পরদিন সন্ধ্যায় দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার অফিসে কর্নেলের ফোন পেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ইলিয়ট রোডে ওঁর তিনতলার অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে দেখি, প্রাইভেট ডিটেকটিভ কে কৈ হালদার অর্থাৎ আমাদের প্রিয় হালদারমশাই বসে আছে এবং নস্যি নিচ্ছেন। আমাকে দেখেই উনি সহাস্যে বললেন, আইয়েন আইয়েন জয়ন্তবাবু। কর্নেল স্যার কইছিলেন–।
ওঁর কথার ওপর বললাম, কী খবর জটায়ুবাবু?
অ্যাঁ? হালদারমশাই গুলিগুলি চোখে তাকালেন। জটায়ুবাবু? কে জটায়ুবাবু?
আপনি। ক্যা
ন?
খবরের কাগজে এক মহাপণ্ডিত লিখেছেন, আপনি নাকি সত্যজিৎ রায়ের গোয়েন্দা কাহিনীর জটায়ু নামে একটি চরিত্রের নকল।
হালদারমশাই তার লম্বা তর্জনী বুকে ঠেকিয়ে বললেন, আমি? আমি নকল?
কর্নেল চোখ বুজে ধ্যানস্থ ছিলেন। ধ্যান ভঙ্গ করে বললেন, জয়ন্ত খুব চটে গেছে হালদারমশাই। ওর কথায় কান দেবেন না।
বললাম, চটে আর না চটে। সত্যজিৎ রায়ের জটায়ু একজন রহস্য অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীলেখকের ছদ্মনাম। আমি সত্যজিৎ রায়ের কোনও বই পড়িনি। তবে একটা সিনেমায় জটায়ু ভদ্রলোককে দেখেছি। তার সঙ্গে হালদারমশাইয়ের কোথায় মিল? জটায়ু একজন অজ্ঞ গোবেচারা লোক। আর হালদারমশাই বিচক্ষণ গোয়েন্দা। প্রাক্তন সি আই ডি অফিসার।
হালদারমশাই সোৎসাহে চার্জ করলেন, জটায়ু ভদ্রলোক আমার মতো চৌতিরিশ বৎসর পুলিশে চাকরি করছেন? প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সি খুলছেন আমার মতো? ওনার লাইসেন্সড় ফায়ার আর্মস আছে? উনি আমার মতো বনবাদাড়ে রাত্রিবাস করছেন? তারে কেউ আইষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধছে? মুখে টেপ সাঁটছে? উনি ফিল্ড ইনভেস্টিগেশন করছেন? ছদ্মবেশ ধরছেন?
কর্নেল থামিয়ে না দিলে হালদারমশাই আরও কিছুক্ষণ চালিয়ে যেতেন। ছেড়ে দিন। জয়ন্ত, চুপটি করে বসে কফি খাও।
এতক্ষণে সোফায় বসলাম। বললাম জটায়ু একটা প্যাসিভ ক্যারেক্টার। আর হালদারমশাই অ্যাক্টিভ ক্যারেক্টার।
কর্নেল বললেন, ডার্লিং! যথেষ্ট হয়েছে।
এই ডার্লিং বলাটাও নাকি আরকুল পয়রোর ফ্রেঞ্চ সম্বোধন মন আমি বলার নকল।
কর্নেল কফির পেয়ালা তুলে দিলেন আমার হাতে। বললেন, এরকুল পোয়ারো। সেই পণ্ডিতমশাই ফ্রেঞ্চ জানেন না। তাছাড়া প্রবাদ আছে না? সব চীনেকেই একই লোক বলে ভুল হয়। যাই হোক, আমাদের কোকোদ্বীপের অভিযান নিয়ে তুমি একটু ফেনিয়ে লিখেছিলে।
আপনি তাহলে পণ্ডিতমশাইয়ের সমালোচনাটা পড়েছেন দেখছি।
পড়েছি। গাঁজাখুরি গল্পও বলেছেন। আসলে উনি ভুলে গেছেন, ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন।
বিভীষিকা শব্দেও পণ্ডিতমশাইয়ের আপত্তি। শব্দটার ধার নাকি ক্ষয়ে গেছে।
কর্নেল হাসলেন। বিভীষিকা, আতঙ্ক, ত্রাস মানুষের বিপন্নতা-বিস্ময়-মৃত্যুভয়ের অনুভূতিকে প্রকাশ করে। একেক ভাষায় এই অনুভূতি প্রকাশের জন্য অজস্র শব্দ আছে, যা কখনও পুরনো হয় না। হবেও না। ধরো, সেই সমালোচক ভদ্রলোক রাত্রে একা বাড়ি ফিরছেন। হঠাৎ কোনও ছিনতাইকারী ছুরি বের করে গলায় ঠেকিয়ে বলল, মালকড়ি ছাড়ো। তখন উনি হাড়ে হাড়ে টের পাবেন বিভীষিকা বলতে কী বোঝায়। আরও অনেক কথা আছে। তবে পণ্ডিতমূর্খ কথাটি যাঁর মাথায় বেরিয়েছিল, তিনি নমস্য।
হালদারমশাই সায় দিলেন। ঠিক! ঠিক কইছেন কর্নেল স্যার!
