২. কোয়ারী হাউসের দিকে

১১.

এরকুল পোয়ারো কোয়ারী হাউসের দিকে মুখ তুলে তাকালো। রানী ভিক্টোরিয়া যুগের বাড়ি, প্রত্যেকটি ঘর মূল্যবান আসবাবপত্রে সাজানো।

সদর দরজার কলিং বেল বাজাতেই এক বৃদ্ধা মহিলা দরজা খুলে দিয়ে জানালো যে কর্নেল আর মিসেস ওয়েস্টন লণ্ডনে গেছেন, ফিরতে পরের সপ্তাহ হবে। কোয়ারী উড সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই সে জানালো বাগানটা জনসাধারণের জন্য বিনামূল্যে খুলে দেওয়া হয়েছে। রাস্তা ধরে পাঁচ মিনিট হাঁটলে প্রবেশ পথ পড়বে। লোহার গেট-এর গায়ে একটা নোটিশ বোর্ড আছে।

পোয়ারো সহজেই রাস্তার সন্ধান পেয়ে গেল। রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে গাছ আর ঝোঁপের মধ্যে দিয়ে সে নিচের দিকে নেমে এল।

এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। মনটা আনমনা হয়ে গেল। তার মনে পড়তে লাগলো একটা জাল উইল আর একটা মেয়ের কথা। সেই মেয়েটার নামে উইলটা জাল করা হয়েছিল। তারপর মেয়েটা বলা নেই কওয়া হঠাৎ উধাও হয়ে গেল। একজন পেশাদার শিল্পী এখানে এসেছিল অবিন্যস্ত পাথরের কোয়ারীতে একটা মনোমুগ্ধকর বাগানের রূপ দিতে। সেই শিল্পীর নাম মাইকেল গারফিল্ড।

কোয়ারী হাউসের লোকগুলোর কথা মনে পড়ল পোয়ারোর, নামগুলো জেনে নিয়েছে। বৃদ্ধ কর্নেল আর তার স্ত্রী থাকেন। এই বাড়িতে বর্তমানে যেই বাস করুন না কেন মিসেস লেওয়েলিন স্মিথের মতো ভালোবাসতে কেউ পারবে না। রাস্তায় হাঁটতে লাগলো পোয়ারো। কিছুদূর গিয়ে দেখা হলো স্থপতি-শিল্পী মাইকেল গারফিল্ড-এর সঙ্গে। বিচিত্র হাসি হেসে মাইকেল বললো, আপনাকে আমি চিনি। একজন কৃতি মানুষের অনুরোধে আপনি এখানে এসেছেন। রক্তের দাগ অনুসরণ করে আপনি এগোচ্ছেন।

হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছো। পোয়ারো মাইকেলকে জয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে তেমন কিছু খবর সংগ্রহ করতে পারলে না।

পোয়ারো সতর্ক পদে এগিয়ে চললো। কিছুদূর এসে দেখলো পথ তিনভাগে ভাগ হয়ে গেছে। সে মাঝের পথটা ধরে কিছুদূর এগিয়ে দেখলো একটা গাছের ডালের ওপরে তার অপেক্ষায় বসে আছে একটা মেয়ে।

মেয়েটা বললো, তুমি এরকুল পোয়ারো, তাই না?

হ্যাঁ, ওটাই আমার নাম।

মেয়েটার নাম মিরান্দা। মেয়েটি বললো, এখানে মানুষ খুব একটা আসে না, বোধ হয় ভয় পায়।

কেন ভয় পাবে কেন?

অনেকদিন আগে এখানে একজন মহিলা খুন হয়েছিলেন, তখন অবশ্য বাগান তৈরি হয়নি। পথেরের কোয়ারী ছিল, মৃত অবস্থায় তাকে সেখানে পাওয়া যায়। সেই পুরোন প্রবাদ বাক্য তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই–তুমি জন্মেছ ফাঁসিতে ঝোলার জন্য অথবা জলে ডোবার জন্য।

জয়েসাও জলে ডুবে মরেছে, মা আমাকে বলতে চায়নি, তবে ব্যাপারটা একেবারে বাজে। তোমারও কি তাই মনে হয় না।

জয়েসা তোমার বান্ধবী ছিল? জয়েসার খুন হওয়ার কথা তুমি কার কাছে শুনলে?

মিসেস পেরিংএর কাছে আমাদের রান্নার লোক। ঘর পরিষ্কার করতে আসে মিসেস মিনে, সে বলেছিল কে যেন জয়েসার মাথা এক গামলা জলের মধ্যে চেপে ধরেছিল।

কে ধরেছিল আন্দাজ করতে পার?

অত ভেবে দেখিনি, আমি তো পার্টিতে যাইনি। আমার জ্বর হয়েছিল বলে মা আমায় নিয়ে যায়নি। তবে চেষ্টা করলে জানতে পারি।

মিরান্দাকে অনুসরণ করে পোয়ারো একটা বাগানে ঢুকলো। একটা গোলাপ বাগান। পেছনের একটা দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। মেয়ের সঙ্গে মায়ের চেহারার যথেষ্ট মিল আছে। জুডিথ বাটলারের বয়স হবে পঁচিশের মতো। মেয়ের চেয়েও সুন্দরী।

জুডিথ হাসিমুখে বললো-মঁসিয়ে পোয়ারো, আরিয়াদের কথামতো এখানে এসেছেন। বলে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

মিসেস অলিভার কিছু করতে বললে অস্বীকার করতে পারি না-পোয়ারো বললো।

কি বাজে কথা বলছ!–মিসেস অলিভার প্রতিবাদের সুরে বলল।

ওঁর ধারণা যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে আপনি তার সমাধান করতে পারবেন।

জয়েসা যে খুন হয়েছে সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না।-পোয়ারো বলল।

 মিসেস অলিভার বলল, তুমি ইতিমধ্যেই হয়তো অনেক কিছু জেনেছে।

জুডিথ চা তৈরি করতে বসলো, মিরান্দা প্রত্যেকের প্লেটে কেক আর স্যাণ্ডউইচ পরিবেশন করলো।

চা পান করতে করতে নানাধরনের গল্প এবং আলোচনা চললো। কথায় কথায় জুডিথ বললো, আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে মঁসিয়ে পোয়ারো কেন জয়েসার নৃশংস পরিণতি ঘটলো। যতক্ষণ না জানতে পারা যাচ্ছে আমার বাচ্চার কথা ভেবে এক মুহূর্তের জন্য শান্তি পাব না।

বিদায় দেবার আগে পোয়ারো জানালো মেয়েকে সাবধানে রাখতে আর ও জানালো আগামী কাল মেলচেস্টারের মেসার্স ফুলার্টন হ্যারিসন আর লিডবেটার কোম্পানীর সঙ্গে সাক্ষাতের দিন ধার্য করা হয়েছে উইল জাল আর কয়েকটা বিষয়ে কথা বলার জন্য।

.

১২.

একটা পুরো বাড়িতে ফুলার্টন হ্যারিসন আর লিডবেটার কোম্পানী অবস্থিত ছিল। হ্যারিসন আর মিঃ আইকিনসন এবং যুবক মিঃ কোল আর আছে পুরোন পার্টনার মিঃ জেরেমি ফুলার্টন।

রোগা আর বয়স্ক ব্যক্তি এই ফুলার্টনের কথাবার্তা ধূর্তামিতে ভরা একেবারে খাঁটি আইনবিদের মত।

আপনিই মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো?–মিঃ ফুলার্টন জিজ্ঞাসা করল। তার হাতে রয়েছে নোট লেখা একটুকরো কাগজ। পোয়ারো ঘাড় নাড়ল, হ্যাঁ।

মিঃ ফুলার্টনকে তার পরিচিতি দিয়ে চিঠি দিয়েছে পুলিস ইনসপেক্টর হেনরী র‍্যাগলান আর স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের অবসর প্রাপ্ত পুলিস সুপার স্পেনস। ধাতস্ত হতে মিঃ ফুলার্টনের মিনিট চারেক সময় লাগলো। তারপর সে বললো, বলুন আপনাকে কি ভাবে সাহায্য করতে পারি? দেখেশুনে মনে হচ্ছে ব্যাপারটা জয়েসা রেনল্ড নামে সেই মেয়েটা সম্পর্কে। বুঝতে পারছি না আপনাকে কিভাবে সাহায্য করবো। ভালো করে কিছুই জানি না।

কিন্তু আমি শুনেছি আপনারা ড্রেক পরিবারের আইন বিষয়ক পরামর্শদাতা?

হা এবার মনে পড়েছে হতভাগ্য হুগো ড্রেক।

আপনারা তো মিসেস লেওয়েলিন স্মিথের আইন বিষয়ক পরামর্শদাতা ছিলেন?

হা বছর দুয়েক আগে মারা গেছেন।

 তার মৃত্যু এসেছে অপ্রত্যাশিতভাবে।

 ফুলাৰ্টন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পোয়ারোর দিকে তাকালো। সে বলল, ওকথা আমি বলব না। ওঁর হার্টের অবস্থা খারাপ ছিল, তাছাড়া স্নায়বিক রোগেও ভূগছিলেন–অমূলকভাবে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়তেন।

পোয়ারো বললো, অন্য বিষয়ে আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই। আপনার কর্মচারী ছিল লেসলি ফেরিয়ার তার সম্পর্কে কিছু খবর জানতে চাই।

মিঃ ফুলার্টনের দুচোখে বিস্ময় পুঞ্জীভূত হল। ওর সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে পারবো না। ওকে ছুরি মারা হয়েছিল, যতদূর মনে পড়ছে পুলিস সন্দেহ করেছিল কাজটা কার, কিন্তু প্রমাণের অভাবে কিছু করতে পারেনি। গ্রীন সোয়ানের কাছে বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে গিয়ে ফেরার পথে আততায়ীর হাতে ছুরিকাহত হয়।

কেউ ওকে ছুরি মারতে দেখেনি। যেমন ধরুন কোনো বাচ্চা ছেলে বা মেয়ে?

গভীর রাতে? অসম্ভব।

আমার কাছে কিন্তু অবাস্তব মনে হচ্ছে না। শিশুরা অনেক সময় এ ধরনের দৃশ্য দেখে ফেলে। যে দৃশ্য দেখে শিশুরা ভয় পায় সেই দৃশ্যের কথা তারা সাধারণতঃ বলে না।

মিঃ পোয়ারো, আমার কাছে আপনার আসার উদ্দেশ্য এখনও পরিষ্কার নয়। আপনি কি জয়েসা রেনল্ড আর লেসলি ফেরিয়ারের মৃত্যুর মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে বলে সন্দেহ পোষণ করেছেন?

যে কেউ যা খুশী সন্দেহ করতে পারে।–পোয়ারো বললো, প্রয়োজনে আরও কিছু খোঁজার চেষ্টা করতে পারি। আপনি শুনেছেন বোধ হয়। মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে জয়েসা জোর দিয়ে বলেছে যে সে একটা খুন হতে স্বচক্ষে দেখেছে এবং এই কথা অনেকে শুনেছে।

এধরনের জায়গায় নানা ধরনের কানাঘুষা শোনা যায়। এই ধরনের কোনো কথা যদি কেউ রঙ চড়িয়ে বলে

আচ্ছা আপনার মনে আছে নিশ্চয়ই একটি বিদেশী মেয়ের অদৃশ্য হওয়ার ঘটনা, ওর নাম ছিল খুব সম্ভব ওলগা কিম্বা সোনিয়া। মিসেস লেওয়েলিনের সঙ্গদান কিম্বা নার্সের কাজ করত।

হা আগেও কটা মেয়ে ওঁর কাছে কাজ করেছে, তাদের মধ্যে দুজন ছিল বিদেশী। একজন বিদেশী মেয়ের সঙ্গে চাকরীতে ঢোকার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একদিন তুমুল ঝগড়া হয়, অপর মেয়েটা ছিল একটু বোকা ধরনের। মিসেস স্মিথ তার জীবন এমন অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন যে চাকরী করতে পারেনি। তবে ওলগার সঙ্গে ওর বনিবনা ভালই হয়েছিল। যতদূর মনে পড়ছে মেয়েটা দেখতে তেমন ভালো ছিল না। প্রতিবেশীরা তাকে সুনজরে দেখতো না।

কিন্তু মিসেস লেওয়েলিন ওকে বেশ পছন্দ করতেন–পোয়ারো বলল, ভদ্রমহিলা তার উইলে অনেক অর্থ মেয়েটিকে দিয়ে যান।

হ্যাঁ, এটাই আশ্চর্যের ব্যাপার। একদিন জানা গেল, উইলটা জাল, সইয়ের সঙ্গে মিসেস লেওয়েলিনের সইয়ের মিল নেই। জানা গিয়েছিল ওলগা মাঝে মাঝে মালিকানার হাতের লেখা নকল করে মিসেস লেওয়েলিনের চিঠির জবাব দিত। ভদ্রমহিলার মৃত্যুর পর ওলগা ভেবেছিল সবাই জাল উইলটা মেনে নেবে, কিন্তু হাতের লেখা বিশেষজ্ঞরা শেষ পর্যন্ত মেনে নেয়নি।

আইনের সাহায্য নেওয়া হলে ও প্রথম শুনানীর তারিখ পড়বার আগেই মেয়েটা ভয়ে আত্মগোপন করে।

.

১৩.

এরকুল পোয়ারো বিদায় নেওয়ার পর জেরেমি ফুলার্টন ডেস্কের পিছনে বসে দূরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল। মনটা অতীতের ঘটনায় ফিরে যাচ্ছে। ঠিক দুবছর আগেকার ঘটনা।

তার চোখের সামনে ফুটে উঠলো একটা দৃশ্য। একটা মেয়ে সামনের চেয়ারে বসে আছে। বেঁটে আর মোটাসোটা চেহারা। শ্যামবর্ণা। চাহনিতে জড়ান দারিদ্রের ছাপ। মেয়েটা ছিল সেই ধরনের যার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সংগ্রাম করে আর প্রতিবাদ করে যায় সত্য রক্ষার্থে। কে জানে এখন মেয়েটা কোথায় আছে? ভাবল ফুলার্টন।

ওলগা হয়তো মধ্য ইউরোপে ফিরে গেছে। সেখান থেকেই এসেছিল। নিজের নিরাপত্তার জন্য ফিরে যাওয়া ছাড়া তার সামনে অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না।

জেরেমি ফুলার্টন আইনের পূজারী, বিচারকের দুর্বল রায় তার কাছে ঘৃণ্য। তবে তার মনে যে সমবেদনা বা দুঃখবোধ নেই তা নয়। ওলগা সেমিলোফের জন্য ও সে দুঃখ করেছে। ওলগা বলেছিল–আমি বিদেশী মেয়ে, কোনোভাবেই প্রমাণ করতে পারবো না যে উইলটা জাল নয়। আমাকে জেলে পোরা হবে। আতঙ্কিত স্বরে ওলগা বলেছিল, আর কখনও বেরিয়ে আসতে দেবে না।

অনেকে বলছে আমি নাকি উইল জাল করেছি, হাতের লেখা নাকি আমার নিজের। উইলে ঝিয়ের সই আছে, সই আছে মলির।

অবিশ্বাস করছি না। তবে তোমার হয়ে কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

তাহলে দেখছি লুকিয়ে থাকাই ঠিক হবে–ওলগা বলেছিল, আমাকে খুঁজে না পেলে আমার ক্ষতি কেউ করতে পারবে না। ইংল্যাণ্ড থেকে পালিয়ে যাবো। একজন চেনা লোক আছে যে পাশপোর্ট আর ভিসা জাল করতে পারে।

শোন!–ফুলার্টন বলেছিল, তোমার জন্যে দুঃখবোধ হচ্ছে। একজন উকিলের কাছে তোমায় পাঠাচ্ছি সে সাহায্য করতে পারে। পালাবার কথা ভেবো না।

ওলগা বলেছিল, কেউ নিশ্চয়ই আমায় সাহায্য করবে। তার সাহায্যে আমি আত্মগোপন করব, কেউ খুঁজে পাবে না আমায়।

সত্যিই তাই, কেউ ওলগার দেখা পায়নি সেই থেকে, মেয়েটা যেন হাওয়ায় উবে গেলো।

.

১৪.

এ্যাপল ট্রীজ পৌঁছে এরকুল পোয়ারো মিসেস ড্রেকের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। সে খবর দিয়েছে আসতে বেশি দেরী হবে না। বেশ কয়েকজন মহিলার কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে। ড্রয়িং রুমের ওপাশ থেকে।

শেষ পর্যন্ত দরজা খুলে প্রবেশ করলো মিসেস ড্রেক। সে সবিনয়ে বললো, বসিয়ে রাখার জন্য দুঃখিত মঁসিয়ে পোয়ারো। বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি? মিসেস অলিভার কি এখন জুডিথ বাটলারের কাছে আছেন?

হ্যাঁ, আছেন পোয়ারো জানালো, তবে দুএকদিনের মধ্যেই লণ্ডনে ফিরে যাবে।

বেশ আমুদে। আচ্ছা এই নৃশংস ঘটনা সম্পর্কে উনি কি ধারণা পোষণ করেছেন?

কিছুই না- পোয়ারো বলল, আপনি কি ধারণা পোষণ করেছেন তাই বলুন। ধরুন, এমন কিছু দেখেছেন তখন কোনো গুরুত্ব দেননি কিন্তু পরে সেই ঘটনা নিয়ে চিন্তা করেছেন আর অর্থও খুঁজে পেয়েছেন। এলিজাবেথ উইটেকারের ধারণা আপনি কিছু দেখে ছিলেন পার্টিতে।

রোয়েনা সবিস্ময়ে মাথা কঁকালো। সে অস্ফুট কণ্ঠে বললো, কই তেমন কিছু তো মনে পড়ছে না। পোয়ারো বললো–একটা ফুলদানী নিয়ে ঘটনা।

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, হ্যাঁ, মনে পড়েছে। সিঁড়ির কোণে ফুল দিয়ে সাজানো একটা কাঁচের বড় ফুলদানী রাখা ছিল। সন্দেহ হওয়ায় ভেতরে আঙুল ডুবিয়ে দেখি এক ফোঁটাও জল নেই। তাই বাথরুমে ঢুকে জল ভরে নিয়ে আসি।

পোয়ারো বললো, ইউটেকারের ধারণা, কোনো কিছু দেখে আপনি চমকে উঠেছিলেন। কাউকে লাইব্রেরী ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে আসতে দেখেছিলেন?

চমকে ওঠার মতো কিছুই দেখিনি, কাউকে দরজা খুলে বেরিয়ে যেতেও দেখিনি কাউকে না….

অবাক হল পোয়ারো। এমন ভাবে রোয়েনা বলছে যেন সব সত্যি বলছে। হয়তো সেই লাইব্রেরী ঘরের দরজা সামান্য ফাঁক হতে দেখেছিল, কারো আবছা শরীর নজরে পড়েছিল।

এতো জোর দিয়ে বলছে কি করে? হয়তো যে লোককে দেখেছিল, কল্পনাও করতে পারেনি তার দ্বারা এমন নৃশংস অপরাধ সংগঠিত হতে পারে। নাকি কাউকে বাঁচাতে চাইছে? হয়তো এমন একজনকে বাঁচাতে চাইছে যার বয়স খুব বেশি নয়। পোয়ারোর মনে হলো মহিলাটির মন বেশ কঠিন, তবে মাৎ। কাউকে বাঁচাবার প্রবণতা তাকে পেয়ে বসেছে।

কিন্তু অন্যায়ের সঙ্গে এরকুল পোয়ারো কোনো সমঝোতা করে না। সে চিরকাল আইনকে সম্মান দিয়ে এসেছে। যার উপর একবার সন্দেহ পুঞ্জীভূত হয়, সেই সন্দেহ শেষ পর্যন্ত দানা বেঁধে থাকে। তার মনে দয়া থাকলেও অপরাধীকে দয়া দেখালে তাকে আরো অপরাধী করে তোলা হয়।

মাদাম আপনার কি মনে হয় এ অপরাধ কোনো বাচ্চা কিংবা কিশোর কিশোরী কিংবা কোনো যুবক যুবতী করেছে?

করতে পারে। আজকাল উঠতি ছেলেমেয়েদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। বয়সের দোষ বলতে পারেন।

পুলিসের উচিত হবে এই কেসের সমাধান করা। কিন্তু প্রমাণ সংগ্রহ করা খুব সোজা হবে, মাদাম।

না, হবে না। আমার স্বামী যখন মারা গেলেন–উনি খোঁড়া ছিলেন, রাস্তা পার হওয়ার সময় একটা গাড়ি ওঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। যে গাড়ি ধাক্কা মেরেছিল পুলিস তার হদিশ। করতে পারেনি।

চাপা দিয়ে পালান গাড়িটা পুলিস হদিশ করতে পারল না? পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল।।

না রোয়েনা বলল, সুস্থ মনে কেউ অপরাধ করে না।

তাহলে জয়েসার পরিণতি এমন হল কেন?– পোয়ারো বললো, কারো শক্ত দুটি হাতে ইচ্ছা করে মেয়েটার মাথা জলের মধ্যে চেপে ধরে রেখেছিল যাতে তার জীবন-দীপ নিভে যায়।

আমি জানি, আমি জানি– রোয়েনা চীৎকার করে উঠলো, আমাকে আর মনে করিয়ে দেবেন না। –উঠে দাঁড়িয়ে অস্থিরভাবে পায়চারি করতে লাগলো।

পোয়ারো কঠিন কণ্ঠে বললো, আমাদের এখন জানতে হবে খুনীর কি ধরনের মোটিভ এখানে কাজ করেছে।

এধরনের অপরাধে কোনো মোটিভ থাকে না।

তবে কি ধরনের মানসিক রোগী এই খুন করে আনন্দ পেতে চেয়েছে?

আসল কারণ খুঁজে বের করা সহজ হবে না। এমন কি কোনো মনোবিজ্ঞানীও বলতে পারবে না।

জয়েসা সেইদিনই কয়ে ঘন্টা আগে জোর দিয়ে বলেছিল একটা খুন হতে দেখেছে।

প্রত্যেকে একই কথা বলছে।— উঠে দাঁড়িয়ে পোয়ারো বললো, যে কথা প্রত্যেকে বলছে সেটাই সঠিক বলে আমি মনে করি। তবে মিস উইটেকার আমায় বলেছেন –তাহলে ওর কাছে সব জানতে চাইছেন না কেন? উনি একজন মনস্তাত্বিক।

পোয়ারো রোয়েনার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার মাসীমা মিসেস লিওয়েলিন স্মিথকে দেখাশোনা করবার জন্য মাইনে করা একটি বিদেশী মেয়ে ছিল?

হ্যাঁ, ছিল। উনি মারা যাওয়ার পর কাউকে কিছু না বলে কোথায় যেন চলে গেছে।

নিজের ভালোর জন্যই হয়তো চলে গেছে।

তা জানি না। তবে মেয়েটা মাসীমার উইল জাল করেছিল কিম্বা কেউ তাকে জাল করতে সাহায্য করেছিল।

একজন যুবকের সঙ্গে ওর বন্ধুত্ব ছিল। সে মেলচেস্টারে একটা সলিসিটার অফিসে চাকরী করত। অতীতে কিছু জাল করবার অপরাধে তার জেল হয়েছিল।

পোয়ারো বললো, মেয়েটা নাকি একটা ভাঙা সংসার থেকে এসেছিল?

রোয়েনা ড্রেক মুখ তুলে মিটমিট হাসা পোয়ারোর দিকে তাকাল। কোনো কথা বললো না।

আমাকে যেসব কথা বললেন তার জন্য ধন্যবাদ, মাদাম।

পোয়ারো বিদায় নিয়ে রাস্তায় নামল। লেসলি সিমেন্ট্রি যাওয়ার রাস্তা ধরে এগিয়ে গেল কিছুদূর। কবরস্থানে পৌঁছতে বেশি সময় লাগল না। বছর দশেক আগে তৈরি হয়েছে। উডলিফ কমন্সে মানুষজন বাড়ার সঙ্গে এই কবরস্থানে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। চারদিক কাটা তার দিয়ে ঘেরা।

কবরস্থানের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পোয়ারো একটা কবরের সামনে এসে দাঁড়াল। কবরের উপর দাঁড় করানো একটা পাথরে লেখা আছে রোয়েনা আর বেলা ড্রেকের প্রিয়তম স্বামী হুগো এডমণ্ড ড্রেকের স্মৃতির উদ্দেশ্য। ইনি আমাদের ছেড়ে গেছেন ৩০শে মার্চ, ১এ–

বিচিত্র চরিত্রের রোয়েনা ড্রেকের কথা থেকে পোয়ারোর মনে হয়েছে মিঃ ড্রেকের জীবনে মৃত্যু নেমে এসেছে আশীর্বাদের মতো।

পোয়ারো, এই কবরস্থান পরিচ্ছন্ন রাখে যে মালী তার কাছ থেকে জানতে পারল যে মিঃ ড্রেক চমৎকার মানুষ ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন খোঁড়া।

দুর্ঘটনার মারা গেছেন, তাই না?

হ্যাঁ, গোধূলি বেলায় রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন একটা মোটর গাড়ী ধাক্কা মেরে পালায়। মিঃ আর মিসেস ড্রেক আদর্শ দম্পতি।

ভদ্রমহিলা এখানে আর বেশিদিন থাকবেন না। এখানে সামাজিক কাজও অনেক করেছেন। সবাই ওঁকে শ্রদ্ধা ভক্তি করে।

এখন উনি এমন কোনো জায়গায় বাকি জীবন কাটাতে চান যেখানকার মানুষের জন্য কিছু করতে পারবেন।

কোথায় যেতে পারেন? ঠিক জানি না। তবে স্পেন, পতুর্গাল কিম্বা গ্রীসের কোনো দ্বীপে যেতে পারেন।

পোয়ারো হাসল। সে বলল, এখন চলি…আচ্ছা, বলতে পারবে নিকোলাস র‍্যানসাম আর ডেসমণ্ড হল্যাণ্ড কোথায় থাকে?

চার্চ পেরিয়ে গিয়ে বাঁহাতের তৃতীয় বাড়িটায়। প্রত্যেকদিন মেলচেস্টারে যায় কারিগরি ব্যাপারে শিক্ষা লাভ করতে। এতক্ষণে বাড়ি ফিরে আসে।

বিদায় নিয়ে পোয়ারো হাঁটতে শুরু করল।

.

১৫.

পোয়ারো ছেলে দুটিকে খুটিয়ে দেখল। অস্বস্তিতে ভরা দুজোড়া চোখ পোয়ারোকে দেখল। ছেলে দুটির কথাবার্তা আর আচার আচরণ বয়স্কদের মতো। নিকোলাসের বয়স হবে আঠারো আর ডেসমণ্ডের সোল।

যারা সেই পার্টিতে উপস্থিত ছিল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি –

আচ্ছা এখানে ডাইনী বলে কাউকে চেন?

আপনি মাদাম গুডবডির কথা বলছেন? উনি পার্টিতে ডাইনীর ভূমিকায় ছিলেন।

 তোমারা সেখানে কি ধরনের কাজ করেছো?

 একটা খেলায় লাইটের কাজ।

 মইয়ে উঠতে হয়েছিল?

হ্যাঁ। কিছু ছবি ছাদের তলা থেকে ঝোলাতে হয়েছিল।

ডেসমণ্ড পকেট থেকে একটা খাম বের করে ভেতর থেকে অনেকগুলো ছবি বের করে বলল, মেয়েদের ভাবী স্বামীর ফটো।

পোয়ারো কার্ডগুলি খুঁটিয়ে দেখলো।

এসবের জন্য মডেল আছে না? সবাই আমাদের লোক। মেকআপ করে ফটো তোলা হয়েছে। নিক আমার কয়েকটা ছবি তুলেছে। আর আমি নিকের ছবি তুলেছি। এগুলো আলোর আড়ালে ঝোলানো হয়েছিল যাতে ভৌতিক ব্যাপার মনে হয়, ডেসমণ্ড বললো।

নিকোলাস বললো, এগুলো দেখে মিসেস ড্রেক খুব খুশী হয়েছিলেন।

পার্টিতে বিকেলে কারা ছিল? মিসেস ড্রেক আর মিসেস বাটলার। তাছাড়া ছিলেন –একটার পর একটা পার্টিতে উপস্থিত মহিলাদের নাম বলে গেল ডেসম।

কোনো পুরুষ ছিল না?

যদি পল্লী যাজককে ধরেন তো একজন পুরুষ ছিল বৈকি।

আচ্ছা ওই মেয়েটাকে বলতে শুনেছ –জয়েসা রেনল্ডের কথা বলছি– একটা খুন হতে নাকি নিজের চোখে দেখেছে।

না, আমরা কেউ শুনিনি।

আচ্ছা পার্টিতে হয়ত এমন কিছু ঘটেছে যা অন্য কারো চোখে পড়েনি, কিন্তু তোমাদের চোখে পড়েছে।

নিকোলাস আর ডেসম স্মরণ করবার চেষ্টা করল, কিন্তু তেমন কোনো ঘটনা দেখেছে বলে মনে করতে পারল না।

তবে সকালের দিকে অধিকাংশ সময় উইটেকার ড্রইংরুমে ছিলেন, পোয়ারো বললো, উনি নিশ্চয়ই জয়েসাকে কথাগুলো বলতে শুনছিলেন, নিশ্চয়ই ওর মনে আছে কি বলেন?

নিকোলাস বললো, সম্ভবত উনি বিশ্বস্ত থাকবার আর মিস উইটেকারের দোষ ঢাকবার চেষ্টা করবেন।

আমার মনে হয় উনি সেরকম কিছু করবেন না। যদি এলিজাবেথ উইটেকার মাথা খারাপ করবার চেষ্টা করেন তাহলে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের প্রচুর ক্ষতি হবে।

সেই ধর্মযাজকের খবর কি?– ডেসমণ্ড বলল, লোকটার নিশ্চয়ই মাথার গণ্ডগোল আছে। একটু যেন অস্থির প্রকৃতির, এখানে বেশিদিন আসেনি।

ওর সম্পর্কে কেউ বিশেষ কিছু জানে না। হয়তো স্ন্যাপড্রাগন উৎসবের আগুন দেখে অস্থির হয়ে পড়েছিল। সেই সময় জয়েসার হাত চেপে ধরে বলেছিল আমার সঙ্গে এস, তোমাকে একটা জিনিস দেখাব। তারপর তাকে লাইব্রেরীতে নিয়ে গিয়ে বলেছে হাঁটু ভেঙে গামলার সামনে বস। একে বলে ধর্মান্তকরণ। তার পরেই গামলার জলে মাথা চেপে ধরে বলেছে, দেখছ?

সম্ভবত সেই প্রথমবার মেয়েটার কাছে নিজেকে ব্যক্ত করে নিকোলাস বলল, এই সব ঘটনার আড়ালে যৌন আকর্ষণ কাজ করেছে।

আনন্দে উজ্জ্বল হওয়া দুটি চোখ সাগ্রহে পোয়ারোর দিকে তাকাল।

পোয়ারো বললো, আমি খুশী হয়েছি তোমাদের কথায়। এছাড়াও তোমাদের কাছ থেকে ভেবে দেখার মতো অনেক কিছু জানতে পারলাম।

.

১৬.

এরকুল পোয়ারো আগ্রহভরা চোখে মিসেস গুডবডির দিকে তাকাল। ডাইনী সাজবার মতোই চেহারা বটে। খুশীভরা গলায় কথা বলতে লাগল।

হ্যাঁ, আমি ওখানে ঠিক সময়েই পৌঁছেছিলাম। এসব ব্যাপারে ডাক এলেই আমি ডাইনীর ভূমিকায় নামি।

কারো ভবিষ্যৎ আপনি বলে দিতে পারেন? আপনার যাদু গোলকের দিকে তাকিয়ে বলতে পারবেন কে জয়েসাকে খুন করেছে?

বলা হয়তো যাবে, কিন্তু কে করেছে বললে আপনি মেনে দিতে পারবেন না– গুডবডি বলল, বলবেন প্রকৃতি বিরুদ্ধ কথা, কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়ম না মেনে তো কত কি ঘটে যাচ্ছে।

পার্টিতে নিশ্চয়ই কিছু আপনার চোখে পড়েছে?

দেখুন শয়তানের অস্তিত্ব সব জায়গাতেই মেলে। তাদের আমরা জন্ম দিই এবং বেড়ে উঠতেও সাহায্য করি।

আপনি ডাইনী বিদ্যার কথা বলছেন?

না, আমাদের সমাজেই অনেক শয়তান আছে। এদের চেনা যায় না। তাদের সংস্পর্শে যে যায় সেও শয়তানে পরিণত হয়।

কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে পোয়ারো বললো, আচ্ছা জয়েসা কি সত্যিই খুন হতে দেখেছিল?

কে বলেছে ও দেখেছে? বিশ্বাস করা ঠিক হবে না। মেয়েটা খুব মিথ্যা কথা বলতো। তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকাল গুডবডি, আমার ধারণা আপনি বিশ্বাস করেননি?

বিশ্বাস করেছি। পোয়ারো বলল, যদিও আমাকে অনেকে বিশ্বাস করতে নিষেধ করেছে।

জয়েসা মেয়েটা দিদির মতো বা ভাইয়ের মতো চালাক ছিল না, কিন্তু চালাক হতে চাইতো এমন ভাব দেখাত যেন সব জানে। অপরের চোখে পড়বার জন্য যে কোনো কথা অতিরঞ্জিত করে বলত। ফলে দেখা যেত সে যা বলছে একটা কথাও সত্যি নয়।

পোয়ারো জানতে চাইলো –তার ছেলেটা কেমন? লিওপোল্ড? –গুডবডি বলতে লাগল মাত্র নয় কি দশ বছর বয়স। তবে ভীষণ চালাক। ভবিষ্যতে বিজ্ঞানী হবার আশা। ছেলেটা প্রত্যেকের সাথে চালাকি করে। কোনো বাছ-বিচার নেই, তাদের গোপনীয় খবর শুনে তাদের কাছে থেকে হাত খরচা আদায় করে সেই গোপনীয় কথা কাউকে না বলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে।

মিসেস গুডবডি একসঙ্গে অনেকগুলো কথা বলে চুপ করল, তারপর সে বলল, দেখুন এ ব্যাপারে আমি কোনো সাহায্য করতে পারব না। আমার ভয় করছে।

পোয়ারো বলল, আচ্ছা সেই বিদেশী মেয়েটার কি হলো বলুন তো? লোকে যে বলে পালিয়ে গেছে?

আমার মতে আর বেশি এগোনো ঠিক হবে না, মিসেস গুডবডি চাপা কণ্ঠে বললো। পোয়ারো বললো, ঠিক আছে আপনি অনেক সাহায্য করেছেন ধন্যবাদ।

.

১৭.

ক্ষমা করবেন মাদাম, ভাবছি আপনার সঙ্গে মিনিটখানেক কথা বলবো।

মিসেস অলিভার বান্ধবীর বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে পথের দিকে তাকিয়ে ছিল। একটু আগে এরকুল পোয়ারো টেলিফোনে জানিয়েছে কিছুক্ষণের মধ্যে তার কাছে আসবে।

দেখা গেল ধোপদুরস্ত পোষাক পরনে একজন ভদ্রমহিলা বারান্দার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

ভদ্রমহিলা কেমন যেন ঘাবড়ে গেছে।

মিসেস অলিভার ভেবে পেল না ভদ্রমহিলা এতো ঘাবড়ে গেছে কেন?

 আপনিই তো সেই লেখিকা? অপরাধ আর খুন-জখম নিয়ে যিনি গল্প লেখেন?

হ্যাঁ, মিসেস অলিভার বলল। আমার ধারণা একমাত্র আপনিই আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবেন– অপরিচিতা বলল।

এখানে আসুন, বসে কথা বলুন।

 — মিসেস অলিভার বলল।

অপরিচিতা মহিলা বারান্দায় উঠে একটা চেয়ার অধিকার করে বসল।

মিসেস অলিভার লক্ষ্য করল আঙ্গুলে বিয়ের আংটি রয়েছে সুতরাং সে যে বিবাহিতা সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না। সে বলল, কোনো কারণে আপনাকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে।

একটা ব্যাপারে আপনার কাছে পরামর্শ চাইতে এসেছি। অপরিচিতা মহিলা বলল, অনেকদিন আগে একটা ঘটনা ঘটেছিল, কিন্তু তখন আমি এত দুশ্চিন্তা করিনি।

কোনো ঘটনার কথা বলছেন? হ্যালুইন পার্টিতে যে ঘটনাটা ঘটে গেছে।

মিসেস অলিভার নড়েচড়ে বসে বললো, আচ্ছা আপনার নামটা জানতে পারি?

লীম্যান, মিসেস লীম্যান। পাঁচবছর আগে আমার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে আমি লোকের বাড়িতে ঘর পরিষ্কারের কাজ করি। কোয়ারী হাউসে থাকতেন মিসেস লেওয়েলিন স্মিথ ওঁর কাছেও কাজ করেছি। তখন কর্নেল আর মিসেস ওয়েস্ট আসেননি। জানি না ভদ্রমহিলার সাথে আপনার পরিচয় ছিল কি না।

মিসেস অলিভার বললো, না, ছিল না। এই প্রথম উডলিফ কমন্সে এসেছি। তাহলে সেই সময় যা ঘটেছিল তা আপনার জানবার কথা নয়।

মিসেস অলিভার জানাল — এখানে আসার পর এ ব্যাপারে কিছু কিছু শুনেছি বটে।

উইল সম্পর্কে পুলিসের বক্তব্যে তো শুনেছেন

–শুনেছি।

সেই উইলে মিসেস স্মিথ তার সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি একটা বিদেশী মেয়েকে দিয়ে যান। মেয়েটাকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার নিজের নিকট আত্মীয় কাছে থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি কিনা একজন বিদেশীকে উইল করে সব কিছু দিয়ে গেছেন — কেউ ব্যাপারটা মেনে নিতে পারল না। খোঁজ খবর নিয়ে দেখা গেল মেয়েটাই উইল জাল করেছে। মিসেস ড্রেক মানে, মিসেস স্মিথের আত্মীয়া আইনের সাহায্য নিতে তৎপর হলেন।

মিসেস লীম্যান বলল, সেই সময় আমি সঠিক কিছু জানতাম না। কিন্তু আমার কাছে ব্যাপারটা যেন বিচিত্র বলে মনে হলো, ভাবলাম এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনো সত্যি লুকিয়ে আছে।

আমি যা বলবো শুনে নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন যে কোনো ভুল আমি করিনি।

বেশ বলুন –মিসেস অলিভার বলল, নিশ্চয় বুঝতে পারব।

লীম্যান বলতে শুরু করল, একদিন মিসেস লেওয়েলিন হঠাৎ অসুস্থ বোধ করে আমাদের কাছে ডেকে পাঠালেন। আমি আর জিম কাছে গেলাম, তিনি ডেস্কের পিছনে কাগজ আর কলম নিয়ে বসেছিলেন। বিদেশী মেয়েটার দিকে ঘুরে বসে বললেন, তুমি এর মধ্যে থাকবে না, ঘরের বাইরে যাও। মিস ওলগা তার আদেশ পালন করল। মিসেস লেওয়েলিন স্মিথের সামনে যে কাগজ ছিল সেটা একটা উইল। শেষের দিকে তার নিজের সই ছিল। আমাদের দুজনকে নিচে সই করতে বললেন, আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। কিন্তু আমার মনটা কৌতূহলে ভরে গেল, দরজা সম্পূর্ণ বন্ধ না করে ফাঁক দিয়ে ঘরের ভিতরে চোখ রাখলাম।

কি দেখলেন?

দেখলাম উইলটা খামে ভরে মিসেস লেওয়েলিন স্মিথ উঠে বুক কেসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন, তারপর একটা বই বের করে তার ভাঁজে উইলটা রেখে সেটা যথাস্থানে রেখে দিলেন।

যাতে সই করলাম তাতে কি লেখা আছে জানবার কৌতূহল আমাকে পেয়ে বসল।

পরদিন মিসেস লেওয়েলিন স্মিথ যখন গাড়ীতে চেপে মেলচেস্টারের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন, আমি তার ঘরে ঢুকলাম ঘর পরিষ্কার করতে। বুক সেল থেকে বইখানা বের করে দেখলাম, মিসেস লেওয়েলিন তাঁর সমস্ত অর্থ দিয়ে যাচ্ছেন মিস ওলগাকে, নিচে তার সই, তার নিচে আমার আর জিমের সই। তারপর উইলটা যেভাবে ছিল সেইভাবেই রেখে দিলাম।

মিসেস অলিভার কিছু বলল না, আর মিসেস লীম্যানও চুপ করে রইল।

কিন্তু পরে উইলের সত্যতা নিয়ে যখন কথা উঠল, তখন আমার সব মনে পড়ে গেল। মিসেস অলিভার জিজ্ঞাসা করলো, আপনি তখন কি করলেন?

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন লীম্যান, যা করা উচিত ছিল করিনি। আইনের ভয়ে মিস ওলগা পালিয়ে গেল। এমনও তো হতে পারে মেয়েটা সত্যই উইলটা জাল করেছিল, কিম্বা বৃদ্ধাকে প্রাণের ভয় দেখিয়ে নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছিল। সম্মোহনশক্তির সাহয্যে নাকি এরকম করা যায়।

এঘটনা কত বছর আগের? মিসেস স্মিথ মারা গেছেন দুবছর হল।

 এতোদিন ব্যাপারটা আপনাকে ভাবায়নি এখন অন্যরকম ভাবছেন কেন?

এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড মানে আপেল ভর্তি গামলার মধ্যে মাথা গুঁজে ধরে হত্যা করা আমাকে অন্যরকম ভাবতে বাধ্য করছে। মেয়েটা নাকি একটা খুন হতে দেখার ব্যাপারে কিছু বলেছে। মনে হল মিস ওলগা হয়তো বৃদ্ধা মহিলাকে খুন করছে সম্পত্তি পাওয়ার লোভে। নিতান্ত আইনের ঝামেলা হওয়ায় পালিয়েছে। লীম্যান থামলো।

কিন্তু আপনি আমার কাছে এসেছেন বুঝতে পারছি না– মিসেস অলিভার জিজ্ঞাসা করল। সেই উইলের ব্যাপারে।

আমি ওটা নিয়ে যাইনি, কোর্টে আর পুলিস মহলে আপনার চেনা জানা লোক আছে, দেখবেন আমি যেন ঝামেলায় পড়ে না যাই। এখন আমাকে বলুন এ ব্যাপারে আমার তরফ থেকে কাউকে কিছু জানানোর প্রয়োজন আছে কিনা।

আপনার আর জিমের পুরো নামটা কি?

আমার নাম হ্যারিয়েট লীম্যান। আর জিমের পুরো নাম হলো জেমস জেনকিন্স।

আমার মতে আপনার উচিত হবে মিসেস লেওয়েলিন স্মিথের উকিলকে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলা, মিসেস অলিভার বলল, একজন ভালো উকিল নিশ্চয়ই মোটিভ আর অনুভূতি বুঝতে পারবে।

আমার হয়ে আপনি যদি ওদের বুঝিয়ে বলেন তাহলে বড় ভালো হয়।

আপনি যা করেছেন তার মধ্যে কোনো গলদ নেই। আপনার দেওয়া কৈফিয়তে যথেষ্ট যুক্তি আছে। মিসেস অলিভার বললো, আমার দিক থেকে যা করবার করব।

মিসেস লীম্যান বিদায় নিয়ে চলে গেল।

 কিছুক্ষণের মধ্যে এরকুল পোয়ারো এসে প্রবেশ করল।

মিসেস অলিভার বললো, বসো, বল কি বলতে এসেছো, তারপর আমি এমন কিছু শোনাবো যা শুনে রীতিমতো অবাক হয়ে যাবে।

.

১৮.

পোয়ারো চেয়ারে বসে পা দুটোকে টান টান করে দিল। মিসেস অলিভার বললে, জুতো খুলে ফেলো পা দুটোকে বিশ্রাম দাও।

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পোয়ারো বললো, ঠিক চারদিন আগে জয়েসা খুন হয়েছে। শুধু মনে হচ্ছে মেয়েটাকে কে খুন করলো। বোধহয় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা কোনো মানুষের কাজ হবে। কাউকে এভাবে মারা তার কাছে এক ধরনের খেলা। তাকেই খুঁজে বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি।

আমার মনে হচ্ছে তোমার জানার ফলাফল তোমাকে পিছিয়ে এনেছে। সামনে এগোতে সাহায্য করেনি।

কোনো সিদ্ধান্তেই পৌঁছতে পারছি না। উইল জালের ব্যাপারটাই ধরনা কেন? তোমায় যদি জানাই যে উইল জালিয়াতের ব্যাপারটা মোটেই জালিয়াত ছিল না, তাহলে?

কি বলতে চাইছো?

আসলে দুজন লোক মিসেস স্মিথ কি যেন তার নাম, তারা উইলে সাক্ষী হিসাবে সই করেছিল। পরস্পরের সামনেই তারা সই করে।

.

১৯.

মিসেস লীম্যান পোয়ারো নামটা লিখে নিল। অন্য জনের নাম জেমস জেনকিন্স, শেষ শোনা গেছে অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেছে আর মিসেস ওলগা সেমিনোস চলে গেছে চেকোশ্লোভেকিয়ায়।

মিসেস লীম্যান কতটা বিশ্বস্ত বলে তোমার মনে হল?

তুমি যদি মনে করে থাক উইল জালের ব্যাপারে জড়িত তাহলে ভুল করবে। আমার অনুমান ও উইলের সই করেছিল কিছু না জেনেই।

ধরলাম ওটা আসল উইল– পোয়ারো বলল, তাহলে একটা জাল উইলও ছিল।

কে বলেছে?

আইনজ্ঞরা।

সম্ভবত উইলটা মোটেই জাল করা হয়নি এসব ব্যাপারে উকিলরা কিন্তু খুবই খুঁতখুঁতে। তারা সাক্ষী জোগাড় করে আদালত পর্যন্ত যেতে প্রস্তুত।

তাহলে যা ঘটেছে খুঁটিয়ে দেখা সোজা হবে।

কি ঘটেছে?

ধর পরদিন অথবা কয়েকদিন পরে কিম্বা এক সপ্তাহ পরে হয় মিসেস স্মিথ আর তার প্রিয় চাকরানীর মধ্যে তর্কবিতর্ক হয় অথবা তার ভাইপো হুগো আর তার বৌয়ের সঙ্গে কোনো কারণে সম্পর্ক মধুর হয়ে যায়, ফলে তিনি উইল ছিঁড়ে ফেলেন বা পুড়িয়ে ফেলেন।

এই ঘটনার পর মিসেস লেওয়েলিন স্মিথ মারা যান। মেয়েটি সেই সুযোগের অপচয় না করে একটা নতুন উইল লিখে ফেলে মালিকের হাতের লেখা নকল করে। তাতে দুজন সাক্ষী হিসাবে সইও করে। মেয়েটা ভেবেছিল কেউ হয়তো স্বীকার করবে উইলটা দেখার কথা কিন্তু জালিয়াতির কাজ নিখুঁত না হওয়ার ঝামেলা শুরু হয়ে যায়।

সম্ভবতঃ আসল উইলটা কোয়ারী হাউসের লাইব্রেরীতে সেই বইটার ভেতরে এখনও আছে।

নাও থাকতে পারে। যতদূর জানি মিসেস স্মিথের মৃত্যুর পর কিছু আসবাবপত্র আর অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে দেওয়া হয়।

মিসেস অলিভার অন্য প্রসঙ্গে গেল। স্কুল শিক্ষয়িত্রীর কি খবর?

কোনো স্কুল শিক্ষয়িত্রীর কথা বলছেন? যাকে গলা টিপে মারা হয়েছিল; এই মেয়েটাকে আমার একটুও ভালো লাগে না। বিরক্তিকর কিন্তু যথেষ্ট চালাক ওকে আর কাউকে খুন করতে দিতে রাজি নই।

অন্য কোনো শিক্ষয়িত্রীকে?

অসম্ভব কিছু নয়।

তোমার স্বতঃলব্ধ জ্ঞানের ওপর আমার বিশ্বাস আছে।

.

২০.

পোয়ারো মিসেস বাটলারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে মিরান্দার চিনিয়ে দেওয়া রাস্তা ধরে এগিয়ে চলল।

কিছুদূর এগিয়ে যেতেই সুন্দর দৃশ্য ঘেরা একটা জায়গায় সে এসে পৌঁছল। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই একটা ছোট নদীর ধারে দুজন মানুষের শরীর নজরে পড়ল। ঢালু পাহাড়ের গায়ে বসে আছে মাইকেল গারফিল্ড। একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে মিরান্দা বাটলার।

সহসা মাইকেল মুখ তুলে তাকাল। পোয়ারোকে দেখে বলল, এই যে মঁসিয়ে পোয়ারো? শুভ অপরাহ্ন, স্যার।

নদীরধার থেকে মিরান্দার কণ্ঠস্বর ভেসে এলো– মঁসিয়ে পোয়ারো।

পোয়ারো সামনের দিকে এগিয়ে গেল। মিরান্দার কথা শুনতে পায় এমন একটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে বলল, তুমি এখানে!

মিরান্দা বললো, হা কুয়োটা খুঁজছিলাম। এদিকের কুয়ো? জঙ্গলের ভেতরে একটা কামনা পূরণের কুয়ো ছিল।

আগে যেখানে কোয়ারী ছিল, বরাবর কোয়ারী ঘিরে জঙ্গল ছিল। বুড়ি মিসেস গুডবডি জানে-মিরান্দা বলল, ও ডাইনী।

ঠিক বলেছ।

মিসেস গুডবডি বলেছে, বছরখানেক আগে নাকি কুয়োটার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

পোয়ারো বললো, কেন?

খুব বিপজ্জনক বলে–মিরান্দা বলল, বছরখানেক আগে একটা বাচ্চা ভেতরে পড়ে গিয়েছিল যে… লোকে ওখানে আর যায় না।

লোকের বিশ্বাস বছর দুয়েক আগে এর উপর বাজ পড়ে, ফলে কুয়োটা ফেটে দুভাগ হয়ে যায়।

সেই গল্পটা এখনও প্রচলিত। পোয়ারোকে চিন্তিত দেখালো, বললো–আচ্ছা, আমার কাজ আছে চলি। মাইকেল জিজ্ঞাসা করল, পুলিস বন্ধুদের কাছে যাচ্ছেন নাকি? আপনাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে।

হ্যাঁ, আমি ক্লান্ত সত্যই খুব ক্লান্ত, পোয়ারো জানালো।

মাইকেলের দিকে তাকিয়ে পোয়ারো বললো, আচ্ছা মাইকেল তুমি তো এখানে আছো, লেসলি ফেরিয়ার নামে কোনো যুবককে চিনতে?

হঠাৎ মারা যায় তাই না?

হ্যাঁ, কে বা কারা ছুরি মেরে হত্যা করে। মান্দ্রা নামে একটা মেয়ের সঙ্গে ওর সম্পর্ক ছিল। তারপর অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে লেসলি মেলামেশা শুরু করে। এটা নিছক গল্পও হতে পারে।

এদিকে মাঝে মাঝে বিদেশী মেয়েরাও আসতো।

ওলগার মতো মেয়েরাও আসতো?

হা।

লেসলির সঙ্গে ওলগার বন্ধুত্ব ছিল?

ছিল। তবে মিসেস লেওয়েলিন স্মিথ এ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানতেন না। মাইকেল বললো, মেয়েটা খুব চাপা স্বভাবের ছিল। মাঝে মাঝে দু একজনের কাছে খুব গম্ভীরভাবে বলতো দেশে ফিরে কাউকে বিয়ে করে সংসার পাতবে।

পোয়ারো বললো– আমি জানতে চাই ওলগা সেমিনোস আর লেসলি ফেরিয়ার মেলামেশা করত কি মিসেস লেওয়েলিন স্মিথকে পোপন করে?

বেশি কিছু বলতে পারবো না। মাঝে মাঝে দুজনের মধ্যে দেখা হত। ওলগা কোনোদিন আমাকে বিশ্বাস করে কিছু বলেনি। আর লেসলি ফেরিয়ারকে তো তেমন চিনতামই না।

পোয়ারো বললো, শুনেছি ছোকরার অতীত ইতিহাস তেমন সুবিধার ছিল না। আমারও তাই বিশ্বাস ওর বিরুদ্ধে জালিয়তের চার্জ ছিল। মিসেস লেওয়েলিন মারা যাওয়ার পর তার উইল আসল কি না পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেল সবই জাল।

মাইকেল পোয়ারো দিকে তাকিয়ে বললো আমি বুঝতে পারছি না আমার সাথে আপনি এ সমস্ত আলোচনা করছেন কেন?

আমি কিছু জানতে চাই। আমি সত্যের পূজারী– সত্যকে জানতে চাই। মাইকেল হেসে বললো আপনার পুলিস বন্ধুর বাড়ি যান। আমাকে একা থাকতে দিন।