০২.
অশরীরী আত্মার আবির্ভাব
লম্বাচওড়া আর বিলিতী ধাঁচে সাজানো ডাইনিং-হল পেরিয়ে শ্রীমতী মালহোত্রার স্টাডি বা পড়াশোনার ঘরে ঢুকলুম আমরা। আর সেইসময় বাইরে প্রচণ্ড মেঘগর্জন শোনা গেল। তারপর শুরু হল ভয়ঙ্কর পাহাড়ী ঝড়। শ্ৰীমতী মালহোত্রার মুখে উদ্বেগ দেখা দিল।–ওই যাঃ! বেচারা পারেখ আর আসতে পারবে না।
ঝড়ে বাড়ির দরজা-জানালাগুলো বিকট শব্দে কাঁপছিল। উনি চেঁচিয়ে উঠলেন–সরযূ! লছমন! বদ্রী! তোমরা দরজা-জানালাগুলো বন্ধ করে দাও!
সব বন্ধ হলেও ঝড়ের শব্দ চাপা শোনা যাচ্ছিল। মেঘের গর্জনে বাড়িটা কেঁপে কেঁপে উঠছিল মুহুর্মুহু। গৃহকর্ত্রীর মুখে উদ্বেগের ছাপটা আরো গাঢ় হতে দেখছিলুম। অরিন্দম দ্বিবেদী চাপাগলায় বললেন–বড় আশ্চর্য তো! হঠাৎ এমন প্রাকৃতিক উপদ্রব কেন?
রঘুবীর জয়সোয়াল একটু হাসলেন। হ্যাঁ, প্রকৃতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কারণ কোন তাশীরী আত্মা যেভাবেই হোক টের পেয়ে গেছে যে তাকে ডাকা হতে পারে।
একথায় বাকি সবাই চাপা হাসলেন। কিন্তু শ্ৰীমতী মালহোত্রা ক্ষুব্ধ হলেন। মিঃ জয়সোয়াল, তুচ্ছতাচ্ছিল্য আপনি করতে পারেন বটে; কিন্তু বিজ্ঞানকে চমকে দেবার মতো বহু ব্যাপার পৃথিবীতে এখনও আছে। একথা মানেন তো?
ডঃ সীতানাথ পট্টনায়ক বললেন–তা তো আছেই! তবে আত্মার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হতে পারে। মানসিক অবস্থার ওপর সবকিছু নির্ভর করে। হ্যালুশিনেশন বা ভ্রমদর্শন বলে একটা কথা আছে…।
ওঁকে বাধা দিয়ে শ্রীমতী মালহোত্রা একটু হেসে বললেন–এ আসরে আমরা মোট আটজন লোক। এ কোন নিছক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হবে না। কারণ একই জায়গায় একইসঙ্গে আটজন মানুষ হ্যালুশিনেশনে ভুগবে না। নিশ্চয়!
অরিন্দম দ্বিবেদী কুণ্ঠিত মুখে বললেন–তাহলে আত্মা যে আজ আসবেই, আপনি সিওর?
শ্ৰীমতী মালহোত্রা শ্যামলীর দিকে সস্নেহে তাকিয়ে বললেন–সবই নির্ভর করছে আমাদের এই সুইট মিডিয়ামটির ওপর। তোমার ভয় করছে না তো শ্যামলী?
শ্যামলীর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি অবাক হয়ে গেলুম। ওর মুখে একটা জেদের ছাপ রয়েছে, সেজন্যেও নয়–তা বাদেও কী যেন আছে, রহস্যময় কিছু, এবং ওই চোখে দৃষ্টি আমার একটুও স্বাভাবিক মনে হল না। কেমন যেন তীক্ষ্ণ, গভীর, উজ্জ্বল। অথচ দুরের নক্ষত্রের মতো ওই দৃষ্টিপাত! যেন সে আমাদের মধ্যে থেকেও আমাদের একজন হয়ে নেই। নিজের মনের ভুল? কে জানে! আমার মধ্যে একটা অস্বস্তি জাগল।
আমি কর্নেলের দিকে তাকালুম। চোখ বুজে বসে আছেন পাথরের মতো। শ্ৰীমতী মালহোত্রাও যেন শ্যামলীর মুখে আমার মতোই কিছু দেখলেন। তাই। কোন জবাব না পেয়েও ব্যস্তভাবে বলে উঠলেন–তাহলে আসুন, আমরা ওই টেবিলে গিয়ে বসি। তারপর ঘড়ি দেখে নিলেন। অস্ফুটস্বরে ফের বললেন– জাস্ট সাতটা পনের মিনিট। কুইক।
ঘরের মেঝে পুরোটা কাশ্মীরী কার্পেটে ঢাকা। ঠিক মধ্যিখানে একটা মেহগনি-রঙ বিশাল গোল টেবিল–তাতে কোন ঢাকনা নেই। টেবিলের চারদিক ঘিরে অনেকগুলো চেয়ার। আমরা গিয়ে বসলে একটা বাড়তি হল। সেটা তফাতে সরিয়ে রাখলেন শ্রীমতী মালহোত্রা। বললেন–বদ্রীটার বুদ্ধিসুদ্ধি আর হবে না। বলেছিলুম ছটা চেয়ার রাখতে! রেখেছে নটা। ছয়কে নয় শোনে যে তার কানে অসুখ হয়েছে।
বদ্রী সম্ভবত আমাদের পিছু পিছু এসে ঘরে দাঁড়িয়েছিল। বয়সে প্রৌঢ়, কিন্তু দেহের গড়নে শক্তি-সামর্থ্যের ছাপ স্পষ্ট। সে কাচুমাচু মুখে বলল–আমি ছটাই রেখেছিলুম মা। পরে সমঝে দেখলুম, ওনারা নজন হচ্ছে, তাই…..।
গৃহকর্ত্রী হেসে বললেন–তাহলে তোমার বুদ্ধির প্রশংসা করতে হয়। কিন্তু বাছা, আমরা তো নজন ছিলুম না–আটজন মোটে!