বললাম, আপনিও এবার পূর্ববঙ্গীয় ভাষা ছাড়ুন হালদারমশাই!
ক্যান? মাই মাদার-টাং।
কর্নেল টেলিফোনের দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন, পার্টিশনের পর পূর্ববঙ্গ থেকে যারা পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন, তাদের পরের প্রজন্মের কথা আলাদা। কিন্তু প্রবীণেরা অধিকাংশই দেখেছি পূর্ববঙ্গীয় ভাষা ছাড়েননি। তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, পূর্ববঙ্গীয় ভাষার একটা বৈশিষ্ট্য আছে। কথার জোর বাড়িয়ে দেয়। একবার আমাদের কজন সামরিক অফিসারকে কমান্ডিং টোনে মার্চ শব্দটার উপযুক্ত বাংলা শব্দ তর্জমা করতে বলা হয়েছিল। আমাদের এক অফিসার ছিলেন বরিশালের লোক। তিনি কমান্ডিং টোনে গর্জন করে উঠলেন, আউগ্ন।
হালদারমশাই খি খি করে হেসে বললেন, অসাধারণ! ফোর্সফুল।
কিন্তু শব্দটা ভোটে বাতিল হয়ে গিয়েছিল।
ক্যান?
আউগগা নাকি শিষ্ট শব্দ নয়। অথচ কোন বইয়ে পড়েছি ভাষাচার্য সুনীতি চ্যাটার্জিমশাইও নাকি রসিকতা করে মার্চের বিকল্প শব্দ হিসেবে আউগগা-তে সায় দিয়েছিলেন। হা–অসাধারণ ফোর্সফুল শব্দ। কর্নেল এতক্ষণে ডায়াল করতে থাকলেন। যাই হোক, হালদারমশাইয়ের চরিত্র, অভিজ্ঞতা, কাজকর্মের সঙ্গে তাঁর মাদার-টাং চমৎকার মিলে যায়। লালবাজারের সি আই ডি অফিসার নরেশ ধরের কথা ভাবুন। বলে টেলিফোনে সাড়া পেলেন কর্নেল। …কর্নেল নীলাদ্রি সরকার বলছি।…হ্যাঁ, বলুন। লিখে নিচ্ছি।
কর্নেল টেবিলে রাখা প্যাডে কী লিখে নিয়ে ধন্যবাদ মিঃ মল্লিক বলে রিসিভার নামিয়ে রাখলেন।
বললাম, হালদারমশাই তাঁর মক্কেলের কাজ সেরে ফিরেছেন দেখা যাচ্ছে। হালদারমশাই চেতনাউদ্যানে হানা দিতে গিয়েছিলেন শুনেছি। ব্যাপারটা কী?
প্রাইভেট ডিটেকটিভ এক টিপ নস্যি নিয়ে নোংরা রুমালে নাক মুছলেন। কিন্তু মুখ খুললেন না।
কর্নেল বললেন, চেতনা দেবীকে কেউ উড়ো চিঠিতে ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে, বউমারির ঝিল-জঙ্গলের দিকে পা বাড়ালেই তাঁর বিপদ হবে–মানে, চেতনাউদ্যান নামের সেই ন্যাশনাল পার্কে। হুমকির চিঠিতে এ-ও বলা হচ্ছে, এ কথা তাঁর স্বামীকে জানালে তার স্বামী অমিয় দত্তেরও বিপদ হবে। তাই চেতনা দেবী কাগজে হালদার ডিটেকটিভ এজেন্সির বিজ্ঞাপন দেখে গোপনে হালদারমশাইয়ের শরণাপন্ন হয়েছিলেন।
হালদারমশাই বললেন, এক্কেরে নন্দনকানন কইতে পারেন। এক কোটি টাকার প্রজেক্ট। ওঃ! বি-উ-টি-ফুল। ট্যুরিস্ট লজ, কটেজ, দত্তসায়েবের জন্য একখানা সেপারেট প্রাইভেট ভিলা। স্বচক্ষে না দেখলে বোঝানো যায় না। আর। পক্ষী! কত রকমের পক্ষী! তবে শুনলাম, আগেও ওখানে পক্ষীদের ডেরা ছিল।
কর্নেল বললেন, ছিল। নদীর অববাহিকার দুর্গম জলাভূমিতে স্বভাবত নানা প্রজাতির পাখিরা এসে জোটে। পরে একটা অংশ বাঁধ দিয়ে ঘিরে সরকার বনসৃজন প্রকল্প করেছিলেন।
বললাম, তা হালদারমশাই ওখানে গিয়েছিলেন কেন?
