২. পুরো ঘটনাটা

০৬.

 কিছুক্ষণ কথা বলার পর মিঃ মেলচেটের কাছ থেকে পুরো ঘটনাটা জানতে পারা গেল।

গতরাতে লরেন্স থানায় গিয়ে টেবিলে পিস্তল রেখে বলেছে, আমি নিজেই এসেছি, কর্নেল প্রথেরোকে আমি খুন করেছি।

খুন করার পেছনে অবশ্য যে কারণ দেখিয়েছে তা খুবই খেলো। জবানবন্দিতে বলেছে, সে ভিকারেজে এসেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। আমাকে পায়নি, কিন্তু দেখল প্রথেরো বসে আছে। তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়, সে গুলি করে। কি নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল সে সম্পর্কে কিছু বলেনি।

একসময় চীফ কনস্টেবল মেলচেট আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, মিঃ ক্লেমেট, ব্যক্তিগত ভাবে একটা কথা জিজ্ঞেস করছি। লরেন্স রেডিং কি লোকটার মেয়ের সঙ্গে গর্হিত কোন ব্যবহার করেছিল?

অবশ্য এর মধ্যে আমি মেয়েটাকে টেনে আনতে চাইছি না। তাই আপনার মত ওদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের কাছ থেকে এটা জানতে চাইছি।

আমি পরিষ্কার ভাবে জানালাম যে এমন কোন ঘটনাই কখনো ঘটেনি।

মিঃ মেলচেট বললেন, জেনে খুশি হলাম। আচ্ছা চলি, একবার ডাঃ হেডকের সঙ্গে দেখা করতে হবে।

দুপা এগিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ালেন। বললেন, আমি যদি ইচ্ছে করি তার সঙ্গে যেতে পারি। আমি সম্মত হয়ে একসঙ্গেই ঘর থেকে বেরুলাম।

আমার বাড়ির কাছেই থাকেন ডাঃ হেডক। বসার ঘরেই তার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। মিঃ মেলচেটকে দেখে একটা ছোট বাক্স এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, রাত জেগে আপনাদের কাজটা সেরে রেখেছি।

মিঃ মেলচেট বাক্স খুলে একটা বুলেট বার করে উল্টেপাল্টে পরীক্ষা করতে লাগলেন। আপন মনেই বললেন, এতো দেখছি মশার ২৫।

ডাঃ হেডক বললেন, হ্যাঁ। ঘটনাটা আকস্মিক আক্রমণই ছিল। কিন্তু এটা খুবই আশ্চর্য লাগছে, গুলি চলল অথচ কেউ শব্দ শুনতে পেল না।

মেলচেট বললেন, সেটা আমাকেও বিস্মিত করেছে। অন্তত বাড়ির কাজের মেয়েটার শুনতে পাবার কথা।

ডাঃ হেডক জানতে চাইলেন, আচ্ছা পড়ার ঘরের জানালাটা তো ভোলাই ছিল। মিস মারপল কিছু শুনতে পাননি? পাশেই তো থাকেন।

আমি বললাম, বোধহয় শুনতে পাননি। কেন না ঘটনার পরেই তিনি ভিকারেজে গিয়েছিলেন। কথাও হয়েছে আমার সঙ্গে কিন্তু ওরকম কিছু আভাস দেননি।

ডাঃ হেডক বললেন, শুনে থাকলেও হয়তো খেয়াল করেননি। স্বাভাবিক শব্দ বলে ভেবেছেন। অথবা পিস্তলে সাইলেন্সর লাগানো ছিল। খুনের কারণ কিছু বলেছে?

-খুবই মামুলি। ঝগড়া হয়েছিল। মিঃ মেলচেট বললেন।

-ঝগড়া করার মত কোন সময়ই ছিল না। আমি বললাম। চুপিসাড়ে এসে কাজটা সেরেছে। আমার সঙ্গে গেটের বাইরে দেখা হলে কথাও বলেছিল কেমন অসংলগ্ন…আপনি মিঃ প্রথেরোর সঙ্গে দেখা করতে চান? হ্যাঁ, দেখা হবে। ওরকম কথা শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম, কিছু একটা ঘটতে চলেছে।

ডাঃ হেডক আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, লরেন্স কখন গুলি করেছে বলে আপনার ধারণা?

-আমি বাড়িতে ঢোকার মিনিট কয়েক আগে।

–অসম্ভব। আমার পরীক্ষা তা বলে না। মিঃ প্রথেরো অনেক আগেই খুন হয়েছেন।

–কিন্তু ডাঃ হেডক, আপনি যে বললেন, আধঘণ্টা আগে ঘটনাটা ঘটেছে? মিঃ মেলচেট বললেন।

–হ্যাঁ, মোটামুটি সময় ওটা–দু-পাঁচ মিনিট এদিক সেদিক হতে পারে। কিন্তু এর বেশি নয়।

-কিন্তু আমি যখন ওখানে পৌঁছাই তখনো তো মিঃ প্রথেরোর দেহটা উষ্ণ ছিল।

আমি ডাক্তারের মুখের দিকে তাকালাম। তার মুখ হঠাৎ কেমন বিবর্ণ হয়ে গেল। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলাম।

লরেন্স স্বীকার করেছে, খুনটা সে পৌনে সাতটার সময় করেছে।

উত্তেজনায় ডাক্তার আচমকাই উঠে দাঁড়ালেন। দৃঢ় স্বরে বললেন, এটা অসম্ভব। পৌনে সাতটার সময় খুন করেছে যদি বলে থাকে, তাহলে বলব লরেন্স মিথ্যা বলেছে। আমি একজন ডাক্তার হিসেবেই কথাটা আবারও বলছি।

মিঃ মেলচেটকে কেমন দ্বিধাগ্রস্ত দেখালো। তিনি বললেন, লরেন্স মিথ্যা বলেছে কিনা ওকে আরো একবার ভালকরে জেরা করলেই বোঝা যাবে সম্ভবত। চলুন দেখা যাক।

.

০৭.

 পুলিস স্টেশনে আমি আর মিঃ মেলচেটই লরেন্সের মুখোমুখি হলাম। দেখলাম চিন্তাচ্ছন্ন বিবর্ণ মুখে বসে আছে লরেন্স।

মিঃ মেলচেট তাকে বললেন, তুমি ইনসপেক্টর স্লাকের কাছে যে জবান বন্দি দিয়েছ তাতে বলেছ ভিকারেজে পৌনে সাতটা নাগাদ গিয়েছিলে। সেখানে প্রথেরোর সঙ্গে তোমার ঝগড়া হয়, তুমি গুলি করে বেরিয়ে আস। তাই তো?

–হ্যাঁ।

এবারে তোমাকে আমি কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই।

–আমি তো বলেইছি মিঃ প্রথেরোকে খুন করেছি। এর মধ্যে লুকনো কিছু নেই।

 –বেশ ভাল কথা, তুমি পিস্তলটা কোথায় পেলে?

–আমার পকেটে ছিল। সঙ্গে নিয়েই ভিকারেজে এসেছিলাম।

–ওটা সঙ্গে রেখেছিলে কেন?

–সবসময়ই সঙ্গে থাকে। একটু যেন ইতস্তত করল লরেন্স।

–তুমি ঘড়ির কাটাটা পেছন দিকে সরিয়ে দিয়েছিলে কেন?

–ঘড়ি? কোথায়? লরেন্স স্পষ্ট তো-ই হতভম্ব হল।

–হ্যাঁ, ঘড়ির কাঁটা ছটা বাইশে ঘুরিয়ে রাখা হয়েছিল।

একটা ভয়ের ছাপ পড়ল লরেন্সের মুখে। পরক্ষণেই বলে উঠল, ও হ্যাঁ, হা,–তা রেখেছিলাম।

-কর্নেল প্রথেরোর শরীরে কোন জায়গায় তুমি গুলি করেছিলে? ডাঃ হেডক জিজ্ঞেস করলেন।

-মনে হচ্ছে মাথায় করেছি। হ্যাঁ হ্যাঁ মাথাতেই।

–তুমি নিশ্চিত নও?

–এসব অনর্থক প্রশ্ন। বিরক্ত হল লরেন্স।

এই সময় একজন কনস্টেবল এসে আমার হাতে একটা চিঠি দিয়ে গেল। সেটা খুলে দেখলাম কাগজে লেখা রয়েছে :

বুঝতে পারছি না কি করব। দয়া করে একবার আমার এখানে আসবেন। ভীষণ ভয় লাগছে-যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসবেন। তেমন কাউকে সঙ্গে আনতে পারেন। অ্যানা প্রথেরো।

চিঠিটা মিঃ মেলচেটের দিকে এগিয়ে দিলাম। তিনি চোখ বোলালেন। পরক্ষণেই আমরা সেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।

চিঠিটা লরেন্সেরও নজরে পড়েছিল। দেখলাম, চেহারাটা কেমন রুক্ষ হয়ে উঠেছে।

মিসেস প্রথেরো আমাকে বলেছিলেন, তিনি খুব মরীয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি আর পারছেন না। কথাগুলো মনে হতেই লরেন্সের নিজেকে অপরাধী বলে স্বীকার করবার একটা যুক্তি ততক্ষণে পরিষ্কার হল।

পুলিস স্টেশন থেকে বেরিয়ে ডাঃ হেডককে সঙ্গে নিয়েই আমরা ওল্ডহলের দিকে রওনা হলাম।

একজন চাকর আমাদের দরজা খুলে দিল। মিঃ মেলচেট বললেন, আমরা এসেছি, খবরটা ভেতরে দিয়ে এসো, তোমাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করব।

চাকরটি ফিরে এলে মিঃ মেলচেট তাকে জিজ্ঞেস করলেন, গতকাল সম্পর্কে কয়েকটা কথা জানতে চাই। মিঃ প্রথেরো কাল খেয়েছিলেন?

-হ্যাঁ, অন্যদিনের মতই ।

–তারপর তিনি কি করলেন?

–মিসেস প্রথেরো শুতে চলে গিয়েছিলেন। আর মিঃ প্রথেরো পড়ার ঘরে গিয়ে বসেছিলেন।

-এরপর?

–লেটিস টেনিস খেলতে বেরিয়েছিল। আর সাড়ে চারটের সময় মিঃ এবং মিসেস প্রথেরো চা খান। পরে গাড়িতে করে গ্রামে চলে গিয়েছিলেন।

সময়টা মনে আছে?

-হ্যাঁ, সাড়ে পাঁচটা হবে। ওরা চলে যাবার পরেই মিঃ ক্লেমেন্টে ফোন করেছিলেন। আমি, বাড়ি নেই বলে দিয়েছিলাম।

–আচ্ছা, মিঃ রেডিং শেষ কবে এখানে এসেছে?

–মঙ্গলবার বিকেলে।

-সেদিন কি ওদের দুজনের মধ্যে খুব কথা কাটাকাটি হয়েছিল?

-মনে হয়। উনি চলে যাবার পরে মিঃ প্রথেরো আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন, কোনদিন যেন বাড়িতে ঢুকতে না পায়।

–ওদের দুজনের কথাবার্তা কিছু শুনতে পেয়েছিলে?

–মিঃ প্রথেরো মাঝে মাঝে খুব জোরে কথা বলছিলেন। টুকরো টুকরো কথা কানে এসেছিল।

–তাতে কি বুঝতে পেরেছিলে, কি নিয়ে ঝগড়াটা হচ্ছে?

–মনে হল মিস প্রথেরোর ছবি আঁকা নিয়েই ঝগড়া বেঁধেছিল।

ঝগড়ার পরেই লরেন্স চলে গিয়েছিল?

–হ্যাঁ, আমি দরজা অবধি এগিয়ে দিয়েছিলাম।

–ওকে কি খুব রাগান্বিত দেখেছিলে?

–না।

সেদিন আর কেউ এসেছিল বাড়িতে?

-না, কেউ আসেন নি।

আগের দিন কেউ এসেছিল?

–হ্যাঁ, বিকেলে ডেনিস এসেছিল আর ডাঃ স্টোন। তাছাড়া সন্ধ্যাবেলা একজন মহিলাও এসেছিলেন?

মহিলা? বিস্মিত হলেন মিঃ মেলচেট, মহিলাটি কে?

 চাকরটি কয়েক মুহূর্ত কি মনে করবার চেষ্টা করল চুপ করে থেকে। পরে বলল, যতদূর মনে হয় তার নাম বলেছিল, মিসেস লেসট্রেঞ্জ।

-তিনি কখন এসেছিলেন?

–তখন সকলে রাত্রের খাবার খাচ্ছিলেন। তিনি মি: প্রথেরোর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন। বললেন মিসেসকে খবর দেবার দরকার নেই।

-তারপর?

–মিঃ প্রথেরোকে খবর দিতে তিনি উঠে এসেছিলেন। আধঘন্টা মত দুজনের কথা হয়। চলে যাবার সময় মি: প্রথেরোই তাঁকে দোরগোড়া পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছিলেন।

একটু পরেই আমাদের ভেতরে ডেকে নিয়ে যাওয়া হল। ঘরে মিসেস প্রথেরো একাই ছিলেন। মুখটা মলিন দেখাচ্ছিল। কিন্তু চোখ ছিল উজ্জ্বল। চিঠি পেয়েই চলে আসার জন্য তিনি আমাদের ধন্যবাদ জানালেন।

পরে বললেন, চিন্তা করে দেখলাম, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মনের বোঝা নামিয়ে দেওয়াই উচিত। মিঃ মেলচেট এসে ভালই করেছেন। আপনিই সেই লোক যার কাছে আমার কথাটা বলা উচিত। মিঃ প্রথেরোকে আমিই খুন করেছি।

আমরা স্তম্ভিত হয়ে মিসেস প্রথেরোর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। মিঃ মেলচেট কি বলতে যাচ্ছিলেন, তাকে থামিয়ে দিয়ে মিসেস প্রথেরো পুনরায় বলতে লাগলেন। সত্যি কথা বলতে কি, বিয়ের পর থেকেই আমি চূড়ান্ত অসুখী জীবন যাপন করছিলাম। আমার স্বামীকে আমি ঘৃণা করতাম, হ্যাঁ ভীষণ। গতকাল আমি মনের জ্বালা মিটিয়েছি তাকে গুলি করে খুন করে। আমার কথা সম্পূর্ণ সত্য মিঃ মেলচেট।

কথা শেষ করে তিনি চোখ বুজলেন।

–কিন্তু, ম্যাডাম, আপনি কি জানেন যে ইতিমধ্যেই মিঃ রেডিং মিঃ প্রথেরোকে খুন করেছে। বলে থানায় আত্মসমর্পণ করেছে?

