রবোমানব তিনজনের একজন জিজ্ঞেস করল, তোমরা কী চাও?
পেশীবহুল তরুণটি তার অস্ত্রটি হাত বদল করে বলল, তোমরা কাল বলেছিলে তোমরা সুস্থ সবল নীরোগ পঞ্চাশজন মানুষ চাও। আমরা সুস্থ সবল নিরোগ পঞ্চাশজন এসেছি।
একজন রবোমানব তার হাতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি তুলে বলল, আমাদের সাথে তামাশা করার চেষ্টা করো না। এই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি দিয়ে তোমাদের সবাইকে শেষ করে দেব।
আমরা সেটা অনুমান করেছিলাম। তাই দেখতেই পাচ্ছ আমরা সুস্থ সবল নীরোগ পঞ্চাশজন খালি হাতে আসিনি। সবার হাতে অস্ত্র। অস্ত্রাগার ভেঙে নিয়ে এসেছি।
।সোনালি চুলের একটি মেয়ে বলল, পৃথিবীর নেটওয়ার্ক কেন বন্ধ সেটা আমরা এখন বুঝতে পারছি। তোমরা এটি দখল করেছ জানতে পেরে নেটওয়ার্কটি অচল করে দেয়া হয়েছে। তোমরা সোনার হরিণ ধরার চেষ্টা করেছ। ধরে আবিষ্কার করেছ এটা মরা ইঁদুর। মানুষের বুদ্ধি রবোমানবের থেকে অনেক বেশি।
রবোমানবটি হিংস্র গলায় বলল, আমার কাছে বুদ্ধি নিয়ে বড়াই করো না। তোমরা সরে যাও, না হলে গুলি করে শেষ করে দেব।
পেশীবহুল তরুণটি বলল, এই কথাটা বরং আমরাই বলি। অস্ত্র ফেলে দিয়ে দুই হাত উঁচু করে দাঁড়াও না হলে আমরা গুলি করে শেষ করে দেব।
তরুণটির কথা শেষ হবার আগে রবোমানব তিনটি তাদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি করতে শুরু করে। পঞ্চাশজন তরুণ তরুণীও তাদের অস্ত্র তুলে নেয়। হলঘরটির মাঝে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।
যেভাবে হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হয়েছিল ঠিক সেভাবে গোলাগুলি বন্ধ হয়ে গেল। হলঘরের একপাশে গুলিবিদ্ধ তিনজন রবোমানব পড়েছিল। অন্য পাশে তরুণ-তরুণীরা। খুব ধীরে ধীরে তরুণ-তরুণীরা ওঠে দাঁড়াতে থাকে। শরীর থেকে ধূলা ঝাড়তে ঝাড়তে একজন বলল, রবোমানবদের বলা হয় নি আমরা অস্ত্রাগার ভেঙ্গে শুধু অস্ত্র নিই নি, গুলি নিরোধক পোশাকও নিয়েছি।
পঞ্চাশজন তরুণ-তরুণী তিনটি রবোমানবকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রইল। একজন বলল, আমি কখনো চিন্তা করিনি আমি আমার হাতে অস্ত্র তুলে নেব, আমি সেই অস্ত্র দিয়ে কাউকে গুলি করব। আমি কখনোই কোনো প্রাণীর মৃত্যুর কারণ হতে চাই নি।
সোনালি চুলের মেয়েটি বলল, তুমি সেটি নিয়ে মাথা ঘামিও না। রবোমানব তিনটি গুলিবিদ্ধ হয়েছে, কিন্তু এখনো মারা যায় নি। হাসপাতালে নিলে বাঁচিয়ে ফেলবে।
একজন শুধু মুখ শক্ত করে বলল, আমরা এই প্রাণীগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করব?
সোনালি চুলের মেয়েটি বলল, হ্যাঁ বাঁচানোর চেষ্টা করব।
কেন?
কারণ আমরা মানুষ। কারণ আমরা রবোমানব নই।
তিনজন গুলিবিদ্ধ রবোমানকে হাসপাতালে নিতে নিতে একজন তরুণ জিজ্ঞেস করল, সারা পৃথিবীতে এখন কী হচ্ছে কে জানে?
অন্য একজন বলল, ঠিক এখানে যা হচ্ছে নিশ্চয়ই সব জায়গাতেই তাই হচ্ছে।
তুমি তাই ভাবছ?
হ্যাঁ। নেটওয়ার্কটি ইচ্ছে করে বিকল করা হয়েছে।
তার মানে আমাদের নেটওয়ার্ক ছাড়া বেঁচে থাকতে হবে?
হ্যাঁ। আর মজার কথা কী জান?
কী?
আমরা নেটওয়ার্ক ছাড়াই কিন্তু বেঁচে থাকা শুরু করে দিয়েছি। সত্যি কথা বলতে কী, অভিজ্ঞতাটা কিন্তু খুব খারাপ না।
তরুণ কয়েকজন শব্দ করে হেসে উঠল। একজন তরুণী বলল, তুমি ঠিকই বলেছ! নেটওয়ার্কবিহীন জীবনটা আমার কাছেও মন্দ লাগছে না। এর মাঝে একটা স্বাধীন স্বাধীন ভাব আছে, কেমন যেন বনভোজনের আনন্দ আছে!
কয়েকজন মাথা নাড়ল, বলল, ঠিকই বলেছ!