২৯৪. শূদ্রের সেবাধৰ্ম্মে সিদ্ধিলাভ

২৯৪তম অধ্যায়

শূদ্রের সেবাধৰ্ম্মে সিদ্ধিলাভ

“পরাশর কহিলেন, ‘হে মহারাজ। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এই তিন বর্ণের সেবা করিয়া জীবিকানির্ব্বাহ করাই শূদ্রের শ্রেয়স্কর। ঐ সেবাদ্বারা শূদ্র সময়ক্রমে বিপুল ধর্ম্মলাভ করিতে সমর্থ হয়। যদি কোন শূদ্রের পিতৃপিতামহাদি কখন কাহারও সেবা না করিয়া থাকে, তথাপি সেবা ভিন্ন অন্য বৃত্তি অবলম্বন করা তাহার কদাপি বিধেয় নহে। সেবাই শূদ্রের পরমধর্ম্ম। ধর্ম্মদর্শী সাধুদিগের সংসর্গে বাস ও অসৎসংসর্গ পরিত্যাগ করা তাহাদের সর্ব্বতোভাবে বিধেয়। উদয়াচলস্থিত মণিমুক্তাদি যেমন সূৰ্য্যের সন্নিধানবশতঃ সমধিক শোভমান হয়, তদ্রূপ শূদ্রজাতিও সাধুসংসর্গনিবন্ধন সমধিক শুদ্ধভাব প্রাপ্ত হইতে পারে। শুক্লবস্তু নীলপীতাদি যে বর্ণে রঞ্জিত করা যায়, সেই বর্ণই প্রাপ্ত হইয়া থাকে; অতএব দোষ পরিহারপূর্ব্বক গুণসমূহে অনুরাগ অপ্রকাশ করাই সৰ্ব্বতোভাবে কৰ্ত্তব্য। ইহলোকে মানবদিগের জীবন নিতান্ত অস্থির ও অনিত্য। যিনি সুখ ও দুঃখ এই উভয় অবস্থাতেই সৎকর্ম্মের অনুষ্ঠান করিতে পারেন, তিনিই যথার্থ শাস্ত্রদর্শী। অধৰ্ম্মপথ অবলম্বনপূর্ব্বক কার্য্যানুষ্ঠান করিলে যদি বিপুল অর্থও লাভ হয়, তথাপি তাহাতে প্রবৃত্ত হওয়া বুদ্ধিমান্ ব্যক্তির কদাপি উচিত নহে। নরপতি সহস্র সহস্র গাভী অপহরণ করিয়া যদি সৎপাত্রে সমর্পণ করেন, তাঁহার কিছুমাত্র ফললাভ হয় না, প্রত্যুত তাঁহাকে তস্করতাপাপে [চুরি করার পাপে] লিপ্ত হইতে হয়।

‘ভগবান্ স্বয়ম্ভূ সৰ্ব্বপ্রথমে ত্রিলোকপূজিত বিধাতার সৃষ্টি করেন। তৎপরে বিধাতা লোকরক্ষণার্থ জলাধিষ্ঠাত্রী দেবতার সৃষ্টি করিয়াছেন। বৈশ্যগণ সেই দেবতার অর্চ্চনা করিয়া কৃষি গোরক্ষাদি কার্য্যে নিযুক্ত হয়। বৈশ্যের শস্যোৎপাদন, ক্ষত্রিয়ের শস্যরক্ষা, ব্রাহ্মণের উপভোগ এবং শূদ্রের ক্রোধ ও শঠতা পরিত্যাগপূৰ্ব্বক যজ্ঞীয় দ্রব্য আহরণ ও যজ্ঞস্থান মার্জ্জনাদি করাই কৰ্ত্তব্য। এইরূপ হইলে কখনই ধর্ম্ম নষ্ট হয় না। ধর্ম্ম নষ্ট না হইলেই প্রজাগণ সুখে অবস্থান করিতে সমর্থ হয় এবং প্রজাগণ সুখী হইলেই দেবগণের পরমপরিতোষ জন্মে। ফলতঃ নরপতি ধর্ম্মানুসারে প্রজাপালন, ব্রাহ্মণ বেদাধ্যয়ন, বৈশ্য ধনোপার্জ্জন এবং শূদ্র শুশ্রূষানিরত হইলেই সৰ্ব্বত্র সম্মানিত হইয়া থাকেন। যে ব্যক্তি এই নিয়মের অন্যথাচরণ করে, তাহাকে নিশ্চয়ই ধর্ম্মভ্রষ্ট হইতে হয়। ন্যায়পথে অর্থোপার্জ্জন করিয়া ভূরিদান করা দূরে থাকুক, অতিকষ্টে কাকিনীমাত্র [কুড়ি কড়া বা পাঁচ গণ্ডা কড়ি মাত্র] দান করিলেই মহাফললাভ হইয়া থাকে নরপতিদিগের মধ্যে যিনি সমাদরপূৰ্ব্বক ব্রাহ্মণগণকে যেরূপ ধনদান করেন, তাঁহার তদনুরূপ মহাফললাভ হয়। স্বয়ং প্রতিগ্রহীতার সমীপে গমনপূর্ব্বক তাঁহার সন্তোষসাধনার্থ যাহা দান করা যায়, সেই দান উৎকৃষ্ট, গ্রহীতা যাচ্ঞা করিলে যে দান করা হয়, তাহা মধ্যম, আর যাহা অশ্রদ্ধা বা অবজ্ঞাসহকারে প্রদত্ত হয়, তাহা অপকৃষ্ট বলিয়া কীৰ্ত্তিত হইয়া থাকে। সংসারনিমগ্ন ব্যক্তিদিগের এই ভবসমুদ্র সমুত্তীর্ণ হইবার নিমিত্ত যত্নসহকারে বিবিধ উপায় অবলম্বন করা সর্ব্বতোভাবে বিধেয়। ব্রাহ্মণ দমগুণান্বিত, ক্ষত্রিয় বিজয়ী, বৈশ্য ধনী এবং শূদ্র নিয়ত ইহাদিগের সেবাতৎপর হইলেই সমধিক সম্মানভাজন হইয়া থাকেন।’ ”