নন্দপুরের বিখ্যাত তার্কিক হল দ্বিজপদ ভটচায়। হেন বিষয় নেই যা নিয়ে সে তর্ক জুড়ে দিতে না পারে। সকালবেলায় হয়তো অম্বুজবাবুর সঙ্গে ভগবান নিয়ে তর্ক বাধিয়ে প্রমাণ করেই ছাড়ল যে, ভগবান টগবান বলে কিছু নেই। যারা ভগবান মানে তারা গাধা। বিকেলে আবার ব্যোমকেশবাবুর সঙ্গে তর্কে বসে গিয়ে প্রমাণ করে দিল, ভগবান না থেকেই পারেন না। যারা বলে ভগবান নেই তারা মর্কট। এই তো সেদিন ভূগোল-সার নবীনবাবুকে বাজারের রাস্তায় পাকড়াও করে বলল, “মশাই, আপনি নাকি ক্লাসে শেখাচ্ছেন যে, আকাশের রং নীল?”
নবীনবাবু গম্ভীর হয়ে বললেন, “তা নীল হলে নীলকে আর কী বলা যাবে?”
দ্বিজপদ চোখ পাকিয়ে বলল, “নীলটা তো ভ্রম। আসলে আকাশ ঘোর কালো।”
নবীনবাবু রেগে গিয়ে বললেন, “কালো বললেই হল?” ব্যস, তুমুল তর্ক বেধে গেল। সে এমন তর্ক, যে নবীনমাস্টারের স্কুল কামাই। দাবাড় বিশু ঘোষকে দাবার চাল নিয়ে তর্কে হারিয়ে দিয়ে এল এই তো সেদিন।
দ্বিজপদর তর্কের এমনই নেশা যে চেনা লোক না পেলে অচেনা লোকের সঙ্গেই এটা-ওটা-সেটা নিয়ে তর্ক বাধিয়ে বসে। তর্কে দ্বিজপদর প্রতিভা দেখে ইদানীং তাকে লোক একটু এড়িয়েই চলে। হরকালীবাবু বাগান পরিষ্কার করছিলেন, দ্বিজপদ গিয়ে তাঁকে বলল, “আচ্ছা, বলুন তো মশাই, কোন আহাম্মকে বলে যে সূর্য পুব দিকে ওঠে, আর পশ্চিমে অস্ত যায়?”
হরকালীবাবু ভয় খেয়ে বললেন, “বলে নাকি? খুব অন্যায় কথা। বলাটা মোটেই উচিত নয়।”
সঙ্গে-সঙ্গে দ্বিপদ কথাটার মোড় ঘুরিয়ে নিয়ে বলল, “আহা, বলবে নাই বা কেন, বলুন তো! বললে ভুলটা হচ্ছে কোথায়?”
হরকালীবাবু সঙ্গে সঙ্গে সায় দিয়ে বললেন, “না, ভুল তো হচ্ছে। সত্যিই তো, ভুল কেন হবে?”
তর্কের আশা নেই দেখে দ্বিজপদ কটমট করে হরকালীবাবুর দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি আমার সঙ্গে একমত হচ্ছেন কেন?”
হরকালীবাবু সঙ্গে-সঙ্গে বললেন, “না, একমত হওয়াটা মোটেই কাজের কথা নয়।”
নন্দপুরের লোকেরা বেশিরভাগই আজকাল তর্কের ভয়ে দ্বিজপদর সঙ্গে একমত হয়ে যায়। ফলে দ্বিজপদর মনে সুখ নেই। গাঁয়ে নতুন লোকও বিশেষ একটা পাওয়া যায় না। সে শুনেছে কলকাতার বিখ্যাত ভূত-বিশেষজ্ঞ ভূতনাথ নন্দী নন্দপুরে নরেন বক্সির একটা ভুতুড়ে বাড়ি কিনেছেন। মাঝে-মাঝে এসে থাকেন এবং ভূত নিয়ে গবেষণা করেন। শুনে ইস্তক দ্বিজপদ প্রায়ই বাড়িটায় এসে ভূতনাথ নন্দীর নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করে। ভূতনাথকে পেলে তাঁর সঙ্গে ভূত নিয়ে একটা ঘোর তর্ক বাধিয়ে তোলার ইচ্ছে আছে তার।
আজও অভ্যাসবশে বিকেলের দিকে দ্বিজপদ হাঁটতে-হাঁটতে ভূতনাথ নন্দীর নতুন কেনা পুরনো বাড়িটায় হানা দিল। পশ্চিমপাড়ায় খুব নির্জন জায়গায় মস্ত বাঁশঝাড়ের পেছনে ভূতনাথের বাড়ি। ঝুরঝুরে পুরনো। পেছনে একটা মজা পুকুর। দিনের বেলাতেই এলাকাটা যেন ছমছম করে। দুটো মস্ত বাঁশঝাড়ের ভেতর দিয়ে একটা শুড়িপথ গেছে। সেই পথটাও আগাছায় ভরা। দ্বিজপদ পথটা পেরিয়ে বাড়ির চৌহদ্দিতে ঢুকে একটু গলা তুলে বলল, “ভূতনাথবাবু আছেন কি? ভূতনাথবাবু!”
