০২. দুনিয়ার সেরা স্পাই মার্ক গারল্যান্ড
রু দ্য সুইসের পুরোনো বাড়ির আটতলার ওপরে এক বিশ্রী ঘরে সন্ধ্যেটা একা কাটাতে মার্ক গারল্যান্ডের ভালো লাগছে না। পকেটে আছে মোটে আট ফ্র্যাঙ্ক বাহাত্তর সেন্তিমে। বিশ্বাস করা যায় না তিনমাস আগেও আমার অ্যাকাউন্টে পাঁচ হাজার ডলার ছিল।
গারল্যান্ড ভাবছে, কেন যে বেওকুফের মতো তিনটে বাজে রেসের ঘোড়ায় অত টাকা ঢালতে গেলাম।
রবার্ট হেনরী ক্যারীর সেই ব্যাপারটার পরে…
গারল্যান্ড ভেবেছিল স্পাইগিরি উজবুকদেরই কাজ। তাই সে ডোরিকে বলেছিল, জাহান্নামে যাও।
পাঁসনে চশমার কাঁচের ওপর দিয়ে তাকিয়ে বুড়ো জন ডোরি তাকে বলেছিল, মার্ক গারল্যান্ড। তোমার মত লোক দিয়ে আমার চলবে না। কাজের ব্যাপারটাকে তত গুরুত্ব দাও না।
মার্ক গারল্যান্ড হেসেছে, তোমার চামচা রোসল্যান্ড–তার আত্মার সদগতি হোক হারামজাদা আমাকে দিয়ে ফুটো পয়সার বদলে যেসব নোংরা কাজ করিয়ে নিয়েছে–ভাবলে আমার–তাই সিয়ার হয়ে কাজ করেছিলাম। গুডবাই ডোরি।
গত দুমাস স্ট্রীট-ফটোগ্রাফার হিসেবে কোন মতে গারল্যান্ডের দিন গুজরান চলেছে। পোলারয়েড ক্যামেরা নিয়ে সে অলিতেগলিতে ওঁৎ পেতে থাকে। প্যারীতে কোন নতুন মেয়ে দেখলেই ফটো তোলে। তারপর প্রিন্টটা দেখিয়ে দশ ঐ আদায় করা এমন কি শক্ত ব্যাপার?– গারল্যান্ড পটালে মেয়েদের সঙ্গে তার ভাব জমানো কিছু ব্যাপার নয়। অনেক সময় ট্যুরিস্ট মার্কিন মেয়েরা মার্ক গারল্যান্ডের পেছনে পেছনে তাঁর ফ্ল্যাটে ঢোকে।
কিন্তু আজকের দিনটা একদম ফাঁকা গেছে। যদি বা দুটো মোটা মার্কিন টুরিস্ট মেয়ের ফটো তুলেছে, ফটোর বদলে কুড়ি ফ্ৰা চাইতেই ওরা পুলিশ ডাকবে বলেছে।
মার্ক গারল্যান্ড, দোহারা দীঘল চেহারার, শ্যামলা-রং। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, বাইরে বৃষ্টি পড়ছে, রেডিওর নব ঘোরাতে যায় মার্ক। তখনই কলিংবেল বাজে। সে দরজার ফুটোতে দেখে দুজন ফৌজী রেনকোট আর টুপি পরিহিত, হয়তো আইডেন্টিটি কার্ড চেক করতে এসেছে। এর মধ্যে সি, আই, এ, থেকে কেউ আর আসেনি। হয়তো ডোরির হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। হয়তো আমার নামে কিছু রেখে গেছে।
দরজা খুলতেই দুজন বিরাট চেহারার লোক গারল্যান্ডকে ধাক্কা মেরে ভেতরে ঢোকে।
মার্ক গারল্যান্ড একজনকে চেনে। লোকটা সিয়ার ক্যাপটেন ওহ্যালোরানের আড়ংঘোলাই স্কোয়াডের মাস্তান। নাম ব্রুকম্যান্।
দারুন নিষ্ঠুর, এবং স্যুটিং-এ নিখুৎ হাত। ছোকরার আত্মবিশ্বাস দারুণ মনে হচ্ছে, জুতোর ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছে যেন এক্ষুনি বক্সিং-এর রিং-এ লাফিয়ে পড়বে। বালির রঙের চুল, সমতল মুখ, বরফ-ধূসর চোখ, জাতে নিশ্চয়ই আইরিশ।
কোট পরে নাও। তোমাকে দরকার আছে, রুক্ষ গলায় বলে ব্রুকম্যান।
শুনে খুশী হলাম, কার দরকার? নিশ্চিন্তে পিছিয়ে যায় গারল্যান্ড।
কান্ অন্। ও’ব্রায়েন, সেই আইরিশ ফৌজী ছোকরা ধমক দেয়, তোমার জবাব দিতে আসিনি।
মাথা গরম করোনা। ঠাণ্ডা মেজাজে বলে গারল্যান্ড, আমি যাচ্ছি।
ওয়ার্ডরোব থেকে খাটো সাদা রেনকোটটা তুলছে মার্ক গারল্যান্ড, লোক দুটোর দিকে পেছন ফিরে ও কোর্টের পকেটে হাত ঢুকিয়েছে…।
ডোন্ট মুভ!!!
