২. পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে ফিরলাম

০২.

আমি পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে ফিরলাম প্রায় ছটা নাগাদ। আমার পা যেন অবশ হয়ে গেছে হাঁটতে পারি না।

ডানাকে আনতে পুলিশের লোকেরা ব্যস্ত–সেই ফাঁকে আমি পাওলাকে ফোন করেছি। পুলিশের ওখান থেকে সোজা আমি পাওলার কাছে যাই। পাওলার কণ্ঠস্বরে প্রচণ্ড বেদনার চিহ্ন। আমরা সতর্কতার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছি।

মিফিন আমাকে অনেক প্রশ্ন করেছে। আমি কিছুতেই মিঃ কার্ফের নাম উচ্চারণ করিনি। বলেছি, জানি না কেন ডানাকে হত্যা করা হয়েছে আর ডানা আমার হয়ে কোন কাজ করেনি।

অবশ্য মিফিন বলেছে, এ ব্যাপারটা পুলিশ ক্যাপ্টেন ব্রাউনকে জানাতে হবে। আমাকে ছাড়তে মিফিনের খুব একটা ইচ্ছে ছিল না।

পাওলা দরজা খুলে দেয়। ওর নিখুঁত বেশবাস দেখে অবাক হই।

‘এসো ডিক। কফি তৈরী।‘

পাওলা দীর্ঘকায়, দুচোখ কটা, কাজে কর্মে খুব পটু। যুদ্ধের সময় একসঙ্গে কাজ করেছি। ইউনিভার্সাল সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে ওর ভূমিকা অনেক। পাঁচ বছর অনেক কষ্টে আমাদের দিন কেটেছে। ওকে আমি কখনও মেয়ে হিসেবে লক্ষ্য করিনি অথচ ওর দৈহিক আকর্ষণও কম নয়। কাজ ছাড়া অন্য কোনরকম দুর্বলতাকে পাওলা কখনো প্রশ্রয় দেয়নি।

‘পাওলা, এখন কফি থাক। তুমি এখুনি ডানার ফ্ল্যাটে যাও। হয়ত ডানা রিপোর্টের ডুপ্লিকেট কপি রেখে গেছে। আমি মিঃ কাফের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।‘

‘অত ব্যস্ত হয়োনা। আমি কিছুক্ষণ আগে মিঃ কার্যের সঙ্গে দেখা করে ফিরেছি। আর এতক্ষণে নিশ্চয়ই বেনি ডানার ফ্ল্যাটে চলে গেছে।‘

‘জানতাম তুমি এরকম কিছু করবে। মিঃ কার্য কী জেনেছিলেন?’

কফি এগিয়ে দিয়ে পাওলা বলে, ‘মিঃ কাফেকে ডেকে তুলতে হয়েছে।‘

পাওলা এক চামচ ব্র্যাভি কালো কফির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। ওর ধারণা হুইস্কির চেয়ে কালো কফি ক্লান্তিকে দূর করে বেশী।

‘ডিক, কী মর্মান্তিক…বেচারী ডানা…।’

‘মর্মান্তিক তো বটেই! তা মিঃ কাফ কী বললেন?’

‘পাগলের মত কথাবার্তা আর আচরণ। তুমি নিশ্চয়ই বলনি যে, ডানা মিঃ কাফের হয়ে কাজ করছে?’

‘মাথা খারাপ। জানি না, ব্যাপারটা কতদিন চাপা থাকবে। মিফিন তো আর বুদ্ধ নয়। অবশ্য কার্ফ আছেন, এই যা ভরসা।‘

পাওলা আমাকে আর এক কাপ কফি দিয়ে বলে, শেষ পর্যন্ত গোপন থাকবে তো? যদি পুলিশ জানতে পারে, কার্ক আমাদের নিযুক্ত করেছেন–আমাদের ব্যবসার বারোটা বাজবে। আবার কার্ফ শাসিয়েছেন…যদি আমরা মুখ খুলি মিথ্যা অভিযোগের অপরাধে আমাদের বিরুদ্ধে কেস করবেন।

‘আমাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে মিঃ কার্ফ বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন–কি বল পাওলা?’

‘যা বলেছে…বিপদে পড়লে ভদ্রলোক পিছিয়ে যাবেন।‘

‘তাঁকে যখন কথা দিয়েছি আমাদের পেছোবার কোন উপায় নেই। তা বলে একটা হত্যাকে গোপন করা…’

‘ডিক, ডানার হত্যার কারণ কিছু অনুমান করতে পার?’