–জানি। ও নির্বোধ। আমাকে পাগলের মত ভালবাসে। হয়তো এটা ওর মহত্ত্ব, কিন্তু চূড়ান্ত নির্বোধ।

লরেন্স কি জানতো যে আপনি খুন করেছেন?

–হ্যাঁ। মাথা নাড়লেন মিসেস প্রথেরো।

–কি করে সে জানলো? আপনি বলেছিলেন?

একমুহূর্ত ইতস্ততঃ করলেন তিনি। পরে বললেন, হ্যাঁ, আমিই বলেছিলাম।

কিন্তু আপনি পিস্তল কোথায় গেলেন?

–পিস্তল? ওটা আমার স্বামীর। ওর ড্রয়ার থেকে ওটা বের করে নিয়েছিলাম।

–তারপর সেটা নিয়ে ভিকারেজে গিয়েছিলেন?

–হ্যাঁ, জানতাম, সেখানেই যাবার কথা আছে।

–তখন সময় কটা হবে?

–ছটা পনেরোর বেশি হবে না কিছুতেই।

–স্বামীকে খুন করবার জন্যই কি পিস্তলটা সঙ্গে করে নিয়েছিলেন?

–না না, ঠিক তা নয়। নিজের জন্যই নিয়েছিলাম।

 –তাই বুঝি। তা ভিকারেজে গিয়ে কি করলেন? মিঃ মেলচেট জিজ্ঞেস করলেন।

ঘরে আর কেউ আছে কিনা দেখার জন্য প্রথমে জানালার কাছে গেলাম। কিন্তু কারোর গলার আওয়াজ পেলাম না। আমার স্বামী একাই বসেছিলেন দেখলাম। হঠাৎ মনে হল এটাই সুযোগ। আমি গুলি করলাম। তারপর সেখান থেকে চলে এলাম।

–ওখান থেকে এসেই কি মিঃ রেডিংকে বললেন?

এবারেও দেখলাম কেমন ইতস্তত করলেন। পরে বললেন, হ্যাঁ, সবকথা জানাই।

–আচ্ছা, সেই সময় ভিকারেজ থেকে কাউকে ঢুকতে বা বেরুতে দেখেছিলেন?

-না। তবে ফেরার পথে মিস মারপলের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। উনি বাগানে ছিলেন। দাঁড়িয়ে দু-চারটা কথা বলেছি।

কথা শেষ করে মিসেস প্রথেরো সরাসরি মিঃ মেলচেটের দিকে তাকালেন। বললেন, সবকিছুই অকপটে স্বীকার করলাম। দয়া করে আমাকে আর বিরক্ত করবেন না। এবার আপনি আপনার যা করণীয় করুন।

ডাক্তার হেডক উঠে দাঁড়িয়ে তার কাছে গিয়ে নাড়ী দেখলেন। নিচু স্বরে বললেন, আমি এখন এখানে থাকব মিঃ মেলচেট। আপনি এঁর একটা ব্যবস্থা যতক্ষণ না করছেন, এঁকে একলা থাকতে দেওয়া ঠিক হবে না।

মেলচেট মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন। আমরা দুজনে নিচে নেমে এলাম।

.

০৮.

 পুলিস স্টেশন হয়ে আমাকে নিয়ে মিঃ মেলচেট উপস্থিত হলেন মিস মারপলের বাড়ি। আমি দুজনের পরিচয় করিয়ে দিলাম।

মিস মারপলকে কয়েকটা প্রশ্ন করবেন বলেই চীফ কনস্টেবল এসেছিলেন। সে কথা শুনে মিস মারপল নীরবে সম্মতি জানালেন।

মিঃ মেলচেট বললেন, আপনার বাড়ি আর বাগানের দূরত্ব দেখে মনে হচ্ছে আপনি শুনলেও শুনতে পারেন। কাল সন্ধ্যাবেলা সন্দেহজনক কোন শব্দ কানে এসেছিল?

মিস মারপল বললেন, কাল বিকেল পাঁচটা থেকে আমি বাগানে ছিলাম। পাশের বাড়িতে কিছু হলে সেখান থেকে শোনা সম্ভব নয়।

–তবে একটা কথা। গতকাল কি কোন সময়ে মিসেস প্রথেরো এপাশ দিয়ে গিয়েছিলেন?

–হ্যাঁ। তাকে যেতে দেখেছি। আমি ডেকেছিলাম। আমার বাগানের গোলাপ দেখে ও খুব। মুগ্ধ হয়েছিল।

-তখন সময়টা মনে আছে?

-তখন সোয়া ছটা বেজে মিনিট দুয়েক বেশি হয়েছে। খানিক আগেই চার্চের ঘড়ির শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম।

–বেশ, তারপর কি হল?

-মিসেস প্রথেরো আমাকে বলল, তার স্বামীকে ডাকতে ভিকারেজে এসেছে। ওকে আমি গলিটা দিয়ে আসতে দেখেছিলাম। যাওয়ার সময় গেল ভিকারেজের পেছন গেট দিয়ে বাগান পার হয়ে।

-উনি গলির দিক থেকে এসেছিলেন?

-হ্যাঁ। একটু পরেই তাকে বাড়ির কোণটা ঘুরে যেতে দেখলাম। মনে হয় মিঃ প্রথেরো এখানে ছিলেন না। যাবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে এসেছিল।

-তারপর?

–দেখলাম স্টুডিওটার দিকে চলে গেল। ওর ঘরটা মিঃ ক্লেমেন্ট রেডিংকে আঁকার কাজের জন্য দিয়েছিলেন।

–আপনি কোন গুলির শব্দ শুনতে পাননি? একটু আগে কি পরে?

-হ্যাঁ। সেই শব্দটা এসেছিল বনের দিক থেকে। মিসেস প্রথেরো চলে যাবার মিনিট পাঁচেক পরে। আমি নিশ্চিত যে শব্দটা বনের দিক থেকেই এসেছিল।

-তারপর কি হল?

-তারপর মিঃ লরেন্সকে দেখলাম রাস্তা ধরে জঙ্গলের দিক থেকে আসছে। ভিকারেজের গেটের সামনে এসে দাঁড়াল, চারদিক একবার সতর্কভাবে তাকিয়ে দেখল

–আপনাকে দেখতে পেয়েছিল?

-মনে হল পায়নি। কেন না, ওই সময়েই আমি নিচু হয়ে এলিয়ে পড়া একটা ফুলগাছ ঠিক করে দিচ্ছিলাম। পরে দেখলাম গেট দিয়ে ঢুকে স্টুডিওর দিকে যাচ্ছে।

–মিঃ লরেন্স তাহলে বাড়িটার কাছে যায়নি?

-না। স্টুডিওর দিকেই চলে গিয়েছিল। ওর সাড়া পেয়েই বোধহয় মিসেস প্রথেরো ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর ওরা দুজনে ঘরে চলে গেল।

-কতক্ষণ পরে ওরা স্টুডিওর থেকে বেরিয়ে আসে?

–মিনিট দশেক পরেই। চার্চের ঘড়িতে সাড়ে ছটা বাজতে শুনেছিলাম। গেট দিয়ে বেরিয়ে ওরা গলিতে চলে আসে। ঠিক সেই সময়েই বনের দিকে রাস্তা দিয়ে? আসতে চোখে পড়ল। তিনি এসে এদের দুজনের সঙ্গে যোগ দিলেন। তারপর তিনজনে মিলে গ্রামের দিকের রাস্তা ধরে চলে গেলেন।

একটানা কথাগুলো বলে একটু থামলেন তিনি। পরে বললেন, আমার ধারণা রাস্তাটার প্রান্তে আসার পরে ওদের সঙ্গে মিস ক্রেমের সঙ্গে দেখা হয়। মিস ক্রেমই হবে, ওর পরণের ভীষণ ছোট স্কার্টটা আমি চিনতে পেরেছিলাম। মিস ক্রেমও ওদের সঙ্গে যোগ দেয়।

–আপনার দৃষ্টিশক্তির প্রশংসা করতে হয় মিস মারপল। আচ্ছা, মিসেস প্রথেরো আর রেডিং–এর হাঁটাচলার মধ্যে কোন রকম অস্বাভাবিকতা নজরে পড়েছিল আপনার?

–অর্থাৎ আপনি বলতে চাইছেন, ওদের মনের অবস্থা বা ভাবভঙ্গী কেমন ছিল, তাই তো?

–হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক তাই।

–ওরা খুব স্বাভাবিকভাবেই গল্প করতে করতে হাঁটছিল। আচ্ছা, মিসেস প্রথেরো কি স্বীকার করেছে, যে খুনটা সেই করেছে?

মিঃ মেলচেট বিস্মিত স্বরে বললেন, আশ্চর্য! আপনি আঁচ করলেন কি ভাবে?

-এটাই তো স্বাভাবিক, হাসলেন মিস মারপল, কিন্তু ঘটনাটা ঠিক নয়। মিসেস প্রথেরোর মত মহিলার পক্ষে এমন ঘটনা কিছুতেই সম্ভব নয়। তা, কি দিয়ে খুন করেছে বলে বলেছে?

-পিস্তল দিয়ে।

–কোথায় পেল সেটা?

–ওটা নাকি সঙ্গে করে এনেছিল।

 মিস মারপল হঠাৎ জোরের সঙ্গে বলে উঠলেন, না, না ও সঙ্গে করে কোন পিস্তল আনেনি। ওই ধরনের কিছুই ওর সঙ্গে ছিল না।

মিঃ মেলচেট কয়েক মুহূর্ত কি ভাবলেন। পরে বললেন, এমনতো হতে পারে, হাতব্যাগে অস্ত্রটা ছিল?

মিস মারপল বললেন, ওর সঙ্গে কোন হাত ব্যাগই ছিল না।

মিঃ মেলচেট হঠাৎ বলে উঠলেন, আমি দেখছি উল্টে পড়া ঘড়ির সময় ছটা বাইশের সঙ্গে এই ঘটনাগুলো বেশ খাপ খেয়ে যাচ্ছে।

মিস মারপল আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ঘড়িটা সম্পর্কে মিঃ মেলচেটকে এখনো কিছু

ঘড়ির কি ব্যাপার? বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন মিঃ মেলচেট।

এবারে ঘড়ির ব্যাপারটা প্রকাশ করবার একটা সুযোগ আমি পেলাম। শুনে মিঃ মেলচেট বিরক্তির সঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, ঘড়িটা যে ফার্স্ট যায় এই কথাটা গতকাল আপনি ইনসপেক্টর শ্লাককে কেন জানাননি?

–আমি বলবার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ইনসপেক্টর আমাকে সেই সুযোগ দেননি।

মিঃ মেলচেট মাথা নত করে কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। পরে বললেন, দুজন পরপর খুনের কথা স্বীকার করেছে, আরও দু-একজন যদি একই দাবি নিয়ে হাজির হয়, তাহলে আমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

মিস মারপল মৃদু হেসে ধীরে ধীরে বললেন, আমি আপনাকে একটা পথ বাতলাতে পারি। রেডিং নির্দোষ একথা যদি মিসেস প্রথেরোকে আর মিসেস প্রথেরো নির্দোষ এই কথাটা রেডিংকে বোঝাতে পারা যায় তাহলে দেখবেন ওরা দুজনেই সত্যি কথাটা প্রকাশ করবেন। ওদের সত্য জবানবন্দি আপনাদের পক্ষে খুবই সাহায্যকারী হবে।

মিঃ মেলচেট বললেন, তবে আমার কিন্তু মনে হচ্ছে মিঃ প্রথেরোকে খুনের ব্যাপারে ওদের দুজনকে সন্দেহ করা যায়। দুজনেরই স্বার্থ রয়েছে এতে।

মিস মারপল বললেন, আমি ঠিক ওকথা বলতে চাইনি।

-তবে আপনি কি অন্য কাউকে সন্দেহ করেন?

 মিস মারপল হাসলেন। বললেন, একজন কি বলছেন, আমি অন্তত এমন জনা সাতেকের নাম বলতে পারি, যাদের প্রত্যেককেই এই খুনের জন্য দায়ী বলে মনে হতে পারে।

মিঃ মেলচেট কথাটা শুনে মিস মারপলের দিকে হাঁ হয়ে তাকিয়ে রইলেন। পরে বললেন, আপনি বলছেন কি! এরা সবাই কি এই সেন্ট মেরী মিড-এরই বাসিন্দা?

মিস মারপল হাসতে হাসতে ঘাড় নাড়লেন।

.

০৯.

 মিঃ মেলচেটের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি ভিকারেজে ফিরে এলাম। বসার ঘরে দেখলাম গ্রীসলডা মিস ক্রেমের সঙ্গে বসে কথা বলছেন। গ্রীসলডা জানাল, আমার সঙ্গে দেখা করবার জন্য উনি এসেছেন।

মিস ক্রেম গ্রীসলডার কথার সূত্র ধরে বলল, এমন বিচ্ছিরি একটা ব্যাপার ঘটে গেল, মিঃ ক্লেমেট যে ভাবতে পারছি না। ভাবলাম, আপনার এখানে এলে হয়তো সবকিছু জানতে পারব। আমি ঠিকই করে নিয়েছি, এ ব্যাপারে যথাসাধ্য আমি সহযোগিতা করব। যাই হোক, এদিককার ঘটনা কিছু বলুন, সারাদিনই তো আপনি পুলিসের সঙ্গে কাটালেন। পুলিস কি ভাবছে?

মিস ক্রেমের কৌতূহল আমাকে চমৎকৃত করল। ধীরে ধীরে বললাম, পুলিস এখনো কিছু ঠিক করতে পারছে না।

-তাহলে কি ওরা মিঃ রেডিংকে আর আসামী বলে ভাবছে না? অমন সুন্দর চেহারার একটা মানুষ, কি সুন্দর মুখের হাসি, আমি তো প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি যে পুলিস ওকে গ্রেপ্তার করেছে।

-পুলিসের জন্য কিছু করতে হয়নি। লরেন্স রেডিং নিজেই গিয়ে পুলিসের কাছে অপরাধ স্বীকার করেছে।

–সেকি! মিস ক্ৰ্যেম বিস্মিত হলেন, সত্যি সত্যি যে খুন করে সে কি কখনো এমন করে ধরা দেয়। এর পেছনে নিশ্চয় অন্য কোন কারণ আছে। এরপর আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল। মিঃ প্রথেরোকে খুন করেছে কেন, সেই ঝগড়ার জন্য?

আমি বললাম, খুনটা যে সেই করেছে, সে-ব্যাপারে এখনো কেউ নিশ্চিত নয়। বললাম আমি।

–তবু, দোষ যখন স্বীকার করেছে, তার কারণও নিশ্চয় কিছু দেখিয়েছে?

–হ্যাঁ। কিন্তু পুলিস তা বিশ্বাস করেনি।

-যত্তসব উদ্ভট ব্যাপার দেখছি। না, এবারে উঠছি। দেখি মিঃ স্টোন কি করছে। রেডিং-এর গ্রেপ্তারের খবরটা শুনলে উনিও অবাক হবেন।

গ্রীসলডা দরজা বন্ধ করে ফিরে এসে বলল, কৌতূহল মেটাবার জন্যই মেয়েটা এখানে এসেছিল, আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না।

অন্য আর কি কারণ থাকতে পারে। কৌতূহল খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।

যাকগে ওসব। আমি তখন থেকে হাঁ করে আছি, এবারে আমাকে সব খুলে বল।

আমি সকলের সমস্ত ঘটনা ওকে খুলে বললাম। শুনে ও বলল, প্রেমটা তাহলে লরেন্স আর অ্যানার মধ্যে।

আমরা আরো লেটিসকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করে মরছি। গতকাল মিস মারপল এরকমই একটা ইঙ্গিত দিয়েছিল মনে পড়ছে।

–হ্যাঁ। আমি বললাম।

এরপর আমি মেরীকে ডেকে পাঠালাম। ওকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করতে হবে।

মেরী এলে বললাম, আচ্ছা মেরী, মনে করে দেখতো কাল সন্ধ্যাবেলা কোন গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছিলে কিনা।

মেরী বলল, ও রকম কিছুই শুনিনি। তাহলে তো আমি উঁকি মেরে দেখতাম কি হয়েছে।

–কিন্তু মিস মারপল বলছেন, বনের দিক থেকে একটা শব্দ শুনেছিলেন। গুলির শব্দ না হোক, মনে করে দেখতো, অন্য কোন রকম শব্দ তুমি শুনেছিলে কিনা?

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মনে হল মেরী মনে করবার চেষ্টা করছে। পরে বলল, হ্যাঁ, মনে পড়ছে। সেরকম একটা শব্দ কানে এসেছিল বটে।

–তখন সময় কটা হবে?

–তা ঠিক ঠিক বলতে পারব না। তবে চা পানের পরে যে ওটা শুনেছি তা নিশ্চিত।

–ঠিক ঠিক না হলে, কাছাকাছি সময়টা বলতে পারবে না।

-তা বলতে পারব না। কাজে ব্যস্ত থাকি, ঘড়ির দিকে সারাক্ষণ নজর রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

–মিঃ লরেন্স এখানে আসার অনেক আগেই কি শব্দটা তুমি শুনেছিলে?

–হ্যাঁ, তা বলতে পারব। এই মিনিট দশ পনেরো আগে হবে।

-ঠিক আছে, তুমি কাজে যাও।

বৈঠকখানায় বসেই গ্রীসলডার সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে লাগলাম।

একটু পরেই মেরী এসে জানাল, মিঃ মেলচেট এসেছেন। পড়ার ঘরে বসে আছেন।

.

১০.

 পড়ার ঘরে এসে দেখলাম, ইনসপেক্টর স্লাক এবং মিঃ মেলচেট উপস্থিত। ইনসপেক্টরের মুখ গম্ভীর। মেলচেটের মুখে রাগ রাগ ভাব।

ওদের সঙ্গে কথা শুরু করেই বুঝতে পারলাম, দুজনের মধ্যে মতের অমিল ঘটেছে।

 মেলচেট বলল, মিঃ রেডিং-এর নির্দোষিতা মিঃ স্লাক মেনে নিতে পারছেন না।

মিঃ স্লাক বললেন, ও যদি খুনই না করবে তাহলে সেধে অমন করে ফাঁসির দড়ি গলায় নিতে চাইবে কেন?

মেলচেট বললেন, মিসেস প্রথেরোও তো ওই একই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।

-ওটা স্ত্রীলোকেদের আবেগ বলেই ধরে নেওয়া যায়। আবেগের মাথায় ওরা ওরকম অনেক কাণ্ডই করে। কিন্তু রেডিং-এর ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। খুন করার পর ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। ও যে অপরাধ করেছে তার প্রমাণ পিস্তল। ওটাকে তো অস্বীকার করা যায় না।

-তাহলে কি বলতে চাও রেডিং মিঃ প্রথেরোকে সাড়ে ছটার সময় গুলি করেছে?

–না, তা নয়।

–ওই সময়ে রেডিং-এর গতিবিধি তুমি খুঁটিয়ে দেখেছ?

-অবশ্যই। শোন তাহলে বলি, ছটা বেজে যখন দশ, তখন রেডিং গ্রামে ছিল। সেখান থেকে পেছনের রাস্তা দিয়ে যখন সে আসে তখনই মিস মারপলের চোখে পড়ে। এই মহিলাটি খুব একটা ভুল যে করেন না তাতো জানই।

যাই হোক, মিসেস প্রথেরো তার বাগানের স্টুডিও ঘরে অপেক্ষা করছিলেন। রেডিং সেখানে তার সঙ্গে গিয়ে দেখা করে।

সাড়ে ছটা নাগাদ তারা আবার স্টুডিও ঘর থেকে বেরিয়ে গ্রামের রাস্তা ধরে চলে যায়। রাস্তার শেষ প্রান্তে ওদের সঙ্গে দেখা হয় ডঃ স্টোনের।

একটানা অতগুলো কথা বলে ইনসপেক্টর দম নেবার জন্য একটু থামলেন। পরে বললেন, এরপর পোস্ট অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কথা বলার পর মিসেস প্রথেরো মিস হার্টনেলের বাড়ি যান বাগান বিষয়ে একটা বই আনতে। সেখানে তিনি সাতটা অবধি ছিলেন।

সেই সময় মিসেস প্রথেরোর ভাবভঙ্গী কেমন ছিল?

–মিস হার্টনেলের কাছ থেকেই জানতে পেরেছি খুব স্বাভাবিক মেজাজেই তিনি ছিলেন।

–বেশ, তারপর বলে যাও।

-মিসেস প্রথেরো চলে গেলে রেডিং ডঃ স্টোনের সঙ্গে ব্ল-বার-এ যায়। একসঙ্গে মদ খায়। সেখান থেকে ডঃ স্টোনকে বিদায় দিয়ে রেডিং সোজা চলে আসে ভিকারেজের দিকে। তখন সাতটা বেজে কুড়ি মিনিট। তখন অনেক লোকই তাকে দেখেছে।

-তারপর?

–স্টুডিও ঘর থেকে সদর দরজায় এসে ভিকার-এর খোঁজ করে। জানতে পারে ভিকার নেই এবং মিঃ প্রথেরো পড়ার ঘরে অপেক্ষা করছে। সঙ্গে সঙ্গে রেডিং সেখানে চলে আসে, ভেতরে ঢুকে গুলি চালায়।

ঠিক যে ভাবে সে জবানবন্দিতে বলেছে, এটাই হল প্রকৃত ঘটনা।

মেলচেট বলল, তাহলে তো ডাঃ হেডকের সাক্ষ্যটাকে অগ্রাহ্য করতে হয়। তিনি জানিয়েছেন খুনটা করা হয়েছে সাড়ে ছটার মধ্যেই। তার বেশি কিছুতেই নয়।

–আজকাল ডাক্তাররা অনেক ভুলভাল করে। বললেন ইনসপেক্টর।

–এটাতো কোন রুগী দেখার ব্যাপার নয়, শ্লেষের সুরে বললেন মিঃ মেলচেট, মৃতের সরকারী ডাক্তারী রিপোর্ট তুমি অগ্রাহ্য করতে পার না।

আমি বললাম, আমার সাক্ষ্যটাও অগ্রাহ্য করবার নয়। আমি ছুঁয়ে দেখেছি। শরীর একেবারে ঠাণ্ডা। আমার যে ভুল হয়নি শপথ করে বলতে পারি।

-তাহলে ভেবে দেখ স্লাক। বললেন মিঃ মেলচেট।

–তাহলে তো আর বলার কিছু থাকছে না আমার। বলতে হবে এটা একটা মজাদার কেস। রেডিংকে আর ফাঁসিতে ঝুলতে হবে না।

একটু থেমে পরে বললেন, একটা কাজ করা যাক। ফের গোড়া থেকে জেরা শুরু করা যাক।

আমার দিকে চোখ ফিরিয়ে বললেন, ঘড়ির ব্যাপারটা আমাকে আপনার আগে জানানোই উচিত ছিল।

আমি মিঃ মেলচেটকে যে কৈফিয়ত দিয়েছিলাম তারই পুনরাবৃত্তি শোনালাম তাকে।

শুনে বিরক্ত হয়ে মিঃ স্লাক বললেন, যাই হোক, এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা আমাকে জোর করেই শোনানো যেত।

যাই হোক, মিঃ মেলচেট বললেন, এখন আমাদের প্রথম কাজ মিসেস প্রথেরো ও রেডিং-এর কাছ থেকে সত্যি কথাগুলো জানা।

তাই সাব্যস্ত হল শেষ পর্যন্ত। মিঃ মেলচেট ডাঃ হেডককে ফোন করে জানালেন মিঃ প্রথেরেকে নিয়ে ভিকারেজে চলে আসার জন্য।

আর মিঃ স্লাক থানায় জানিয়ে দিলেন লরেন্স রেডিংকে নিয়ে আসার জন্য।

ফোনের কাছ থেকে সরে এসে মিঃ স্লাক বললেন, তাহলে এই ঘরেই আমরা কাজ শুরু করব।

আমি বললাম, তাহলে আমার তো এখানে না থাকাই উচিত।

–তবে রেডিংকে নিয়ে এলে ইচ্ছে করলে আপনি আসতে পারেন। আপনার সঙ্গে তার সম্পর্কটা বন্ধুর মত, সত্য কথা বের করতে আপনার প্রভাব কাজ দেবে।

আমি অতঃপর পড়ার ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লাম।