–হঠাৎ ঘুরেছে মার্ক গারল্যান্ড। তার হাতে অ্যামোনিয়া গান।
লোক দুটো থমকে দাঁড়ায়। ওদের চোখ জ্বলছে। ওরা বন্দুকটার দিকে তাকিয়ে আছে। গারল্যান্ড টিগারে হাত রাখলে কি হতে পারে, ওরা ভালো করেই জানে।
মেজাজ সামলে, বলে সিয়ার আড়ং ধোলাই স্কোয়াডের এজেন্ট অস্কার ব্রুকম্যান।
জবাবে গারল্যান্ড হাসে, ইউ বিগ ব্লাস্টারিং সনস্ অফ বীচেস! আমি ঘেন্না করি। মানুষকে মেরে তোরা মজা পাস? গেট আউট। তোরা বাইরে না গেলে আমি গুলি করবো!
সঙ্গে সঙ্গে ব্রুকম্যানের হাতের জোরালো থাপ্পড় ও’ব্রায়েনের মুখে এসে পড়ে। লোকটা পিছু হাটে।
শাট আপ! সহকর্মীকে সামলাচ্ছে ব্রুকম্যান। ও জানে, গারল্যান্ড যাবলে ,কাজেও তাই করে।
ব্রুকম্যান দাঁত বার করে হাসে। আমি শুনেছিলাম তুমি ভাল হয়ে গেছে। মারদাঙ্গায় আগের মতোই আছে দেখছি।
ও’ ব্রায়েনকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় ব্রুকম্যান। লাথি মেরে দরজা বন্ধ করে সিয়ার ডিভিশিন্যাল ডিরেক্টর ডোরিকে ফোন করে।
.
গারল্যান্ড তোমাকে কাজ দিতে চাই, ডোরির স্বর এখন নরম ও মসৃণ, তুমি অনেক টাকা পাবে। তাছাড়া একটা মেয়ে…
পকেটে আট ফ্রাঁ বাহাত্তর সেন্তিমে আছে, গারল্যান্ড ভেবে দেখে।
মালকড়ি কত ছাড়বে?
দশ হাজার ফ্রা^।
ডোরি, তুমি মাল টানছে না তো? পরে বলবে, মদের ঘোরে কি বলছ। মেয়েমানুষটি দেখতে কেমন?
সুইডিশ, যুবতী; ব্লন্ড, রূপসী।
গারল্যান্ড হেসে, তাহলে তো কাজটা আমাকে নিতে হয়।
এই মেয়েটা যদি কম্যুনিষ্ট চীনের রকেট, পরমাণুবিজ্ঞান ও দুরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী কুং-এর রক্ষিতা এরিকা ওলসেন হয় ও কুং-এর ব্যাপারে অনেক গোপন খবর আমাদের জানাতে পারবে। চীনে জোর খবর নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আবিষ্কার করেছে কুং। গুজবটা সত্যি কিনা, তাছাড়া কুং-এর ব্যক্তিগত জীবনের ব্যাপারেও আমরা অনেক কিছু জানতে চাই।
আমাকে কি করতে হবে?
মেয়েটা অ্যামনেশিয়ায় ভুগছে, স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে। তুমি বলবে তুমি ওর স্বামী। প্রমাণ চাইলে তোমার ম্যারেজ সার্টিফিকেট তৈরী রেখেছি। জাল পাশপোর্টে ওর নাম আছে মিসেস এরিকা গারল্যান্ড। তুমি ধনী ব্যবসায়ী, ফ্রান্সের দক্ষিণে ছুটি কাটাতে এসেছে। ব্যবসার কাজে তুমি প্যারীতে এলে তোমার বউ নিখোঁজ হয়। তারপর মার্কিন হাসপাতালে খোঁজ পেয়ে তাকে নিতে আস। ওখানে তোমরা স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকবে
ইয়া। যদি স্মৃতি ফিরে আসে, তবে ও আমাকে ওর স্বামী সেজে এতদিন ওর পাশে শোয়ার ব্যাপারে আমাকে বদমায়েস, হারামী ভাববে না–
পয়লা নম্বর হারামি সাজার জন্যে তুমি দশ হাজার ডলার পাবে।
এজ-এর ভিলাটা কার?
আমার। ওখানে আর কেউ নেই। ফাঁকা জায়গায় বাড়ি, নিরাপদ, আরামদায়ক।
ওয়েল। মালকড়ি বেশ কামাচ্ছো। নইলে নিজের ভিলা।
কাজটা তুমি করবে তো? :
তোমার চামচা রোসল্যান্ড আমাকে বলেছে, তুমি তিলে খচ্চর। এই সুইডিস যদি ধুমসী হয়, দশ হাজার ফ্রাঙ্ক পেলেও আমি মোটা মেয়ের সঙ্গে শুতে পারবো না।
জন ডোরি একটা ফটো বার করে বলে, তোমাকে একটা মেয়েলি পাছার তিনটে উল্কি আঁকা চীনা অক্ষরের ফটো দেখাবো।
খুশী হয়ে, চলবে। ওপরটা তেমনি সুন্দর তো?
জবাবে ডোরি পাশপোর্টটা খুলে মেয়েটির ফটো দেখায়।
বেশ চুক্তি হয়ে গেল। কখন যাবো?
