কর্নেল নীলাদ্রি সরকার যখন কোনও ঘটনাকে গোলমেলে বলেন, তখন বুঝতে হবে উনি সেটার বাইরে দাঁড়িয়ে নেহাত দর্শকসুলভ কোনও মন্তব্য করছেন না। অর্থাৎ উনি গোলমালের জট ছাড়াতে নাক গলাবেনই।
অথচ উনি বাহারিনের শেখ সায়েব এবং জুয়েলার হরনাথ চন্দ্রকে কেন যে প্রাইভেট ডিটেকটিভ কে কে হালদার ওরফে হালদারমশাইয়ের দিকে ছুটিয়ে দিলেন বুঝতে পারছিলাম না।
কফি খেয়ে চাঙ্গা হব কী, নেতিয়ে পড়ছিলাম যেন। গতরাতে যে লোকটিকে জলজ্যান্ত দেখেছি, যার কণ্ঠস্বর এখনও কানের পর্দায় সেঁটে আছে, আজ সকালে তার মড়া দেখার পর থেকে সেই লোকটা আমাকেও ভূতের মতো পেয়ে বসেছে। বিশ্বাস করতে বাধছে যা দেখেছি যা সত্যি, না কি আমারই কোথাও কোনও ভুল ঘটেছে? ঠিক সেই বাড়িটাই কি দেখে এলাম এবং পুলিশ অফিসারের মুখে ইন্দ্রজিৎ রায় নামটাও কি সত্যি শুনে এলাম?
কর্নেল চাপা স্বরে কার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। ফোন রেখে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন–চলো বেরুনো যাক। যন্ত্রচালিতের মতো ওঁকে অনুসরণ করলাম। বৃদ্ধ রহস্যভেদী আমার হাবভাব আঁচ করেছিলেন। গাড়িতে ওঠার পর আমার দিকে ঘুরে বললেন–তুমি কি অসুস্থ বোধ করছ, জয়ন্ত? হাসবার চেষ্টা করে বললাম–নাহ! কেন?
কর্নেল হাসলেন।–ডার্লিং! হাথিয়াগড় জঙ্গল থেকে আনা অর্কিডটার ফুল ফোঁটা দেখার জন্য আমার অন্তত এপ্রিল পর্যন্ত বেঁচে থাকা দরকার। কাজেই ভেবে দেখ, স্টিয়ারিংয়ে আমি বসব কি না।
গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে বললাম–এর চেয়ে অনেক সাংঘাতিক ঘটনা ঘটতে দেখেছি আপনার পাল্লায় পড়ে। আমার নার্ভ অন্তত গাড়ি চালানোর মতো দাঙ্গা। আছে।
কর্নেল চোখ বুজে চুরুট টানতে থাকলেন। লক্ষ্য করলাম, অভ্যাসমতো বাইনোকুলারটি সঙ্গে নিয়েছেন। টাক ঢাকতে টুপিও পরেছেন। চুরুটের ছাই সাদা দাড়ি বেয়ে নেমে যাচ্ছে। শর্টকাটে অলিগলি হয়ে এগোচ্ছিলাম। একটা গলির মোড়ে গিয়ে কর্নেল দাড়ি ঝেড়ে আপনমনে বললেন-দশ লাখ ডলার দামের মুক্তো! ভারতীয় মুদ্রায় কয়েক কোটি টাকা। কাজেই এই রহস্যটাও খুব দামি।
বললাম–তাতে কী? রহস্যভেদী হিসেবে আপনি তো তার চেয়ে দামি।
–আমাকে লড়িয়ে দেওয়ার দরকার নেই জয়ন্ত!
–আপনি যে অলরেডি লড়তে নেমে গেছেন, এটুকু বোঝবার মতো বুদ্ধি আমার আছে বস্।
–হুঁ। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, আমি একটা চেনা বাড়িতে অনেক বছর পরে যাচ্ছি। কর্নেল দাড়িতে আঁচড় কাটতে কাটতে আনমনে ফের বললেন–বিশাল গেট। ভেতরে ফুলবাগান। একটা সুইমিং পুল ছিল। একটা পোষা হরিণ…একটা কাকাতুয়া..কালো টেরিয়ার কুকুর। আচ্ছা জয়ন্ত, গলিটার নাম কি কালীকিঙ্কর রায়চৌধুরী লেন?
-জানি না। লক্ষ্য করিনি। কাকেও জিজ্ঞেসও করিনি।
কর্নেল আপনমনে বিড়বিড় করতে থাকলেন–মধু! পুরাতন ভৃত্য বলতে যা বোঝায়। আসলে সমস্যা হল, বনেদি বাড়িতে পুরাতন ভৃত্য অনেকই থাকে। অবস্থা পড়ে এলে তারা বাতিল হয়ে যায়। শুধু একজন–হুঁ, সর্বত্র দেখেছি, তাদের। একজনকে ছাড়ানো যায় না বা ছাড়া যায় না। সে থেকে যায়। পরমেশ রায়চৌধুরি আর অমরেশ রায়চৌধুরি। এক ভাই অন্য ভাইয়ের একেবারে উল্টো। পরমেশ আমার মতো চিরকুমার। অমরেশ ভোগী উদ্ধৃঙ্খল দুর্দান্ত। মাতাল অবস্থায় গাড়ির অ্যাকসিডেন্ট বাধিয়ে মারা যান। ওঁর স্ত্রীর নাম ভুলে গেছি। প্রায় পনের বছর আগের কথা। ওঁদের একটি সন্তান ছিল–পরমেশ বলেছিলেন। তাকে নিয়ে অমরেশের বিধবা স্ত্রী কেন যেন বাড়ি থেকে রাতারাতি চলে যান। পরমেশ একা থাকতেন। নিঃসঙ্গ দুঃখী মানুষ। আমার মতো প্রকৃতি-ট্রকৃতি নিয়েই কাটাতেন। আমাদের নেচার-লাভার্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সেই সূত্রে একদিন ওঁর বাড়িতে ডিনার খেতে গিয়েছিলাম।
কর্নেলের কথাগুলো কান করে শুনছিলাম। সি আই টি রোডে পৌঁছে গেছি। বললাম–সামনে ডান দিকের গলি।
অমনি কর্নেল বলে উঠলেন–ইনটুইশন ডার্লিং, ইনটুইশন! অলৌকিকে আমার বিশ্বাস নেই। আর আকস্মিক যোগাযোগ বলতে যা বোঝায়, তার পেছনেও কার্যকারণ সম্পর্ক থাকে। যাই হোক, আমি সত্যিই পরমেশ রায়চৌধুরির বাড়িতে যাচ্ছি।
কর্নেলের কোনও কথায় আর বিশেষ অবাক হই না। কলকাতার প্রায় সব বনেদি অভিজাত পরিবারের সঙ্গে ওঁর কোনও-না কোনওভাবে চেনাজানা থাকাটা স্বাভাবিক বলেই মেনে নিয়েছি।
এখনও গলিতে সামান্য জটলা আছে। গেটের কাছে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করালাম। কর্নেল নেমে গিয়ে হাঁক দিলেন–মধু! মধু! রাতে দেখা সেই মধ্যবয়সী ফো লোকটি কাছাকাছি কোথাও ছিল। গরাদ দেওয়া গেটের ভেতর তাকে পাষাণমূর্তির মতো দেখাল। কর্নেল বললেন–আমাকে চিনতে পারছ কি মধু? ঠিক আছে। না পারলে তোমার কর্তাবাবুকে গিয়ে বলো কর্নেলসায়েব এসেছেন। কর্নেল নীলাদ্রি সরকার।
এবার পাষাণমূর্তিতে প্রাণ এল। সে সেলাম ঠুকে আস্তে বলল–আপনি কর্নেলসায়েব? কর্তামশাই একটু আগে ফোন করে লাইন পেলেন না। আমাকে ঠিকানা দিয়ে একটা চিঠি পাঠাবেন বলেছিলেন।
কর্নেল বললেন–গেট খুলে দাও। গাড়ি বাইরে রাখা ঠিক হবে না।
গেটের ভেতর এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে পোর্টিকোর তলায় গাড়ি দাঁড় করালাম। কর্নেল সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে একটু হেসে বললেন–মধুকে আমার মনে পড়েছে ভেবো না। মধুরও আমাকে মনে পড়ার কথা নয়। কিন্তু চান্স নিতে আমি ছাড়ি না।
মধু গেটে তালা আটকে ফিরে এল। বলল–পুলিশ বাইরের লোক ঢোকাতে বারণ করেছে। কর্তামশাইও ভিড় পছন্দ করেন না। আপনারা আসুন স্যার।
দরজা ঠেলে খুলে সে আমাদের একটা হলঘরে ঢোকাল। কর্নেলের সঙ্গ গুণে এবং পেশার কারণে এ ধরনের হলঘর ব্রিটিশ আমলে বনেদি বড়লোকের বাড়িতে দেখেছি। আজকাল এই সব বাড়ি প্রমোটাররা কিনে নিয়ে বহুতল বাড়ি বানাচ্ছে। হলঘরগুলোর চেহারা চরিত্র একই রকম। রঙচটা কার্পেট, নকশাদার মার্বেলের মেঝে। এক কোণ থেকে উঠে যাওয়া বাঁকাচোরা সিঁড়ি। সিঁড়ির শুরুতে সিংহের মুখ। দেয়ালে বড় বড় পেন্টিং। জীবনজন্তুর স্টাফ করা মুণ্ডু। পাথরের ভাস্কর্য আরও যা যা সব থাকা উচিত, এই হলঘরেও আছে।
কর্নেল যেতে যেতে বললেন–ইন্দ্রজিৎ তোমার কর্তামশাইয়ের ভাইয়ের ছেলে?
