২. গোঁসাই ডাকাতের বাগান বা গোঁসাইবাগান

গোঁসাই ডাকাতের বাগান বা গোঁসাইবাগান একটা বিশাল জঙ্গুলে জায়গা। জঙ্গলের মধ্যে একটা ভাঙা বাড়ি আছে, পুকুর আছে। আর আছে বুনো কুল আর বন-করমচার অজস্র গাছ। এরকম কুল আর কোথাও হয় না। দেখতে মটরদানার মতো ছোট, পাকলে ভারি মিষ্টি। কিন্তু জঙ্গলের মধ্যে এত সাপখোপ, বিছুটির গাছ আর কাঁটাঝোঁপ যে, বুনো কুল খাওয়ার লোক জোটে না। পাখি-পক্ষীতেই খেয়ে যায়। যে গাছগুলো একটু নাগালের মধ্যে, সে গাছের ফল ধরতে না ধরতেই ছেলেরা দল বেঁধে এসে খেয়ে যায়। ঝোঁপজঙ্গলের মধ্যে বেশি কেউ যেতে পারে না বলে পুকুরের দক্ষিণ দিকটায় অবশ্য কুলগাছের কুল যেমন-কে-তেমন থাকে। মরসুম ফুরোলে ফল পড়ে মাটিতে আরো গাছ জন্মায়। জঙ্গল বাড়ে।

বুরুনের মন খারাপ। আর মন খারাপ থাকলে কত কী কাণ্ড বাধাতে ইচ্ছে হয়। যেমন এখন তার ইচ্ছে হল যেমন করেই হোক ওই দুর্গম জায়গায় গিয়ে খুব নিরিবিলিতে চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থাকবে আর বুনো কুল খাবে। যদি সাপে কামড়ায়, তা হলে নাহয় মরবে। মরাই ভাল। যদি বিছুটি লাগে তো লাগুক। তার মনের মধ্যে যে অপমানের জ্বালা, তার চেয়ে বিছুটির জ্বালা আর এমন কী বেশি হবে।

বুরুন মনের দুঃখে বনে ঢুকল। ঢুকেই বুঝতে পারল, এই দুর্ভেদ্য জঙ্গল পার হয়ে বুনো কুলের কুঞ্জবনে পৌঁছনো অসম্ভব। কাঁটা বা বিছুটি গ্রাহ্য নাহয় না-ই করল, কিন্তু এগোবার পথ চাই তো। যেদিক দিয়েই যেতে চেষ্টা করে, সেদিকেই ডালপালার রোগা-রোগা হাত বাড়িয়ে গাছ-গাছালি তার পথ আটকে ধরে।

একমাত্র উপায় হচ্ছে টারজানের মতো বড় গাছে উঠে এক গাছ থেকে ডাল ধরে ঝুল খেয়ে অন্য গাছের ডাল ধরে এগিয়ে যাওয়া। যদি গাছ থেকে পড়ে যায় তো যাবে। সেটা এমন কিছু দুঃখের হবে না তার কাছে। বরং বাড়ির লোক ভাববে, আহা, বুরুনকে আমরা কত কষ্ট দিয়েছি।

গাছ বাইতে বুরুন ওস্তাদ। একটা শিরীষ গাছে সে বানরের মতো উঠে গেল। মাটির সঙ্গে সমান্তরাল একটা মোটা ডালের ওপর দিয়ে সে খানিক হেঁটে খানিক হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে পরের কদম গাছটার একটা ডাল ধরে ফেলল। মাটি থেকে প্রায় ত্রিশ হাত উঁচুতে। এগিয়ে যেতে তেমন কোনো বাধা হচ্ছিল না বুরুনের। কেউ কোথাও নেই। শুধু শীতের কনকনে বাতাস বইছে। রোদের রঙে লালচে আভা। গাছ-গাছালিতে অজস্র পাখি আর পতঙ্গের ওড়াউড়ির শব্দ।

গাছের ডালের ঘষায় হাত-পায়ের নুনছাল উঠে গিয়ে জ্বালা করছে। একটা নিমগাছে বসে বুরুন একটু জিরোলো। তারপর আবার ধীরে ধীরে এগোতে লাগল। পরিশ্রমে এই শীতেও ঘাম হচ্ছে। যত এগোচ্ছে, তো গাছপালা ঘন হচ্ছে। একেবারে গায়ে গায়ে সব গাছ। একটার ডালপালা অন্যটার ডালপালায় ঢুকে গেছে। এখন আর এক গাছ থেকে অন্য গাছে যেতে কষ্ট নেই। এক-একটা গাছে হেঁটমুণ্ডু হয়ে বাদুড়েরা ঝুলে আছে। কাঠবেরালী ডুমুর খাচ্ছে বসে। নীচের জঙ্গলে খড়মড় শব্দ করে একটা শজারু চলে গেল। বহু পাখির বাসা পার হল বুরুন। তার কোনোটাতে

পাখির ডিম রয়েছে, কোনোটায় কুষি কুষি পাখির ছানা তাকে দেখে আতঙ্কে কিচমিচ করে ওঠে।

কুলগাছের কুঞ্জবনে পৌঁছতে বুরুনের কষ্ট হল বটে, কিন্তু এ কাজ যে সে ছাড়া আর কেউ কখনো করতে পারেনি, তা ভেবে খুব একটা বাহাদুরির ভাবও এল মনে। একটা শিশু গাছের গা বেয়ে সে নীচের নিস্তব্ধ, নির্জন অন্ধকার জায়গাটায় আস্তে-আস্তে নামতে থাকে। নামবার মুখে ধরবার মতো নিচু ডাল ছিল না বলে তাকে প্রায় দশ হাত উঁচু থেকে লাফ দিয়ে নামতে হল। তবে নীচে পচা পাতার স্তূপ জমে গদির মতো হয়ে আছে, তাই বুরুনের ব্যথা লাগল না। ভুস করে পা দুটো ডেবে গেল শুধু, আর তলায় একটা কাঁটা বা কাঁচ যাই হোক তার পায়ে প্যাট করে বিঁধে গেল।

একটু ফাঁকায় এসে বুরুন মাটিতে বসে পায়ের তলাটা দেখছিল। তেমন কিছু নয়, একটা শামুকের ভাঙা খোল বিধেছে। তবে এসবে অভ্যাস আছে তার। শামুকের টুকরোটা বের করে একমুঠো দুব্বো তুলে ঘষে রসটা লাগিয়ে দিল। এ ওষুধ তার দাদুর শেখানো। দুব্বোর রসে অনেক অসুখ সারে, অনেক বিষ নষ্ট হয়।

দাদু তাকে অনেক কিছু শেখায়। মানুষের শরীরে রোজ এক রকমের বিষ তৈরি হচ্ছে, তাকে বলে টকসিন। এই বিষ জমে-জমে শরীরে নানা রোগের সূচনা করে। মাছ-মাংস খেলে টকসিনের পরিমাণ আরো বাড়ে। সেজন্য দাদু রোজ সকালে তাকে থানকুনি পাতার রস একটু আখের গুড় আর দুধ দিয়ে খাইয়ে অনেকখানি জল গিলিয়ে দেয়। তাতে টকসিন জমতে পারে না শরীরে। দাদু মাছ-মাংস খাওয়ার ঘোর বিরোধী। এই নিয়ে বাবার সঙ্গে দাদুর প্রায়ই তর্ক-বিতর্ক লেগে যায়। বাবা বলেন, প্রোটিনের জন্য মাছ-মাংস অতি প্রয়োজন। দাদু বলেন,

পশুপাখির শরীরের কোষ আর মানুষের শরীরের কোষে অনেক গরমিল বাবা। ও খেলে খটামটি লাগবেই।

বুরুন পায়ে ঘাসের রস লাগিয়ে উঠে দাঁড়াল। চারদিকে অসংখ্য গাছে মেঘের মতো ঘনিয়ে আছে থোকা-থোকা বুনো কুল, বন-করমচা। কয়েকটা চালতা গাছ থেকে পাকা চালতার গন্ধ আসছে। চারদিকে ডানার শব্দ তুলে পাখি উড়ছে, রঙিন পাখনায় ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রজাপতি। ভেজা মাটি, ঠাণ্ডা ছায়া আর নিস্তব্ধতায় জায়গাটা ঘোর হয়ে আছে।

