অধ্যাপক ত্রিবেদী ও বাঘা মুকুন্দ
তোমরা যারা আগের কাহিনি অধ্যাপক ত্রিবেদী ও কালো বিড়াল পাঠ করেছ, সেই পাঠক-পাঠিকারা নিশ্চয়ই জানো উদ্ভিদবিজ্ঞানী ত্রিলোকনাথ ত্রিবেদী কলকাতার নিকটবর্তী একটি শরতলিতে এক আশ্চর্য গাছ আবিষ্কার করেছেন। ওই গাছের পাতা চিবিয়ে খেলে শরীরে অসাধারণ শক্তির উদ্ভব হয়। কিন্তু সেই আশ্চর্য পাতার ভেষজ গুণে সঞ্চারিত আশ্চর্য শক্তি কতক্ষণ স্থায়ী, সেকথা এখনও জানতে পারেননি অধ্যাপক ত্রিবেদী। সেদিন সকালবেলা ওই আশ্চর্য পাতা কয়েকটি ভক্ষণ করে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলেন অধ্যাপক মহাশয় এবং সর্বাঙ্গে প্রচণ্ড শক্তির জোয়ার অনুভব করতে করতে পরমানন্দে পদচালনা করছিলেন। ত্রিবেদীর পা দুটির সঙ্গে সমতা রেখে তার মস্তিষ্ক ছিল সমান সক্রিয় অর্থাৎ পদচালনা করতে করতেই ত্রিবেদী মনে মনে চিন্তা করছিলেন- একঘণ্টা হল কয়েকটি আশ্চর্য-পাতা খেয়েছি; এখনও শরীরে প্রচণ্ড শক্তি অনুভব করছি। কিন্তু কতক্ষণ পর্যন্ত এই অস্বাভাবিক ক্ষমতা বজায় থাকবে সেইটা জানা দরকার। ওই যে ওখানে কয়েকটা ছোটো ছেলে ফুটবল খেলছে, ওদের সঙ্গে খেললে আশ্চর্য-পাতার শক্তি কিছুটা পরখ করা যায়… আরে! আরে! বলটা যে এইদিকেই আসছে!
হ্যাঁ, সামনের মাঠে কয়েকটা ছেলে ফুটবল খেলছে বটে, তাদের দিকেই অগ্রসর হলেন অধ্যাপক ত্রিবেদী। হঠাৎ একজন খেলোয়াড়ের প্রবল পদাঘাতে বলটা খুব উঁচুতে উঠে শূন্য-পথে পাশের পুকুরের দিকে রওনা হল। যে ছেলেটি বলে লাথি মেরেছিল, সে সক্ষোভে বলে উঠল, ঈস! বড় জোরে হয়ে গেল!
আর একজন খেলোয়াড় বলল, আবার তুই বলটা পুকুরে ফেললি। কিন্তু না, বলটা পুকুরের দিকে রওনা দিলেও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারল না– এক লাফ মেরে শূন্যপথেই পলাতক ফুটবলকে গ্রেপ্তার করে ফেললেন ত্রিবেদী!
বালক খেলোয়াড়ের দল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ– কোনো মানুষ যে মাটি থেকে হঠাৎ লাফিয়ে আট-দশ ফুট উঁচুতে উঠে শূন্যপথে ধাবমান একটি ফুটবলকে ধরে ফেলতে পারে, এমন অবিশ্বাস্য আশ্চর্য ব্যাপার তারা চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারছিল না। বিশেষত আগন্তুক ভদ্রলোক বয়স্ক মানুষ তার চেয়ে অনেক কমবয়সী কোনো যুবকের পক্ষেও এমন হনুমান-সদৃশ লম্ফপ্রদান অসম্ভব সুতরাং ছেলের দল চমকে গিয়ে কিছুক্ষণ কোনো কথাই কইতে পারল না।
অবশেষে একজন খেলোয়াড়ের গলায় স্বর ফুটল, ইয়ে আপনি স্যার দারুণ লাফাতে পারেন তো!