তোমার জন্যে ২০২ মারসিডিজ মডেলের গাড়ি তৈরী, এখুনি যাবে। এই নাও তোমার কাগজপত্র।
মনে হচ্ছে সত্যি সত্যিই আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
ফ্রাসঁ-মাতিঁ ম্যাগাজিন খবরটা ছেপেছে। সাবধানে থেকো
জানতাম, ঝামেলা তো থাকবেই।
দু হাজার এখন দেবো। বাকিটা পরে
বড়লোক ব্যবসায়ী সাজতে হলে খরচা হবে। খরচখরচার জন্য কিছু
পাবে না। যা দরকার, আমার চাকর ডায়ালো তোমাকে দেবে। দরকার মতো সে আমার অ্যাকাউন্টের টাকা তুলবে। তুমি না, বুঝেছে গারল্যান্ড
আমাকে তুমি এতো বিশ্বাস করো–
ছোট একটা রেডিও-পিল দেবো। আঙুরের বীজের মতো সাইজ। মেয়েটাকে গিলিয়ে দিও। ওর শরীরের ভেতরের গরমে এটা চালু হলে একশো কিলোমিটারের মধ্যে বিশেষ ধরনের র্যাডার রিসিভারে ধরা পড়বে। সুতরাং ও নাগালের বাইরে গেলেও ওকে ফের ধরা যাবে। তুমি পিলটা তোমার বুড়ো আঙ্গুলের নখের নীচে রেখো
তার মানে ঝামেলা বাঁধবেই।
বাঁধতে পারে। আমার এজেন্ট তোমার দিকে নজর রাখবে। একবার মেয়েটাকে নিয়ে এজ এর ভিলায় উঠতে পারলেই তুমি নিরাপদ।
.
ফোন রেখে মার্ক গারল্যান্ড নীচে নামছে। মাঝপথে ও থামে। সিয়ার মারদাঙ্গা স্কোয়াডের দুই এজেন্ট ব্রুকম্যান আর ও’ব্রায়েন উঠে আসছে। দুটো লোকই ওর দিকে কটমট করে তাকাচ্ছে।
তোমাদের বুরবক্ বড়কর্তার সঙ্গে ফোনে কথা হলো। আমি নাকি হঠাৎ ভি. আই, পি বনে। গেছি?
ও’ব্রায়েনের চোখ দুটো জ্বলে উঠলো।
গারল্যান্ড, তোমার মতো বেজন্মা শয়তানদের আমি পছন্দ করিনা। তুমি আমার পাল্লায় পড়লে পেদিয়ে টিট করে অ্যাকশন কাকে বলে বুঝিয়ে দেবো।
অস্কার, তোমায় ক্ষুদে দোও মাস্তান মনে হচ্ছে?ফ্রকম্যানের দিকে তাকায় গারল্যান্ড, ওকে সামলাও। নইলে বেচারা মারধোর খাবে।
ব্রুকম্যান বলে, ওঃ, ঝামেলা বন্ধ করো।
পকেট থেকে রুমাল বার করে গারল্যান্ড নাক ঝাড়তে গিয়ে রুমালটা মেঝেতে পড়ে ও কুড়োতে যায়।
হঠাৎ ও’ব্রায়েনের ট্রাউজারের পা দুটো ধরে ওপর দিকে গারল্যান্ড টানে। একটা চাপা আর্তনাদ করে সিঁড়িতে গড়িয়ে পড়ে। ওর পিঠটা কাঠের রেলিং-এ ধাক্কা খায়, রেলিং ভেঙ্গে নীচের তলায় ছিটকে পড়ে ও’ ব্রায়েন। ও’ব্রায়েন সামান্য নড়ে স্থির হয়ে যায়।
চোখ দুটো বেরিয়ে আসছে : ভাঙা রেলিংয়ে ঝুঁকে সহকর্মীকে দেখে ব্রুকম্যান।
য়ু ক্রেজী বাস্টার্ড! লোকটা যদি মরে যায়…।
মস্তানরা সহজে মরে না, খুশ মেজাজে বলে গারল্যান্ড।
ব্রুকম্যানের হ্যাটটা ধরে টুপিটা ওর চোখের ওপর চেপে ধরে।
খিস্তি করে পিছিয়ে যাচ্ছে ব্রুকম্যান। ওর মেদহীন তলপেটে ঘুষি ঝড়ে গারল্যান্ড। লোকটা হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।
.
এসো গারল্যান্ড, কেমন আছো?
তাতে তোমার কি? ঝামেলায় না পড়লে তোমার মতো হাড়বজ্জাৎ, আমাকে ডাকে?
চেয়ারে বসে হাসছে মার্ক গারল্যান্ড, ডোরি, অফিসের বাইরে সোনালী আক্ষরে তোমার নাম? ওয়াশিংটনে কাজের লোকের অভাব পড়েছে?
ইউ ইনসোনেন্ট সন অফ এ বীচ। ডোরি হাসে, মারদাঙ্গায় তোমার এলেম আছে। তোমার অবস্থাও ভালো যাচ্ছে না। রাস্তায় ফটো তোলার ধান্দাটা
স্পাইগিরি করতে যেয়ে আলসারে ভোগার চাইতে, দুড়ীদের ফটো খেচা অনেক ভালো দশ হাজার ফ্রাঙ্ক পেলে যে কোন হারামির বাচ্চার কাজ করতে রাজি।
তোমার দুটো ধান্দাটাকা আর মেয়েমানুষ
কাজটা কি বল দেখি
গারল্যান্ডের-ধূসর চোখের দিকে তাকিয়ে ডোরি ভাবছে, শক্তসমর্থ গারল্যান্ড, একে দিয়েই হবে।
ডোরি ভাবে লোকটাকে এড়িয়ে চলি। কিন্তু ওকে কাজে না লাগিয়ে উপায় নেই
.
প্ল্যানটা ভালো স্যার। গারল্যান্ডকে বেছে নিয়ে ভালো করেছেন।
আমেরিকান হাসপাতাল থেকে ফলো করবে ও যেন বুঝতে না পরে, ঝামেলায় পড়লে সাহায্য করবে। গারল্যান্ডের গাড়ি ২০২ মারসিডিজ, রং কালো, নম্বর ৮৮৮। ও মেয়েটাকে রেডিও পিল খাওয়াবে। তোমার গাড়িতে র্যাডার-স্ক্যানার থাকবে। মেয়েটা না চলে যায়। দরকার হলে ওহ্যালোরানের মাস্তানদের সাহায্য নিও। একশ ফ্র্যাঙ্কের প্যাকেট এজেন্টের দিকে বাড়িয়ে দেয় ডোরি, তুমি কখনো টাকা চাওনা। গারল্যান্ড সব সময় চায়–।
স্যার, ওই শয়তান গারল্যান্ড আমার এক এজেন্টকে মেরে ফ্ল্যাট করে দিয়েছে। মাইক ও’ব্রায়েনের কলার বোন ও পাঁজরার হাড় ভেঙেছে। ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গারল্যান্ড ঠেলে ফেলে দিয়েছিল–
হঠাৎ?
