২৭. আবু তালেবের ইন্তেকাল – দুঃখ বেদনার বছর

আবু তালেবের অসুখ বেড়ে গেলে এবং এক সময় তিনি মারা গেলেন। আবু তালেব ঘাটিতে অবরোধ থেকে মুক্ত হওয়ার ছয়মাস পর নবুয়্যতের দশম বর্ষে রজব মাসে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। অন্য এক বর্ণনায় এ কথা উল্লেখ রয়েছে যে, বিবি খাদিজার ইন্তেকালের তিনদিন আগে রমজান মাসে তিনি ইন্তেকাল করেন।
সহীহ বোখারীতে হযরত মোসায়েব থেকে বর্ণিত আছে যে, আবু তালেবের ইন্তেকালের সময় ঘনিয়ে এলে রসুলে মকবুল (সাঃ) তাঁর কাছে যান। সেখানে আবু জেহেলও উপস্থিত ছিল। রসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, চাচাজান, আপনি শুধু লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু বলুন। এই স্বীকারোক্তী করলেই আমি আল্লাহর কাছে আপনার জন্য সুপারিশ করতে পারবো। আবু জেহেল ও আবু উমাইয়া বললো, আবু তালেব, আপনি কি আব্দুল মোত্তালিবের মিল্লাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন ? এপর এরা দু’জন আবু তালেবের সাথে কথা বলতে লাগলো। আবু তালেব শেষ কথা বলেছিলেন যে , আব্দুল মোত্তলিবের মিল্লাতের উপর। নবী করিম (সাঃ) বললেন, আমাকে নিষেধ না করা পর্যন্ত আপনার জন্য আমি মাগফেরাতের দোআ করতে থাকবো। এরপর আল্লাহ রহমানুর রহিম এ আয়াত নাযিল করেনঃ
“আত্মীয়-স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা নবী ও মুমিনদের জন্য সঙ্গত নয়, যখন এটা সুষ্পষ্ট হয়ে গেছে ওরা জাহান্নামী।“ {১১৩,৯}
আল্লাহ সোবহানুতাআলা এ সম্পর্কে নিম্মোক্ত আয়াতও নাযিল করেনঃ
“তুমি যাকে ভালবাসো ইচ্ছে করলেই সৎপথে আনতে পারবে না, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভাল জানেন সৎপথ অনুসারীদেরকে। “ { ৫৬,২৮}
আবু তালেব রসুল (সাঃ)কে কিরুপ সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রকৃতপক্ষে মক্কায় কোরাইশ নেতা এবং নির্বোধ লোকদের ইসলামের উপর হামলার মুখে তিনি ছিলেন দূর্গের মত। কিন্ত তিনি নিজে তাঁর পুর্বপুরুষদের ধর্মের উপর অবিচল ছিলেন। এ কারণে বোখারীতে হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মোত্তালেব (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি রসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, আপনি আপনার চাচার কি কাজে আসলেন ? তিনিতো আপনাকে হেফাজত করতেন, আপনার জন্য অন্যদের সাথে ঝগড়া বিবাদ,শত্রুতার ঝুঁকি নিতেন। রসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তিনি জাহান্নামের একটি সাধারণ জায়গায় রয়েছেন, যদি আমি না থাকতাম তাহলে তিনি জাহান্নামের সবচেয়ে গভীর গহ্ববরে থাকতেন।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে একবার তাঁর চাচার প্রসঙ্গ আলোচনা করা হলে তিনি বললেনঃ কেয়ামতের দিন আমার শাফায়াত হয়তো তার কিছু ইপকারে আসবে। তাঁকে জাহান্নামের একটি উঁচু জায়গায় রাখা হবে যা শুধু তাঁর উভয় পায়ের হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছবে।