ঘরের দরজা খুলে সর্বজিৎ ভিতরে ঢুকে প্রায়ান্ধকার স্টুডিয়োটাকে একটু অনুভব করার চেষ্টা করল। এ ঘর কেউ ব্যবহার করে না। ধুলো ময়লা এবং বদ্ধ বাতাসের অস্বাস্থ্যকর গন্ধ জমে আছে।
সর্বজিৎ পর্দা সরিয়ে বড় বড় জানালাগুলো খুলে দিল। বাইরের আকাশে বর্ষার মেঘ থম ধরে আছে। দ্রুত ঘনিয়ে আসছে অকাল-সন্ধ্যা।
সর্বজিৎ ঝাড়ন দিয়ে একটা চেয়ার ঝেড়ে নিয়ে একটু বসল পাখার নীচে। ক্লান্ত লাগছে। যশিডি থেকে মাত্র ছয় ঘণ্টার ট্রেন জার্নি। পরিশ্রম যে খুব বেশি হয়েছে তা নয়। তবু ক্লান্ত লাগছে বোধহয় মানসিক অবসাদে, তিক্ততায়।
খানিকটা বিশ্রাম করে সে উঠল। তারপর ঘরদোর পরিষ্কার করতে লাগল।
ফ্ল্যাটে মাত্র দুটোই ঘর। ভিতরের ঘরটা বড়। এটাই তার স্টুডিয়ো কাম বেডরুম। বেড বলতে অবশ্য বেতের তৈরি একটা সরু ডিভান গোছের। তার ওপর তোষক। ঘরময় তার আঁকার সরঞ্জাম, ক্যানভাস ইত্যাদি রয়েছে। আধখাচড়া কিছু ছবিও জমে আছে এখানে।
কলকাতা তার আজকাল ভাল লাগে না। রিখিয়া কি বেশি ভাল লাগে? তাও না। তবু ওখানে অন্তত শব্দহীনতা আছে। লোকহীনতা আছে। অনবরত মানসিক সংঘর্ষহীনতা আছে। অপেক্ষাকৃত ভাল।
ঘণ্টা খানেকের চেষ্টায় সে ঘরদোর বাসযোগ্য করে তুলল তারপর চা বানিয়ে খেল। স্নান করল। একটু শুয়ে রইল চুপচাপ। আর শুয়েই বুঝতে পারল তার মাথাটা গরম হয়ে আছে। মনটা অস্থির।
একটু তন্দ্রা এসেছিল। হঠাৎ টেলিফোনের অচেনা শব্দে চমকে চটকা ভেঙে উঠে বসল সে। বুকটা ধড়ফড় করছে। বহুকাল যন্ত্রটার সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই।
বলুন।
মিস্টার সরকার বলছেন কি?
হ্যাঁ।
আমি জয়কুমার শেঠ। চিনতে পারছেন তো?
হ্যাঁ, বলো।
উই আর বিয়িং হাউন্ডেড অ্যারাউন্ড বাই সাম পিপল। কিন্তু সাহাব, আমাদের তো কোনও কসুর নেই।
কসুর নেই?
না সাহাব। আমরা আপনার প্যাকেজিং-এর মধ্যেই আন-মাউন্টেড ছবিগুলো পেয়ে যাই। আমরা আপনার সঙ্গে কখনও এরকম করতে পারি কি? পুলিশ বলছে ছবিগুলো একদম জালি। সাবস্টিটিউশন।
আমি যে আজ কলকাতায় আসব কে বলল?
মিস্টার দাশগুপ্ত বলেছিলেন। আপনি না এলে আমি দু-একদিনের মধ্যে রিখিয়ায় গিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করতাম। পিতাজি আমেরিকায়, উই আর ইন ট্রাবল।
ছবিগুলো আমার আঁকা নয়, জয়। তোমরা ছবিগুলো কোথায় রেখেছিলে?
ছবি কস্টলি জিনিস সাহাব। আমরা সব ছবি রাখি আমাদের বাড়ির স্টোরে। এসি ঘর আছে।
সিকিউরিটির ব্যবস্থা কী?
স্টোর রুমের জন্য সেপারেট সিকিউরিটি নেই। তবে আমাদের বাড়িতে চারজন রিলায়েবল দারোয়ান আছে। সুইচ অর সাবস্টিটিউশন ইজ ইমপসিবল স্যার।
নাথিং ইজ ইমপসিবল। ইমপসিবল হলে ঘটনাটা ঘটল কীভাবে?
উই আর অ্যাট এ লস।
সিংঘানিয়াকে তোমরা এই ছবিগুলিই বিক্রি করেছিলে?
হ্যাঁ সাহাব। উই হ্যাভ আওয়ার রেকর্ড। সিংঘানিয়া আপনার ছবিই বেশি কেনে। এ সাউন্ড বায়ার। পেমেন্টও প্রোন্টো।
ছবিগুলো নিয়ে সিংঘানিয়া কী করেন?
উনি ফরেনে বিক্রি করেন। হি হ্যাজ গুড কানেকশনস।
তোমরা ছবিগুলো ফেরত নিতে পারবে না?
উনি নারাজ আছেন। হি ইজ এ রেসপেক্টেবল ম্যান। ওঁর দাদা এমপি।
সেটা জেনে কোনও লাভ নেই। উনি যদি আমার ছবি বলে ওগুলো বেচেন তা হলে আমি ওঁর বিরুদ্ধে কেস করব।
স্যার, প্লিজ অ্যাডভাইস আস। আমরা কী করব? যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। আপনি কেস করলে আমরাও ফেঁসে যাব।
আমি আগে ছবিগুলো দেখতে চাই। ফটোগ্রাফ দেখেছি। কিন্তু ছবিগুলোও দেখা দরকার।
সেটা অ্যারেঞ্জ করা যাবে। তবে সিংঘানিয়া পুলিশের সামনে ছাড়া দেখাবে না।
ওর কি ধারণা আমি ছবিগুলো নষ্ট করার চেষ্টা করব?
মে বি। হি ইজ এ স্টাবোর্ন ম্যান। আপনি কবে প্রেস কনফারেন্স ডাকছেন স্যার?
কাল।
উই উইল বি দেয়ার। মিস্টার সিংঘানিয়াও যাবেন।
আমি আজই ছবিগুলো দেখতে চাই যদি?
মিস্টার সিংঘানিয়া হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনালে আছেন। আপনি চাইলে ফোন করতে পারেন। ফোন নম্বর আর স্যুইট নম্বরটা নোট করে নিন স্যার।
সর্বজিৎ নোট করে নিয়ে বলল, তোমরা আমার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছ?
হ্যাঁ স্যার। ম্যাডাম তো আমাদের ওপর ভীষণ রেগে আছেন।
থাকারই কথা। তোমরা যে কী কাণ্ড করলে?
অন গড স্যার, দিস ইজ নো ফল্ট অব আওয়ারস। ডোন্ট প্লিজ বি ক্রসড উইথ আস।
সর্বজিৎ ফোন রাখল। তারপর সিংঘানিয়াকে রিং করল।
মিস্টার সিংঘানিয়া?
স্পিকিং।
দিস ইজ সর্বজিৎ সরকার।
গুড ইভনিং স্যার। আপনি আসবেন খবর ছিল। আই ওয়াজ অ্যাকচুয়ালি ওয়েটিং টু সি ইউ।
আপনি কি জানেন যে আপনি নকল ছবি কিনেছেন?
ইন দ্যাট কেস স্যু ইয়োর এজেন্ট।
তার চেয়ে আপনি একটি কাজ করুন। ছবিগুলো ফেরত দিন। টাকা আমরা দিয়ে দিচ্ছি।
স্যার, ছবিগুলো এখন দারুণ কন্ট্রোভারসিয়াল। কলকাতার পেপার্স যা লিখেছে তা লিখেছে। এখন দিল্লি, বোম্বে আর মাদ্রাজের কাগজেও ইট হ্যাজ বিকাম এ হট ইস্যু। অ্যান্ড বিকজ অফ দি কন্ট্রোভার্সি দি প্রাইস হ্যাজ শট আপ আনইউজুয়ালি।
আপনি কী বলতে চাইছেন মিস্টার সিংঘানিয়া?
আই অ্যাম এ বিজনেসম্যান।
ইউ ওয়ান্ট হাই প্রাইস? কত?
ফাইভ লাকস পার পেইন্টিং।
মাই গড!
আমি অলরেডি চার লাখের অফার পেয়ে গেছি। আই অ্যাম ওয়েটিং ফর এ হায়ার প্রাইস।
সিংঘানিয়া, আপনি সাবস্টিটিউট ছবির কারবার করলে যে মুশকিলে পড়বেন।
স্যার, আমার ওদিকটা কভার করা আছে। আই অ্যাম নট অ্যাফ্রেড অফ ল। আই অ্যাম ডুয়িং নাথিং ইল্লিগ্যাল।
আপনি কি জানেন যে, এর ফলে আমার পরিবারের মুখ দেখানোর উপায় নেই।
জানি স্যার। রিগ্রেট ফর দ্যাট। কিন্তু আমার কী করার আছে বলুন?
কিছু করার নেই? অ্যাজ এ হিউম্যান বিয়িং?
সেন্টিমেন্ট ইজ অ্যানাদার থিং স্যার। বাট দি ড্যামেজ ডান ওয়াজ নট ইন্টেনশনাল। ছবিগুলো আপনি কিনতে চান, ভাল। আপনার সেন্টিমেন্টকে অনার দিতে আই শ্যাল সেল। বাট প্রাইস উইল বি ফাইভ।
ঠিক আছে, এরপর যা করার পুলিশ করবে।
রাগ করলেন মিস্টার সরকার? আমি আপনার সবচেয়ে বড় বায়ার। আমার স্টকে এখনও আপনার ত্রিশটা ছবি আছে। ইট ইজ এ বিগ নাম্বার।
আপনার মতো বায়ার আমার দরকার নেই।
রাগ করছেন কেন স্যার? ভাল করে কুল ব্রেনে ভেবে দেখুন। আই অ্যাম নট রেসপনসিবল। সাবস্টিটিউশন তো আমি করিনি। আপনি আজকের পেপার দেখেছেন?
না।
দেখুন। দুটো পেপারে ইন্টারেস্টিং ইন্টারভিউ আছে।
কার ইন্টারভিউ?
বান্টু সিং; আর ডেভিড।
তারা কারা?
পড়ে দেখুন স্যার। কাল আপনার প্রেস কনফারেন্সে আমি যাব। দেয়ার উইল বি হিটেড এক্সচেঞ্জেস।
আপনি কী করে জানলেন?
ক্রিটিকরা মানছেন না যে ছবিগুলো সাবস্টিটিউশন। ইউ হ্যাভ টু ফেস সাম ভেরি আনকমফোর্টেবল কোশ্চেনস।
ঠিক আছে। সেটা আমি বুঝব।
বাই দেন স্যার।
সর্বজিৎ ঠাস করে ফোন নামিয়ে রাখল।
সর্বজিৎ বেরিয়ে গড়িয়াহাট থেকে বেছে বেছে কাগজ দুটো কিনে আনল।
বাড়িতে এসে কাগজ দুটো খুলে যা পড়ল এবং দেখল তাতে তার মাথা আরও গরম হল। বান্টু সিং একজন শিখ। দাড়ি গোঁফ পাগড়ি আছে। ডেভিড দেখতে বেশ সুন্দর। দু’জনেই খুবই কম বয়সি।
বান্টুকে একজন আর্ট ক্রিটিক নিনার সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করেছে। অত্যন্ত অশ্লীলতা ঘেঁষা প্রশ্ন। বান্টু তার জবাবে বলেছে, ইয়েস। ইট হ্যাপেনস সামটাইমস।
বিয়ে করবে কিনা প্রশ্ন করা হলে বান্টু বলেছে, বিয়ে ইজ এ মিউঁচুয়াল ডিসিশন। নিনা অ্যান্ড আই আর নট ইন লাভ। বাট উই এনজয় লাইফ টুগেদার।
ডেভিডের জবাবও তাই। একটু হেরফের আছে মাত্র।
একটা পরিবারকে কতখানি নিষ্ঠুরতার সঙ্গে এমন বে-আবরু করে দেওয়া যায় তা দেখে অবাক হল সর্বজিৎ। মনটা বিরক্তি ও রাগে ভরে গেল।
ছবিগুলো দেখতে যাওয়ার আর প্রবৃত্তি রইল না তার। সে শুয়ে রইল।
শবর ফোন করল রাতে।
এসে গেছেন তা হলে?
হ্যাঁ শবর।
কাল প্রেস ক্লাবে আপনার প্রেস কনফারেন্স অ্যারেঞ্জ করা হয়েছে। খুব ভিড় হবে কিন্তু।
জানি। তুমি কাগজ দুটো দেখেছ?
ওঃ হ্যাঁ। বান্টু আর ডেভিড তো?
হ্যাঁ।
সমাজটা কোথায় যাচ্ছে শবর?
আস্ক ইয়োর ডটার্স। শুধু ছেলে দুটোকে দোষ দিয়ে কী লাভ?
একটা থাপ্পড় খেয়ে যেন কুঁকড়ে গেল সর্বজিৎ। তারপর অনুতপ্ত গলায় বলল, তাই তো শবর।
মাথা ঠান্ডা রাখুন। অনেক চোখা প্রশ্ন উঠবে। এখন থেকে তৈরি থাকুন।
আই শ্যাল টেল দি ট্রুথ।
ঠিক আছে।
আমার বাড়ির খবর কী?
কাল ফিরেই আমি ইরাদেবীর সঙ্গে দেখা করি।
আমি যে আসছি বলেছ নাকি?
না। তবে উনি জেনে গেছেন।
কিছু বলল?
না। খুব গম্ভীর।
ঠিক আছে শবর।
একটা কথা দাদা।
বলো।
আপনার ছেলেটা ছোট। বোধহয় ন’-দশ বছর বয়স।
হ্যাঁ।
আপনি বলেছেন গত দশ বছরে আপনার সঙ্গে ইরাদেবীর সম্পর্ক হয়নি। এটা কেমন করে হয়?