ও’ব্রায়েন ও ব্রুকম্যান বাড়াবাড়ি করেছিলো।
ডোরি আস্তে আস্তে বলে, সে তো মারদাঙ্গায় ওস্তাদ। তাকে মেরে ফ্ল্যাট করে দিতে পারে গারল্যান্ড..তার মানে, আমি ঠিক লোকই বেছেছি। আর খবর?
পিকিং থেকে রিপোর্ট এসেছে, ২৩শে জুন থেকে কুং-এর রক্ষিতা এরিকা ওলসেন নিখোঁজ। ঐ চেহারার মেয়ে হংকং-এ আসে। দুদিন পরে ইস্তাম্বুল। সেখানে নাম বলে, নাওমি হিল। হংকং বলছে, পিকিং থেকে আসার সময় দুটো ভারী স্যুটকেশ ছিল। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। কোন বন্ধুর সঙ্গে থাকতে বোধ হয়? ডোরি চিন্তিত, কোন হোটেলে, বলছে না, ওখানে উঠেছিল? লাগেজ পাওয়া যাচ্ছে না।
*
কম্যুনিষ্ট চীনের গুপ্তচর
বৃষ্টি পড়ছে। আমেরিকার হাসপাতাল থেকে নার্সরা বেরিয়ে আসছে। অনেকে ছাতা খুলেছে। বলেভার্দ ভিকতর হুগো পেরিয়ে ওরা নার্সে কোয়ার্টারে যাবে।
স্পোর্টসকারে বসে কম্যুনিষ্ট চীনের দুই এজেন্ট। সাদু মিচেল ও খুনী জো জো চ্যানডি।
ওদের ধরো, জো জো বলে, এরিকা ওলসেন হাসপাতালের কোন তলায় আছে, ওরা জানে। বলল, কাগজের রিপোর্টার
কিন্তু বলবে কেন? তাছাড়া চিনে রাখতে পারে…।
ততক্ষণে নার্সদের দঙ্গল অন্ধকারে মিলিয়ে গেছে।
হাসপাতাল থেকে দেরীতে বেরিয়েছে একটা নার্স। কাছেই বিরাট ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরী হচ্ছে।
নার্সটা অল্পবয়সী মেয়ে। শ্যামলা রং।
মাদমোয়াজেল, আমি প্যারী ম্যাচ-এর রিপোের্টার। দয়া করে বলবেন, যে সুইডিস মহিলার স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে, তিনি কোন ঘরে থাকেন?
ইনফরমেশন ডেস্কে জিজ্ঞেস করুন–
জো জোর ডান হাতটা ঝলসে ওঠে, গোঙানির আওয়াজ তুলে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে নার্স।
ততক্ষণে হাঁটু গেড়ে বসে নার্সের ক্যাপ খুলে মাথার চুলের মুঠো ধরে টানছে জো-জো।
চেঁচালে খুন করবো, সুইডিস মেয়েটা কোন তলার কোন ঘরে আছে বল্ মাগী…।বল মাগী, জলদি বল…. ।
১১২ নম্বর ঘর, ছতলা, মেয়েটা ভয়ে কাঁপছে। নার্সের গলা কেটে দিলে, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিথর হয়ে যায় মেয়েলী শরীর।
রক্তমাখা ছুরির ফলা নার্সের ইউনিফর্মে মুছে ফেলে কম্যুনিষ্ট চীনের ফরাসী স্পাইচক্রের পেশাদার খুনী জো জো চ্যানডি।
লাইটারের আলোয় নার্সের মুখ দেখে স্তম্ভিত সাদু মিচেল।
একি? মেয়েটাকে খুন করলে?