বদ্রী বলল–পারেখ সায়েবকে নিয়ে নজন হয় যে মা!
-বদ্রী, তুমি বুদ্ধিমান! কিন্তু এই দুর্যোগে উনি আর আসতে পারবেন কি? যাকগে। শোন বদ্রী, তুমি বাইরের ঘরে গিয়ে অপেক্ষা করো। যদি দৈবাৎ পারেখ সায়েব এসে পড়েন, ওঁকে ওঘরেই বসতে বলবে। কারণ আমাদের আসর শুরু হলে আর কাকেও ঢুকতে দেওয়া সম্ভব নয়।
বদ্রী মাথা নেড়ে চলে গেল। শ্রীমতী মালহোত্রা দরজার তালা খুলে ওকে যেতে দিলেন–তারপর ভাল করে আটকে দিলেন। তারপর উজ্জ্বল আলোটা নিভিয়ে একটা হালকা নীলাভ আলো জ্বালালেন। ঘরটা কেমন রহস্যে ভরে গেল যেন। নীলাভ আলোটা এত কম ওয়াটের যে কারো মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। এ-সময় সবগুলো মুখে দিকে আমি তাকালুম।
আমার ডাইনে বসেছে জয়ন্তী। সে তাকিয়ে আছে কর্নেলের দিকে। আমার বাঁয়ে কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। তিনি শ্রীমতী মালহোত্রার দিকে তাকিয়ে আছেন। শ্ৰীমতী মালহোত্রা এখনও বসেননি। দাঁড়িয়ে আছেন। কর্নেলের বাঁয়ে ডঃ পট্টনায়ক। তিনিও গৃহকর্ত্রীকে দেখছেন। তাঁর বাঁদিকে রঘুবীর জয়সোয়াল। তার দৃষ্টি শ্যামলীর দিকে। শ্যামলী তাঁর পাশের চেয়ারে এবং আমার চেয়ারের একেবারে উল্টোদিকে আমার সামনাসামনি। শ্যামলী টেবিলে দৃষ্টি রেখেছে। শ্যামলীর বাঁয়ে শ্রীমতী মালহোত্রার চেয়ার। তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর বাঁয়ে অর্থাৎ জয়ন্তীর ডাইনে রয়েছেন অধ্যাপক দ্বিবেদী। তিনি যেন জয়সোয়ালকেই দেখছেন।
ঘরে স্তব্ধতা। কিন্তু বাইরে প্রকৃতি তোলপাড় হচ্ছে। মাঝে মাঝে বাজ পড়ছে। মেঘ ডাকছে। ঝড়ের শনশন শাঁ শাঁ শব্দে পাহাড় আর অরণ্য মুখর হচ্ছে। বাড়িটা থরথর করে কাঁপছে যেন। তারপর মনে হল, বৃষ্টি শুরু হয়েছে। পাহাড়ী ঝড়বৃষ্টির ভীষণতার কোন তুলনা নেই। এসব সময় ধস নামে। সে বড় বিপজ্জনক কাণ্ড! অনেক বসতি গুঁড়ো হয়ে যায়। মানুয চাপা পড়ে। রাস্তা। পাথরের স্থূপে বন্ধ হয়ে যায়। আবার অনেক সময় রাস্তাও ধসে গিয়ে অতল খাদ সৃষ্টি হয়। এখনও নিশ্চয় তা হচ্ছে কোথাও।
শ্রীমতী মালহোত্রা বক্তৃতার ঢঙে বললেন–বন্ধুগণ! এবার আমাদের আসর শুরু হবে। তার আগে দু-চার কথা বলা দরকার। অবসরজীবনে প্রেততত্ত্ব নিয়ে। পড়াশুনা করে আমার বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে যে মানুষের দেহ ধ্বংস হয়, কিন্তু আত্মা ধ্বংস হয় না। ভারতবর্ষের প্রাজ্ঞ দার্শনিকরা যে সত্য হাজার হাজার বছর আগে জেনেছিলেন, পাশ্চাত্যের নিরীশ্বরবাদী দর্শন আর বিজ্ঞানের পাল্লায় পড়ে আমরা বিদগ্ধ শিক্ষিত সমাজ তা অস্বীকার করতে শিখেছি। আমিও একসময় তাই করেছি। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় আমার স্বামী ডঃ মালহোত্রার মৃত্যুর পর এমন অনেক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা আমার হল, যার ফলে আমি প্রেততত্ত্ব নিয়ে গবেষণা শুরু করলুম। এখন কথা হচ্ছে–আত্মা দেহের মৃত্যুর পর থেকে যাচ্ছে। কিন্তু তার এ থাকাটা কীরকম? এর জবাব আমরা বিজ্ঞানের মাধ্যমেই পাচ্ছি। আপনারা জানেন, আলো শব্দ এসব হল একরকমের তরঙ্গ। একটা তরঙ্গের নির্দিষ্ট মাপে আমরা আলো দেখতে পাই বা শব্দ শুনতে পাই। কিন্তু আমাদের এমন কোন ইন্দ্রিয় নেই, যা সেই নির্দিষ্ট মাপের বাইরে কোন আলো বা শব্দ আমরা টের পেতে পারি। এখানেই আমরা অসহায়। এখন তাহলে দাঁড়াল, তরঙ্গতত্ত্ব। বিজ্ঞান আজ বলছে, আমাদের চিন্তা-ভাবনাও একরকম তরঙ্গ। মস্তিষ্কে তার উদ্ভব! মস্তিষ্কের তরঙ্গ নিয়েই গড়ে উঠেছে প্যারা-সাইকলজি শাস্ত্র। সব তরঙ্গেরই ধর্ম গতিশীলতা অর্থাৎ স্থানান্তরে চলাচলে সমর্থ সে। তাহলে দাঁড়াচ্ছে, মস্তিষ্কে যে বিশেষ মাত্রার তরঙ্গ উঠল, তা চলতে শুরু করল মস্তিষ্কের কেন্দ্র থেকে। এই তরঙ্গ ইথারের মতোই সর্বব্যাপী। পৃথিবীর সকল মস্তিষ্কে গিয়ে কঁপন তোলে। কিন্তু মুশকিল হয়েছে এই যে, আমরা এত নানা ব্যাপারে ব্যতিব্যস্ত থাকি, এত ঝঞ্ঝাট ও বৈষয়িক জটিলতায় আমাদের দিন কাটাতে হয় যে নিজের মস্তিষ্কতরঙ্গ নিয়েই কূল পাইনে অন্য বহিরাগত তরঙ্গের আঘাতে কী অনুভূতি আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হল, খোঁজ রাখিনে। ধরুন, কোন মানুষ মৃত্যুর মুহূর্তে তীব্রভাবে কিছু ভেবেছিল–হ্যাঁ, আবার বলছি তীব্রভাবে। এই তীব্র তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। প্রত্যেকটির মস্তিষ্কের স্নায়ুকেন্দ্রে আঘাত হানল। আমরা যদি সজাগ ও অনুভূতিশীল হই, তাহলে তা টের পাব। যেমন আমি আমার স্বামীর মৃত্যু টের পেয়েছিলুম ষাট মাইল দূর থেকে। আমার মনে হয়েছিল–কে যেন আমার অতি প্রিয়জন আমারই নাম ধরে কিছু বলতে চাইছেন।……
বাইরে কোথাও ফের বাজ পড়ল এবং তারপর আবছা শোনা গেল কে যেন দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে প্রচণ্ড। শ্রীমতী মালহোত্রা অস্ফুটস্বরে বলে উঠলেন– ওই বুঝি পারেখ এল!
কিন্তু দুমিনিট অপেক্ষা করার পরও বদ্রী তাকে নিয়ে এল না বা বদ্রী নিজেও কোন সাড়া দিল না। তাহলে কি আমাদের কানের ভুল?
শ্ৰীমতী মালহোত্রা ফের শুরু করলেন–হ্যাঁ, আমার ধারণা, সবচেয়ে তীব্র মস্তিষ্কতরঙ্গ বা ব্রেনওয়েভগুলো মোটামুটি অনুভূতিশীল সচেতন মানুষরা ধরতে পারেন এবং ব্যাখ্যা করতে পারেন। এই তীব্রতা কখন থাকে? আকস্মিকভাবে যখন কোন মানুষের মৃত্যু হয়, তখন। তাই আমার বক্তব্য, আমাদের খুব পরিচিত কোন মানুষ যদি আকস্মিক দুর্ঘটনায় অথবা কোনভাবে মারা গিয়ে থাকেন, তার সেই মৃত্যুকালীন তীব্র ব্রেনওয়েভটা ধরতে পারলে তারই সূত্রে আমরা তার আত্মাকে আকর্ষণ করে আনতে পারব।
কর্নেল স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলে উঠলেন রাইট, রাইট!