সাড়া পাওয়া গেল না। দ্বিজপদ হতাশ হয়ে ফিরতে যাচ্ছিল, হঠাৎ তাকে চমকে দিয়ে বাড়ির দেওয়ালের আড়াল থেকে একটা মুশকোমতো রাগী চেহারার লোক বেরিয়ে এসে গম্ভীর গলায় বলল, “কাকে খুঁজছেন?”
খুশি হয়ে দ্বিজপদ বলল, “নমস্কার। আপনি কি ভূতনাথবাবু?”
লোকটা তার দিকে স্থির চোখে চেয়ে বলল, “না। এবাড়িটা কার?”
“কেন, ভূতনাথবাবুর! তিনি নরেন বক্সির কাছ থেকে বাড়িটা কিনেছেন।”
“অ। তা হলে অঘোর সেনের বাড়িটা কোথায়?” দ্বিজপদ একটু অবাক হয়ে বলল, “অঘোর সেন? না মশাই, ও নামে কাউকে চিনি না। অঘোর চক্রবর্তী আছেন একজন। বামুনপাড়ায়। আর অঘোর সামন্ত থাকেন কালীবাড়ির পেছনে। আপনার ভুল হচ্ছে।”
লোকটা মাথা নেড়ে বলল, “ভুল হচ্ছে না। এ-জায়গাটা যদি নন্দপুর হয়ে থাকে, তা হলে এখানেই অঘোর সেনের বাড়ি।”
সামান্য একটু তর্কের গন্ধ পেয়ে দ্বিজপদ হাসল, “নন্দপুর হলেই সেখানে অঘোর সেন বলে কেউ থাকবে এমন কথা নেই। আর নন্দপুরের কথা বলছেন? সারা পশ্চিমবঙ্গ খুঁজলে না হোক পঁচিশ ত্রিশটা নন্দপুর পাবেন। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, হরিয়ানাতেও মেলা নন্দপুর আছে। আপনি কি বলতে চান সব নন্দপুরেই একজন করে অঘোর সেন আছেন? তা বলে আমি বলছি না যে অঘোর সেন বলে কেউ নেই। খুঁজলে হয়তো বেশ কয়েকশো অঘোর সেন পাওয়া যাবে। কিন্তু তা বলে তাঁরা যে নন্দপুরেই থাকবেন এমন কোনও কথা আছে কি?”
লোকটা বড্ডই বেরসিক। তর্কে নামার এমন একটা সুযোগ পেয়েও নামল না। তেমনই মোটা আর গম্ভীর গলায় বলল, “অঘোর সেনকে নয়, আমি তাঁর বাড়িটা খুঁজছি। অঘোর সেন বহুকাল আগেই মারা গেছেন।”
“অ। কিন্তু অঘোর সেনের বাড়ি খুঁজতে আপনি যদি ভূতনাথবাবুর বাড়িতে ঘোরাঘুরি করেন তা হলে তো লাভ নেই। অঘোর সেনের বাড়ি খুঁজতে হলে অঘোর সেনের বাড়িতেই যেতে হবে। তাই বলছিলাম, আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন। এই নন্দপুরে অঘোর সেন বলে কেউ থাকেন না। অন্য নন্দপুরে খুঁজে দেখতে পারেন।”
লোকটা হঠাৎ এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দ্বিজপদর জামাটা বুকের কাছে খামচে ধরে একখানা রাম ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, “এখানেই অঘোর সেনের বাড়ি, বুঝলি?”
ঝাঁকুনির চোটে দ্বিজপদর মাথার ভেতরটা তালগোল পাকিয়ে গেল, ঘাড়টাও উঠল মট করে। সে দু’বার কোঁক-কোঁক শব্দ করে বলে উঠল, “যে আজ্ঞে।”
“বাড়িটা কোথায়?” দ্বিজপদর বাঘের থাবায় ইঁদুরের মতো অবস্থা। বলল, “আজ্ঞে, এখানেই কোথাও হবে।”
লোকটা দ্বিজপদকে আর-একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ছেড়ে দিতেই সে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল।
লোকটা রক্ত-জলকরা চোখে চেয়ে জলদগম্ভীর স্বরে বলল, “বাড়ি যা।”
পড়ে থেকেই দ্বিজপদ খুব বিনয়ের সঙ্গে বলল, “যে আজ্ঞে।” তারপর কোনওরকমে উঠে এক দৌড়ে বাঁশবন পেরিয়ে রাস্তায় এসে পড়ল। জায়গাটা ভারী নির্জন, হাঁকডাক করলেও কেউ শুনতে পাবে না। দ্বিজপদ পিছু ফিরে একবার দেখে নিয়ে প্রায় ছুটতে-ছুটতে মোড়ের মাথায় বটকেষ্টর মনোহারি দোকানটায় এসে হাজির হল।
বটকেষ্ট তার বন্ধু মানুষ। ক্রিকেটের ভক্ত। গতকালই বটকেষ্টকে সর্বসমক্ষে ক্রিকেট ভাল না ফুটবল ভাল তাই নিয়ে তর্কে হারিয়ে দিয়েছে। বটকেষ্ট তাই দ্বিজপদকে দেখে গম্ভীর হয়ে বলল, “কী চাই?”