‘না, হয়ত ডানা সেই লোকটার পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে লোকটা অনিতাকে ব্ল্যাকমেল করছে। ফলে ডানাকে সরিয়ে দেয়।‘

ডানা কিভাবে খুন হল?

পনেরো গজ দূর থেকে গুলী করে হত্যা, কিন্তু বুঝতে পারছি না, খুনী কেন ডানার পোশাক খুলে নিয়েছে।

ঘরের মধ্যে পায়চারী করতে করতে বলি, পাওলা, যেভাবেই হোক, এই খুনীকে ধরতে হবে।

অর্থাৎ আমাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে চলতে হবে। তাই না?

হ্যাঁ, তাই। খুনীকে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা অন্য কোন কাজ হাতে নেবনা। অবশ্য এ ব্যাপারে মিঃ কার্ফকে জড়ানো চলবে না।

পাওলা বলে, মিফিনকে কি বিশ্বাস করা যায় না? তোমার সঙ্গে সম্পর্কটা ভাল। হয়তো মিঃ কার্ফকে নেপথ্যে রাখতে রাজী হবে।

তেমন আশা করনা।মিফিন এখন পুলিশ ক্যাপ্টেন ব্রান্ডনকে খুনের ঘটনা জানাবে। আর ব্রান্ডন আমাদের কি চোখে দেখে তা ত জানই। পুলিশকে জানালে মিঃ কাৰ্ক কিছুতেই ব্যাপারটা সহ্য করবেন না। আমাদের যে উনি নিয়োগ করেছেন তার কোন কিছুই প্রমাণ নেই।

যাচ্ছেতাই, যদি পুলিশ খুনীর সন্ধান পায় আর খুনী মুখ খোলে–তবে আমাদের দফা রফা হবে।

জানি না, যা কিছু সূত্র সব আমাদের হাতে, তাই আমাদেরই জট খুলতে হবে। তাছাড়া এই খুনের সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত। আমাদের সহকর্মীকে হত্যা করে কোন খুনী পালাতে পারবে না।

আমাদের প্রথম পদক্ষেপ কি হবে?

প্রথমে মিসেস কার্ফের সঙ্গে কথা বলবো।

 পাওলা বলে, ব্যাপারটা অত সহজ নয়। ইতিমধ্যেই মিসেস কার্ফ গা ঢাকা দিয়েছে।

তোমার কি তাই ধারণা?

মিসেস কার্ফের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু মিঃ কার্ফ রাজী হননি। তিনি জানালেন,

মিসেস কার্ফকে শহরের বাইরে সরাবার ব্যবস্থা করেছেন। এতক্ষণে মিসেস কার্ফ গা ঢাকা দিয়েছেন।

মিসেস কার্ফকে খুঁজে বের করতে হবে। সে জানে, কে খুনী।

মিঃ কার্ফ বলেছেন তার স্ত্রী কিছুই জানে না, আমরা তার স্ত্রীকে খুঁজে বার করলে আমাদের কৈফিয়ৎ দিতে হবে।

মিঃ কার্ফ যা খুশি বলতে পারেন। তাকে আমাদের খুঁজে বের করতেই হবে।

ডিক, ব্লাকমেইলারই যে খুনীতা সঠিক নাও হতে পারে। হয়ত মিসেস কার্ফ তার কোন প্রণয়ীকে সাহায্য করছে।

মিঃ কার্ফের মেয়ের সঙ্গেও কথা বলতে হবে। মিসেস কার্ফের সঙ্গে মেয়েটার সম্পর্ক আদৌ ভাল নয়। হয়ত মেয়েটা মুখ খুলতে পারে।

দেখ চেষ্টা করে। আর কার সঙ্গে যোগাযোগ করবে?

যে লোকটা ডানার বটুয়া খুঁজে পেয়েছে…জানি না মিফিনের মাধ্যমে লোকটার কোন খবর পাওয়া যাবে কিনা। লীডবেটার লোকটা আমাদের হয়তো ধোঁকাও দিতে পারে।

ওকে কিছু অর্থ দিলে ওর মুখ বন্ধ করা যেতে পারে।

 চেষ্টা করব। তারপর আমাদের বার্কলের কথা ভাবতে হবে। মিসেস কার্ফের সঙ্গে ওকে কয়েকবার দেখা গেছে। বার্কলের অতীত সম্পর্কে জানতে হবে।হয়ত ওর কাছে কিছু খবর পাওয়া যেতে পারে।