বেঁচে থাকলে তোমাকে চিনিয়ে দিতো, চলো, সময় নষ্ট করোনা। পাইপ বেয়ে ওপরে উঠছে জো জো চ্যানডি, কার্নিশ ধরেছে। এখন ও হাসপাতালের চারতলায় পৌঁছেছে। নীচে পায়চারী করছে সাদু। অ্যাম্বুলেন্স হতে বিশাল দৈত্যাকার পুরুষ, মাথায় রূপোলী চুল, পরনে সাদা অ্যাপ্রন ডাইভারের সীট থেকে নেমে আসে।
ওসবে মন দেয়না জো জো। ওপরের কার্নিশটা দশ ফুট উঁচুতে। বৃষ্টিভেজা পিছল পাইপ। হঠাৎ হাত পিছলে যায়। একটা ভয়ঙ্কর মুহূর্ত। জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে দোলে জো-জো।
কিন্তু পাইপ বেয়ে ফুট তিনেক গড়িয়েই সে ব্যালান্স ফিরে পায়। তার কুৎসিৎ দাঁতে হাসির ঝিলিক। মৃত্যুকে ভয় পায় না জো জো। টাকার বদলে জীবনের ঝুঁকি নিতে তৈরী।
নীচে দাঁড়িয়ে সাদু মিচেল দেখছে, তার সঙ্গী জো জো চ্যানডি পাইপ বেয়ে নীচে গড়িয়ে যাচ্ছে। সে আঁৎকে ওঠে। না পড়তে পড়তে সামলে নিলো জো জো, এখন সে পাঁচতলার কার্নিশে পা রেখে ছতলায় উঠছে।
সাদুর বুকের ভেতরে হৃৎপিন্ডের ধক ধক শব্দ। আর একদল নার্স হাসতে হাসতে হাসপাতালের গেট থেকে বেরিয়ে আসছে। পাছে কেউ চিনে ফেলে, সেই ভয়ে গাড়িতে উঠে বসে। ততক্ষণে ছতলার কার্নিশে উঠে প্রত্যেকটা আলো জ্বালা জানালায় উঁকি দিয়ে এরিকা ওলসেনকে খুঁজছে পেশাদার খুনি জো জো চ্যাডি।
জো জো জানে না, যে নার্সাকে, সে খুন করেছে, সে মরার আগে মিথ্যে বলে গেছে। হাসপাতালের ছতলায় কোন মেয়ে রুগী নেই।১১২ নম্বরের কোন ঘরও নেই এই হাসপাতালে।
*
সোভিয়েত রাশিয়ার স্পাই
মার্কিন সান্ত্রী উইলি জ্যাকসন হাসপাতালের করিডোরে টহল দিতে দিতে অটোমেটিক রাইফেলটা কাঁধ থেকে অন্য কাঁধে নেয়। তার হাতঘড়িতে রাত দশটা বেজে দশ মিনিট। ডিউটি দিতে হবে আরও দুঘণ্টা।
শেপ-এর হেডকোয়ার্টারে বৃষ্টির মধ্যে টহল দেওয়ার চাইতে হাসপাতালে পাহারা দেওয়া অনেক ভালো।
করিডোরে হাঁটার সময় তার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে পাছা দুলিয়ে চলে গেল এক নার্স।
সান্ত্রী উইলি জ্যাকসন ডিসিপ্লিন মানে। তার উচ্চাশা আছে। তার মতে আইসেনহাওয়ার, ব্রাডলী ও প্যাটন পৃথিবীর সর্বকালের সেরা পুরুষ। কুড়ি বছর পরে সে নিজেও জেনারেল হবার আশা রাখে।
উইলি জ্যাকসনের বয়স তেইশ বছর। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, শ্যুটিং-এ নিখুঁত হাত। ওদের ব্যাটালিয়ানে উইলি বক্সিং-এ লাইট হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন, শেপ বেসবল টিমে সে সেরা পিচার।
ভালো সৈনিক হবার মত সবগুণ আছে বলেই বিপদে পড়লো উইলি।
নার্স চলে যাবার পর থেকেই ভাবছিল, ওই নার্স মেয়েটি তার সঙ্গে শুতে রাজি হলে সে কি করবে।
ঠিক সে সময় লিফটের দরজা খুলে করিডরে পা রাখলো মার্কিন ফৌজের কর্নেলের য়ুনিফর্ম পরা এক ভদ্রলোক।
ফৌজি অফিসারদের বড্ড সমীহ করে জ্যাকসন। অফিসার দেখে তার বুদ্ধি লোপ পেলো।
এই বয়সে কর্নেল হওয়ার স্বপ্ন দেখে উইলি। শক্ত সমর্থ চেহারার কর্নেলকে দেখে রাইফেল ঝড়াংঝট করে স্যালুট করলো উইলি, পুরো করিডরটা কেঁপে উঠলো।
সোলজার, তুমি এখানে কি করছো? ফৌজীকর্নেলের স্টাইলে গাঁগা করে বলে স্মারনফ।
করিডর পাহারা দিচ্ছি স্যার।
জেনারেল ওয়েনরাইট কত নম্বরে আছেন?
১৪৭ নম্বর স্যার।
তুমি জেনারেলকে পাহারা দিচ্ছো।
না স্যার। ১৪০ নম্বরের রোগিনীকে পাহারা দিচ্ছি।
অ্যাট ইজ সোলজার। ওই মেয়েটারই পাছায় উল্কির দাগ?
আমি জানিনা স্যার।
জেনারেল কেমন আছেন?
বলতে পারলাম না স্যার।
বুড়ো ষাঁড়টা কোন ঘরে আছে বললে?
জেনারেলকে কর্নেল অসম্মান দেখানোয় একটু আহত উইলি।
১৪৭ নম্বর ঘর, স্যার।
ওকে, ক্যারী অন্ সোলজার।
টানটান শরীর, ভারী পায়ে করিডর বেয়ে হেঁটে যেতে হঠাৎ ঘুরে দাঁড়ায় কর্নেলবেশি স্মারনফ।
ইউ…সোলজার!!!
