জন্মেজয় বলিলেন শুন তপোধন।
শুনিলাম হংসধ্বজ রাজার কথন।।
বিবরিয়া কহ শুনি মুনি মহাশয়।
ঘোড়া সঙ্গে কোথায় গেলেন ধনঞ্জয়।।
মুনি বলে অশ্ব গিয়া প্রবেশিল বনে।
হরষিতে যান হরি অর্জ্জুনের সনে।।
বনের ভিতরে গাছে দিব্য সরোবর।
চারিদিকে পুষ্পোদ্যান দেখিতে সুন্দর।।
রামরম্ভা আছে কত সরোবর তটে।
দৈবযোগে অশ্ববর গেল সেই খাটে।।
জল পরশিয়া অশ্ব ঘোটকী হইল।
তাহা দেখি অর্জ্জুনের ভয় উপজিল।।
ঘোড়ীরূপী হয়ে অশ্ব চলিল সত্বরে।
যতনে পাণ্ডব সৈন্য রাখিতে না পারে।।
আপনার মনে ঘোড়ী চলে যেইখানে।
ঘোড়ী বেড়ি সৈন্যগণ যায় হৃষ্টমনে।।
ঘোড়ী রূপ হয়ে অশ্ব সত্বরে চলিল।
দৈবযোগে এক হ্রদ সম্মুখে দেখিল।।
ব্যাঘ্ররূপ হৈল তার জল পরশিয়া।
তাহা দেখি রহে পার্থ অধোমুখ হৈয়া।।
গোবিন্দ বলেন সখা চিন্তা কর কেন।
এখনি পাইবে তত্ত্ব মুনিবর স্থানে।।
ব্যঘ্ররূপ হল ইহা কিসের কারণে।
কৌণ্ডিণ্য নামেতে মুনি আছে সেই স্থানে।।
নরনায়ারণ যান মুনি বিদ্যমানে।
মুনির চরণে দোঁহে করেন প্রণাম।।
আশীর্ব্বাদ করিলেন মুনি গুণধাম।
তবে হরি কহিলেন শুন তপোধন।।
আসিলাম তব স্থানে আছে প্রয়োজন।
অশ্বমেধ যজ্ঞ করিলেন যুধিষ্ঠির।।
অশ্বরক্ষা হেতু আখিলেন পার্থবীর।
দৈবে এই বনে ঘোড়া প্রবেশ করিল।।
জল পরশিয়া অশ্ব তুরগী হইল।
কার অভিশাপ ছিল এই সরোবরে।।
পূর্ব্বকথা মহামুনি জিজ্ঞাসি তোমারে।
জিজ্ঞাসিল নারায়ণ কৌণ্ডিল্য মুনিরে।।
মুনি বলে পূর্ব্ব কথা কহিব তোমারে।
কৌণ্ডিণ্য বলেন শুন দেবনারায়ণ।।
তুমি শ্রোতা আমি বক্তা এ নহে শোভন।
তবে যদি জানিয়া জিজ্ঞাসা কর তুমি।।
সরোবর বিবরণ শুন কহি আমি।
বড় রম্য এই স্থান দেখিয়া পার্ব্বতী।।
তপস্যা করিল আরাধিতে পশুপতি।
তপস্য করেন গৌরী সরোবর তীরে।।
সমাধি করিয়া মনে ভাবেন শঙ্করে।
হেনকালে এক দৈত্য তথায় আইল।।
দেখিয়া গৌরীর রূপ মূর্চ্ছিত হইল।
কামে মত্ত হৈল পাপী অভয়া দেখিয়া।।
যায় ধরিবারে দৈত্য বাহু প্রসারিয়া।
বুঝিয়া তাহার মন নগেন্দ্র নন্দিনী।।
তপ ভঙ্গ হেতু দেন অভিশাপ বাণী।
পুরুষ হইয়া যে আসিবে সরোবরে।।
নারীরূপ হৈল তবে পার্ব্বতীর শাপে।
ঘরে নাহি গেল দৈত্য সেই মনস্তাপে।।
সরোবরে অভিশাপ দিলেন ভবানী।
পুরুষ হইবে নারী পরশিলে পানি।।
শাপান্ত না জানি শুন হরি মহাশয়।
প্রতিকার ইহার করিবে দয়াময়।।
তবে কৃষ্ণ কহিলেন শুন মহামুনি।
আর এক কথা তোমা জিজ্ঞাসি যে আমি।।
ঘোড়ীরূপ হয়ে ঘোড়া চলিল সত্বরে।
জলপান হেতু প্রবেশিল সরোবরে।।
ব্যাঘ্ররূপ হৈল তার জল পরশিয়া।
কারণ জিজ্ঞাসি আমি কহ বিবরিয়া।।
কৌণ্ডিত বলেন হরি বাক্যে দেহ মন।
কহিব তোমারে আমি জ্ঞার্থ বচন।।
মিত্রসেন নামে মুনি ছিল এই বনে।
তার কথা কহি আমি তব বিদ্যমানে।।
তীর্থ কথা কহি আমি তব বিদ্যমানে।
তীর্থ করি সে মুনি পাইল বড় ক্লেণ।।
চিরদিন পরে আইলেন নিজ দেশ।
স্নানের কারণে মুনি হ্রদে প্রবেশিল।।
স্নানাদি তর্পন সেই জলেতে করিল।
হেনকালে এক দৈত্য তথাতে আসিল।।
ভয়ঙ্কর বেশ ধরি মুনিকে ধরিল।
দৈত্যের দেখিয়া মুর্ক্তি মুনি বলে তারে।।
ব্যাঘ্ররূপ হবে তোর পরশিলে পানি।
শাপান্ত নাহিক জানি শুন চক্রপাণি।।
তুমি পরশিলে ঘোড়া হইবে এখনি।
শুন মহাশয় তুমি জগৎ ঈশ্বর।।
যাহা জানি কহিলাম তোমার গোচর।
ব্যাঘ্র পরশি যে আমি তোমার বচনে।।
ব্রাহ্মণের অভিশাপ ঘুচায় ব্রাহ্মণে।
এত বলি ব্যাঘ্রে পরশিল গদাধর।।
ব্যাঘ্ররূপ ত্যজি অশ্ব হইল সত্বর।
প্রণমিয়া মুনিকে চলেন দুইজন।।
অর্জ্জুনের কহিলেন দেব নারায়ণ।
অশ্ব রাখিবার হেতু ভ্রম চরাচর।।
আমি শীঘ্রগতি যাই হস্তিনানগর।
সঙ্কট হইলে আমা করিও স্মরণ।।
এত বলি বিদায় হলেন নারায়ণ।
সঙ্কট হইলে আমা করিও স্মরণ।।
এত বলি বিদায় হলেন নারায়ণ।
ভ্রমণ করয়ে ঘোড়া আপনার সুখে।।
সর্ব্ব সৈন্য সঙ্গে পার্থ চলিল কৌতুকে।