২৪২তম অধ্যায়
যুধিষ্ঠিরের আদেশ ভীমাদির যুদ্ধোদ্যম
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “হে বৃকোদর! কৌরবগণ দুরবস্থাগ্রস্ত ও ভয়ার্ত্ত হইয়া আমাদিগের আশ্রয় লইয়াছে; অতএব তুমি এক্ষণে কিরূপে এই সকল কথা কহিতেছ? দেখ, জ্ঞাতিবিবাদ ও জ্ঞাতিবৈর সর্ব্বদাই ঘটিয়া থাকে; তথাপি কুলধর্ম্ম কদাচ নির্মূল হইবার নহে। যদি অপর কোন ব্যক্তি বংশের অনিষ্টচেষ্টায় প্রবৃত্ত হয়, তাহা হইলে সেই কুলজাত সৎপুরুষদিগের কর্ত্তব্য যে, তাঁহারা একমতাবলম্বী হইয়া পরকৃত দৌরাত্ম্যের প্রতিকার করেন।
“আমরা এই স্থলে বহুকাল বাস করিতেছি, দুর্বুদ্ধি ধৃতরাষ্ট্রতনয় ইহা জ্ঞাত হইয়াও আমাদিগের অবমাননাপূর্ব্বক এই প্রকার অপ্রিয়কাৰ্য্য অনুষ্ঠান করিয়াছে এবং গন্ধর্ব্বেরা দুৰ্য্যোধনকে অপহরণ ও বলপূর্ব্বক অবলাগণকে গ্রহণ করিয়া আমাদিগের কুলে কলঙ্কার্পণ করিতেছে; অতএব এক্ষণে আত্মকুলরক্ষা ও শরণাগত ব্যক্তিকে পরিত্ৰাণ করিবার নিমিত্ত তোমরা শীঘ্র উত্থিত ও সজ্জিত হও। হে ভীম! তুমি অর্জ্জুন, নকুল ও সহদেবের সহিত মিলিত হইয়া সুৰ্যোধনকে গন্ধৰ্ব্বহস্তে হইতে বিমোচন কর।
“ইন্দ্ৰসেন প্রভৃতি সারথিগণ অস্ত্রশস্ত্র পরিগ্রহপূর্ব্বক কাঞ্চনধ্বজশালী নানাবিধ অস্ত্রশস্ত্রে পরিপূর্ণ ধার্ত্তরাষ্ট্রদিগের রথ সকল সুসজ্জিত করিয়া রাখিয়াছে; তোমরা তাহাতে আরোহণ করিয়া গন্ধর্ব্বগণের সহিত যুদ্ধ করিবার নিমিত্ত প্ৰস্তুত হও এবং দুৰ্য্যোধনকে মুক্ত করিবার নিমিত্ত প্ৰাণপণে যত্ন কর। হে ভীম! একজন সামান্য ক্ষত্ৰিয়ও শরণাগত ব্যক্তিকে স্বশক্ত্যনুসারে রক্ষা করিয়া থাকে, অতএব তোমার কথা আর কি কহিব। যদি শত্ৰুগণ “আমাদিগকে রক্ষা কর” বলিয়া কোন আৰ্য ব্যক্তির সম্মুখে কৃতাঞ্জলিপুটে শরণাপন্ন হয়, তাহা হইলে তিনি অবশ্যই তাহাদিগকে রক্ষা করিয়া থাকেন। শক্রকে রক্ষা করা বরপ্রাপ্তি, রাজ্যলাভ ও পুত্রোৎপত্তির তুল্য বলিয়া কীর্ত্তিত হয়।
“সুযোধন বিপদাপন্ন হইয়া তোমারই বাহুবলে জীবনলাভের অভিলাষ করিতেছে, ইহা অপেক্ষা আনন্দের বিষয় আর কি আছে? হে বৃকোদর! যদি আমার যজ্ঞ আরব্ধ না হইত, তাহা হইলে আমি অসন্দিগ্ধ-মনে স্বয়ং ধাবমান হইতাম। এক্ষণে তুমি সন্ধিস্থাপন করিয়া সুযোধনকে গন্ধর্ব্ব হস্ত হইতে মুক্ত কর। যদি তাহাতে কৃতকাৰ্য্য না হও, তাহা হইলে অল্পমাত্র পরাক্রম প্রকাশ করিয়া কাৰ্য্যসাধন করিবে। ইহাতেও যদি কৃতকাৰ্য্য হইতে না পারো, তবে সকল উপায় উদ্ভাবনপূর্ব্বক শক্রকে শাসন করিয়া সুযোধনকে পরিত্ৰাণ করিবে। এক্ষণে আমি যজ্ঞানুষ্ঠানে ব্যাপৃত আছি, অতএব এ সময় ইহা ভিন্ন আর কিছু বলিতে পারি না।”
ধনঞ্জয় রাজা যুধিষ্ঠিরের বাক্য শ্রবণপূর্ব্বক দুৰ্য্যোধনকে বিমুক্ত করিবার নিমিত্ত অঙ্গীকার করিয়া কহিলেন, “যদি গন্ধর্ব্বরাজ সন্ধিদ্বারা দুৰ্য্যোধনকে পরিত্যাগ না করে, তাহা হইলে আজি পৃথিবী তাহার শোণিত পান করিবে।” কৌরবগণ অর্জ্জুনের অঙ্গীকার-বাক্য শ্রবণ করিয়া সুস্থচিত্ত ও নির্ভীক হইল।