দ্বিজপদ হাঁফাতে-হাঁফাতে বলল, “একটুর জন্য প্রাণে বেঁচে গেছি রে ভাই!”
বিরস মুখে বটকেষ্ট বলল, “সাপের মুখে পড়েছিলি বুঝি? তা পারল না ঠুকে দিতে? কুলাঙ্গার আর কাকে বলে!”
“না রে ভাই, সাপ নয়, খুনে ডাকাত। ভূতনাথ নন্দীর খোঁজে, তাঁর ভুতুড়ে বাড়িটায় গিয়েছিলুম। সেখানেই ঘাপটি মেরে ছিল।
যেতেই কাক করে ধরল। মেরেই ফেলত, কোনওক্রমে হাত ছাড়িয়ে পালিয়ে এসেছি।”
বটকেষ্ট নিরাশ হয়ে বলল, “অপদার্থ! অপদার্থ! এসব লোকের মুখে চুনকালি দিতে হয়।”
দ্বিজপদ রেগে গিয়ে বলল, “কার মুখে চুনকালি দেওয়ার কথা বলছিস?”
বটকেষ্ট বলল, “তোর মুখে নয় রে, তোর মুখে নয়। ডাকাতটার কথাই বলছি। সে কেমন ডাকাত, যার হাত ফসকে লোকে পালিয়ে যায়?”
দ্বিজপদ অবাক হয়ে বলল, “তার মানে? আমি খুন হলে বুঝি ভাল ছিল?”
বটকেষ্ট তাড়াতাড়ি সামলে নিয়ে একটু মোলায়েম গলায় বলল, “সে-কথা হচ্ছে না। বলছিলাম কি, আগেকার মতো খাঁটি জিনিস আজকাল আর পাওয়াই যায় না। তখনকার ডাকাতরা খাঁটি ঘি-দুধ খেত, আস্ত পাঁঠা, আস্ত কাঁঠাল এক-একবারে উড়িয়ে দিত। ক্ষমতাও ছিল তেমনই, মাছিটিও গলে যেতে পারত না তাদের পাল্লায় পড়লে। আর আজকালকার ডাকাতদের চেহারা দেখেছিস? রোগা-দুবলা, উপোসি চেহারা, না আছে জোর, না আছে রোখ। এই তো গত মাসে বরুণ চাকির বাড়িতে ডাকাতি করতে এসে ডাকাতদের কী হেনস্থা! গাঁয়ের লোক মিলে এমন মার মারলে যে, সব ভঁয়ে গড়াগড়ি দিয়ে হাতেপায়ে ধরতে লাগল।”
দ্বিজপদ বুক ফুলিয়ে বলল, “আমার ডাকাতটা মোটেই তেমন নয়। ছ’ ফুটের ওপরে লম্বা, খাম্বাজ চেহারা। ইয়া চওড়া কাঁধ, মুগুরের মতো হাত, রক্তবর্ণ চোখ।”
একটু উৎসাহিত হয়ে বটকেষ্ট বলল, “বটে! তা তোর সব কেড়েকুড়ে নিল বুঝি?”
দ্বিজপদ মাথা নেড়ে বলল, “সেসব নয়। লোকটা অঘোর সেন নামে কার একটা বাড়ি খুঁজছিল। তা সেই অঘোর সেনকে নিয়েই দু-চারটে কথা হয়েছে কি হয়নি, অমনই তেড়ে এসে এমন ঝাঁকুনি দিতে লাগল যে, প্রাণ যায় আর কি!”
বটকের চোখ দুখানা চকচক করে উঠল, “আহা, এসব তেজস্বী মানুষের অভাবেই না দেশটা ছারখারে যাচ্ছে! এমন লোকের পায়ের ধুলো নিতে হয়।”
তেজস্বিতা আর মারকুট্টা ভাব যে এক নয়, বীরত্ব আর গুণ্ডামিতে যে তফাত আছে, এইটে নিয়ে দ্বিজপদ একটা তর্ক বাধাতে পারত। সুযোগও ছিল। কিন্তু কে জানে কেন, তার তর্কের ইচ্ছেটাই ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেছে।
দ্বিজপদ শুধু খাপ্পা হয়ে বলল, “ওরকম একটা জঘন্য, খুনিয়া, গুণ্ডা, তেরিয়া, অভদ্র লোক কিনা তেজস্বী! তার আবার পায়ের ধুলোও নিতে ইচ্ছে করছে তোর?”