আর একজন বলল, হাই জাম্প কমপিটিশনে নামলে আপনি সারা দুনিয়াকে চমকে দিতে পারেন।
হয়তো পারি, ত্রিবেদী হাসলেন, তবে আপাতত সেরকম কোনো ইচ্ছা আমার নেই। বরং তোমরা যদি আমাকে খেলতে নাও, তাহলে আমি খুশি হব।
খেলতে! আপনাকে। আমাদের সঙ্গে! একাধিক কণ্ঠে জাগল বিস্মিত কলরব, না স্যার। আপনি যে-দলে খেলবেন সেই দলই জিতবে। আপনার লাফের যা বহর দেখছি, তাতে অনুমান করছি আপনার শটু-এর ক্ষমতাও দারুণ–আমাদের সঙ্গে খেলে আপনি মজা পাবেন না। আপনি স্যার দয়া করে বলটা আমাদের দিকে ছুঁড়ে দিন।
ত্রিবেদী দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, বেশ বলটা ধরো। তিনি ফুটবলটা ছুঁড়ে দিলেন এবং সবিস্ময়ে দেখলেন বলটা ক্রমশ ছোটো হয়ে শুন্যে মিলিয়ে যাচ্ছে। ত্রিবেদী নিজের মনেই বলে উঠলেন, এ কী কাণ্ড! আমি তো খুব জোরে বলটা ছুড়িনি, তবু ওটা অত উপরে উঠে গেল! আশ্চর্য-পাতা আমার শরীরে এমন অসম্ভব শক্তি এনে দিয়েছে যে, আমি নিজেই চমকে যাচ্ছি!
ছেলের দলও বিলক্ষণ চমকে গিয়েছিল, তারা আকাশের দিকে তাকিয়ে সাগ্রহে লক্ষ করছিল, ফুটবলের অবতরণ-পর্ব- বল মাটিতে পড়ার আগেই তাকে ধরে ফেলার জন্য প্রস্তুত হল কয়েকজন খেলোয়াড়।
কিন্তু সকলের প্রস্তুতি ব্যর্থ করে ফুটবলটা মাঠ ডিঙিয়ে এত দুরে চলে গেল যে, প্রাণপণে ছুটেও খেলোয়াড়রা তার নাগাল পেল না। খেলার মাঠের পেছন দিক দিয়ে যে পথটা চলে গেছে, সেই পথের উপর দিয়ে ঝড়ের বেগে সাইকেল চার্লিয়ে ছুটে আসছিল এক যুবক–বলটা এসে পড়ল তার ঘাড়ে এবং অতর্কিত আঘাতে ভারসাম্য হারিয়ে সাইকেল সমেত আরোহী হল ধরাপৃষ্ঠে লম্বমান!
সশব্দে শ্বাস টেনে একটি ছেলে বলে উঠল, সর্বনাশ! এ যে বাঘা মুকুন্দ! শিগগির পালা, ধরতে পারলে পিটিয়ে ছাতু করে ফেলবে।
পরামর্শ গৃহীত হল তৎক্ষণাৎ। মুহূর্তের মধ্যে ছত্রভঙ্গ হয়ে ছেলের দল যে-যেদিকে পারে ছুটতে শুরু করল তিরবেগে!
ধরাশায়ী যুবক সাইকেল ফেলে এক লাফে উঠে দাঁড়াল, তারপর তাড়া করে ধরে ফেলল একটি ছেলেকে। ভয়ে বেচারার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল, সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, আমি তোমার গায়ে বল ফেলিনি মুকুন্দদা। আমার দোষ নেই, আমাকে ছেড়ে দাও।
জ্বলন্ত চক্ষে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে মুকুন্দ বলল, হতে পারে তুই বল ফেলিসনি, কিন্তু যে ফেলেছে তার নামটা বলে ফ্যা। আজ না-হোক কাল তাকে নির্ঘাত ধরতে পারব। হতভাগার দল, রাস্তা দিয়ে তোক চলাচল করে, খেয়াল নেই?
ছেলেটিকে সজোরে এক ঝাঁকুনি দিয়ে মুকুন্দ বলল, বোবা থেকে নিস্তার পাবি না। শিগগির বল কে ফেলেছে ফুটবল আমার ঘাড়ে, নইলে—
বাক্য অসমাপ্ত রেখে হাতের ভঙ্গিতে মুকুন্দ বুঝিয়ে দিল অপরাধীর নাম না বললে ধৃত বালকের ভাগ্যে জুটবে অশেষ লাঞ্ছনা।
কাঁদো কাঁদো হয়ে ছেলেটি বলল, ওই যে ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন ওইখানে, উনিই বলটা ফেলেছেন তোমার ঘাড়ে!
ছেলেটির নির্দেশ অনুসারে দৃষ্টিনিক্ষেপ করে মুকুন্দ দেখল নিতান্ত নিরীহ গোছের একটি রোগা চেহারার ভদ্রলোক তাদের দিকেই এগিয়ে আসছেন। এমন একটি বয়স্ক মানুষ ফুটবলের আঘাতে তাকে কাবু করেছেন বলে ভাবতে পারল না মুকুন্দ, ছেলেটিকে আর একটা ঝাঁকুনি দিয়ে সে বলল, ফের মিছে কথা? চড়-চাপড় না পড়লে সত্যি কথাটা বেরুবে না দেখছি। বাঁচতে চাস তো বল সত্যি কথা।
আহা! ছোটো ছেলেকে মারধর করছ কেন? ও সত্যি কথাই বলেছে, ত্রিবেদী ততক্ষণে কাছে এসে পড়েছেন, বলটা আমিই ছুঁড়েছিলাম বটে। তবে তুমি যে ওই সময়ে ওইখান দিয়েই সাইকেল চার্লিয়ে আসবে সেকথাটা জানা ছিল না তত তাই অঘটন ঘটে গেছে। ইচ্ছে করে কেউ কারও ঘাড়ে বল ফেলে না এটা তোমার বোঝা উচিত।
অ! ছেলেটিকে ছেড়ে দুই হাত কোমরে রেখে মুকুন্দ এবার ত্রিবেদীর দিকে ভালোভাবে চেয়ে দেখল, আপনার নাম তো ত্রিলোকনাথ ত্রিবেদী? পাড়ায় নতুন এসেছেন? কী সব বিজ্ঞান-টিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করেন শুনেছিলাম। তা ওইসব নিয়ে তো বেশ ছিলেন, এখন হঠাৎ শিং ভেঙে বাছুরের দলে ভিড়েছেন? তো ভিড়েছেন, ভিড়েছেন, ভালোই করেছেন কিন্তু চোখেও কি দেখতে পান না? নাকি চারটে চোখেও চলছে না, অ্যাঁ?
মুকুন্দের দিকে তাকালেন ত্রিবেদী- চাপা গোল গলার গেঞ্জির ভিতর দিয়ে ঠেলে বেরিয়ে আসছে চ্যাটালো বুক, দুই হাতের স্ফীত পেশিগুলোর দিকে একনজর তাকালেই বোঝা যায় নিয়মিত ব্যায়াম না করলে এমন চেহারা হয় না– অধমাঙ্গে শর্টস বা হাফ-প্যান্টের তলা থেকে উরু এবং পায়ের দৃঢ়বদ্ধ মাংসপেশি জানিয়ে দিচ্ছে যুবকটি উর্ধ্বাঙ্গের ন্যায় নিম্নাঙ্গের পেশীগুলির উন্নতি সাধনেও অতিশয় তৎপর! ত্রিবেদী বুঝলেন তার সামনে দণ্ডায়মান যুবকটি একজন ব্যায়ামবীর; তার পেশিপুষ্ট বিশাল দেহের দিকে তাকিয়ে তিনি দস্তুরমতো দমে গেলেন। পরক্ষণেই তার মনে হল আশ্চর্য-পাতার আশ্চর্য ক্ষমতা বোধ হয় তার মধ্যে এখনো জাগ্রত, দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ত্রিবেদী অনুভব করলেন তার দেহের শিরায় শিরায় ছুটছে অসীম শক্তির তরঙ্গ; কিন্তু এই প্রকাণ্ড দৈত্যের সঙ্গে তিনি কি লড়তে পারবেন?… হঠাই তার মনে পড়ে গেল দুদিন আগের ঘটনা এক পদাঘাতে একটা কুকুরের মৃতদেহকে বিশ-পঁচিশ হাত দূরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সামনে দাঁড়ানো দৈত্যটার পক্ষেও ওই কাজ করা কি সম্ভব? মুহূর্তে মনস্থির করে ফেললেন ত্রিবেদী, যা হয় হবে- আশ্চর্য পাতার ক্ষমতা পরখ করার উপযুক্ত পরিস্থিতি এবং সুযোগ তাঁর সামনে উপস্থিত, এই সুযোগ অবহেলা করা উচিত নয়। সুতরাং মুকুন্দের চোখের দিকে তাকিয়ে গলার স্বর যথাসম্ভব গুরুগম্ভীর করতে সচেষ্ট হলেন ত্রিবেদী, ভদ্রভাবে কথা বলো, নইলে–
নইলে কী করবেন? হেসে উঠল মুকুন্দ, মারবেন নাকি? আচ্ছা, আমার এই আঙুলটা বাঁকাতে পারবেন?
ত্রিবেদীর নাকের সামনে বুড়ো আঙুল তুলে ধরল মুকুন্দ।
ত্রিলোকনাথ ত্রিবেদী মেধাবী ছাত্র হিসাবে খুব ছোটোবেলা থেকেই গুরুজনদের এবং শিক্ষকমণ্ডলীর প্রশংসা পেয়েছেন। পরবর্তীকালে উদ্ভিদবিজ্ঞানী হিসাবে তিনি যথেষ্ট খ্যাতিলাভ করেছেন। কিন্তু কোনোদিনই– এমন কি কিশোর বয়সেও কখনো তিনি হাতহাতি মারামারি করেননি। কখনো কখনো অবশ্য দুর্বিনীত ব্যক্তির সম্মুখীন হয়ে তিনি অনুভব করেছেন সময় বিশেষে মারামারি করার প্রয়োজন আছে। তবে দুর্বল ক্ষীণদেহ নিয়ে তার পূর্বোক্ত অনুভূতিকে বাস্তবে প্রকাশ করতে সচেষ্ট হলে যে বিপদ ঘটতে পারে, সেটা বুঝেই দুর্জনের সঙ্গ পরিত্যাগ করে তিনি মাঝে-মাঝে সরে এসেছেন। ঐ ধরনের কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে তার অল্পবয়সে– বিজ্ঞানী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পর প্রবীণ বয়সে কোনোদিনই তাকে অপ্রীতিকর অপমানজনক অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়নি। এখন হঠাৎ এই উদ্ধত যুবকের ব্যবহারে তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠলেন, মকলের দিকে একবার জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার বদ্ধাঙ্গলি-প্রসারিত হস্তের কবজি চেপে ধরলেন তিনি, আঙুল বাঁকা করব না বৎস, গোটা শরীরটাকেই বাঁকিয়ে দিচ্ছি।
মুকুন্দের হাত থেকে অব্যাহতি পেয়ে যে-ছেলেটি একটু দূরে দাঁড়িয়ে ভাবছিল, ত্রিবেদী স্যারের বরাতে আজ দুর্গতি আছে- সে অবাক হয়ে দেখল মর্তিমান বিভীষিকা বিখ্যাত বাঘা মুকুন্দের মুখে ফুটে উঠেছে নিদারুণ যন্ত্রণার চিহ্ন! একবার ঝটকা মেরে সে হাতটাকে ত্রিবেদীর কবল থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু তার চেষ্টা সফল হল না… অবশেষে তার গলা থেকে বেরিয়ে এল কাতর আর্তনাদ, ছাড়ুন, ছাড়ুন, লাগছে!