হালদারমশাই বললেন, ফিল্ড ইনভেস্টিগেশন আগে করা কর্তব্য।
কর্নেল একটু হেসে বললেন, হালদারমশাইয়ের বরাবর এই এক অনবদ্য পদ্ধতি। এটা খুব কাজেও লাগে অবশ্য। সাধুবাবার ছদ্মবেশ।
আপনি সাধুবাবা সেজে গিয়েছিলেন?
হঃ। বলে আবার চুপ করে গেলেন প্রাইভেট ডিটেকটিভ।
কর্নেল বললেন, সাধুবাবা কিংবা ফকির এঁদের কদর আগেও ছিল। এখন কিন্তু অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সাধুবাবার কথাবার্তায় যদি ইংরেজি সেন্টেন্স থাকে। সংস্কৃত খুব কম লোকেই বোঝে। কাজেই ইচ্ছেমতো উদ্ভট শব্দ বানিয়ে ম বা অনুস্বার জুড়ে দিলেই চলে।
অস্থির হয়ে বললাম, আহা! ওঁর তদন্তরিপোর্টটা কী?
চেতনাউদ্যান ওপেনিং ফাংশনের জন্য তৈরি হচ্ছে। এলাকার রাজনীতিক পঞ্চায়েত মেম্বার-সরকারি লোকজন মিলে অভ্যর্থনা কমিটি গড়া হয়েছে। কাছাকাছি বড় গ্রাম কুসুমপুর। সেখানকার গার্লস স্কুলে ছুটি। কিন্তু লোকাল দিদিমণি অর্থাৎ টিচার আছেন তিনজন। তাদের পাওয়া গেছে। এক দঙ্গল ছাত্রীকে তারা রিহার্সাল দিচ্ছেন।
হালদারমশাই বললেন, সবখানে ঘুরছি। অন দি স্পট–মানে জঙ্গলেও। রাত্রে ভাবলাম, শ্মশানতলায় বুনি জ্বালাইয়া বসব। কিন্তু চেতনাভিলার কেয়ারটেকার লক্ষ্মীবাবু পিছন ছাড়লেন না। কইলেন, ম্যাডাম খবর দিছেন, এক সাধুবাবা আগাম উদ্যানদর্শনে যাবেন। ভূতপ্রেত-যক্ষরক্ষ-পিচাশগুলিরে ভাগাইয়া দিবেন। কাজেই তেনার সেবাযত্নের য্যান ত্রুটি না হয়। তো আমি চেতনাভিলায় অনারেব গেস্ট হইয়া গেলাম।
এর পর প্রাইভেট ডিটেকটিভ তাঁর নিজস্ব রীতিতে যে বিবরণ দিলেন, তা সংক্ষেপে এই :
হালদারমশাই ভুরিভোজন করে সুন্দর বিছানায় শুয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ঘুমোননি। এসেছেন মক্কেলের হয়ে গোয়েন্দাগিরি করতে। তার ঘুমোলে চলে? এখানে এলে ম্যাডামের কী বিপদ হবে এবং কেনই বা তা হবে, সেটা তার জানা দরকার। লক্ষ্মীবাবুর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেও কোনও সূত্র পাননি। বহু। জায়গায় আড়ি পেতেও তেমন কিছু সন্দেহজনক কথাবার্তা কানে আসেনি। সন্দেহজনক কোনও গতিবিধিও চোখে পড়েনি তার। তাই রাত দুপুরে আবার আড়ি পাতার প্ল্যান ভাঁজছিলেন।
তখন রাত প্রায় সাড়ে বারোটা। চারদিক নিঝুম নিঃশব্দ। শুধু দূর থেকে রাতপাখিদের ডাক ভেসে আসছে। শ্মশানতলার দিকে কিছুক্ষণ শেয়াল ডেকে চুপ করে গেল। হালদারমশাই সবে বিছানা থেকে উঠে বসেছেন, এমন সময় কাদের চাপা গলার কথাবার্তা কানে এল।
প্রচণ্ড মশা, তাই মশারি খাটানো ছিল। মশারি থেকে বেরিয়ে পা টিপে টিপে জানালার কাছে গেলেন। লনের কোনার দিকে আলো পৌঁছায়নি। ঘন ঝোঁপঝাড়ের আড়ালে কারা চাপা গলায় কথা বলছে। গোয়েন্দা ভদ্রলোক কান পাতলেন। তারপর চমকে উঠলেন।
একজন বলছে, চল না বে! টিকটিকিটাকে এক্ষুণি শেষ করে শ্মশানতলায়। পুঁতে আসি।
অন্য একজন বলছে, তুই ঠিক জানিস ব্যাটাচ্ছেলে সাধুবাবা নয়?