ডঃ পট্টনায়ক বললেন–খুবই যুক্তিসিদ্ধ।
জয়সোয়ল একটু হাসলেন মনে হল। অধ্যাপক দ্বিবেদী বললেন–তাহলে তো মিডিয়ামেরই পরিচিত কোন মানুষের আত্মা হওয়া দরকার!
জয়ন্তী কী বলতে যাচ্ছিল, শ্রীমতী মালহোত্রা বললেন–ঠিক বলেছেন প্রফেসর দ্বিবেদী। এক্ষেত্রে শ্যামলীকেই মিডিয়াম করেছি যখন, তার পরিচিত কোন আত্মা আনাই সহজ হবে। শ্যামলী, ডার্লিং! এমন কাকেও কি তোমার এ মুহূর্তে মনে পড়ছে–যিনি দুর্ঘটনায় অথবা ধরো, আততায়ীর হাতে হঠাৎ মারা পড়েছিলেন?
আমরা শ্যামলীর দিকে তাকালাম। সে অস্ফুট স্বরে শুধু বললে–হ্যাঁ।
জয়সোয়াল বললেন–একটা কথা! তাকে যদি আমরা সবাই না চিনি, তাহলে কীভাবে বুঝবো যে শ্যামলী আমাদের ঠকাচ্ছেন না? তাছাড়া, আমার যা জানা আছে–মিডিয়ামের মারফত আত্মা আসরে আসেন, কিন্তু তার জন্য সেই আত্মা সম্পর্কে আসরের সবাইকে চিন্তা করতে হয়। এক্ষেত্রে আমাদের কি তাহলে নির্বাক দর্শকের ভূমিকায় বসে থাকতে হবে?
শ্ৰীমতী মালহোত্রা বললেন–আমার এ আসরের রীতি একেবারে অন্যরকম। কারণ, আমি বিজ্ঞানের সূত্র অনুসারে ব্যাপারটা ঘটাতে চাই। কাজেই আমাদের এক্ষেত্রে শ্যামলীর ওপরই নির্ভর করতে হবে। আর–সে ঠকাচ্ছে কি না, তার। প্রমাণ পেতে আমাদের অসুবিধে হবে না। আমরা তাকে প্রত্যেকে প্রশ্ন করব। মৃত মানুষের আত্মা যেহেতু সর্বচর এবং সময়ের বাঁধনে বাঁধা তাকে না, তাই জয়সোয়াল যদি ইচ্ছে করেন, তাঁর নিজের ছেলেবেলার কোন ঘটনা সম্পর্কে আত্মা কিছু বলুক, তা অবশ্যই বলা উচিত। অন্তত আভাস দেওয়া উচিত। তা না হলে তো শ্যামলীর ওপর সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক।
এ সময় জয়ন্তী আমার ঊরুতে আঙুলের চাপ দিল। বুঝলুম, ওর বক্তব্য– শ্যামলী এবার ঠেলাটা টের পাক।
তা ঠিক। শ্ৰীমতী মালহোত্রা কঁকি বা চালাকির দরজা বন্ধ করে দিলেন। কে জানে কেন, অস্বস্তি হতে লাগল আমার। ওদিকে বাইরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সমানে চলেছে।
শ্ৰীমতী মালহোত্রা ঘড়ি দেখে বললেন–এবার আলো নেভাব। শ্যামলী, তোমার ভয় করছে না তো? এখনও বলো!