স্যার।
আমার জীপে ব্রীফকেস ফেলে এসেছি। ওটা নিয়ে এসো।
স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মতো লিফটের দিকে ঘুরছিলো জ্যাকসন, আচমকা থেমে বলে :
কিন্তু স্যার, আমি পাহারা দিচ্ছি…
ইউ আর রিলিভড! আমি তো এখানে রয়েছি, তাই না? ব্রিফকেসটা নিয়ে এসো—
ইয়েস স্যার।
জ্যাকসন বোম টিপতেই লিফট উঠে আসে, অটোমেটিক লিফটে চড়ে নীচে নামে উইলি।
ড্রাইভে দাঁড়িয়ে আছে মার্কিন ফৌজী জীপ, ফৌজী ইউনিফর্ম পরা দুজন লোক কথা বলছে।
কর্নেলের ব্রিফকেস, জ্যাকসন বলে।
ওহ, ইয়া,…
তারপর সেকেন্ডের মধ্যে কি যে ঘটে গেল, পরেও ভালোমতো বুঝতে পারেনি জ্যাকসন।
একজন সান্ত্রী ওর চোয়ালে ঘুষি ঝাড়লো, হাতের মুঠোয় পেতলের ডাস্টার। জ্যাকসন পড়ে যেতেই ওর অটোমেটিক রাইফেলটা ছিনিয়ে নিল অন্য সান্ত্রী।
তারপর অচেতন জ্যাকসনকে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দিয়ে জীপ স্টার্ট করে।
ব্রিফকেস হাতে মার্কিন সৈনিক।…
আসল নাম কোরডাক, সোভিয়েত রাশিয়ার আর এক পাই, হাসপাতালের রিসেপশন ক্লার্কের দিকে মাথা নেড়ে লিফটে উঠলো কোরডাক।
পাঁচতলায় করিডরের সামনে পায়চারি করছে স্মারনফ।
ওয়েল।
কোন ঝামেলা হয়নি, রোগা চেহারা, শ্যামল রং কোরডাক দাঁত বার করে হাসে।
স্মারনফকে ব্রিফকেসটা দিয়ে সে অটোমেটিক রাইফেলটা কাঁধে তুলে করিডোরে টহল দিতে থাকে।
ল্যাভারারিতে ঢুকে ব্রিফকেস থেকে ডাক্তারের সাদা অ্যাপ্রন বার করে ইউনিফর্মের ওপরে পরে নেয় স্মারনফ। স্টেথোস্কোপ বার করে সে গলায় ঝোলায়, হাতে ইনজেসনের সিরিঞ্জ আর ডায়াল ভর্তি জলের মত ওষুধ–এখন করিডোরে বেঁয়ে হেঁটে যাচ্ছে ওয়ার্ডের ডাক্তার।
কোরডাক, হুইল-স্ট্রোর জোগাড় করো, বলেই করিডর বেয়ে ১৪০ নম্বর ঘরের দিকে এগিয়ে যায় সোভিয়েত পাই।
১৪০ নম্বর ঘরের ম্লান আলোয় যুবতী হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। বড় বড় নীলাভ কালো চোখ দুটো স্মারনফকে দেখছে।
গুড ইভনিং, ডাক্তারের বেশে স্মারনফ বলে, এখন ইনজেকশন দেবো। রাতে ভালো ঘুম হওয়া দরকার।
*
স্পাই বনাম স্পাই
আপনি আপনার স্ত্রীকে বাড়ি নিয়ে যেতে চান? মিষ্টার গারল্যান্ড। রিসেপশন ক্লার্কের ফোন পেয়ে নীচে এসেছে নার্স জিনি রোস্। ডক্টর ফরেষ্টার বলেছেন, আপনি আসবেন। গাড়ি আছে তো? হ্যাঁ, উনি গাড়িতে যেতে পারবেন, চলুন–
নার্সের হাসিখুশী চোখ, মুখ দেখে গারল্যান্ডের ভালো লেগেছে।
তারপর লিফটে…
মিস্টার গারল্যান্ড, আপনার স্ত্রীর পাছায় উল্কি আঁকা আপনারই আইডিয়া।
না, না, পারিবারিক ঐতিহ্য, গম্ভীর হয়ে বলে গারল্যান্ড, আমার শাশুড়ীর পেছনেও এমনি উল্কি আঁকা–
সে কি? চোখ বড় বড়ো করে বলে জিনি।
আমার বউ উল্কির জন্য দারুন গর্বিত। নজর রাখতে হয়। অন্য লোককে উল্কি দেখাতে চায়। উল্কিটা বেয়াড়া জায়গায়, বুঝতে পারছেন
আপনি ইয়ার্কি মারছেন, নার্স হেসে ওঠে।
১৪০ নম্বর ঘরে ঢুকেই থমকে দাঁড়ায় গারল্যান্ড। সা
দা মোটাসোটা চেহারার ডাক্তার ঝুঁকে পড়ে পেসেন্ট দেখছে।
ও, আই অ্যাম সরি, গারল্যান্ড বলে।
নার্স, এই ভদ্রলোক কে? ভারিক্কী চালে বলে ডাক্তার বেশী স্মারনফ।
অল্পদিন হলো হাসপাতালে এসেছে নার্স জিনি। এই ডাক্তারকে আগে দেখেনি। সে সাবধান হয়ে যায়।
আই অ্যাম সরি ডক্টর।
আমার স্ত্রীকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাই, গারল্যান্ড বলছে, ডক্টর ফরেষ্টার রাজি হয়েছেন।
ছায়ায় সরে সিরিজটা পকেটে পোরে স্মারন। একে কোথায় যেন দেখেছি? নিশ্চয়ই সিয়ার চীফ জন্ ডোরির কোন এজেন্ট! তার মানে ঝামেলা…।
ওকে তো ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। ও ঘুমোবে। কাল নিয়ে যাবেন
হাসপাতালে ডাক্তারকে দেবতা ভাবে। স্টেথো এবং সবজান্তা ভাব
মাফ করবেন, ডক্টর, কিন্তু বলা হয়েছিল, আজ রাতেই ওকে নিয়ে যেতে পারি
না, পারেন না, খিঁচিয়ে ওঠে স্মারনফ, কি শুনলেন না? ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। কাল সকালের আগে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
অগত্যা পা বাড়ায় গারল্যান্ড।
হঠাৎ চোখে পড়ে, সাদা কোটের নীচে ডাক্তার খাকি ট্রাউজার পরা। জুতোজাড়া ফৌজী ধরনের। এই মুখ কোথায় যেন দেখেছি? সেনেগালের মরুভূমিতে রাশিয়ান স্পাইটা আমার দিকে গুলি চালিয়েছিল…কিন্তু সে তো খতম হয়ে গেছে…
দরজা খোলে গারল্যান্ড।
ইল-স্ট্রেচার নিয়ে আসছে কোরডাক।
স্ট্রেচারের ওপরে রাইফেল।
ডোন্ট মুভ!
