২৫তম অধ্যায়
গোহরণপৰ্ব্বাধ্যায়
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! এইরূপে কীচক ও উপকীচকগণ বিনষ্ট হইলে সমুদয় লোক অত্যাহিত শঙ্কায় শঙ্কিত ও যৎপরোনাস্তি বিস্ময়াপন্ন হইল। কি বিরাটনগরে, কি জনপদের অভ্যন্তরে, সর্ব্বত্রই এই কথার আন্দোলন হইতে লাগিল যে, প্ৰবল পরাক্রান্ত কীচক শৌৰ্য্য-প্রভাবে বিরাটরাজের নিতান্ত প্রিয়তম সৈন্যাধ্যক্ষ ও অরাতিগণের দারাভিমর্ষণ [পত্নীধর্ষণ] করিয়া তাঁহাদিগের হস্তে বিধ্বস্ত হইল।
পাণ্ডবান্বেষণে নিযুক্ত দুৰ্য্যোধন-দূতগণের প্রত্যাবর্ত্তন
ইতিপূর্ব্বে রাজা দুৰ্য্যোধন পাণ্ডবগণের অনুসন্ধানার্থ দেশে দেশে চরপ্রেরণ করিয়াছিলেন। তাহারা নানা গ্রাম, নগর ও রাষ্ট্রে পাণ্ডুতনয়গণকে অন্বেষণ করিয়া এই সময়ে হস্তিনানগরে দুৰ্য্যোধন-সমীপে সমুপস্থিত হইল। দেখিল, মহারাজ দুৰ্য্যোধন, দ্রোণ, কৰ্ণ, কৃপ, মহাত্মা ভীষ্ম ও মহারথ ত্রিগর্ত্তগণ এবং ভ্ৰাতৃসমুদয়ে পরিবৃত হইয়া সভামধ্যে সমাসীন আছেন। তখন তাহারা কৃতাঞ্জলিপুটে কহিতে লাগিল, “মহারাজ! আমরা অপ্ৰতিহত যত্ন সহকারে সেই নানাবিধ লতা-গুল্ম-পাদপ-সমাবৃত বিবিধ মৃগসমাকীর্ণ দুরবগাহ [দুৰ্গম] অরণ্যানী, গিরিশিখর, দুর্গ, পাণ্ডবগণাধিষ্ঠিত মহারণ্য এবং অন্যান্য জনপদ, জনাকীর্ণ দেশ, অরাতিগণের রাজধানী সমুদয় তন্ন তন্ন করিয়া অনুসন্ধান করিলাম, কিন্তু দৃঢ়বিক্রম পাণ্ডবগণ যে কোন পথে কোথায় প্ৰস্থান করিয়াছেন, তাহার কিছুমাত্র অবগত হইতে পারিলাম না। একদা পাণ্ডবদিগের সারথিগণকে শূন্য রথ লইয়া দ্বারাবতী নগরীতে গমন করিতে দেখিয়া তাহাদিগের অনুগামী হইলাম; কিন্তু তথায় কি পাঞ্চালী, কি পাণ্ডবগণ কাহারও অনুসন্ধান পাইলাম না। তাঁহারা যে কোথায় গমন করিয়াছেন, কোথায় অবস্থিতি করিতেছেন, কোন্ কর্ম্ম অবলম্বন করিয়াছেন, তাহার কিছুই অবগত হইতে পারিলাম না। বোধ হয়, তাহারা বিনষ্ট হইয়াছেন, অতএব আপনিই অদ্যাবধি আমাদিগের শাসন করুন। আপনার মঙ্গল হউক অথবা অনুমতি করুন, পুনরায় পাণ্ডবগণের অন্বেষণে প্রবৃত্ত হই।