শ্যামলী মাথা দোলাল।
-ওক্কে! তাহলে আলো নিভলেই শ্যামলী তুমি তোমার সেই পরিচিত লোকটির সম্পর্কে চিন্তা শুরু করবে। খবরদার, অন্য কোন চিন্তা নয়। শুধু তার কথা ভাববে। প্রথমে তার চেহারাটা সামনে আনবে। তারপর মনে মনে তাকে ডাকবে। তার সম্পর্কে প্রত্যেকটি স্মৃতি ব্যবহার করবে। আশা করি, আর কিছু বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। এবার আমরাও বিমূর্তভাবে শ্যামলীর সেই আত্মাকে আহ্বান জানাব। প্লিজ, কেউ অন্যমনস্ক হবেন না।
তারপরই টেবিলের পাশে কোথাও সুইচ টিপে দিলেন উনি। আলো নিভে গেল। ঘরটা প্রায় অন্ধকারে ভরে গেল তক্ষুনি। আমার মনে হল, চোখ নামে কোন ইন্দ্রিয় আমার নেই। শ্ৰীমতী মালহোত্রা শুধু একবার ফিসফিস করে বললেন–কোন শব্দ নয়। নড়বেন না প্লিজ। শ্যামলীর পরিচিত আত্মাকে মনে মনে ডাকুন।
দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল যেন। বাইরে ঝড়বৃষ্টি আর মেঘের তুমুল গর্জন– এখানে এই অন্ধকারে যেন কজন মানুষ হারিয়ে গেছে পৃথিবীর বিপুল জীবনধারা থেকে। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে যেন।
কতক্ষণ কেটে গেল। ক্রমশ আমার মনে সেই অস্বস্তিটা বেড়ে যাচ্ছিল। একটা চাপা আতঙ্ক গলা শুকিয়ে কাঠ করে দিচ্ছিল। সত্যি কি কোন আত্মার আবির্ভাব আসন্ন? চমকে উঠছিলুম, কার ঠাণ্ডা অতি ঠাণ্ডা ছোঁওয়া পাচ্ছি না তো? কোন বরফের হাত হিংস্রতায় নিঃশব্দতায় আমারই গলায় চেপে বসছে না তো? আবার প্রচণ্ড শব্দে বাজ পড়ল। বাড়িটা কেঁপে উঠল। তারপর শ্যামলীর ওখান থেকে কী একটা আবছা শব্দ হল।
তারপরই শ্যামলীর কণ্ঠস্বর শুনলুম। এ কণ্ঠস্বর যে শ্যামলীরই, তা অবশ্য বলা কঠিন। কেমন চাপা, নাকিস্বর, দুরারোগ্য রোগে ভুগছে এমন দুর্বল কারো গলা!–আমি…..আমি কোথায় আছি?
আরও দুবার কথাটা শুনলুম। তারপর শ্রীমতী মালহোত্রাকে চাপাস্বরে বলতে শোনা গেল–মিসেস সরোজিনী মালহোত্রার ঘরে।
–কেন? এখানে কেন? এখানে কেন আমি? কেন–কেন–কেন?…..
তার আগে বলুন, কে আপনি?
–আমি…..তাই তো! আমি কে? কে আমি? কে?
–স্মরণ করুন। ভেবে দেখুন, কে আপনি।
–মনে পড়ছে না। আমার মনে পড়ছে না। কিছু মনে পড়ছে না।
–এখানে আসার আগে কোথায় ছিলেন?
–কোথায় ছিলুম? আমি…আমি কোথায়…হ্যাঁ…..ছিলুম পাহাড়ী খাদে।
–পাহাড়ী খাদে? ওখানে কেন বলুন তো?
–জানি না। কিছু জানি না। আমি জানি না।
–কোন পাহাড়ী খাদে? এ প্রশ্নটা করলেন অধ্যাপক অরিন্দম দ্বিবেদী।
–ভূতের পাহাড়ের পশ্চিমে। ভূতের পাহাড়ে–ভূতের পাহাড়ে…..
শ্ৰীমতী মালহোত্রার তীব্র চাপা কণ্ঠস্বর শোনা গেল। কিন্তু কে? আপনি
–আমার কষ্ট হচ্ছে, খুব কষ্ট হচ্ছে। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।
-কে আপনি? এ কণ্ঠস্বর জয়সোয়ালের।
–আমার ঘাড় ভেঙে গেছে। লাংস ফেটে গেছে। হার্ট গুঁড়ো হয়ে গেছে।
শ্ৰীমতী মালহোত্রা বললেন–আপনাকে ফেলে দিয়েছিল কেউ?
–ফেলে দিয়েছিল। ডেকে নিয়ে গিয়ে ফেলে দিয়েছিল। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল!
–কে ফেলে দিয়েছিল? কী নাম তার?
–বলব না, আমি বলব না, কিছুতেই বলব না।
–কেন ফেলে দিয়েছিল?
–আমি তাকে চিনতুম। এবার সে ভয় পেয়েছিল। খুব ভয় পেয়েছিল।
এবার কর্নেল বললেন–কিন্তু আপনি কে?
বলব না, বলব না। বলব না।
–না বললে আপনার হত্যাকারীকে শাস্তি দেওয়া যাবে না যে!
–কে? কে দেবেন শাস্তি? কে দেবেন তাকে শাস্তি? কে–কে?
–আমি কর্নেল নীলাদ্রি সরকার বলছি–আই প্রমিজ।
–চিনি আপনাকে। খুব চিনি। চিনি চিনি–চিনি……।
–তাই বলছি, বলুন কে আপনি?
বলব? আমি বলব বলব বলব?
যেন সাতটি কণ্ঠ একসঙ্গে বলে উঠল–বলুন, বলুন!