বিদ্যুতের চেয়েও ক্ষিপ্র কোডাক রাইফেল তুলে গারল্যান্ডের দিকে উচিয়ে ধরেছে।
নার্স জিনি মুখ খুলতেই স্মারনফের শক্ত হাত তার মুখ চেপে ধরে।
চেঁচালে ঘাড় ভেঙে দেবো, বলে ওঠে স্মারনফ।
ইউ অ্যান্ড ইউ! পিস্তলের নল গারল্যান্ড থেকে জিনির দিকে ঘোরে, একে স্ট্রেচারে ভোলো। হারি আপ!
স্ট্রেচারে যুবতীকে তোলবার সময় পড়ে যাচ্ছিল গারল্যান্ড।
সাবধানে! খিঁচিয়ে ওঠে স্মারনফ।
জিনির মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ওর সাহায্য নিয়ে মেয়েটাকে স্ট্রোরে তোলবার সময় জিনিকে চোখ টিপেছে গারল্যান্ড। তাতে নার্স আশ্বস্ত হয়নি।
ইতিমধ্যে….
কমুনিষ্ট চীনের স্পাই জো জো চ্যানডিও বসে নেই। ছতলার জানালা খোলা পেয়ে সবকটা ঘর খুঁজে সে বুঝেছে নার্সটা গুন্ মেরেছিল। সুইডিস রোগিনী এই তলাতে নেই।
হাতে সাইলেন্সার-সমেত পিস্তল, ছুটতে ছুটতে পাঁচতলায় নামে। এবং শব্দ শুনে পিছিয়ে আসে।
অটোমেটিক রাইফেল হাতে সান্ত্রী!
তার মানে…
সেই সুইডিস মেয়েটা এই তলারই কোন ঘরে আছে। এখন ছতলায় ফিরে পাইপ বেয়ে পাঁচ তলায় নামবে, তারপর উঁকি মেরে খুঁজে বার করবে।
সাবধানে ঝুঁকে জো জো দেখে, স্ট্রোরের ওপরে ব্লন্ড যুবতী। সস্তা স্যুটপরা লোক স্ট্রোর ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে, পেছনে মার্কিন ফৌজী একটা লোক। তার হাতে ফরটিফাইভ অটোমেটিক। পেছনে নার্স, কিছু হয়েছে, আন্দাজ করে জো জো।
লিফটে যদি ঝামেলা বাঁধাও, গুলি চালাবো।
আমার ঝামেলা বাঁধাতে দায় পড়েছে, মেয়েটাকে কজা করেছে, আমার কি? গারল্যান্ড বলে।
তোমার মতো লোককে কি করে কাজ দেয় ডোরি?
ডোরি উজবুক। আমাকে ফ্যাসাদে ফেলো না।
গারল্যান্ড বলে, রিসেপসন ক্লার্ককে, বউকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি? হা নিশ্চয়, তারপর পিস্তল হাতে স্মারনফ আর রাইফেল হাতে কোরডাককে দেখে, এসব কি?
আমার বউ ভি, আই, পি, বনে গেছে। মার্কিন ফৌজের পাহারায় ওকে নিয়ে যাওয়া হবে।
স্ট্রেচার নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের দিকে যায় গারল্যান্ড ও জিনি। পেছনে স্মারনফ ও কোরডাক। অ্যাম্বুলেন্সের সামনে সোভিয়েত স্পাই মালিককে দেখে চমকে ওঠে গারল্যান্ড।
কমরেড মালিক, আমি ভেবেছিলাম, কমাস আগেই খতম হয়ে গেছ
আমি অতো সহজে মরি না। গেট ইন্ অ্যান্ড শাট আপ।
তারপর নার্স জিনির দিকে তাকিয়ে
তুমিও ওঠো।
নার্সকে ওঠার জন্য হাত বাড়িয়েছিল গারল্যান্ড, জিনি ওকে পাত্তা না দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে উঠে বসলো।
ড্রাইভিং-সীটে স্মারনফ ও কোরডাক। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে গারল্যান্ড, জিনি, স্ট্রেচারে রোগিনী এবং রাশিয়ার সেরা স্পাই মালিক।
আহ! তার মানেই ঝামেলা
র্যাডার স্ক্যানার অন্ করলো কারম্যান। তার মানে গারল্যান্ড সুইডিস মেয়েটাকে রেডিও পিল খাইয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স যখন পৎ দ্য নাঈর পেরিয়ে ছুটে চলেছে, তখন নিরাপদ দূরত্বে, ফলো করে চলেছে কারম্যানের থ্রি পয়েন্ট এইট জাগুয়ার মডেলের গাড়ি।
গাড়িতে বসে সাদু মিচেলও দেখেছে। ব্যাপারটাকে কোন গুরুত্ব দেয়নি।
পাখী উড়ে গেছে, সাদুর সহকর্মী জো জো চ্যানডি বুঝেছে। সে নার্ভাস হয়ে পড়েছে। ব্যর্থতাকে ক্ষমা করে না কম্যুনিস্ট চীনের স্পাইচক্রের হর্তাকর্তা ইয়েৎ-সেন। পিস্তল থেকে সাইলেন্সার খুলে পকেটে রাখে। তারপর নীচে নামে। লিফটের খাঁচা থামাতেই একটা ছায়া তীরবেগে ক্লার্কের পাশ দিয়ে বৃষ্টির মধ্যে ছুটে যায়। সে চমকে ওঠার আগেই জো জো সাদুর গাড়িতে উঠে বসেছে।
গাড়ি স্টার্ট করো।
কি হয়েছে?