বটকেষ্ট হাসি-হাসি মুখ করে বলল, “তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে লোকটা কল্কি অবতারও হতে পারে। আমাদের দুঃখ-কষ্ট ঘোচাতে এসেছে। কিন্তু এই অঘোর সেন লোকটা কে?”
দ্বিজপদ একটু ঠাণ্ডা হয়ে বলল, “সেইটেই তো বলতে গিয়েছিলাম যে, নন্দপুরে অঘোর সেন বলে কেউ নেই। নন্দপুর হলেই যে সেখানে অঘোর সেন থাকবেন, এমন কথাও নেই। তা ছাড়া নন্দপুর নামে অনেক গাঁ আছে, অঘোর সেনও খুঁজলে বিস্তর পাওয়া যাবে। কথার পিঠে কথা আর কি। কিন্তু বেরসিক লোকটা এমন তেড়ে এল!”
বটকেষ্ট একটু চিন্তিত মুখ করে বলল, “অঘোর সেন বলে কেউ এখানে নেই ঠিকই, কিন্তু নামটা চেনা-চেনা ঠেকছে।”
দ্বিজপদ বিরক্ত হয়ে বলল, “তুই চিনবি কী করে? অঘোর সেন নাকি অনেক আগেই মারা গেছেন।”
বটকেষ্ট চিন্তিত মুখেই বলল, “সেটাই স্বাভাবিক। নামটা যেন আমি কোনও পুঁথিপত্রে পেয়েছি, বা কোনও পুরনো লোকের মুখে শুনেছি। এখন ঠিক মনে করতে পারছি না। মনে হয়, অঘোর সেন একসময়ে বেশ বিখ্যাত লোক ছিলেন। এব্যাপারে মিত্তিরজ্যাঠা কিছু জানতে পারেন।”
দ্বিজপদ উত্তেজিত হয়ে বলল, “কিন্তু ডাকাতটার ব্যাপারে কী। করা যায়?”
“প্রথম কথা, লোকটা ডাকাত কিনা আমরা জানি না। দ্বিতীয় কথা, খুনিও বলা যাচ্ছে না, কারণ তোকে লোকটা খুন করেনি। তিন নম্বর হল, লোকটাকে এখন ভূতনাথ নন্দীর বাড়িতে পাওয়া যাবেই এমন কথা বলা যাচ্ছে না। বুদ্ধিমান হলে এতক্ষণে তার সরে পড়ার কথা। চার নম্বর হল, লোকটার যেমন বিরাট চেহারা আর গায়ের জোর বলছিস তাতে আমরা দুজন গিয়ে সুবিধে করতে পারব না। লোকলশকর ডেকে নিয়ে যেতে হবে। সেটা
সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। গাঁয়ে আজ লোকজন বিশেষ নেই, কারণ। বেশিরভাগই গেছে চড়কডাঙার মেলায়। ছ নম্বর কথা হল”
“ভুল হচ্ছে। এটা পাঁচ নম্বর হবে।”
“তা পাঁচ নম্বরই সই। পাঁচ নম্বর কথা হচ্ছে, অঘোর সেন সম্পর্কে কিছু তথ্য সংগ্রহ করা গেলে লোকটাকে জেরা করার সুবিধে হবে।”
“তুই একটা কাপুরুষ।”
“তাও বলতে পারিস, তবে কাপুরুষ হলেও আমি বুদ্ধিমান। এখন চল তো।”
বটকেষ্ট দোকান বন্ধ করে দ্বিজপদকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
সমাজ মিত্তির পুরনো আমলের লোক সন্দেহ নেই। বয়স এই সাতানব্বই পুরে আটানব্বই চলছে। এখনও বেশ শক্তসমর্থ আছেন। নন্দপুরের কায়স্থপাড়ায় নিজের বারান্দায় বসে সন্ধেবেলায় তিনি গেলাসে গোঁফ ডুবিয়ে দুধ খাচ্ছিলেন। একটু আগেই সায়ংভ্রমণে বেরিয়ে মাইল তিনেক হেঁটে এসেছেন।
বটকেষ্ট আর দ্বিজপদকে দেখে এক গাল হেসে বললেন, “গোঁফ ডুবিয়ে দুধ খেলে দুধের স্বাদ বেড়ে যায়, জানো?”
অন্য সময় হলে দ্বিজপদ গোঁফে বায়ুবাহিত জীবাণুর প্রসঙ্গ তুলত এবং গোঁফ ডুবিয়ে দুধ খাওয়া যে খুব খারাপ অভ্যাস, তাও প্রমাণ করে ছাড়ত। কিন্তু গুণ্ডাটার ঝাঁকুনি খেয়ে আজ তার মাথা তেমন কাজ করছে না, মেজাজটাও বিগড়ে আছে। সে বিরস মুখে বলল, “কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ। বলি মিত্তিরজ্যাঠা, আরাম করে তো দুধ খাচ্ছেন, এদিকে যে গাঁয়ে ডাকাত পড়েছে সে-খবর রাখেন?”