জানি। আমার হাতে খবর আছে।
কিন্তু ঘর তো ভেতর থেকে বন্ধ।
ইন্টারলকিং সিস্টেম আছে দরজায়। লক্ষ্মীবাবুর ঘর থেকে বিকেলে ডুপ্লিকেট চাবির গোছা হাতিয়েছি। সকালে সেই জায়গায় রেখে দেব।
ঠিক আছে। আগে টিকটিকিটাকে শেষ করে, তারপর ওই মেয়েছেলেটাকে সাবাড় করা যাবে। বারো ঘাটের জল-খাওয়া এক প্রস! সায়েবের কী আক্কেল মাইরি! আমাদের গিন্নিমাঠাকরানের আত্মা শান্তি পাবে? এই এরিয়ার জমিদার বংশের মেয়ে ছিলেন। আমি নিজের কানে শুনেছি, বেঁচে থাকতে পইপই করে সায়েবকে বলতেন, বউমারির ঝিল-জঙ্গলের মালিক ছিলেন আমার পূর্বপুরুষ। সরকার নিয়ে নিয়েছে তো কী হয়েছে? তুমি কত জায়গায় টাকা ঢালছ। ওখানে কিছু ঢালো।
হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমিও শুনেছি। আমিও তো ও-বাড়িতে বড় হয়েছি।
তুই তো জানিস, আমি সায়েবের সঙ্গে আমেরিকায় তিন বছর ছিলাম। ওই মেয়েছেলেটা নাইট ক্লাবে নাচত, তা জানিস?
বলিস কী?
হ্যাঁ। সায়েব ওর সঙ্গে প্রেম-ট্রেম করে শেষ পর্যন্ত বউ করে নিয়ে দেশে ফিরবে ভাবতেই পারিনি। ওকে দেখলে আমার ঘেন্না হয়। খালি ভাবি, ভগবান, এই পাপ সহ্য করছ তুমি?
আমার রাগ হয় অনির কথা ভেবে। অনিকে আমি কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি। অনি কেন রাতারাতি দাদামশাইয়ের বাড়ি গিয়ে উঠেছিল, তুই যেমন জানিস, আমিও তেমনি জানি।
অনি এখন লায়েক হয়েছে। মা কেন সুইসাইড করেছিল, সে জেনে গেছে। তারও খুব রাগ হয়েছে জানিস?
হওয়া উচিত বৈকি। তা অনির এ ব্যাপারে মতামত কী?
দাদামশাইয়ের যা মত, তার বাইরে নয়। এবার বুঝে নে!
ওরে। ওঁদের শরীরে জমিদারি রক্তের ধারা বইছে। আগের দিন হলে তো
আর কথা নয়। চ। টিকটিকিটাকে আগে তুলে আনি।
কিন্তু চ্যাঁচামেচি করে যদি?
ঘুমন্ত অবস্থায় ওর মুখে রুমাল ঢুকিয়ে দেব। সঙ্গে দড়ি আছে। আষ্টেপিষ্টে বেঁধে শ্মশানতলায় নিয়ে যাব। তারপর শ্বাসনালী কেটে ফেলব। মালীদের ঘর থেকে খন্তা নিয়ে আসবি তুই। নরম মাটিতে পুঁতে ওপরে উলু কাশের চাবড়া বসিয়ে দেব। ব্যস। চলে আয়।
হালদারমশাই আর সহ্য করতে পারলেন না। তিনি একসময় মফস্বলে পুলিশের উঁদে দারোগা ছিলেন। পরে ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর হয়ে রিটায়ার করেছেন। নিঃশব্দে গেরুয়া ঝোলা, ত্রিশূল আর কমণ্ডলু তুলে নিয়ে তক্ষুণি বেরিয়ে এলেন। তারপর বারান্দায় গিয়ে লনে ঝাঁপ দিলেন।
এবং যথারীতি তার পয়েন্ট ৩৮ ক্যালিবারের রিভলভার তুলে গর্জন করলেন, হালারা ঘুঘু দেখছ, ফান্দ দেখ নাই।
কিন্তু আশ্চর্য! কোনও সাড়াশব্দ নেই। পরমুহূর্তে টর্চের কথা খেয়াল হয়েছিল। ঝুলি থেকে টর্চ বের করে জ্বাললেন। সেই ঝোপের ওদিকে কেউ নেই। চেতনাভিলায় অত রাতে কোনও গার্ড বা সারভ্যান্ট কাকেও খুঁজে পেলেন না। কেয়ারটেকার লক্ষ্মীবাবু কোথায় থাকেন, জানা নেই। হালদারমশাই ভিলার চারদিকের লন, ফুলবাগিচা তন্নতন্ন খুঁজে কাকেও দেখতে পেলেন না।
