২৪৯তম অধ্যায়
দুৰ্য্যোধনের প্রতি কর্ণের সান্ত্বনা
কৰ্ণ কহিলেন, “হে রাজন! আদ্য নিশ্চয় জানিলাম, তুমি অত্যন্ত লঘুচেতাঃ; পাণ্ডবেরা তোমাদিগকে শক্ৰ হইতে বিমুক্ত করিয়াছে, ইহা আশ্চর্য্যের বিষয় নহে। রাজ্যান্তর্ব্বাসী ব্যক্তি ও সৈনিক-পুরুষেরা সমক্ষেই হউক অথবা অসমক্ষেই হউক, প্ৰাণপণে অবশ্যই প্রভুর প্রিয়কাৰ্য্য সম্পাদন করিবে। প্রধান পুরুষেরা শক্রসেনাকর্ত্তৃক রণস্থলে নিগৃহীত হউন বা পরিত্যক্তই হউন, তাহাদিগকে ক্ষোভিত করিতে কখনই ত্রুটি করবেন না। তাঁহারা জনপদবাসী যুদ্ধজীব মানবগণের সহিত মিলিত হইয়া রাজকাৰ্য্যসাধনের নিমিত্ত যথাসাধ্য যত্ন করিবেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। পাণ্ডবেরা তোমার রাজ্যান্তর্ব্বাসী, তাহারা যাদৃচ্ছাক্রমে তোমাকে যে মুক্ত করিয়াছে, তন্নিমিত্ত উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নহে।
“হে নৃপোত্তম! যুদ্ধে অপরাঙ্মুখ মহাবলপরাক্রান্ত পাণ্ডবেরা পূর্ব্বেই তোমার ভৃত্য ও সহায়স্বরূপ হইয়াছে; অতএব তুমি যে সময়ে যুদ্ধযাত্রা কর, তৎকালে যে তাহারা স্বীয় সেনাসমভিব্যাহারে তোমার অনুগমন করে নাই, ইহা কি তাহাদিগের সাধু ব্যবহার হইয়াছে? তুমি অদ্যাপি পাণ্ডবগণের রত্ন-সমূহ উপভোগ করিতেছ; কিন্তু তন্নিমিত্ত তাহারা কিঞ্চিম্মাত্ৰও অসুখী হয় নাই এবং দুঃখে প্ৰায়োপবেশনও করে নাই; অতএব এক্ষণে গাত্ৰোত্থান কর, আর বিলম্বে প্রয়োজন নাই। তাহার প্রিয়কাৰ্য্যসাধন করা রাজ্যান্তর্ব্বাসীদিগের অবশ্যকর্ত্তব্য জানিয়া পাণ্ডবেরা আপন কর্ত্তব্যকর্ম্ম সম্পন্ন করিয়াছে, তন্নিমিত্ত এরূপ চিন্তিত হইবার প্রয়োজন কি?
“হে রাজেন্দ্র! যদ্যপি আমার কথা রক্ষা না কর, তাহা হইলে আমি তোমার চরণ-শুশ্রূষায় নিযুক্ত থাকিব। আমি তোমা ব্যতিরেকে কখন জীবনধারণ করিতে পারিব না। আর তুমি প্ৰায়োপবেশন করিলে অবশ্যই রাজগণের নিকট উপহাসাম্পদ হইবে।” প্ৰায়োপবেশনে কৃতসংকল্প রাজা দুৰ্য্যোধন কর্ণের এবংবিধ বাক্য শ্রবণ করিয়াও শয্যা হইতে গাত্ৰোত্থান করিলেন না।