প্রথম খণ্ড
দ্বিতীয় খণ্ড
তৃতীয় খণ্ড

২৫. গণেশচতুর্থী ব্ৰত: কৃষিআবিষ্কার ও মাতৃপ্রাধান্য

গণেশচতুর্থী ব্ৰত: কৃষিআবিষ্কার ও মাতৃপ্রাধান্য

আমাদের ওই গণেশ ঠাকুরটি সত্যিই যেন সিদ্ধিদাতা। তাকে কেন্দ্র করেই ভারতীয় সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আজো এমন অনুষ্ঠান টিকে রয়েছে যা থেকে আমাদের এই বর্তমান যুক্তিটির উপর প্রভূত আলোকপাত হতে পারে। আমাদের যুক্তি হলো, কৃষিআবিষ্কার মেয়েদের কাজ আর তাই কৃষিআবিষ্কারের প্রাথমিক পর্যায়ে মানব-সমাজে মাতৃপ্রাধান্য দেখা দিয়েছিলো। আমাদের দেশে গণেশচতুর্থী নামের একটি ব্ৰত অনুষ্ঠান প্রচলিত আছে। এ-অনুষ্ঠান স্পষ্টই কৃষি-কেন্দ্রিক। এবং এ-অনুষ্ঠানের মধ্যে স্পষ্টই দেখতে পাওয়া যায় যে, পুরুষ-দেবতা ম্লান হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছেন, তার জায়গায় দেখা দিচ্ছেন এক নারী—গৌরী। আমাদের আলোচনায় তাই ব্রতটির সাক্ষ্য খুবই চিত্তাকর্ষক হবে।

গণেশচতুর্থী ব্রতের কিছুটা বর্ণনা পাওয়া যাবে নগেন্দ্রনাথ বসু(৩৬৭) সংকলিত ‘বিশ্বকোষ’-এ। পূর্ণতর বিবরণের জন্যে ১৯০৬ সালের ইণ্ডিয়ান এ্যান্টিকোয়ারি পত্রিকায় ঐযুক্ত বি. এস. গুপ্তের(৩৬৮) প্রবন্ধ পড়ে দেখা দরকার। প্রধানত তাঁরই প্রবন্ধের উপর নির্ভর করে আমরা এখানে অগ্রসর হবার চেষ্টা করবো।

ব্রতটি এখন প্রধানতই দক্ষিণাপথবাসীদের মধ্যে প্রচলিত। বোম্বাই ও পুণা অঞ্চলে এই উপলক্ষ্যে বিশেষ ধুমধাম হয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমাদের বাংলাদেশের সঙ্গে এই ব্রতের কোনো সম্পর্ক নেই। আসলে কিছুটা নামান্তরের ও কিছুটা রূপান্তরের আড়ালে এই ব্ৰতই আমাদের অঞ্চলেও বর্তমান রয়েছে। সে-কথায় পরে ফেরা যাবে।

ব্রতটি একদিনে উদযাপিত হয় না। সাতদিন ধরে একটানা এর অনুষ্ঠান চলে। কিন্তু মজা হলো, যদিও গণেশের নাম থেকেই ব্রতটির নামকরণ হয়েছে এবং যদিও ব্রত অনুষ্ঠান শুরু হবার আগে থাকতেই গণেশকে নিয়ে বেশ কয়েকদিন অনেক রকম সমারোহ করা হয়, তবুও আসল অনুষ্ঠানের মধ্যে খোদ গণেশকে দেখতে পাওয়া যায় মাত্র প্রথম দু-একদিন। বাকি ক’দিনের অনুষ্ঠানটির মধ্যে গণেশের কোনো স্থান নেই। হালকা ভাষায় বললে বলা যায়, প্রথম দু-একদিনের মধ্যেই সিদ্ধিদাতার যেন সুবুদ্ধি দেখা দেয়; কৃষিকেন্দ্রিক এই অনুষ্ঠানটিকে নেহাতই মেয়েলি ব্যাপার বলে চিনতে পেরে তিনি বিদায় নেন দৃশ্যপট থেকে। তার জায়গায়, ব্রতের কেন্দ্রে, এসে দাঁড়ান গৌরী। ফলে গণেশচতুর্থী-ব্রতের বেশির ভাগটাই হয়ে দাঁড়ায় গৌরী-ব্ৰত।