ছেড়ে দেব? ত্রিবেদী খুব নিরীহভাবে জানতে চাইলেন, খুব লাগছে বুঝি? আচ্ছা, তবে ছেড়ে দিলাম।
পরক্ষণেই মুকুন্দর বিশাল দেহ সবেগে শূন্যে উঠে সশব্দে ছিটকে পড়ল মাটির উপর!
ত্রিবেদী বললেন, আচ্ছা, এইবার তুমি উঠে এসে আমার আঙুলটা বাঁকাও তো দেখি।
অতিকষ্টে উঠে বসে যাতনাবিকৃতস্বরে মুকুন্দ বলল, রক্ষে করুন মশাই। আমার নাম মুকুন্দ, লোকে বলে বাঘা মুকুন্দ– সেই বাঘকে আপনি এক আছাড়ে ছাগল বানিয়ে দিয়েছেন!
সে একবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেই আবার আর্তনাদ করে বসে পড়ল। তারপর একটু বিশ্রাম নিয়ে সে উঠে দাঁড়াল বটে, কিন্তু সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারল না– দুই হাতে কোমর চেপে ধরে সে নিজেকে খাড়া রাখতে চেষ্টা করছিল এবং তার গলা থেকে বেরিয়ে আসছিল অস্পষ্ট আর্তস্বর!
ত্রিবেদী নিজেও আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন, মুকুন্দের দুরবস্থা দেখে তার মায়া হল, এগিয়ে এসে তিনি বললেন, খুব লেগেছে?
লেগেছে মানে? বিকৃতস্বরে মুকুন্দ বলল, মনে হচ্ছে আমার কোমরের উপর এক ডজন হাতি ডন-বৈঠক দিচ্ছে! আপনি স্যার, আমার আর আমাদের পাড়ার সর্বনাশ করলেন- উঁহু!
তার মানে? ত্রিবেদী হতভম্ব, তোমার মতো জোয়ান ছেলে এই আঘাতের ফলে আর কতক্ষশ কাবু হয়ে থাকবে? আর পাড়ার কথা উঠছে কিসে? আমি তোমাদের পাড়ার কী সর্বনাশ করলাম?
–আজ আমাদের পাড়া অর্থাৎ গোলাপ কলোনির সঙ্গে বাগনান ক্লাবের কপাটি প্রতিযোগিতা আছে। আমি না খেললে আমাদের পাড়া নির্ঘাত হেরে যাবে। কিন্তু আপনি আছাড় মেরে আমার কোমর এমন মচকে দিয়েছেন যে, খেলা তো দূরের কথা, উঠে দাঁড়াতেও আমার কষ্ট হচ্ছে।
হ্যাঁ, স্যার সত্যি কথা, মুকুন্দের কবলমুক্ত হয়ে যে বালকটি এতক্ষণ বাঘা মুকুন্দ আর অধ্যাপক ত্রিবেদীর দ্বৈরথ উপভোগ করেছিল, সে এইবার বলে উঠল, মুকুন্দদা না খেললে আমরা নির্ঘাত কপাটি-ম্যাচে হেরে যাব। বাগনান ক্লাবের গদাই-এর গালে যেমন চাপদাড়ি, গায়েও তেমনি ভীষণ জোর। মুকুন্দদা ছাড়া কেউ তাকে এঁটে উঠতে পারে না।
তাই নাকি? ত্রিবেদী হাসলেন, কপাটি খেলা আমাদের জাতীয় খেলা। এইসব ব্যাপারে আমার ভারি উৎসাহ। মুকুন্দ, তুমি চিন্তা কোরো না, তোমার বদলে আজ আমিই খেলব। চলো, কোনদিকে তোমাদের কপাটি-খেলার মাঠ– আমি সাইকেল চালাচ্ছি, তুমি সামনের রডে বসে আমায় রাস্তা দেখাও।