মধু ঘুরে অবাক চোখে বলল–আজ্ঞে হ্যাঁ। আপনি শুনেছেন কী সাংঘাতিক কাণ্ড হয়েছে?
–শুনেছি। তো সে কবে এসেছিল?
–তা দিন দশ-বারো হবে।
এর আগে সে মাঝে মাঝে আসত?
সিঁড়িতে উঠে মধু বলল–আসত। তবে খুব কম। কখনও বছরে একবার। কখনও দুবছর-তিনবছর পরে হঠাৎ এসে কামশাইকে জ্বালাতন করত। ছোটবাবু যেমন ছিলেন, ওনার ছেলেও তেমন।
-ইন্দ্রজিৎ কোথায় থাকত জানো?
-কে জানে! কখনও বলত দিল্লি। কখনও বলত বোম্বাই। এবার এসে বলছিল আরব মুল্লুকে ছিল। ওর কথা বিশ্বাস করা কঠিন। তবে গত মাসে কর্তামশাই বলেছিলেন, কাগজে খোকাবাবুর ছবি ছেপেছে।
–তুমি দেখেছিলে?
–না স্যার! আমি মুখ লোক। কাগজ পড়তে পারি না।
–ওপরে চওড়া করিডোরে পৌঁছে সে বলল–একটু দাঁড়ান স্যার। কর্তামশাইকে খবর দিই।
সে চলে গেল। কর্নেল কী বলতে যাচ্ছেন, সেইসময় বাঁদিকের একটা ঘরের দরজা খুলে এক যুবতী বেরুল। মহিলাদের বয়স সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা নেই। তবে যে বেরুল, তাকে যুবতীই বলব। এ সব পরিবারে ফর্সা লাবণ্যময়ীদেরই আশা করা চলে। এই যুবতী কিন্তু তত ফর্সা নয়। মেয়েদের লাবণ্য সম্পর্কে আমার ধারণার সঙ্গে আমার বৃদ্ধ বন্ধুর ধারণার মিল কখনও দেখিনি। আমি নাকি যৌবনের চোখে দেখি বলে সব যুবতাঁকেই লাবণ্যময়ী দেখি। এ ক্ষেত্রে আমার শ্যেনদৃষ্টি প্রথমেই পড়েছিল মুখে এবং পরমুহূর্তে সিঁথিতে। সিঁদুরহীন সিঁথি দেখে ইন্দ্রজিতের সদ্যবিধবা স্ত্রী ধরে নিতাম–তাছাড়া মুখে ওই বিষাদের গাঢ় ছাপ। কিন্তু তক্ষুণি। মনে পড়ে গেল ইন্দ্রজিৎ সস্ত্রীক এলে মধু তা অবশ্যই বলত।
সে আমাদের দিকে কেমন বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। পরনে আকাশী নীল শাড়ি এবং একই রঙের হাতকাটা ব্লাউস। অগোছাল চুল। আমি মেয়েদের দিকে সোজাসুজি তাকাতে পারি না। কিন্তু আমার বৃদ্ধ বন্ধু এ ব্যাপারে ভীষণ স্মার্ট। লক্ষ্য করলাম, উনি তীব্র দৃষ্টিবাণে বিদ্ধ করেছেন তাকে। অথচ সে একই দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। ততক্ষণে মধু এসে গেল। আপনারা আসুন স্যার! বলে সে যুবতীর দিকে ঘুরল।–দিদিমণি! কর্তামশাই এই সায়েবদের জন্যে কফি করতে বললেন। আমাকে নীচে গিয়ে থাকতে হবে। আবার পুলিশ আসবে।
করিডর দিয়ে এগিয়ে একটা ঘরের পর্দা তুলল মধু। ঘরের সামনে বিশাল বারান্দা, নীচে ফুলবাগান জঙ্গল হয়ে আছে। একটা এঁদো চৌকো ডোবা চোখে পড়ল। ওটাই হয়তো সুইমিং পুল ছিল। উঁচু পাঁচিলে ঘেরা বাড়িটার আয়তন বাইরে থেকে কল্পনা করা যায় না। দেশি-বিদেশি গাছপালাও অনেক।
ঘরটা একাধারে স্টাডি আর বেডরুম। আলমারিতে ঠাসা বই দেখে হঠাৎ মনে হয় লাইব্রেরিতে ঢুকেছি। দক্ষিণপূর্ব কোণে প্রকাণ্ড পালঙ্ক। দেয়ালে সাজানো অজস্র পেন্টিং। ঘরে ঢুকে আবছা আঁধারে দৃষ্টি ঘষে গিয়েছিল। চাপা গম্ভীর গলায় এবার কেউ বলে উঠল–আসুন কর্নেল সায়েব।
এতক্ষণে দেখতে পেলাম, পালঙ্কের কাছ ঘেঁষে একটা টেবিলের পাশে ইজিচেয়ারে কর্নেলের বয়সি এক ভদ্রলোক বসে আছেন। ছিপছিপে গড়ন। পাতা-চাপা ঘাসের মতো রঙ। মুখে খোঁচাখোঁচা দাড়িগোঁফ। পরনে পাঞ্জাবি পাজামা। একটা ছড়ি ইজিচেয়ারের হাতলে মাথা রেখে বাঁকা হয়ে পড়ে আছে। কর্নেল এগিয়ে গিয়ে বললেন–আমার হিসেবে পনের বছর। তাই না?
পরমেশ রায়চৌধুরী উঠে দাঁড়ালেন না। হাত বাড়িয়ে কর্নেলের হাত নিলেন। হাতটা ছাড়লেন না। গলার ভেতর বললেন–আপনার কাছে লোক পাঠাচ্ছিলাম।
–মধু বলল। তবে তার আগেই আমি খবর পেয়েছিলাম, আপনার বাড়িতে একটা মিসহ্যাপ হয়েছে।
-আপনি বসুন। আমার ডান পা আর ডান হাতে পক্ষাঘাত। বাঁচার কোনও অর্থ হয় না। আপনি বসুন প্লিজ!!
পরমেশের চোখে জল এসে গেল। কর্নেল পাশের চেয়ারে বসে বললেন–আলাপ করিয়ে দিই। দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার সাংবাদিক জয়ন্ত চৌধুরী। জয়ন্তই বোম্বেতে গিয়ে ইন্দ্রজিতের ইন্টারভিউ নিয়েছিল!
পরমেশ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-বসো বাবা! তুমিই বলছি, কিছু মনে করো না।
বললাম–না, না। অবশ্যই তুমি বলবেন।
কর্নেল বললেন–আপনি কতদিন থেকে এভাবে অসুস্থ?
পরমেশ বললেন–প্রায় এক বছর। বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলাম। তারপর থেকে এই অবস্থা। নার্সিং হোমে নিয়ে যেতে চেয়েছিল মধু। যাইনি। তো ওসব কথা থাক। আপনি কফির ভক্ত ছিলেন মনে আছে। কফি খেয়ে নিন। সব বলছি। আপনাকে বলা দরকার।
–একটি মেয়েকে দেখলাম। কোনও আত্মীয়া?
পরমেশ একটু চুপ করে থেকে বললেন–ধানবাদে আমার এক পিসতুতো ভাই ছিল। তার মেয়ে। বাবা-মা বেঁচে নেই। খবর পেয়ে আমি ওকে নিয়ে এসেছিলাম। তখন সবে স্কুল শেষ করেছে। কলকাতায় এনে কলেজে ভর্তি করে দিলাম। গতবছর এম এ-তে ভর্তি হওয়ার মুখে আমার হঠাৎ এই অবস্থা হল। বেঁকে বসল। আমাকে নাকি মধু দেখাশোনা করতে পারবে না। সারাক্ষণ আমার কাছে থাকে। দেখাশোনা করে। বলে পরমেশ ঘুরলেন দরজার দিকে।–আয় মিমি!
সেই যুবতী কফির ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকল পরমেশ বললেন–তোকে তো কর্নেল সায়েবের কথা তখন বলছিলাম। আর এর নাম….
কর্নেল বলে দিলেন।–দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার সাংবাদিক জয়ন্ত চৌধুরী। তোমার নাম মিমি। কিন্তু পুরো নাম যে চাই! বলে কর্নেল একটু হাসলেন।–তোমার জ্যাঠামশাইয়ের কাছে আমার সম্পর্কে কী শুনেছ জানি না। আমার এই এক বাতিক। যা জানি না, তা জানা চাই।
মিমি তেমনই বিহ্বল দৃষ্টে তাকিয়ে বলল–আমার নাম সুপর্ণা ব্যানার্জি।
কর্নেল কফির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে বললেন-বাঃ! অসাধারণ! বসো মিমি! মিমি পালঙ্কের একটা বাজু ধরে দাঁড়িয়ে রইল। পরমেশ হঠাৎ গলা নামিয়ে বললেন–মিমি কাল রাতে অনেক সন্দেহজনক ব্যাপার দেখেছে। শুধু কাল রাতে নয়, ইন্দ্র আসার পর থেকেই লক্ষ্য করেছে। ওর দৃঢ় বিশ্বাস ইন্দ্র সুইসাইড করেনি। তাকে কারা খুন করে বাথরুমে লটকে দিয়েছে। মিমি, সব খুলে বল কর্নেলসায়েবকে।
মিমি মুখ নামিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল–কাল রাতে ইন্দ্রদা ওর ঘরে চুপিচুপি কার সঙ্গে কথা বলছিল। তখন হলঘরে বারোটা বাজছিল ঘড়িতে। আমার ঘুম আসছিল না। বারান্দায় বসে ছিলাম। মধুদা নীচে থাকে। আমি ভেবেছিলাম মধুদার সঙ্গে কথা বলছে। কিন্তু দরজায় কান পেতে শুনি অন্য কেউ কথা বলছে। তখন বুঝলাম, যে লোকটা দিনের বেলা ইন্দ্রদার সঙ্গে আসে, সে-ই এসেছে। আমি ভাবলাম সকালে জিজ্ঞেস করব ইন্দ্রদাকে কিন্তু সকালে চা দিতে গিয়ে দেখি, ইন্দ্রদার ঘর ভেজানেনা। তারপর দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম। ভাবলাম বাথরুমে আছে। কিন্তু বাথরুম খোলা। উঁকি দিয়েই দেখি–
হঠাৎ মিমি দুহাতে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠল।…
মিমির কান্না দেখে পরমেশ বিরক্ত হয়ে বললেন–দ্যা মিমি, তোকে বারবার বলছি কান্নাকাটির কোনও মানে হয় না। ইন্দ্র মরেছে। আমি হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি। আমার স্পষ্ট কথা। কিন্তু আমার পয়েন্টটা হল, আমারই বাড়িতে এমন একটা সাংঘাতিক ঘটনা আমি বরদাস্ত করতে পারছি না। ইন্দ্র যদি সত্যিই খুন হয়ে থাকে, অন্যখানে হলে আমি একটুও মাথা ঘামাতাম না। আমার কথা কর্নেল সাহেব আশা করি বুঝতে পারছেন।
কর্নেল বললেন–পারছি। আপনার ফ্যামিলির একটা সম্মান আছে। তাতে আঘাত পড়েছে।
–ঠিক। পরমেশ ক্ষুব্ধভাবে বললেন।-ইন্দ্র সে বাইরের উটকো লোক আবার আমার বাড়ির ভেতর ঢোকাচ্ছে, হারামজাদা মধুও সে-কথা আমাকে বলেনি। তা ছাড়া গতরাতে ইন্দ্রের ঘরের ওই ব্যাপারটা মিমি তখনই যদি আমাকে বলত!
মিমি বলল–আপনি স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমোন।
–তুই চুপিচুপি মধুকে গিয়ে ওঠাতে পারতিস্!
মিমি মুখ নামিয়ে বলল–ইন্দ্রদা রেগে যাবে, হইচই করবে ভেবেছিলাম।
কর্নেল বললেন–অত রাতে বাইরের লোক এলে মধুর তা জানার কথা। মধু কী বলেছে?
পরমেশ বললেন–মধু রাতে গেটে তালা এঁটে রাখে। মধু বুঝতে পারছে না। অত রাতে কেমন করে ইন্দ্রের ঘরে বাইরের লোক এল! মধু বলছে, খিড়কির দরজা দিয়ে ইন্দ্ৰই চুপিচুপি লোকটাকে বাড়ি ঢুকিয়ে থাকবে।
–খিড়কির দরজা কোনদিকে?
–মিমি, দেখিয়ে দে, কর্নেল সায়েবকে।
মিমির সঙ্গে কর্নেল এবং আমি বেরোলাম। চওড়া ব্যালকনিতে গিয়ে মিমি নীচে ঝোপঝাড় ও গাছপালার ভেতরে একটা ছোট্ট দরজা দেখাল। কর্নেল বাইনোকুলারে দেখে নিয়ে বললেন-কর্পোরেশনের আবর্জনা জড়ো করার জায়গা। তার ওপাশে বস্তি। কাজেই বাইরের লোক চুপিচুপি আসার অসুবিধে নেই।
মিমি বলল–মধুদা ওই দরজা দিয়ে শর্টকাটে বাজারে যায়।
–একটা কথা মিমি। কাল অত রাতে তুমি জেগে ছিলে। এই বারান্দায় বসে ছিলে। কেন তা বলতে আপত্তি আছে?
মিমি আস্তে বলল–এবার ইন্দ্রদা আসার পর আমার যেন অস্বস্তি হচ্ছিল। ও যতবার এসেছে, জ্যাঠামশায়ের কাছে টাকা আদায় করেছে। ইন্দ্রদারও এই প্রপার্টিতে শেয়ার আছে। তাই টাকা আদায় করতে আসেনি। বিশেষ করে ওই লোকটাকে যখন-তখন সঙ্গে এনে চুপিচুপি কী সব কথাবার্তা বলছিল। আমার ভয় হয়েছিল, জ্যাঠামশাইকে–
মিমি হঠাৎ থেমে গেলে কর্নেল বললেন-বলো মিমি! তুমি কী ভেবেছিলে খুলে বলো।
–ইন্দ্রদা জ্যাঠামশাইকে মার্ডার করানোর জন্য হয়তো ভাড়াটে খুনী এনেছে। মিনি আড়ষ্টভাবে কথাটা বলে কর্নেলের দিকে তাকাল।লোকটা চেহারা দেখেই ভয় করে। আমার দিকে বিশ্রিভাবে তাকাত। ইন্দ্রদা চায়ের কথা বললে মধুদাকে দিয়ে পাঠিয়ে দিতাম।
-তুমি কোন ঘরে শোও?
–জ্যাঠামশাইয়ের ঘরেই।
–আমার সময় যে ঘর থেকে তুমি বেরিয়ে এলে, ওটাই কি ইন্দ্রজিতের ঘর? মিমি মাথা দোলাল।–না। ইন্দ্রদা পাশের ঘরে ছিল। ওর ঘরের দরজা পুলিশ সিল করে দিয়েছে।
–হুঁ। তো যে ঘর থেকে তুমি বেরুলে—
মিমি দ্রুত বলল ওই ঘরে আমি থাকি। রাতে জ্যাঠামশাইয়ের ঘরে শুতে আসি।
-তোমার ঘর থেকে ইন্দ্রজিতের ঘরে ঢোকার দরজা আছে?
-দরজাটা ইন্দ্রদার ঘরের ভেতর থেকে বন্ধ করা আছে। আমার ঘর থেকে খোলা যায় না।
–তুমি পুলিশকে কী বলেছ?
–জ্যাঠামশাই ওসব কথা বলতে নিষেধ করেছিলেন। তাই কিছু বলিনি।
–মধু এসব কথা জানে?
–জানে। মধুদাকেও জ্যাঠামশাই নিষেধ করেছিলেন।
–মধু গতরাতে সন্দেহজনক কিছু টের পায়নি?
–বলছে পায়নি। মধুদা ভীষণ ঘুমোয় আমি দেখেছি। রাতে হঠাৎ কোনও দরকার হলে ওকে ডেকে ওঠানো কঠিন।
কর্নেল বাইনোকুলারে নীচের বাগান খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে বললেন, খিড়কির দরজাটা মধু খোলা দেখেছিল?
–হ্যাঁ। মধুদা বন্ধ করে দিয়েছে। জ্যাঠামশাইকে কথাটা খুলে বলতে ওকে নিষেধ করেছি আমি।
–ইন্দ্রজিতের বডি কী অবস্থায় ছিল?
মিমি শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে বলল–বাথরুমের শাওয়ারের পাইপ থেকে ঝুলছিল। গলায় মাফলারের ফাস ছিল।
–ইন্দ্রের ঘরের জিনিসপত্র লক্ষ্য করেছিলে?
–না। তখন কিছু লক্ষ্য করার মতো মনের অবস্থা ছিল না। আমি ইন্দ্রদাকে ওই অবস্থায় দেখার পর আর ও ঘরে ঢুকিনি।
পরমেশের ঘরে মধুর সাড়া পাওয়া গেল। তারপর সে বারান্দায় এসে বলল-নীচে পুলিশ এসেছে স্যার! কর্তামশাই আপনাকে ডাকছেন।
আমার ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। পরমেশ বললেন–কর্নেলসায়েব! প্লিজ আপনি যা করার করুন। পুলিশের হাঙ্গামা আমি বরদাস্ত করতে পারব না। হারামজাদা বাউন্ডুলে মড়ার ওপর খাড়ার ঘা মেরে গেছে। মধু! মিমি! পুলিশকে কী বলতে হবে কর্নেল সাহেবের কাছে জেনে নে তোরা। উনি যা বলবেন, তা-ই বলবি। সাবধান করে দিচ্ছি। এ হাঙ্গামায় যেন আমরা জড়িয়ে না পড়ি। কর্নেল বললেন–চল মধু। মিমি, তুমি জ্যাঠামশাইয়ের কাছে থাকো।
পরমেশ সাবধান করিয়ে দিলেন।–ওদের বলে দিন কর্নেল সায়েব, পুলিশকে কী বলবে।
-আগে যা বলেছে, তার বেশি কিছু বলবে না।
মধু নীচের হল ঘরে পুলিশ অফিসারদের বসিয়ে রেখে এসেছিল। পুলিশ যে এ ফ্যামিলির আভিজাত্য সম্পর্কে সচেতন, সেটা বোঝা যাচ্ছিল। তা না হলে সোজা ওপরে উঠে আসতেন ওঁরা।
কিন্তু হলঘরে ঢুকেই চমকে উঠলাম। স্বয়ং ডিটেকটিভ ডিপার্টের ডেপুটি কমিশনার অরিজিৎ লাহিড়ি এসে হাজির। জোরালো হেসে বললেন-জয়ন্তবাবুকে যে দেখতে পাব, জানতাম। অবশ্য ফোনে কর্নেল বলেননি।
কর্নেল বললেন-তোমাকে ফোন করার সময় জয়ন্ত আমার ঘরেই বসে ছিল। কিন্তু ও তখন এমন শ যে ফোনে আমি কার সঙ্গে কথা বলছি ওর কানে ঢোকেনি।
অরিজিৎ বললেন–শকড?