সমাজ মিত্তির সটান হয়ে বসে বললেন, “ডাকাত পড়েছে?”
“তবে আর বলছি কী?”
সমাজ মিত্তির ভারী খুশি হয়ে বললেন, “তা কার বাড়িতে পড়ল? কী-কী নিয়ে গেল? খুনখারাপি হয়েছে তো! সব বেশ খোলসা করে বলো দেখি, শুনি। আহা, নন্দপুরে কতকাল ডাকাত পড়েনি! সেই একুশ বছর আগে চৌধুরীদের বাড়িতে পড়েছিল, তারপর সব সুনসান।”
ডাকাতি যে সমাজবিরুদ্ধ ব্যাপার এবং মোটেই ভাল জিনিস নয় তা নিয়ে তর্ক করার জন্য দ্বিজপদর গলা চুলকে উঠল। কিন্তু নিজেকে কষ্টে সামাল দিল সে, আজ তর্কে সে এঁটে উঠবে না।
বটকেষ্ট বলল, “মাঝে-মাঝে ডাকাত পড়া কি দরকার বলে মনে হয় আপনার জ্যাঠামশাই?”
“খুব দরকার হে, খুব দরকার। গাঁয়ের জীবন বড়ই নিস্তরঙ্গ বুঝলে, বড়ই নিস্তরঙ্গ! মাঝে-মাঝে এরকম কিছু একটা হলে গা বেশ গরম হয়। শরীর, মন দুই-ই বেশ চাঙ্গা থাকে। তা বেশ গুছিয়ে বলো তো ঘটনাটা, কিছু বাদসাদ দিও না।”
দ্বিজপদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমিই ডাকাতের খপ্পরে পড়েছিলুম একটু আগে। বিকেলের দিকটায় ভূতনাথবাবুর সন্ধানে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলুম, সেখানেই দেখা। ইয়া সাত ফুট লম্বা আর চওড়া চেহারা, পঞ্চাশ ইঞ্চি বুকের ছাতি, হাত দুখানা যেন একজোড়া চেঁকি, চোখ ভাঁটার মতো বনবন করে ঘুরছে। আমাকে ধরে এমন ঝাঁকুনি দিচ্ছিল যে, আর একটু হলেই প্রাণবায়ু বেরিয়ে যেত।“
সমাজ মিত্তির ঝুঁকে বসে আহ্বাদের গলায় বললেন, “তারপর?”
“তারপর কোনওরকমে তার হাত ছাড়িয়ে পালিয়ে এসেছি। একসময়ে ব্যায়ামট্যায়াম করতুম তো, তাই পারলুম। অন্য লোক হলে দাঁতকপাটি লেগে পড়ে থাকত।”
বটকেষ্ট চাপা গলায় বলল, “লোকটার হাইট এক ফুট বাড়িয়ে দিলি নাকি? চওড়াটাও যেন বেশি মনে হচ্ছে।”
সমাজ মিত্তির বললেন, “বাঃ বাঃ, কিন্তু তারপর কী হল?”
দ্বিজপদ বলল, “তারপর এখন অবধি আর কিছু হয়নি। হচ্ছে কি না তা বলতে পারব না। তবে হবে।”
সমাজ মিত্তির নাক সিঁটকে বললেন, “হোঃ, এটা একটা ঘটনা হল? তোমাকে একটু ঝাঁকুনি দিয়েছে, তাতে কী? একে কোন আক্কেলে ডাকাতি বলে জাহির করছ শুনি? রগরগে কিছু হলে না হয় বোঝা যেত। তা লোকটা সেখানে করছিল কী?”
“অঘোর সেন নামে একজনের বাড়ি খুঁজছিল।”
সমাজ মিত্তির ভারী অবাক হয়ে বললেন, “অঘোর সেন! অঘোর সেনের বাড়ি খুঁজছিল? কেন খুঁজছিল তা বলল?”
“না জ্যাঠামশাই, অঘোর সেন নামে যে এ-গাঁয়ে কেউ নেই, তা বলতে গিয়েই তো বিপদটা হল।”
সমাজ মিত্তির বিরক্ত হয়ে বললেন, “অঘোর সেনের বাড়ি যে এ-গাঁয়ে নয় একথা তোমাকে কে বলল? কিছু জানো না, বোঝে না, সেদিনকার ছোঁকরা, ফস করে বলে ফেললে অঘোর সেনের বাড়ি এ-গাঁয়ে নয়? সবজান্তা হয়েছ, না?”
দ্বিজপদ ভারী থতমত খেয়ে গেল। বটকেষ্ট বলল, “আজ্ঞে, সেকথা জানতেই আপনার কাছে আসা। লোকটা নাকি বেশ জোর দিয়েই বলছিল যে, অঘোর সেনের বাড়ি এই নন্দপুরেই!”
সমাজ মিত্তিরও বেশ জোরের সঙ্গে বললেন, “আলবাত নন্দপুরে। লোকটা ঠিকই বলেছে।“
দ্বিজপদ আমতা-আমতা করে বলল, “তিনি কে জ্যাঠামশাই?”
“তিনি খুব সাঙ্ঘাতিক লোক ছিলেন। কিন্তু সে-কথা থাক। আগে বলো তো, ঘটনাটা যখন ঘটল তখন ভূতনাথ কী করছিল।”
দ্বিজপদ মাথা নেড়ে বলল, “তিনি তো আসেননি!”
সমাজ মিত্তির বললেন, “আসেনি মানে? বললেই হল আসেনি? বেলা তিনটের সময় পালোয়ান ভৃত্য হরুয়াকে নিয়ে এই পথ দিয়েই ভূতনাথ গেছে। আমি তখন বারান্দায় বসে ছিলুম। আমাকে দেখে এগিয়ে এসে দু দণ্ড দাঁড়িয়ে কথা বলে গেল। আসেনি মানে?”
দ্বিজপদ একটু অবাক হয়ে বলল, “কিন্তু অনেক ডাকাডাকিতেও তিনি সাড়া দিলেন না জ্যাঠামশাই?”
সমাজ মিত্তির টপ করে উঠে পড়লেন। বললেন, “তোমরা বোসো, আমি চট করে টর্চ আর লাঠিগাছ নিয়ে আসছি। ব্যাপারটা সুবিধের ঠেকছে না। একটু সরেজমিনে দেখতে হচ্ছে।”
দ্বিজপদ তাড়াতাড়ি বলল, “লোকজন না নিয়ে কি সেখানে যাওয়া ঠিক হবে জ্যাঠামশাই? আমি বরং তোক ডাকতে যাই।”
বটকেষ্ট বলল, “আমার একাদশী পিসির বড্ড অসুখ, এখন-তখন অবস্থা। একবার তাঁর বাড়িতে না গেলেই নয়।”
সমাজ মিত্তির দ্বিজপদর দিকে চেয়ে বললেন, “গাঁয়ের লোক আজ প্রায় সবাই মেলায় গেছে, ডেকেও কাউকে বিশেষ পাবে
। আর ডেকে হবেটাই বা কী? তারাও তো তোমাদের মতোই ভিতুর ডিম।”
তারপর বটকেষ্টর দিকে চেয়ে বললেন, “একাদশীর জন্য চিন্তার কিছু নেই। বিকেলে বেড়াতে বেরিয়ে আজ ন’পাড়ার দিকেই গিয়েছিলুম। দেখলুম একাদশী মস্ত যাঁতায় ডাল ভাঙছে।”
দুজনেই একটু অপ্রস্তুত। সমাজ মিত্তির তাঁর মোটা বাঁশের লাঠি আর টর্চ নিয়ে বেরিয়ে এসে বললেন, “চলো। দেরি করা ঠিক হবে না।”
সমাজ মিত্তির আগে-আগে টর্চ ফেলতে ফেলতে আর লাঠি ঠুকতে-ঠুকতে, দ্বিজপদ আর বটকেষ্ট একটু পেছনে জড়সড় আর গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে এগোতে লাগল।
বাঁশবনে ঘুটঘুট্টি অন্ধকার। জোনাকি জ্বলছে বলে অন্ধকারটা যেন আরও ঘন মনে হচ্ছে। মানুষের সাড়া পেয়ে দু-চারটে বন্যপ্রাণী, শেয়াল আর মেঠো ইঁদুরই হবে, দৌড়ে পালাল। জনমনিষ্যির চিহ্ন নেই।
বাঁশবন পেরিয়ে বাড়ির চাতালে পৌঁছে মিত্তিরমশাই চারদিকে টর্চ ফেললেন। বাড়িতে কোনও আলো জ্বলছে না। তবে সদর দরজাটার একটা পাল্লা হাঁ করে খোলা।
সমাজ মিত্তির হাঁক মারলেন, “ভূতনাথ! ভূতনাথ আছ নাকি?”
নির্জন ফাঁকা অন্ধকারে ডাকটা এমন বিটকেল শোনাল যে, দু’জনের পিলে চমকে গেল। সমাজ মিত্তিরের গলায় যে এত জোর, তা তাদের জানা ছিল না। যে ডাকে মড়া পর্যন্ত উঠে বসে, সেই ডাকেও ভূতনাথের সাড়া পাওয়া গেল না।
সমাজ মিত্তির দুশ্চিন্তার গলায় বললেন, “নন্দীর পোর হল কী?”
দ্বিজপদ ভাঙা গলায় বলল, “বোধ হয় টায়ার্ড হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। ডিস্টার্ব করাটা ঠিক হবে না জ্যাঠামশাই।”
বটকেষ্ট বলল, “ভূতনাথ নন্দীর বদলে আর কাউকে দেখেননি তো জ্যাঠামশাই? বয়স হলে তো একটু-আধটু ভুল হতেই পারে।”
সমাজ মিত্তির অবশ্য কোনও কথাই কানে তুললেন না। লাঠিটা বাগিয়ে ধরে এগোতে এগোতে বললেন, “একটা বিপদের গন্ধ পাচ্ছি হে। এসো দেখা যাক।”
দ্বিজপদ বলে উঠল, “কাজটা কি ঠিক হচ্ছে জ্যাঠামশাই? ট্রেসপাসিং হচ্ছে না?”
বটকেষ্ট বলে উঠল, “কথাটা আমারও মনে হয়েছে। ট্রেসপাসিংটা মোটেই ভাল জিনিস নয়।”
বাড়ির বারান্দায় উঠে সমাজ মিত্তির আবার বাঘা গলায় ডাকলেন, “ভূতনাথ, আছ নাকি? ভূতনাথ?”
সেই ডাকে দুটো বাদুড় উড়ল। কয়েকটা চামচিকে চক্কর মারতে লাগল। দূরে কোথাও কুকুর ডেকে উঠল ভৌ-ভৌ করে। কিন্তু ভূতনাথ সাড়া দিলেন না।
অবশ্য সাড়া দেওয়ার মতো অবস্থাও তাঁর ছিল না। বাইরের ঘরের মেঝের ওপর তিনি পড়ে ছিলেন উপুড় হয়ে। মাথার ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়ে মেঝে ভেসে যাচ্ছিল।
দৃশ্যটা টর্চের আলোয় দেখে সমাজ মিত্তির বললেন, “সর্বনাশ! এ তো দেখছি খুন করে রেখে গেছে ভূতনাথকে!”
দু’জনে একসঙ্গে বলে উঠল, “খুন!”
সমাজ মিত্তির উত্তেজনা ভালবাসেন, ঘটনা ঘটলে খুশি হন, কিন্তু দৃশ্যটা দেখে তিনি তেমন খুশি হলেন না। হাঁটু গেড়ে বসে ভূতনাথের নাড়ি পরীক্ষা করতে লাগলেন।
দ্বিজপদ বলল, “ডেডবডি নাড়াচাড়া করাটা ঠিক হচ্ছে না জ্যাঠামশাই। পুলিশ ওতে রেগে যায়।”
বটকেষ্ট বলল, “মড়া ছুঁলে আবার চানটান করার ঝামেলা আছে। এই বয়সে কি ওসব সইবে আপনার?”
সমাজ মিত্তির একটা শ্বাস ছেড়ে বললেন, “এখনও মরেনি। প্রাণটা আছে। ওহে, তোমরা একটু জলের জোগাড় করো দেখি। জলের ঝাঁপটা দিয়ে দেখা যাক জ্ঞান ফেরে কি না। তারপর বিছানায় তুলে শোওয়াতে হবে। আর দেখো, বাতিটাতি কিছু আছে কি না।”
জল পাওয়া গেল ভূতনাথের ওয়াটারবলে। চোখে-মুখে ঝাঁপটা দেওয়ার পর বাস্তবিকই ভূতনাথ চোখ খুললেন। তবে চোখের দৃষ্টি ফ্যালফ্যালে। কোনও ভাষা নেই। টেবিলের ওপর মোমবাতি আর দেশলাই ছিল। বাতি জ্বালানোর পর ভূতনাথকে বিছানায় তুলে শোওয়ানো হল। ফার্স্ট এইড বক্সও দেখা গেল ঘরে মজুত আছে। সমাজ মিত্তির ক্ষতস্থানে ওষুধ লাগিয়ে নিজের হাতেই ব্যান্ডেজ বাঁধতে বাঁধতে বললেন, “ওহে, তোমরা হরুয়াকে খুঁজে দেখো। মনে হচ্ছে তার অবস্থাও এর চেয়ে ভাল নয়। টর্চটা নিয়ে যাও।”
বটকেষ্ট আর দ্বিজপদ সিঁটিয়ে গেলেও মুখের ওপর না করতে পারল না। দ্বিজপদর একবার ইচ্ছে হল বলে যে, হয়তো বাজারে-টাজারে গেছে, এসে যাবে। কিন্তু সেটা প্রকাশ্যে বলাটা যুক্তিযুক্ত হবে বলে মনে হল না তার।
হরুয়াকে পাওয়া গেল ভেতরদিককার উঠোনে। উঠোনে মস্ত আগাছার জঙ্গল। তার মধ্যেই পড়ে ছিল হরুয়া। কপালের বাঁ দিকে বেশ গভীর ক্ষত। তবে হরুয়াও বেঁচে আছে। তার বিশাল চেহারা, ধরাধরি করে তুলে আনা কঠিন ব্যাপার। দ্বিজপদ ওয়াটারবটুল এনে তার মুখে-চোখে ঝাঁপটা দেওয়ার পর হরুয়া চোখ মেলল। প্রথম কিছুক্ষণ তার চোখেও ভ্যাবলা দৃষ্টি। তবে সে পালোয়ান মানুষ। কয়েক মিনিট বাদে ধীরে-ধীরে উঠে বসে বলল, “জয় বজরঙ্গবলি”।
প্রায় আধঘণ্টা পরিচর্যার পর মোটামুটি যখন কথা বলার মতো অবস্থা হল দু’জনের, তখন ভূতনাথ নন্দী শুধু বললেন, “স্ট্রেঞ্জ থিং।”
সমাজ মিত্তির গুছিয়ে বসে বললেন, “বেশ খোলসা করে বলো তো ভায়া, বেশ বিস্তারিত বলো।”
ভূতনাথ নন্দী মাথা নেড়ে বললেন, “বিস্তারিত বলার কিছু নেই। দুপুর সোয়া তিনটে নাগাদ আমি আর হরুয়া বাড়িতে ঢুকেছি। ঢুকে দেখি দরজার তালা ভাঙা। অবাক হওয়ার ব্যাপার নয়, নির্জন জায়গায় বাড়ি, চোর হানা দিতেই পারে। তাই আমি বাড়িটাতে দামি জিনিস কিছুই রাখি না। সামান্য দুটো খাট, বিছানা, আর দু-চারটে পুরনো অ্যালুমিনিয়ামের বাসনকোসন। যায় যাক। তাই তালা ভাঙা দেখে আমরা চেঁচামেচি, থানা-পুলিশ করিনি। হরুয়া একটু তড়পাচ্ছিল বটে, তবে সেটা ফাঁকা আওয়াজ। কিন্তু ঘরে ঢুকে দেখলুম, চোর কিছুই নেয়নি, কিন্তু দু-দুটো ঘরের মেঝেয় বিরাট করে গর্ত খুঁড়েছে। ওই উত্তরপাশের ঘরটায় আর পেছনের ঘরটায়। দুটো গর্তই সদ্য খোঁড়া। বাড়ির মেঝে এরকম জখম হওয়ায় হরুয়া তো খুব রেগে গেল, লাঠি হাতে চারদিকটা ঘুরে দেখেও এল। আমি রেগে গেলেও জানি, পুরনো বাড়িতে গুপ্তধন থাকতে পারে এই ধারণায় অনেকে খোঁড়াখুঁড়ি করে।”
সমাজ মিত্তির গম্ভীর মুখে শুনছিলেন। বললেন, “গর্ত দুটো একটু দেখে আসতে পারি?”
“বাধা কী? যান, দেখে আসুন। ওরে হরুয়া, বাতিটা দেখা তো।”
সমাজ দ্বিজপদ আর বটকেষ্টকে নিয়ে গর্ত দেখলেন। দুটো গর্তই কোমরসমান হবে। অনেকটা জায়গা জুড়ে বেশ করেই গর্ত খোঁড়া হয়েছে।
সমাজ মিত্তির ফিরে এসে বললেন, “তারপর বলো ভায়া।”
“আমি বিকেলের দিকটায় জিনিসপত্র গোছগাছ করছি। হরুয়া গেছে উঠোনের জঙ্গল কাটতে। এমন সময় হঠাৎ একটা বেশ
লম্বাচওড়া লোক ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল, “এটা অঘোর সেনের বাড়ি না? লোকটা হঠাৎ বিনা নোটিশে হুট করে ঢুকে পড়ায় আমি বিরক্ত হয়েছিলুম। বেশ ধমক দিয়ে বললুম, ‘না মশাই, এটা অঘোর সেনের বাড়ি নয়। আপনি আসুন।’ লোকটা একথায় রেগে গিয়ে বলল, এটাই অঘোর সেনের বাড়ি। তুই এখানে কী করছিস? আমি রেগে গেলেও মাথা ঠাণ্ডা রেখে বললুম, এ-বাড়ি কার, তা আমি জানি না। তবে আমি বক্সির কাছে কিনেছি।”
“তারপর কী হল?”
“ব্যস, কথা ওটুকুই। বাকিটা অ্যাকশন। লোকটা হঠাৎ মুগুরের মতো একটা জিনিস বের করে ধাঁই করে মাথায় মারল। আর কিছু জানি না।”
হরুয়া বলল, “আমি লোকটাকে দেখিনি। আপনমনে জঙ্গল সাফা করছিলাম, হঠাৎ কে যে কোথা থেকে কী দিয়ে মারল তা ভগবান জানেন।”
সমাজ মিত্তির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “তোমাদের কপালে বোধ হয় আরও কষ্ট আছে, ভূতনাথ। তোমরা বরং এখানে এখন আর থেকো না।”
“কেন বলুন তো?”
“অঘোর সেনের খোঁজ যখন শুরু হয়েছে, তখন সহজে শেষ হবে না।”
“অঘোর সেনটা কে?” “সে বৃত্তান্ত পরে শুনো। আজ বিশ্রাম নাও। গাঁ থেকে কয়েকজন শক্তসমর্থ লোক পাঠাচ্ছি। তারা আজ বাড়িটা পাহারা দেবে।”