বলেন বৈশম্পায়ন শুন জন্মেজয়।
প্রমীলার দেশে গেল পাণ্ডবের হয়।।
মহাবনে আছয়ে প্রমীলা নামে নারী।
পশ্বিনী তাহার সঙ্গে আছে শব্দ চারি।।
আর কত রমণী বিরাজে তার পাশে।
পুরুষ নাহিক তাহে কহিনু বিশেষে।।
ভ্রমিতে ভ্রমিতে ঘোড়া গেল তার পুরে।
ধরিল রমণী সব পাইয়া ঘোড়ারে।।
মহা বলবতী তার শুন নরপতি।
ধরিল যজ্ঞের ঘোড়া করিয়া শকতি।।
প্রমীলার বাক্যে ঘোড়া রাখিল বান্ধিয়া।
প্রবেশ করেন পুরে পার্থ পাছু গিয়া।।
বনিতা ধরিল ঘোড়া শুনিয়া শ্রবণে।
পাণ্ডুর নন্দন ভীত হইলেন মনে।।
পুরে প্রবেশিয়া দেখে বহু কন্যাগণ।
বিমান দেখেন কত তুরগ বারণ।।
অর্জ্জুন প্রভৃতি মনে ভাবেন বিষাদ।
এমন না দেখি কভু হইল প্রমাদ।।
ঘোড়া নাহি দেখি পথে চৌদিকে রমনী।
পুরুষ না দেখি পথে অমঙ্গল গণি।।
অবলা প্রবলা হয়ে ধরে ধনুঃশর।
কি বুঝি ইহার সঙ্গে করিব সমর।।
প্রদ্যুন্ন বলেন ঘোড়া আইল সঙ্কটে।
যুদ্ধে কার্য্য নাহি চল প্রমীলা নিকটে।।
অবলা সহিত রণ এ বড় নিন্দিত।
লইব যজ্ঞের ঘোড়া করিয়া সম্প্রীত।।
প্রদ্যুন্নের বচন শুনিয়া ধনঞ্জয়।
প্রবেশ করেন পুরে মনে পেয়ে ভয়।।
বৃষকেতু বীর দিল ধনুকে টঙ্কার।
তা শুনি বনিতাগণে আনন্দ অপার।।
নানা বাদ্য বাজাইয়া চলিল রূপসী।
নানা অস্ত্র হাতে নিল যুদ্ধ-অভিলাষী।।
ইহা দেখি অর্জ্জুনের ভয় উপজিল।
যুদ্ধ না করিয়া বীর ডাকিয়া কহিল।।
প্রয়োজন আছে মম প্রমীলার সনে।
তাহা শুনি নিবৃত্ত হইল নারীগণে।।
যুবতীগণের চিত্তে বাড়িল মদন।
সম্মূখে আছেন কাম শ্রীহরিনন্দন।।
লাবণ্য কটাক্ষ হাস্য করে কোন জন।
ধাইয়া প্রমীলা অগ্রে কহিছে বচন।।
অর্জ্জুন আইল হেথা অশ্বের কারণে।
শীঘ্রগতি ঠাকুরাণী চল দরশনে।।
প্রবীলা উম্মত্ত হৈল দাসীর বচনে।
আপনি সাজিয়া চলে অর্জ্জুনের স্থানে।।
স্বর্ণথালে পাধ্য অর্ঘ্য লইয়া সুন্দরী।
অর্জ্জুন সম্মূখে আসে নানা বেশ করি।।
প্রমীলা প্রণাম করে অর্জ্জুন চরণে।
পাদ্য অর্ঘ্য লইয়া দাণ্ডায় বিদ্যমানে।।
পদ্মিনী সমান রূপ দেখি ধনঞ্জয়।
বসিতে বলেন তারে পেয়ে মনে ভয়।।
প্রমীলা বসিল সঙ্গে লইয়া পদ্মিনী।
জিজ্ঞাসেন ধনঞ্জয় অভিপ্রায় বাণী।।
