২৮৪তম অধ্যায়
রাম-রাবণের যুদ্ধ
মার্কণ্ডেয় কহিলেন, “তখন পর্ব্বণ, পতন, স্তম্ভ খর, ক্রোধবশ, হরি, প্রনুজ, আরুজ, প্ৰঘস প্রভৃতি বহু-সংখ্যক রাবণানুগত পিশাচ ও ক্ষুদ্র রাক্ষসগণ প্রচ্ছন্নরূপে রামচন্দ্রের সেনানিবেশে প্রবেশ করিল। বিভীষণ ঐ দুরত্মাদিগকে অদৃশ্যভাবে আগমন করিতে দেখিয়া তাহাদের অন্তৰ্দ্ধানশক্তি নিরোধ করিলেন। এইরূপে
বানরগণ তাহাদিগের সংহার করিয়া ধরাসাৎ করিল।
“তখন যুদ্ধশাস্ত্ৰবিশারদ মহাবীর রাবণ সৈন্যক্ষয় সহ্য করিতে না পারিয়া ঘোররূপ রাক্ষস ও পিশাচসৈন্য-সমভিব্যাহারে যুদ্ধক্ষেত্রে সমুপস্থিত হইলেন এবং ঔশনস ব্যূহ নির্ম্মাণপূর্ব্বক বানরগণকে পরিবেষ্টন করিলে রঘুবংশাবতস রাম তদর্শনে বাৰ্হস্পত্য বিধানানুসারে ব্যূহ করিয়া তাঁহাকে আক্রমণ করিলেন। রাম রাবণের সহিত, লক্ষ্মণ ইন্দ্ৰজিতের সহিত, সুগ্ৰীব বিরূপক্ষের সহিত, নিখর্ব্বট তারের সহিত, নল তুণ্ডের সহিত ও পটুশ পনসের সহিত ঘোরতর সংগ্রাম করিতে লাগিলেন। অন্যান্য সৈন্যগণ স্ব স্ব বাহুবল অবলম্বনপূর্ব্বক যে যাহাকে আপনার সমকক্ষ জ্ঞান করিল, তাহারই সহিত সে সংগ্রামে প্ৰবৃত্ত হইল।
“পূর্ব্বকালে দেবাসুরের যেরূপ ঘোরতর সংগ্রাম হইয়াছিল, এক্ষণে এই যুদ্ধও তদ্রূপ হইয়া উঠিল। এই তুমুল সংগ্রাম সন্দর্শনে ভীরুগণের ভয়বৃদ্ধি ও লোমহর্ষণ হইতে লাগিল। রাম ও রাবণ শক্তি, শূল, অসি প্রভৃতি বিবিধ শাণিত লৌহময় অস্ত্রশস্ত্রদ্বারা পরস্পর প্রহার করিতে লাগিলেন; লক্ষ্মণ ও ইন্দ্ৰজিৎ বহুবিধ মর্ম্মভেদী শরনিকরদ্ধারা পরস্পর পীড়িত করিলেন এবং বিভীষণ ও প্ৰহস্ত পরস্পর খাগপত্রযুক্ত নিশিত বাণ বর্ষণ করিতে লাগিলেন। ফলতঃ তৎকালে সেই মহাবলপরাক্রান্ত বীরপুরুষগণ পরস্পরের প্রতি এরূপ শরসন্ধান করিতে লাগিলেন যে, তদ্বারা স্থাবরজঙ্গমাত্মক লোকত্ৰয় ব্যথিত হইয়া উঠিল।”