পাওলা বলে, আমি বলবো ব্যানিস্টার হলো ব্ল্যাকমেইলার। ওর মত শয়তান আর কেউ নেই। মিসেস কার্ফের সঙ্গে গত রাতের আগে দেখা করেছে কেন? জানতে পারলে অনেক জট খুলে যাবে।

একটা সিগারেট ধরিয়ে আমি বলি, ব্যানিস্টারের পেছনে বেনিকে লাগাবো। আর কারমান যাবে মিসেস কার্ফকে খুঁজতে। মিসেস কার্ফের অতীত জানা দরকার। এখন যাব নাটালী কার্ফের সঙ্গে মোলাকাত করতে।

পাওলা বলে, ডিক, খুব দ্রুত কাজ করতে হবে।

হঠাৎ দরজায় জোর শব্দ হওয়াতে চমকে দাঁড়িয়ে বলি, হয়ত পুলিশ এসেছে।

পাওলা বলে, উঁহু..পুলিশ নয়। হয়তত বেনি, ওকে আসতে বলেছিলাম।

পাওলা দরজা খুলে বেনিকে নিয়ে এলো। বেনি বলে, যেভাবেই হোক আমাদের খুনিকে খুঁজে বের করতে হবে। উঃ, ডানার মত চমৎকার মেয়ে ভাবলে…।

কিছু খুঁজে পেলে?

নিশ্চয়ই। ডানার রিপোর্ট বই আর ওর শেষ রিপোর্টের ডুপ্লিকেট কপি। তাছাড়া একটা জিনিষ পেয়েছি। জিনিষটা ডানার নয় কিন্তু ডানার গদির নিচে পেয়েছি।

অনিতা কার্ফের হীরের নেকলেশ বের করে আমাদের চোখের সামনে ঘোরায়।

***

সকাল সাড়ে সাতটায় আমি আর বেনি, ফিনেগান রেস্তোরাঁয় জল খাবার খেতে যাই। কারমান আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

একটা টেবিলে আমরা বসি। মোটা ফিনেগান কাছে এলো ওর মুখে অসংখ্য ভাঙা-চোরা দাগ।

 ফিনেগান টেবিল মুছতে মুছতে বলে, সত্যিই ভারি মর্মান্তিক ব্যাপার। মিস লিউইসের মত চমৎকার মেয়েকে…কে এমন নৃশংস কাজ করতে পারে।

জানি না, আমাদের কফি আর খাবার দাও। জলদি।

এখুনি দিচ্ছি, যদি আপনার জন্যে কিছু করতে…। ।

ধন্যবাদ। প্রয়োজন হলে জানাবো।

 ফিনেগান গেলে, কারমান বলে, তুমি কী ঠিক করেছো?

জ্যাক, আমরা এই কাজে তিনজনেই নেমে পড়বো। তাড়াতাড়ি করতে হবে মিঃ কার্ফ যেন না জানেন।

কারমান বলে, ব্রান্ডন জানলে আমাদের বিপদ। মিঃ কাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি আমাদের সমস্যা ডেকে আনবে।

মিফিনের হাতে কোন সূত্র নেই। আমাদের দ্রুত কাজ করতে হবে। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার–অনিতার নেকলেশ ডানার গদির নীচে কেন?

বেনি বলে, আমি ঘরের চারিদিকে খুঁজছিলাম, বিছানা এলোমেলো ছিল। উঁচু করতেই নেকলেশটা দেখলাম।

আমি বলি, কাল রাত্রে মিসেস কার্ফ আমার কাছে এসেছিল, তখন নেকলেশটা ওর গলায় ছিল। ডানার ফ্ল্যাটে নেকলেশটা কিভাবে গেল আমাদের জানতে হবে।

খাবার টেবিলে খাবার দিতে দিতে ফিনেগাল বলে, আমি ফুল পাঠাতে চাই। মিঃ ম্যালয়, সমাধির সময় আমাকে জানাবেন তো?

ফিনেগান আরও কিছু বলতে চাইলে বেনি ওকে নিজের চরকায় তেল দিতে বলে।

আমি বেনিকে বলি, ডানার হত্যার সময় পর্যন্ত গতিবিধির খবরও। ডানার পোশাক সম্পর্কে কোন ধারণা আছে?

খাবার নিয়ে বেনি জবাব দেয়, ডানার আলমারি আমি ঘেঁটে দেখেছি। ওর পরনে নীল কোট আর স্কার্ট।

কারমান নিজের কাপে কফি ঢেলে বলে, নেকলেশটার ব্যবস্থা কি করলে, ডিক?

অফিসের আলমারিতে রেখে দিয়েছি। মিঃ কার্ফের মুখ খোলাতে কাজে লাগবে। আজ সকালে আমি ওর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।

আমাকে কী করতে বল, ডিক?

লীডবেটারের ওপর নজর রাখ। মিফিনের মতে লোকটা পাগলাটে। যদি প্রয়োজন হয়, কিছু অর্থের লোভ দেখাও। খরচের জন্য চিন্তা করো না। কাজ করা চাই।

‘তাই হবে। মনে হয় কোথাও কিছু একটা গণ্ডগোল রয়েছে। এখন পর্যন্ত ব্ল্যাকমেইলারকে মিসেস কার্ফ তিরিশ হাজার ডলার দিয়েছে। কিন্তু ডানাকে খুন করা হল কেন?’

‘হয়ত ব্ল্যাকমেইলার আরো অর্থ আদায়ের ধান্দায় ছিল। আর ডানা তখন বাধা হয়ে দাঁড়াল।‘

চিন্তান্বিত হয়ে বলি, ‘হয়ত এই হত্যার পেছনে অন্য কোন রহস্য আছে। যদি বার্কলে আর অনিতা প্রেমিক প্রেমিকা হয় এবং তাদের একসঙ্গে ঘুরতে দেখে…হয়ত বার্কলে খুন করতে পারে।‘

কারমান বলে, ‘উঁহু, বিশ্বাস হচ্ছে না। বার্কলের অর্থের অভাব নেই। অনিতা ইচ্ছা করলেই মিঃ কাকে ডিভোর্স দিয়ে বার্কলকে বিয়ে করতে পারে। সুতরাং অনিতাকে পাবার জন্যে বার্কলে খুন করবে কেন? আসলে ডানার হত্যার সঙ্গে কাফদের কোন রকম সম্পর্ক নেই।‘

আমি বলি, ‘যীশুর দোহাই। ডানার কোন শত্রু ছিল না। সে কেন বালিয়াড়িতে যাবে–যদি অনিতাকে অনুসরণ না করে?’

বেনি বলে, ‘মিসেস কার্ফ যে বালিয়াড়িতে গিয়েছিল–তুমি কি করে বলছে?’

‘রাত সাড়ে দশটায় মিসেস কার্ফ আমার কাছে এসেছিল। আমার বাংলো থেকে এক মাইল দূরে ডানাকে পাওয়া যায়। হয়ত আমার সঙ্গে দেখা করার পর অনিতা ঐখানে ব্ল্যাকমেইলারের কাছে যায়। অনিতার অজ্ঞাতে ডানা ঐ জায়গায় যায়। ভয় পাবার মত মেয়ে তো ডানা নয়?ডানাকে দেখে ব্ল্যাকমেইলারের মেজাজ নষ্ট আর ডানাকে হত্যা।‘

কারমান বলে, ‘অনিতাও তো ডানাকে গুলি করতে পারে।‘

‘পয়েন্ট পঁয়তাল্লিশের মত ভারী বন্দুক চালানো কোন মহিলার কর্ম নয়।‘

কারমান বলে, জানি না। ডানা নেকলেশ নিয়ে কি করছিল? ব্যাপার কি?’

‘ধর যদি কেউ ডানার ঘরে নেকলেশটা রেখে দেয়। বেনি খুঁজে না পেলেও পুলিশ ঠিকই বের করতো। তারপর পুলিশ অনিতার কাছে যেত।‘

‘তাহলে কী নাটালি কাফের কাজ?’

‘হতে পারে। নেকলেশের কথা শুনেই আমার নাটালির কথা মনে হয়। অনিতাকে নাটালি ঘৃণা করে। অনিতাকে খুনের সঙ্গে জড়ানো নাটালির পক্ষে অস্বাভাবিক কিছু নয়।‘

বেনি প্রতিবাদ করে, ‘কিন্তু মিসেস কার্ফ পঙ্গু…ডানার ঘরে যাওয়া কী তার পক্ষে সম্ভব? ডানার চার তলায় কোন লিফট নেই।’

‘হয়ত সে কাউকে কাজে লাগিয়েছে। বেনি গত রাত্রে এগারটা থেকে তিনটের মধ্যে কারা ডানার ফ্ল্যাটে ঢুকেছে-খবর নাও।’

কারমান বলে, ‘যদি আমরা মিসেস কাফকে খুঁজে বের করতে পারি–যদি ও মুখ খোলে, তাতে আমাদের অর্ধেক কাজ এগিয়ে যাবে।’

‘আমি মিঃ কার্ফের সঙ্গে কথা বলব। হয়ত লীডবেটার অনিতা অথবা খুনীকে দেখেছে, ওর সঙ্গে দেখা কর। বেনি, ডানার ফ্ল্যাটে আবার যাও, কিন্তু পুলিশ সম্পর্কে হুঁশিয়ার। দুপুরে এখানে দেখা হবে এবং সব জানা যাবে।‘

আমরা যে যার গাড়ির দিকে এগিয়ে যাই। কারমান বলে, ‘ডিক, এত সকালে কী কার্ফের সঙ্গে দেখা করতে যাবে?’

‘হ্যাঁ…কার্ফকে চিন্তা করার বেশি সময় দিতে চাই না।‘

.

একজন গার্ডকে সান্টা রোসা স্টেটে প্রবেশের প্রধান ফটকে দেখা গেল। মুনিফর্ম পরিহিত গার্ড, অল্প বয়স, দোহারা চেহারা। ওর বিবর্ণ সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে আমার ভাল লাগে না। মনে হয় ছোকরা বেয়ারা টাইপের।

গার্ড আমাকে দেখতে পেল কয়েক গজ দূরে গাড়ি থামাতে। আমি এসে হালকা গলায় বলি, ‘গাড়ি চালিয়ে যাব, না হেঁটে যেতে হবে?’

‘কোনটাই নয়। যেমন এসেছেন তেমনি গাড়ি নিয়ে কেটে পড়ুন।‘

‘আমার নাম ম্যালয়, যাও তোমার বসকে আর কথা জানাও। তার সঙ্গে আমার জরুরী আলোচনা আছে।

ধীরে সুস্থে গার্ড একটা সিগারেট ধরায়। দুচোখে যেন বহু দূরে হারিয়ে যাওয়ার দৃষ্টি, স্বপ্নময় হাসি।

‘বাড়িতে কেউ নেই। ম্যাক, কেটে পড়।‘

‘উঁহু…জরুরী। বসকে বল…হয় আমার সঙ্গে দেখা করুক, নয় পুলিশের সঙ্গে।‘

গার্ড বলে, ‘মিঃ কার্ফ এক ঘণ্টা আগে বেরিয়ে গেছেন। কোথায় গেছেন আমি জানি না। এখন চটপট কেটে পড়ে শান্তি দিন।‘

আমি সান্টা বোসা স্টেটের এক কোণে এসে গাড়ি ঘোরাই। গাড়ি এমন জায়গায় থামাই যেখান থেকে প্রধান ফটক দেখা যায় না।

লাফ দিয়ে আট ফিট উঁচু দেয়াল টপকে নরম মাটিতে পড়ি। প্রায় নটা বাজে। চারিদিকটা একবার জরীপ করে দেখি মিস কার্ফ নয়ত অনিতার দেখা পেতে পারি।

আস্তে আস্তে হাঁটি, মাঝে মাঝে পেছনে ফিরে তাকাই গার্ড যেন আমায় না দেখে।

বড় সুইমিং পুল পেরিয়ে যাই। একটা বড় রোডোডেনড্রন ঝোঁপের আড়ালে দাঁড়িয়ে বাড়ির দিকে তাকাই।

তারপর আস্তে আস্তে বাড়িতে গিয়ে দেখি মিস কার্ফ হুইল চেয়ারে বসে সকালের খাবার খাচ্ছে। তার মুখে অসহায় বিষাদের চিহ্ন।

মাথায় টুপী নামিয়ে আমি বলি, ‘হ্যালো…চিনতে পারছেন? আমার নাম ডিক ম্যালয়।‘

ক্রুদ্ধ হয়ে মিস কার্ফ বলে, ‘আপনি এখানে কি জন্যে এসেছেন?’

 ‘আপনার বাবার সঙ্গে জরুরী কাজ ছিল। তার সঙ্গে দেখা হবে কী? মিস কার্ফ বলল, মিলস্ আপনাকে ভেতরে ঢুকতে দিল?

‘গেটের ছেলেটার নাম মিলস্ নাকি?’

‘আপনি এখানে কিভাবে এলেন?’

‘দেয়াল টপকে এসেছি। আপনার বাবার সঙ্গে দেখা করতে চাই।‘

‘বাবা বাড়িতে নেই। আপনি কি দয়া করে চলে যাবেন?’

