০২.
পুরো এক সপ্তাহ দেখতে দেখতে কেটে গেল। এই এক সপ্তাহ ধরে খামারবাড়ির সব কাজকর্ম রান্নাবান্না এবং ক্যারলের সুশ্রুষা স্টিঙকে একাই করতে হল। রয় ওকে সামান্যতম সাহায্যও করল না। শুধু সে যেন কার অপেক্ষায় চঞ্চল হয়ে উঠল। কিন্তু সপ্তাহের শেষাশেষি সে একটু স্বাভাবিক হয়ে উঠল। তার শুধু একটাই জেদ যে স্টিঙ কোথাও যেতে পারবে না। পরিস্থিতি বিচার করে স্টিঙ তার কথা মেনে চলাই যুক্তিযুক্ত বলে মেনে নিল।
ক্যারল যেহেতু স্টিঙের ঘরে থাকে তাই স্টিঙও রয় একঘরে ঘুমোয় তাতে স্টিঙ দেখল যে ওর ঘুম খুব পাতলা। একটু শব্দ হলেই রয় আতঙ্কে উঠে বসে।
এদিকে ক্যারলের দ্রুত উন্নতি হচ্ছিল। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটলেও একটা ব্যাপার ঘটল তা হল সে তার আগের নাম ঠিকানা প্লেনভিউ কিছুই মনে করতে পারছিল না। আর ধীরে ধীরে সে স্টিঙের নিকটে আসতে লাগল। অসহায়ের মতো সে স্টিঙকে আঁকড়ে ধরলো। স্টিঙও ক্যারলের প্রতি গভীর মমতাবোধ টের পেল।
মেয়েদের ব্যাপারে স্টিঙ চিরদিনই খুব লাজুক। সে ভেবে পাচ্ছিল না যে কি করে এই পরিস্থিতি সামাল দেবে। ক্যারল সুস্থ হবার পরেই সারাক্ষণ স্টিঙের পিছন পিছন ঘুরে বেড়াতে লাগল।
ক্যারলের মানসিক ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ থাকায় স্টিঙের ধারণা হলো মাথার আঘাত শুধু ওর স্মৃতিশক্তি লুপ্ত করে দিয়েছে তা নয়। ওকে শিশুসুলভও করে তুলেছে। স্টিঙ ভাবল ওর সঙ্গে প্রেম করে লাভ হবে না। কারণ স্মৃতি ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ও সব ভুলে যাবে।
এদিকে রয় ভাবলো মেয়েটা এখন ভাল হয়ে গেছে। ওকে নিয়ে এখন ফুর্তি করা যাবে। যদিও ক্যারলের সমস্ত আগ্রহ এখন শুধু স্টিঙের দিকে রয়ের দিকে ওর কোন ভ্রূক্ষেপও নেই।
একদিন সকাল বেলায় ক্যারলকে একটা জলাধারের দিকে ঘুরতে দেখে রয় তার হাত ধরলো। সে তার পথ আটকাতে ক্যারল বলল, আমি স্টিঙকে খুঁজছি যে।
স্টিঙের কথা বাদ দাও, এই বলে ও ক্যারলকে জড়িয়ে ধরলো।
ছেড়ে দাও আমি স্টিঙকে খুঁজবো।
ঠিক এমনি সময় স্টিঙ দুজনকে ছাড়িয়ে দিয়ে রয়কে প্রচণ্ড ঘুষিতে ধরাশায়ী করে ফেললো।
ক্যারল বলল ওকে তুমি মারলে কেন? আমি চাই না ও তোমাকে ভয় দেখাক।
ঠিক আছে তোমার ভাল না লাগলে আমি তোমাকে চুমু খেতে দেবো না।
রয় বলল, তোমার ঘুসিটুসিগুলো সামলে রাখো স্টিঙ তুমি যদি ওরদিকে হাত বাড়াও তাহলে ফাটাফাটি হয়ে যাবে তোমার সঙ্গে সে তোমার কাছে যতই পিস্তল থাকুক।
তোমাকে আমি যদি খুন করি কে আমাকে আটকাবে।
দ্যাখো রয় মেয়েটার দিক থেকে হাত না সরালে আমি তোমাকে দেখে নেব।
রয় আর স্টিঙ এরপর ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। স্টিঙ বলল তুমি কার ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে। বেরাচ্ছ। কি বাজে কথা বলছ, আমি মোটেই ভয় পাইনি। আর বাজে কথা বন্ধ কর, না হলে তোমাকে খতম করে দেব। কেন যে আগেই খতম করে দেইনি।
দাওনি, তার কারণ, তুমি একা থাকতে ভয় পাও। তুমি চাও তোমার কিছু হলে আমি তোমার পেছনে থাকি।
রয় বলল, তুমি একটা পাগল যাই হোক আমি এখন ঘুম লাগাতে চাই। কিন্তু রয়ের কিছুতেই ঘুম এল না। সে ক্যারলের কথা ভাবছিল। মেয়েটা তাকে যে বাধা দেবে না সে জানে। এক স্টিঙ তার ঘুম না ভাঙ্গিয়ে যদি ওর ঘরে যাওয়া যায়! কিন্তু হঠাৎ বাইরের দিকে চোখ পড়তে ও দেখল বাইরে একটা নিঃশব্দ ছায়ামূর্তি ভোলা জানালার পাশ দিয়ে পলকের মধ্যে অন্য ধারে চলে গেল।
ভীত দৃষ্টিতে ও তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। তার পর মনে হল একটা শব্দ ক্রমশ এগিয়ে আসছে। তখন সে স্টিঙকে ধরে প্রাণপণে ঝকানি দিতে লাগল। সঙ্গে সঙ্গে স্টিঙের ঘুম ভেঙ্গে গেল। রয়ের পাণ্ডুর মুখ দেখে স্টিঙ বুঝল যে একটা কিছু ঘটেছে।