এ প্রশ্নের জবাব কি জরুরি?
না। তবে জানতে চাইছি বছর দশেক আগে আপনারা হঠাৎ রিকনসাইল করেছিলেন কিনা।
না, করিনি।
আপনার কাকে সন্দেহ?
এনিবডি।
সুধাময় ঘোষ?
হতেই পারে।
ইউ আর নট ইন্টারেস্টেড টু নো?
না। আমার ইন্টারেস্ট নেই।
আপনি ছেলেটার পিতৃত্ব স্বীকার করেছেন কি? মানে কাগজে কলমে? ইস্কুলের খাতায় ওর বাবার নাম কিন্তু সর্বজিৎ সরকার।
হ্যাঁ। ওটা নিয়ে গণ্ডগোল করিনি। কমপ্লিকেশন বাড়িয়ে কী লাভ?
ঠিক কথা। ও কে দাদা।
শোনো শবর, এসব নিয়েও প্রশ্ন উঠবে নাকি?
উঠতে পারে। আপনি অস্বস্তি বোধ করবেন?
ঠিক তা নয়। আবার এসব প্রশ্নের টুথফুল জবাব দিলে ফের একটা হইচই হবে। আমার স্ত্রী বা পরিবারের আর হেনস্থা আমি চাইছি না। আই অ্যাম নট এনজয়িং ইট এনিমোর।
তার মানে কি আগে এনজয় করতেন?
তোমাকে সত্যি কথা বলতে বাধা নেই, করতাম। আজ থেকে পাঁচ-সাত বছর আগে আমার স্ত্রী অপমানিত হলে আমি বোধহয় খুশিই হতাম। কিন্তু ওই মনোভাব এখন আমার নেই। রিখিয়ায় চলে যাওয়ার পর থেকে আমার একটা বৈরাগ্যই এসেছে বোধহয়।
আপনি আজ কি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন?
না। দরকার কী? উনি রেগে আছেন, হয়তো অপমান করবেন।
তা ঠিক।
শবর, আমার মেয়েরা এরকম ছিল না। দেওয়ার কোয়াইট গুড ইন দেয়ার আর্লি ইয়ারস।
হুঁ।
এত তাড়াতাড়ি ওরা এরকম হয়ে গেল কেন?
কীরকম?
মর্যাল করাপশনের কথা বলছি।
কিছু মনে করবেন না, ওদের তো ওভাবে শেখানো হয়নি, তৈরিও করা হয়নি।
ইটস এ বিট শকিং। আমি নিজে খুব ফ্রি জীবন যাপন করি না ঠিকই, কিন্তু আমি তো অতটা ভেসেও যাইনি।
হয়তো ইরাদেবী ওদের সেই শিক্ষাটা দিয়েছেন। যাকগে, ওটা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
মাথা ঘামাচ্ছি না। বড্ড শন্ড লাগছে।
মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
চেষ্টা করব।
ফোনটা রেখে দেওয়ার পর সর্বজিৎ টের পেল তার বেশ খিদে পেয়েছে। হুইস্কি তার স্টকে আছে বটে, কিন্তু সেটা তার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না। বরং কিছু খেলে হয়।
বাইরে বেশ জোরে বৃষ্টি নেমেছে, ঘরে খাদ্যবস্তু কিছুই নেই। রান্নার ব্যবস্থা অবশ্য আছে। ইলেকট্রিক হিটার, হটপ্লেট ইত্যাদি এবং কিছু বাসনপত্রও। খুঁজলে চাল ডাল কি পাওয়া যাবে?
সর্বজিৎ উঠে রান্নাঘরটা দেখল। চাল পাওয়া গেল একটা বড় স্টেনলেস স্টিলের কৌটোয়। ডালও দেখা গেল আছে। তবে আর কিছুই তেমন নেই। সবচেয়ে ভাল হত বাইরে গিয়ে কোনও রেস্তোরাঁয় খেয়ে এলে। কিন্তু বৃষ্টি না ধরলে সেটা সম্ভব নয়। আর রান্না করতে তার একটুও ইচ্ছে করছে না। তার বেশ ঘুমও পাচ্ছে।
অগত্যা সে জল খেল এবং হুইস্কির বোতল খুলে বসল। আর কিছু না হোক, হুইস্কিতে ক্ষুধা-তৃষ্ণা অস্বাস্থ্যকরভাবে ডুবিয়ে দেওয়া যায়।
রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ফোনটা বাজল।
একটা পুরুষ গলা গমগম করে উঠল, সর্বজিৎ সরকার আছে?
বলছি।
শুয়োরের বাচ্চা, খানকির ছেলে, তোকে কী করব জানিস? তোর ডান হাত কেটে নিয়ে কুত্তাকে খাওয়াব, তারপর তোর…
সর্বজিতের সামান্য নেশা হয়েছিল। সেটা অশ্লীল গালাগালের তোড়ে কেটে যাওয়ার জোগাড়। সে টেলিফোনটা রেখে দিল। অভিজ্ঞতাটা কিছু নতুন। তবে এরকম হতেই পারে। লোকটা হয়তো ইরার পক্ষের।
হুইস্কিটা তাকে খুব একটা হেল্প করছে না। খিদেটা মারার চেষ্টা ব্যর্থই হয়েছে। ভেসে উঠতে চাইছে অম্বল আর গ্যাস।
সর্বজিৎ হঠাৎ খেয়াল করল, বৃষ্টি থেমেছে। সে দুর্বল শরীরে উঠে পোশাক পরে বেরিয়ে কাছেই একটা ধাবায় গিয়ে হাজির হল। বহুকাল সে রেস্টুরেন্টে খায়নি। কেমন লাগবে কে জানে?
কিন্তু রুটি, তরকা এবং মাংসের চাপ শেষ অবধি তার খারাপ লাগল না। বরং পেট ভরে বেশ তৃপ্তি করেই খেল সে। ফিরে এসে ঘুমোল।
সকালবেলাটা বেশ লাগল তার। মেঘ ভেঙে চমৎকার রোদ উঠেছে। চারদিকটা ঝলমল করছে। এসব সকালে ছবি আঁকতে ইচ্ছে করে।
কলকাতায় খুব বেশিদিন থাকবে না সে। আজ প্রেস কনফারেন্সটা হলে কাল বা পরশুই রিখিয়ায় ফিরে যাবে। ঘটনাটা যা ঘটেছে তার সমাধান সহজ নয় বলেই তার মনে হচ্ছিল। সবাইকে বিশ্বাস করানো যাবে না যে, ছবিগুলো সে আঁকেনি।
সর্বজিৎ ফাঁড়ি পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে একটা দোকানে চা খেল। গরম শিঙাড়া আর টাটকা জিলিপি খেল বহুদিন বাদে। দুপুরে ফের রেস্তোরাঁয় খেয়ে নেবে। ফিরে এসে সে একটা ক্যানভাস বিছিয়ে ছবি আঁকতে বসে গেল। অন্তত এই একটা ব্যাপারে ডুবে যেতে বেশি সময় লাগে না।
সর্বজিৎ একটা সময়ে টের পেল, সে একটা অদ্ভুত কিছু আঁকছে। প্যাটার্নটা এলোমেলো এবং হরেক রকমের চড়া রঙের ডট আর ড্যাশ। কিন্তু ছবির মাঝখান থেকে চারদিকে একটা বিকেন্দ্রিক প্রচণ্ড গতিময় শক্তির প্রকাশ ঘটছে। এটা কি তার এখনকার মনের অবস্থারই প্রতিফলন? নাকি শুধুই একটা খেয়ালখুশি? দরকার কি অত ভেবে? ছবিটা আঁকতে তো তার ভালই লাগছে।
মাঝে মাঝে এরকম আবোল তাবোল আঁকতে আঁকতে ছবিটা যেন হঠাৎ জীয়ন্ত হয়ে ওঠে এবং নিজেই নিজের সম্পূর্ণতার দিকে এগোয়। ছবিটা তখন আঁকিয়ের ওপর প্রভুত্ব করতে থাকে। আজ সর্বজিতের সেরকমই ভূতগ্রস্তের মতো অবস্থা। সে পাগলের মতো এঁকে যাচ্ছে। ডট-ড্যাশ, ডট-ড্যাশ…
ফোনটা এল বেলা বারোটা নাগাদ। চমকে যেন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল সর্বজিৎ। বিরক্তির সীমাপরিসীমা থাকে না এ সময়ে কেউ বিরক্ত করলে।
তবু উঠে ফোনটা ধরল সে।
আমি শবর বলছি। কী করছেন?
আঁকছিলাম।
বিকেল পাঁচটায় প্রেস কনফারেন্স, মনে আছে?
আছে। যাব।
জয় শেঠ আপনার জন্য গাড়ি পাঠাবে।
ওকে।
কী আঁকছেন?
আবোল তাবোল।
আঁকুন।
ফোন ছেড়ে দিল শবর।
দ্বিতীয় ফোনটা এল আধ ঘণ্টা বাদে। সর্বজিৎ কয়েকটা জায়গা একটু পরিবর্তন করছিল ছবিটার।
কে?
শুনলাম তুমি নাকি বিলুর বাবা নও?
সর্বজিৎ কিছুক্ষণ কে বিলু তা বুঝতেই পারল না, এমনকী নিজের স্ত্রীর কণ্ঠস্বরটাও নয়। একটু সময় লাগল বুঝতে। তারপর বলল, এসব কথা উঠছে কেন?
উঠছে তুমি বলে বেড়াচ্ছ বলেই।
বলে বেড়াচ্ছি না। তদন্তের জেরায় পুলিশকে বলেছি।
কী বলেছ? বিল্টু জারজ?
তা ছাড়া আর কী?
ইরার গলা হঠাৎ ফেটে পড়ল ফোনে, তোমার মুখ কেন খসে পড়ছে না বলো তো? কেন তুমি গলায় দড়ি দাও না? নিজের বউ মেয়েদের ন্যাংটো ছবি এঁকে বাজারে ছেড়েছ, নিজের ছেলের পিতৃত্ব অস্বীকার করে আমাকে চরিত্রহীন প্রমাণ করেছ, তোমার মতো নরকের কীট পৃথিবীতে আর আছে কি?
আমি মিথ্যে কথা বলিনি।
বলোনি? বলোনি? আজ থেকে দশ বছর আগে কী হয়েছিল তা তোমার মনে না থাকলেও আমার আছে।
কী মনে আছে?
সে কথা আজ উচ্চারণ করতে ঘেন্না করে। আই ওয়ান্ট ইউ ডেড।
সেটা আমি জানি।
হয় তুমি মরবে, নয়তো আমি। তুমি যে বাতাসে শ্বাস নাও সে বাতাসে শ্বাস নেওয়াও আমার পক্ষে পাপ বলে মনে হয়। বাস্টার্ড! ইউ বাস্টার্ড!
ওসব ছবি আমি আঁকিনি, কে এঁকেছে জানি না। সেই কথাটা পাবলিককে জানাতেই আমার কলকাতায় আসা।
সারাটা জীবন তোমার অনেক ন্যাকামি দেখেছি। তোমার মতো জঘন্য মিথ্যেবাদীও দুটি নেই। এখন নিজের চামড়া বাঁচাতে মিথ্যে কথা তো তুমি বলবেই। কিন্তু তাতে আমাদের আর কী লাভ? আমাদের যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়েই গেছে।
ক্ষতি হয়েছে স্বীকার করছি। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারো ক্ষতিটা আমি করিনি। আরও একটা কথা, এসব ছবি কি আমার গৌরব বাড়িয়েছে? বরং লোকে তো ছিঃ ছিঃ করছে।
তুমি নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করেছ। তোমার মতো নীচ মানুষের পক্ষে সবই সম্ভব।
ঠিক আছে, তুমি যা খুশি কল্পনা করে নিতে পারো।
কল্পনা? তোমার মতো বেজন্মাই ওকথা বলতে পারে। যারা ছবি বোঝে, জানে, তারাই বলেছে এসব ছবি তোমারই আঁকা, এত পাপ আর বিকৃতি সর্বজিৎ সরকার ছাড়া আর কার চরিত্রে থাকবে?
ঠিক আছে। আর কিছু বলবে?
তোমার লেটেস্ট জঘন্য কাজ হল শবরের কাছে বিন্দুর পিতৃত্ব অস্বীকার করা। জিজ্ঞেস করি তোমার কি মানুষের চামড়া নেই শরীরে?
জিজ্ঞেস করাটা বাহুল্য, আমার সম্পর্কে তোমার ধারণা কি তাতে পালটাবে?
না, পালটাবে না। কিন্তু বিন্দু বড় হচ্ছে। তার কানে যখন একথা যাবে যে, তুমি তার বাবা নও বলে প্রচার করছ তখন তার কী ধারণা হবে এবং সে কীভাবে সুস্থ জীবন যাপন করবে?
তা বলে যা সত্যি তা কি ঢেকে রাখতে পারি?
কোনটা সত্যি? তোমার পক্ষে কোনও গালাগালই যথেষ্ট নয়। কাজেই তোমাকে আর গালাগাল দিয়ে লাভ নেই। শুধু বলি, তোমার সত্যের চেহারাটা কীরকম তা কি তুমি নিজেও জানো না? দুনিয়াকে যা খুশি বোঝাও, কিন্তু তোমার নিজের কাছেও কি তুমি মিথ্যে? কীসের ওপর ভর দিয়ে বেঁচে আছ তুমি?
তুমি এখন উত্তেজিত, আমার কথা বুঝতে বা শুনতে চাইবে না। কিন্তু যদি শুনতে তা হলে আমারও কিছু বলার মতো কথা ছিল।
সে তো মিথ্যে কথা। ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে কথা।
একটা মানুষ সব কথাই মিথ্যে বলতে পারে কি? দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মিথ্যেবাদীও পারে না।
ঠিক আছে, তোমার অজুহাত আমি শুনব, বলো।
মাথা ঠান্ডা করে শোনো। প্রথম কথা সুধাময়ের সঙ্গে তোমার কোনও রিলেশন আছে। কি না তা আমার জানা নেই। যদি তোমাকে কলঙ্কিতই করতে চাই তা হলেও তোমার সঙ্গে সুধাময়কে জড়াব এমন নির্বোধ আমি নই। কারণ, সুধাময় এখনও আমার খুব ভাল বন্ধু এবং সে আমার সাহায্যকারী। তোমাকে অস্বীকার করতে পারি, কিন্তু সুধাময়কে নয়। সুধাময়কে পাবলিকলি অপমান করলে আমি একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে হারাব।
সেটা জেনে বুঝেই তো তুমি কাদায় নেমেছ।
না, নামিনি। তোমাকে বে-আবরু করার ইচ্ছে থাকলে অন্য কারও সঙ্গে তোমাকে জড়াতে পারতাম। কিন্তু এসব আমার মাথায় আসেনি। এ কাজ আমার নয়, আরও প্রমাণ আছে।
কী প্রমাণ?
গত দু’ বছরের মধ্যে আমি একবারও রিখিয়ার বাইরে কোথাও যাইনি। তুমি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারো, গত দু’ বছর আমি একবারও কলকাতায় আসিনি।
তাতে কী প্রমাণ হয়?
তাতে প্রমাণ নয়, অপ্রমাণ হয়।
তার মানে কী?
আমি বান্টু সিং বা ডেভিডকে চিনি না। তাদের কখনও দেখিনি। তাদের নামও জানতাম না। অচেনা, অজানা দুটো ছেলের রিয়ালিস্টিক পোট্রেট তো কল্পনা থেকে আঁকা যায় না।
তুমি মিথ্যে কথা বলছ। তুমি মেয়েদের পিছনে কাউকে লাগিয়েছ।
না ইরা, ইচ্ছে করলে তুমি শবরকে দিয়ে খোঁজ করাও। সে পুলিশের গোয়েন্দা। গত দু’বছর আমার গতিবিধি সম্পর্কে তদন্ত করে সে তোমাকে সঠিক তথ্য দেবে। আমার কিছুই লুকোনোর নেই।
আমি বিশ্বাস করছি না।
তুমি যে আমার কোনও কথাই বিশ্বাস করবে না তা জানি। বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করবেই বা কেন? রিখিয়ার স্থানীয় মানুষজন আমাকে রোজই দেখে। আমার কাজের লোক, দুধওয়ালা, প্রতিবেশী সকলেই সাক্ষী দেবে। গত দু’বছর আমি তোমাদের কোনও খবরই রাখিনি। কী করে জানব মেয়েরা কার সঙ্গে মিশছে?
ঠিক আছে, খবর নেব। কিন্তু তাতেও যে তোমার ষড়যন্ত্র ধরতে পারব তা মনে হয় না। তুমি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিলে। তুমি সব করতে পারো।
তবু খবর নাও। ঘটনাটা কী তা বুঝতে সময় লাগবে। চট করে সিদ্ধান্তে পৌঁছে যেয়ো না।
ইরা ফোন ছাড়ল।
রিখিয়ার জলে গ্যাস বা অম্বল বিশেষ হয় না। কিন্তু কলকাতার জলে হয়। সকালের জিলিপি আর শিঙাড়ায় এখন বেশ অম্বল টের পাচ্ছে সর্বজিৎ। অস্বস্তি হচ্ছে। সে দুটো অ্যান্টাসিড খেয়ে নিল।
ছবিটা নিয়ে ফের বসল সে এবং টের পেল, ছবিটা শেষ করার তাগিদ আর ভিতরে নেই। সে নিবে গেছে। কিন্তু ছবিটা হচ্ছিল খুব ভাল।
সে ছবিটার সামনে চুপ করে বসে রইল খানিকক্ষণ।
আবার ফোন এল।
শুয়োরের বাচ্চা, খানকির বাচ্চা, তোর…
ফোনটা নামিয়ে রাখল সে। উত্তেজিত হল না। লাভ কী?
এসব গালাগাল তার জন্য প্রেস ক্লাবেও অপেক্ষা করছিল। বিকেল পাঁচটার কয়েক মিনিট আগে জয় শেঠের সঙ্গে সে যখন পৌঁছোল তখন ভিড়ে ভিড়াক্কার প্রেস ক্লাবের পিছনের হলঘরটায় ঢোকাই যাচ্ছিল না। ঠেলেঠুলে যখন শবর তাকে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে তখনই ভিড়ের ভিতর থেকে কে যেন গালাগালগুলো দিতে শুরু করল।
সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য একজন মারমুখো চেহারার কর্মকর্তা মাইক টেনে নিয়ে গর্জন করে উঠলেন, খবরদার! কোনও খারাপ কথা বললে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হবে। অ্যাই রথীন, দেখো তো কে কথাগুলো বলল। ধরে নিয়ে এসো।
সঙ্গে সঙ্গে সভাস্থল চুপ করে গেল। গালাগালকারীকে অবশ্য খুঁজে পাওয়া গেল না।
আজকের কনফারেন্সে মধ্যস্থ হিসেবে প্রবীণ শিল্পী মনুজেন্দ্র সেনকেও হাজির করা হয়েছে। সর্বজিতের পাশেই বসা। বললেন, কেমন আছ সর্বজিৎ?
ভাল থাকার কি কথা দাদা?
হ্যাঁ, কী যে সব হচ্ছে বুঝতে পারছি না।
আমিও পারছি না।
প্রেস কনফারেন্সের শুরুতে সেই মারমুখো কর্মকর্তা একটি নাতিদীর্ঘ ভাষণ দিয়ে বললেন, সর্বজিৎ সরকারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তিনি তার জবাব দিতে এসেছেন। মনে রাখবেন এটা প্রেস কনফারেন্স। কোনওরকম চেঁচামেচি বা গালাগাল বরদাস্ত করা হবে না। পরিবেশের গাম্ভীর্য ও মর্যাদা যাতে ক্ষুণ্ণ না হয় আশাকরি আপনারা তার দিকে লক্ষ রাখবেন।
কর্মকর্তাটি কে তা বুঝতে পারল না সর্বজিৎ। তার সন্দেহ হল, লোকটি পুলিশের কেউ হতে পারে।
প্রথমেই সর্বজিৎকে কিছু বলতে বলা হল। তারপর প্রশ্ন। সর্বজিৎ শরীরটা ভাল বোধ করছে না। অম্বলটা তীব্রতর হয়েছে। মানসিক ভারসাম্যও যেন থাকছে না। অস্বাভাবিক একটা ঝিমঝিম ভাব মাথাটা দখল করে আছে।
সর্বজিৎ খুব শান্ত গলায় বলল, যে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে তার জন্য আমাকে দায়ী করা হচ্ছে। আমি কলকাতা থেকে অনেক দুরে থাকি। খবরটবর বিশেষ পাই না। অনেক দেরিতে আমি জানতে পেরেছি যে, আমার পরিবারকে হেয় এবং আমাকে অপদস্থ করার জন্য কেউ কতগুলো বিচ্ছিরি ছবি এঁকেছে এবং তা কলকাতায় দেখানোও হয়েছে। আমি সুস্পষ্টভাবে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে জানাতে চাই এগুলো কোনও অসৎ ও পাজি লোকের কাজ। ছবিগুলো আমার আঁকা নয়, আঁকার প্রশ্নই ওঠে না। আশাকরি পুলিশ এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত করে কালপ্রিটকে খুঁজে বের করবে।
বিখ্যাত এক ইংরিজি দৈনিকের সাংবাদিক প্রশ্ন করল, আপনার আঁকা নয় সে তো বুঝলাম, কিন্তু দি পেইন্টার মাস্ট বি এ ক্লোজ পারসন অফ ইয়োর ফ্যামিলি। সো ইউ মাস্ট নো হিম।
না, আমি জানি না।
একজন তরুণ সাংবাদিক বলে উঠল, বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ ছবির স্টাইল অবিকল আপনার মতো।
তা হতেই পারে। লোকটা হয়তো ভাল নকলনবিশ।
আপনার কি নিজের ফ্যামিলির সঙ্গে ফিউড আছে?
না। থাকলেও সেটা পারিবারিক ব্যাপার।
আর একজন সাংবাদিক বলল, পারিবারিক ব্যাপারকে তা হলে পাবলিক করলেন কেন?
আপনারা কি আমার কথা বিশ্বাস করছেন না? ছবিগুলো আমার আঁকা নয়। আমি গত দু’বছর কলকাতায় আসিনি।
তাতে কী প্রমাণ হয়?
ছবিতে যে দুটি ছেলের চেহারা আপনারা দেখছেন তাদের আমি কখনও দেখিনি।
ওটা বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি হল না।
পরে একজন বলল, আপনার স্ত্রীর সঙ্গে আপনার ঝগড়া আছে বলে শোনা যাচ্ছে। ঝগড়াটা পুরননা। আপনার স্ত্রীর ধারণা আপনি তাকে পাবলিকলি অপমান করার জন্যই ছবিগুলো এঁকেছেন।
না। আমি এত নীচ নই।
এবার হঠাৎ কর্মকর্তাদের একজন বলে উঠল, নববাবু, আপনি কিছু বলবেন?
নব দাস উঠে দাঁড়াল। সেই নব দাস, যাকে একবার রেগে গিয়ে মেরেছিল সর্বজিৎ। নবর চুলে একটু পাক ধরেছে, শরীরে জমেছে একটু চর্বি। আর সব ঠিকই আছে।
নব দাস অনুত্তেজিত গলায় বলল, সর্বজিৎ সরকার বলছেন যে, ছবিগুলো ওঁর আঁকা নয়। এটা প্রমাণ করার খুব সহজ উপায় আছে। পুলিশের ফিঙ্গারপ্রিন্ট এক্সপার্টরা যদি সাহায্য করে তবে সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারে। আর্টিস্টকে তার পেইন্টিং হ্যান্ডেল করতেই হয়। আমার ধারণা অয়েলে আঁকা ছবির জমিতে কোনও না কোনওভাবে আর্টিস্টের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া যাবেই। ওইসব জঘন্য ছবিতে সর্বজিৎ সরকারের ফিঙ্গারপ্রিন্ট খুঁজে দেখা হোক।
সঙ্গে সঙ্গে একটা সমবেত গুঞ্জনধ্বনি উঠল ঘরের মধ্যে।
নব দাস বলল, সর্বজিৎ সরকার কি রাজি?
হ্যাঁ, রাজি।
তা হলে আমরা পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব যে তারা ছবিগুলো বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করান।
নব দাস বসে পড়ল।
একজন অবাঙালি সাংবাদিক ভাঙা বাংলায় বলল, আই অ্যাম হিয়ার টু কনগ্র্যাচুলেট ইউ মিস্টার সরকার। আই থট ইউ হ্যাভ শোন গ্রেট কারেজ ইন দোজ পেইন্টিংস। বাট ইফ দোজ
আর সাবস্টিটিউটস দেন দ্যাট ইজ অ্যানাদার ম্যাটার।
সর্বজিৎ মৃদু হেসে বলল, আই অ্যাম নট দ্যাট কারেজিয়াস।
ওকে স্যার, থ্যাঙ্ক ইউ।
আরও একজন হিন্দি সাংবাদিক উঠে ভাঙা বাংলায় বলল, স্যার, আপনার কি মনে হয় নিজের ফ্যামিলির ন্যুড আঁকা খারাপ কাজ?
আমি ওসব জানি না।
আর ইউ এ মর্যালিস্ট?
তাও বলতে পারি না।
আর্টিস্টদের কি মর্যাল থাকা উচিত?
কেন নয়?
আমরা তো মনে করি আর্টিস্টদের কোনও সংস্কার থাকবে না।
এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।
আপনি সমর্থন করেন না?
হয়তো সব সংস্কার মানি না। কিন্তু কিছু ভ্যালুজ তো মানতে হয়।
আর্টের ভ্যালুজ কি আলাদা নয়?
আমি অত কথা বলতে পারব না।
আমি তো মনে করি ইউ হ্যাভ ডান এ কারেজিয়াস থিং। ইন ফ্যাক্ট আই কেম হিয়ার ফ্রম দিল্লি জাস্ট টু শেক ইয়োর হ্যান্ডস।
এবার একজন বাঙালি সাংবাদিক পিছন থেকে বলল, আপনি ভয় পেয়ে সবকিছু অস্বীকার করছেন না তো?
না। ভয় কীসের?
মিস্টার সিংঘানিয়া কিন্তু আপনার এজেন্টের কাছ থেকেই ছবিগুলো কিনেছেন। আপনার এজেন্টও বলছে, ছবিগুলো তারা আপনার কাছ থেকেই পেয়েছে। ফিঙ্গারপ্রিন্টের একটা কথা উঠেছে বটে, কিন্তু সেটা খুব নির্ভরযোগ্য অজুহাত নয়। একজন আর্টিস্ট দূরদর্শী হলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাতে ছবিতে না ওঠে তার ব্যবস্থা করে রাখবে।
সর্বজিৎ অসহায়ভাবে বলল, এর চেয়ে বেশি আমার আর কিছু করার নেই।
আপনার স্ত্রী বা মেয়েরা প্রেস কনফারেন্সে এলেন না কেন?
তারা কেন আসবে?
আমরা তাদের বক্তব্য শুনতে চাই।
আপনারা তাদের অ্যাপ্রোচ করে দেখতে পারেন।
ওকে। আমরা মিস্টার সিংঘানিয়া আর জয় শেঠকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।
রিপোর্টারদের ভিড়ের মধ্যেই মোটাসোটা, ফরসা, আহ্লাদি চেহারার সিংঘানিয়া বসে ছিল। উঠে এল মাইকের সামনে। হাতজোড় করে বলল, আমি কোনও ভিআইপি নই। সামান্য ব্যবসায়ী। আমার কয়েকটা কারবার আছে। আর্টও একটা। গুড মার্কেট, গুড মানি। কোনও দু’নম্বরি ব্যাপার নেই। ক্লিন পারচেজ।
সেই বাঙালি ঠান্ডা-মাথার রিপোর্টার প্রশ্ন করল, মেনি ফেসেস অফ ইভ সিরিজের ছবিগুলি আপনি কবে কিনেছেন এবং কার কাছ থেকে?
এভরিবডি নোজ। দেড় বছর আগে মিস্টার শেঠের কাছ থেকে কিনি।
আপনি সর্বজিৎ সরকারের অনেক ছবি কিনেছেন কি?
হ্যাঁ। মিস্টার সরকারের বাজার ভাল।
আপনি তার ছবি দেখেই বলে দিতে পারবেন যে সেটা মিস্টার সরকারের আঁকা?
নিশ্চয়ই পারব।
ইভ সিরিজ সম্পর্কে বলতে পারবেন?
পারব। ছবি মিস্টার সরকারের আঁকা বলেই জানি। আর আমি ছবিগুলো তার নাম করেই বিক্রি করব, যতক্ষণ না প্রমণ হচ্ছে যে এসব ওঁর আঁকা নয়। আমার আর কিছু বলার নেই। আই অ্যাম এ হার্ট পেশেন্ট। প্লিজ স্পেয়ার মি।
জয় শেঠ বলল, আমরা মিস্টার সরকারকে সম্মান করি। হি ইজ নাইস টু আস।
এই ছবিগুলো কীভাবে আপনাদের হাতে আসে?
পিতাজি রিখিয়ায় গিয়ে নিয়ে এসেছিলেন।
প্যাক করে আনা হয়েছিল কি?
হ্যাঁ। পিতাজি প্যাকার নিয়েই যান।
আপনি তো শুনলেন সর্বজিৎ সরকার বলছেন উনি এসব আঁকেননি।
শুনলাম। বাট উই আর অ্যাট এ লস।
ছবির ব্যাপারে আপনাদের সিকিউরিটি কেমন?
খুব ভাল। পেইন্টিংস আর কস্টলি থিং। সো উই টেক কেয়ার।
নকল ছবি ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলছেন?
নো স্যার।
পুলিশ কি আপনাদের গোডাউন বা স্টোর দেখেছে?
হ্যাঁ স্যার।
তারা কী বলছে আমরা জানতে চাই।
সেই মারমুখো কর্মকর্তা উঠে বলল, পুলিশের বক্তব্য এখন নয়। তদন্ত চলছে। এখনও সব অ্যাঙ্গেল দেখা হয়নি।
সাংবাদিকটি জয় শেঠকে বলল, মিস্টার শেঠ, আপনি কি বলতে চান সর্বজিৎ সরকার মিথ্যে কথা বলছেন?
নো স্যার। নট দ্যাট।
তা হলে কী বলতে চান স্পষ্ট করে বলুন।
আমরা মিস্টার সরকার এবং আরও অনেকের পেইন্টিংসকিনি। উই হ্যাভ আদার এজেন্টস। সো দেয়ার মে বি এ মিক্স আপ অ্যান্ড মে বি এ সাবস্টিটিউশন মেড বাই সাম ওয়ান।
সেটা কী করে সম্ভব?
জয় শেঠ মাথা চুলকে বলল, এরকম হতে পারে কেউ এইসব ছবি এঁকে আমাদের স্টোরে ঢুকিয়ে দিয়েছিল।
তা হলে তো বলতে হবে আপনাদের স্টোর ফুলফ নয়।
ফুলপ্রুফ নয় সে কথা ঠিক। এই ঘটনার পর আমরা আরও সাবধান হয়েছি।
আপনারা কি সর্বজিৎ সরকারের ফ্যামিলি মেম্বারদের চেনেন?
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
আপনারা যখন দেখলেন ছবিগুলো ওঁর ফ্যামিলি মেম্বারদের নিয়ে আঁকা তখন আপনারা সেটা ওঁকে বা ওঁর পরিবারকে জিজ্ঞেস করলেন না কেন?
আমরা তো ভেবেছি যে মিস্টার সরকারেরই আঁকা। উই ডোন্ট আস্ক এনি আর্টিস্ট অ্যাবাউট দেয়ার পেইন্টিংস।
মিস্টার সরকারের যেসব ছবি আপনারা কেনেন তার হিসেব আপনাদের নিশ্চয়ই আছে?
শিয়োর।
গত দু’ বছরে আপনারা সর্বজিতের ক’টা ছবি কিনেছেন?
তেরোটা।
তার মধ্যে দশটা ইভ সিরিজ?
হ্যাঁ।
তেরোটাই বিক্রি হয়ে গেছে?
না। তিনটে আছে।
এবার মিস্টার সরকারকে প্রশ্ন করব, আপনার হিসেবও কি তাই বলে? দেড় বছরে শেঠদের আপনি তেরোটা ছবি দিয়েছেন?
হ্যাঁ।
আপনার কথায় তেরোটার মধ্যে দশটা ছবি নিশ্চয়ই ইভ সিরিজ নয়?
না।
তা হলে আপনার হিসেব অনুযায়ী আপনার দশটা ছবি মিসিং।
তাই তো দাঁড়াচ্ছে।
সেই দশটা ছবি কী নিয়ে আঁকা মিস্টার সরকার?
প্রকৃতি, ল্যান্ডস্কেপ, গাছপালা, দেহাতি মানুষ এইসব।
স্পেসিফিক বলতে পারবেন না?
তাও পারব। আমার নোট করা থাকে।
শেঠরা কতদিন পরপর আপনার ছবি আনতে যায়?
বছরে একবার বা দু’বার।
বছরে আপনি ক’টা ছবি আঁকেন?
দশ বারোটা তো বটেই। বেশিও আঁকি।
সেটা কি খুব বেশি?
না। কারণ ওখানে আমার অখণ্ড অবসর। কাজেই একটু বেশিই আঁকতে পারি।
আপনি কি শুধু তেলরঙে আঁকেন?
তেল বা অ্যাক্রিলিক।
ছবি আঁকার আগে স্কেচ বা আউটলাইন করে নেন?
সব সময়ে নয়।
আপনি কখনও অর্ডারি ছবি আঁকেন? ধরুন কারও পোট্রেট আঁকার অফার পেলে? ফি যদি ভাল হয়?
আঁকি। তবে রিখিয়ায় যাওয়ার পর আর হয় না।
অফার পাননি?
পেয়েছি। কিন্তু রিফিউজ করেছি।
আপনি এই স্ক্যান্ডালটা নিয়ে আর কিছু বলবেন?
না।
সভা ভেঙে গেল।
বেরিয়ে এসে যখন গাড়িতে উঠে বসল সর্বজিৎ তখন কোথা থেকে এসে তার পাশে বসে পড়ল শবর। জয় গেল সামনে, ড্রাইভারের পাশে।
শবর, কেমন হল আজকের কনফারেন্স?
সো সো। উত্তেজিত হননি বলে ধন্যবাদ।
তোমাকে একটা কথা জানানো হয়নি। টেলিফোনে কে যেন মাঝে মাঝে আমাকে গালাগাল করছে।
তাই? তবে এরকম তো এখন হতেই পারে।
ইরা আজ ফোন করেছিল।
কী কথা হল?
আমি বললাম যা বলার। বিশ্বাস করল না।
না করারই কথা।
শবর, আমার মনে হয় কলকাতায় থাকার কোনও মানে হয় না। এখানে এসেই আমি টায়ার্ড আর অসুস্থ ফিল করছি! কাল যদি ফিরে যাই কেমন হয়?
আপনার আর কয়েকটা দিন থাকার দরকার।
কেন বলো তো?
ফর সাম রেফারেন্সেস অ্যান্ড সাম হেল্প।
তাতে কিছু হবে?
দেখাই যাক না।
আর একটা কথা। বিল্ট আমার ছেলে নয়, এ কথাটা তোমাকে বলেছিলাম। তুমি সেটা কেন যে ইরাকে বললে?
কথাটা পাশ কাটিয়ে শবর বলল, কাল ছবিগুলো দেখতে যেতে হবে।
.
পেইন্টিংগুলো হোটেলের ঘরে চারদিকে সাজিয়ে রেখেছিল সিংঘানিয়া। সকালের আলোয় বেশ ঝলমল করছিল ছবিগুলো।
শবর বলল, দেখুন বাট ডোন্ট টাচ এনিথিং।
সিংঘানিয়া হেসে বলল, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ইয়েস ইউ মাস্ট বি কেয়ারফুল।
সর্বজিৎ ছবিগুলো একাগ্র চোখে দেখে যাচ্ছিল। খুবই ভাল জাতের পোট্রেট। বিদেশি রঙে এবং তুলিতে আঁকা, যে এঁকেছে সে পাকা শিল্পী। নকল বলে চেনাই যায় না। হ্যাঁ, সর্বজিতের কিছু বৈশিষ্ট্য এইসব ছবিতেও আছে।
আর ইউ প্লিজড মিস্টার সরকার?
আমার প্লিজড হওয়ার কারণ কী?
দিজ আর গুড পেইন্টিংস স্যার।
হতে পারে। বাট আই অ্যাম ওরিড।
কেন স্যার?
দি ইম্পস্টার ইজ এ গুড পেইন্টার।
ইস্পস্টার তোক কি না হোক, রিসেন্ট কন্ট্রোভার্সি হাজ মেড দি পেইন্টিংস এক্সট্রিমলি ভ্যালুয়েবল। গতকাল রাতে ওভার টেলিফোন আমি বোম্বে থেকে বিগ অফার পেয়েছি।
কত বিগ?
দ্যাট ইজ ট্রেড সিক্রেট স্যার।
তার মানে ছবিগুলো আপনি হাতছাড়া করছেন না?
নো স্যার। আই অ্যাম এ বিজনেসম্যান। তবে চিন্তা করবেন না। বোম্বাই দিল্লিতে আপনার ফ্যামিলিকে তো কেউ চেনে না।
কিন্তু পাবলিসিটি হ্যাজ রিচড দোজ সিটিজ। নইলে আপনি বিগ অফার পেতেন কি?
ঠিক কথা। কিন্তু পাবলিক স্ক্যান্ডাল হবে না। কালেক্টর জানবে তো জানুক। চা, কফি কিছু খাবেন স্যার?
না, থ্যাঙ্ক ইউ।
সিংঘানিয়া শবরকে বলল, আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট এক্সপার্টরা কখন আসবে স্যার?
বেলা এগারোটায়।
আফটার দ্যাট মে আই প্যাক মাই পেইন্টিংস?
হ্যাঁ।
আমি কাল বোম্বে চলে যাব। বুঝতেই পারছেন আমার সময় নেই।
ঠিক আছে মিস্টার সিংঘানিয়া।
হোটেল থেকে বেরিয়ে এসে শেঠদের দেওয়া গাড়িতে চেপে সর্বজিৎ বলল, তা হলে তুমি সিংঘানিয়াকে ছেড়ে দিচ্ছ?।
শবর একটা শ্বাস ফেলে বলল, উপায় কী?
আমার নামেই ছবিগুলো চালু থাকবে?
আপাতত। যদি প্রমাণ হয় যে আপনার আঁকা নয় তা হলে অন্য কথা। সে ক্ষেত্রে সিংঘানিয়া হয়তো আপনার নামের স্বাক্ষর ছবি থেকে মুছে দেবে।
হুঁ। ঠেকাতে পারো না?
না, কোন আইনে ঠেকাব?
আইন আমি জানি না, তোমারই জানবার কথা।
হয়তো তাই। এই কেস তো আগে পাইনি। এই প্রথম।
শবর, আমি জানি তুমি একজন দুর্দান্ত পুলিশ অফিসার।
যতটা শোনেন ততটা নয়।
তোমার বুদ্ধি ক্ষুরধার আমি জানি। তুমি কিছু আঁচ করতে পারছ না?
না।
কেন পারছ না শবর?
ব্যাপারটা জটিল।
কাউকে সন্দেহ হচ্ছে না?
এখনও নয়।
আমিও কেমন ধাঁধায় পড়ে গেছি।
ভাববেন না। কয়েকটা দিন দেখা যাক।
আমাকে কতদিন থাকতে হবে এখানে?
থাকুন না কয়েকদিন।
আমি এখানে হাপিয়ে উঠছি।
জানি। ছবি আঁকছেন?
আঁকছি। ছবিই তো বাঁচিয়ে রাখে।
একটা কথা বলবেন?
কী কথা?
আপনি কলকাতায় যাদের ছবি আঁকা শেখাতেন তাদের মধ্যে কেউ কি শত্রুতা করতে পারে?
কী করে বলব?
এনি হান্চ?
না শবর। নো হানচ।
শবরের ভ্রু কুঁচকে রইল।
.
নিশুত রাত। হঠাৎ দরজায় বিশাল খট খট শব্দ হল। তারপর তীব্র ধাক্কা।
সর্বজিৎ ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠল, বাঁচাও।
কেন চেঁচাল তা সে জানে না। বড্ড ভয়। দরজাটা ভীষণভাবে ধাক্কা দিচ্ছে কেউ।
মটাৎ করে ছিটকিনি ভেঙে দরজা খুলে গেল।
সভয়ে চেয়ে সর্বজিৎ বলল, তুমি।
হ্যাঁ আমি।
কেন এসেছ?
হাতে এটা কী দেখছ?
ওঃ ওটা তো—
কী মনে হচ্ছে তোমার?
সর্বজিৎ আতঙ্কের গলায় বলল, এরকম কোরো না প্লিজ—
কেন, আমার ফাঁসি হবে?
হ্যাঁ।
হবে না। সবাই তোমার মৃত্যু চায়, তা জানো?
মারবে কেন? মেরো না।
মাঝে মাঝে মরতে হয়। মরো।
তারপরই উপর্যুপরি কয়েকবার ঝলসে উঠল চপারটা। সর্বজিৎ অবাক হয়ে দেখল তার শরীরের অনেকগুলি ক্ষতস্থান থেকে নানা বর্ণের রং বেরিয়ে আসছে। নীল, হলুদ, সাদা, সবুজ, কালো, লাল। রক্তের রং কি এরকমই?
সর্বজিৎ কি মরে যাচ্ছে? সর্বনাশ! মরে যাচ্ছে নাকি?
ঘুম ভেঙে মধ্যরাতে ধড়মড় করে উঠে বসে সর্বজিৎ।