২. গদাইবাবুর একদিন হঠাৎ মনে হল

গদাইবাবুর একদিন হঠাৎ মনে হল, চারদিকে বিজ্ঞানের এমন বাড়বাড়ন্ত হয়েছে যে, এ-যুগে বিজ্ঞান না-জানাটা খুবই খারাপ। অফিস থেকে ফিরে তিনি ছেলে টমটমকে ডেকে বললেন, “ওরে টমটম, এই বিজ্ঞানের যুগে বিজ্ঞান না জানলে তো কিছুই হবে না।”

টমটম মাথা চুলকে মিনমিন করে বলল, “কিন্তু বিজ্ঞান যে আমার মাথায় সেঁধোয় না।”

গদাইবাবু মাথা নেড়ে বললেন, “উঁহু, ওটা কাজের কথা নয়। বিজ্ঞানে তোমার আগ্রহ বাড়াতে হবে, বিজ্ঞানকে ভালবাসতে হবে। হাতে কলমে বিজ্ঞানচর্চা করলে আগ্রহ বাড়বে। দাঁড়াও। কালই বিজ্ঞানচর্চার জন্য জিনিসপত্র কিনে আনতে হবে।”

দুঃখের বিষয় গদাইবাবুও বিজ্ঞানের কিছুই জানেন না। বাড়িতে বিজ্ঞানচর্চা করতে হলে কী কী জিনিস লাগে এবং সেগুলো কোথা

থেকে পাওয়া যাবে তাও তিনি জানেন না। তবে সহজে দমবার পাত্র তিনি নন। ক্রমশ খোঁজ নিয়ে নিয়ে নানা দোকান ঘুরে তিনি জিনিসপত্র কিনতে লাগলেন।

মুর্গিহাটার একটা দোকানে দেখলেন সায়েন্স কিট বলে পলিথিনের সিল করা প্যাকেট রয়েছে।

“ওগুলো কী?”

দোকানদার মাথা নেড়ে বলে, “জানি না মশাই, এসব মাল হংকং থেকে আসে। কখনও খুলেও দেখি না। তবে শুনতে পাই ওর মধ্যে নানারকম পার্টস আছে। হাড় জুড়ে নানারকম জিনিস হয়। ব্যবহারবিধি ভিতরেই দেওয়া আছে।”

এক-একটা প্যাকেটের গায়ে এক-একটা নাম লেখা। জাম্পিং জো, ডুমস ডে, অটোমেটিক কার এইসব। একটা প্যাকেটের গায়ে লেখা মিস্টিরিয়াস মিস্টার পানচো।

দরদাম করে তিনি ‘পানচো’ লেখা প্যাকেটটা কিনে ফেললেন।

বাড়িতে এসে বাপ ব্যাটায় মিলে চিলেকোঠার ঘরটা সাফ করে ল্যাবরেটরি সাজিয়ে ফেললেন। বিজ্ঞানের মাস্টারমশাই হরবাবুকে ডেকে আনা হল। তিনি সব দেখেশুনে বললেন, “ভালই হয়েছে। আমিও মাঝে-মাঝেই এসে এক্সপেরিমেন্ট করতে পারব।”

ল্যাবরেটরি তৈরি হওয়ার পর সত্যিই টমটম আর গদাইবাবুর বিজ্ঞানে খুব মন হল। হরবাবু এসে নানারকম এক্সপেরিমেন্ট দেখিয়ে দিয়ে যান, বাপ ব্যাটায় মিলে সেগুলো করে ফেলতে লাগলেন।

এইভাবে ক’দিনের মধ্যেই দু’জনে বিজ্ঞানের অনেককিছুই জেনে ফেললেন।

একদিন টমটম বলল, “বাবা, ওই প্যাকেটটা কিন্তু খোলাই হয়নি। টেবিলের তলায় পড়ে আছে।”

গদাইবাবু বললেন, “তাই তো। তা হলে আয় খুলে দেখা যাক।”

প্যাকেটটা বেশ বড়। ওজনও কম নয়। একটা স্ট্রিপ দিয়ে প্যাকেটের মুখ আটকানো।

প্যাকেট খুলে দেখা গেল, তাতে ছোট বড় নানারকম যন্ত্রাংশ রয়েছে। নির্দেশাবলীর একখানা ছাপা কাগজও রয়েছে সঙ্গে। তাতে লেখা, মিস্টিরিয়াস মিস্টার পানচো সম্পর্কে আমরা আগেভাগে কিছুই বলতে পারব না। সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে যাওয়ার পর মিস্টার পানচোকে দিয়ে কী কাজ হবে সে সম্পর্কেও আমরা নিশ্চিত নই। এটি সম্পূর্ণ পরীক্ষামূলক একটি যন্ত্র। এ দিয়ে ভালও হতে পারে, মন্দও হতে পারে।

কীভাবে মিস্টার পানচোকে তৈরি করা যাবে তার একটা ক্রম দেওয়া আছে।

যন্ত্রটি রহস্যময় বলেই গদাইবাবু এবং টমটম আরও উৎসাহ পেয়ে গেলেন।

সন্ধেবেলা যন্ত্রটা বানাতে বসবার কিছুক্ষণ পরই বোঝা গেল, যন্ত্রাংশগুলি খুবই জটিল। লাগানো বড় সোজা কথা নয়। সবচেয়ে বড় অংশটা একটা ব্যারেল বা পিপের মতো জিনিস। সেটা সিল করা। তার গায়ে নানারকম সকেট আর পয়েন্ট রয়েছে, যাতে

অন্যান্য জিনিস জোড়া হবে।

দুজনে মিলে ঘণ্টা-দুয়েকের চেষ্টায় মোটে তিন-চারটে জিনিস ঠিকমতো জুড়তে পারলেন। রাতের খাওয়ার ডাক আসায় কাজটা আর শেষ হল না।

পরদিন সকালে আবার বাপ-ব্যাটায় গিয়ে চিলেকোঠায় ঢুকলেন বাকি অংশগুলো জুড়তে। গিয়ে যা দেখলেন তাতে তাঁদের চক্ষুস্থির। যন্ত্রাংশগুলো কে যেন ইতিমধ্যেই জুড়ে দিয়েছে।

এটা কার কাজ তা বুঝতে না পেরে গদাইবাবু খুব রেগে গেলেন এবং বাড়ির অন্যান্য লোকদের বকাবকি করলেন। কিন্তু কে লাগিয়েছে তা ধরা গেল না।

টমটম অবশ্য নির্দেশ মিলিয়ে দেখে বলল, “বাবা, পার্টসগুলো কিন্তু ঠিক-ঠিকই লাগানো হয়েছে। যে-ই লাগাক সে আনাড়ির মতো কাজ করেনি।”

একথা শুনে গদাইবাবু একটু ঠাণ্ডা হলেন। তারপর জিনিসটা দেখতে লাগলেন।

মিস্টিরিয়াস মিস্টার পানচো এককথায় একটি বিতিকিচ্ছিরি চেহারার জিনিস। ব্যারেল বা ঢোলটাই হল তার ধড়। দু’খানা হাতের মতো জিনিস আছে, দু’খানা পায়ের মতোও জিনিস আছে, চাকাও আছে, একটি লেজ আছে। তবে মাথা নেই, তার বদলে একটা ডিসক অ্যান্টেনার মতো জিনিস লাগানো। সব মিলিয়ে বিদঘুঁটে।

গদাইবাবু যন্ত্রটার নানা অংশ নেড়েচেড়ে দেখলেন। কোনও ঘটনা ঘটল না। যন্ত্রটা নড়াচড়া করে উঠল না, কোনও শব্দটব্দও কিছু হল না।

টমটম বলল, “এটা দিয়ে কী হবে বাবা?”

গদাইবাবু ঠোঁট উলটে বললেন, “কী জানি বাবা। কিছুই বোধ হয় হবে না। মিস্টিরিয়াস মিস্টার পানচো মিস্টিরিয়াসই থেকে যাবে মনে হচ্ছে। টাকাগুলোই গচ্চা গেল।”

টমটমও হতাশ হয়ে বলল, “খানিকটা মানুষ-মানুষ দেখাচ্ছে বটে, কিন্তু এটা দিয়ে পুতুল-খেলাও যায় না।”

সুতরাং মিস্টার পানচোকে চিলেকোঠার একটি কুলুঙ্গিতে তুলে রাখা হল। তার কথা আর কারও তেমন মনে রইল না।

পরদিন সকালে বাড়ির গিন্নি বললেন, “রাতে আমাদের বাড়িতে কিন্তু চোর এসেছিল।”

গদাইবাবু বললেন, “চোর এসেছিল! কীরকম?”

“তা কি আমি দেখেছি? মনে হচ্ছে পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে ছাদের দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকবার চেষ্টা করছিল। ছাদে হাঁটাহাঁটির শব্দ পেয়েছি।”

“তা হলে ডাকোনি কেন?”

“আজকাল চোরদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র থাকে। তোমাকে ডাকলে তুমি তো ঘুমের চোখে চোর ধরতে ছুটতে, ছোরা বসিয়ে দিলে বা গুলি করলে কী হত? তাই ডাকিনি। তবে চোর বেশিক্ষণ ছিল না। দু-তিন মিনিট বাদেই হাঁটাহাঁটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।”

গদাইবাবু মিস্তিরি ডাকিয়ে ছাদের দরজাটা আরও মজবুত করলেন তো বটেই, একটা কোলাপসিবল গেটও বসিয়ে দিলেন। আরও সতর্কতার জন্য একটা কুকুরও নিয়ে এলেন কিনে। বাচ্চা অ্যালসেশিয়ান, তবে বেশ চালাক-চতুর।

সেই রাতেই ফের চোর এল এবং বিশেষ গভীর রাতেও নয়। রাত বারোটা নাগাদ প্রথম কুকুরটা ঘেউ-ঘেউ করে তেড়ে গেল সিঁড়ি দিয়ে ছাদের দিকে। তারপর ছাদে শব্দও পাওয়া গেল। ঠিক পায়ের শব্দ নয়। অনেকটা যেন কিছু গড়িয়ে যাওয়ার শব্দ।

গদাইবাবু সাহসী লোক। তিনি কারও বারণ না শুনে টর্চ আর পিস্তল নিয়ে ছাদে উঠলেন। কোথাও কিছু দেখা গেল না। চিলেকোঠার তালা খুলে দেখলেন, সবই ঠিক আছে। এমনকী, কুলুঙ্গিতে পানচো অবধি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

ফিরে এসে গদাইবাবু বললেন, “ও আমাদের শোনার ভুল।” গিন্নি বললেন, “আমাদের ভুল হতে পারে, কিন্তু কুকুরের ভুল হয়

গদাইবাবু গম্ভীর হয়ে বললেন, “কুকুর যতই চালাক হোক, সে মানুষের চেয়ে ইতর প্রাণী। মানুষের যদি ভুল হতে পারে কুকুরের হতে বাধা কোথায়?”

এই নিয়ে একটা তকাতর্কি হল বটে, কিন্তু রহস্যটার সমাধান হল না।

গদাইবাবুর টমটম ছাড়াও আরও তিন ছেলেমেয়ে। সবচেয়ে ছোটটি মেয়ে, বয়স মাত্র সাত মাস। সেদিন গদাইবাবু অফিসে আর ছেলেমেয়েরা যে যার স্কুলে গেছে। ঘোট মেয়েকে বিছানায় ঘুম পাড়িয়ে রেখে গদাই-গিন্নি রান্নাঘরে ব্যস্ত রয়েছেন। বাচ্চা কাজের মেয়ে বকুল গিন্নিমার সঙ্গে টুকটাক কাজ করছে। এমন সময়ে বাচ্চাটা কেঁদে উঠল।

মেয়েটা পাছে গড়িয়ে খাট থেকে পড়ে যায় সেজন্য মোটা পাশবালিশ দেওয়া আছে দু দিকে। তা ছাড়া মশারিও আছে। মেয়ে কাঁদছে শুনে গদাই-গিন্নি তাড়াতাড়ি হাতের কাজ সারছিলেন। সারতে সারতেই শুনতে পেলেন কান্না থামিয়ে মেয়ে যেন কার সঙ্গে ‘অ অ করে খুব কথা বলছে। হাসছেও।

ঘরে এসে যা দেখেন তাতে তাঁর চক্ষুস্থির। মেঝের ওপর মাদুর পাতা, তার ওপর মেয়ে গ্যাঁট হয়ে বসে আছে। চারদিকে পুতুল বল খেলনাগাড়ি সাজানো। মেয়েকে বিছানা থেকে কে নামাল, কে মাদুর পাতল, কে খেলনা নামিয়ে দিল তা বুঝতে না পেরে বিস্ময়ে তিনি হাঁ হয়ে রইলেন।

বাড়িতে কোনও লোক নেই, তিনি আর বকুল ছাড়া। তবু তন্ন-তন্ন করে খুঁজে দেখলেন।

গদাইবাবু বাড়ি ফিরলে গিন্নি হাঁউমাউ করে কেঁদে উঠে বললেন, “বাড়িতে ভূতের উপদ্রব শুরু হয়েছে।”

গদাইবাবু সব শুনে বললেন, “চোরের পর তোমার মাথায় আবার ভূতের বায়ু চাপল? আরে, এ হচ্ছে বিজ্ঞানের যুগ। ভূত-টুত এ-যুগে অচল। ওসব নয়। পাড়া-প্রতিবেশীদের কেউ চুপি-চুপি এসে একাণ্ড করে গেছে, তোমাকে একটু বোকা বানানোর জন্য।”

“অসম্ভব। সদর-দরজা আমি নিজে হাতে ডবল ছিটকিনি দিয়ে বন্ধ করেছিলাম। খিড়কির দোরেও হুড়কো দেওয়া ছিল।”

গাইবাবু আর বিজ্ঞান কপচানোর সাহস পেলেন না। তবে ঘটনাটা নিয়ে মাথা ঘামালেন না তেমন।

সন্ধেবেলা রোজকার মতো ছেলেকে নিয়ে তিনি ল্যাবরেটরিতে এলেন এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য। আজ তিনি ভ্যানিশিং ক্রিম, শ্যাম্পু আর কলিং বেল তৈরি করে সবাইকে অবাক করে দেবেন বলে জিনিসপত্র সব সাজিয়েই রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু ল্যাবরেটরিতে ঢুকে খুব তাজ্জব হয়ে দেখলেন, কে বা কারা ইতিমধ্যেই এসে ভ্যানিশিং ক্রিম, শ্যাম্পু এবং কলিং বেল তৈরি করে রেখে গেছে। আর জিনিসগুলো হয়েছেও বেশ উঁচু মানের।

“এ কী রে টমটম, এসব করল কে! তুই নাকি?”

টমটমও ভীষণ অবাক। মাথা নেড়ে বলল, “না তো বাবা। স্কুল থেকে এসে আমি ত ক্রিকেট খেলছিলাম। একটু আগে ফিরেছি।”

“তা হলে ল্যাবরেটরিতে কে ঢুকেছিল তালা খুলে?”

বেশ চিন্তিতভাবে গদাইবাবু আর টমটম বসে ছিল, এমন সময় বকুল এসে খবর দিল, পাড়ার দু’জন তোক দেখা করতে এসেছে।

গদাইবাবু নীচে নেমে এসে দেখেন পাশের বাড়ির গগন রায় আর আর-একজন প্রতিবেশী কানু বোস।

গগনবাবু বললেন, “তা ভায়া, তুমি তো বেশ দিব্যি একটা জেনারেটর কিনেছ। পাড়ায় লোডশেডিং আর তোমার বাড়িতে সব ঘরে আলো ঝলমল করছে।”

গদাইবাবু হাঁ হয়ে বললেন, “লোডশেডিং! জেনারেটর! না তো, আমি তো জেনারেটর কিনিনি। একটা ইনভাটার ছিল, তা তারও ব্যাটারিটা কদিন আগে ডাউন হয়ে গেছে।”

গগনবাবু অবাক হয়ে বললেন, “তা হলে আলো-টালো জ্বলছে। কিসে?”

গদাইবাবু বাইরে উঁকি মেরে দেখলেন, বাস্তবিকই পাড়ায় লোড়শেডিং চলছে। কিন্তু তাঁর বাড়িতে ঝলমল করছে আলো। তিনি মাথা চলকে বললেন, “মনে হচ্ছে কোনও হট লাইনের সঙ্গে আমার বাড়ির একটা অ্যাকসিডেন্টাল কানেকশন হয়ে গেছে।”

মুখে গদাইবাবু যা-ই বলুন তাঁর মন সে কথা বলছে না।

প্রতিবেশীরা চলে যাওয়ার পর তিনি কিছুক্ষণ গুম হয়ে বসে রইলেন।

বায়ু বেশ চড়ে যাওয়ায় রাত্তিরে ভাল ঘুম হল না গদাইবাবুর। বারবার এপাশ ওপাশ করতে লাগলেন। রাত তিনটের সময় হঠাৎ রান্নাঘরে একটা খুটখাট শব্দ পেয়ে তিনি ঝপ করে উঠে পড়লেন। হাতে টর্চ আর পিস্তল। পা টিপে টিপে রান্নাঘরের দরজায় গিয়ে তিনি দেখলেন, আলো জ্বলছে। ভিতরে কেউ নেই। কিন্তু খুবই আশ্চর্যের বিষয়, এক কাপ গরম চা সাজানো রয়েছে।

গদাইবাবুর চোখের পলক পড়ছিল না। রাত জাগার ফলে তাঁর ভিতরে একটা চা খাওয়ার ইচ্ছে যে চাগাড় দিয়েছে তা এতক্ষণ তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি। চা দেখে বুঝলেন, এখন তাঁর এই জিনিসটিই সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল।

চা তিনি নিলেন এবং চুমুকও দিলেন। তারপর বিড়বিড় করে বললেন, “ভূতের চা বাবা, খেয়ে না আবার কোনও গণ্ডগোলে পড়ি। তবে উপকারী ভূত, এইটেই যা সান্ত্বনা।”

কিন্তু এই বিজ্ঞানের যুগে ভূতকেই বা মানেন কী করে গদাইবাবু? যতই ভূতুড়ে কাণ্ড হোক তার পিছনে একটা বৈজ্ঞানিক কারণ থাকবেই থাকবে। বিজ্ঞান ছাড়া কিছুই ঘটছে না।

চা খুবই ভাল হয়েছে। চা খেয়েই তাঁর বেশ ফুরফুরে লাগল এবং ঘুমও পেল। তিনি বিছানায় শুয়ে অঘোর ঘুমে ঢলে পড়লেন।

পরদিন বিকেলে যে কাণ্ড ঘটল তার জন্য অবশ্য কেউই প্রস্তুত ছিলেন না। পরদিনও সন্ধেবেলায় চারদিকে লোডশেডিং এবং যথারীতি গদাইবাবুর বাড়িতে আলো জ্বলছে। পাড়ার দু-চারজন ব্যাপারটা দেখতে এসেছেন।

পটলবাবু বললেন, “নাঃ গদাইবাবু, আপনার কপালটা বড্ডই ভাল। ইলেকট্রিক কোম্পানির ভুলে আপনি দিব্যি লোডশেডিং-এর হাত থেকে রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন।”

গদাইবাবু খুব ম্লান একটু হাসলেন।

বাইরের ঘরে টিভি চলছে, তাতে বাচ্চাদের কীসব প্রোগ্রাম দেখানো হচ্ছে।

হঠাৎ শান্তিবাবু বললেন, “আরে! দেখুন তো, এটা টিভিতে কী দেখাচ্ছে! এ তো আমাদের দেশের প্রোগ্রাম নয়।”

সবাই অবাক হয়ে দেখলেন, গদাইবাবুর সাদা কালো টিভির পরদায় রঙিন ছবি আসছে। আমেরিকার এন বি সি’র নিউজ চ্যানেলে একজন শ্বেতাঙ্গ খবর পড়ছেন।

গগনবাবু বলে উঠলেন, “গদাই, তোমার তো রঙিন টিভি ছিল! কবে কিনলে?”

গদাইবাবু আমতা আমতা করে বললেন, “এই আর কি।”

শান্তিবাবু বলে উঠলেন, “কিন্তু এইমাত্র যে সাদা-কালো ছবিই দেখা যাচ্ছিল।”

গাইবাবু একথাটা না-শুনবার ভান করলেন। কারণ আসল কথাটা হল তাঁর রঙিন টিভি নেই। অথচ চোখের সামনে তাঁর সাদা-কালো টিভিতে দিব্যি বাহারি রঙের ছবি দেখা যাচ্ছে। আর প্রোগ্রামটা দেখার মতো। এন বি সি নিউজ। এন বি সি .যে আমেরিকার একটি সংস্থা তা তিনি ভালই জানেন।

শান্তিবাব বললেন, “হয়তো হতেও পারে যে, আমেরিকার প্রোগ্রাম এখান থেকে রিলে করে দেখানো হচ্ছে। পাড়ায় লোডশেডিং না হলে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যেত আশপাশের বাড়িতে।”

গদাইবাবু চুপ করে রইলেন, কারণ তিনি নিজেও বেশ ব্যোমকে গেছেন।

যাই হোক, সবাই মিলে টিভির এই নতুন ধরনের প্রোগ্রামটা মন দিয়েই দেখতে লাগলেন। হঠাৎ খবরে বলল, “এখন তোমাদের কাছে আমরা একটি অদ্ভুত শিশুকে হাজির করছি। ছেলেটির নাম বনি। এ হল বাবুরাম আর প্রতিভা নামক একটি ভারতীয় দম্পতির শিশুপুত্র। এ-ছেলেটির শরীর অসাড়, সে শব্দ করে না, কাঁদে না, হাসে না, কিন্তু ডাক্তার ক্রিল বলেছেন, ছেলেটির মস্তিষ্ক খুবই উন্নত মানের। এরকম শিশু পৃথিবীতে দুর্লভ।”

খবরের সঙ্গে-সঙ্গে একটি শিশুর ছবি টিভিতে দেখানো হল। ভারী সুন্দর চেহারা বাচ্চাটার। কিন্তু সে অসাড়।

গদাইবাবু এসব দেখছেন আর সকলের অলক্ষে চোখ কচলাচ্ছেন, নিজের গায়ে চিমটিও কাটছেন। স্বপ্ন দেখছেন কি না বুঝতে পারছেন না। নাকি পাগল হয়ে গেলেন? লোডশেডিং-এর মধ্যে ঘরে আলো জ্বলছে, সাদাকালো টিভিতে রঙিন ছবি দেখা যাচ্ছে, কলকাতায় বসে আমেরিকার এন বি সি’র খবর শুনছেন–এসবের মানে কী?

হঠাৎ টিভির ছবি পালটে গেল। দেখা গেল হংকং থেকে এক ভদ্রমহিলা খবর পড়ছেন। তিনি খবরের যে অংশটা পড়ছিলেন তাতে জানা গেল, সম্প্রতি চিন থেকে নাকি একজন বৈজ্ঞানিক অনেক কষ্টে তাইওয়ানে পালিয়ে এসেছেন। তাঁর নাম ডাক্তার ওয়াং। তিনি নাকি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন। কিন্তু তাঁর দেশের বৈজ্ঞানিক অকাঁদেমি সেই আবিষ্কারটি তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান। তিনি সেই দাবি মানেননি। ফলে তাঁকে গ্রেফতার করার হুমকি দেওয়া হয়। তিনি কয়েকজন বন্ধুর সাহায্যে তাঁর আবিষ্কারটি নিয়ে পালিয়ে আসেন।

টিভির পরদায় ডাক্তার ওয়াংকে দেখা গেল। বেঁটে-খাটো মাঝবয়সী একজন লোক। চেহারাটা দেখে হাসিই পায়। যেন কুমড়োপটাশ। চোখমুখে আতঙ্ক। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, “ডাক্তার ওয়াং, আপনি কোন কৌশলে পালালেন?”

ওয়াং রুমালে মুখ মুছতে-মুছতে বললেন, “আমাদের দেশে একরকম ভেষজ আছে, তার নাম জিন সেং। সেটা খুব রফতানি হয় বড়বড় প্যাকিং বাক্সে। ওরকমই একটা প্যাকিং বাক্সের মধ্যে আমি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ঢুকে পড়ি, আমার আবিষ্কারটি সঙ্গে ছিল। তাইওয়ানে এসে পৌঁছতে আমার কোনও অসুবিধে হয়নি। কিন্তু এ-দেশটা আরও বিচ্ছিরি।”

“কেন ডাক্তার ওয়াং? হংকং তো খুব উন্নত শহর?”

“শহর উন্নত হলে কী হবে? এদেশে আসবার সঙ্গেসঙ্গেই আমার আবিষ্কার চুরি হয়ে যায়। সেই থেকে আমার রাতে ঘুম নেই, ভাল করে খেতে পারি না…”

বলতে বলতে ওয়াং রুমালে মুখ ঢেকে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। চিনা বা জাপানিরা সহজে কাঁদে না। কান্না তাদের ধাতেই নেই। এমনকী ওসব দেশে বাচ্চাদেরও খুবই কম কাঁদতে দেখা যায়। সুতরাং, বোঝা গেল, ডাক্তার ওয়াং খুবই মনোকষ্টে আছেন।

“আপনার আবিষ্কারটি ঠিক কী ধরনের তা কি একটু দয়া করে বলবেন?”

ডাক্তার ওয়াং চোখ মুছে বিষণ্ণ মুখে মাথা নেড়ে বললেন, “আবিষ্কারটি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। হলে সারা পৃথিবীতে হইচই পড়ে যাবে। তবে ও-বিষয়ে আমি খোলাখুলি কিছুই বলব না। তা হলে যারা জিনিসটা চুরি করেছে তারা জো পেয়ে যাবে।”

“আবিষ্কারটি কী এমন যা আনাড়ির হাতে পড়লে ক্ষতি হতে পারে?”

“খুবই পারে। অসাবধানে ওটি ঘাঁটাঘাঁটি করলে সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড হয়ে যেতে পারে। সেসব কাণ্ডের কথা আর না-ই বা বললাম।”

“কীভাবে ওটি চুরি গেল তা একটু বলুন।”

“তাইওয়ানে আসার পর আমি একটি হোটেলে ছিলাম। হংকং-এর একটি বড় হোটেল। ঘর থেকে আমি বড় একটা বেরোতুম না। নিজের পরিচয়ও কাউকে দিতাম না। সারাদিন হোটেলের ঘরে নিজের বৈজ্ঞানিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতাম। তবে হোটলের কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা পছন্দ করেনি। হোটেলের ঘরে বিজ্ঞানচর্চা তারা আমাকে করতে বারণ করে। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার ঘর ফাঁকা, সব যন্ত্রপাতি হাওয়া, সেইসঙ্গে আমার সব মালপত্রও। আমি চেঁচামেচি হইচই বাধিয়ে দিই। প্রথমে সন্দেহ হয়েছিল, হোটেলওয়ালাই চুরিটা করিয়েছে আমাকে তাড়ানোর জন্য। পরে পুলিশ আসে এবং তারা নানারকম তদন্ত করে আমাকে জানায়, এটা বাইরের লোকের কাজ। এই হোটেলের খুবই সুনাম আছে, এখান থেকে কারও কিছু চুরি যায়নি কখনও।”

“আপনার কাকে সন্দেহ হয় ডাক্তার ওয়াং?”

“দেখুন, আমি পরিচয় না দিলেও বিশ্ব-দুনিয়ায় বৈজ্ঞানিক মহলে। সবাই আমায় চেনে। আমার ছবি পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞান জানালে বেরোয়। আমার সন্দেহ, হংকং-এ আমাকে কেউ চিনতে পেরেছে এবং সে আমার আবিষ্কারের কথাও জানে। সম্ভবত আমার রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়ে চুরিটা করা হয়েছে।”

“আপনি এখন কী করবেন?”

ডাক্তার ওয়াং অত্যন্ত উত্তেজিতভাবে মষ্টিবদ্ধ হাত শন্যে ঘঁসি মারার ভঙ্গিতে ছুঁড়ে বললেন, “চোরদের আমি ছেড়ে দেব না। আমি সারা দুনিয়া চষে বেড়িয়ে আমার আবিষ্কারটি খুঁজব, চোরদের এমন শাস্তি দেব যে, তারা চিরদিন মনে রাখবে।”

এর পরই টিভিতে আবার কলকাতার প্রোগ্রাম চলে এল।

শান্তিবাবু বললেন, “গদাইবাবুর বাড়িতে এসে আজ অনেক লাভ হল। ফাঁকতালে আমেরিকা আর হংকং-এর খবর পেয়ে গেলুম।”

পাড়াপ্রতিবেশীরা বিদায় নেওয়ার পর গদাইবাবু খুব ভাল করে তার টিভি সেটটা লক্ষ করলেন। সেই পুরনো সেটটাই রয়েছে, কেউ বদলে দিয়ে যায়নি। টমটমকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, “হ্যাঁ রে, এর মধ্যে কি কোনও মিস্ত্রি এসে আমাদের টিভি সেটটা মেরামত করেছে?

“না তো! আমার কি মনে হয় জানো বাবা? আমার মনে হয় আমাদের বাড়ির কোনও একটা ভালমানুষ ভূত এসে বাসা করেছে।”

গদাইবাবু অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে বললেন, “ভূত বলে কিছু নেই। সবই বিজ্ঞান।”

তা হলে লোডশেডিং-এর মধ্যে আলো জ্বলছে কী করে? টিভিটা রঙিন হল কী করে?”

গদাইবাবু মুখে কিছু বললেন না, কিন্তু তাঁর মনেও নানা প্রশ্নের উদয় হচ্ছে, সেদিন মাঝরাতে চা করে দিল কে? বাচ্চা মেয়েটাকে খাট থেকে নামিয়ে মাদুর পেতে বসাল কে? এই সব কী হচ্ছে? অ্যাঁ! ভূত তিনি মুখে না মানুন, কিন্তু মনের মধ্যে বেশ একটা ভূত-ভূত ভয় যে না হচ্ছে এমন নয়। কিন্তু এই বিজ্ঞানের যুগে। ভূতকে স্বীকারই বা তিনি করেন কী করে?

রাত্রিবেলা গদাইবাবুর ঘুম হচ্ছিল না। নানা কথা ভেবে মাথাটা গরম। হঠাৎ তাঁর মনে হল, নিশুত রাতে কে বা কারা যেন রেডিও বা বেতারযন্ত্র চালু করেছে। তিনি নানারকম ধাতব কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছিলেন। গদাইবাবু টর্চ আর লাঠি নিয়ে উঠলেন এবং সব ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিলেন। রেডিওটার কাছে গিয়ে দেখলেন, সেটা থেকেই শব্দ আসছে। কোন কেন্দ্র থেকে কথা আসছে তা বুঝতে পারলেন না, তবে ভাষাটা চিনা বা জাপানি হতে পারে। কিছুক্ষণ শুনে বুঝলেন এটা কোনও বেতারকেন্দ্রের অনুষ্ঠান নয়। একজন যেন আর-একজনের সঙ্গে বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে কথা বলছে। আরও কিছুক্ষণ শুনবার পর তাঁর মনে হল, এটা একটা লং ডিসট্যান্স টেলিফোন কল। তাঁর রেডিও ওই কলটাকে মনিটর করছে। গদাইবাবুর ছোট্ট ট্রানজিস্টর রেডিও খুবই কমজোরি যন্ত্র। দামেও শস্তা। সাধারণত কলকাতা কেন্দ্রেরই অনুষ্ঠান স্পষ্ট শোনা যায়। ব্যাটারিটাও পুরনো হয়েছে। এই রেডিওতে এসব ব্যাপার হওয়ার কথাই নয়।

হঠাৎ গদাইবাবুর মাথায় চিড়িক করে একটা বুদ্ধি খেলে গেল। তিনি তাড়াতাড়ি তাঁর টেপরেকর্ডারটা এনে রেডিওর কথাগুলো রেকর্ড করতে লাগলেন। তাঁর মনে হচ্ছিল এই দুটি লোকের কথার মধ্যে কোনও একটা রহস্য থাকলেও থাকতে পারে। রেকর্ড করার আরও একটা কারণ ছিল। কথাবাতার মধ্যে তিনি বারবার ডাক্তার ওয়াং-এর নাম উচ্চারিত হতে শুনতে পেয়েছিলেন।

বেন্টিং স্ট্রিটের একটা চিনে দোকান থেকে বহুঁকাল ধরে জুতো কেনেন গদাইবাবু। চেনা দোকান। লোকটা তাঁকে খাতিরও করে। পরদিন অফিসের পর তিনি সোজা গিয়ে সেই দোকানের চিনা মালিককে ধরলেন, এই ক্যাসেটের কথাবাতাগুলোর অর্থ বলে দিতে হবে। মনে হচ্ছে ভাষাটা চিনা।

লোকটা খুব খাতির করে দোকানের পিছন দিকে একটা ছোট্ট ঘরে। নিয়ে গদাইবাবুকে বসাল তারপর তার ছেলেকে ডেকে বলল, “তোমার ওয়াকম্যানটা নিয়ে এসো।”

ওয়াকম্যান এলে লোকটা কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে মন দিয়ে কথাবাতাগুলো শুনে বলল, “গদাইবাবু, ভাষাটা ক্যান্টোনিজ চিনা। মনে হচ্ছে দুটো পাজি লোক কোনও শলাপরামর্শ করছে। ডাক্তার ওয়াং কাল লন্ডন রওনা হচ্ছেন, সেখানে যেন তাঁকে রিসিভ করা হয়। সেকথাই বলছে। আর একটা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কথাও আছে। আর আছে পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার দামের কথাও। কিসের দাম তা অবশ্য আমি বুঝতে পারছি না।”

“লোক দুটোকে তোমার পাজি বলে মনে হচ্ছে কেন?”

“ওদের কথাবার্তায় একটা লোককে খতম করে দেওয়ার প্রসঙ্গও আছে। তবে খুব স্পষ্ট করে নয়। যাই হোক, এরা যে ভাল লোক নয় তা বুঝতে কষ্ট হয় না। লোক চরিয়েই আমি বুড়ো হলুম।”

ক্যাসেটটা নিয়ে গদাইবাবু বাড়ি ফিরে এলেন। এসে দেখলেন, পাড়ায় লোডশেডিং চলছে এবং তাঁর বাড়িতে যথারীতি ঝলমল করছে আলো। বাইরের ঘরে আজও গগনবাবু আর শান্তিবাবু এসে বসেছেন। টিভি চলছে। দেখানো হচ্ছে বি বি সি’র খবর। গদাইবাবু খুবই চিন্তিতভাবে বসে খবর শুনতে লাগলেন। খবরটা তাঁর কাছে বেশ গুরুতরই মনে হল। বি বি সি’র সংবাদপাঠক বললেন, “বিশ্ববিখ্যাত চিনা বৈজ্ঞানিক ডক্টর ওয়াং হংকং-এ মার্কিন দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। শীঘ্রই তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রওনা হবেন। যে আবিষ্কারকে নিয়ে তাঁর অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা হংকং থেকে চুরি হওয়ায় সারা বিশ্বে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই আবিষ্কার খুঁজে বের করতে আন্তজাতিক গোয়েন্দাবাহিনীর সাহায্য চাওয়া হয়েছে। তবে এই আবিষ্কারটি ঠিক কী বস্তু তা ডক্টর ওয়াং স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। ওদিকে চিনের তরফ থেকে ডক্টর ওয়াং-এর এই আচরণের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে।”