রয় বলল, বাইরে কে যেন হাঁটছে।
আরে ও তো ক্যারল।
তারপর উঠে দাঁড়িয়ে দেখল ক্যারলই হাঁটছে। ও দম ফেলে বললো। যাঃ বাব্বা কি করছে! আমার তো দম বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে।
স্টিঙ বলল, আস্তে কথা বল। ও হয়তো ঘুমের ঘোরে হাঁটছে।
রয়ের ভয় ভাব কেটে গিয়েছিলো। এখন চোখের সামনে সাদা পাজামার আড়ালে ক্যারলের কামনামদির শরীর, ওর নিরাবরণ পা এসব দেখে রয় অস্থির হয়ে উঠল।
ও বলল, সত্যি তাকিয়ে থাকার মতো জিনিষ, তাই না স্টিঙ।
স্টিঙ বিরক্ত হয়ে ওকে চুপ করতে বললো। আসলে ক্যারল কেন এমন পায়চারী করছে তাই নিয়ে স্টিঙ চিন্তা করছিল।
সহসা ক্যারল থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল ও যেন বুঝতে পেরেছে যে কেউ ওকে লক্ষ্য করছে।
ক্যারলের মুখে জ্যোৎস্না এসে ঢলে পড়েছে। সেই আলোয় ক্যারলের মুখের এক বিচিত্র পরিবর্তন ওরা লক্ষ্য করল।
স্নায়বিক বিকলতার জন্য ওর ঠোঁটের প্রান্ত কেঁপে কেঁপে উঠছিল। এরপর সে জানালা থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।
রয় বলল–মেয়েটা কেমনভাবে তাকাচ্ছিল দেখেছো? স্টিঙ বললো, দেখেছি কিন্তু এখন দেখতে হবে যে ও কি করছে।
দেখতে যাচ্ছো যাও, কিন্তু সাবধানে থেকো। ও তোমার চোখদুটো না আবার খুবলে নেয়।
স্টিঙ কথা না বলে এগিয়ে গেলো ক্যারলের ঘরের দিকে। দেখলোক্যারল বিছানায় শুয়ে আছে। চোখ বোজা। তার মুখেচাঁদের আলো এসে ছড়িয়ে পড়েছে। যেন এক বিষাদময়ী সৌন্দর্যের প্রতিমা বিছানায় গা এলিয়ে রয়েছে।
সে রাতে রয়ের মতো স্টিঙেরও ভাল ঘুম হল না।
.
জো আর গারল্যান্ড গ্লেনভিউ মেন্টাল স্যানাটোরিয়ামের পেছন দিকের বিশাল গ্যারেজে একটা অ্যাম্বুলেন্সকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করছিল।
জো কে স্যাম বলল, ওই দেখো খবরের কাগজের লোকটা আবার এদিকেই আসছে।
জো বলল–লোকটা আচ্ছা নাছোড়বান্দা, এই লোকটাকে বাজিয়ে দেখলে কেমন হয় বল
স্যাম বলল–ভালই। লম্বা-রোগা ফিল ম্যাগার্থ তখন অলস গতিতে ওদের দিকে এগিয়ে আসছিল। এখানে সে গত সপ্তাহ থেকে ঘুরঘুর করছে যাতে করে স্যানিটোরিয়াম থেকে পালিয়ে যাওয়া মেয়েটার সম্পর্কে জুতসই কোন খবর সংগ্রহ করতে পারে এই আশায়। কিন্তু ডাক্তার ট্রেভার্সের ছোট একটা অপ্রয়োজনীয় জবানবন্দি আর ক্যাম্পের মুখ থেকে দুটো শব্দ–বেরিয়ে যাও। শোনা ছাড়া তার আর কিছুই লাভ হয়নি। ম্যাগার্থ এ জেলায় স্থানীয় সংবাদ সংগ্রাহক। সংবাদ সংগ্রহে সে বেশ পটু। তার ধারণা মেয়েটি যে এখান থেকে পালিয়ে গেল এর পেছনে নিশ্চয়ই ছোটবড় ঘটনা আছে। তাই সে আজ গ্যারল্যান্ড আর জোকে একটু তলিয়ে দেখার জন্য এসেছে।
অ্যাম্বুলেন্সের গায়ে হেলান দিয়ে ম্যাগার্থ বলল, কিহে পাগলীটার কোন খোঁজ খবর পেলে।
জো আর গ্যারল্যান্ড দুজনেই বলল যে তাদের কাছে জানতে চেয়ে কি লাভ, তারা তো মাইনে করা চাকর।
ম্যাগার্থ বলল, আমি ভেবেছিলাম তোমরা কিছু জেনে থাকবে। আসলে আমার টাকার থলেটা দিন দিন ভারী হয়ে উঠছে একটু হালকা করতে চাই।
তারা বলল, কেমন ভারী?
খুব ভারী আর মোটা। তাই বলছিলাম তোমরা যদি কোন খবর জেনে থাকো তাহলে স্বচ্ছন্দে মুখ খুলতে পারো।
ভয় আবার কি দুজন যদি একশো ডলার পাই তাহলে খবরাখবর দিতে পারি।
খবরটা কিন্তু টাকার উপযুক্ত হওয়া চাই। অবশ্যই উপযুক্ত, কি বলছেন, এ একেবারে সারা জাগানোর মতো খবর। অ্যাটম বোমার চাইতেও মারাত্মক।
শোনা যাক কি রকম মারাত্মক।
স্যাম ম্যাগার্থের দেওয়া নোটগুলো গুছিয়ে নিতে নিতে বলল মেয়েটা হচ্ছে জন ব্লানডিশের উত্তরাধিকারিণী। কি খবরটা কেমন।
এ আবার কি গুল খোকন।
গুল মোটেই নয়। জন ব্লানডিশের একটা মেয়ে ছিল তাকে বহুবছর আগে গুম করা হয়।
.