–হুউ। কারণ আছে। পরে বলবখন। তবে আপাতত ইন্দ্রজিতের ঘরটা দেখা দরকার।
–চলুন।
পুলিশের বড়কর্তার সঙ্গে আমার দেখা সেই অফিসারও ছিলেন। লক্ষ্য করলাম উনি বেজায় অবাক হয়ে গেছেন। নেহাত সুইসাইড কেস বলে ঝক্কি থেকে রেহাই পেতে চেয়েছিলেন নিশ্চয়। নিছক রুটিনমাফিক ঘর সিল করে একটা মামুলি তদন্ত সারার তালে ছিলেন বোঝা যায়। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরুলে হয়তো একটু নড়ে বসতেন। তবে আজকাল যা হচ্ছে, তা-ই হত। পরমেশ ভাইপোর জন্য মাথা ঘামাতে রাজি নন। কাজেই কেস ঝুলে থাকতে থাকতে ফাইলের তলায় চাপা পড়ে যেত।
সিঁড়িতে উঠতে উঠতে অফিসারটি আমাকে চুপিসাড়ে জিজ্ঞেস করলেন দাড়িওলা বুড়ো ভদ্রলোক কি এ বাড়ির কোনও আত্মীয়?
বললাম-নাহ্।
–কে উনি?
কর্নেল নীলাদ্রি সরকার।
ওরে বাবা!
অফিসারের মুখের দিকে তাকালাম। মুখে নার্ভাস হাসি। বললাম–চেনেন না কি?
নাম শুনেছি। বলে অফিসার গম্ভীর হয়ে গেলেন। তারপর হন্তদন্ত সিঁড়ি ভেঙে ডি সি ডি ডি লাহিড়ি সায়েবের সঙ্গ ধরলেন। দুজন কনস্টেবল উঠছিল। তাদের ঠেলে ওপরে উঠে গেলেন।
পুরনো আমলের সব বাড়ির ছাদ বেজায় উঁচু। প্রথমে সেটা লক্ষ্য করিনি। এখন দেখলাম, আজকালকার হিসেবে দোতলাটা প্রায় তিন তলার সমান উঁচু। নাকি এতক্ষণে ঢুকতে যাচ্ছি বলে উত্তেজনায় আমার সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট হচ্ছিল?
দরজার সিল দেখে নিয়ে অফিসারটি সিল ছাড়িয়ে তালা খুললেন। একটা আশ্চর্য সুগন্ধ ভেসে এল। মনে পড়ে গেল গত রাতে ইন্দ্রজিতের পোশাক থেকে এই বিদেশি সুগন্ধ ছড়াচ্ছিল। লোকটা মুক্তোচোর হলেও শৌখিন ছিল। দামি বিদেশি সিগারেট খেত।
কনস্টেবলরা জানালাগুলো খুলে দিল। লক্ষ্য করলাম কর্নেল ঘরের ভেতরটা দেখছেন। একটা পুরনো নিচু খাটে সুন্দর বিছানা পাতা আছে। একটা টেবিল আর দুটো গদি আঁটা চেয়ার ছাড়া আসবাব নেই। দেয়ালে আঁটা ব্র্যাকেটে শার্ট-প্যান্ট ঝুলছে। টেবিলের ওপর জলের একটা গ্লাস আর জলভর্তি কাচের জগ। তলায় একটা ব্রিফকেস দেয়াল ঘেঁষে রাখা আছে। কর্নেল সেটা তুলে টেবিলে রাখলেন।
অরিজিৎ বাথরুমে উঁকি দিয়ে বললেন–একটা ভাঙা গ্লাস পড়ে আছে দেখছি!
অফিসারটি বললেন-দেখেছি স্যার! মদ ছিল ওতে। মদ খেতে খেতে ঝোঁকের মাথায়–মানে স্যার, ইট অ্যাপিয়ার্স সো।
–গ্লাসে মদ ছিল কি না আপনি সিওর?