শুনহ প্রমীলা আমি জিজ্ঞাসি তোমারে।
পুরুষ না দেখি কেন তোমার নগরে।।
সকল সুন্দরী দেখি ভয় পাই মনে।
তোমারে জিজ্ঞাসি আমি এই সে কারণে।।
প্রমীলা বলিল, শুন পাণ্ডুর নন্দন।
ভাগ্যে আমি পাইলাম তব দরশন।।
প্রসন্ন আমার চিত্ত তব দরশনে।
দূর হবে মনস্তাপ তোমার মিলনে।।
পূর্ব্বকথা কহি আমি তোমার গোচরে।
রমণী হইনু মোরা যেমন প্রকারে।।
দিলীপ নামেতে রাজা সর্ব্ব ভূমিপতি।
শুন হে কিরীটি আমি তাহার সন্ততি।।
দৈবেতে আইনু আমি মৃগয়া করিতে।
এই বনে উপস্থিত জনকের সাথে।।
পার্ব্বতী সহিত শিব ছিলেন এ বনে।
বিহার করেন দোঁহে আনন্দিত মনে।।
হেনকালে জনকেরে দেখিলেন গৌরী।
কোপেতে দিলেন শাপ লজ্জা মনে করি।।
সসৈন্যে যুবতী হও আমার বচনে।
বনিতা হইয়া সবে থাক এই বনে।।
অব্যর্থ দেবীর বাক্য না হয় লঙ্ঘন।
সসৈন্যে বনিতারূপ হইনু রাজন।।
এই পূর্ব্বকথা আমি কহিনু তোমারে।
পুরুষের নাহি রক্ষা আমার নগরে।।
গর্ভেতে পুরুষ যদি জন্মে থাকে পাকে।
দ্বাদশ বৎসর পরে যায় যমলোকে।।
শুনহ অর্জ্জুন আমি কহিনু সকল।
অবশেষে কহি আমি আপনার বল।।
আমারে জিনিতে নাহি পারে ত্রিভুবনে।
মোর ভয়ে কাঁপয়ে যতেক দেবগণে।।
পর্ব্বতীর বরে কারে ভয় নাহি করি।
হাতে অস্ত্র কেহ না আইসে মম পুরী।।
যতেক অবলা দেখ বিক্রমে বিশাল।
আমার ভয়েতে কাঁপে অষ্টলোকপাল।
আইল তোমার ঘোড়া আমার নগরে।
বনিতা সকল মিলি ধরিল তাহারে।।
বান্ধিয়া রাখিল ঘোড়া করিয়া যতন।
না রহ এদেশে আর পাণ্ডুর নন্দন।।
পদ্মিনী সহিত আমি ভজিনু তোমারে।
সংহতি করিয়া পার্থ লয়ে চল মোরে।।
কৃষ্ণসখা হেতু সে সবার প্রিয় তুমি।
বিবাহ করহ মোরে, বরিলাম আমি।।
কিরীটি বলেন শুন প্রমীলা সুন্দরী।
এখন বিবাহ তোমা করিতে না পারি।।
যজ্ঞ হেতু যুধিষ্ঠির হইয়াছে ব্রতী।
অশ্ব সঙ্গে আমি বেড়াইব বসুমতী।।
হস্তিনানগরে যাহ সকল সুন্দরী।
পুরাব তোমার আশা যজ্ঞ সাঙ্গ করি।।
কিরীটির বচনে প্রমীলা প্রীতি পায়।
সকল সুন্দরী মিলি গেল হস্তিনায়।।
মুক্ত হয়ে যজ্ঞ ঘোড়া যায় বনে বনে।
সৈন্য সহ কিরীটি চলেন অশ্ব সনে।।
এই বিবরণ আমি কহিনু তোমারে।
আর কি কহিব রাজা বলহ আমারে।।