২৪৩তম অধ্যায়
ভীমাদির গন্ধর্ব্বযুদ্ধে যাত্রা
বৈশম্পায়ন কহিলেন, নরনাথ! রাজা যুধিষ্ঠিরের বাক্যশ্রবণানন্তর ভীমসেনপ্রমুখ পাণ্ডবগণ প্ৰহৃষ্টবদনে গাত্ৰোত্থানপূর্ব্বক বিচিত্র অভেদ্য কবচ ধারণ ও বিবিধ দিব্যাস্ত্ৰ গ্ৰহণ করিয়া উত্তমরূপে বদ্ধপরিকর হইয়া প্রজ্বলিত হুতাশনের ন্যায় লক্ষিত হইতে লাগিলেন। তাঁহারা শীঘ্ৰগামী তুরঙ্গগণসংযুক্ত মহার্হ রথে আরোহণপূর্ব্বক সত্বরে গমন করিলেন। কৌরবসৈন্য মহারাথ পাণ্ডুনন্দনগণকে আগমন করিতে দেখিয়া কোলাহল করিতে আরম্ভ করিল। জয়শীল মহারথ গন্ধর্ব্বগণ নিৰ্ভয়চিত্তে ক্ষণকালমধ্যে সেই কাননে আগমনপূর্ব্বক রথস্থ পাণ্ডবচতুষ্টয়কে সন্দর্শন করিয়া নিবৃত্ত হইল এবং গন্ধমাদনবাসীরা লোকপালগণের ন্যায় শোভমান সেই পাণ্ডব-চতুষ্টয়কে নিরীক্ষণ করিয়া বিপুল সৈন্যসামন্তসমভিব্যাহারে তথায় দণ্ডায়মান রহিল,পরে ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরের আদেশানুসারে অল্পে অল্পে সংগ্রাম হইতে লাগিল।
যখন শত্রুনিপাতন সব্যসাচী ধনঞ্জয় দেখিলেন যে মন্দমতি গন্ধর্ব্ব-সৈন্যগণ মৃদু যুদ্ধে ক্ষান্ত হইবার নহে, তখন সাস্তুবাদ প্রয়োগপূর্ব্বক কহিলেন, “হে খেচরগণ! তোমরা আমার ভ্রাতা দুৰ্য্যোধনকে পরিত্যাগ কর।”
গন্ধর্ব্বগণ যশস্বী অর্জ্জুনের বাক্য-শ্রবণানন্তর কহিতে লাগিল, “হে তাত! আমরা অক্ষুব্ধচিত্তে একমাত্র গন্ধর্ব্বরাজের বাক্যানুসারে কার্য্য করি ও তাঁহারাই শাসন প্রতিপালন করিয়া থাকি; তিনি আমাদিগকে যেরূপ আদেশ করিয়াছেন, তদনুসারেই কাৰ্য্য করিব; তিনি ভিন্ন অন্য কেহই আমাদের শাসনকর্ত্তা নাই।” কুন্তীনন্দন ধনঞ্জয় গন্ধর্ব্বগণের এইরূপ বাক্য শ্রবণ করিয়া পুনরায় কহিলেন, “বল প্রকাশপূর্ব্বক পরস্ত্রী অপহরণ করা ও মনুষ্যের সহিত একত্ৰ মিলিত হওয়া গন্ধর্ব্বরাজের নিতান্ত অনুচিত, অতএব তোমরা ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞানুসারে এই ধৃতরাষ্ট্রতনয়গণ ও উহাদের পত্নী দিগকে পরিত্যাগ কর। যদি তোমরা ইহাদিগকে সহজে পরিত্যাগ না কর, তাহা হইলে আমি বিক্রম প্রকাশ্যপূর্ব্বক তোমাদের হস্ত হইতে মোচন করিব, তাহাতে সন্দেহ নাই।”
সব্যসাচী ধনঞ্জয় এই কথা বলিয়া গন্ধৰ্ব্বগণের উপর শাণিত শর-সমূহ নিক্ষেপ করিতে লাগিলেন। তখন গন্ধর্ব্বেরাও পাণ্ডবগণের প্রতি শস্ত্র নিক্ষেপ করিতে আরম্ভ করিলেন। এইরূপে পাণ্ডব ও গন্ধৰ্ব্বগণে তুমুল সংগ্রাম উপস্থিত হইল।