‘বেশ, তবে মিসেস কাফের সঙ্গে দেখা করতে পারি?’

‘দুঃখিত। মিসেস কার্ফও বাড়িতে নেই।’

‘ইস্ কি বিশ্রী ব্যাপার! মিসেস কাফের নেকলেশ আমার কাছেই থাক।’

মিস কার্ফ একটু জোর গলায় বলে, ‘আপনি কেন চলে যাচ্ছেন না?’

‘নেকলেশটা ফেরৎ দিতে এসেছি। তা কোথায় মিসেস কাফের সঙ্গে দেখা হবে?’

সে চিৎকার করে বলে, ‘বেরিয়ে যান।’

‘মিসেস কার্ফের ওপর নজর রাখার জন্যে আপনার বাবা আমার প্রতিষ্ঠানের একটি মেয়েকে নিযুক্ত করেছিলেন। মেয়েটি খুন হয়। মিসেস কাফের নেকলেশটা মেয়েটির ঘরে পাওয়া যায়।‘

‘মিসেস কার্ফের ব্যাপারে আমার কোন উৎসাহ নেই। আপনি চলে যান।‘

‘ভাবলাম আপনি হয়ত উৎসাহিত হতে পারেন যে পুলিশ নেকলেশটি খুঁজে পায়নি। মিসেস কাফের খোঁজ পেলে–তাকে চিন্তার হাত থেকে বাঁচাতে পারি।

মিস কাফের ভাবভঙ্গি দেখে আমি বিদ্যুৎ গতিতে ঘুরে দাঁড়াই। হারামী ছোকরা আমার পেছনে দাঁড়িয়ে। ছোকরা বলে, ‘এই যে বীরপুরুষ! আপনাকে কেটে পড়তে বলেছিলাম, তাই না?’

মিস কার্ফ বলে, ‘ওকে বাইরে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দাও।’

‘ম্যাক, আমার সঙ্গে আসুন। গেট পর্যন্ত আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।’

মিস কার্ফকে বলি, দেখুন বাজে বকবক করে আপনাকে বিরক্ত করতে আসিনি। মিসেস কাফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সময়ে ঝামেলা এড়ানো যাবে।‘

মিলস, মিষ্টি হেসে বলে, ‘চলুন আর দেরী করবেন না।‘

‘দেখুন, আপনি…।’ কথা শেষ না হতেই মিলসের ঘুষি আমার মুখে লাগে।

থেৎলানো ঠোঁট স্পর্শ করে বলি, ‘বেশ চলুন, আপনি শক্তি পরীক্ষা করতে চান তো? তাই হবে।‘

মিলস্, কয়েক হাত তফাতে আমার পেছনে এলো। গেটে পৌঁছে আমি ওর জন্যে অপেক্ষা করি। বাঁ হাত দিয়ে ওর ডান চোয়ালে ঘুষি চালাই।মিলস্ সরে যায়। ফলে ঘুষিটা ফসকে যায় এবং আমি ওর কাছাকাছি এসে পড়ি। মিলআমাকে পরপর পাঁচবার আঘাত করে। আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, হাঁটু ভেঙে পড়ে। আবার ওর ডান হাতের ঘুষি আমার চোয়ালে এসে পড়ল। ঘুষি নয় যেন হাতুড়ির ঘা। দুচোখে সর্ষে ফুল দেখি। আর আমার সঙ্গে লড়তে আসবেন? আপনার। মত মানুষদের আর এখানে দেখতে চাই না। এখন বিদেয় হোন।

অস্পষ্টভাবে দেখি কে যেন আমার সামনে দাঁড়িয়ে। তারপর বুটের লাথি সবেগে আমার ঘাড়ের ওপর নেমে এলো।

***

বাংলোয় পৌঁছে দেখি একজন পুলিশ মোটর সাইকেলে বসে আছে সে এগিয়ে এলো।

ওই হারামী ছোকরাটাকে সান্টা রোসা স্টেট থেকে ফেরার পথে শুধু গালাগাল দিয়েছি। আমার নিজের ওপর ছোকরার চেয়ে বেশি রাগ হচ্ছিলো। ঘাড়ে বুটের লাথি…ব্যাপারটা ভাবতে পারছিলাম না। পুলিশটিকে আমি বলি, কী চান? যা বলার তাড়াতাড়ি বলে কেটে পড়ুন।

কী হয়েছে? ঘোড়ার লাথি খেয়েছেন নাকি?