এক থোকা বুনো কুল তুলে একটা কুল মুখে পুরেছে মাত্র, অমনি বুরুন দেখতে পেল, পুকুরের ওধারে লুঙ্গিপরা খালিগায়ে একটা লোক তার দিকে স্থির চোখে চেয়ে আছে।

অবাক হওয়ার কথা। পুকুরের চার ধারেই গহিন জঙ্গল। এ-পুকুরের ধারে কাছেও কেউ আসতে পারে না। জল অব্যবহারে পচে সবুজ হয়ে আছে। কচুরিপানা হয়নি বটে, কিন্তু খুদে শ্যাওলায় জল ছেয়ে গেছে। ঘাট ভাঙা, পাড়ে জঙ্গল, চারদিকে কাঁটা আর বিছুটির ঘন বন। এ-জঙ্গলে কাঠ কুড়োতেও কেউ আসে না। তবে এ-লোকটা এল কোত্থেকে?

বুরুনও তাকিয়ে ছিল। তার মনটা খারাপ। নইলে সে লোকটাকে দেখে চমকে যেত কিংবা ভয় পেত। কিন্তু মন এতই খারাপ যে, বুরুন আর কোনো কিছুকে ভয় পাচ্ছে না। কিছুতেই তার কিছু যায় আসে না আর।

বুরুন দেখল, লোকটা হঠাৎ পুকুরের ধার দিয়ে নেমে জলের ওপর পা রাখল। তারপর অনায়াসে জলের ওপর দিয়ে হেঁটে জোর কদমে চলে আসতে লাগল এদিকে। জলের ওপর কেউ হাঁটতে পারে, এ বুরুনের জানা ছিল না। দেখে সে অবাক। সায়েন্স তো একথা মানে না। গ্র্যাভিটেশনের নিয়ম আছে, স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি আছে। তবে?

যাই হোক, লোকটা কিন্তু হেঁটে চলে এল এপারে। পায়ের পাতাটাও ভেজেনি।

উঠে এসে লোকটা বড় বড় দাঁত বের করে হেসে বলল, “কি খোকা, ভয় পেয়েছ?”

বুরুন একটু অবাক হয়ে বলে, “ভয়? না, ভয় পাব কেন?

“পাওনি?” এবার লোকটাই অবাক।

“না, ভয় পাওয়ার কী আছে? আমি শুধু সায়েন্সের কথা ভাবছিলাম, মনে হল সায়েন্স এখনো অনেক কথা জানে না?”

“তা বটে।” বলে লোকটা একটু হেসে লোকে যেমন টুপি খোলে, ঠিক সেভাবে নিজের মাথাটা ঘাড় থেকে তুলে এনে হাতে নিয়ে একটু ঝেড়েঝুড়ে পরিষ্কার করল চাঁদির জায়গাটা, তারপর মুণ্ডুটা আবার যথাস্থানে লাগিয়ে বলল, “মাথায় খুব উকুন হয়েছে কিনা, তাই চুলকোচ্ছে।”

“ও।” বুরুন বলে।

লোকটা বিরক্ত হয়ে বলে, “কী ব্যাপার তোমার বল তো! এবারও যে বড় ভয় পেলে না?”

বুরুন কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, “আপনার মাথায় উকুন হয়েছে আর চুলকোচ্ছে বলে আমার ভয় পাওয়ার কী?”

লোকটা রেগে গিয়ে বলে, “তুমি ভাবছ আমি তোমার সঙ্গে ইয়ার্কি করছি?”

“তা ভাবব কেন?”

লোকটা কটমট করে খানিক বুরুনকে দেখে নিয়ে বলে, “ভাবছ ম্যাজিক করছি?”

“হতে পারে।”

লোকটা হঠাৎ ডান হাতটা ওপর দিকে তুলল। বুরুন দেখল, হাতটা লম্বা হয়ে একটা চালতা গাছের মগডালে চলে গেছে। পরমুহূর্তে একটা পাকা চালতা পেড়ে এনে লোকটা সেটা বুরুনের সামনে ফেলে দিয়ে বলল, “দেখলে?”

বুরুন বিরক্ত হয়ে বলে, “না দেখার কী? চোখের সামনেই তো পাড়লেন।”

লোকটা ধমকে উঠে বলে, “তবে ভয় পাচ্ছ না যে!”

“ভয় না পেলে কী করব?” এই বলে বুরুন থোকা থেকে কয়েকটা কুল ছিঁড়ে মুখে ফেলল।

লোকটা ভারি আঁশটে মুখ করে বলে, “লজ্জা করছে না কুল খেতে? চোখের সামনে জলজ্যান্ত আমাকে দেখতে পেয়েও নিশ্চিন্ত মনে কুল খাওয়া হচ্ছে? আরো দেখবে? অ্যা।”

বলে লোকটা হঠাৎ ডান হাত দিয়ে নিজের বাঁ হাতটা খুলে নিয়ে চারদিকে তলোয়ারের মতো ঘোরাতে লাগল; তারপর বাঁ হাত দিয়ে ডান হাত খুলে নিল। দুটো পা দু হাতে খুলে নিয়ে দেখাল। তারপর এবার অদৃশ্য হয়ে ফের হাজির হল। তেরো-চোদ্দ ফুট লম্বা হয়ে গেল, আবার হোমিওপ্যাথির শিশির মতো ছোট্ট হয়ে গেল। এসব করে হাঁফাতে-হাঁফাতে আবার আগের মতো হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “দেখলে?”

“হুঁ!”

“হুঁ মানে? এ-সব দেখার পরও মূর্ছা যাচ্ছ না যে! দৌড়ে পালাচ্ছ না যে! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কুল খেয়ে যাচ্ছ যে বড়! আমি কে জানো?”

“কে?”

“আমি গোসাঁই ডাকাতের বড় স্যাঙাৎ নিধিরাম। দুশো বছর ধরে এখানে আছি, বুঝলে? দুশো বছর।”

“বুঝলাম।”

“কী বুঝলে?”

বুরুন বিরক্ত হয়ে বলে, “এসব তো সোজা কথা। বোঝাবুঝির কী আছে! আপনি দুশো বছর ধরে এখানে আছেন।”

লোকটা একটু গম্ভীর হয়ে বলে, “তুমি বাপু তলিয়ে বুঝছ না। দুশো বছর কি কোনো মানুষ বেঁচে থাকে, বলো!”

“তা থাকে না।”

“তবে আমি আছি কী করে?”

“থাকলে আমি কী করব?”

লোকটা রেগে উঠে বলে, “তবু তুমি তলিয়ে বুঝছ না কিন্তু। আমি আসলে বেঁচে নেই।”

বুরুন আর একটা কুল মুখে দিয়ে বলে, “তাতে আমার কী?”

“ওঃ, খুবই চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলছ যে! ভূতকে ভয় পাও না, কেমনতরো বেয়াদব ছেলে হে তুমি!”

বুরুন বলল, “ভয় লাগছে না যে।”

এই কথা শুনে লোকটার চোয়াড়ে মুখটা ভারি করুণ হয়ে গেল। অসহায়ভাবে ছলছলে চোখে চেয়ে রইল বুরুনের দিকে। ফোঁত করে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, “একটুও ভয় লাগছে না?”

“না।”

নিধিরাম হাতের পিঠে চোখের জল মুছল বোধহয়। মনের দুঃখে তার নাকের ডগা কাঁপছিল। চোখ মুছে ধরা গলায় বলল, “তুমি আমাকে বড় মুশকিলে ফেললে দেখছি। এখন নিজেদের সমাজে আমি মুখ দেখাব কেমন করে বলো তো! গোঁসাই সদার শুনলে আমার গদান যাবে।”

বুরুন একটা ফুঃ শব্দ করে বলে, “আপনার আবার গদান যাওয়ার ভয়! মুণ্ডুটা তো একটু আগে ফুটবলের মতো হাতে ধরে রেখেছিলেন।”

লোকটা দুঃখের সঙ্গে বলে, “আমাদের নিয়ম অন্যরকম। কেউ যদি কোনো দোষ করে, তাহলে গোসাঁইবাবা তার মুণ্ডু কেড়ে রেখে দেন। তোমরা বলো ‘লজ্জায় মাথা কাটা গেল’; সে হল কথার কথা। আসলে তো আর মাথা কাটা যায় না। কিন্তু আমাদের সত্যি-সত্যিই মাথা কাটা যায়। আমাদের সমাজে সে বড় লজ্জার ব্যাপার। তুমি কি একটু চেষ্টা করে দেখবে নাকি খোকা, যদি একটু ভয়-টয় করতে পারো!”

বুরুন বলল, “না, সে হওয়ার নয়! আজ আমার মনটা ভাল নেই। মেজাজ খারাপ থাকলে আমার ভয়ডর থাকে না।”

লোকটা খুব আশান্বিত হয়ে বলে, “কেন, কেন, তোমার মন খারাপ কেন বলো তো! আমি তোমার মন-মেজাজ ভাল করবার জন্যে যা করতে বলবে তা-ই করব। কিন্তু কথা দিতে হবে যে, আমাকে একটু ভয় করবে।”

বুরুন নিশ্বাস ছেড়ে বলল, “সে হওয়ার নয়। আমি অঙ্কে তেরো পেয়েছি।”

লোকটা এক গাল হেসে বলে, “এই কথা। তা আমি তোমাকে সব অঙ্ক শিখিয়ে দেব। নয়তো পরীক্ষার সময় অদৃশ্য হয়ে গিয়ে তোমার অঙ্ক কষে দিয়ে আসব। তাহলে এবার একটু ভয় খাও,

অ্যাাঁ! লক্ষ্মী সোনা ছেলে!”

বুরুন আবার গুটি চারেক কুল মুখে দিয়ে বলে, “ভূতের কাছে। কেউ অঙ্ক শেখে? আমি আঁক শিখব করালী স্যারের কাছে।”

লোকটা খুব ভাবিত হয়ে বলে, “তাই তো! বড় বিপদ দেখছি। তোমার মন-মেজাজ ভাল করতে না-পারলে তো তুমি কিছুতেই ভয় পাবে না তাহলে। শোনোখোকা, আমি কিন্তু আরো কাণ্ড জানি। এক্ষুনি এমন মন্ত্র বলব যে শোঁ শোঁ করে ঝড় এসে যাবে, বিড়বিড়িয়ে শিলাবৃষ্টি পড়বে, কিংবা চাও তো দিনের আলোয় ঘোর অমাবস্যার অন্ধকার নামিয়ে আনতে পারি। সেই অন্ধকারে কঙ্কাল আর কবন্ধরা চারিদিকে ধেই-ধেই করে নাচবে।”

বুরুন অবহেলাভরে বলে, “যা খুশি করুন না, বারণ করছে। কে?”

“তবু ভয় পাবে না?”

“না।”

লোকটা মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে চোখের জল মুছতে মুছতে আপন মনে বলতে থাকে, “গোঁসাই বাবা আমাকে নীচের পোস্টে নামিয়ে দেবে, মাথা কেড়ে রেখে দেবে, কেউ আমাকে আর ভক্তি-শ্রদ্ধা করবে না।”

চারদিকে গাছ-গাছালি থেকে অশরীরীরা এতক্ষণ চুপচাপ কাণ্ড-কারখানা দেখছিল। এবার সবাই সুর করে বলে উঠল, “নিধিরাম দুয়ো! নিধিরাম দুয়ো! নিধিরাম দুয়ো!”

বুরুন ভারি বিরক্ত বোধ করে। এ জায়গাটাকে সে নিরিবিলি আর নির্জন বলে ভেবেছিল। এখন দেখল মোটেই তা নয়! চারদিকে খুব হতাশভাবে তাকিয়ে সে আবার একটা শিশুগাছে উঠে ডাল বেয়ে-বেয়ে ফিরে যেতে লাগল।

মেজাজটা আজ তার সত্যিই খারাপ।