নদীর নাম হাতানিয়া-দোয়ানিয়া। কোনও নদীর এমন অদ্ভুত নাম আমি আর শুনিনি। কী এর মানে? কোন উদ্দাম কল্পনায় এরকম নাম দেওয়া যায়! অথচ নামটা বেশ সুন্দর, বেশ ঘরোয়া, খুব আপন আপন। সুন্দরবন এলাকায় অনেক নদীর নামই খুব মধুর। যেমন ঠাকুরান, যেমন মৃদঙ্গভাঙা। তবু হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নামটিই আমার বেশি পছন্দ। এর সমতুল্য নামের আর একটা নদী আমি পেয়েছিলাম, সেটি আসামে, তার নাম ঝাটিংগা।
হাতানিয়া-দোয়ানিয়া ছোট নদী হলেও বেশ তেজি। কলকাতা থেকে মাত্র সত্তর-আশি মাইল দূরে সমুদ্র থাকলেও আমরা যে সরাসরি বাসে চেপে বা গাড়িতে সমুদ্রের কাছে পৌঁছে যেতে পারি না, তার কারণ এই নদীটি শুয়ে আছে নামখানার পাশে। এর ওপর এটা সেতু বানানো যায় না? যায় নিশ্চয়ই, তবে যেমন-তেমন সেতু বানালে চলবে না, সেটি বানাতে হবে বেশ উঁচু করে কারণ এই নদী দিয়ে অনেক বড়-বড় মাছবাহী নৌকো যায়, স্থানীয় বাণিজ্যের জন্য যেগুলি জরুরি। তবু সেরকম একটা সেতুও কি বানানো যায় না? যাবে না কেন, কিন্তু কে-ই বা তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে?
হাতানিয়া-দেয়ানিয়ার বুকে একটা ছোট্ট ছিমছাম সপ্রতিভ লঞ্চে চড়ে যাত্রা শুরু হল। বিকেলের পাতলা রোদকে চাদরের মতন উড়িয়ে সুপবন বইছে। আমরা কয়েক বন্ধু লঞ্চের ওপরের ছোট ক্যাবিনে জমিয়ে বসলাম। খানিকটা দূরে যেতে যেতেই নদীর দুধার গৃহ-বিরল হয়ে এল, ধুধু করা মাঠ, মাঝে-মাঝে এক-একটা একলা গাছ। নদীর ধারে এখানে সেখানে প্র তীক্ষ্ণমান এক পায়ে-খাড়া হয়ে থাকা বক। পরিচিত দৃশ্য।
এক ঘণ্টার মধ্যেই আমরা এসে পড়লাম একটা বড় নদীতে। এ নদীর নাম সপ্তমুখী। নদী তো নয়, গোলোকধাঁধা। সাতনরি হারের মতন নদীটি ছড়িয়ে আছে, এর কোন মুখ যে কোথায় গিয়ে পড়েছে একবার দুবার যাতায়াতে তা বুঝে ওঠা দুঃসাধ্য।
এবার আর নদীর দু-ধার রুক্ষ নয়, ঘন গাছের দেওয়াল। আমার ঢুকে পড়েছি সুন্দরবনে। বুকের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা, চোখ দুটি যেন সবকিছু হাঁ করে গিলতে চায়। এর আগে আমি আসাম, বিহার, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশের অনেক জঙ্গলে ঘুরেছি, এমনকী জঙ্গল দেখতে গেছি সুদূর আন্দামানও, কিন্তু ঘরের কাছেই সুন্দরবন, পৃথিবীর বিখ্যাত অরণ্যগুলির একটি তা-ই আমার দেখা হয়নি এতদিন। এক একটা ব্যাপার ঠিক যেন হয়ে ওঠে না। যেমন, আমি শরৎচন্দ্রের ‘গৃহদাহ’ উপন্যাস-খানা পড়িনি। শরৎচন্দ্রের অন্য সবই বই একাধিকবার পড়া, অথচ এই বইখানা হাতের কাছে পাইনি বা যে-কারণেই হোক, পড়া হয়ে ওঠেনি। লোকে যখন ‘গৃহদাহ’ নিয়ে আলোচনা করে, চুপ করে থাকি। তেমন সুন্দরবন সম্পর্কেও।
আমরা যে-দিকটায় যাচ্ছি সেদিকটা সুন্দরবনের আসল ভয়াবহ দিক নয়। ক্যানিং থেকে গোসাবা হয়ে ঢোকা যায় নিবিড় সুন্দরবনে, সেখানকার চামটা ব্লক ইত্যাদি রোমহর্ষক জায়গা। সেদিকে এখনও যাওয়া হয়নি, একদিন যাব নিশ্চয়ই। অবশ্য আমরা যেদিকে চলেছি সেদিকেও ধনচে ব্লকে বাঘ আছে। তাই নামখানার টাইগার প্রজেক্টের বোর্ড ঝোলে।
ছলাৎছলাৎ করে ঢেউগুলো ধাক্কা মারে তীরের নরম মাটিতে। মাঝেমাঝে ঝুপঝুপ করে পাড় ভেঙে পড়ে। সেইদিকে তাকিয়ে আমার ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে। এক-একজনের এক একরকম অনুষঙ্গ। আমার ছেলেবেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নদী-নালা-খাল-বিল। জলের দেশে বাল্য ও কৈশোরের কিছু বছর কাটিয়েছি। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে খেলা করতে যাওয়ার সময় মাঝখানের খানিকটা জায়গা সাঁতরে পার হয়ে যেতে হত। একা-একা ঘুরে বেড়িয়েছি নৌকোয়, ছোট পাল, দুপাশে ঝুঁকে পড়েছে গাছপালা, স্বচ্ছ জলের মধ্যে দেখা যায় খলসে আর চাঁদা মাছ। (খলসে মাছ কি পৃথিবী থেকে নিঃশেষ হয়ে গেছে? বহুঁকাল দেখিনি।) ফরিদপুরে আমাদের গ্রাম থেকে কয়েক মাইল দূরে ছিল এক দুর্ধর্ষ নদী, নাম আড়িয়েল খাঁপাড় ভাঙার জন্য বিখ্যাত। কতদিন সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছি ঝুপ ঝাঁপ করে পাড় ভেঙে জলে পড়ে যাচ্ছে। তখন নদীর কূল ভাঙার সঙ্গে জীবন বা সংসারের কোনও উপমা মনে আসত না, এমনিই দেখতে দেখতে শিহরন জাগত!
–ওই যে একটা কুমির।
ডেক থেকে কে যেন চেঁচিয়ে উঠলেন। কুমির দেখার জন্য আমরা হুড়মুড় করে বাইরে এলাম। শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বরুণ চৌধুরী, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ও আমি। এ ছাড়া সেচ ও শিক্ষা বিভাগের কয়েকজন অফিসার, আমরা যাঁদের অতিথি। কিন্তু আমরা ঠকে গেলাম, চিৎকারকারী আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করেছিলেন। কুমির টুমির কিছু নয়, চরের ওপর পড়ে আছে এক খণ্ড পোড়া কাঠ। কুমির এরকমভাবে শুয়ে থাকে বটে কিন্তু আমাদের খুশি করার জন্য সেদিন কোনও কুমির একবারও চরের ওপর রোদ পোহাতে এল না। আমরা ক্যাবিনের জানলা দিয়ে এমন ব্যগ্রভাবে তাকিয়েছিলাম যেন যে-কোনও মুহূর্তেই একপাল হরিণ কিংবা একটা জ্যান্ত বাঘ দেখে ফেলব। কিন্তু একটাও জনপ্রাণী চোখে পড়ে না। শুধু একটানা বোবা জঙ্গল।
প্রথম দর্শনে সুন্দরবনকে একটুও সুন্দর লাগে না। মনে মনে আমি এই অরণ্যের অন্য একটি চিত্র এঁকে রেখেছিলাম। বস্তুত, আগেকার দেখা অন্য কোনও বনের সঙ্গেই সুন্দরবন মেলে না। অন্য সমস্ত নিবিড় বনে দেখেছি বিশাল বিশাল বনস্পতি, শাল, সেগুন, জারুলের গগনচুম্বী স্পর্ধা। কিন্তু সুন্দরবনের গাছগুলো ছোট ছোট, একতলা দেড়তলা বাড়ির চেয়ে বেশি উঁচু নয়। ভেড়ার গ্রামের মতন অত্যন্ত ঘনভাবে জড়ামড়ি করে আছে গাছগুলো। দেখলেই বোঝা যায়, তারা অত্যন্ত জেদি ও শক্তিশালী, তাদের মোটামোটা শেকড় লম্বা হয়ে মাটির ওপর দিয়ে এগিয়ে এসেছে অনেকখানি। জোয়ারের সময় নদী অনেকটা ঢুকে যায় বনের মধ্যে, আবার জল নেমে আসার পর জমে থাকে থকথকে কাদা, সেই কাদা ছুঁড়ে মাথা উঁচু করে থাকে অজস্র মূল। এবং সেই কাদার ওপরে কানকো দিয়ে হাঁটা-চলা করে একরকমের মাছ। মেঘ ডাকলে কই মাছকে অনেক সময় ডাঙার ওপর দিয়ে চলতে দেখেছি–এ ছাড়া যখন তখন স্থলে ভ্রাম্যমাণ এই একটাই মাছ আমার চোখে পড়েছে চব্বিশ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় যে মাছের সঠিক বাংলানাম কেউ জানে না, এক একজন এক-একরকম বলে। নোনা জল ঢুকলে খেতের ফসল নষ্ট হয়ে যায়, আর সেই নোনা জল খেয়েই সুন্দরবনের গাছপালা এত তেজি ও স্বাস্থ্যবান। শুনেছি সুন্দর ওরফে সুঁদরি গাছের জন্যই সুন্দরবন নাম। সে গাছ একটাও দেখলাম না। শোনা গেল, পূর্ববাংলা ওরফে বাংলাদেশের দিকে কিছু আছে। এপাশে আর চোখে পড়ে না। আর এক রকম গাছ খুব বেশি, যার স্থানীয় নাম বাইন। আর সব গাছের নাম জানি না।
নদীর ধারের দিকের গাছগুলি অধিকাংশই হিন্তাল বা হেঁতাল, এরকম শুনলাম। আবার অবাক হওয়ার পালা। মনসামঙ্গল কাব্যে পড়েছিলাম, চাঁদ সদাগরের হাতে সব সময় একটা হিন্তালের লাঠি থাকত। আগে জানতাম না হিন্তাল গাছ কীরকম, কিন্তু চাঁদ সদাগরের লাঠি নিশ্চয়ই একটা বেশ শক্তপোক্ত জিনিস হবে। কিন্তু এ গাছগুলো তো বেঁটে ঝোঁপের মতন অনেকটা বেত ও খে জ্বর গাছের সংমিশ্রণ বলে মনে হয়। পাতাগুলো সবুজ হলদেতে মেশানো, বাঘের ক্যামুফ্লাজের পক্ষে আদর্শ। বাঘেরা এই হিন্তালের ঝোপেই লুকিয়ে থাকতে ভালোবাসে। পরে অবশ্য কাছ থেকে দেখেছি, হিন্তালের দু-একটা ডাল বেশ লম্বা হয়, তা দিয়ে ভালো লাঠি বানানোও যায়। হেঁতালের ঝোঁপগুলো দেখে মনে পড়ছিল মানগ্রোভের কথা, যা প্রচুর দেখেছি আন্দামানে। সেখানে অবশ্য নদী নেই, খাঁড়ি বা ক্রিক। তার মধ্যে এক গলা নোনা জলের মধ্যে দাঁড়িয়েও মানগ্রোভগুলোর ডাকাতের মতন স্বাস্থ্য।
খানিক বাদেই অন্ধকার হয়ে এল। এখন দুপাশে শুধু নিবিড় নিচ্ছিদ্র অন্ধকার। একটাও বাঘের ডাক শুনিনি তবু কীরকম গা ছমছম করে। নদীর বুকে আমাদের লঞ্চের জোরালো সার্চলাইট একটা আলোকপথ তৈরি করে রেখেছে, তাতে মাঝেমাঝে দেখা যায়, দু-একটা মাছ ধরার নৌকোর টিমটিমে আলো। দূরে এক জায়গায় দেখা বায় জলের বুকে যেন দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। না আলেয়া নয়, কাছে গেলে দেখা যায়, একটা বড় স্টিমার বা গাধাবোট, তাকে ঘিরে সাত আটটি নৌকো। এরা বাংলাদেশের ব্যাপারি এরকমভাবে থেমে থেমে সাত আট দিনে পৌঁছোয়। এখানকার ডাঙায় যেমন বাঘ-কুমির, তেমনি জলে বড় ডাকাতের উপদ্রব।
ওয়ালস ক্রিক, কারজন ক্রিক, চালতাবুনিয়া, জগদ্দল–এইসব অদ্ভুত নামের খাঁড়ি-নদীর পাশে পাশে পাথরপ্রতিমা, শিবগঞ্জ, কিশোরী নগর–এ ধরনের নামের গ্রাম। এরই মধ্যে একটি ভাগবতপুর; এখানে আছে কুমিরের চাষ। আমরা ভাগবতপুরে দিনের আলো থাকতে থাকতেই একবার লঞ্চ থামিয়ে নেমে পড়েছিলাম। লঞ্চ থেকে একটা কাঠের তক্তা বেয়ে নামতে গিয়ে একজন পড়ল কাদার মধ্যে, আমি ভাঙা-ঝিনুকে পা কেটে ফেললাম। ভাগবতপুর–এরকম জমকালো নাম সত্বেও ঘড়বাড়ি কৃচিৎ চোখে পড়ে। এখানে নারকোল চাষের সরকারি পরিকল্পনায় খুব ধুমধাম করে নারকোলের চারা লাগানো হয়েছিল কয়েক হাজার। তার অধিকাংশই শুয়োরে খেয়ে গেছে কিংবা লোকে চুরি করে নিয়ে গেছে। কুমির প্রকল্পটি অবশ্য সদ্য তৈরি হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশে এখন আর কুমির নেই, তাই ভারত সেইসব দেশে কুমির বিক্রি করে বিদেশি মুদ্রা আনবে। বাঘ-সিংহ-কুমির জাতীয় প্রাণীরা স্মরণাতীত কাল থেকে এই সেদিন পর্যন্ত ছিল মানুষের শত্রু, মানুষ ওদের হাতে মরেছে কিংবা ওদের মেরেছে। এখন সেই মানুষই যত্ন করে ওদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। এখন বাঘ যদি মানুষ মারে, তার কোনও শাস্তি হবে না, কিন্তু মানুষ যদি বাঘ মারে তার জেল হবে নির্ঘাত। মানুষ বড় মজার জাত।
সুন্দরবনের নানা জায়গা থেকে ধরে আনা হচ্ছে কুমির, কিংবা খুঁজে আনা হচ্ছে কুমিরের ডিম। তারপর জলের উত্তাপ মেপে, তাদের রুচিমতন খাদ্য দিয়ে অনেক তরিবত করে লালন করা হচ্ছে তাদের। পটাসিয়াম পারমাঙ্গানেট মেশানো জলে পা ধুয়ে আমরা ঢুকলাম একটা হলঘরের মতন খাঁচা ঘরে কুমিরের বাচ্চা দেখতে। চল্লিশ বেয়াল্লিশটা বাচ্চা কুমিরকে ডিম ফুটিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন চৌবাচ্চায়। এক একটা গিরগিটির চেয়ে একটু বড়, কাছে গেলেই ধারালো দাঁত মেলে হাঁ করে আসে। একবার ধরতে পারলে খুবলে মাংস তুলে নেবে। আমরা মুখ দিয়ে উৎকট শব্দ করে ওদের ভয় দেখাই। একসঙ্গে এতগুলো কুমিরের বাচ্চা। জীবনে আরও কত কিছু দেখব। সন্ধে হওয়ার আগেই লঞ্চে ফিরে এলাম।
আমাদের গন্তব্য সীতারামপুর। সেখানে সেচ বিভাগের একটা ছোট বাংলো আছে। এর পর আর জনবসতি নেই বললেই চলে। অদূরে সমুদ্র। আমরা কয়েক বন্ধু রাত্রে লঞ্চেই থেকে গেলাম হই-হই করে জেগে, আধো-ঘুমিয়ে। ওপারের ধনচে জঙ্গলের বাঘরা আমাদের সেই কোলাহলে বিরক্ত হয়েছিল কিনা কে জানে।
সকালবেলা সাগরের মোহনা পর্যন্ত যাওয়ার চেষ্টা করেও ফিরে আসতে হল। জোয়ারের জল ঢুকছে তার মধ্যে আমাদের লঞ্চটা মোচার খোলার মতন টালমাটাল। সারেং চটপট লঞ্চের মুখ ঘুরিয়ে ফেলল।
ফেরার পথ ওপারের জঙ্গল ঘেঁষে। পারমিট ছাড়া এই জঙ্গলে প্রবেশ নিষেধ। আমাদের কাছে সেসব কিছুই নেই। ঠাসা, জমজমাট অত্যন্ত বন্য ধরনের বন, এর ভেতর হাঁটতে গেলে দুহাতে বন ঠেলে-ঠেলে যেতে হবে। তবু একবার যেতে ইচ্ছে করে। চরের ওপর বসে আছে এক ঝাঁক খয়েরি রঙের বুনো হাঁস, হাওয়ায় গাছের ডগাগুলো দুলে-দুলে উঠছে, জোয়ারের জল বেড়ে উঠছে লকলক করে। এ সময় কোনো ভয়ের চিন্তা মনে আসে না। ইচ্ছে হয় এক ছুটে জঙ্গলটা একবার ঘুরে আসি।
সারেংকে বললাম, একবার লঞ্চটা থামান না। এখানে তো দেখবার কেউ নেই। আমরা একটুখানি ঘুরেই চলে আসব।
সারেং কিছুতেই রাজি নয়। মানুষটি বেশ সদালাপী-এর আগে আমাদের অনেক উপদ্রব সহ্য করেছেন। কিন্তু এবার বললেন, না বাবু, আপনারা জানেন না সুন্দরবনকে বিশ্বাস নেই। কখন কোথা থেকে যে বিপদ ঘটে যায়, কিছুই বলা যায় না এই তো সেদিন একজনকে..পাড়ে নামা মাত্তরই বাঘ এসে…
এরপর তিনি আমাদের একটি রোমহর্ষক কাহিনি শোনান। সুন্দরবনের বাঘের এরকম অত্যাচার কাহিনি আমরা আগেও পড়েছি বা শুনেছি। এই টাটকা কাহিনিটিও যে সত্য তার প্রমাণ হিসেবে, সারেং বললেন, আহত ব্যক্তিটিকে এখনও মুমূর্ষ অবস্থায় কাকদ্বীপের হাসপাতালে দেখা যেতে পারে। অবিশ্বাস করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তবু আমরা একটু ক্ষুণ্ণ হয়ে রইলাম।
একটু পরে দেখি যে একটা খুব সরু খাঁড়ি দিয়ে একটি ছিপ নৌকোয় দু’তিনজন লোক ঢুকছে ওই জঙ্গলে। আমরা বললাম, ওই যে লোকগুলো যাচ্ছে ওদের ভয় নেই?
এ প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে সারেং বিচিত্রভাবে হেসে আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
তখনই বুঝলাম আমাদের মূর্খামি। যারা প্রতিদিন না খেতে পেয়ে মরে যাওয়ার দুশ্চিন্তা নিয়ে বেচে আছে, তাদের কি বাঘের ভয় পেলে চলে? এ আর নতুন কথা কী?