–না স্যার! গন্ধ টের পেয়ে মদ মনে হয়েছে।
–গ্লাসের তলায় এখনও একটু আছে দেখছি। ওটা ফরেন্সিক টেস্টের জন্য পাঠানো উচিত ছিল।
–এখনই পাঠাচ্ছি স্যার!
রুমাল-টুমাল দিয়ে ধরুন গ্লাসটা। আঙুলের ছাপ টেস্ট করতে হবে।
অরিজিৎ বাথরুমে ঢুকে গেলেন। কর্নেল ব্রিফকেস খুলে ফেলেছেন ততক্ষণে। বললাম–চাবি দেওয়া ছিল না দেখছি।
-না থাকাই স্বাভাবিক। কর্নেল একটা ফাইল বের করে খুললেন। দেখে বললেন–নিউজপেপার কাটিংস! হুঁ, আজকের মর্নিং ফ্লাইটের এয়ার টিকেট আছে।
বলে ব্রিফকেসের ওপর প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। অরিজিৎ ডাকছিলেন–আসুন কর্নেল! ওসব পরে হচ্ছে।
কর্নেল ব্রিফকেস বন্ধ করে বাথরুমে গেলেন। আমিও গেলাম, যদিও কেমন একটা তীব্র অস্বস্তি বোধ করছিলাম। মনে হচ্ছিল, শাওয়ার পাইপ থেকে ঝুলন্ত ইন্দ্রজিৎ রায়কে অবিকল দেখতে পাচ্ছি।
অরিজিৎ কোমোডের দিকে আঙুল তুলে বললেন–এক টুকরো তুলো কোমোডের ভেতর পড়ে আছে। কর্নেল দেখে নিয়ে বললেন–হুঁ। তুলোই বটে।
অরিজিৎ গম্ভীর মুখে বললেন–ক্লোরোফর্ম। সিওর!
চমকে উঠলাম। তা হলে ক্লোরোফর্মে ভেজানো তুলো নাকে চেপে ধরে ইন্দ্রজিৎবাবুকে
কর্নেল থামিয়ে দিলেন আমাকে।–জয়ন্ত! অবভাসসতত্ত্বের কথা ভুলে যেও না। যা যেমনটি দেখাচ্ছে, তা তেমনটি নয়। যাই হোক, অরিজিৎ! এখানে আর কিছু দেখার নেই। তুলোটা মেথর ডেকে তুলে ফরেনসিক পাঠানো হোক। তোমাদের অফিসারকে বলে দাও, আর কী কী করতে চাও। ব্রিফকেসটাও থানায় নিয়ে যেতে বলো। তারপর এস তোমার সঙ্গে পরমেশবাবুর আলাপ করিয়ে দিই।
একটু পরে আমরা পরমেশবাবুর ঘরে গেলাম। কর্নেল তার এবং মিমির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন। মিমি আগের মতো পালঙ্কে বাজু আঁকড়ে ঝরে দাঁড়িয়ে রইল।
পরমেশ শ্বাস ছেড়ে বললেন–কী বুঝলেন আপনারা?
অরিজিৎ বললেন–সুইসাইড নয়, হোমিসাইড। স্রেফ খুন।
–হুঁ! ইন্দ্র বোঘোরে একদিন মারা পড়বে আমি জানতাম। কিন্তু আমারই বাড়িতে এসে মারা পড়ল! এখানেই আমার ফ্যামিলির প্রেসটিজে ঘা লেগেছে। কার এত সাহস হল? আমি পঙ্গু। কিন্তু পঙ্গু হলেও আমি বাঘ। কর্নেলসায়েব আমাকে জানেন। আমি চাই খুনী ধরা পড়ুক। সে জন্য আমি প্রপার্টি বেচতেও রাজি।
কর্নেল বললেন আপনি উত্তেজিত হবেন না। শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর দিন।
-বলুন!
–জুয়েলার হরনাথ চন্দ্রকে আপনি চেনেন?
-হরনাথ? পরমেশ আরও উত্তেজিত হয়ে উঠলেন।–এই তো গত মাসে এসেছিল।
-কেন?
পরমেশ তেতো মুখ করে বললেন–ইন্দ্র কলকাতা এসেছে কি না জানতে এসেছিল। ইন্দ্রের সঙ্গে ওর চেনা আছে শুনে আমার অবশ্য অবাক লাগেনি। ইন্দ্র একসময় ওদের অ্যাকাউন্ট্যান্ট ছিল। গালফে চন্দ্রদের কারবার আছে বলত।
কর্নেল উঠে দাঁড়িয়ে বললেন–ঠিক আছে। আমরা চলি পরমেশবাবু। আজ এ পর্যন্তই।…