২৭৫তম অধ্যায়
দেবদ্বেষি-দ্রাবণবধার্থ দেবগণের মর্ত্যজন্ম
মার্কণ্ডেয় কহিলেন, “অনন্তর ব্রহ্মর্ষি, সিদ্ধ ও দেবর্ষিগণ হুতাশনকে পুরস্কৃত করিয়া ব্ৰহ্মার শরণাগত হইলেন। হুতাশন কমলযোনিকে কহিলেন, “ভগবন! বিশ্রাবার পুত্ৰ মহাবল দশগ্ৰীব আপনার বরপ্রভাবে অবধ্য হইয়া বিবিধ প্রকারে প্রজাগণের অত্যন্ত উৎপীড়ন করিতেছে; অতএব আপনি রক্ষা করুন; আপনা ব্যতীত ত্ৰাণকর্ত্তা আর কেহই নাই।”
“ব্ৰহ্মা কহিলেন, “হে হব্যবাহ! যুদ্ধে তাহাকে পরাজিত করা দেবাসুরের অসাধ্য, আমি তাহার নিগ্রহের উপায়বিধান করিয়াছি। চতুৰ্ভুজ বিষ্ণু আমার নিয়োগক্ৰমে অবতীর্ণ হইয়া সেই কাৰ্য্য সম্পাদন করিবেন। সম্প্রতি তুমি দেবগণ-সমভিব্যাহারে মহীতলে অবতীর্ণ হইয়া ঋক্ষী [ভল্লুকী] ও বানরীর গর্ভে মহাবল-পরাক্রান্ত কামরূপী পুত্ৰসকল উৎপাদন কর, তাহারা কাৰ্য্যকালে বৈকুণ্ঠস্বামী বিষ্ণুর সহায় হইবে।”
“অনন্তর দেব, দানব ও গন্ধর্ব্বগণ অংশক্রমে ভূতলে অবতীর্ণ হইবার নিমিত্ত পরামর্শ করিতে লাগিলেন। ভগবান কমলযোনি তাহাদিগের সমক্ষে দুন্দুভিনামে গন্ধর্বীকে আদেশ করিলেন, দুন্দুভি! তুমি দেবকাৰ্য্য সিদ্ধির নিমিত্ত মর্ত্যলোকে গমন কর।” দুন্দুভি পিতামহবাক্য শ্রবণপূর্ব্বক কুব্জা হইয়া মনুষ্যলোকে জন্মগ্রহণ করিলেন। তথায় তাহার নাম মন্থরা হইল।
“এদিকে দেবরাজ প্রভৃতি দেবতারা প্রধান প্রধান বানরী ও ঋক্ষীর গর্ভে মহাবলপরাক্রান্ত বহুসংখ্যক পুত্রোৎপাদন করিলেন। সেই সকল পুত্রেরা যশ ও বলবিষয়ে পিতৃগণের অনুরূপ হইল; তাহারা সকলেই যুদ্ধবিশারদ, গিরিশৃঙ্গবিদারণক্ষম, অযুত নাগেন্দ্রের ন্যায় পরাক্রমী ও বায়ুর ন্যায় দ্রুতগামী, এবং শাল, তাল ও শিলা প্রভৃতি তাহাদিগের আয়ুধ হইল। তাহাদিগের নির্দ্দিষ্ট বাসস্থান ছিল না। যাহার যে-স্থানে অভিলাষ হইত, সেই স্থানেই অবস্থিতি করিত।
“ভূতভাবন ভগবান ব্ৰহ্মা এইরূপে সমুদয় বিধান করিয়া পরিশেষে যেরূপে যে কাৰ্য্য করিতে হইবে, মন্থরাকে তাহার উপদেশ প্রদান করিতে লাগিলেন। মনোমারুতগামিনী মন্থরা ব্ৰহ্মার বাক্য-শ্রবণানন্তর বৈরসন্ধুক্ষণে [উদ্দীপনে] বিরত হইয়া ইতস্ততঃ ভ্রমণপূর্ব্বক পিতামহের আদেশানুরূপ সমুদয় কাৰ্য্য সম্পাদন করিলেন।”