 ব্যাঙের সুরে বলি, ঘোড়া? আপনি কী ভেবেছেন…।

যাক গে, হেডকোয়ার্টারে, ক্যাপ্টেন সাহেব আপনাকে ডাকছেন।

তাকে বলবেন আমার অনেক কাজ আছে। ওঁর মত বোকার সঙ্গে বকবক করার সময় নেই আমার।

ক্যাপ্টেন সাহেব বলেছেন–তেমন হলে আপনাকে কাঁধে তুলে নিয়ে যেতে। ভেবে দেখুন, কি করবেন?

আপনার সাহেব এভাবে আমার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন না।

শুনুন, কাল রাতের খুনের ব্যাপারে উনি কিছু কথা বলতে চান। ঝামেলা না করে যাওয়াই ভাল।

বেশ, আমার গাড়িতে যাবো, তবে আপনি সাইরেন বাজিয়ে আগে আগে চলুন–আমার গাড়ি পেছনে থাকবে।

বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে আমরা অগ্রসর হই। হেড কোয়ার্টারে পৌঁছানোর পর পুলিশটি বলে, কেমন লাগল বলুন?

চমৎকার, আবার কখনও আমরা এভাবে আসবো।

ঘরে ঢুকে মিফিনকে দেখি ওর লাল মুখে কেমন যেন উদ্বেগের চিহ্ন।

 আমি বলি, হ্যালো মিফিন, কী ব্যাপার?

ক্যাপ্টেন সাহেব তোমার সঙ্গে কথা বলতে চান। ওঁর ধারণা খুনের ব্যাপারে তুমি অনেক কিছু জান। সুতরাং সাবধানে কথা বলবে।

ঘরটা বেশ বড়, চমৎকার সাজানো। মেঝেতে পুরু গালিচা, দেয়ালে ভ্যান গগের আঁকা ছবি।

পুলিশ ক্যাপ্টেন, বয়স পঞ্চাশ, বেঁটে চেহারা। মাথায় ঘন সাদা চুল, দু চোখের দৃষ্টি স্বচ্ছ।

বসুন আপনার সঙ্গে জরুরী আলোচনার দরকার।

চেয়ারে বসে বলি, নিশ্চয়ই আলোচনা করবেন।

ব্রান্ডনকে এই প্রথম ভালভাবে দেখার সুযোগ হয়। আমরা পরস্পরকে অদ্ভুত ভঙ্গিতে লক্ষ্য করি।

ব্রান্ডন নাকি কড়া মেজাজের পুলিশ অফিসার। ওর অধীনে যারা কাজ করে তারা ওঁকে ভীষণ ভয় করে।

ব্রান্ডন প্রশ্ন করেন। কাল রাত্রের খুনের ব্যাপারে আপনি কি জানেন?

কিছুই না। মিফিনের সঙ্গে আমি যাই। তারপর আমরা মিস লিউইসের ডেডবডি দেখতে পাই।

আপনার কী মনে হয়?

মনে হয় ধর্ষণের জন্য ওকে খুন করা হয়েছে।

মেডিক্যাল রিপোর্ট কিন্তু অন্য কথা বলে। কোন ধস্তাধস্তি বা আঁচড়ানোর চিহ্ন নেই। ডানা লিউইসকে গুলি করার পর উলঙ্গ করা হয়েছে। আমি জানি না আপনার কোন কাজে গিয়েছিল। তাই না?

আমি মাথা নাড়ি।

 সুতরাং ডানার সম্পর্কে অন্যদের চেয়ে আপনার বেশি জানা উচিত।

হয়ত তাই।

ওর কোন শত্রু ছিল?

যতদূর জানি–না।

কোন প্রেমিক?

আমার জানা নেই।

জানতে পারতেন।

ও কখনও তার প্রেমিক সম্পর্কে আমাকে কিছু বলে নি।

সে ঐ সময়ে বালিয়াড়ির কাছে কেন গিয়েছিল অনুমান করতে পারেন?

কোন সময়ে?

রাত সাড়ে বারটায়।

উঁহু..আমি জানি না।

কিন্তু আপনার বাংলোর এক মাইলের মধ্যেই ডানা খুন হয়েছে…যাওয়ার আগে আপনার সঙ্গে দেখা করে নি? আশ্চর্য!

ক্যাপ্টেন, আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি কিন্তু একসঙ্গে বিছানায় কখনো শুইনি।

আপনি কি সঠিক বলতে পারেন?

এ সম্পর্কে আমার ভুল হয় না।

কাল রাত সাড়ে এগারটা থেকে সাড়ে বারোটার মধ্যে আপনি কি করছিলেন?

