কাগজের খেলনা বিমানের মত ভেসে চলেছে সেসনা। ইঞ্জিন স্তব্ধ। চারপাশে শিস দিচ্ছে যেন বাতাস, গোঙাচ্ছে। ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেল থেকে থাবা দিয়ে। মাইক্রোফোনটা তুলে নিয়ে সুইচ টিপলেন মিলফোর্ড।
মে-ডে! মে-ডে! তার কণ্ঠস্বর শান্ত, কিন্তু জরুরী। সেসনা নভেম্বর থ্রি সিক্স থ্রি এইট পাপা থেকে বলছি। আমাদের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেছে। নিচে পড়ছি। পজিশন জিরো ফোর সেভেন রেডিয়াল অভ ব্যাকারসফিল্ড ভি ও আর অ্যাট সেভেন্টি ফাইভ ডি এম ই।
মাইক্রোফোনটা রবিনের হাতে গুঁজে দিয়ে আবার স্টিক ধরলেন তিনি।
একই কথা বলতে লাগল রবিন, সেসনা নভেম্বর…
হঠাৎ ফ্যাকাসে হয়ে গেল মিলফোর্ডের চেহারা। রবিন, লাভ নেই! রেখে দাও!
মানে?
অহেতুক কথা বলবে, বুঝে ফেলেছে কিশোর, লাভ হবে না। মেসেজ যাবে না কোথাও। বিদ্যুতই নেই। রেডিও অচল।
আরি, ভুলেই গিয়েছিলাম, রবিন বলল, ইমারজেন্সি লোকেটর বিকন আছে একটা। প্লেন ক্র্যাশ করলে আপনা-আপনি চালু হয়ে যায় ওটা।
অনেক ধন্যবাদ, আমি ক্র্যাশ করতে চাই না, দুই হাত নাড়ল কিশোর। দ্রুত হয়ে গেছে হৃৎপিণ্ডের গতি। নিরাপদে এখন কোনমতে মাটিতে নামতে পারলে…
হ্যাঁ, আমারও এই কথা, মুসা বলল।
নীরবে সিটবেল্ট বাঁধতে লাগল ওরা।
গ্র্যানিটের একটা চূড়ার দিকে নাক নিচু করে ধেয়ে চলেছে বিমান। বাড়ি লাগলে ডিমের খোসার মত গুঁড়িয়ে যাবে।
মোচড় দিয়ে উঠল কিশোরের পেট। ভয় পেলে যা হয়। ঘামতে আরম্ভ করেছে।
মুঠো খুলে-বন্ধ করে আঙুলের ব্যায়াম করতে লাগল মুসা, আনমনে, যেন পতনের পর পরই কোন কিছু আঁকড়ে ধরে বাঁচার জন্যে তৈরি হচ্ছে। উত্তেজনায় শক্ত হয়ে গেছে পেশী।
ঢোক গিলল রবিন। সহজ ভাবে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করছে। যাচ্ছি কোথায় আমরা? স্বর শুনে মনে হলো গলায় ফাঁসি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।
ওই তৃণভূমিটায় নামার চেষ্টা করব, মিলফোর্ড বললেন।
তৃণভূমিটা বেশ বড়, উপত্যকার পুব ধারে।
কতক্ষণ লাগবে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
আর মিনিট তিনেক।
পাথর হয়ে গেছে যেন ছেলেরা। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রয়েছে। বাতাস চিরে নিচে নামছে বিমান। দ্রুত বড় হচ্ছে গাছপালা, গ্র্যানিটের চাঙড়। তৃণভূমির উত্তরের পাহাড়টা লম্বা হচ্ছে, সাদা হচ্ছে, মাথা তুলছে যেন দানবীয় টাওয়ারের মত।
মায়ের কথা ভাবল রবিন। কাগজে যখন পড়বেন, সে আর তার বাবা মারা। গেছেন বিমান দুর্ঘটনায়, দুঃখটা কেমন পাবেন? নিশ্চয় ভয়াবহ।
মাটির যত কাছাকাছি হচ্ছে ততই যেন গতি বেড়ে যাচ্ছে বিমানের।
মাথা নামাও! চিৎকার করে বললেন মিলফোর্ড। হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরো। শক্ত করে!