যাই হোক, তার প্রাথমিক তদন্তে যা বোঝা গেল, তা সাংঘাতিক একটা চক্রান্ত। তার পক্ষে আর ওখানে থাকার কারণ ছিল না। ম্যাডামকে কলকাতায় ফিরে ব্যাপারটা জানাতে হবে। কুসুমপুরের মোড়ে পৌঁছে হালদারমশাই ডাববোঝাই একটা টেম্পো পেয়ে যান। টেম্পোটা যাবে সোনাইতলা। ভোরে ডাবগুলো চালান যাবে কলকাতা। সাধুবাবা-কে টেম্পোওয়ালা না করতে পারেনি। তবে হালদারমশাইয়ের ঘোর সন্দেহ, ডাবের তলায় বর্ডার পেরিয়ে-আসা জিনিসপত্র থাকা সম্ভব। কিন্তু তিনি তো স্মাগলার ধরতে যাননি।
সোনাইতলার হাইওয়ের ধারে সারবন্দি গাছ। গাছের আড়ালে ছদ্মবেশ খুলে প্যান্টশার্ট পরে বাসস্টপে যান হালদারমশাই। ভোর পাঁচটায় শিলিগুড়ি-কলকাতা রুটের বাস এসে থামলে তিনি কলকাতা ফিরে আসেন। তারপর ম্যাডামকে রিং করেন। ম্যাডাম তাকে বলেন, বিকেল চারটেয় আপনার অফিসে মিট করব।
ম্যাডাম যথাসময়ে এসেছিলেন। সব শুনে তিনি খুব ভয় পেয়ে যান। হালদারমশাই তাকে চেতনাউদ্যানের ওপনিং ফাংশনে যেতে নিষেধ করেছেন। বলেছেন, যে-কোনও ছলছুতো করে সায়েবের সঙ্গে ওখানে যাওয়ার প্রস্তাব ম্যাডাম যেন এড়িয়ে চলেন। ম্যাডাম উদ্বিগ্নমুখে চলে যান। তারপর হালদারমশাই চলে যান ভবানীপুরে দত্তসায়েবের প্রথম পক্ষের শ্বশুরবাড়িতে। অর্থাৎ সেই দাদামশাই-এর বাসভবনে।
বিশাল প্রাসাদ। সূর্যনারায়ণ রায় নাকি অসুস্থ। তাই কারও সঙ্গে দেখা করেন না। অনির পুরো নাম অনিরুদ্ধ। সে কোন টেনিস ক্লাবে খেলতে গেছে। বাড়ি ফিরতে রাত নটা বেজে যাবে।
এর পর হালদারমশাই কর্নেল স্যারের কাছে চলে আসেন।….
কর্নেল এতক্ষণ আতস কাঁচ দিয়ে টেবিল্যাম্পের আলোয় কয়েকটা চিঠি পড়ছিলেন। এবার লক্ষ্য করলাম, বংশীবদন পালের দেওয়া সেই কার্ডের উল্টোপিঠে লেখা নামটা পরীক্ষা করছেন।
হালদারমশাই হাই তুলে বললেন, বড্ড টায়ার্ড। যাই গিয়া।
কর্নেল চিঠি-কার্ড-আতস কাঁচ ড্রয়ারে ভরে বললেন, আপনি চেতনাউদ্যানের ওপেনিং ফাংশনে যাবেন তো?
না কর্নেল স্যার। সূর্যনারায়ণবাবুর বাড়িতে দত্তসায়েবের ফার্স্ট ওয়াইফের পোলারে কাইল মিট করব। বলে হালদারমশাই উঠে দাঁড়ালেন। জয়ন্তবাবু! কর্নেল স্যার! যাই গিয়া।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ সবেগে বেরিয়ে গেলেন। ড্রয়িং রুমের পর্দা দুলতে থাকল। ওয়েটিং রুমের পর অ্যাপার্টমেন্টে ঢোকার দরজা। সেই দরজাও যথেষ্ট শব্দ করল।
বললাম, হালদারমশাই হঠাৎ যেন উত্তেজিত হয়ে বেরিয়ে গেলেন।
হাতে কেস পেলে এবং ক্লায়েন্ট মহিলা হলে হালদারমশাই প্রাণপণে লড়ে যান। এ আর নতুন কথা কী? বলে কর্নেল আমার দিকে ঘুরলেন। তো ওঁর কেসের প্রাথমিক তদন্তরিপোর্ট সম্পর্কে তোমার বক্তব্য কী শুনি?