পরদিন সকালে স্টিঙ আর ক্যারল প্রাতঃরাশ খাচ্ছিল। রয় অনেক আগে উঠে ট্রাউট মাছ শিকার করতে গেছে।
স্টিঙ একসময় ক্যারলকে বলল, কাল রাতে ভাল ঘুম হয়েছিল।
ক্যারল বলল, কি একটা স্বপ্ন দেখছিলাম। স্টিঙ বলল, কাল রাতে তুমি উঠেছিলেনাকি আমিও স্বপ্ন দেখছিলাম।
ক্যারল দুহাতে মাথা টিপে বলল–কি জানি কিছুই মনে করতে পারছি না। অন্ধকার দেখেও ভয় লাগে।
কি স্বপ্ন দেখো বল তো।
ঠিক মনে পড়ছে না। একটা নার্সকেই বারবার স্বপ্ন দেখি।
স্টিঙ সমস্ত দিন চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে থাকলো। যখন সন্ধ্যের পর রয় ফিরে এলো তখনো তার উদ্বিগ্নতা কাটেনি।
এদিকে স্টিঙ আর রয় যখন ঘরে ঘুমুতে গেল, রয় ঘুমের ভান করে পড়ে থাকলো। যখন সে বুঝলো যে স্টিঙ ঘুমিয়ে পড়েছে তখন সে বিছানা থেকে উঠে পড়ল। সে ভাবল ক্যারল তাকে চুমু খেতে দিয়েছে কোন বাধা দেয় নি। অতএব স্টিঙকে না জানিয়ে ক্যারলের কাছে পৌঁছতে পারলে সে ক্যারলকে নিয়ে মজা লুটতে পারবে।
রয় নিঃশব্দে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। বারান্দার শেষপ্রান্তে ক্যারলের ঘর। রয় ঘরে ঢুকে দেখলো ক্যারল চোখ মেলে শুয়ে আছে। সে চোখে বিন্দুমাত্র.ভয় বা আশঙ্কার ছায়া নেই।
রয় ক্যারলকে বলল, এই যে আমি তোমাকে একটু সঙ্গ দিতে এলাম। আমাকে দেখে তুমি ভয় পাওনি তো? মনে মনে ক্যারলের অপার্থিব সৌন্দর্য দেখে রয় শরীরে জ্বরের উষ্ণতা অনুভব করছিল।
ক্যারল শান্ত গলায় বলল–আমি জানতাম আজ রাতে তুমি আমার ঘরে আসবে। রয় অবাক হয়ে বলল, তার মানে তুমি চাইছিলে আমি এখানে আসি।
ক্যারল তার দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে বলল, আমি বুঝতে পারছিলাম কারণ আজ সমস্ত সন্ধ্যে তুমি আমাকে লক্ষ্য করছিলে। তাই আমার মনে হচ্ছিল যে তুমি আসবে।
রয় মুচকি হেসে ওর গায়ে হাত রাখল ও বলল, আমি তোমাকে আদর করতে চাই।
ক্যারল বলল, কিন্তু স্টিঙ তা চায় না।
ও জানতে পারবে না। এই বলে রয় ক্যারলকে নিবিড় করে জড়িয়ে ধরল। হঠাৎ কানে ক্যারলের মৃদু ধাতব হাসির শব্দ যাওয়াতে সে চমকে উঠলো।
রেগে বলল, অত হাসির কি আছে! এই বলে সে ক্যারলকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু এর মধ্যে ক্যারল তার কঠিন হাত দিয়ে রয়ের ঘাড় খিমচে ধরে রয়ের চোখের ওপর নিজের তীক্ষ্ণ দাঁত বসিয়ে দিলো।
অন্য ঘরে স্টিঙের ঘুম আচমকা ভেঙ্গে গেলো। বিছানা ছেড়ে জানলার কাছে এগিয়ে গেল স্টিঙ, দেখলো সেখানে কেউ নেই। তারপর সেরয়ের বিছানায় হাত রাখল দেখলো কেউ নেই। সঙ্গে সঙ্গে তার মনে হলো ক্যারলের কথা। সে দরজার দিকে ছুটলো। এর মধ্যেই সে শুনতে পেলো, স্টিঙ স্টিঙ তাড়াতাড়ি এসো। আমাকে বাঁচাও বলে রয় চীৎকার করছে।
কি হয়েছে, ঘরে ঢুকে বলল স্টিঙ।
দেখলো রয়ের মুখ রয় দুহাত দিয়ে ঢেকে রেখেছে। আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে টসটস করে রক্ত পড়ছে।
রয় বলল, স্টিঙ মেয়েটা আমার চোখ দুটো খুবলে দিয়েছে আমি অন্ধ হয়ে গেছি! ভগবানের দোহাই, আমকে বাঁচাও।
স্টিঙ রয়কে বলল, তুমি ওকে কি করেছিলে? তার পরেই সে দেখলো বারান্দার ওপরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ক্যারল তার দিকেই তাকিয়ে আছে ওর উদ্ধাঙ্গ অনাবৃত। একটু পড়েই ক্যারল সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠে তা দিয়ে ছুটতে শুরু করল।
ক্যারল ফিরে এসো স্টিঙ চীৎকার করে উঠল।
কিন্তু ক্যারল উধাও হয়ে গেল। স্টিঙ বুঝতে পারছিল না সে কি করবে। সে রয়ের হাত ধরে। বলল,উঠে পড়ো। তোমার এমন কিছু হয়নি। তারপর বহু কষ্টে তাকে শোবার ঘরে ঢুকিয়ে বিছানার উপর তুলে দিল।
বললো একটু স্থির হও। আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি, এই বলে ওষুধের বাক্স আনতে গেল।
রয় চীৎকার করে বললো, আমাকে ছেড়ে যেও না ও আবার ফিরে আসবে।
ঠিক আছে দাঁড়াও, আমি তোমার চোখদুটো ধুয়ে দিচ্ছি। তোমার খুব রক্ত বেরোচ্ছে তাই
তুমি কিছু দেখতে পাচ্ছে না।
না না আমি অন্ধ হয়ে গেছি, তুমি আমার সঙ্গে থাকো। ওরা আমাকে পেলেই খুন করে ফেলবে। এখন আমি অসহায় আমি আর নিজেকে রক্ষা করতে পারবো না।
-কারা তোমার পিছনে লেগেছে।
সুলিভ্যানরা। অবশ্য তুমি জানো যে ওরা কি মারাত্মক। ওরা পেশাদার খুনে ওদের কেউ চেনে না। আমাকে খুন করার জন্য লিটিল বার্নি ওদের ভাড়া করেছে।
এখানে ওরা তোমাকে খুঁজে পাবে না। তুমি নিরাপদ।
আচ্ছা এখন বলতো মেয়েটাকে তুমি কি করেছিলে।
কিছু না। ও বলেছিল ও জানতো আমি আসবো। ও আমাকে চুমু খেতে দিল। কিন্তু তারপর ওই আমার গলা পেচিয়ে ধরে আমার চোখ ওর সুতীক্ষ্ণ আঙ্গুল দিয়ে খুবলে দেয়। ওর গায়ে ভীষণ জোর। মেয়েটা পাগল স্টিঙ।
ও নিশ্চয়ই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আমি তোমাকে সাবধান করে দিয়েছিলাম।
কিন্তু এখন যদি সুলিভ্যানরা চলে আসে আমি কি করবো! তুমি আমাকে বাঁচাবে তো? এই বলে সে তার পিস্তলটা স্টিঙের হাতে তুলে দিল।
স্টিঙ বলল, তুমি একটু শান্ত হও। ওরা তোমাকে খুন করবে কেন?
কারণ আমি লিটল বার্নিকে ধোকা দিয়েছি। ও আমাকে অনেক দিন ধরে ঠকাচ্ছিল। তাই এবার যখন দুজনে মিলে একটা ব্যাঙ্ক ডাকাতি করি পুরো টাকাটাই আমি হাতিয়েনি। কিন্তু বার্নি আমার পেছনে সুলিভ্যানদের লাগিয়ে দিলো।
ওরা তোমাকে খুঁজে পাবে না।
ঠিকই পাবে। তুমি ওদের চেনো না।
.
দুটো কালো কাক। এই বর্ণনাটা সুলিভ্যানদের পক্ষে ষোলআনা খেটে যায়। ওদের দুজনের গায়ে কালো আটোসাটো ওভার কোট, কালো স্লাউচ টুপি মাথায়।কালো প্যান্ট আর কালো ছুঁচোল জুতোয় ওদের দেখলেই মনে হয় মূর্তিমান অমঙ্গল। তাছাড়া দুজনের গলাতেই রেশমী রুমাল বাঁধা থাকে।
ওরা কয়েক বছর আগে অবধি একটি ভ্রাম্যমান সার্কাসের দলে কাজ করত। ওরা ছিল দলের মুখ্য আকর্ষণ। প্রচারপত্রে ওদের সুলিভ্যান ব্রাদার্স নাম দেওয়া হত। আসলে ওরা মোটেই দুভাই নয়। ওদের আসল নাম ম্যাক্স গির্জা এবং ফ্রাঙ্ক ফুর্ট। কালো মখমলে মোড়া পাটাতনের সামনে দাঁড়ানো একটি মেয়েকে নিয়ে ফসফরাস মাখা ছুড়ির খেলা দেখাতো দুজনে।
এ খেলা সাড়া জাগানো হলেও শীগগিরই সার্কাস আর মেয়েটা দুটোই সুলিভ্যানদের কাছে একঘেয়ে হয়ে দাঁড়ালো।
আসলে মেয়েটার জন্যই তারা এ খেলা শেষ করে দেবে বলে ঠিক করল। মেয়েটি দেখতে ভালো। কিন্তু কাজের পরে সুলিভ্যানদের রীতি সে ঠিক বুঝতে পারছিল না। তাছাড়া সে একটা ভাড়ের সঙ্গে প্রেম করা শুরু করল। অবশেষে একদিন রাতে ইচ্ছাকরেই ম্যাক্স তার নিক্ষিপ্ত ছোরায় মেয়েটার গলা পাটাতনের সঙ্গে গেথে দিয়ে সমস্যার সমাধান করে ফেললো। আর তখনই তার মাথায় পেশাদার ঘাতক হবার পরিকল্পনা আসে। তাছাড়া সে ভাবল এই পথে অনেক পয়সা রোজগার করা যাবে।
সে ভাবলো এই পৃথিবীতে এমন অনেক নরনারী আছে যারা মোটা টাকার বিনিময়ে কোন একজনকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চায়। এখন ম্যাক্স যদি একাজটা করে তাহলে মোটা টাকাটা সেই পাবে। আর এতে কোন ঝুঁকিও নেই। কারণ হত্যার কোন উদ্দেশ্য প্রমাণিত হবে না। আর যথেষ্ট সতর্কতা নিয়ে কাজ করলে ধরা পড়ার কোন কারণই থাকবেনা। তার বন্ধু ফ্র্যাঙ্কের কথাটা মনঃপূত হল। ম্যাক্স জানতো ফ্র্যাঙ্কের চাইতে ভাল অংশীদার পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তারা চারিদিকে রটিয়ে দিলো যে তিন হাজার ডলার পারিশ্রমিক আর অন্য খরচ বাবদ সপ্তাহে একশো ডলারের বিনিময়ে তারা যে কোন মানুষকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবে। এত কাজ হাতে এসে গেলো যে তাতে সুলিভ্যানরা রীতিমতো অবাক হয়ে গেলো।
একটা কালো ঢাউস প্যাকার্ড ক্লিপারে চড়ে তারা সমস্ত দেশ ঘুরে বেড়ায়। নিঃশব্দে ওরা মৃত্যু বয়ে আনে। পুলিস ওদের সম্পর্কে কিছুই জানতে পারতো না। কারণ যাকে এরা মারত সেও পুলিশের ভয়ে ভীত থাকতো এবং এজন্য পুলিশের আশ্রয় নিতে পারতো না। যাকে খুন করতো তার একটা ফটো, নাম এবং শেষ ঠিকানা তাদের একমাত্র প্রয়োজন ছিল।ওরা তারপর ওকে ঠিকই খুঁজে বার করতো। তিন হাজার ডলার ওরা ছুঁয়েও দেখত না। সাপ্তাহিক খরচের টাকাতেই তাদের মাস কেটে যেতো। ওরা ঠিক করেছিল বেশ ভালমত টাকা জমলে এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে তারা পাখির ব্যবসা করবে। কারণ ওরা দুজনেই পাখি ভালবাসতো।
রয় যেদিন ব্যাঙ্ক ডাকাতির টাকা পয়সা নিয়ে কেটে পড়লো, তারপরে লিটল বার্নি ওদের, ভাড়া করলো, পাঁচ হাজার ডলারের বিনিময়ে ওরা রয়কে খুন করার কাজটা হাতে নেয়। রয়কে খুঁজে বার করাই ছিল সবচাইতে মুশকিলের কাজ। কারণ সুলিভ্যানরা ওর পিছনে লেগেছে খবর পেয়েই ও ওর চিরাচরিত আঙ্গুলো থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। শেষ খ ওরা যা পেল তাতে রয় নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে পেনসিলভ্যানিয়া স্টেশন অবধি গিয়েছিল। তার পরে সমস্ত সূত্র ছিন্ন হয়ে গেছে। মনে হতে পারে যে রয়ের পাত্তা মেলা অসম্ভব। কিন্তু না। তারা অভিজ্ঞ মানুষ শিকারী, তাদের মতে কোন মানুষকে খুঁজে বের করতে হলে তার প্রকৃতি কেমন, তার আত্মীয় স্বজন কোথায় থাকে তার বান্ধবী কোথায় থাকে এগুলো জানা দরকার। এগুলো জেনে সামান্য ধৈর্য ধরে থাকলে অভীষ্ট শিকারের সন্ধান পাওয়ার কোন অসুবিধেই থাকে না।
এমনি উপায়ে তারা খুব সহজেই স্টিঙের সন্ধান পেয়ে গেল। তারা জানতে পারল যে স্টিঙ হচ্ছে রয়ের ভাই। সে আগে কানসাস সিটিতে থাকতো এবং এক বীমা কোম্পানির সেলসম্যান ছিল এখন কোন একটা জায়গায় শিয়াল প্রতিপালনের খামার করে সেইখানে বসবাস করছে। তখন তারা এক সপ্তাহ ধরে স্টিঙের বর্তমান সঠিক ঠিকানা জানার জন্য শহরের মধ্যে ও বাইরে প্রতিটি শৃগাল প্রতিপালনের খামারে প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের সরবরাহকারীদের টেলিফোন করতে লাগল। এবং বোনার স্প্রিংগের একটি প্রতিষ্ঠান স্টিঙ লারসনকে মালপত্র সরবরাহ করত, তারাই খুশি হয়ে স্টিঙের ঠিকানা সুলিভ্যানদের জানিয়ে দিলো।
এর ঠিক তিন দিন পরে ব্লু মাউন্টেন সামিট থেকে মাইল কুড়ি দূরের ছোট্ট উপত্যকা শহর পয়েন্ট ব্রিজে একখানা কালো রঙের ঢাউস প্যাকার্ড ক্লিপার থামল। গাড়ি থেকে সুলিভ্যানরা নেমে সামনে একটা জনহীন পানশালায় ঢুকলো।
সুলিভ্যানরা পানশালায় ঢুকে দুটো উঁচু টুলের উপর বসল। দোকানের লোকটার মনে হল এরা সুবিধার লোক নয়। সে বলল, কি দেবো বুলুন।
দুটো লেমনেড। লোকটা লেমনেড নিয়ে এসে তাদের দিলে ম্যাক্স বলল, আমরা এখানে নতুন লোক। শহরের খবর টবর কি আছে একটু শোনাও তত ভাই।
এখন তো খুব গরম খবর আছে। এইমাত্র আমি একটা সংবাদপত্রের সাংবাদিকের কাছ থেকে জানলাম।
কি রকম?
গ্লেনভিউ মেন্টাল স্যানাটোরিয়াম থেকে এক পাগলী পালিয়ে গিয়েছিলো। তা এইমাত্র জানা গেল সে নাকি ষাট লাখ ডলারের মালিক।
কিন্তু একটা পাগল মেয়েছেলের অত টাকা হল কি করে।
সবকিছুই ও জন ব্লানডিশের কাছ থেকে পেয়েছে। ও হচ্ছে জন ব্লানডিশের নাতনী।
তা মেয়েটাকে কি খুঁজে পাওয়া গেছে?
না–আর তাই নিয়েই তো যত গোলমাল। মেয়েটার বাবার মাথায় গোলমাল ছিল। মেয়েটারও তাই। এখন চোদ্দ দিনের মধ্যে মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে না পারলে, ওরা ওকে আর পাগলা গারদে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। এই হচ্ছে এ দেশের আইন আর তাহলেই মেয়েটা ওর সব সম্পত্তি পেয়ে যাচ্ছে।
ম্যাক্স জানতে চাইল যে মেয়েটা কেমন পাগল। দোকানী বলল মেয়েটা একটা ভয়ঙ্কর খুনী।
আচ্ছা ধরো মেয়েটার সঙ্গে আমাদের দেখা হল আমরা ওকে কিভাবে চিনব।
মেয়েটা দেখতে পীচ ফলের মতো সুন্দর। আর ওর কবজিতে একটা কাটা দাগ আছে।
আচ্ছা বুঝলাম, এবার দেখলেই চিনতে পারবো।
এরপর লেমনেডের পয়সা দিয়ে ফ্রাঙ্ক দোকানীকে জিজ্ঞেস করল আচ্ছা এখানে কাছেপিঠে কোথাও শেয়ালের খোয়ার আছে বলে জানো?
নিশ্চয়ই জানি ওই যে ব্লু মাউন্টেন সামিটেই তো লারসনের সিলভার ফক্স ফার্ম।
আসলে আমাদের আবার শিয়ালের ব্যাপারে খুব উৎসাহ। বলল ম্যাক্স।
দোকানির মনে হল লোক দুটো মিথ্যে কথা বলছে ওদের দেখে মোটেই পশমের ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে না।
আচ্ছা লোকটা কি এখানে একাই থাকে নাকি?
হ্যাঁ ব্যবসাটা ও একাই চালায়। তবে ইদানিং ওর সঙ্গে আরো একজন লোক জুটেছে।
এই কথা শুনেই সুলিভ্যানদের মুখ শক্ত হয়ে উঠল। ওরা ওদের গাড়িতে চেপে বসল।
এদিকে গাছের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল ম্যাগার্থ ওদের লক্ষ্য করে চিন্তান্বিত মুখে একবার নাকটা চুলকে নিলো।
তারপর পানশালায় ঢুকে দোকানিকে বলল, একটা হুইস্কি দাও।
দোকানি ওকে হুইস্কি দিয়ে বলল, ওই লোক দুটোকে আমি আপনার গল্পটা শোনাচ্ছিলাম। ওরা নাকি পশমের ব্যাপারী।
ম্যাগার্থ বলল–তাই নাকি ওদের দেখে কিন্তু মনে হয় না। ওদের আমি আগেও দেখেছি। যখনই ওদের কোথাও দেখেছি সেখানেই কেউ না কেউ নিষ্ঠুরভাবে খুন হয়েছে।
ঠিক বুঝতে পারছি না।
সুলিভ্যান ব্রাদার্সের নাম শুনেছো?
না।
ওরা নাকি পেশাদার খুনে সেরকম কথা শোনা যায়।
ওরা স্টিঙ লারসনের কথা জিজ্ঞেস করছিলো, জানতে চাইছিলো সে একা থাকে কিনা।
স্টিঙ লারসন, মানে ব্লু মাউন্টেন সামিটের সেই শৃগাল পালক?
হ্যাঁ লোকটা কিন্তু খুব ভাল। এক হপ্তা আগে ওর সঙ্গে একটা লোককে দেখছিলাম এদিক দিয়ে যাচ্ছে।
অন্য একটা লোকের সঙ্গে?
হ্যাঁ, আপনার কি মনে হয়?
দেখা যাক কি খবর জোগাড় করতে পারি। শোনো এই খবরটা যেন ফাস না হয়।
.
স্টিঙ রয়ের চোখের রক্তপাত বন্ধ করে তাকে বলল আমি ক্যারলকে খুঁজতে যাচ্ছি, এইভাবে ওকে একা
না–আমাকে ছেড়ে যেও না। তুমি বেরোলেই ও আমাকে শেষ করে ফেলবে। তুমি বাইরে যেও না ও তোমাকেও আক্রমণ করতে পারে।
স্টিঙ বাইরে তাকাল। তার বাইরে বেরোনোর ইচ্ছে নেই কিন্তু ক্যারলকে এভাবে একা ছেড়ে দেওয়া যায় না। হঠাৎ তার মনে হল মাথায় আঘাত লেগে ক্যারলের মধ্যে খুনীর স্বভাব দেখা দিল কেন? এইসব ভেবে সে রয়ের হাতে পিস্তুলটা দিয়ে বলল, আমি কাছে পিঠে একটু খুঁজে আসি।
না না তুমি যেয়ো না। আমি অন্ধ হয়ে গেছি। ও আমাকে খুন করে ফেলবে।
স্টিঙ বলল, বাজে কথা বন্ধ করো। তোমার পাপের শাস্তি তুমি পেয়েছে।
স্টিঙ টর্চটা তুলে নিয়ে বাইরের অঙ্গনে বেরিয়ে এলো। তারপর বাইরে ঘন অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইল। মেয়েটার কোন চিহ্নও দেখতে পেল না।
হঠাৎ আচমকা হ্রদের পাশে আলোড়ন শুনতে পেল। তার হৃৎপিণ্ডের কম্পন বেড়ে গেল। সে ভাবল বোধহয় ক্যারল।
স্টিঙ চীৎকার করে বলল, ক্যারল তুমি কোথায়?
আর একটু এগিয়ে যেতেই কালো অন্ধকার তাকে ছেয়ে ধরল। ইলেকট্রিক টর্চটা জ্বালতেই সরু পথটা আলোকিত হয়ে উঠেছে। এগুতে এগুতে মনে হল সে একা নেই কেউ তাকে লক্ষ্য করছে।
সে আবার ডাকল, ক্যারল তুমি কি এখানে আছো? আমি স্টিঙ, তোমাকে খুঁজছি।
সামনের একটা মরা ডাল নড়ে উঠল। সেদিকে টর্চের আলো ফেলতেই স্টিঙের নিঃশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হল। সে দেখল কালো পোষাক পড়া একটা লোক হাতে ৪৫ রিভলবার নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
ম্যাক্স মৃদুস্বরে বলল, লারসন এগিয়ে এসো। এর মধ্যে সে দেখতে পেল তার পেছনে আরও একটা কালো পোষাক পড়া লোক। তার মানে আরও একজোড়া কালো পোষাক পড়া কাক। তার মানে রয় যাদের কথা বলেছিল সেই সুলিভ্যানরা।
স্টিঙ কোনরকমে বলল–কে তোমরা
ম্যাক্স বলল–আমরা প্রশ্ন করব, তুমি না। ক্যারল কে?
আমার বান্ধবী আমার সঙ্গেই থাকে।
রয় কি ঘরেই আছে নাকি?
স্টিঙ বুঝতে পারলো যে এক্ষেত্রে মিথ্যে বলে লাভ নেই। সে বলল, হ্যাঁ আছে।
শুনে ম্যাক্স বলল ফ্রাঙ্ক তুমি এর দিকে নজর রাখো। আমি রয়ের ব্যাপারটা দেখছি।
কিন্তু মেয়েটার কি করব?
মেয়েটা যদি এখানে না আসে তাহলে কিছুই যাবে আসবে না। নেহাতই যদি এসে পড়ে তবে ওর বন্দোবস্তটাও করে ফেলতে হবে। বরঞ্চ তুমিও আমার সঙ্গে এসো।
ম্যাক্স সামনের দিকে এগুতেই ফ্র্যাঙ্ক পিস্তলের নল দিয়ে স্টিঙকে খোঁচা মেরে বলল, এগিয়ে চল, আর বেশি চালাকির চেষ্টা করলে শুধু শুধু জানাই খোয়াবে।
স্টিঙ এগিয়ে চলল। সে বুঝতে পেরেছিল যে রয়কে শেষ করে ওরা তাকেও শেষ করে দেবে। কিন্তু নিজের থেকেও সে ক্যারলের জন্য বেশি চিন্তান্বিত হয়ে উঠল। সে বলল যে, আমরা তোমাদের কোন ক্ষতি করছি না। আমাদের ছেড়ে দাও।
ম্যাক্স বলল, তোমাদের নিয়ে আমার মোটেই কোন চিন্তা নেই। আমরা রয়কে খুঁজছি।
ম্যাক্স ইতিমধ্যে জানলা দিয়ে দেখেছিল যে রয় পিস্তল আঁকড়ে ধরে বিছানায় শুয়ে আছে।
রয় চরম উৎকর্ণ হয়ে শুয়েছিল। তার মনে সুলিভ্যানদের কথা একবারও আসে নি। সে শুধু ভাবছিল ক্যারল ফিরে এসে তাকে ধরে ফেলবে।
ম্যাক্স নিঃশব্দে ঘরে ঢুকে রয়ের হাতের পিস্তলের দিকে তাকিয়ে তিক্ত হাসি হাসল। তারপর রয় যখন বিছানাতে রিভলভারটা রেখে নিজের মাথা টিপতে লাগল ম্যাক্স রিভলভারটা তুলে নিয়ে নিজের পকেটে গুঁজে রাখল।
একটু পরেই রয় পিস্তলটা নেওয়ার জন্য খাটের মধ্যে হাতড়াতে শুরু করল। সেখানেনা পেয়ে তার মুখে অস্বস্তি ও আতঙ্ক ফুটে উঠল। সে বিড়বিড় করে বলল নিশ্চয়ই নীচে পড়ে গেছে। এই ভেবে সে বিছানায় উবু হয়ে বসে কার্পেটে হাতরাতে লাগল। একটু পরেই একটা ছুঁচোলো জুতোর প্রান্ত তার হাতে লাগল। তারপর প্যান্ট ছুঁয়ে উপরে উঠল সে বুঝল যে তার সামনে কেউ বসে আছে। সে চীৎকার করে বলল, কে কে ওখানে।
ম্যাক্স মৃদুভাবে বলল–সুলিভ্যানরা।
রয় চীৎকার করে উঠল, স্টিঙ তাড়াতাড়ি এসে আমাকে বাঁচাও।
ম্যাক্স বলল–কোন লাভ নেই, ফ্রাঙ্ক ওর দিকেনজর রাখছে। ও কিছু সাহায্য করতে পারবেনা।
রয় বলল, আমি অন্ধ। একটা অন্ধ মানুষকে নিশ্চই তোমরা খুন করবে না।
ম্যাক্স বলল, বিশ্বাস করি না। এই বলে রয়ের ব্যান্ডেজ টান মেরে খুলে ফেললো।
রয় আর্তনাদ করে উঠল। রয়ের বিধ্বস্ত চোখের দিকে তাকিয়ে ম্যাক্স বুঝল রয়ের কথা সত্যি সে ফ্র্যাঙ্ককে ডেকে বলল, এদিকে এসে বদমাইশটার থোবরা দেখে যাও। কে ওর চোখ দুটো একদম খুবলে নিয়েছে।
ম্যাক্স বলল, তোমার এমন হল কিভাবে?
ওই খ্যাপা মেয়েটা এরকম করেছে। ওর নাম ক্যারল আমরা ওকে পাহাড়ের গায়ে পেয়েছিলাম।
মেয়েটা কেমন দেখতে।
ওর মাথায় লাল চুল।
ও বুঝতে পেরেছি। তারপর ফ্র্যাঙ্ককে বলল ফ্র্যাঙ্ক আমাদের কপালটা খুব ভাল। ষাট লাখ ডলারের মালকিন লাল চুলের পাগলীটাও এখানেই আছে।
তখন ফ্র্যাঙ্ক স্টিঙকে বলল–কি দোস্ত, বলতো মেয়েটাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে।
ও পালিয়ে গেছে। তখন আমি ওকেই খুঁজছিলাম।
ওকে তো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাহলে ষাট লাখ ডলার পাবো।
কিন্তু ম্যাক্স রয়ের কি করবে?
হা ওকে ধীরে সুস্থে খতম করতে হবে। লিটল বার্নিরও সেরকম ইচ্ছে ছিল।
ওকে জলে চুবিয়ে দিলেই তো হয়।
না ওকে জলে চুবিয়ে মারতে গেলে আমার সর্দি লেগে যাবে। মনে নেই একবার একটা লোককে জলে চুবিয়ে মারতে গিয়ে আমার ঠাণ্ডা লেগে জ্বর হয়ে গেল।
এ ব্যাটাদের খতম করে আমরা কয়েকটা দিন এখানে থাকবো বুঝলে ফ্যাঙ্ক। জায়গাটা আমার বেশ ভাল লেগেছে।
তাই ভাবছি ওকে নিয়ে একটু অগ্ন্যুৎসব করব।
তাই ভাল তাহলে ওকে মেরে লাসটা গুম করার জন্য আর আমাদের কবরও খুঁড়তে হবে না।
ঠিক সেই মুহূর্তে রয় রেলিং টপকে পাগলের মতো ছুটতে লাগল।
ও ভাবছে ও পালাবে? এই বলে ফ্র্যাঙ্ক মুচকি হাসলো। তারপর রয়কে লক্ষ্য করে একটা গুলি ছুড়ল। গুলিটা রয়ের পায়ে লাগল ও ছিটকে পড়ে গেল।
এরপর ম্যাক্স প্যাকার্ড গাড়ি থেকে একটা পেট্রোলের টিন বার করে এনে রয়ের গায়ে উজার করে পেট্রল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিল।রয় পুড়তে থাকলে তার দিকে তাকিয়ে বলল লিটল বার্নি বলেছিল তুমি নরকে গিয়ে পচো। এই তার ইচ্ছা।
.
আচমকা এক তীব্র আওয়াজে ক্যারল যেন স্বপ্নের পৃথিবী থেকে বাস্তবে ফিরে এলো। প্রথমে তার মনে হল সে যেন স্বপ্নে পাইন বনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার অনেক স্বপ্নের কথা মনে পড়ছিল, অসংখ্য মানুষের মুখ কিন্তু কোনও কিছুই স্পষ্ট নয়। সবই আবছা।
ক্যারল ভেবে পাচ্ছিল না কেন ও পাইনের জঙ্গলে বেড়াতে এসেছিল। তার মনে হল হয়তো স্টিও তার জন্য চিন্তিত হয়ে তাকে খুঁজছে। এরপরেই সে দেখলো যে সে অর্ধনগ্ন। সে তার জামাটা খুঁজতে চেষ্টা করল। স্টিঙের কথা মনে উঠতেই তার মনে একটা কোমল অনুভূতির জন্ম নিল।
ক্যারল একটু এগোতেই সুলিভ্যানদের দেখতে পেল। চাঁদের আলোয় তাদের তীক্ষ্ণ দেহরেখাগুলো দেখে সে চমকে উঠল। সে তার নগ্ন বুক আড়াল করে তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে ওদের লক্ষ্য করতে লাগল। ওরা যদি স্টিঙের কোন ক্ষতি করে থাকে সেই ভয়ে ও বিচলিত হয়ে উঠল।
একছুটে ক্যারল ঘরে ঢুকে গেল। দেখলোরয়ের অর্ধদগ্ধ দেহাবশেষ পড়ে রয়েছে। কিন্তু ক্যারল স্টিঙের চিন্তায়-মগ্ন। অবশেষে দেখল মেঝের উপর স্টিঙ হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে। স্টিঙ ক্যারলের অপূর্ব দেহ সৌন্দর্য দেখল আর ওর মনে অনুভূতি হল যে ও ক্যারলকে ভালবাসে। আর কোনও মেয়েকে ওর পক্ষে ভালবাসা সম্ভব নয়। সে বলল, ক্যারল সোনা শীগগির আমার বাঁধন খুলে দাও। ক্যারল তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার বাঁধন খুলে দিল।
এরপর ক্যারল ঘরে গিয়ে স্টিঙের একটা জামা পড়ে নিল। তারপর স্টিঙকে জড়িয়ে ধরে বলল স্টিঙ আমি তোমাকে ভালবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না।
আমিও তোমায় প্রথম থেকেই ভালবেসেছি। কিন্তু? এখন আর আমাদের দেরী করা চলবে না। আমাদের পালাতে হবে।ওদের গাড়িটায় আমাদের উঠতে হবে। অন্ধকার দিয়ে দৌড়ে চলল।
ওরা সিঁড়ি টপকে এক ছুটে সামনের উঠোনটুকু পেরিয়ে ঢাউস প্যাকার্ড গাড়িটার দিকে এগিয়ে চলল।
ঠিক তখনই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে সুলিভ্যানরা ওদের দেখতে পেল। স্টিঙ বলল, ক্যারল তুমি গিয়ে আগে গাড়ির ইঞ্জিনটা চালু করো। আমি ওদের ঠেকাচ্ছি।
এর মধ্যে ক্যারল গাড়ির ইঞ্জিন চালু করে দিয়েছে। স্টিঙ দৌড়ে–গাড়িতে উঠতে গেল। কিন্তু ম্যাক্স গুলি করল। স্টিঙ গাড়ির দরজার সামনে টলতে টলতে গিয়ে বলল, ক্যারল আমার গায়ে গুলি লেগেছে। ক্যারল কোনও মতে স্টিঙের শরীরটা গাড়িতে তুলে গাড়ি স্টার্ট করে দিল।
ম্যাক্স আবার রিভলবার ছুঁড়তে গেলে ফ্র্যাঙ্ক তাকে থামিয়ে বলল, গুলি ছুঁড়ো না। যদি মেয়েটার গায়ে লাগে ওর দাম ষাট লাখ ডলার।
কিন্তু পালিয়ে যাচ্ছে যে।
ফ্র্যাঙ্ক বলল তাতে কি আছে আমরা আবার ওকে খুঁজে বের করব। মেয়েটা আর মেয়েটার টাকার জন্য সেটুকু ঝামেলা মানতেই হবে।