ভাদ্র মাসের চতুর্থ তিথিতে গণেশ-চতুর্থ ব্রতের শুরু। ওই দিনটিই বুঝি গণেশের জন্মদিন। পুণা ও বোম্বাই অঞ্চলে আজকাল অবস্থাপন্ন বাড়িতে গণেশমূর্তি কিনে এনে এই দিনটিতে মহা সমারোহে গণেশ-পুজো হয়। বলাই বাহুল্য, অবস্থাপন্ন পরিবারের সমারোহের মতোই এই পুজোপাঠের ব্যাপারটাও অবশ্যই অর্বাচীন। হয়তো তার আড়াল থেকে গণেশচতুর্থী ব্রতের প্রথম দিনকার অনুষ্ঠানের আদি ও অকৃত্রিম রূপটি খুজে পাওয়া কঠিন। দুঃখের বিষয়, ইণ্ডিয়ান-এ্যান্টিকোয়ারির প্রবন্ধ-লেখকও গণেশকে কৃষি-উৎসবের প্রতীক বলে প্রমাণ করবার ভ্রান্ত আগ্রহে (ভ্রান্ত কেন, সে-কথা একটু পরেই তোলা বাবে) গণেশচতুর্থী ব্রতের প্রথম দিনকার বর্ণনাটি দিতে ভুলে গিয়েছেন।

দ্বিতীয় দিন, অর্থাৎ ভাদ্র পঞ্চমীর দিনই, গণেশের বিসর্জন।

এইভাবে, ব্ৰত অনুষ্ঠানের কেন্দ্র থেকে গণেশ বিদায় গ্রহণ করবার পর ব্রতটির তাৎপর্য স্পষ্টতর হয়ে উঠতে থাকে।

ভাদ্র ষষ্ঠীর দিন ভোর বেলাতেই মেয়েরা বেরিয়ে পড়ে একরকম শাকের গুচ্ছ সংগ্রহ করে আনতে। শাকগুলি উপড়ে কাপড়ে জড়িয়ে কুলোয় করে বাড়ি আনা হয়। তারপর, বাড়ি এনে সেগুলিকে ওই অবস্থায় চৌকির উপর স্থাপন করে চৌকির নিচে সিদুঁর দিয়ে আলপনা আঁকা হয়। সন্ধ্যার দিকে এই কলা-বৌ মূর্তিটির পাশে এসে বসে একটি কুমারী মেয়ে। সধবারা পরস্পরকে সিদুঁর পরিয়ে দেয়। তারপর, কলা-বৌকে নিয়ে বাড়ির ঘরে ঘরে ঘোরা হয়। সঙ্গে চলে কুমারী মেয়েটি। প্রত্যেকটি ঘরেই প্রশ্ন করা হয়, “গৌরী, গৌরী, কী এনেছো তুমি? কী দেখছো তুমি?” উত্তরে কুমারী মেয়েটি গৌরীর হয়ে জবাব দেয়, সে এনেছে প্রচুর ঐশ্বর্য, সে-দেখছে প্রচুর ঐশ্বর্য। কিন্তু শুধু ওই মুখের কথাটুকুই যথেষ্ট নয়। গৌরী যে এসেছিলেন, সত্যিই ঘরে ঘরে ঐশ্বর্য দিয়ে গিয়েছেন—

এ-বিষয়ে একটা চাক্ষুষ প্রমাণও এঁকে দেওয়া হয়। দোরগোড়ায় আঁকা হয় গৌরীর পায়ের আলপনা। ঠিক আমাদের বাংলা দেশের লক্ষ্মীপুজোর মতোই। এবং এই পায়ের আলপনার দিকে নজর করলে বোঝা যায় আমাদের লক্ষ্মীব্রতের মতোই এই গণেশচতুর্থী ব্রতের মূলেও রয়েছে প্রভূত শস্যের কামনা |