ঘুমিয়েছিলাম।

গুলির শব্দ শোনেন নি?

ঘুম বলতে বুঝি, ষোল আনা ঘুম।

 ব্রান্ডন কেমন যেন সন্দেহের দৃষ্টিতে একবার সিগারের দিকে তাকাল।

কাল রাতে আপনার সঙ্গে কেউ দেখা করতে এসেছিল?

একটি স্ত্রীলোক এসেছিল যার এই খুনের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। না, ওর নাম বলতে পারব না।

ব্রান্ডন জানতে চান, স্ত্রীলোকটি স্বর্ণকেশী এবং লম্বা কিনা। তারপরনেকীসন্ধ্যাকালীন পোশাক ছিল?

ভাবলেশহীন মুখে বলি, উহ স্বর্ণকেশী নয়।

ভারী গলায় ব্রান্ডন বলেন, মিফিনকে আপনি জানিয়েছে যে মিস লিউইসআপনার হয়ে কোন কাজ করছিল না কথাটা কী সত্য?

 যদি তাই বলে থাকি–সেক্ষেত্রে কথাটা সত্য।

তার কোন মানে নেই। আপনার মক্কেলকে আড়ালে রেখে যে মিথ্যে বলছেন না তার প্রমাণ আছে।

আপনার ধারণা ঠিক নয়।

কড়া গলায় ব্রান্ডন বলে, ম্যালয়, যদি জানতে পারি আপনি মর্কেলকে আড়ালে রেখেছেন–সঙ্গে সঙ্গে আপনার প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেব। আর আপনার কাঁধে চাপবে সাহায্যকারী হিসেবে অভিযোগ।

বেশ, তো আগে প্রমাণ পান তারপর দেখা যাবে।

ম্যালয়, আপনি সুকৌশলে সব ব্যাপারটা এড়িয়ে যাচ্ছেন। আমাকে বোকা বানাতে পারবেন না। আপনি একজন খুনীকে আড়ালে রাখছেন।

‘এটা আপনার কল্পনা।‘

‘স্বর্ণকেশী ওই স্ত্রীলোকটি কে? যাকে কাল রাত্রে ডানার ফ্ল্যাটে দেখা যায়! কে এই মহিলা?’

‘আমি জানি না।’

‘স্ত্রীলোকটি বেশ ধনী। তার গলায় একটি মূল্যবান নেকলেশ ছিল। স্ত্রীলোকটি কে?’

‘আমি ঐ স্ত্রীলোকটি সম্পর্কে কিছুই জানি না।‘

‘স্ত্রীলোকটি আপনার মক্কেল, যার নাম আপনি বলতে চান না।‘

‘স্বাধীন দেশে স্বাধীন মতবাদে কোন বাধা নেই।

‘আপনি এখনো সময় থাকতে বুদ্ধিমানের মতো ব্যবহার করুন। মক্কেলের নাম বলে নিজেকে পরিষ্কার রাখুন। আপনি কি কোন খুনের ঘটনাকে চাপা দিতে পারেন? বলুন, স্ত্রীলোকটি কে…আর ঝামেলা বাড়াবেন না।‘

‘আপনি নিশ্চয়ই আশা করেন না শহরের যে সমস্ত স্ত্রীলোকেরা হীরের নেকলেশ পরে, আমি তাদের চিনি। আমি দুঃখিত।‘

ব্রান্ডন কঠিন চোখে বলেন, ‘এটাই কি আপনার শেষ কথা?’

‘তাই, ক্যাপ্টেন, আপনাকে সাহায্য করতে না পারায় আমি আন্তরিক দুঃখিত।‘

‘আপনি নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে করেন, তাই না? দেখা যাবে। এখন থেকে সাবধানে পা ফেলবেন। আমার লোকেরা কিভাবে মুখ খোলাতে হয় তা জানে।‘

দরজার দিকে যেতে যেতে বলি, ‘দেখা যাবে। মনে রাখবেন, একজন পুলিশ ক্যাপ্টেনকে তার পদ থেকে সরাবার আমারও অনেক রাস্তা জানা আছে।‘

ব্রান্ডনের দু’চোখ জ্বলে ওঠে, ‘একবার ভুল পদক্ষেপ হলেই ম্যালয়–আপনার আর নিস্তার নেই।‘

‘যান যান…নিজের কোটের তকমা পরিষ্কার করুন।’ বলে সশব্দে দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে আসি।