আমি তো বোকা।
কেন?
এক ভদ্রমহিলা সত্যসেবকে আমার ক্রাইম রিপোর্টটা পড়ে চিঠি লিখে জানতে চেয়েছেন, আমি এত বোকা কেন?
কর্নেল হাসলেন। গোয়েন্দাদের সহকারীদের বোকা হওয়াই ট্রাডিশন। তবে আমি সেই অর্থে গোয়েন্দা নই এবং তুমিও আমার সহকারী নও। নিছক সঙ্গী। তোমার কাগজের জন্য স্টোরি পাওয়ার একটা স্বার্থ অবশ্য আছে। কিন্তু নাহ্ ডার্লিং! এ যাবৎ যত রহস্য আমি ফাস করেছি, সেগুলোর মধ্যে তোমার। উপস্থিতি নগণ্য। যাই হোক, আমার প্রশ্নের উত্তরটা দাও।
একটু ভেবে নিয়ে বললাম, উড়ো চিঠির হুমকি এবং হালদারমশাইয়ের শোনা সাংঘাতিক কথাবার্তা খাপ খাচ্ছে না।
কেন?
দত্ত সায়েবের প্রথম স্ত্রীর প্রতি যাদের এত বেশি ভক্তি, তারা চেতনা দেবীকে খুন করতে চাইলে চেতনাউদ্যানে যেতে বাধা দেবে কেন? বরং ওখানে তাকে খুন করা সোজা। বনজঙ্গল জায়গা।
হু। বলে কর্নেল চোখ বুজে ইজিচেয়ারে হেলান দিলেন।
উৎসাহে বললাম, কাজেই উড়ো চিঠি যে বা যারা লিখেছে, সে বা তারা অন্য এক পক্ষ। ধরা যাক, এই পক্ষের নাম এক্স এক্স চাইছে চেতনা দেবী যেন। ওখানে না যান।
চাইলে কী হবে? চেতনা দেবীকে তো যেতেই হবে। ওঁর নামে উদ্যান। মন্ত্রী, ভিআইপিরা যাবেন। পুলিশ প্রোটেকশন থাকবে। কাজেই তোমার এক্স পক্ষ ভালোই বোঝে, চেতনা দেবী যাবেন! হুমকি দিয়ে কাজ হবে না। এদিকে হালদারমশাইয়ের রিপোর্ট পেয়ে চেতনা দেবী সতর্ক হবেন। স্পেশাল প্রোটেকশনের ব্যবস্থাও করতে পারেন। বলে কর্নেল চোখ খুললেন। করতে পারেন নয়, করবেনই। এমন কি এতক্ষণে করেও ফেলেছেন হয়তো।
হাল ছেড়ে দিয়ে বললাম, নাহ্। বড্ড প্যাচালো ব্যাপার।
কর্নেল হাসলেন। খুবই পাচালো। কারণ চেতনা দেবী যে প্রাইভেট ডিটেকটিভ লাগিয়েছেন, তা ওঁর শত্রুপক্ষ জেনে গেছে। তবে চেতনা দেবীর বিরুদ্ধে কারও শত্রুতা নিছক পারিবারিক আনুগত্যের দরুন না-ও হতে পারে।
কর্নেল! সূর্যনারায়ণ রায় তার মেয়ের আত্মহত্যার জন্য চেতনা দেবীকে দায়ী করতেই পারেন। তাকেই শত্রুপক্ষ বলে ধরে নেওয়া যায়।
তা যায়। কিন্তু
কিন্তুটা কী? হালদারমশাই নিজের কানে যা শুনেছেন, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে সূর্যবাবুই ওদের পেছনে আছেন।
কর্নেল একটু চুপ করে থাকার পর বললেন, ফ্যান্সি টেলার্সের কার্ডের পেছনে এম আলি যে লিখেছিল, হুমকির চিঠিগুলো সে-ই লিখেছে। একই হস্তাক্ষর।
উত্তেজনায় নড়ে বসলাম। এ তো বড় অদ্ভুত ব্যাপার!
অদ্ভুত! আরও অদ্ভুত ওই ডামি বা ম্যানিকিনের ব্যাপারটা। অর্ডার দিয়ে জিনিসটা চুরি করা হল। দেড় হাজার টাকা বাঁচাতেই কি চুরি? আর, ডামি কোন কাজে লাগবে?
কর্নেল! আমার বোধবুদ্ধি গুলিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সত্যিই আমি বোকা।
ডার্লিং! বোধবুদ্ধি আমারও গুলিয়ে যাচ্ছে। কারণ কিছুক্ষণ আগে এক্সচেঞ্জের মিঃ মল্লিক তার বাড়ি থেকে জানালেন, ফোন নাম্বারটা ভবানীপুরের জনৈক সূর্যনারায়ণ রায়ের প্রাইভেট নাম্বার। এসব নাম্বার ফোন ডাইরেক্টরিতে থাকে না। মিঃ মল্লিক অবশ্য আমার খাতিরে অনেক চেষ্টায় একটা বেআইনি কাজ করেছেন। তবে ফোনটা এখন ডেড। এক্সচেঞ্জে কোনও কমপ্লেনও করা হয়নি।
তাহলে সূর্যবাবুই এসব করাচ্ছেন। জমিদারি রক্তের ধারা।
কিন্তু ডামি দিয়ে কী হবে? কর্নেল প্রশ্নটা যেন নিজের উদ্দেশেই করলেন। তারপর ঘড়ি দেখলেন। নাহ্। আর তোমাকে আটকাব না। সাড়ে দশটা বাজে। কাল মর্নিংয়ে রেডি থাকবে কিন্তু।…
কর্নেলের বাড়ি থেকে আমার সল্টলেকের ফ্ল্যাটে ফিরে টের পেয়েছিলাম, গোলমেলে ঘটনাগুলো আমার রাতের ঘুম পণ্ড করবে। তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধে হাল্কা ডোজের একটা ঘুমের বড়ি খেয়েছিলাম এবং ঘুম ভাঙতে দেরি হয়েছিল। শিগগির ব্রেকফাস্ট সেরে তৈরি হয়ে নিলাম। সময় কাটছিল না। নটায় কর্নেলকে ফোন করলাম। ষষ্ঠীচরণ বলল, বাবামশাই ভোরবেলা বেইরেছেন। এখনও ফেরেননি। ও হ্যাঁ–ভুলেই গেছি কথাটা। বাবামশাই বলে গেছেন, দাদাবাবু ফোং করলে এখানে চলে আসতে বলবি। আপনি চলে আসুন দাদাবাবু। না এলে বাবামশাই বকাবকি করবেন। ভাববেন আমি আপনাকে ফোং করিনি।
এত অবাক হয়েছিলাম যে ষষ্ঠী লাইন ছেড়ে দিলেও তখনও রিসিভার ধরে আছি। চেতনাউদ্যানে যাবার জন্য যে স্যুটকেসটা গুছিয়েছিলাম, সেটা ফেলে রেখে তখনই বেরিয়ে পড়লাম।
কর্নেলের অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছে দেখি, তখনও উনি ফেরেননি। ষষ্ঠীচরণ বলল, ভোরবেলা রোজকারমতো বাবামশাই ছাদের বাগানে কাজ করছিলেন। সেই সময় একটা ফোং এল। ওপরে গিয়ে খপর দিলাম। বাবামশাই নেমে এসে কোং ধরলেন তারপর ডেরেস বদলে বেইরে গেলেন।
সে আমার জন্য শিগগির কফি আনল। তারপর কুণ্ঠিতভাবে বলল, দাদাবাবু, যদি একটুখানি রোয়েট করেন, আমি বাজার সেরে আসি।
হাসবার চেষ্টা করে বললাম, যাও। আমি রোয়েট করছি।
ষষ্ঠী ওই হল আর কী বলে চলে গেল। সে ওয়েট-কে রোয়েট বলে। অজস্রবার শুধরে দিয়েও তাকে ফোনের বদলে ফোং বলা ছাড়াতে পারেননি কর্নেল। এ সেই হালদারমশাইয়ের ভাষাঘটিত ব্যাপার।
বসে আছি তো আছি। কর্নেল একগোছা খবরের কাগজে রাখেন। আনমনে পাতা উল্টোচ্ছি। ষষ্ঠীচরণ বাজার সেরে ফিরে এসেছে। সওয়া দশটা বাজে। এতক্ষণে ফোন বাজল। রিসিভার তুলে সাড়া দিলাম। কর্নেলের কণ্ঠস্বর শুনলাম। জয়ন্ত! একটু দেরি হয়ে গেল। তুমি নিশ্চয় অনেকক্ষণ বসে আছ। দুঃখিত ডার্লিং।
আপনি কোথা থেকে বলছেন?
যোধপুর পার্ক। শোনো! তুমি কি তোমার গাড়িতে এসেছ?