সর্বনাশ! ইয়েৎ-সেন বলেছে, আজই সুইডিস মেয়েটাকে খতম করতে হবে। অপারেশন ব্যর্থ হলে ইয়েৎ-সেন কি বলবে? তার থেকে বড়ো কথা, পার্ল কুও কি বলবে? এর থেকে বড় কথা, পার্ল বলেছে কাজ না হলে ইয়েৎ-সেন খুন করতে পারে।
মেয়েটিকে খুঁজে বার করতেই হবে।
জো জো, তারপর বলে :
আগে বললে না কেন? অ্যাম্বুলেন্সটা ফলো করতে পারতাম। পরে দেখা যাবে। জো জোকে চড় মেরে কেউ পার পাবে না।
.
হারামীর বাচ্চা জো-জোর জন্য আমেরিকানরা সুইডিস মেয়েটাকে নিয়ে কেটে পড়েছে
ইয়াংকিরা সুইডিস মেয়েটাকে কোন চুলোয় রেখেছে, আমি কি করে জানবো?
সে কথা তোমার জেনে কাজ নেই। তোমার গাড়ি আছে তো? সাদা রেনকোট পরে বলে পার্ল, তুমি ইয়েৎ-সেনকে ফোন করো। আমার ফিরতে দেরি হবে না।
ইতিমধ্যে…
গারল্যান্ড তুমি মেয়েটার স্বামী সেজেছিলে? ওকে কোথায় নিয়ে যেতে?
ডোরি মার্কিন দূতাবাসে একটা ঘর ঠিক করেছে। ধান্দা ছিল, স্বামী সেজে পীরিত করে কথা আদায় করা। শোনো মালিক, আমার কথা আছে। মেয়েটার স্বামী সেজে কথা আদায় করে ডোরির বদলে তোমাকে জানাই। রাশিয়ান কমরেড, তুমি যদি আমাকে তিরিশ হাজার ডলার দাও
বেইমান। বিশ্বাসঘাতক! গজগজ করছে না জিনি।
গারল্যান্ড, তোমার চেয়ে বিষাক্ত সাপকে বেশি বিশ্বাস করি। মেয়েটার থেকে কথা আদায় করার জন্য তোমার দরকার হবেনা।বুঝতে পারিনা, তোমার মতো স্বার্থপরকে ডোরি কি করে এসব কাজ দেয়? একটু পরেই অ্যাম্বুলেন্স থেকে তোমাকে আর নার্সকে নামিয়ে দেবো। তুমি ডোরিকে বলবে একাজটা তোমার দ্বারা হলো না। তোমাকে খুন করার কোন অর্ডার আমাকে দেওয়া হয়নি।
কমরেড, আমি তোমার কাছে ঘেঁসবো না, গারল্যান্ড বলে।
তোমাকে নামিয়ে আমরা গাড়ি বদলাবো। সুতরাং ফলো করনা…
আমার ফলো করতে দায় পড়েছে। দেখিয়েছি যে আমি মেয়েটাকে কজা করার চেষ্টা করেছিলাম। কাজটা হয়নি। আমি টাকা পেয়ে গেছি এখন ডোরি মরুকগে।
মালিক ভাবে, ইয়াংকিদের এই এজেন্ট নিজের স্বার্থ ছাড়া ভাবে না। আমিও এই ইয়াংকি এজেন্টের মতো যদি টাকা ও নিজের স্বার্থ দেখতাম তাহলে কতো সহজ হতো আমার জীবন। জোরে বৃষ্টি পড়ছে, যে অটো রুটটাভিন্দ্যভ্রের দিকে গেছে, তারই মোড়ে স্মারনফ গাড়ি থামায়। ট্রাফিকের ভীড় বিশেষ নেই।
গেট আউট। পিস্তল উঁচিয়ে বলে মালিক।
বেচারা জিনি ততক্ষণে নেমে গেছে। গারল্যান্ডও নেমে পড়ে। অ্যাম্বুলেন্সের পেছনের লাল আলো মিলিয়ে যায়।
নার্সের মুখে রাগের ছাপ। তুমি না পুরুষ, তোমার লজ্জা করে না?
আমার মা তাই ভেবেছিলেন। গারল্যান্ড বৃষ্টির জন্যে বিব্রত, নইলে আমার মার্ক নাম রাখবেন কেন?
মেয়েটাকে ওরা কিডন্যাপ করেছে। তুমি কিছু করবে না?
তুমিই বলো, কি করবো। হতচ্ছাড়া বৃষ্টি…।
একটা গাড়ি থামিয়ে ওদের পিছু নিলে হত।
ওদের কাছে পিস্তল আর অটোমেটিক রাইফেল আছে–মরবার জন্যে ওদের ফলো করবো।
রাগের চোটে আর একটু হলে গারল্যান্ডকে জিনি মেরেই বসতো। গাড়ি থামিয়ে পুলিশে খবর দাও।
ভিজে ঘাসে পা ঠুকছে জিনি।
হেড লাইটের আলো দেখে রাস্তার মাঝামাঝি দাঁড়ায় গারল্যান্ড।
গাড়ি থামিয়ে জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে হাসছে সিয়ার এজেন্ট কারম্যান।
আমি ভেবেছিলাম, ওরা তোমাদের নামিয়ে দেবে। র্যাডার স্ক্রীনে ক্লিপ ব্লিপ সঙ্কেতগুলো চমৎকার আসছে। চলো5
পেছনে জিনি আর সামনের সীটে গারল্যান্ড।