ভাদ্র সপ্তমীর দিন মেয়েরা চরকায় কাটা সূতো থেকে নিজের নিজের দৈর্ঘ্যের ষোলোগুণ করে লম্বা মাপের সূতো নেয় এবং কলা-বৌ-এর পাশে সূতোগুলি রেখে দেয়। পরের দিন ওই সূতো তুলে তাতে ষোলোটি করে গিট দিয়ে, হলুদ রং-এ ছুপিয়ে, ভাঁজ করে মেয়েরা গলায় পরে। তাছাড়া, ষোলোটি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালে, ষোলোটি তিল এবং ষোলোটি ধান রাখে কলা-বৌ-এর সামনে। এই “ষোলো” সংখ্যাটির দিকে দৃষ্টি রাখা দরকার। কেননা, এই সংখ্যাটিকেই দেখতে পাওয়া যায় বাংলা দেশের আর একটি কৃষি-কামনামূলক ব্ৰততেও। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর(৩৬৯) লিখছেন,

পুর্ববঙ্গের তারাব্রতে একটি ছড়ায় আমরা পাই :
ষোল ষোল বর্তির হাতে ষোল সরা দিয়া,
মোরা যাই ইন্দ্রপুরীর নাটুয়া হইয়া।

ষোলো কেন? ইণ্ডিয়ান এ্যান্টিকোয়ারির বর্ণনাদাতা(৩৭০) বলছেন,

The sixteen knots and the sixteen folds of the skein turned into a necklace suggests the number of weeks a rice-crop takes to grow.

অর্থাৎ কিনা, মানব-অগ্রগতির কোনো এক পিছনে-ফেলে-আসা-পর্যায়ে এই হলো মেয়েদের কাছে দিন গোনবার কৌশল। স্বভাবতই, গণেশচতুর্থী ব্রতের পঞ্চম দিনটিতে মেয়েরা ওই যে হলুদ-ছোপানো সূতোর হার গলায় পরলো, সে-হার তারা খুলবে ফসলের সময় এলে—ষোলো সপ্তাহ পরে। আর তারা এই হারটির নাম দেয় মহালক্ষ্মী—গণেশচতুর্থী ব্রতের সঙ্গে বাংলা দেশের লক্ষ্মী ব্রতের মিল নানান দিক থেকে। শস্যের কামনায় অনুষ্ঠিত বাংলা দেশের আর একটি ব্রতের উল্লেখ আমরা করেছি—তার নাম শস্‌পাতার ব্রত (পৃ: ১৫০)। এবং সেই প্রসঙ্গে আমরা দেখেছি, অনুষ্ঠানের একটি অঙ্গ হলো নাচ—মেয়েদের নাচ। অবনীন্দ্রনাথের বর্ণনায়, “সমস্ত রাত দুই দলের নাচগান ছড়াকাটাকাটির উপরে চাঁদের আলো, তারার ঝিকিমিকি।” গণেশচতুর্থী ব্রতের বেলাতেও এই নাচ,—মেয়েদের নাচ,—বাদ যায় না। ইণ্ডিয়ান এ্যান্টিকোয়ারির বর্ণনাদাতা বলছেন, ভাদ্র সপ্তমীর দিনটিতে মেয়ের দল বেঁধে বাড়ি বাড়ি ঘোরে, তারপর পাড়ার মেয়েরা সকলে মিলে রাতভোর নাচ আর গান করে।

এই নাচগানকে আধুনিক অর্থে অবসর-বিনোদন মনে করলে একেবারেই ভুল করা হবে। সমাজ-বিকাশের পুরোনো পর্যায়ে নাচ-গান খাদ্য-আহরণ বা খাদ্য-উৎপাদন-মূলক কৌশলেরই অঙ্গ। দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখা যায় শুম্বা মেয়েরা(৩৭১) তাদের নাচ শেষ হবার আগে এমন কি কোদালগুলো স্পর্শ পর্যন্ত করবে না। মিসেস্ ব্রায়ন স্কট(৩৭২) বলছেন, উত্তর বোর্নিওতে ডাইকদের মধ্যে কৃষিকাজকে একঘেঁয়ে একটানা শ্রমের ব্যাপার বলে মনে করলে ভুল করা হবে, কেননা তার ফাঁকে ফাঁকে নানান উৎসবের অবকাশ থাকে। আমেরিকার চেইন্নে-ইণ্ডিয়ানদের(৩৭৩)বেলাতেও দেখা যায় কৃষিকাজের একটি অনিবার্য অঙ্গ হলো মেয়েদের ফসল-নাচ : তরুণী ও যুবতীর দল গোল হয়ে নাচ শুরু করে, পুরুষেরা ধরে গান—যে-মেয়েটি নাচের প্রধান অংশ গ্রহণ করে তার হাতের লাঠির ডগায় শস্যের গুচ্ছ বা বাঞ্ছিত ফসল বাধা থাকে। ইতিপূর্বে আমরা আলোচনা করেছি, অন্ন-আহরণের প্রসঙ্গে এই নাচের তাৎপর্যটা কী (পৃ. ১৪৭-১৫০)।

গণেশচতুর্থী ব্রতের আলোচনায় ফিরে আসা যাক। ব্রত-অনুষ্ঠানের শেষে শাকের-উপর-কাপড়-জড়ানো গৌরীমূর্তিটিকে মেয়েরা নদীতে বিসর্জন দিয়ে আসে এবং আসবার সময় নদীর কিনারা থেকে পলিপড়া মাটি মুঠোয় করে নিয়ে আসে, ধানের গোলার উপর আর ক্ষেতের উপর ছিটিয়ে দেয়। ইণ্ডিয়ান এ্যান্টিকোয়ারির বর্ণনাদাতা বলছেন, এবং ঠিকই বলছেন, এ-অনুষ্ঠানটির তাৎপর্য খুব সম্ভব এই যে, শুরুতে নদীর কিনারার ওই পলিপড়া জমিতেই শস্যের উদ্গম হতো এবং এইভাবে ওই উর্বর মাটি ছিটোবার পিছনে যে-জাদুবিশ্বাস তা হলো মাটির উর্বরতার স্পর্শে ফসলের প্রাচুর্য পাবার আশা।

বলাই বাহুল্য, গণেশচতুর্থী ব্রতটিকে এইভাবে শস্যের কামনায় অনুষ্ঠিত ব্ৰত হিসেবে ব্যাখ্যা করে ইণ্ডিয়ান এ্যান্টিকোয়ারির প্রবন্ধলেখক শ্ৰীযুক্ত গুপ্তে আমাদের কাছে কৃতজ্ঞতা-ভাজন হয়েছেন। কিন্তু আমাদের বর্তমান যুক্তির পক্ষে তার ব্যাখ্যায় যেটা আসল দুর্বলতা তারই আলোচনা বোধহয় বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে। কেননা, এই ব্রত কৃষিকেন্দ্রিক বলেই পুরুষ গণপতি যে এখানে বাধ্য হয়ে অপ্রধান হয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত ব্রতটিকে ষোলো আনা মেয়েলি ব্যাপার হতে দিয়ে অনুষ্ঠান থেকে বিদায় নিয়েছেন—সে-কথা শ্ৰীযুক্ত গুপ্তের চোখে ধরা পড়তে চায়নি। বরং তিনি ঠিক উলটো প্রচেষ্টাই করছেন। কৃষিভিত্তিক ওই ব্রতটির নামের সঙ্গে গণেশের সম্পর্ক দেখে তিনি চেষ্টা করছেন গণেশকে একান্তই ফসলের দেবতা বলে প্রমাণ করবার। শ্ৰীযুক্ত গুপ্তে একবার(৩৭৪) বলছেন, ফসল কাটার পর ফসলের বোঝা মাথায় করে কৃষক যখন মাঠ থেকে ফেরে তখন দূর থেকে মনে হয় মানুষের শরীরের উপর হাতির প্রকাণ্ড মাথা; এর থেকেই গণেশ মূর্তির উদ্ভব। আবার, অন্যত্রও তিনি বলছেন, দু’দিকে কুলো বসিয়ে মাঝখানে ধানের শিষ আর লাঙলকে এমনভাবে সাজানো যায় যে, দেখতে অনেকটা হাতির মাথার মতোই মনে হয়—এর থেকেই গণেশ-মূর্তির উদ্ভব হয়েছে। বলাই বাহুল্য, এ-জাতীয় কল্পনা উদ্ভট ও কৃত্রিম। এবং কৃষিকেন্দ্রিক ব্ৰত অনুষ্ঠানের মধ্যে পুরুষমূর্তির স্থান থাকা যে সত্যিই অস্বাভাবিক, সে-বিষয়ে খেয়াল রাখেননি বলেই শ্ৰীযুক্ত গুপ্তে(৩৭৬) উপসংহারে বলছেন : “এই বিষয়ে ভারতবর্ষীয় গণেশের সঙ্গে মেক্সিকোর শস্যদেবী, টঙ্গা-দ্বীপের আলোআলো, গ্রীকদের ডিমিটর এবং রোমানদের সিরিস্‌-দেবীর তুলনা করা যায়।” কিন্তু আসল কথা হলো, তুলনা করা যায় না। কেননা, পুরুষের সঙ্গে নারীর তুলনা করা চলে না : উদ্ধৃতিতে উল্লেখিত প্রত্যেকটি নাম কৃষিকেন্দ্রিক বলেই অনিবাৰ্যভাবে দেবী-নাম, মাতৃমূর্তি—কেবল গণেশ নন। শ্ৰীযুক্ত গুপ্তে যদি গণেশচতুর্থী নামটুকুর উপরই অমনভাবে আটকে না যেতেন তাহলে অনায়াসেই দেখতে পেতেন, নামে গণেশচতুর্থী হলেও এই কৃষিকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানের মধ্যে পুরুষ গণেশও গণেশ-জননীর জন্যে জায়গা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ কৃষিকেন্দ্রিক এই অনুষ্ঠানে পুরুষ যে কী ভাবে অপ্রধান হয়ে গিয়েছে তার নমুনা শ্ৰীযুক্ত গুপ্তের বর্ণনা(৩৭৭) থেকেই পাওয়া অসম্ভব নয় :

In regard to the chief goddess, Gowri, the Goddess of the Harvest, one great peculiarity remains to be mentioned, She is supposed to have been followed secretly by her husband, Siva, who remains hidden under the outer-fold of her sari, and is represented by a lota covered by a cocoanut and filled with rice carefully measured…
অর্থাং, ওই শস্যদেবী গৌরী সম্বন্ধে একটা খুব বড়ো বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ বাকি আছে। কল্পনা করা হয়, তার স্বামী শিব লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে অনুগমন করছেন। শিব ঢাকা থাকেন গৌরীর শাড়ির আঁচলে এবং একটি ঘটির মধ্যে চাল দিয়ে ও ঘটির মুখে নারকেল ঢাকা দিয়ে এই শিবের প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়।

ইতিপূর্বে শ্রীযুক্ত ক্ষিতিমোহন সেন মহাশয়ের রচনায় আমরা দেখেছি, আমাদের দেশে পিতৃপ্রাধান্ত ও মাতৃপ্রাধান্য অর্থে বীজপ্রধান ও ক্ষেত্রপ্রধান শব্দ ব্যবহৃত হতো। মাতৃপ্রধান এই গণেশচতুর্থী ব্রতের বেলায় দেখছি, পুরুষকে সত্যিই বীজপূর্ণ ঘট বলেই কল্পনা করা হচ্ছে—এবং বীজ অপ্রধান, গৌরীর শাড়ির আঁচলে ঢাকা রয়েছে।

কৃষিকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানটিতে এইভাবে পুরুষের ভূমিকা ‘অপ্রধান’ এবং ‘উদাসীনে’র মতো হয়ে যাওয়ার সঙ্গে তান্ত্রিক ধ্যানধারণার এবং সাংখ্য দর্শনের কোনো যোগাযোগ থাকতে পারে কি না—এ-প্রশ্নে আমরা পরে প্রত্যাবর্তন করবো।

—————

৩৬৭. বিশ্বকোষ ৫:২০৬-৭।

৩৬৮. B. A. Gupte in IA—February 1906.

৩৬৯. অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর : বাংলার ব্রত ৫৩।

৩৭০. B. A. Gupte op. cit. 62.

৩৭১. R. Briffault M 3:3.

৩৭২. Ibid.

৩৭৩. Ibid.

৩৭৪. B. A. Gupte op, cit, 63,

৩৭৫. Ibid. Figure 3.

৩৭৬. Ibid. 63.

৩৭৭. Ibid. 61.