হ্যাঁ। কী ব্যাপার? আপনার প্রোগ্রাম–
বাতিল করতে হয়েছে। নিকুঞ্জবাবু অবশ্য রওনা হয়ে গেছেন। তুমি এখানে চলে এসো এক্ষুণি। যোধপুর পার্ক এরিয়া তোমার চেনা। পার্কের উত্তর দিকের একটা লেনের মুখে আমি অপেক্ষা করছি।
কিন্তু ব্যাপারটা কী?
এসে শুনবে।
কর্নেল ফোন ছেড়ে দিলেন। ওঁর অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তক্ষুণি বেরিয়ে পড়লাম। যোধপুর পার্কে পৌঁছে যথাস্থানে কর্নেলকে দেখতে পেলাম। মাথায় টুপি, গলা থেকে ঝোলানো বাইনোকুলার এবং ক্যামেরা, মুখে চুরুট।
আমি গাড়ি থেকে নামতে যাচ্ছি, উনি ইশারায় বারণ করলেন। তারপর আমার বাঁ দিকে বসে বললেন, হালদারমশাই ভোরে ফোন করেছিলেন আমাকে। ওঁর মক্কেলের ওপর হামলা করেছিল কারা। একটুর জন্য বেঁচে গেছেন।
চেতনা দেবীর ওপর হামলা? কখন? কী ভাবে?
চলো। যেতে যেতে বলছি।
ঢাকুরিয়া ব্রিজ থেকে নামার সময় কর্নেলের কথা শেষ হল। যোধপুর পার্কে দত্তসায়েবের পৈতৃক বাড়ির নাম ছিল দত্তভিলা। এখন ভোল পাল্টে আধুনিক বিলিতি স্থাপত্যে তৈরি হয়েছে এবং নতুন নাম হয়েছে চেতনা। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ভোরে জগিং করেন। কিছুদিন যাবৎ–উড়ো চিঠি পাওয়ার পর থেকে চেতনা দেবী নানা অছিলায় জগিংয়ে বেরোন না। তাই দত্তসায়েব অগত্যা স্ত্রীর সঙ্গে টেনিস খেলেন। বাড়ির ভেতর টেনিস লন আছে। আজ ভোরে দুজনে টেনিস খেলছিলেন। টেনিস বলটা কীভাবে পাঁচিল ডিঙিয়ে বাইরে চলে গিয়েছিল। দত্তসায়েব বলটা কুড়িয়ে আনতে যান। দারোয়ান তখন টাট্টিখানায় ঢুকেছিল। সেই সময় কেউ ফুলের ঝোপের আড়াল থেকে চেতনা দেবীর দিকে পর পর দুবার গুলি ছোড়ে। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। চেতনা দেবী চিৎকার করে ওঠেন। বাড়িতে ঝি-চাকর-রাঁধুনি-মালী-ড্রাইভার-দারোয়ান ইত্যাদি নিয়ে অনেক লোকজন আছে। সবাই চ্যাঁচামেচি করে ছুটে আসে। তারা সবাই গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছিল। দত্তসায়েবও শুনতে পান। একটা গুলি টেনিস লনের কাছের পাঁচিলে বিঁধেছে এবং অন্যটা নেট ফুটো করে বেরিয়ে গেছে। চেতনা দেবী ততক্ষণে মূৰ্ছিত হয়ে পড়েছেন। একটু পরে তার মূৰ্ছা ভাঙে। দত্তসায়েব পুলিশে খবর দেন। পুলিশ পনেরো মিনিটের মধ্যে এসে যায়। এদিকে চেতনা দেবী তাঁর প্রাইভেট ডিটেকটিভ কে কে হালদারকে গোপনে ফোন করে ঘটনাটা জানিয়ে দেন। পুলিশ সরেজমিন তদন্ত এবং কিছু প্রশ্ন করে চলে যায়। তারপর হালদারমশাই আসেন। কিন্তু দারোয়ান তাঁকে ঢুকতে দেয়নি। তিনি খাপ্পা হয়ে বাড়ি ফিরে যান এবং কর্নেলকে ফোনে সব জানান। কর্নেল যোধপুর পার্কে এসে দত্তসায়েবের সঙ্গে দেখা করেন। চেতনা দেবী নার্ভাস হয়ে পড়েছেন। প্রচণ্ড শক তো বটেই। এ অবস্থায় দত্তসায়েব স্ত্রীকে নিয়ে অতদূর যাচ্ছেন না। তবে তার নিজের না গিয়ে উপায় নেই। কর্নেলকে তিনি সঙ্গে যেতে অনুরোধ করেছেন। কর্নেল বলেছেন, যথাসময়ে গিয়ে উপস্থিত হবেন।
গোলপার্কে চক্কর দেওয়ার সময় কর্নেল বললেন, জয়ন্ত! আমরা এখন। কুমোরটুলি যাব।…