২৯তম অধ্যায়
ভাবি যুদ্ধাশঙ্কায় কৃপাচাৰ্যকর্ত্তৃক বলবৃদ্ধিমন্ত্রণা
“মহারাজ! ভীষ্ম পাণ্ডবদিগের বিষয়ে যে সকল কথা বলিয়াছেন, তৎসমুদয়ই যুক্তিযুক্ত ও ধর্ম্মার্থসঙ্গত। আমিও ভীষ্মের অনুরূপ বাক্য বলিতেছি, শ্রবণ করুন।
“হে মহারাজ! কাৰ্য্যকুশল গৃঢ়-চর দ্বারা পাণ্ডবগণের গতিবিধি এবং বাসস্থান-নিরূপণ ও আপনার হিতকর নীতি বিধান করুন। কারণ, যিনি জীবিত থাকিতে বাসনা করেন, সর্ব্বাস্ত্ৰকুশল পাণ্ডবগণের কথা দূরে থাকুক, অতি সামান্য শক্ৰকেও উপেক্ষা করা তাহার উচিত নহে। এক্ষণে মহাত্মা পাণ্ডবেরা প্রচ্ছন্নবেশে দেশে দেশে ভ্ৰমণ করিতেছেন, কিন্তু প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হইলে তাহাদিগের অভু্যদয় হইবে, সন্দেহ নাই; অতএব আপনি স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রের বল সম্যকরূপে বিবেচনা করুন। মহাবল-পরাক্রান্ত অমিততেজঃ পাণ্ডবেরা প্ৰতিজ্ঞাসাগর উত্তীর্ণ হইবামাত্ৰ মহীয়সী উৎসাহশীলতাসম্পন্ন হইয়া উঠিবেন, অতএব আপনি পূর্ব্বেই কোষশুদ্ধি, বলশুদ্ধি ও নীতিবিধান করুন। তাহাদিগের তাদৃশ অভু্যদয় দৃষ্ট হয়, সন্ধি করা যাইবে। হে রাজন্! কোন্ সময়ে কি কর্ত্তব্য কি অকর্ত্তব্য, তাহা আমি চিন্তা করিতেছি, আপনি আপনার বল, সমুদয় মিত্র ও সৈন্যসামন্তগণের সামর্থ্য বিবেচনা করুন। আপনার নানাবিধ সৈন্য আছে, তন্মধ্যে কে আপনার অনুরক্ত কেই বা অননুরক্ত, তাহা বিশেষ পরিজ্ঞাত হউন।
সাম, দান, ভেদ, দণ্ড ও বলি [করগ্রহণ] কর্ম্ম প্রভৃতি উপায় দ্বারা বলবান শক্ৰকে এবং বলপূর্ব্বক দুর্ব্বল শক্রকে বশীভূত করুন। সান্ত্ববাদ দ্বারা মিত্ৰমণ্ডলী ও মিষ্টবাক্য দ্বারা সৈন্যগণকে পরিতুষ্ট করুন, তাহা হইলে আপনার কোষশুদ্ধি ও বলবৃদ্ধি হইবে, আপনি অনায়াসে সিদ্ধিলাভ করিতে পরিবেন এবং পাণ্ডবেরাই হউক অথবা অন্য কেহই হউক, বলবানই হউক বা দুর্ব্বলই হউক, শত্ৰু সমুপস্থিত হইলেই তাহার সহিত সংগ্রাম করিতে সমর্থ হইবেন। হে মহারাজ! যথাযোগ্য সময়ে স্বীয় ধর্ম্মানুসারে ব্যবসায় [হিতাহিতবিষয়ক প্ৰযত্ন] বিনিশ্চয় করিয়া এইরূপে কাৰ্য্য-সমাধান করিলে আপনি অত্যন্ত সুখ প্ৰাপ্ত হইবেন, সন্দেহ নাই।”