–আমি……মোহন পারেখ। মোহন-মোহন পারেখ।
ঘরের মধ্যে ভয়ঙ্কর শব্দে বাজ পড়ল যেন। সবাই একসঙ্গে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলুম-মোহন পারেখ!
তারপর শ্রীমতী মালহোত্রা বললেন–অসম্ভব! মোহন পারেখ জীবিত। তার এখানে আসার কথা ছিল। ঝড়জলে আটকে গেছে হোটেলে। আপনি মিথ্যে বলছেন। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছটাতেও সে ফোন করেছিল ঝড়জলে বেরুতে পারছে না।
–এখন করল না কেন? কেন করল না? কেন ফোন করলুম না?
কয়েক মুহূর্তের স্তব্ধতা। তারপর আবার মেঘ ডেকে উঠল। একবার নয়, পর পর কয়েকবার। ঘর প্রচণ্ড জোরে কেঁপে উঠল। সেইসময় যেন একটা আবছা কী একটা শব্দ শুনলুম। তারপর শ্রীমতী মালহোত্রা একটু চেঁচিয়ে বলে উঠলেন–মিথ্যা! শ্যামলীর চালাকি। এমন চমৎকার আসরটা ভেস্তে দিলে বোকা মেয়েটা!
তারপর চেয়ার নড়ার শব্দ হল। তারপরই সেই নীল আলোটা জ্বলে উঠল। প্রথমেই আমার চোখ গেল শ্যামলীর দিকে। সে চেয়ারে হেলান দিয়েছে, মাথাটা একপাশে কাত হয়েছে, ডান হাতটা ঝুলছে এবং বাঁ হাত ঊরুর ওপর পড়ে রয়েছে। অজ্ঞান হয়ে গেছে নাকি?
জয়ন্তী চেঁচিয়ে উঠল শ্যামলী, শ্যামলী!
শ্ৰীমতী মালহোত্রা দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিরক্ত হয়ে বললেন–ও মোটেও অজ্ঞান হয়নি! ও চালাকি করছে! আজকালকার মেয়েগুলোকে আমি তো কম চিনিনে? ইস্! কী চমৎকার সময় আজ পাওয়া গিয়েছিল। এই ঝড়বৃষ্টির রাতেই তো ওরা আসে!
জয়সোয়াল খুকখুক করে হেসে বললেন-মোহন পারেখ! মাই গুডনেস! ছোকরা শুনলে খেপে আগুন হয়ে যাবে! ..
অধ্যাপক উদ্বিগ্ন স্বরে বললেন–দেখুন, আমার মনে হচ্ছে, আপনারা ভুল করছেন! শ্যামলী হয়তো সত্যি অজ্ঞান অবস্থায় রয়েছে!
এই শুনে জয়ন্তী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল তারপর ওর দিকে এগিয়ে গেল। শ্যামলী! এই শ্যামলী!
এই সময় শ্রীমতী মালহোত্রা দেয়ালের দিকে এগিয়ে বড় আলোর সুইচ টিপে দিলেন। উজ্জ্বল সাদা আলোয় ঘর ভরে গেল। তারপর দেখলুম জয়ন্তী, শ্যামলীর কাঁধে হাত রেখে ফের একবার শ্যামলী বলে ডেকেই ভাঙা গলায় বিস্ময়-আতঙ্ক মেশানো চিৎকার করে উঠল–এ কী! শ্যামলীর কী হয়েছে? ওর গা এত ঠাণ্ডা কেন? চেহারা এমন কেন?
কর্নেলের দিকে তাকালুম। ভুরু কুঁচকে তীব্র দৃষ্টে শ্যামলীকে দেখছিলেন উনি। এবার জয়ন্তীর কথার সঙ্গে সঙ্গেই উঠে দাঁড়িয়ে অস্ফুটস্বরে বললেন! শ্যামলীর চেহারা অমন কেন? নানা, এ অদ্ভুত–অবিশ্বাস্য!
এতক্ষণে ঠাহর হল। তাই তো শ্যামলীর অত সুন্দর মুখটা ঠিক যেন বাঁদরের মুখের চেয়ে কুৎসিত দেখাচ্ছে। ওই মুখ কি মানুষের? যেন কোন ভয়ঙ্কর শক্তি ওর চেহারাকে যতটা পারে বীভৎস করে গিয়েছে অন্ধকারের সুযোগে। মাথার চুল খাড়া হয়ে গেল। গায়ে কাঁটা দিল। অজ্ঞাত ভয়ে থরথর। করে কেঁপে উঠলুম। শ্যামলীর দিকে তাকাতে সাহস পেলুম না আর।
কয়েক মুহূর্তের জন্যে সবাই স্তব্ধ হয়ে প্রচণ্ড বিস্ময় আর আতঙ্কে ওই বীভৎসতা লক্ষ্য করছিল। তারপর কর্নেল গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন–জয়ন্তী, তুমি সরে দাঁড়াও ওখান থেকে। ডঃ পট্টনায়ক, প্লিজ! একবার পরীক্ষা করে দেখুন তো শ্যামলীর কী হয়েছে?
