বলেই ভাববে, মা বলে কখনই ভাবতে পারবে না।

সীমার মা যেন একটু লজ্জিত হলেন, কিন্তু সীমা বলে উঠল, কথাটা ঠিক। ছোটোবেলা থেকেই মা নাকি অসাধারণ সুন্দরী। তাই তো দাদু নাম রেখেছিলেন শ্রীময়ী।

আপনার মা সার্থকনামা মহিলা। বয়েস তার সৌন্দর্যে এখনও হাত ছোঁয়াতে পারেনি, অঞ্জন বলল, তারপর সীমার দিকে তাকিয়ে হাসল, আপনার মায়ের থেকেই এমন চেহারা পেয়েছেন আপনি।

কী যে বলেন, সীমা হাসল, মায়ের সঙ্গে আমার তুলনাই চলে না।

খুব হয়েছে, কপট ক্রোধে মেয়েকে ভর্ৎসনা করলে শ্রীময়ী, আর মায়ের রূপবর্ণনা করতে হবে না।

তারপর হঠাৎ অঞ্জনের দিকে ফিরে বললেন, কথায় কথায় রাত হয়ে গেল। আর তোমায় আটকাব না। কিন্তু কাজল, তোমার বাবার নামটা তো বললে না?

বাবার নাম, বাবার নাম কিন্তু আমার নাম তো কাজল নয়, বিস্মিত কণ্ঠে অঞ্জন বলল, আপনি আমায় কাজল বলে ডাকলেন কেন?

শুদ্ধ ভাষায় যাকে অঞ্জন বলে, চলতি ভাষায় তাকেই তো কাজল বলে, তাই নয় কি? শ্রীময়ী হাসলেন, কিন্তু তার চোখের দৃষ্টি প্রখর হয়ে উঠল, আসল কথাটা চাপা পড়ে যাচ্ছে। বাবার নামটা বলতে কি তোমার আপত্তি আছে?

না, না, আপত্তি থাকবে কেন? শ্রীময়ীর চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিল অঞ্জন, মুখ নিচু করে বলল, বাবার নাম বিশ্বনাথ ঘোষ।

কয়েকটি নীরব মুহূর্ত। সীমার মনে হল তার অলক্ষ্যে কি যেন একটা ব্যাপার ঘটে গেল।

স্তব্ধতা ভঙ্গ করল অঞ্জন, অনেক দেরি হয়ে গেল। অনুমতি করুন, আজ আমি যাই।

শ্রীময়ী কিছু বলার আগেই সীমা বলে উঠল, যাই বলতে হয় না, বলুন আসি। কিন্তু আবার কবে আসবেন বলে যান।

হ্যাঁ, তা আসব, সুযোগ পেলেই আসব, স্খলিত স্বরে অঞ্জন বলল, তবে কবে আসতে পারব বলতে পারি না।

ছুটির দিনে আসলে ভালো হয়। মানে শনি, রবিবার। অন্যান্য দিন স্কুল থাকে, বিকেলে ছাত্রী পড়িয়ে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। রাতে এলে তত বেশিক্ষণ থাকতে পারবেন না। আমি আসছে রবিবার সকালে আপনাকে আশা করব।

অঞ্জন উত্তর দেওয়ার আগেই শ্রীময়ী বলে উঠলেন, তোমার যখন খুশি চলে এস। সীমা না থাকলেও আমাকে সারাদিনই তুমি বাড়িতে পাবে। আসবে তো কাজল?

আসব, অঞ্জন হেসে ফেলল, কিন্তু আপনি কি আমায় কাজল বলেই ডাকবেন না কি?

শ্রীময়ীও হাসলেন, যদি তোমার আপত্তি না থাকে।

অঞ্জন এইবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শ্রীময়ীর দিকে তাকাল।

চোখে চোখ পড়ল। শ্রীময়ী চোখ ফিরিয়ে নিলেন না।

অস্ফুট স্বরে কি যেন বলল অঞ্জন, তারপরই হঠাৎ নিচু হয়ে শ্রীময়ীর পা ছুঁয়ে প্রণাম করে খোলা দরজা দিয়ে বাইরের অন্ধকার রাস্তায় মিলিয়ে গেল।

এমন আকস্মিক প্রস্থান শ্রীময়ী ও সীমার কল্পনার বাইরে, দুজনেই কেমন যেন হকচকিয়ে গেলেন। বিস্ময়ের ধাক্কাটা মেয়ের আগে মা-ই প্রথম সামলে নিলেন, দরজার সামনে দ্রুতপদে এগিয়ে এসে বাইরে দৃষ্টিপাত করলেন শ্রীময়ী। দূরে মোড়ের মাথায় বড়ো রাস্তার দিকে অঞ্জনের দেহটা অন্তর্ধান করার আগে কয়েক মুহূর্তের জন্য তাঁর দৃষ্টিগোচর হল..

হঠাৎ মেয়ের ডাকে সংবিৎ ফিরে পেলেন শ্রীময়ী, মা, ওখানে কি দেখছ? এদিকে দেখ, অঞ্জনবাবু তার মানিব্যাগটা ফেলে গেছেন।

শ্রীময়ী ফিরে দেখলেন মেয়ে একটা মানিব্যাগ নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। কয়েক মুহূর্ত পরেই আবার চেঁচিয়ে উঠল সীমা, উরি ব্বাস! এত টাকা! উনি তো ব্যবসায়ী নন, শুনেছি দিল্লির এক সওদাগরি অফিসে চাকরি করেন, এত টাকা নিয়ে উনি ঘোরাঘুরি করেন কেন?

ব্যাগ খুলে একতাড়া নোট বার করল সীমা। গুনে দেখল পাক্কা বারোশো টাকা রয়েছে।

টাকাগুলো সন্তর্পণে ব্যাগের মধ্যে রাখতে রাখতে সে বলল, দেখি ভিতরে যদি ঠিকানা লেখা কার্ড পাওয়া যায়।

পাওয়া গেল। তবে ঠিকানা লেখা কার্ড নয় বা কাগজ নয়, একটি ছোটো পাসপোর্ট সাইজের ফটোগ্রাফ। চোদ্দ কি পনের বছরের একটি কিশোরের প্রতিচ্ছবি, সময়ের প্রলেপে ঈষৎ বিবর্ণ।

দেখতে দেখতে সীমা বলে উঠল, ভারি সুন্দর, তাই না মা?

সত্যিই সুন্দর। একমাথা কোঁকড়া চুলে-ঘেরা মুখোনা মুহূর্তেই দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ছবিখানা দেখতে দেখতে হঠাৎ শ্রীময়ীর দুই চোখ প্রখর হয়ে উঠল, মেয়ের হাত থেকে টেনে নিয়ে তিনি সেটিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন।

তুমি যে ফটো দেখতে দেখতে ধ্যানমগ্ন হয়ে গেলে মা, সীমা হেসে উঠল, দাও, ওটা ব্যাগের ভেতরেই রেখে দিই।

সীমার প্রসারিত হাত ঠেলে দিয়ে শ্রীময়ী বললেন, এটা আমার কাছেই থাক।

মেয়ের হাত থেকে মানিব্যাগটাও টেনে নিলেন তিনি, এটা আমার কাছে রইল। সংসারের নানা প্রয়োজন রয়েছে। আসছে মাসে তোর দুটো টিউশানি থাকছে না। টাকাটা হয়তো দরকার হবে।

তুমি বলছ কী? সীমা ক্রুদ্ধস্বরে বলে উঠল, অঞ্জনবাবু যখন ফিরে এসে ব্যাগের কথা জিজ্ঞাসা করবেন, কি বলব? বলব, পাইনি? ছি, ছি, তোমার কি হয়েছে বল তো? অভাব অভিযোগ থাকলে কি আমরা চুরি করব?

–চুরির প্রশ্ন আসছে কেন? অস্বীকারই বা করব কেন?

তাহলে কি ভিক্ষার দান বলে টাকাটা গ্রহণ করতে হবে?

তোমাকে কিছুই বলতে হবে না বাছা, শ্রীময়ীর কণ্ঠস্বরে স্পষ্ট বিরক্তি, কাজল যদি ফিরে আসে, যা বলার আমিই বলব। তবে জেনে রাখো, সে আর আসবে না। ওটা সে ভুল করে ফেলে যায়নি, গোপানে রেখে গেছে।

একেবারে হতভম্ব হয়ে গিয়ে সীমা বলল, কেন? উনি শুধু-শুধু দুজন প্রায়-অপরিচিত মহিলাকে অতগুলো টাকা দান করতে যাবেন কেন? আমরাই বা টাকা নেব কোন অধিকারে?

মুখ টিপে হেসে শ্রীময়ী বললেন, ভালোবাসার অধিকারে।

ভালোবাসার অধিকার! –সীমা এত বেশি অবাক হয়ে গেল যে, কিছুক্ষণ কথাই কইতে পারল না।

বিস্ময়ের ধাক্কা সামলে নিয়ে সীমা তিক্তস্বরে বলল, মা, তোমার আজকের কথাবার্তা আর ব্যবহারে আমি অবাক হয়ে গেছি। অঞ্জনের অর্থ যে কাজল সেটা অনেকেই জানে, কিন্তু হঠাৎ ওঁকে কাজল বলে ডেকে রসিকতা করতে গেলে কেন? না কি, তুমি যে একজন বিদুষী মহিলা সেটাই ওঁকে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলে? সদ্য-পরিচিত এক ভদ্রলোকের সঙ্গে এই ধরনের রসিকতা ছ্যাবলামি ছাড়া আর কিছুই নয়। ছি! ছি! তোমার কি হঠাৎ মাথা খারাপ হয়ে গেল?

শ্রীময়ী মেয়ের কথার জবাব দিলেন না, কিন্তু তাঁর চোখে-মুখে ক্রোধের ছায়া পড়ল।

মায়ের নীরব ক্রোধকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সীমা আবার বলে উঠল, তুমি যে ভিতরে ভিতরে জ্যোতিষ-চর্চা করছ, তা তো জানতাম না। ভদ্রলোক আর আসবেন না তুমি জানলে কি করে?

সীমা। –শ্রীময়ী কঠিন স্বরে বললেন, লেখাপড়া তোমার চাইতে আমি কিছু কম করিনি। ডিগ্রিটাই শিক্ষার মাপকাঠি নয়; তবু সেই ডিগ্রির হিসাবেও আমার ওজন তোমার চাইতে বেশি। তুমি বাংলায় বি. এ. পাশ করে মিঃ মুখার্জির সুপারিশের জোরে চাকরিটা পেয়ে গেছ। আমি ইংলিশে এম. এ. হয়েও বাড়িতে বসে আছি– কারণ, তোমার বাবা কোনোদিনই আমার চাকরি করাটা পছন্দ করতেন না। তবে লোকের কাছে, বিশেষ করে সদ্যপরিচিত ভদ্রলোকের কাছে বিদ্যা জাহির করার মতো তরলচিত্তের মেয়ে আমি নই। তোমরা শিক্ষার গর্ব করে, কিন্তু গুরুজনের সম্মান রেখে কথা বলতে পর্যন্ত জানো না। এই তোমাদের শিক্ষা?

সীমা দেখল মায়ের মুখ রাগে লাল হয়ে উঠেছে, সে সভয়ে বলে উঠল, মা।

ভয় পাওয়ার কারণ ছিল শ্রীময়ী সহজে রাগ করেন না, কিন্তু একবার খেপে গেলে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। একেবারে নির্জলা উপবাস ঘোষণা করে বসে থাকেন। তখন সীমাকেই ঘাট মেনে, হাতে-পায়ে ধরে মাকে খাওয়াতে হয়। আবার সেই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কায় সীমার মুখ বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল।

মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে শ্রীময়ী উদ্যত ক্রোধ দমন করলেন, সংযত স্বরে বললেন, তোমার জন্মের আগে অনেকগুলো বছর গড়িয়ে গেছে, আর সেই সময় অনেক ঘটনাও ঘটে গেছে। সেসব কথা এখনই তোমাকে জানানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আমার ব্যবহারে আজ যদি কোনো অসঙ্গতি দেখে থাকো, তাহলে তার যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। জানবে। এখন মাকে জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা না করে খাওয়ার ব্যবস্থা করে আমাকে কৃতার্থ করো।

সাধারণত খাওয়ার ব্যবস্থা করেন মা, শরীর খারাপ হলে ভার পড়ে মেয়ের উপর। সীমা বুঝল, আজ শরীর নয়, মেজাজ বিগড়েছে, তাই এই নির্দেশ। সে নিঃশব্দে উঠে গেল খাওয়ার ব্যবস্থা করতে…

একটু পরে মাকে ডাকতে এসে সীমা থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। বাবার ফটোর তলায় এসে দাঁড়িয়েছেন মা, স্বামীর প্রতিকৃতির দিকে তাকিয়ে কি যেন বলছেন তিনি। কয়েকটি কথা সীমার শ্রুতি-গোচর হল, সব যখন শেষ হয়ে গেছে বলে মনে হল, তখনই কি আমায় পরীক্ষা করার জন্য নিয়তির এই খেলা! বিশ বছর পার হল না মাত্র কয়েকদিনের জন্য! আর দিন সাতেক পরেই সীমার জন্মদিন। তবে আমি প্রতিজ্ঞা পালন করব… নিশ্চয়ই তোমার কথা রাখব…

পরের কথাগুলো ভালো করে বুঝতে পারল না সীমা। নিঃশব্দে সে আবার ফিরে গেল রান্নাঘরে। খাওয়ার ব্যাপারটা এই মুহূর্তে নিতান্তই স্কুল আর অপ্রয়োজনীয় মনে হল। চির-পরিচিতা মা যেন হঠাৎ রহস্যময়ী হয়ে উঠেছেন আজ!