বাবা…
জলদি করো! কথা বলার সময় নেই!
মাথা নুইয়ে হাত দিয়ে চেপে ধরল, কিংবা বলা যায় বাহু দিয়ে পেঁচিয়ে ধরল তিনজনে।
যাই হোক, চাকাগুলো ঠিকই আছে, বিড়বিড় করে নিজেকেই সান্ত্বনা দিল রবিন। ধাক্কা কিছুটা অন্তত বাঁচাবে।
ব্রেকের কথা উল্লেখ করল না কেউ। লাভ নেই। ইলেকট্রিক সিসটেম বাতিল, কাজেই ব্রেক কাজ করবে না।
বিমানের চারপাশে বাতাসের গর্জন বাড়ছে।
হয়েছে! এইবার! ভাবতে গিয়ে গায়ে কাটা দিল রবিনের।
মাটিতে আছড়ে পড়ল বিমান।
প্রচণ্ড বেগে সামনের দিকে ছিটকে যেতে চাইল ওদের শরীর, সীট বেল্টে টান। লেগে আবার ফিরে এসে পিঠ বাড়ি লাগল সিটের হেলানে। রবিনের মনে হলো, তীক্ষ্ণ ব্যথা যেন লাল সাদা স্ফুলিঙ্গ ছিটিয়ে গেল চোখে।
পড়েই বলের মত ড্রপ খেয়ে লাফিয়ে উঠল বিমান, ভয়ঙ্কর গতিতে আবার আছাড় খেল। সীট বেল্টে আটকানো মানুষগুলোকে এলোপাতাড়ি ঝাঁকিয়ে দিল। আবার লাফিয়ে উঠল।
শক্ত হয়ে থাক! চিৎকার করে হুঁশিয়ার করলেন মিলফোর্ড।
তৃতীয় বার মাটিতে পড়ল বিমান। কাপল, ঝাঁকি খেল, দোল খেল, গোঙাল। তবে আর লাফ দিল না। সামনের দিকে দৌড়াল মাতালের মত টলতে টলতে।
সীট আঁকড়ে ধরেছে রবিন। মাথা নিচু করে রেখেছে। ভীষণ ঝাঁকুনি লাগছে। মনে হচ্ছে, শরীরের ভেতরের যন্ত্রপাতি সব ভর্তা হয়ে যাচ্ছে। বেঁচে আছে এখনও, তবে আর কতক্ষণ?
হঠাৎ শোনা গেল বিকট শব্দ, ধাতুর শরীর থেকে ধাতু ছিঁড়ে, খসে আসার আর্তনাদ। কলজে কাঁপিয়ে দেয়।
আরেকবার সামনে ঝাঁকি খেয়ে পেছনে ধাক্কা খেল ওদের দেহ, তারপর খেল। পাশে, মাথা ঠুকে গেল দেয়ালের সঙ্গে। বাতাসে উড়ছে বই, খাতা, কাগজ। কানের পাশ দিয়ে উড়ে গেল যন্ত্রপাতি আর ইলেকট্রিকের তার। কি যেন এসে লাগল রবিনের হাতে। ব্যথায় উহ করে উঠল সে। পাগল হয়ে গেছে যেন বিমান, এ পাশে দোল খাচ্ছে, ওপাশে দোল খাচ্ছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে এর মাঝে।
তারপর নামল নীরবতা। স্তব্ধ নীরবতা। দাঁড়িয়ে গেছে সেসনা।
আস্তে মাথা তুলল রবিন।
বাবা!
ইনস্ট্রমেন্ট প্যানেলে মাথা রেখে উবু হয়ে আছেন মিলফোর্ড।
তার কাধ ধরে ঠেলা দিল রবিন। বাবা! ঠিক আছ তুমি?
কিন্তু নড়লেন না তিনি।
ওখান থেকে বের করে নিয়ে আসা দরকার! সামনের দুটো সীটের মাঝের ফাঁকে এসে দাঁড়াল মুসা।
দ্রুতহাতে বাবার কানে লাগানো হেডফোন খুলে নিল রবিন। মুসা খুলল সীটবেল্ট। মিলফোর্ডের কপালে রক্ত। বাড়ি লেগে গোল হয়ে ফুলে উঠেছে একটা জায়গা, লালচে বেগুনী হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই।, মুসার পেছন পেছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে পড়ল রবিন, বেসামাল পায়ে দৌড়ে বিমানের সামনে দিয়ে ঘুরে চলে এল আরেক পাশে। সে ভাল আছে। মুসা আর। কিশোরও ভাল আছে। নেই কেবল তার বাবা। বেহুশ হয়ে গেছেন। আঘাত কতটা মারাত্মক এখনও বোঝা যাচ্ছে না। হাতল ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে পাইলটের পাশের দরজাটা খুলল সে।
তার পাশে চলে এল মুসা। রবিনকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে পাজাকোলা করে বের করে আনল মিলফোর্ডকে। নিজের গায়েও জখম আছে, ব্যথা আছে, তবে গুরুত্ব দিল না। আগে মিলফোর্ডের সেবা দরকার।
কিশোর কই? অচেতন দেহটা কোলে নিয়েই সামনের একটা উঁচু পাথরের চাঙড়ের দিকে প্রায় দৌড়ে চলল সে। ওর পাশে রইল রবিন। বাবার দিকে কড়া দৃষ্টি।
এই যে, এখানে! দুর্বল জড়ানো কণ্ঠে জবাব দিল কিশোর। বিমানের ভেতরেই রয়েছে। ধীরে ধীরে হাত-পা নেড়েচেড়ে দেখছে ভেঙেছে কি-না। নড়ছে। স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই, তার মানে ঠিকই আছে…
বেরোও ওখান থেকে! গ্র্যানিটের চাঙড়টার দিকে ছুটতে ছুটতে চেঁচিয়ে উঠল মুসা। পাথরের কাছে পৌঁছে ঘাসের ওপর শুইয়ে দিল মিলফোর্ডকে।
হাঁটু গেড়ে বাবার পাশে বসে পড়ল রবিন। নাড়ি দেখল। ডাক দিল, বাবা, শুনতে পাচ্ছ? বাবা?
মিলফোর্ডকে নামিয়ে দিয়েই আবার বিমানের দিকে দৌড় দিল মুসা, কিশোরের কাছে।
আসছি! দরজায় দাঁড়িয়ে বোকা বোকা চোখে মুসার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কিশোর।
নাম না জলদি, গাধা কোথাকার! ধমকে উঠল মুসা। কিশোরের হাত ধরে টান মারল। ফুয়েল ট্যাঙ্ক…
বড় বড় হয়ে গেল কিশোরের চোখ। ফুয়েল ট্যাঙ্ক! ভুলেই গিয়েছিলাম…! আতঙ্ক ফুটল কণ্ঠে। আগুনের মত গরম হয়ে আছে ইঞ্জিন। ট্যাঙ্কের পেট্রল এখন তাতে গিয়ে লাগলে দপ করে জ্বলে উঠবে।
লাফ দিতে যাচ্ছিল কিশোর, এই সময় হাতে টান দিল মুসা, তাল সামলাতে না পেরে উপুড় হয়ে পড়ে গেল সে। উঠে দাঁড়াল আবার। কোথাও হাড়টাড় ভেঙেছে কিনা দেখার সময় নেই আর। দৌড়াতে শুরু করল মুসার পেছনে। যে পাথরটার আড়ালে শুইয়ে দেয়া হয়েছে মিলফোর্ডকে, রবিন রয়েছে, সেখানে চলেছে। বিমাটা বিস্ফোরিত হলেও ওখানে টুকরোটাকরা ছিটকে গিয়ে ক্ষতি করার আশঙ্কা নেই।
মিলফোর্ডের কাছে এসে ধপ করে বসে পড়ল কিশোর। পর মুহূর্তেই চিত। জোরে জোরে হাঁপাচ্ছে। ঘামে চকচক করছে মুখ। তার পাশে বসে পড়ল মুসা।
বিস্ফোরণের অপেক্ষা করছে ওরা। প্রচণ্ড শব্দের পরক্ষণেই এসে গায়ে লাগবে। আগুনের আঁচ, বাতাস ভরে যাবে পোড়া তেলের গন্ধে।
গায়ের ডেনিম জ্যাকেট খুলে ফেলল রবিন। গুটিয়ে নিয়ে বালিশ বানিয়ে ঢুকিয়ে দিল বাবার মাথার নিচে। আরেকবার নাড়ি দেখে বন্ধুদের দিকে মুখ তুলে তাকাল। বলল, নাড়ি ঠিকই আছে।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। বেহুশ হয়ে গেছেন। আর কিছু না। প্রচণ্ড শক লেগেছে তো।
খুব শক্ত মানুষ! মুসা বলল।
নিজের জ্যাকেট খুলে মিলফোর্ডের গায়ে ছড়িয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। হাত টান টান করে ঝাঁকি দিল, পা ঝাঁকি দিল, পেশীগুলোকে ঢিল করে নিয়ে আবার বসল। বিমানটা এখনও ফাটছে না কেন? ঠাণ্ডা হয়ে যায়নি তো ইঞ্জিন? বার বার সীটে ধাক্কা লাগায় পিঠ ব্যথা করছে, বুক ব্যথা করছে সীট বেল্টের টান লেগে।
গুঙিয়ে উঠলেন মিলফোর্ড।
বাবা? ডাক দিল রবিন। চোখ মেল, বাবা?
আঙ্কেল, শুনছেন? উঠে বসে কিশোরও ডাকল।
চোখ মেললেন মিলফোর্ড রবিনের মুখে চোখ পড়ল।
হাসি ফুটল রবিনের মুখে। ল্যাণ্ডিংটা দারুণ হয়েছে, বাবা।
দুর্দান্ত হয়েছে, একমত হলো কিশোর।
তাহলে আবার কখন উড়ছি আমরা? রসিকতা করল মুসা।
মলিন হাসি হাসলেন মিলফোর্ড। তোমরা ঠিক আছ তো?
প্লেনটার চেয়ে যে ভাল আছি, কিশোর জবাব দিল, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
উঠে বসতে গেলেন। ঠেলে আবার শুইয়ে দিল রবিন।
প্লেনটার কি অবস্থা! উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন মিলফোর্ড। ডানাটানা আছে?
ডানা?
তাই তো! লক্ষ্যই করা হয়নি! তিনজনেই উঠে দাঁড়াল। পাথরটার পাশে এসে তাকাল। অসংখ্য মেঠো ফুল জন্মে রয়েছে তৃণভূমিতে। মাঠের বুক চিরে চলে গেছে। একটা লম্বা দাগ, বিমানটার হিঁচড়ে যাওয়ার চিহ্ন। সেসনার ডানায় লেগে মাথা। কেটে গেছে অনেক চারাগাছের। কাণ্ডগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে রোদের মধ্যে, ওপরের অংশটা যেন মুচড়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। প্রপেলারের চার ফুট লম্বা একটা ডানা খসে গেছে, কয়েক টুকরো হয়ে এখন পড়ে আছে শখানেক ফুট দূরে। বিমানের। চলার পথে পড়ে আছে দুটো চাকা। ধারাল পাথরে লেগে ছিঁড়ে গেছে একটা ডানা। ওই পাথরটাতে বাড়ি খেয়েই অবশেষে থেমেছে বিমানটা। ডানা ছাড়া উড়তে পারবে না আর সেসনা।
জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে রবিন বলল, গেছে!
নামতে যে পেরেছি, এটাই বেশি, মুসা বলল।
কিশোর বলল, হ্যাঁ, অল্পের ওপর দিয়ে গেছে। আমি তো ভেবেছিলাম, জীবনটা এখানেই খোয়াতে হবে। অথচ একটা হাডিডও ভাঙল না, আশ্চর্য!
আমার ক্যাপটা কোথায়? মিলফোর্ড বললেন। ছেলেদের বাধা দেয়ার তোয়াক্কা করলেন না আর, পাথরের একটা ধার খামচে ধরে টেনে তুললেন শরীরটাকে।
বাবা!
আঙ্কেল!
পাথরে হেলান দিলেন মিলফোর্ড। সোজা রাখলেন মাথাটা। তিক্ত হাসি ফুটল ঠোঁটে। মাথায় সামান্য ব্যথা, আর কোন অসুবিধে নেই।
বসে পড়ো! রবিন বলল।
উপায় নেই, মিলফোর্ড বললেন। প্লেনটার অবস্থা দেখতে হবে।
কিন্তু ইঞ্জিন গরম…
মুসাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন তিনি, আগুন লাগার ভয় করছ? এখনও যখন লাগেনি, আর লাগবে না। বিমানটার দিকে তাকালেন। এক পা বাড়ালেন সামনে, তারপর আরেক পা। নাহ, পারছি হাঁটতে। পারব। অতটা খারাপ না। টলে উঠলেন তিনি।
খপ করে এক হাত ধরে ফেলল রবিন। মুসা ধরল আরেক হাত।
বড় বেশি গোয়ার্তুমি করো তুমি, বাবা!
তোর মা-ও একই কথা বলে, হেসে বললেন মিলফোর্ড। আমাদের এডিটর সাহেবও। সব সময়ই বলেন। আবার পা বাড়ালেন তিনি। তবে ছেলেদের সাহায্য নিতে অমত করলেন না।
পাশে পাশে চলল কিশোর। বিমানের কাছে পৌঁছে পাইলটের সীট থেকে বাবার সানগ্লাস আর ক্যাপটা তুলে নিল রবিন।
এ নীল উইণ্ডব্রেকারের পকেটে চশমাটা রেখে দিলেন মিলফোর্ড। ক্যাপটা মাথায়। দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঠিকমত বসার চেষ্টা করলেন, যাতে কপালে না লাগে। বসিয়ে, হাসলেন। যেন বোঝাতে চাইলেন, আমাকে অত অসহায় ভাবছ কেন? আমি এখনও সবই পারি।
আশপাশটায় চোখ বোলাল ওরা। পাহাড়ের ঢালে ঢালু হয়ে নেমে গেছে তৃণভূমি। তার পরে ঘন বন। তিন পাশেই, বেশ কিছুটা দূরে মাথা তুলেছে গ্র্যানিটের পাহাড়। রোদে চকচক করছে। পেছনে প্রায় দুশো ফুট উঁচু আরেকটা পাহাড়, দুই প্রান্তই ঢালু হয়ে গিয়ে ঢুকেছে পাইন বনের ভেতরে। উত্তরের পাহাড় চূড়ার জন্যে দেখা যাচ্ছে না তার ওপাশে কি আছে।
লোকালয়ে কোন চিহ্নই চোখে পড়ল না। ডায়মণ্ড লেক এখান থেকে কম করে হলেও তিরিশ-চল্লিশ মাইল দূরে হবে। উত্তরের চূড়াটা না থাকলে হয়তো চোখে পড়ত। তবে আকাশ থেকে নিচের জিনিস যতটা ভালভাবে দেখা যায়, নিচে থেকে যায় না।
তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে রবিন নিচের তরাই অঞ্চল। অন্য কোন সময় হলে, অর্থাৎ পরিস্থিতি ভাল থাকলে জায়গাকে খুব সুন্দর বলত সে। চোখা হয়ে উঠে যাওয়া চূড়া, নিচের সবুজ উপত্যকা, ঘন বন। এখন সে সব উপভোগ করার সময়। নেই। একটা কথাই বার বার পীড়িত করছে মনকে, ওরা এখানে একা। নির্জন এক পার্বত্য এলাকায় নামতে বাধ্য হয়েছে ওরা। সাথে খাবার নেই, পানি নেই। রেডিও, ক্যাম্প করার সরঞ্জাম কিছুই নেই। বাঁচবে কি করে?
যেন তার মনের কথাটাই পড়তে পেরে ক্লান্ত স্বরে মিলফোর্ড বললেন, শোনো। তোমরা, এসব বুনো এলাকায় কি করে বেঁচে থাকতে হয় জানা আছে তো?