শ্রীমতী মালহোত্রার মুখ ততক্ষণে সাদা হয়ে গেছে। ভয়ার্তস্বরে বললেন– তাহলে কি শ্যামলী সত্যিসত্যি অভিনয় করেনি? কিন্তু মোহন পারেখ–না, না, সে অসম্ভব!
ডঃ পট্টনায়ক এগিয়ে গিয়ে প্রথমে শ্যামলীর নাড়ী দেখলেন। ওঁর মুখে বিস্ময় দেখলুম। তারপর হাতটা রেখে চোখের পাতা পরীক্ষা করলেন। তারপর ভাঙা গলায় একটু কেসে শান্তভাবে বললেন–কর্নেল, শ্যামলী মারা গেছে!
জয়ন্তী ডুকরে কেঁদে উঠল–তুই এ কী করলি শ্যামলী!
শ্ৰীমতী মালহোত্রা ওকে দুহাতে ধরে তফাতে নিয়ে গেলেন। ধরা গলায় বললেন–ক্ষমা করো, তোমরা আমায় ক্ষমা করো! এ হবে আমি একটুও ভাবিনি! প্রেততত্ত্বের একটা বইতে অবশ্য সতর্ক করা হয়েছে–এ আগুন নিয়ে খেলা। সাবধানে আত্মাদের ডাকতে হয়। কিন্তু আমি সাবধান করে দিইনি ওকে। আমারই ভুলের জন্যে ফুলের মতন অমন কচি মেয়েটা……ওঃ ভগবান! এ আমি কী করলুম!
শ্যামলী মারা গেছে? কর্নেল বলে উঠলেন। সে কী! না–না–এ অবিশ্বাস্য!
জয়সোয়াল আস্তে আস্তে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।
–আপনার ভুল হচ্ছে না তো ডঃ পট্টনায়ক?
ডঃ পট্টনায়ক মাথা দোলালেন। না। শ্যামলী আর বেঁচে নেই।
অধ্যাপকও উঠে দাঁড়ালেন। কিন্তু, কী ভাবে মৃত্যু হল ওর? আপনারা কি বলতে চান কোন প্রেতশক্তিই ওকে হত্যা করে গেছে?
জবাবটা দিলেন শ্রীমতী মালহোত্রা। হ্যাঁ, কোন দুষ্ট আত্মার আবির্ভাব ঘটেছিল ওর মধ্যে। মোহন পারেখ কখনো তার নাম হতে পারে না। নিজের নামটা সে বলতে চায়নি। কারণ, আপনারা বুঝতে পারছেন না–মোহন পারেখ। যদি সত্যি আজ মারা গিয়ে থাকে, শ্যামলীর সঙ্গে ওর পরিচয় থাকা কী ভাবে সম্ভব?
জয়সোয়াল বললেন–তাহলে মানতে হয় সত্যিসত্যি ভূত এসে মেরে গেল শ্যামলীকে? অ্যাবসার্ড! ইমপসিবল! আনবিলিভেবল!
কর্নেল ঘরের মেঝের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। মুখ তুলে শুধু বললেন রাইট, রাইট! কিন্তু…..না, না! আমার বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পাচ্ছে ক্রমশ।
জয়সোয়াল দৃঢ়স্বরে বললেন–চারপাশে আমরা রইলুম জলজ্যান্ত এতগুলো মানুষ! আর ভূত এসে মারল? অসম্ভব?
শ্ৰীমতী মালহোত্রা বললেন–কিন্তু ওর চেহারাটা দেখুন! মিঃ জয়সোয়াল, আপনি তো পুলিশ সুপার ছিলেন। অনেক মার্ডারড় ডেডবডি দেখেছেন। শ্যামলীর ডেডবডিটা দেখেও কি বুঝতে পারছেন না কী ঘটেছে?
অধ্যাপক দ্বিবেদী ভীতস্বরে বললেন–ভয় পেয়ে মারা পড়েনি তো?
আমি এতক্ষণ কাঠ হয়ে বসেছিলুম। এবার সংবিৎ ফিরে এল। উঠে দাঁড়িয়ে বললুম-কর্নেল! আমার মনে হচ্ছে, ব্যাপারটা এখনই পুলিসকে জানানো দরকার। আফটার অল–এ একটা আকস্মিক মৃত্যু!
কর্নেল আমার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে বললেন রাইট, রাইট! আমার জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পেতে বসেছিল, জয়ন্ত। এমন অদ্ভুত মৃত্যু আমি জীবনে কখনও দেখিনি। মিসেস মালহোত্রা, ওকে ফোনটা দেখিয়ে দিন প্লিজ! আরজয়ন্তী, তুমি আমার কাছে এস। মিঃ জয়সোয়াল আপনি জানলা খুলে দেখুন তো ঝড়বৃষ্টির অবস্থাটা কী! অধ্যাপক, আপনি এখানে সরে আসুন। ডঃ পট্টনায়ক আপনি শ্যামলীর পাশেই থাকুন।
নির্দেশগুলো শুনতে শুনতে আমি শ্রীমতী মালহোত্রার সঙ্গে দরজার দিকে এগিয়ে গেলুম। দরজার যা ব্যবস্থা, ভেতর থেকে টানলেই তালাবন্ধ হয়ে যায়। চাবি ছাড়া খোলা যায় না। শ্রীমতী মালহোত্রার ট্র্যাকে চাবির গোছা লক্ষ্য। করম। দরজা খুলে ডাইনিং হলে ঢুকে উনি বললেন–ওই যে ফোন!
ডাইনিং হলে একা বদ্রী বসে ছিল। গৃহকর্ত্রীকে দেখে বলল–পারেখ। সায়েব তো আসেননি মা। একবার যেন কে দরজায় ধাক্কা দিল। খুললুম, কিন্তু কাকেও দেখতে পেলুম না!
শ্ৰীমতী মালহোত্রা তাকে কিছু বললেন না। গম্ভীর মুখে আবার স্টাডিতে ফিরে গেলেন। আমি ততক্ষণে হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এমন হতভম্ভ যে ওঁকে বলতেই ভুলে গিয়েছি যে টেলিফোনটা যাকে বলে ডেড। নিষ্প্রাণ!
কয়েকবার টেপাটেপি করে বদ্রীকে ইশারায় ডাকলুম। সে কাছে এসে সেলাম দিয়ে বলল–লাইন পাচ্ছেন না হুজুর?
না বদ্রী। মনে হচ্ছে, লাইনটা কেউ কেটে রেখেছে।
বদ্রী চমকে উঠে বলল–তাজ্জব! কে কাটবে লাইন? এই তো সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় পারেখজিকে ফোন করতে বললেন মাইজি। ফোন করলুম!
–পারেখজি? মানে–মোহন পারেখ?
–জি হাঁ সাহাব।
–পেলে ওঁকে?
–জরুর পেলুম। বললুম–মাইজি আপনার ইন্তেজার করছেন। তো পারেখজি বললেন–এখনই আসছি। তারপর তো ঝড় উঠল।
বদ্রী, এসো, আমরা লাইনটা খুঁজে দেখি–ঘরেই কোথাও কিছু ঘটেছে। নাকি! বদ্রী ব্যস্ত হয়ে লাইনটা খুঁজতে শুরু করল। আমিও তার সঙ্গে পরীক্ষা করতে থাকলুম। অবশেষে হাত পাঁচেক দূরে একটা বড় আলমারির পিছনে আবিষ্কার করলুম, তারটা সুন্দরভাবে কেউ দুভাগে কেটে রেখেছে!
বদ্রী চেঁচিয়ে উঠল–হ্যায় রামজি! কে এমন কাজ করল?
বললুম-বদ্রী, ব্যস্ত হতে হবে না। শোন, তুমি গিয়ে দরজাটা খুলে দেখ তো, ঝড়বৃষ্টি কমেছে নাকি।
বদ্রী সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে দরজা খুলে দিল। ঝড় কমেছে শুধু ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি ঝরছে। আমিও ওর পেছনে দাঁড়িয়ে দেখে নিলুম। কিন্তু এক মুহূর্তও দাঁড়াতে সাহস হল না। ওই অন্ধকারে যেন আজ রাতে দলে দলে অশরীরী আত্মারা এসে অপেক্ষা করছে, কখন কার নাম ধরে ডাকা হবে। আতঙ্কে কাঠ হয়ে বললুম–দরজা বন্ধ করো বদ্রী! তারপর প্রায় দৌড়ে স্টাডির দরজায় হাজির হলুম। বোতাম টিপে দরজা খুলে দিলেন শ্রীমতী মালহোত্রা। তখন রুদ্ধশ্বাসে বললুমকর্নেল, কর্নেল! কে ওঘরে ফোনের লাইনটা কেটে রেখেছে।
শ্ৰীমতী মালহোত্রা চেঁচিয়ে উঠলেন–হোয়াট? ফোনের লাইন কেটেছে?
ঘরের সবাই চমকে উঠলেন একসঙ্গে। কর্নেল চিন্তিত মুখে এক মুহূর্ত কী ভেবে নিয়ে বললেন মিসেস মালহোত্রা! এখনই বদ্রীকে আলো দিয়ে থানায় পাঠান। এক মুহূর্ত দেরি নয়। জয়ন্ত, প্লিজ বদ্রীর সঙ্গে যাও! আগাগোড়া সব জানাবে ওঁদের! কুইক!
আবার বেরিয়ে এলুম গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে।